10/12/2023
কাঠুরিয়া ও সুবর্ণকুঠার
দেবেশ ঠাকুর
এক দরিদ্র কাঠুরিয়া সাগরের খাড়িতে কাঠ কাটিতে গিয়াছিল। অসাবধানে তাহার কুঠারটি
পিছলাইয়া জলে পড়িয়া গেল। জীবিকার একমাত্র সম্বল কুঠারটি হারাইয়া কাঠুরিয়া ক্রন্দন
করিতে লাগিল।
সহসা সালঙ্কারা পট্টবস্ত্র পরিহিতা অপরূপা জলদেবী একখানি সোনার কুঠার লইয়া
কাঠুরিয়াকে কহিলেন, 'বাছা কান্দিও না। এখানি কী তোমার কুঠার?'
সৎ কাঠুরিয়া কহিল, 'জননী ইহা সুবর্ণকুঠার। আমি দরিদ্র। ইহা আমার নহে।'
পুনশ্চজলদেবী জলে ডুব দিলেন।জলতলে দীর্ঘ অনুসন্ধানে তাঁহার
বস্ত্র কিঞ্চিৎ মলিন হইল। এক্ষণে একটি রৌপ্য নির্মিত কুঠার
দেখাইয়া কহিলেন, 'বাছা এখানি কী তোমার?'
দুখি কহিল , 'মাতা, ইহা রৌপ্য নির্মিত। ইহা আমার নহে।'
জলদেবী পুনশ্চ অবগাহন করিলেন। প্রচুর সন্ধানে তাঁহার
বস্ত্র বিবর্ণ হইল। দুচারখানি অলঙ্কার হৃত হইল। এক্ষণে
একটি পিত্তল কুঠার দেখাইয়া কহিলেন, 'বৎস, এখানি কি তোমার?'
পুনশ্চ ক্রন্দনরত কাঠুরিয়া কহিল,'জননী, আমি পিত্তল নির্মিত কুঠার কোথায় পাইব?'
জলদেবী পুণর্বার জলতলে আবগাহন করিলেন। খুঁজিতে খুঁজিতে
তাঁহার বাস ছিন্ন হইল, সকল অলঙ্কার খসিয়া পড়িল। অতঃপর শীতকম্পিত কলেবরে
জলজ ঝাঁজি মাখিয়া উঠিয়া একরাশ ধুলামাটি কাদা দেখাইয়া কহিলেন, 'বাছনি, জলতলে
ইহা ভিন্ন আর কিছু নাই।'
কাদামাটি জলজ ঝাঁজির মধ্যে মিশিয়া ছিল একরাশ গেঁড়ি - গুগলি - শামুক - ঝিনুক বা অন্য
কিছু। সৎ কাঠুরিয়া কহিল, 'আর অনুসন্ধানের প্রয়োজন নাই মাতা। এগুলিই আমাকে দাও।
গৃহে লইয়া যাই।'
কাঠুরিয়ার স্পর্শ পাইবা মাত্র সেই সামান্য বস্তু বাংলা বর্ণমালা হইয়া মাটিতে ঝরিয়া পড়িল।
যে স্থলে পড়িল তাহা বাংলাদেশ হইয়া গেল।
ছবিটি সংগৃহীত