28/07/2023
#চট্টগ্রামের_বিয়ে :-
(দয়া করে সবাই পড়বেন)
পৃথিবীর অন্য জায়গা থেকে চট্টগ্রাম হচ্ছে সম্পূর্ণ আলাদা। কারন চট্টগ্রামের মানুষ যৌতুক ছাড়া বিয়ে করে না। চট্টগ্রামের মানুষ যৌতুককে বৈধতা দিয়েছে দীর্ঘকাল থেকে। এখানে যৌতুক নেওয়াটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষ বিয়ের সময় নগদ টাকা নেওয়াকে যৌতুক মনে করে আর বাকি রীতি গুলোকে বরপক্ষের অধিকার মনে করে।
যৌতুকের বিভিন্ন ধরনের রূপ নিম্নে উল্লেখ করা হল।
১: #খাবারের_পর্ব :-
চট্টগ্রামের বিয়ের সময় বর পক্ষের ৫০০/৮০০/১০০০/২০০০ মানুষকে খাওয়াতে হয়। খাওয়ার ম্যানুতে থাকে চিংড়িমাছ,গরুর মাংস,খাসির মাংস,রূপচাঁদা মাছ,ডিম,পোলাওভাত,মুরগি,চিকেন টিক্কা,পায়েস,মিনারেল ওয়াটার,কুক ও বিভিন্ন ধরনের সবজিসহ আরো অনেক আইটেম। এসব আইটেম থেকে কিছু কম হলে বা কোন আইটেমে সামান্য লবণ বেশি বা কম হলে শুরু হয়ে যাবে কনে পক্ষের সাথে তর্কবিতর্ক । এগুলো তদারকির জন্য বরপক্ষ একজন ব্যারিষ্টার রাখে যার কাজ হল কনে পক্ষের দোষ বের করা। এরপর বরকে দিতে হয় স্বর্ণের চেইন ও স্বর্ণের আংটি । তবে বিয়ের পূর্বে যদি আকদ হয় তখন কিন্তু প্রায় ২০০/৩০০ জন মানুষের খাবারের আয়োজন করতে হয়। বিয়ের পর শুরু হয় বিভিন্ন পর্বের দাওয়াত। নতুন জামাই বিয়ের পর শাশুর বাড়িতে যাবে তবে একা যেতে পারবে না বা ১০-১৫ জনকেও নিয়ে যেতে পারবে না। নতুন জামাইকে ৮০/১০০/১৫০ জনের বিশাল বহর নিয়ে শাশুর বাড়িতে যেতে হবে। যার নাম চট্টগ্রামের ভাষায় (চোরা বেরানি)। এখানে কিন্তু খাবারের আইটেম রাখতে হবে বিয়ের খাবারের আইটেমের চেয়ে বেশি। এখানে কিন্তু অনেক কু-প্রথা চালু রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ''চোরা বেরানিতে'' কনে পক্ষের জিনিস চুরি করা। এবার নতুন জামায়ের পর্ব শেষ হলে কিছুদিন পর শুরু হবে শাশুর ও শাশুড়িদের পর্ব কারন নতুন জামায়ের সাথে শাশুড়ি আসতে পারবে না কারন এটা তথাকথিত ''বুড়া/বুড়ির'' মানা (নিষেধ)।
শাশুড়িও তাদের বিশাল বহর নিয়ে এসে খেয়ে যাবে এবং সাথে অনেক খাবার নিয়েও যাবে। এখানে কিন্তু শেষ না। বিয়ের সময় বরের ভাই/বোনের জামায় বা অন্য কেউ বিদেশে ছিল যার কারনে সে বিয়েতে আসতে পারে নাই। তাই সে যখন দেশে আসবে তখন সে ১২-১৫ নিয়ে নিয়ে যাবে। তবে সে শুধু খেয়ে আসলে হবে না। খাবারের পর তাকে একটা স্বর্ণের আংটিও দিতে হবে।
বিয়ের পর শুরু হবে চট্টগ্রামের ভাষায়
''বছরি জিনিস'' দেয়ার পালা। অর্থাৎ আমের মৌসুম আসলে দিতে হয় ৫০-৬০ কেজি আম, আনারস, কাঠালসহ আরো বাহারি রকমের ফল।
রমজানের সময় দিতে হয় মেয়ের শাশুর বাড়ির চৌদ্দ গোষ্টিকে ইফতারি আরো অনেক আইটেম।
ঈদের সময় বরের পরিবার এবং বরের বোনের পরিবারের সবাইকে মার্কেটে নিয়ে শপিং করে দিতে হয়।
কুরবান আসলে দিতে হবে গরু, গরু রান্না করার জন্য তৈল, মসাল্লা, পিয়াজ ইত্যাদি। কুরবানের দিন আবার বেশি করে মাংস, রুটি, কলা,কুক এগুলো দিতে হয়।
মহরম আসলে দিতে হবে ১৫/১৬টি মুরগি, ডিম ও ৮/১০ কেজি গরুর মাংস রান্না করে।
এছাড়া দিতে হবে তিচ্ছেলি বানানোর সব আইটেম। (তিচ্ছেলি হল এক প্রকারের খাবার যেটা চট্টগ্রামের মহরমে খাওয়া হয়)
শীতকাল আসলে দিতে হবে কয়েকশ শীতেরপিটা, তালপিটা ইত্যাদি। এছাড়া বাৎসরিক জিনিসের মধ্যে আরো অনেক আইটেম রয়েছে যেগুলু সময়ের কারনে উল্লেখ করা হয় নাই।
২: #ফার্নিচার_টয়লেটের_বদনা_ইত্যাদি:- চট্টগ্রামের বিয়ের পূর্বেই বর পক্ষের বাড়িতে ফার্নিচার পৌঁছে দিতে হয়। ফার্নিচারের মধ্যে থাকে দামি বিভিন্ন ধরনের উন্নতমানের জিনিস। যেমন দামী খাট, সোফা, চেয়ার,টেবিল, আলনা,ট্রি টেবিল, ফ্রিজ, টিভি, গ্যাসের চুলা ইত্যাদি। এছাড়া কনে পক্ষের অতিথিদের দেয়া সব উপহারের জিনিসও বর পক্ষকে দিয়ে দিতে হয়। এখানে কিন্তু শেষ না সাথে একটি টয়লেটের বদনা (লুড়া) ও দিতে হয়।
৩: #আকিকা:-
বিয়ের পর যখন কনের বাচ্চা হয় তখন কিন্তু আকিকার গরুটাও কনে পক্ষ থেকে দিতে হয়। এছাড়া বাচ্চার দোলনা, বিভিন্ন ধরনের কাপড়সহ আরো অনেক কিছু দিতে হয়।
এখানে কিন্তু আরো কিছু আছে যেগুলো সময়ের অভাবে লিখতে পারছি না।
#বিশেষ_দৃষ্টাব্য:-:এখানে আমি চট্টগ্রামের বিয়ের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি, যদিও আমার চিত্রের সাথে অনেক জায়গার চিত্র মিল আছে। আবার অনেক জায়গার অবস্থা আরো খারাফ। এছাড়া চট্টগ্রামে মহানগরীতে এসব কু-প্রথা কিছু কম কারন সেখানে সবাই প্রকৃত চাঁটগাইয়া না। অনেক বাইরের জেলা থেকে এসে স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছে। যদিও চট্রগ্রামে কিছু যৌতুক ছাড়া বিয়ে হয় কিন্তু সেরকম বিয়ে হয় হাজারের মধ্যে মাত্র কয়েকটি।
এছাড়া চট্টগ্রামের মানুষ এগুলো নিয়ে লজ্জিত হওয়া দূরের কথা বরং এগুলো নিয়ে আরো গর্ববোধ করে। আরো বলবে চাঁটগাইয়াদের মন অনেক বড়,
হাতের সব আঙ্গুল সমান না।
সব চাঁটগাইয়া এক না। আরো অনেক কিছু। আবার বেশি বাড়াবাড়ি করলে বলবে বিয়েতে কনে পক্ষ কাবিন বেশি ধরে তাই আমরা এগুলো বেশি করে নিয়। তবে কাবিন বেশি ধার্য করা উতিত না। কাবিনের কারনে বেশির ভাগ বিয়ে শুদ্ধ হয় না। কাবিনের কথা বলে আমাদের চাঁটগাইয়া মানুষ যৌতুকের বিষয়টা এড়িয়ে যাবে। যেন আপনি আর বেশি কিছু বলতে না পারেন। কিন্তু কাবিন ধার্য করতে নগদে তাই সিংসভাগ ভাগ মানুষ ৫০ লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে করতে রাজি কিন্তু নগদে ১ লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে করতে রাজি হবে না। যদিও ১ লক্ষ টাকা কাবিন ধার্য করলেও কনের পরিবার ১টাকা পাবে না ৫০ লক্ষ টাকা কাবিন ধার্য করলেও কনের পরিবার ৫ টাকা পাবে না। এগুলো শুধু ফরমালেটি। কিন্তু কাবিনটা শুদ্ধ না হলে বিয়েও শুদ্ধ হবে না।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বদলে গেছে সমগ্র বিশ্ব। এমনকি আমাদের দেশও অনেক বদলে গেছে। কিন্তু বদলাতে পারি নাই আমরা চট্টগ্রামের মানুষ গুলো। আমাদের সমাজ থেকে দূর করতে হবে এসব অপসংস্কৃতি গুলো। দু:খের বিষয় হচ্ছে এসব অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সচেতনতা চালানোর মানুষ খুবই কম আর যারা আছে তাদের কেউ মূল্যায়ন করে বরং তাদের নাজেহাল করতেছে। যার ফলে তারাও নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছে।
আসুন আমরা সকলে এসব অপসংস্কৃতি বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
সংগৃহীত।।।।।।।