ruhi ruhi

ruhi ruhi Alhamdulillah for everything

12/02/2025

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এক মা জজ সাহেব কে বলছে, জজ সাহেব এই মেয়েটি আমার মেয়ে হতেই পারে না। যে কি-না নিজের বাবাকে হ'ত্যা করতে পারে সে কখনোই আমার মেয়ে হতে পারে না। আমি এই মেয়ের ফাঁ'সি চাই।
রুনা বেগমের কথা শুনে এতোক্ষণ মাথা নিচু করে রাখা সতেরো বয়সের এক কিশোরী টলমল চোখে নিজের মায়ের দিকে তাকালো। তার মা তাকে এভাবে বলতে পারলো!
জজ সাহেব এবার সেই কিশোরী তিশা কে জিজ্ঞেস করে তার আর কিছু বলার আছে না-কি? জজের কথা শুনে গড়িয়ে পড়া চোখের পানি নিশ্চুপে মুছে বলে,,
-- জজ আঙ্কেল আমি একটা কাহিনী বলতে চাই শুনবেন?
-- আচ্ছা বলো।
তিশা একবার মায়ের দিকে চেয়ে নিলো তার মা বারবার চোখের ইশারায় না করছে যেনো তিশা না বলে, তিশা সেসবকে পরোয়া না করে সে বলতে লাগলো।
-- সময়টা আরো আট বছর আগের তখন আমাদের সংসার টা খুব ভালোভাবে আনন্দে কাটছিলো। বাবা মায়ের চোখের মনি ছিলাম। আমার যখন বয়স বয়স বারো তখন আমার বাবা মা'রা যায়।
আদালতের সবাই তিশার কথা শুনে কানাঘুঁষা করা শুরু করে। জজ সাহেব ও অবাক হয়ে চেয়ে রয় তিশার দিকে।
কোর্টের সবাইকে শান্ত করে জজ সাহেব তিশা কে জিজ্ঞেস করে,,
-- তুমি যাকে হ'ত্যা করেছো ইনি তোমার আসল বাবা নয়?
-- না ইনি আমার আসল বাবা নন।
-- তাহলে তোমার আসল বাবা কিভাবে মা'রা গেলো? আর এনাকেই বা কেনো মারলে।
-- আমার বাবা কিভাবে মা'রা গেছে সেটা আজ পর্যন্ত ও আমি জানি না,তার মৃ'ত্যু টা রহস্যই রয়ে গেলো। হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে দেখি বাবার নিথর দেহটি বাড়ির উঠানে পড়ে আছে। বাবা মা-রা যাওয়ার মাস দুয়েকের মধ্যে আমার মা আবার বিয়ে করে, যিনি খুন হয়েছে তাকে। সেই থেকে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় আমার জীবনে। না পারতাম শান্তি তে দু'বেলা পেট পুড়ে খেতে আর না পারতাম শান্তিতে ঘুমাতে।
বাসার সব কাজ আমার একা হাতে করতে হতো। আমার বয়সই বা কতটুকু ছিলো। যেখানে আমার খেলাধুলা পড়াশোনা করার কথা ছিলো সেখানে আমায় ঘরের কোনে প্রতিনিয়ত ধ'র্ষণের শিকার হতে হতো।
মূহুর্তেই কোর্টের সবাই চমকে গেলো যারা এতোক্ষণ তিশাকে কথা শুনাচ্ছিলো তারা এখন তার হয়েই সহানুভূতি প্রকাশ করছে।
জজ সাহেব তিশাকে প্রশ্ন করে,,
-- তোমার সাথে যখন এতোকিছু হয়েছে তাহলে এতোদিন চুপ ছিলে কেনো? আর তোমার মা কি জানতেন না এইসব তোমার সাথে হচ্ছে
-- আমার মায়ের জন্য তিনি আমায় বলতে নিষেধ করেছিলো বলেছিলো কোনো উপায় বের করে আমায় এখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। আর আমার এই ধ'র্ষণের ব্যাপারে তিনি জেনেছে বছর খানেক আগে থেকে। আমার মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের বছর খানেক পরেই বুঝতে পারলাম লোকটির মতলব ভালো না কারনে অকারণে বার বার কাছে ঘেসতো ছুঁয়ে দিতো। প্রথমে মা'কে এ ব্যাপারে জানালে তিনি বলেন, " তোমার বাবা হয় উনি ছুঁতেই পারে সেটাকে কেনো অন্য মানে বের করছো।
কিন্তু এ ছোঁয়া সে ছোয়া ছিলো না আমার বাবাও আমাকে ছুঁয়েছে আদর করেছে কিন্তু তার ছোয়ার খারাপ কখনো লাগে নি। একদিন আমার মা খালা বাসায় গিয়েছিলো আমায় রেখে সেদিন আর ফিরে নি মা। রাতে যখন ঐ ভদ্রলোক বাসায় ফিরে তখন মাতাল হয়ে ছিলো। তার ওমন অবস্থা দেখে মনের ভেতর ভয় জাগেছিলো তাই সেদিন রাত ঘর থেকে বের হইনি, হঠাৎ মাঝ রাতে দরজা ধাক্কার আওয়াজে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,বাবার দরজা ধাক্কাচ্ছিলো তাই না পেরে দরজা খুলেছিলাম। কিন্তু সেই খোলা টাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ালো। দরজা খোলার সাথে সাথে হিংস্র পশুর মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেদিন পারি নি আমি নিজেকে রক্ষা করতে, ওমন শক্তি শালী দেহর সাথে কি পারা যায়।
রাস্তার কু'ত্তার মতো ছিঁড়ে খেয়েছিলো সেদিন কতো চেঁচালাম নিজেকে বাঁচানোর জন্য কতো হাতে পায়ে ধরলাম তার কিন্তু সে কিছুই মানলো না। এর পরের দিন মা বাসায় আসলে দেখে বিছানার উপর শুয়ে আছি, সারা বিছানায় র'ক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শরীরে শক্তি ছিলো না। মা'কে দেখে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম, কিভাবে আমার সাথে এমন হলো সেটা জিজ্ঞেস করলে আমি সব বলে দেই, আমার মা আমাকে ছেড়ে তাদের ঘরে গিয়ে ঐ লোককে জিজ্ঞেস করে আমার সাথে কি তিনি এসব করেছেন নাকি সাথে সাথে তিনি অস্বীকার করে ফেলেন। তিনি বলেন আমি নাকি তাকে বাবা হিসেবে মানতে পারছি না দেখে এসব কাহিনী করতেছি। আমি নাকি অন্য কারোর সাথে এমন করে তার নাম দিচ্ছি যাতে তাদের সংসার ভেঙে যায়। সেটা শুনে আমার মা সেদি জা'নোয়ারের মতো পিটিয়েছিলো। এমনিতেই শরীরে শক্তি ছিলো না তার উপর তার মাই'র মনে হচ্ছিলো সেদিনই বুঝি আমার প্রান পাখি বেরিয়ে যাবে। আমাকে মে'রে ক্ষান্ত হলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আর তখন ঐ লোক এসে আমায় হুমকি দেয় আমি যদি আবার এমন বলি তাহলে আবার আমার মা-কে এসব ভুল ভাল বুঝিয়ে আমায় আবার মা'ইর খাওয়াবে।
মা যেদিনই বাসার বাহিরে চলে যেতো সেদিনই আমার খুঁড়ে খুঁড়ে খেতো, আমি পুলিশের কথা বললে আমায় বলে আমায় নাকি জা'নে মে'রে ফেলবে। কিন্তু আমার আর ধৈর্যে কুলাচ্ছিলো না এমন ভাবে ম'রার চেয়ে জেলে গিয়ে ম'রা অনেক ভালো তাই সেদিন রাতে যখন আমার সাথে শারীরিক মেলামেশা করতে আসে আমি বিছানার কাছে ছু'রি রেখে দিয়েছিলাম তখন সুযোগ বুঝে ছু'রি তার পিঠে, পেটে বসিয়ে দেই। এই হচ্ছে আমার কাহিনি আঙ্কেল। তিশার উকিল উঠে সব মেডিকেল রিপোর্ট জজের কাছে জমা দেয়,যেখানে প্রমানিত তিশা ধ'র্ষণের শিকার আর তিশার সৎ বাবাই সেটা করেছে।
জজ সাহেব সহ আদালতের প্রত্যকটা মানুষের চোখ টলমল করছে এইটুকু একটা মেয়ের সাথে এতোকিছু ঘটে গেলো। যেখানে খেলাধুলা পড়াশোনা করার বয়স সেখানে ধর্ষণের শিকার সাথে খুনেরও কেস। মেয়েটার ফিউচার শেষ।
জজ সাহেব তিশার উদ্দেশ্যে বলে,,
-- তোমার সাথে যা হয়েছে তা সত্যিই দুঃখ ও ঘৃণিত জনক। কিন্তু আইনের কাছে আমি বাঁধা আমার মন চাচ্ছে তোমায় সাজা না দিতে কিন্তু আইনকে তো দিতেই হবে। তাই আমার তো এবার রায় দিতেই হবে, সমস্ত সাক্ষী প্রমান এই নির্দেশ দেয় যে ভদ্রলোক সাহেলের হ'ত্যা তিশার হাতেই হয়েছে আর তথ্য প্রমান থেকে এটাও জানা গেছে ভদ্রলোক সাহেল তিশার উপর নির্মম ধ'র্ষণের কার্যক্রম চালিয়েছিলো। সাহেল কে হ'ত্যা করার জন্য আসামি তিশার সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করা হলো সেই সাথে শিশুশ্রম ও অন্যায়ের সাথে থাকার জন্য মিস রুনা বেগম কে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করা হলো।
পুলিশ রুমা ও তিশা কে নিয়ে যাচ্ছিলো পেছন থেকে জজ তিশাকে ডেকো বললো,,
-- চিন্তা করো না তুমি আমি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবো তোমার শাস্তি কমানোর জন্য, আর তার জন্য যা যা করতে হবে আমি সেটা অবশ্যই করবো।
তিশা জজের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সামনে ঘুরে চলে যায় আর মনে মনে বলতে লাগে,,
-- কি-ই বা ছিলো আমার এ জীবন আর কি'বা পেলাম,যেখানে নিজের মায়ের উচিত ছিলো আমায় সাহায্য করা সেখানে আজ এক অচেনা লোক করতে চাচ্ছে।
সমাপ্ত
অণুগল্প
কি_পেলাম_এ_জীবনে
Raiha_Zubair_Ripte
c.

12/02/2025

–" দেখো রোজ রোজ এতো অশান্তি ভালো লাগে নাহ। আমাদের যখন কোনো কিছুতেই মিলমিশ হচ্ছে নাহ। তাহলে মিউচুয়ালি ডিভোর্স হয়ে যাওয়ায় ভালো।"

তরির দিকে তাকিয়ে কথাটাহ বলে ওঠে কুশান। তরি কিছু নাহ বলে কুশানের দিকে তাকিয়ে থাকে। হালকা হাসে তরি। কুশান তরির এই শান্ত দৃষ্টির সাথে নিজের দৃষ্টি মিলাতে নাহ পেরে অফিস যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।

তরি কিছু সময় ডাইনিং টেবিলে বসে থাকে। সামনে একটা প্লেটে রুটি তরকারি আছে। কিন্তু,, খাবার যেন মুখে উঠছে নাহ তার। যন্ত্রণা হচ্ছে তরির,, বুকের মাঝে এক অদৃশ্য ব্যাথা অনুভব হচ্ছে তার। আর খেলো নাহ তরি,, হাত ধুয়ে জানালার পাশে দাড়ায়।

কুশানের কথা ভাবছে তরি। কত সহজেই ডিভোর্সের কথা বলে দিলো কুশান। বিয়ে হয়েছে আজ ছয় বছর হতে গেলো। একটা চার বছরের ছেলেও আছে তার। কুশান কোনো কিছু নাহ ভেবেই,, ডিভোর্সের কথা বলে দিলো? কিভাবে পারলো সে? পরিবার থেকে দেখে শুনেই বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো তাকে,, কোনো কিছু নাহ ভেবেই পরিবারের এক কথায় কুশানকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো তরি। তার এমন প্রতিদান পেলো তরি?

" মাম্মাম " কান্নামেশানো রিনরিনে আওয়াজে ধ্যান ভাঙে তরির। তাড়াতাড়ি দৌড়ে রুমে আসে তরি। শিশির উঠে গেছে। শিশির কুশান আর তরির এক মাত্র ছেলে। শিশির বিছানার উপর বসে বসে চোখ ডলছে। মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। উঠে মাকে নাহ দেখতে পেলে এই চার বছর বয়সে এখনও কান্না করে শিশির।

তরি এগিয়ে আসে ছেলের কাছে,, শিশির মাকে দেখে একটু মিষ্টি হাসি দেয়। তরি শিশিরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই শিশির এগিয়ে এসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে। তরি শিশিরের কপালে একটা চুমু একে দেয়,, তারপর আগলে নেয় নিজের নাড়ি ছেড়া কষ্টের মানিককে।


কুশান নিজের কেবিনে বসে অফিসের কাজ করছে। আজকাল কুশানের মন মেজাজ বড্ড খিটখিটে হয়ে থাকে। বাসায় এতো অশান্তি থাকলে,, মন মেজাজ ভালো থাকে কার?

আজকাল,, নাহ! বেশ অনেকদিন যাবত তরির সাথে তার ঝগড়া লেগেই থাকে। সব কিছুতেই তাদের মাঝে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। আর ভালো লাগে নাহ এইসব কুশানের।

কুশান এক দৃষ্টিতে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এমন সময় দরজায় কেউ নক করলে,, কুশান তাকে ভেতরে আসার অনুমতি দেয়। কুশান দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে রিমি। রিমি হলো কুশানের পি.এ।

রিমি কুশানের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। কুশানও হালকা হাসে। রিমি এগিয়ে আসতেই কুশান বলে ওঠে,
–" বসো।"

রিমি হালকা হেসে কুশানের অপোজিট চেয়ারে বসে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–" স্যার! ফাইল গুলো কমপ্লিট হয়ে গেছে।"

কুশান হাত বাড়িয়ে ফাইল গুলো নিয়ে দেখতে থাকে। রিমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কুশানের দিকে। কুশানকে বেশ ভালো লাগে রিমির। অনেক সুদর্শন একজন পুরুষ কুশান। রিমি এইটাও জানে,, কুশান বিবাহিত এমনকি বাচ্চাও আছে। কিন্তু,, তাও নিজের ভালো লাগা কে আটকাতে পারে নাহ রিমি।

আজ কুশানকে একটু ফ্যাকাশে লাগছে। রিমি দেখতে পাচ্ছে,, কুশানকে আজ বড্ড গোমড়া লাগছে। রিমি কিছুটা ভ্রু কুচকিয়ে তাকায় কুশানের দিকে। কুশান খুব মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখছে। রিমি আস্তে করে বলে ওঠে,
–" স্যার!''

কুশান ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে রিমির দিকে তাকায়। রিমি কুশানের দিকে তাকিয়ে হালকা ভাবে বলে ওঠে,
–" আজ আপনাকে খুব মন মরা লাগছে। কিছু হয়েছে? কোনো সমস্যা?"

রিমির কথা শুনতেই কুশানের তরির কথা মনে পড়ে। আজ সকালে মেয়েটাকে ডিভোর্সের কথা বলে এলো সে? এইটা কি ঠিক করলো? কিন্তু কি করবে সে? রোজ রোজ সামান্য বিষয় নিয়েও কথা কাটাকাটি হয়,, ঝামেলা হয়,, ঝগড়া হয়,, ভালো লাগে নাহ কুশানের।

রিমি কুশানের দিকে তাকিয়েই আছে। কুশানকে বেশ অন্যমনস্ক লাগছে তার কাছে। রিমি আরও কিছু সময় চুপ থেকে আস্তে করে বলে ওঠে,
–" স্যার!"

রিমির ডাকে ধ্যান ভাঙে কুশানের। রিমির দিকে একপলক তাকিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–" তেমন কিছু নাহ। আমি ঠিক আছি।"

রিমি আর কিছু বলতে গিয়েও বললো নাহ। কুশান ফাইলে আরও কিছু সময় চোখ বুলিয়ে বলে ওঠে,
–" হ্যা! দেখলাম। ঠিক আছে সব কিছু। আমি নিউ ফাইল পাঠিয়ে দিবো তোমার কাছে।"

–" ঠিক আছে। আমি তাহলে আসি?"

–" হুম!"

রিমি চলে যায়। কুশান ল্যাপটপ টাহ অন করে আবার কাজ শুরু করে দেয়। কিন্তু,, কেনো জানি আর কাজে মন বসছে নাহ কুশানের। ল্যাপটপ বন্ধ করে কিচেনে কল করে কফি আনতে বলে কুশান।


রাত_৯_টাহ_৪৫_মিনিট_

তরি শিশিরের সাথে খেলা করছে। শিশির একটা গাড়ি নিয়ে খেলতে খেলতে তরির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–" মাম্মাম! পাপা আসে নাহ কেন এখনো?"

তরি ছলছল চোখে ছেলের দিকে তাকায়। কুশান সাধারনত ৯ টার আগে আগেই বাসায় চলে আসে। কিন্তু,, আজ যে বড্ড দেরি করছে। শিশির এগিয়ে এসে তরির মুখ ধরে বলে ওঠে,
–" মাম্মাম! বলো নাহ,, পাপা কই? পাপা আসে নাহ কেন?"

তরি কোনোরকমে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–" আমি জানি নাহ বাবা।"

–" চলো নাহ,, মাম্মাম! আমলা পাপাকে কল কলি।"

–" আমি কল করে দিচ্ছি,, তুমি কথা বলো,, ঠিক আছে বাবা?"

–" ঠিক আছে।"

কুশান আর তরি কখনো শিশিরের সামনে কথা কাটাকাটি করে নি। তাই,, শিশিরের এই ঝগড়ার ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তরিও যতটা সম্ভব ছেলেকে এইসব থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু,, আজকাল সব কিছু যেন হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে।

কল বেজে যাচ্ছে কুশানের। কিন্তু,, রিসিভ হচ্ছে নাহ। আবারও কল দেয় তরি। এইবারও কল রিসিভ হলো নাহ। তাহলে,, কি কুশান ইচ্ছে করে তরির কল এভয়েড করছে? শিশির বিছানার উপর দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–" মাম্মাম! আমাকে ফোন দাও,, আমি কথা বলি,, পাপাল সাতে।"

তরির বুকের ভেতর টাহ ধুক করে উঠে। কি উত্তর দিবে এখন তরি এই বাচ্চা ছেলেকে? ওযে এইসব ব্যাপারে এখনো কিছুই বুঝে নাহ। শিশির আগ্রহ হয়ে আবার ওঠে,
–" কি হলো মাম্মাম? দাও।"

তরি নিজেকে একটু সামলিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–" তোমার পাপা আজ খুব ব্যাস্ত সোনা! আসতে একটু দেরি হবে। তুমি আজ ঘুমিয়ে পড়ো।"

শিশির একটু খুত খুত করতে করতে বলে ওঠে,
–" আমাল তো পাপাল জন্য মন কেমন কলে মাম্মাম!"

–" পাপা আজ খুব ব্যাস্ত যে। চলো,, আজ মাম্মাম বেশি বেশি আদর করবে তোমাকে।"

তরি শিশিরকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে ছেলেকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।

_রাত_১০_টাহ_৩০_মিনিট_

শিশির ঘুমিয়ে গেছে। অনেক খুঁতখুঁত করেছে আজ কুশানের জন্য। তরি ঘড়ির দিকে তাকায়। এখনো এলো নাহ কুশান। তরি শিশিরের দিকে তাকায়। পুরো বাবার মতো দেখতে হয়েছে ছেলেটা। হালকা হাসে তরি। শিশিরের কপালে এক ভালোবাসার পরশ একে দেয় তরি।

এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজে চমকে উঠে তরি। কুশান এসেছে। আজ এতো রাত করে এলো,, কেন? রাগ করে? তরি দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে কুশানকে দেখে বুক টাহ ধুক করে উঠে তরির।

কুশানকে বড্ড অগোছালো দেখা যাচ্ছে। চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে,, শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে,, শার্টের উপরের তিনটা বাটনই খোলা,, ব্লেজার টাহ হাতে ঝোলানো,, চুল গুলোও উসকোখুসকো হয়ে আছে,, ফর্সা মুখটাহ ফ্যাকাশে হয়ে আছে,, খুবই ক্লান্ত দেখা যাচ্ছে কুশানকে। কুশান শান্ত ভাবে বলে ওঠে,
–" ভেতরে যেতে দিবা নাহ?"

তরি কোনো কথা নাহ বলে দরজা থেকে সরে দাড়ায়। কুশান ভেতরে চলে গেলে তরিও দরজা বন্ধ করে কুশানের পেছন পেছন আসে। কুশান ভেতরে গিয়ে দেখে বিছানার উপর শিশির ঘুমিয়ে আছে। রোজ রাতে ছেলেটার সাথে অনেক সময় খেলা করে কুশান। আজ ছেলেটাহ ঘুমিয়ে গেছে।

কুশান ব্লেজার টাহ পাশে রেখে শিশিরের দিকে এগিয়ে যায়। শিশির কত সুন্দর শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। কুশান শিশিরের কপালে একটা চুমু একে দেয়। তরি কিছুটাহ দুরে দাড়িয়ে দৃশ্যটাহ দেখে। কিন্তু কিছু বলে নাহ।

কুশান একপলক তরির দিকে তাকিয়ে নিজের শার্ট খুলে পাশে রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়। তরি এগিয়ে এসে শার্টটাহ নিয়ে ময়লার কাপড় রাখার জন্য বাস্কেটে রাখতে গিয়েও রাখে নাহ। শার্টটাহ নাকের কাছে নিতেই,, ঘামের গন্ধের সাথে সিগা"রেটের গন্ধও আসে। কুশান সি*গারেট খাচ্ছে? কই আগে তো খেতো নাহ,, তাহলে? কবে থেকে খাচ্ছে সিগারেট?

_চলবে.........🌹

12/02/2025

আমার স্বামী মাসের প্রথমে তার বেতনের সব টাকা আমার হাতে তুলে দিলেও, তার এক পয়সা খরচ করার অধিকার আমার ছিলো না। কোনো জিনিসের প্রয়োজন হলে নিজেই কিনে এনে দিতো। তবুও আমার হাতে টাকা খরচ করতে দিতো না। মাসের শেষে কড়ায়গণ্ডায় সব হিসাবও বুঝে নিতো। এসব নিয়ে আমার অবশ্য তেমন সমস্যা ছিলো না। সমাজে ভালো নামক তকমাটা পেতে গেলে চোখ থাকতে অন্ধ আর মুখ থাকতেও বোকা সাজতে হয়। কালেভদ্রে নিজের কাছে খারাপ লাগলেও কখনো মুখ ফুটে কারো কাছে কিছুই বলিনি।

গতকাল আমার ভাই কল দিয়ে বললো, ' আপু ১০০০ টাকা দিতে পারিস। কলেজে লাগবে, মা আব্বু বাকি সব জোগাড় করতে পারলেও এক হাজার টাকা কারো কাছে পায়নি। শেষ ভরসা হিসাবে তোকে কল দিলাম। "

মধ্যবিত্ত পরিবারে যদি বাবার বয়স বাড়ে, আর কোনো নিদিষ্ট উপার্জনের পথ না থাকে। তখনই অভাব কাকে বলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভাইটা সবে সবে কলেজে ভর্তি হবে। কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা তো লাগবেই। সবই আমি বুঝতে পারি। কিন্তু কিছু করার উপায় নেই। আমার নিজের কাছে পাঁচশ টাকার মতো আছে। বেশ কয়েকমাস ধরেই জমা পড়ে আছে ডাইরির পাতার ভাঁজে। বাকি টাকাটা ও-র কাছে চাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
সকালে খাওয়ার সময় স্বামীকে বললাম

--" আমাকে পাঁচশ টাকা দিবে?'

--" এতো টাকা দিয়ে তুমি কি করবে?'

--" আসলে ভাইয়ের ভর্তি হতে লাগবে। তুমি দিলে অনেক উপকার হতো। '

--" কেন তোমার মা বাপ সব মরে গেছে নাকি? যে তোমার ভাইয়ের কলেজে ভর্তির টাকা আমার দেওয়া লাগবে। মাসের শেষে পাঁচশ টাকা মানে বোঝো তুমি? টাকা রোজগার করতে কেমন লাগে তা তুমি ঘরে বসে বুঝবে কি করে! আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা নেই। "

মাসের শেষে যে হাতে টাকা থাকে না এটা আমি বেশ ভালোই বুঝতে পারি। তবে স্বামীর দেওয়া উত্তরটা কেন জানি কানে বেজে চলছে। কলেজে ভর্তি হওয়া যে পাঁচশ টাকায় হয় না তা আমার স্বামীকে আলাদা ভাবে বলে দেওয়ার দরকার হয় না। নিজে থেকেই বুঝতে পারে।

সেদিনের পর থেকে কখনো স্বামীর কাছে টাকা চাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি আমার। খুব বেশি প্রয়োজন হলেও নিজের জন্য বা বাপের বাড়ির কারোর জন্য কিছুই চাইনি। আমার স্বামী অবশ্য সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে কেজি খানেক গরুর গোশত আর পোলাও চাল এনে বলেছিলো বিরিয়ানি রাঁধতে, অনেকদিন খাওয়া হয়নি। তার জন্য রান্না করেছিলাম ঠিকই কিন্তু আমার গলা দিয়ে অমন সুস্বাদু খাবার নামেনি।

পরেরদিন আমার ভাই এসেছিলো অনেক আশা করে, বিয়ের আগে কয়েকটা টিউশনি করাতাম তখন বোনের কাছে কিছু আবদার করলে না পাওয়া হয়নি। সেই ভরসা নিয়েই হয়তো এসেছিলো, বুঝতে পারেনি তার বোন আজ আর অবিবাহিত নেই। তাদের পরিবারের সদস্য নেই। সমাজের মতে বিয়ের পর মেয়েদের স্বামী সন্তানই সব। মা বাবা ভাই বোন নেহাৎ তার বাড়ির আত্মীয় মাত্র। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই নিয়মের বাইরে যাওয়ার অধিকার হয়তো কোনো মেয়েই নেই। কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাগ্যবতী বলেই এই নিয়ম তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। তাদের ব্যাপার হয়তো আলাদা।

ছোট বেলায় খালামনি একজোড়া রূপার নুপুর বানিয়ে দিয়েছিলো। তেমন পায়ে দেওয়া হয় না। সেই নুপুর জোড়া ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলাম,

--" মাসের শেষ, তোর দুলাভাইয়ের কাছে টাকা নেই। এই জোড়া বিক্রি করে দে। আমি তো এসব পরি না। "

ভাই হাত পেতে নুপুরজোড়া নিয়ে ছিলো বটে, তবে চোখের পানিটা আড়াল করতে পারেনি। খাওয়ার টেবিল থেকে রাতে বেঁচে যাওয়া অবশিষ্ট বিরিয়ানির সুবাস হয়তো তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো তার বোনের জীবনের আবছা কিছু অংশ। স্কুল পাশ করা ছেলের বয়স তো খুব একটা কম নয়।

ভাই চলে যাওয়ার পর স্বামী অবশ্য জানতে চেয়েছিলো ভাই কেন এসেছে, বলেছিলাম আমাকে দেখতে এসেছে। আমার কাছে থাকা তার বেতনের অবশিষ্ট টাকাগুলো গুনতে গুনতে বলেছিলো, তা ও-কে খেয়ে যেতে বললে না কেন, শালাবাবুর তো বিরিয়ানি অনেক পছন্দের।

উত্তরে আমি শুধু মুচকি হেসেছিলাম। এসব সামান্য কারণে সংসার ফেলে চলে যাওয়ার মতো মেয়ে আমি নই। একা থাকতে পারার সাহস যোগাতে পারলেও সমাজে তিক্ততা মেনে নেওয়ার সাহস আমার কখনোই হবে না। স্বামী সংসার ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা আমার মাথায় আসেনি। শধু মনের কোথাও একটা গভীর ক্ষত হয়েছিলো। যে ক্ষত থেকে ব্যাথা ক্রমশ আমার ভিতরে ছড়িয়ে পড়েছে। কষ্টে চোখের পানি বেরিয়ে এসেছে, বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়েছে। পরে আবার ক্ষতটা শুকিয়েও গেছে। আচ্ছা এসব ক্ষত কি কখনো শুকিয়ে যায়?

12/02/2025

প্রবাসীর কান্না,,
বাবা যখন ফোন করে বললো আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে এই মাসের ১৫তারিখ বিয়ে তখন আমার একটু কষ্ট লাগছিলো। আমি বড় ভাই অথচ আমায় রেখে বাবা মা আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। পরক্ষণেই মনে হলো আমি দেশের বাহিরে যেহেতু তাই বাবা মা আমার বিয়ের কথা ভাবে নি। আমি যখন দেশে চলে যাবো তখন আমার বিয়ের কথা ঠিকিই ভাববে। ছোট ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম,
--তোর আর তোর হবু বউয়ের বিয়েতে যা যা লাগে আমায় বলিস আমি টাকা পাঠিয়ে দিবো।
ছোট ভাইয়ের বিয়েতে আমি মেয়ের গহনা বাবদ দুইলাখ টাকা পাঠিয়েছিলাম কিন্ত ছোট ভাই তবুও বললো আরো যেন ৫০হাজার টাকা পাঠাই।ওর হবু বউয়ের নাকি খুব শখ মাথায় সোনার টিকলি দেওয়ার।আমি তখন আরো ৫০ হাজার টাকা পাঠাই।
আমি খুব অবাক হয়ে খেয়াল করতাম আমার পরিবারের লোকজন আমায় যখন ফোন দিতো তখন আমি কেমন আছি সেটা প্রথমে জিজ্ঞেস না করে জিজ্ঞেস করতো আমি কবে টাকা পাঠাবো তার এটা লাগবে ওর ওটা লাগবে।প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো কিন্তু তারপর মনে হলো আমি পরিবারের বড় সন্তান। আমার কাছে চাইবে না তো কার কাছে চাইবে। আমার পরিবারের লোকজন কষ্ট করে টাকা খরচ করে আমায় বিদেশ পাঠিয়েছে। কিন্তু এখন আমি যদি আমার পরিবারের লোকের চাহিদা না পূরণ করি তাহলে সেটা অন্যায় হবে। আমার ভাই বোন মা বাবা যখন যেটা আবদার করতো আমি আমার সর্বচ্চো চেষ্টা করতাম সেটা পূরণ করার জন্য।
দীর্ঘ ৯বছর প্রবাস জীবন পার করার পর বাবাকে যখন ফোনে বললাম,
--বাবা, আমি দেশে আসতে চাই
বাবা অবাক হয়ে আমায় বললো,
-”দেশে এসে কি করবি"!
আমি বললাম,
-- দেশেই কিছু একটা করার চেষ্টা করবো। তোমাদের ছাড়া আমার একা একা থাকতে ভালো লাগে না।তাছাড়া ছোট ভাই বোনের বিয়ে হলো কিন্তু আমি বিয়েতে থাকতে পারলাম না।খুব ইচ্ছে করছে ওদের দেখতে
বাবা তখন কিছুটা রেগে বললো,
-” দেখতে ইচ্ছে হলে মোবাইলে ভিডিও কলে দেখিস। তবুও দেশে আসতে হবে না। তাছাড়া আমি নতুন বাড়ি বানানোর কাজে হাত দিয়েছি। এখন তুই দেশে আসলে টাকা পাঠাবে কে?”
বাবার কথা শুনে এই মূহুর্তে নিজেকে মানুষ না, টাকা বানানোর যন্ত্র মনে হচ্ছিলো।মানুষ ঠিকিই বলে, প্রবাসীদের ওর পরিবারের লোকজন টাকা বানানোর মিশিন বাদে অন্য কিছু ভাবে না।
আমি এর কয়েকমাস পর পরিবারের কাউকে কিছু না বলে হুট করে দেশে এসে পরলাম। আমি দেশে এসেছি বলে আমার পরিবারের লোকজন খুশি হওয়ার চেয়ে মনে হয় কষ্ট পেয়েছে বেশি। ৯বছর পর আমি দেশে এসেছি কোথায় বাবা আমায় বুকে জড়িয়ে ধরবে তা না, বাবা আমার থেকে দূরে বসে আছে। ছোট বোন রাগ করে বসে আছে আমি কেন ওর স্বামীর জন্য রোলেক্স ঘড়ি না এনে অন্য ঘড়ি এনেছি। আমি ওরে বললাম,
-- যে ঘড়িটা এনেছি সেটাও অনেক ভালো।
ছোট বোন রাগে ঘড়িটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে বললো,
-”আমার স্বামীর লাগবে না এই ঘড়ি। তোমার ভালো ঘড়ি তুমি হাতে দিয়ে বসে থাকো।”
ছোট বোন একটা ঘড়ির জন্য আমার সাথে রাগ করছে অথচ ছোট বোন যখন যা আবদার করেছে সব আমি পূরণ করেছি
ছোট ভাই রাগ করেছে আমি কেন ওর বউয়ের জন্য আইফোন নিয়ে আসি নি। ছোট ভাইকে যখন বললাম,
--ভাইরে, আমার বেতনের চেয়ে একটা আইফোনের দাম বেশি। তাছাড়া তোকে তো একটা আইফোন দিয়েছি
ছোটভাই রেগে গিয়ে বললো,
-” আমার বউয়ের জন্য তোমার কাছে কি এমন চেয়েছি যে দিতে পারলে না? লাগবে না আমার বউকে তোমার কিছু দেওয়া
এইকথা বলে ছোটভাই রাগ করে চলে গেলো অথচ ছোট ভাই কত সহজে ভুলে গেলো ওর বিয়েতে ওর বউয়ের সমস্ত গহনা আমি দিয়েছি।
বাড়ি আসার পর থেকে প্রতিদিন আমাদের দোকানে গিয়ে বসতাম। একদিন বাবা আমায় হুট করে ডেকে বললো
-” তুই বিদেশ যাবি কবে?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
--আমি তো আর যাবো না। তোমায় তো বলেছিলাম আমি দেশেই কিছু একটা করবো।
বাবা রেগে গিয়ে বললো,
-” দেশে থেকে কি এমন করবি শুনি?”
আমি বললাম
--আমাদের ব্যবসাটা আরো বড় করবো।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট ভাই অবাক হয়ে বললো,
-”আমাদের ব্যবসা মানে? দোকান তো আমার।”
আমি তখন বললাম,
--কিন্তু দোকান করতে সব টাকা তো আমি দিয়েছি।
ছোট ভাই সরাসরি অস্বীকার করে বললো আমি নাকি কোন টাকা দেই নি। আমি যেনো তার দোকানে আর না বসি।
ছোট ভাইয়ের কথাতে যতখানি না কষ্ট পেয়েছি তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি বাবার কথা শুনে। বাবা যখন বললো,
-"ও তো ঠিকিই বলেছে। তুই আর ওর দোকানে বসিস না। পারলে নিজে দোকান দে"
আমি আর কিছু এই বিষয়ে না বলে বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
--আমি নতুন করেই ব্যবসা করবো টাকা দাও আমায়
বাবা সোজাসাপ্টা বলে দিলো উনার কাছে কোন টাকা নেই। আমি যে ৯টা বছর গাধার খাটুনি খেটে এতো এতো টাকা পাঠিয়েছিলাম সেই টাকা নাকি খাওয়া-পড়াতেই সব খরচ হয়ে গেছে। আমি টাকায় কিনা সকল জমি-জমা ভাই বোনের নামে। আমার নামে কোন সম্পত্তি নেই। ছোট ভাইকে যখন বললাম, কিছু জমি বিক্রি করে অন্তত আমায় কিছু টাকা দিতে। ছোট ভাইয়ের সোজা উত্তর তার ভাগ থেকে এক টুকরো জমিও সে বিক্রি করবে না। ছোট বোনের কাছে যখন কিছু টাকা ধার হিসাবে চাইলাম সেও দিতে রাজি হলো না।
নিজের জন্মদাতা পিতা আর নিজের রক্তের ভাই বোনের থেকে এমন ব্যবহার দেখেও আমি কাঁদতে পারতাম না অথচ আমার ভিতরটা প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত হতো।
আমি যা বুঝার বুঝে গিয়েছিলাম।তাই যেদিন দেশ ছেড়ে চলে যাবো সেদিন আমার পরিবারের লোকদের বললাম,
--তোমারা হয়তো মনে মনে ভাবো বিদেশে টাকা পয়সা রাস্তায় পরে থাকে। কিন্তু বিশ্বাস করো বিদেশে টাকা ইনকাম করা কত কষ্টের সেটা একজন প্রবাসী ছাড়া অন্য কেউ বুঝবে না। ১৮ ঘন্টা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে বাসায় এসে নিজে রান্না করে খেয়েছি। যে আমি কিনা ৫কেজি ওজনের কিছু মাথায় নিতে পারতাম না সেই আমি ৫০ কেজি ওজনের সিমেন্টের বস্তা মাথায় নিয়ে এক তলা থেকে আরেক তলায় গিয়েছি। তোমাদের জন্য এতকিছু করেও তোমাদের মন পেলাম না। আমি বেঁচে থাকতে এই দেশে কখনো পা রাখবো না। আর যদি মরে যায় তহলে আমার লাশটা যেন বিদেশেই পরে থাকে তোমরা সেটা আর দেশে ফিরিয়ে এনো না!
পরম শিক্ষা:
ব্যথিত জীবন শুধুই বেদনার। জীবনকে নিজের মতো করে সাজিয়ে তোলাই উত্তম। নিজের সাধ্য অনুযায়ী জীবনকে নিজের মতো করে গড়তে হবে। তবে তার মধ্যে বাবা_মা ও পরিবার প্রাধান্য পেলেও পরিশ্রম ও জীবনের ত্যাগ টা স্বাদ ও স্বাধ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ। মনে রাখতে হবে অর্থ, খ্যাতি আর সম্পদের মোহই জীবন নয়।
টাকার_মেশিন_প্রবাসী_ও_প্রবাসজীবন ।
c.

05/02/2025

সিজারের এক মিনিট আগে সায়রা জানতে পারে তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে। নার্স তার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,আপনার স্বামী এসে গেছেন, ম্যাডাম!"
আপনার স্বামীর সঙ্গে একজন মহিলা এসেছে। তিনি বলেছেন, উনার নাম ইশরাত। উনি নিহাল সাহেবের নতুন স্ত্রী!"

সায়রা তখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। সিজারিয়ান অপারেশনের ঠিক এক মিনিট বাকি। সাদা হাসপাতালের দেয়াল, ঝকঝকে আলো, নার্সদের দ্রুত চলাফেরা—সব মিলিয়ে পরিবেশটা কিছুটা অস্থির লাগছিল।

তার শরীরের ভেতর এক অনির্বচনীয় শূন্যতা ছড়িয়ে পড়ছিল, যদিও সে জানে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সন্তান পৃথিবীতে আসবে।

শুধু একজনকেই পাশে চাইছিল—নিহাল!

তাকে বলেছিল, সময়মতো হাসপাতালে আসতে। সে আসবেই, এই বিশ্বাস ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নার্স যখন বলল, তার স্বামী এসেছেন, তখন বুকটা ধক করে উঠল এক আশায়।

ডাক্তারের কণ্ঠ কানে এল, "ম্যাডাম, আমরা এখন আপনাকে অপারেশন থিয়েটারে নিচ্ছি।"

সায়রা হাত বাড়িয়ে দিল, "একটু… নিহালের সঙ্গে কথা বলতে চাই!"

ডাক্তার সামান্য বিরক্ত হলো, "সময় নেই। আপনি এখন কথা বলতে পারবেন না!"

কিন্তু নার্স তখনই তার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, "আপনার স্বামীর সঙ্গে একজন মহিলা এসেছে। তিনি বলেছেন, উনার নাম ইশরাত। উনি নিহাল সাহেবের নতুন স্ত্রী!"

---



সায়রার পুরো শরীর বরফ হয়ে গেল।

এক মুহূর্ত আগে সে যেখানে একরাশ আশায় ছিল, সেখানে এখন মনে হলো, কেউ যেন তার বুকের ভেতর একটা ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছে।

"নতুন স্ত্রী?"

নার্স কিছুটা দ্বিধা নিয়ে বলল, "হ্যাঁ, ম্যাডাম। উনারা কয়েক ঘণ্টা আগে বিয়ে করেছেন।"

সায়রার নিঃশ্বাস আটকে আসছিল।

ডাক্তার তখনো কিছু একটা বলছিলেন, অপারেশন শুরু করতে চাইছিলেন, কিন্তু তার চারপাশের শব্দগুলো ঝাপসা হয়ে গেল।

তার মাথার ভেতর শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল—

"আমার সন্তান জন্ম নিতে যাচ্ছে… আর ঠিক এই মুহূর্তে আমি জানলাম, আমার স্বামী আরেকটা বিয়ে করেছে!"

শরীরের ভেতর অসহ্য এক শূন্যতা ছড়িয়ে পড়ল।

তার চোখ দুটো জলে ভরে গেল।

---



ডাক্তারের কণ্ঠ ধ্বনিত হলো, "সায়রা, আপনি ঠিক আছেন?"

সায়রা চুপ।

তার পেটের ভেতর ব্যথা হচ্ছিল, শরীর কাঁপছিল, কিন্তু মানসিক কষ্টটা যেন তার সব অনুভূতি নিঃশেষ করে ফেলেছে।

সে ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বলল, "আমি… আমি নিহালের সঙ্গে কথা বলতে চাই!"

ডাক্তার বিরক্ত হলো, "এখন অসম্ভব, ম্যাডাম! আমাদের এখনই অপারেশন শুরু করতে হবে!"

কিন্তু নার্স তখন বলল, "ডাক্তার, উনি যদি না চান, তাহলে…"

ডাক্তার এক মুহূর্ত থামলেন, তারপর অসন্তুষ্ট মুখে মাথা নাড়লেন, "শুধু এক মিনিট!"

---



নিহাল যখন কাঁচের দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে ছিল, সায়রা তখন ক্লান্ত চোখে তাকাল তার দিকে।

তার পাশে ইশরাত।

স্মার্ট, গাঢ় নীল শাড়িতে মোড়া এক রহস্যময়ী নারী। মুখে বিন্দুমাত্র লজ্জা বা অনুশোচনা নেই। বরং তার চোখে এক অদ্ভুত বিজয়ের ছাপ।

নিহালের চোখে অনুশোচনা ছিল, কিন্তু সেটা যেন যথেষ্ট না।

সায়রার গলা কাঁপছিল, তবুও বলল, "এটা কি সত্যি?"

নিহাল কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল।

তারপর মাথা নিচু করে বলল, "সায়রা… আমার কিছু করার ছিল না!"

এই একটা লাইনই যেন সব ভেঙে চুরমার করে দিল।

সায়রার চোখ বুঁজে এল।

ডাক্তার তখন বললেন, "সময় শেষ! আমরা শুরু করছি!"

আর সেই মুহূর্তে, অপারেশন থিয়েটারের দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

তার চোখের শেষ দৃষ্টিতে সে দেখল, নিহাল আর ইশরাত হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে—

আর সে একা, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে।

(চলবে...)

#ধোঁকার_ছায়া
লেখক: #আবু_সালেহ
(পর্ব ১:

05/02/2025

- আমার পেটের বেবিটা মনে হয় আর বেঁচে নেই তীব্র।

মাঝরাতে শরীর ঝাকিয়ে ডেকে তুলে আমার স্ত্রী নন্দিতা কথাটি বললো।আমার ঘুমঘুম চোখে ওর দিকে তাকিয়ে অনেকটা রেগে গিয়েই বললাম

- এসব কি কথা বলছো নন্দিতা?

- আমি সত্যিই বলছি।বেবিটা নড়াচড়া করছে না গতকাল থেকে।

এবার আমি একটু অবাক হলাম।বিছানায় বসে চশমাটা চোখে দিলাম।নন্দিতা কাঁদো কাঁদো চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি পর পেটে কিছুক্ষণ হাত দিয়ে দিয়ে রাখলাম।মুহুর্তেই আমার শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো।সারা শরীর দিয়ে ঘাম ঝরতে থাকলো।নন্দিতা ঠিকই বলছে।পেটের বেবি টা সত্যি'ই নড়াচড়া করছে না।নন্দিতা কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো

- ওরা আবার আমার বেবিটাকে মেরে ফেলেছে তীব্র,ওরা আবার আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছে

বলেই আমায় জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।আমি কাঠ হয়ে বসে রইলাম।আমার মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বেরুচ্ছে না।নন্দিতার কান্নার শব্দে সারা বাড়ির লোকজন জেগে গেলো।বাবা,মা,বড় ভাই,ভাবী সবাই আমার রুমে আসলো।ভাবী এসে নন্দিতাকে ধরে বললো

ভাবী- কি হয়েছে নন্দিতা? কাঁদছিস কেনো?এই অবস্থায় কাঁদা তো ঠিক না,এতে বেবির সমস্যা হবে তো বোন

মা- কি হয়েছে বৌ মা? এতোরাতে কাঁদছো কেনো? বলো আমাদের? তীব্র কিছু বলেছে?

বাবা- তীব্র কি হয়েছে রে? বৌমাকে কিছু বলেছিস নাকি?

সবার প্রশ্ন যেনো আমার মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। এখন আমি কিছুই ভাবতে পারছি না।ভয়ে আমার শরীর হিম হয়ে আসছে।নিজের সন্তানকে এভাবে প্রত্যকবার হারানো একটা বাবার কাছে যে কতোটা কষ্টদায়ক সেটা একজন বাবাই জানেন।নন্দিতা ভাবীকে উদ্দেশ্য করে কান্না করতে করতে বললো-

- ভাবী,আমাদের বেবি আর বেঁচে নেই,

কথাটা শুনে মা,বাবা,ভাইয়া,ভাবী সবাই চমকে উঠলো।মা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললেন-

- কি বললে বৌ মা? আমার দাদুভাই আর নেই মানে, কি অলক্ষুণে কথা বললে তুমি?

ভাবী- নন্দিতা শান্ত হয়ে বোস তো। কিভাবে বুঝলি বেবিটা বেঁচে নেই?

নন্দিতা- ও নড়াচড়া করছে না ভাবী।কাল সকাল থেকে ও নড়াচড়া করা বন্ধ করে দিয়েছে।আমি ভেবেছিলাম পরে ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু এখন"

নন্দিতার কথা শুনে ভাবী নন্দিতার পেটে কিছুক্ষণ হাত রাখলেন।রেখেই চোখ সংকুচিত করে ভাইয়ার দিকে তাকালেন।এর অর্থ নন্দিতা যা বলছে সেটা সত্যি।
ভাইয়া বলে উঠলেন-

- ওসব চিন্তা ভাবনা বাদ দাও,ওই রকম কিছুই হয় নি। তোমরা মিছেই চিন্তা করছো।আমি এমবুলেন্স কে ফোন করছি।মেডিকেলে পরিক্ষা করলেই বুঝা যাবে আসল সত্যি কি। কিরে তীব্র তুই কিছু বল?

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম

- হ্যা,?হ্যা হসপিটালে নিয়ে গিয়ে পরিক্ষা করলেই সব বুঝা যাবে।

ভাইয়া এম্বুলেন্স কে ফোন করলো।আমি নন্দিতার মাথায় হাত বুলাচ্ছি আর ওকে শান্তনা দিচ্ছি।ভেতরে ভেতরে আমার আবারো সেই অজানা ভয় কাজ করা শুরু করে দিয়েছে।মা দরজার কাছে গিয়ে কান্না করছে আর বলছে

- সব এই অপয়া মেয়েটার দোষ।ও আমার ছেলেটার জীবনে একটা খুশির সংবাদ এনে দিতে পারলো না।অলক্ষুণে মেয়ে।বিয়ের সময় বার বার বলেঋিলাম এই মেয়েকে বিয়ে করিস না,একে দেখে আমার সুবিধার ঠেকছে না।এখন হলো তো? সর্বনাশের কিছু বাকি রইলো? এক বার নয় দুই বার নয়,,তিন তিন বার।এই নিয়ে তিনবার হলো বাচ্চা নষ্ট হওয়ার।এই সব এই কুলাঙ্গার মেয়ের দোষ।

মাকে উদ্দেশ্য করে বাবা বললেন-

- তুমি চুপ করবে? এখন এসব কথা না বললেই কি নয়?একে দেখছোই এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে কিসের কি তুমি শান্তনা দিবে তা না করে উল্টো পাল্টা বকে যাচ্ছো।

- তুমি চুপ থাকো।ওই অপয়া মেয়ের দিকে হয়ে কথা বলবে না একদম।ওই মেয়েকে আমি আর বাড়িতে রাখবে না।আমার ওমন সুন্দর একটা ছেলের জীবন এই মেয়ের পাল্লায় পড়ে নষ্ট হতে দিবো না। আমি তীব্র কে আবার বিয়ে করাবো।

- ইউ ব্লাডি ও-ম্যান,

কথাটি বলেই বাবা মায়ের দিকে তেড়ে গেলো।ভাইয়া তখন বাবাকে থামিয়ে দিয়ে মা কে বললো "মা তুমি প্লিজ এখন চুপ করো।এসব কথা এখন বলার মানে হয় না"। বাইরে সাইরেন বাজার শব্দ হচ্ছে।নন্দিতাকে এম্বুলেন্সে তুলে আমি ভাইয়া আর ভাবী গেলাম সাথে। বেডে আধশোয়া হয়ে আছপ নন্দিতা।তার পাশেই বসে আছি আমি।ও অনবরত কেদেই চলেছে।আমি ওর হাত শক্ত করে ধরে বসে আছি।নন্দিতা আমার দিকে করুন দৃষ্টি নিয়ে বললো

- তীব্র, আমি তোমায় কখনো বাবর সুখ দিতে পারবো না।তুমি আবার বিয়ে করে নাও প্লিজ।আমার জন্য তোমার কষ্ট আমি মেনে নিতে পারছি না।

- প্লিজ নন্দিতা চুপ করো তুমি। ডাক্তাররা এখনি চলে আসবে।রিপোর্ট আসলে দেখা যাবে আমরা যেমন ভাবছি তেমন কিছুই হয় নি।তুমি মনে সাহস রাখো।

- কিছুই ঠিক হবে না তীব্র। আমি জানি

- কি জানো তুমি?

- আমি একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম গত পরশুদিন

- কি স্বপ্ন? আগে তো বলোনি

- আগে বলিনি কারন তোমার মন খারাপ হবে এজন্য বলিনি

- এখন বলো,কি দেখে ছিলে স্বপ্নে তুমি?

- আমি দেখলাম একটা বাচ্চা মেয়ে আমার চার দিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে। মেয়েটার পরনে শাদা ধবধবে একটা ফ্রগ ছিলো।চোখ দুটি নীল।কি সুন্দর চুল। একটা প্রজাপতির পেছন পেছন ছুটে বেড়াচ্ছে।

- আর কি?

- আর মেয়েটা হঠাৎ হঠাৎ আমার দিকে তাকাচ্ছে আর মা,মা বলে ডাকছে।আর আমি প্রত্যেকবার তার মা ডাকে চমকে উঠছি,।তখনই

নন্দিতা থেমে গেলো।হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে বললো কিছুনা,বাদ দাও।আমি জোর করে বলতে বললাম-

-তখনই? তখনই কি নন্দিতা?

- তখন কোথা থেকে যেনো তুমি এলে।মেয়লটা তোমায় দেখে বলতে লাগলো মা, আমায় বাঁচাও মা,মা ওই লোকটা আমায় নিয়ে যেতে এসেছে মা।প্রত্যেকবার এই লোকটাই আমায় মেরে ফেলে মা।আমার তুমি বাঁচাও।

- আমায় দেখে মেয়েটা এরকম বললো?

- হুম

- তারপর?

- তুমি এসে মেয়েটাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছো।আমি শত চেষ্টার পরেও আটকাতে পারছি না।তোমার পা ধরে ওকে ভিক্ষা চাইলাম, তুমি আমায় লাথি মেরে ওই মেয়েটাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছো।আমি মাটিতে পড়ে কাঁদতে লাগলাম।তুমি তখন মেয়েটাকে নিয়ে যাচ্ছো বর বলছো," আমি থাকতে তোর কোনো সন্তান হতে দিবো না আমি।এবারেও মেরে ফেললাম।বলেই একটা বিকট হাসি দিলে"

নন্দিতা এবার বলা শেষ করে আমায় জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না কেনো নন্দিতা এরকম স্বপ্ন দেখলো।আর কেনোই বা আমায় সেখানে এরুপ পাষানের মতো কাজ করতে দেখলো।আমিই কি না প্রত্যেকবার নিজের সন্তানকে মেরে ফেলি?।ভাবনার অবসান ঘটিয়ে ডাক্তার আসলো।তারা নন্দিতাকে নিয়ে গেলো এক্স রে করাতে।নিয়ে যাওয়ার সময় নন্দিতা আমায় দেখে আনেক কাদলো।আমি শুধু তাকে অভয় দিলাম, "সব ঠিক হয়ে যাবে" কথাটা বলে।আমি আর ভাইয়া বাহিরে অপেক্ষা করতে লাগলাম।

মনে মনে ভাবলাম পুরনো সেসব কথা। আমাদের বিবাহের সাত বছর অতিবাহিত হয়েছে।এই নিয়ে তিনবার নন্দিতা সন্তানসম্ভবা হলো।কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রত্যেকবারই কোনো না কোনো ভাবে আমাদের সন্তানটা নষ্ট হয়ে যায়।প্রথমবার সে একটা মৃত শিশু জন্ম দিলো।এরপর জন্মের পর কাছে গিয়ে দোলনায় দেখলাম কোনো সন্তান নেই। আর এখন!!
এর ব্যাখ্যা আমাদের কাছে আজো নেই।

ডাক্তাররা রিপোর্ট দেখতে গিয়ে মনে হলো চরম আতঙ্কে পড়ে গেলেন।তারাও হাতের পিঠ দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে নন্দিতার দিকে ভীতু নজরে তাকালো।

এরপর আমায় সাইডে এনে বললেন-

- মিঃতীব্র,আপনার স্ত্রীর পেটে কোনো সন্তান নেই।কখনো ছিলোও না।

চন্দ্ররাতের_মায়া
জয়ন্ত_কুমার_জয়
সূচনা_পর্ব

পরের পর্বের জন্য next লিখবেন 😊

04/02/2025

আমাদের ফ্লাটের আন্টি, ভালোবেসে একে অপরকে দুজন বিয়ে করেছিলো। সংসার জীবনের ৬ বছরে কেউই তাদের ভিতর কোনো ঝগড়া ঝামেলা দেখেনি। কিন্তু হঠাৎ তাদের সংসারটা এলোমেলো হয়ে যায়। ঘটনা শুরু ২০২১ থেকে। সুমি আন্টি তার পাশের বিল্ডিং এর রিমা আন্টির সাথে ২০২১ সালে বন্ধুত্ব করে। একে অপরের বাসায় নিয়মিত যাওয়া আসা আড্ডা সবকিছুই নরমালি চলতে থাকে। তারা দুই বান্ধবী সিদ্ধান্ত নেয় তারা #সাবলেট থাকবে। তারপর যেই বলা সেই কাজ তারা ২০২২ সালে সাবলেট থাকা শুরু করে। দুই বান্ধবীর ম্যাচিং জামা, জুতা, কসমেটিকস সবকিছুই ম্যাচিং চলতো। সুমি আন্টির হাজবেন্ড মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ইনকাম করতো
আর রিমা আন্টির হাজবেন্ড ২০ হাজার। গার্মেন্টস এ জব করতো। সুমি আন্টির ছিলো লাভ ম্যারেজ, আর রিমা আন্টির ছিলো এরেঞ্জ ম্যারেজ। সুমি আন্টি আর রিমা আন্টি দুজন প্রায় দেড় বছর একসাথে এক বাসায় সাবলেট ছিলো।

সুমি আন্টির জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো সাবলেট থাকা। ২০২৩ সালের মাঝে সুমি আন্টি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায় আর বাপের বাড়িতে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে যায়। আর অই সময় রিমা আন্টির হাজবেন্ড ও গ্রামে যায় দরকারে এর ভিতর রিমা আন্টির সাথে সুমি আন্টির স্বামীর সম্পর্ক তৈরি হয়। গভীরতা বাড়ে। সুমি আন্টি যখন গ্রাম থেকে বাসায় ফিরে তখন আন্টি এসে তার হাজবেন্ডের আচার-আচরণে পরিবর্তন দেখে। তিনি সুমি আন্টির সাথে সবসময় মিসবিহেভ করতো, পাশাপাশি ঘুমাতেও চাইতোনা। একসাথে খেতেও বসতোনা। আন্টিকে সবসময় ইগ্নোর করতো। এই ব্যাপারগুলো তিনি রিমা আন্টির কাছে শেয়ার করে। কিন্তু কে জানতো? এই রিমা ই তা সংসার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াবে। এভাবে ২ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর সুমি আন্টি ১ দিন রিমাকে বলে আমি আজ একটু ডাক্তার কাছে যাচ্ছি তোমার ভাইয়া যেতে পারবেনা। তুমি চলো আমার সাথে। কিন্তু, রিমা আন্টি নানান অজুহাত দেখায় যেতে চায়না। রিমা আন্টির জামাই দিনে বাসায় থাকেনা। আর রাতে ও অনেক সময় নাইট ডিউটি থাকে। যাইহোক! সুমি আন্টি ডাক্তার কাছে যায়। বাড়ি এসে দেখে মেইন দরজাটা খোলা, ভিতরে ঢুকে দেখে তার হাজবেন্ড তার বান্ধবীকে নিজ হাতে খায়িয়ে দিচ্ছে। হাসাহাসি করতেছে দুজন। এসব দেখে সুমি আন্টি কোনো রিয়েক্ট করেনি, চুপচাপ থাকে। আর তিনি তাদের এটা বুঝায় যে, সে কোনো সন্দেহ করেনি। এরপর তিনি তার বান্ধবী আর জামাইকে চোখে চোখে রাখে। একদিন আন্টি যখন রাতে ঘুমিয়েছিলো তখন তার হাজবেন্ড রিমা আন্টির রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আন্টির হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় আর তিনি তার জামাইকে খুজতে থাকে। তারপর রিমা আন্টির দরজা ধাক্কায় কিন্তু রিমা আন্টি খুলেনা, উনি বলে উনার স্বামী ঘুমায়, কিন্তু সেখানে উনার স্বামী ছিলোনা সেখানে ছিলো সুমি আন্টির হাজবেন্ড। সুমি আন্টি যখন উনার হাজবেন্ডকে কল দেয় তখন ফোনটা রিমা আন্টির রুমে রিং হয়। ব্যস এখান থেকে ঝামেলা শুরু। রিমা আন্টির সাথে সুমি আন্টির স্বামীর পরকিয়া ধরা পরে। তারপর ধীরে ধীরে আরো অনেক কাহিনী বের হয়। দ্বিতীয় পার্ট কাল লিখবো।

বিদ্রঃ সুমি আন্টির কোনো সন্তান ছিলোনা। কিন্তু রিমা আন্টির ২ জন ছেলে সন্তান ছিলো।

সুমি আন্টির হাজবেন্ড ইচ্ছে করেই বাচ্চা নিতে চাইতোনা। ২য় পার্ট পড়তে চাইলে কমেন্ট বক্সে জানিয়েন।

#সত্য ঘটনা

Address

Narayanganj
BASHUNDHARA

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when ruhi ruhi posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share