02/07/2025
আমরা হকপন্থী আলেমদেরকে কিভাবে চিনবো?
হকপন্থী আলেমদের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য যেনে রাখুন!
👉যারা নবী-রাসূলগণের দাওয়াতী নীতি অনুসরণ করেন: আলেমে দ্বীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল দাওয়াতের ক্ষেত্রে নবী-রাসূলগণের নীতি অনুসরণ করা। নবী-রাসূলগণ মূলত: জীবনের সর্বক্ষেত্রে শিরক মুক্ত তাওহীদ বিশ্বাস ও ত্বাগূতদকে বর্জন এবং বিদ‘আতমুক্ত আমলের দিকে মানুষকে আহবান করেছেন। আলেমগণ মানুষকে সেদিকেই আহবান করবেন। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ- ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকটে আমরা রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগূত থেকে দূরে থাক’
(নাহল ১৬/৩৬)।
👉যারা হকের উপর অবিচল থাকেন: আল্লাহ বলেন,الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ فَلاَ تَكُنْ مِنَ الْمُمْتَرِينَ ‘সত্য কেবল তোমার পালনকর্তার পক্ষ হ’তে আসে। অতএব তুমি সংশয়বাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’
(আলে ইমরান ৩/৬০)।
আলেমে দ্বীনের বৈশিষ্ট্য হ’ল হকের উপর অটল থাকা। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন,لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ ‘চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হক-এর উপর বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে’।
(মুসলিম হা/১৯২০)।
👉যারা নিজের বিরুদ্ধে হ’লেও সর্বদা হক কথা বলেন: আলেমগণ সর্বদা হকের পথের দিশারী হবেন। যেমন কোন বক্তব্য বা ফৎওয়া প্রদানের পর পরবর্তীতে যদি তা ভুল প্রমাণিত হয়, তবে তা থেকে ফিরে আসা এবং ভুল স্বীকার করে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদান একজন আলেমের জন্য আবশ্যক। এক্ষেত্রে নিজের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখার জন্য ইলম গোপন করা, জেনেশুনে ভুল ফৎওয়া প্রদান করা চরম অন্যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ يَعْلَمُهُ فَكَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ، ‘কাউকে তার জ্ঞাত কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে যদি সে তা গোপন রাখে, ক্বিয়ামতের দিন তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেওয়া হবে’।
(আহমাদ ২/৭৮৮৩; আবূদাঊদ ২/৩৬৫৮; তিরমিযী ২/২৬৪৯; ছহীহুল জামে‘ ৬২৮৪; মিশকাত হা/২২৩।)
👉যাঁরা সত্যের সংগ্রামে ও মিথ্যার মূলোৎপাটনে সীসাঢালা প্রাচীর।
👉যাঁরা নিজেদের জান-মাল আল্লাহর কাছে বিক্রয় করে দিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে আল্লাহ বলেন,
اِنَّ اللّٰهَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ وَ اَمۡوَالَهُمۡ بِاَنَّ لَهُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟ وَعۡدًا عَلَیۡهِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَهۡدِهٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِكُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِهٖ ؕ وَ ذٰلِكَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ
“নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত। তারা আল্লাহ্র পথে যু_দ্ধ করে, অতঃপর তারা মারে ও মরে তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের হক ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? সুতরাং তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও। আর সেটাই তো মহাসাফল্য”।
(সূরা: আত তাওবা ৯: ১১১)
👉যাঁরা নিজেদের বাড়ী-ঘর ত্যাগ করে পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল ও গিরিগুহাকে নিজ আবাসস্থল বানিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “বল, ‘যদি তোমাদের পিতারা, আর তোমাদের সন্তানেরা, আর তোমাদের ভাইয়েরা, আর তোমাদের স্ত্রীরা, আর তোমাদের গোষ্ঠীর লোকেরা আর ধন-সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর ব্যবসা তোমরা যার মন্দার ভয় কর, আর বাসস্থান যা তোমরা ভালবাস (এসব) যদি তোমাদের নিকট প্রিয়তর হয় আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করা হতে, তাহলে অপেক্ষা কর যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর চূড়ান্ত ফয়সালা তোমাদের কাছে নিয়ে আসেন।’ আর আল্লাহ অবাধ্য আচরণকারীদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন না”।
(সূরা: আত তাওবা ৯:২৪)
👉যাঁরা কখনো বন্দুকের ছায়াতলে আবার কখনো ট্যাংকের গোলায় জান্নাত খুজে বেড়ায়।
👉যাঁরা অসহায় নারী-শিশু ও মজলুমানদের ফরিয়াদের জবাবে অলী ও নাসীর (বন্ধু ও সাহায্যকারী) হয়ে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
👉যাঁরা গভীর রজনীতে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মহান রবের দরবারে শাহাদাতের মৃত্যুর জন্য আবেদনে মগ্ন থাকেন।
👉যাঁরা দুশমনের মোকাবেলা করতে গিয়ে হাত-পা, নাক-কান ইত্যাদি হারিয়ে পঙ্গুত্বের জীবন যাপন করছেন।
👉যাঁরা ঘোড়ার লাগাম ধরে কোন অসহায় নারী ও শিশুর চিৎকার ও মজলুম ভাইয়ের আহবানে সাড়া দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত।
👉যাঁরা পার্থিব ভোগ-বিলাসিতা তাদের লক্ষ্য নয়, বরং আখিরাতের জীবন তাদের কাছে বেশি মূল্যবান।
তবে একজন আলেমকে বহুবিধ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হ’তে হয়। প্রকৃত আলেম তিনি, যিনি আল্লাহ সম্পর্কে, তাঁর প্রেরিত জীবন-বিধান পবিত্র কুরআন এবং ছহীহ সুন্নাহ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান রাখেন। যিনি মানুষের মধ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করেন। যিনি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে জ্ঞান অর্জন ও তার প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। তাকেই প্রকৃত আলেম বলা হয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে হকপন্থী আলেমদের অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন, আমীন ইয়া রাব্বি।
✍️আবু সাঈদ আল-খুদরী