05/07/2025
আজ শুক্রবার ছিল। দুপুরের পর বের হলাম তিনজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। বেরিয়েছিলাম একটুখানি মুক্ত হাওয়া নেওয়ার জন্য। বেরিয়ে ভালই লাগলো, হালকা খাওয়া-দাওয়াও করলাম। তবে আজকের দিনটা কেমন জানি একটু গভীর হয়ে উঠলো আমার কাছে। আজ আমি আমার জীবনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নিয়ে ভাবলাম—একটা ছাত্রজীবন, আরেকটা আমার ভবিষ্যতের বিবাহিত জীবন।
আজকের শহরটাও ছিল একরকম মোহময়। প্রথম অধ্যায়টা ছাত্রজীবন—এই জীবনটা কেমন জানি অঙ্কের কঠিন এক সমীকরণের মতো, অথচ অনেক সময় খুব সহজ মনে হয়। পড়াশোনা করছি, ঘুমোচ্ছি, মাঝেমাঝে কিছু না ভেবেই বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। কোনো দুশ্চিন্তা নেই, কারণ বাবা-মা আছেন। ১০ তারিখের মধ্যে ওনারা বেতন দেবেন, সেটাও জানি। আমি একে 'বেতন' বলি কারণ এই টাকাটা যেন নিজের জন্যই খরচ করি—নিজেকে খুঁজে পাওয়ার একটা চেষ্টায়। অথচ এই খরচটা আসলে বাবা-মার কষ্টার্জিত অর্থ, বিনিময়ে ওনারা শুধু চান একটু সম্মান, যেন গর্ব করে বলতে পারেন—"এই আমার ছেলে!"
আজ মাগরিবের নামাজ শেষে এক বন্ধুকে দেখা করতে গেলাম পুলিশ লাইন মাঠের পাশে এক পার্কসদৃশ জায়গায়। বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। রাত নেমে এলো। ঠাণ্ডা হাওয়ায় শহরের আলো গুলো যেন আরও ঝকমক করে উঠল। পাশে ছিলো আমার বন্ধু। চারপাশে নজর দিতেই দেখি বেশিরভাগ মানুষ এসেছে পরিবার নিয়ে—স্বামী-স্ত্রী আর তাদের ছোট ছোট বাচ্চা। যারা কথা বলতে পারে, হাঁটতে পারে, ছোটাছুটি করে। প্রেমিক-প্রেমিকা সেরকম দেখলাম না। বেশিরভাগই হয় যুবক নয়তো একটু বেশি বয়সের দম্পতি।
সেই পার্ক থেকে বেরিয়ে পড়লাম সুপার মার্কেট রোডে। দোকানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু মানুষের চলাচল থেমে নেই। সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে, অনেক বয়স্ক মানুষ বন্ধুদের সঙ্গে বসে চা খাচ্ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন।
আমি পানির শরবত খেতে গিয়েছিলাম, তখন একটা দৃশ্য মন ছুঁয়ে গেল। এক ভাই আর তার স্ত্রী বাইকে করে এসেছেন। আপুর পরনে ছিল তিন পিস আর বড় হিজাব, হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা, কিন্তু মুখটা খোলা ছিল। ভাইটা দোকানিকে বললেন আপুর জন্য এক গ্লাস শরবত দিতে। আপু প্রথমে খেলেন, পরে ভাইকেও অনুরোধ করলেন একটু খেতে, শুরুতে না করলেও শেষে তিনিও খেলেন। সেই মুহূর্তটা যেন নিঃশব্দে অনেক কিছু বলে দিল—ভালোবাসা, যত্ন, বন্ধন।
আজকের দিনটা থেকে অনেক কিছু শিখলাম। ভালোবাসা এমনই হওয়া উচিত—সপ্তাহের ক্লান্তি শেষে প্রিয় মানুষটাকে সময় দেওয়াটাই সবচেয়ে বড় প্রশান্তি। সময় দিলে সম্পর্কগুলো শক্ত হয়, মুহূর্তগুলো মধুর হয়।
এই শহর কখনো ঘুমায় না। বন্ধ দোকান, আলোহীন রাস্তা, অথচ কত মানুষ প্রিয়জনের সাথে হাঁটে, আড্ডা দেয়, বাইকে ঘোরে কিংবা একসাথে এক গ্লাস শরবত ভাগ করে খায়। পুরো সপ্তাহের ব্যস্ততাকে একপাশে রেখে শুক্রবার যেন একটুকরো শান্তি, ভালোবাসার দিন।
আমারও ইচ্ছে করে—একদিন বিকেলটা উৎসর্গ করবো আমার প্রিয় মানুষের জন্য। হয়তো একদিন সে বাইকের পেছনে বসে থাকবে, আর আমি শুনবো তার ছোট্ট একটি আবদার—
“এক গ্লাস শরবত খাওয়াবে?”
Send a message to learn more