16/10/2025
রিপন মিয়ার অনলাইন ক্যারিয়ার সম্ভবত শেষ। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে অনলাইনে টিকে থাকতে যতটা মানসিক শক্তি, দৃঢ়তা ও লজ্জাহীনতা দরকার, বোধ করি, অতটা তার নাই। গ্রামের একটা সহজ-সরল মানুষ সে। কথাবার্তাতেই পরিষ্কার। কোথায় কী বলতে হয় সেই জ্ঞানও নেই। কুটনৈতিক ধারায় বলবার কায়দা জানে না। ফলে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, আবার ফিরতে সময় লাগবে তার। সেটা অনেক দীর্ঘও হতে পারে।
সময় টিভিতে পরিবারসহ যে সাক্ষাতকার সে দিয়েছে, সেখানে বেশ কয়েকটা জিনিস দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমার মনে হয়, তথাকথিত শিক্ষিত ও সভ্য সমাজের তার কাছ থেকে সেগুলো শেখা উচিত। এখানে দুটো বিষয় বলছি।
১. চরম অজ্ঞতা সত্ত্বেও আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা: সাক্ষাতকারে বারবার সে বলছিল, আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। এমনভাবে বলছিল যে, শ্রোতার হৃদয়ে আঘাত করে। হৃদয় থেকে উৎসারিত সত্য। দীন ও দুনিয়ার কোনো জ্ঞান না থাকার পরও সে দৃঢ়ভাবে জানে ও বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাআলা যা করেছেন ভালোর জন্যই করেছেন। এতেই তার কল্যাণ। এই বিশ্বাসটা একটা শক্তি। যে শক্তি মানুষকে টিকে থাকতে ও সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই দৃঢ় আস্থা না থাকার কারণে অনেক সময় শিক্ষিত জনেরাও বড় বড় ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। রিপন মিয়ার কাছ থেকে তথাকথিত শিক্ষিতদের এটা শেখা উচিত।
২. পুরুষালী আত্মমর্যাদাবোধ: সহজ সরল রিপন মিয়া মনে করে অনলাইন ভালো জায়গা না। সে নিজে খারাপ হয়েছে, পরিবারকে খারাপ হতে দিতে চায় না। তাই, কোনক্রমেই স্ত্রী-সন্তানকে মিডিয়ার সামনে সে আনতে নারাজ ছিল। এমনকি সাক্ষাতকারে যখন তার স্ত্রীকে নিয়ে আসার কথা উঠলো, সহজ সরল মানুষটা কেঁদে ফেললো। স্ত্রীকে সারা দুনিয়ার লোকেরা দেখবে, এটা তার গায়রতে বেধেছে। স্ত্রীকে পর্দা করাতে না পারলেও এটুকু আত্মমর্যাদাবোধ তার আছে। অথচ, অনেক দ্বীনি লিবাস পরা শিক্ষিতরাও বৌ নিয়ে ভিডিও করে বেরায়। অনেক শায়েখ ও ধর্মীয় বক্তাও স্ত্রীর ব্যাপারে ওটুকু গায়রত দেখাতে পারে না রিপন মিয়ার মধ্যে যা আছে। কাপল ভ্লগারদের কথা তো বলাবাহুল্য। অশিক্ষিত মানুষটার কাছ থেকে এটা শিখে নেওয়া কথিত শিক্ষিতদের বিশেষ দরকার।
অনলাইনে ক্ষণিকের প্রসিদ্ধি সম্ভবত রিপন মিয়ার স্থায়ী ক্ষতি করে গেলো। আগের সহজ সরল কাঠমিস্ত্রির জীবনেও এই অভিজ্ঞতা তাকে কষ্ট দেবে। তারপরও কাঠমিস্ত্রির সেই জীবন তার জন্য ভালো। সেই জীবনে সে ফিরুক। নির্ঝঞ্ঝাট জীবন যাপন করুক। পরিবার নিয়ে ভালো থাকুক। যে দৃঢ় ঈমান সে ধারণ করে তার সাথে আমলের সংযুক্তি হোক। হালাল-হারামের ইলমের সংযুক্তি হোক। ফরজ-ওয়াজিবের জ্ঞান অর্জন করুক। পরকালের সামানা তৈরী করুক। পরকালের প্রসিদ্ধি আসল প্রসিদ্ধি। পরকালের সফলতা আসল সফলতা। আল্লাহ তাআলা তাকে সফল হওয়ার তাওফিক দান করুন।
আমার কথাগুলোই যেনো সাজিয়ে লিখেছেন প্রিয় ভাই Nurujjaman Nahid hf.