12/02/2025
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এক মা জজ সাহেব কে বলছে, জজ সাহেব এই মেয়েটি আমার মেয়ে হতেই পারে না। যে কি-না নিজের বাবাকে হ'ত্যা করতে পারে সে কখনোই আমার মেয়ে হতে পারে না। আমি এই মেয়ের ফাঁ'সি চাই।
রুনা বেগমের কথা শুনে এতোক্ষণ মাথা নিচু করে রাখা সতেরো বয়সের এক কিশোরী টলমল চোখে নিজের মায়ের দিকে তাকালো। তার মা তাকে এভাবে বলতে পারলো!
জজ সাহেব এবার সেই কিশোরী তিশা কে জিজ্ঞেস করে তার আর কিছু বলার আছে না-কি? জজের কথা শুনে গড়িয়ে পড়া চোখের পানি নিশ্চুপে মুছে বলে,,
-- জজ আঙ্কেল আমি একটা কাহিনী বলতে চাই শুনবেন?
-- আচ্ছা বলো।
তিশা একবার মায়ের দিকে চেয়ে নিলো তার মা বারবার চোখের ইশারায় না করছে যেনো তিশা না বলে, তিশা সেসবকে পরোয়া না করে সে বলতে লাগলো।
-- সময়টা আরো আট বছর আগের তখন আমাদের সংসার টা খুব ভালোভাবে আনন্দে কাটছিলো। বাবা মায়ের চোখের মনি ছিলাম। আমার যখন বয়স বয়স বারো তখন আমার বাবা মা'রা যায়।
আদালতের সবাই তিশার কথা শুনে কানাঘুঁষা করা শুরু করে। জজ সাহেব ও অবাক হয়ে চেয়ে রয় তিশার দিকে।
কোর্টের সবাইকে শান্ত করে জজ সাহেব তিশা কে জিজ্ঞেস করে,,
-- তুমি যাকে হ'ত্যা করেছো ইনি তোমার আসল বাবা নয়?
-- না ইনি আমার আসল বাবা নন।
-- তাহলে তোমার আসল বাবা কিভাবে মা'রা গেলো? আর এনাকেই বা কেনো মারলে।
-- আমার বাবা কিভাবে মা'রা গেছে সেটা আজ পর্যন্ত ও আমি জানি না,তার মৃ'ত্যু টা রহস্যই রয়ে গেলো। হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে দেখি বাবার নিথর দেহটি বাড়ির উঠানে পড়ে আছে। বাবা মা-রা যাওয়ার মাস দুয়েকের মধ্যে আমার মা আবার বিয়ে করে, যিনি খুন হয়েছে তাকে। সেই থেকে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় আমার জীবনে। না পারতাম শান্তি তে দু'বেলা পেট পুড়ে খেতে আর না পারতাম শান্তিতে ঘুমাতে।
বাসার সব কাজ আমার একা হাতে করতে হতো। আমার বয়সই বা কতটুকু ছিলো। যেখানে আমার খেলাধুলা পড়াশোনা করার কথা ছিলো সেখানে আমায় ঘরের কোনে প্রতিনিয়ত ধ'র্ষণের শিকার হতে হতো।
মূহুর্তেই কোর্টের সবাই চমকে গেলো যারা এতোক্ষণ তিশাকে কথা শুনাচ্ছিলো তারা এখন তার হয়েই সহানুভূতি প্রকাশ করছে।
জজ সাহেব তিশাকে প্রশ্ন করে,,
-- তোমার সাথে যখন এতোকিছু হয়েছে তাহলে এতোদিন চুপ ছিলে কেনো? আর তোমার মা কি জানতেন না এইসব তোমার সাথে হচ্ছে
-- আমার মায়ের জন্য তিনি আমায় বলতে নিষেধ করেছিলো বলেছিলো কোনো উপায় বের করে আমায় এখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। আর আমার এই ধ'র্ষণের ব্যাপারে তিনি জেনেছে বছর খানেক আগে থেকে। আমার মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের বছর খানেক পরেই বুঝতে পারলাম লোকটির মতলব ভালো না কারনে অকারণে বার বার কাছে ঘেসতো ছুঁয়ে দিতো। প্রথমে মা'কে এ ব্যাপারে জানালে তিনি বলেন, " তোমার বাবা হয় উনি ছুঁতেই পারে সেটাকে কেনো অন্য মানে বের করছো।
কিন্তু এ ছোঁয়া সে ছোয়া ছিলো না আমার বাবাও আমাকে ছুঁয়েছে আদর করেছে কিন্তু তার ছোয়ার খারাপ কখনো লাগে নি। একদিন আমার মা খালা বাসায় গিয়েছিলো আমায় রেখে সেদিন আর ফিরে নি মা। রাতে যখন ঐ ভদ্রলোক বাসায় ফিরে তখন মাতাল হয়ে ছিলো। তার ওমন অবস্থা দেখে মনের ভেতর ভয় জাগেছিলো তাই সেদিন রাত ঘর থেকে বের হইনি, হঠাৎ মাঝ রাতে দরজা ধাক্কার আওয়াজে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,বাবার দরজা ধাক্কাচ্ছিলো তাই না পেরে দরজা খুলেছিলাম। কিন্তু সেই খোলা টাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ালো। দরজা খোলার সাথে সাথে হিংস্র পশুর মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেদিন পারি নি আমি নিজেকে রক্ষা করতে, ওমন শক্তি শালী দেহর সাথে কি পারা যায়।
রাস্তার কু'ত্তার মতো ছিঁড়ে খেয়েছিলো সেদিন কতো চেঁচালাম নিজেকে বাঁচানোর জন্য কতো হাতে পায়ে ধরলাম তার কিন্তু সে কিছুই মানলো না। এর পরের দিন মা বাসায় আসলে দেখে বিছানার উপর শুয়ে আছি, সারা বিছানায় র'ক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শরীরে শক্তি ছিলো না। মা'কে দেখে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম, কিভাবে আমার সাথে এমন হলো সেটা জিজ্ঞেস করলে আমি সব বলে দেই, আমার মা আমাকে ছেড়ে তাদের ঘরে গিয়ে ঐ লোককে জিজ্ঞেস করে আমার সাথে কি তিনি এসব করেছেন নাকি সাথে সাথে তিনি অস্বীকার করে ফেলেন। তিনি বলেন আমি নাকি তাকে বাবা হিসেবে মানতে পারছি না দেখে এসব কাহিনী করতেছি। আমি নাকি অন্য কারোর সাথে এমন করে তার নাম দিচ্ছি যাতে তাদের সংসার ভেঙে যায়। সেটা শুনে আমার মা সেদি জা'নোয়ারের মতো পিটিয়েছিলো। এমনিতেই শরীরে শক্তি ছিলো না তার উপর তার মাই'র মনে হচ্ছিলো সেদিনই বুঝি আমার প্রান পাখি বেরিয়ে যাবে। আমাকে মে'রে ক্ষান্ত হলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আর তখন ঐ লোক এসে আমায় হুমকি দেয় আমি যদি আবার এমন বলি তাহলে আবার আমার মা-কে এসব ভুল ভাল বুঝিয়ে আমায় আবার মা'ইর খাওয়াবে।
মা যেদিনই বাসার বাহিরে চলে যেতো সেদিনই আমার খুঁড়ে খুঁড়ে খেতো, আমি পুলিশের কথা বললে আমায় বলে আমায় নাকি জা'নে মে'রে ফেলবে। কিন্তু আমার আর ধৈর্যে কুলাচ্ছিলো না এমন ভাবে ম'রার চেয়ে জেলে গিয়ে ম'রা অনেক ভালো তাই সেদিন রাতে যখন আমার সাথে শারীরিক মেলামেশা করতে আসে আমি বিছানার কাছে ছু'রি রেখে দিয়েছিলাম তখন সুযোগ বুঝে ছু'রি তার পিঠে, পেটে বসিয়ে দেই। এই হচ্ছে আমার কাহিনি আঙ্কেল। তিশার উকিল উঠে সব মেডিকেল রিপোর্ট জজের কাছে জমা দেয়,যেখানে প্রমানিত তিশা ধ'র্ষণের শিকার আর তিশার সৎ বাবাই সেটা করেছে।
জজ সাহেব সহ আদালতের প্রত্যকটা মানুষের চোখ টলমল করছে এইটুকু একটা মেয়ের সাথে এতোকিছু ঘটে গেলো। যেখানে খেলাধুলা পড়াশোনা করার বয়স সেখানে ধর্ষণের শিকার সাথে খুনেরও কেস। মেয়েটার ফিউচার শেষ।
জজ সাহেব তিশার উদ্দেশ্যে বলে,,
-- তোমার সাথে যা হয়েছে তা সত্যিই দুঃখ ও ঘৃণিত জনক। কিন্তু আইনের কাছে আমি বাঁধা আমার মন চাচ্ছে তোমায় সাজা না দিতে কিন্তু আইনকে তো দিতেই হবে। তাই আমার তো এবার রায় দিতেই হবে, সমস্ত সাক্ষী প্রমান এই নির্দেশ দেয় যে ভদ্রলোক সাহেলের হ'ত্যা তিশার হাতেই হয়েছে আর তথ্য প্রমান থেকে এটাও জানা গেছে ভদ্রলোক সাহেল তিশার উপর নির্মম ধ'র্ষণের কার্যক্রম চালিয়েছিলো। সাহেল কে হ'ত্যা করার জন্য আসামি তিশার সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করা হলো সেই সাথে শিশুশ্রম ও অন্যায়ের সাথে থাকার জন্য মিস রুনা বেগম কে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করা হলো।
পুলিশ রুমা ও তিশা কে নিয়ে যাচ্ছিলো পেছন থেকে জজ তিশাকে ডেকো বললো,,
-- চিন্তা করো না তুমি আমি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবো তোমার শাস্তি কমানোর জন্য, আর তার জন্য যা যা করতে হবে আমি সেটা অবশ্যই করবো।
তিশা জজের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সামনে ঘুরে চলে যায় আর মনে মনে বলতে লাগে,,
-- কি-ই বা ছিলো আমার এ জীবন আর কি'বা পেলাম,যেখানে নিজের মায়ের উচিত ছিলো আমায় সাহায্য করা সেখানে আজ এক অচেনা লোক করতে চাচ্ছে।
সমাপ্ত
অণুগল্প
কি_পেলাম_এ_জীবনে
Raiha_Zubair_Ripte
c.