31/07/2024
হাইকোর্টে মিথ্যে ও ভুয়া তথ্য দিয়ে বাতিল হওয়া প্রার্থীতা ফেরানোর অভিযোগ বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে, আদালতে মামলা
প্রোব নিউজ : পাবনার বেড়া উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবুর বিরুদ্ধে মিথ্যা হলফনামা দাখিল ও আদালতে অসত্য তথ্যে রীট আবেদনের মাধ্যমে প্রার্থীতা বাতিল স্থগিত করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমান দিয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদনের পর, নির্বাচন ট্রাইবুন্যাল যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরাজিত প্রার্থী আব্দুল বাতেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে আগামী ২১ জুলাই শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন আদালত।
মামলার লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, প্রথম ধাপে ১৫৬টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে রেজাউল হক বাবু, আব্দুল বাতেনসহ মোট ৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। জেলা নির্বাচন অফিস মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করে ৭ জনকে বৈধ ও নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ১৭ এর অনুসারে রেজাউল হক বাবুর মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
রেজাউল হক বাবুর মনোনয়ন বাতিলের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ধারা ৮ এর উপধারা (২) এর (জ) অনুযায়ী কোন সমবায় সমিতি এবং সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ব্যতিত, সংশ্লিষ্ট উপজেলা এলাকায় সরকারকে পণ্য সরবরাহ করার জন্য বা সরকার কর্তৃক গৃহীত কোন চুক্তির বাস্তবায়ন বা সেবা কার্যক্রম সম্পাদনের চুক্তিতে আবদ্ধ থাকলে কোন ব্যক্তি চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংগ্রহণের সুযোগ পাবেন না। কিন্তু নির্বাচনকালীন সময়ে প্রার্থী রেজাউল হক বাবু বিআইডব্লিউটিএ-র নগরবাড়ী-কাজিরহাট-নরাদহ নদী বন্দর এলাকার ঠিকাদার, ইজারাদার ও সরবরাহকারী হিসেবে সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। এছাড়া অনলাইনে দাখিলকৃত হলফনামায় স্বাক্ষর না করায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা-২০১৩ এর বিধি ১৭ এর উপবিধি (ঙ) অনুযায়ী অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন বলে বিবেচিত হন।
বাতিল হওয়া প্রার্থীতা ফেরত পেতে রেজাউল হক তার মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল বোর্ডে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করলে ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত শুনানীতেও আপিল নামঞ্জুর হয় এবং প্রার্থীতা বাতিলের সিন্ধান্ত বহাল থাকে।
মামলার অভিযোগে আব্দুল বাতেন আরো বলেন, প্রার্থীতা ফেরত পেতে রেজাউল হক আপিল আবেদন না-মঞ্জুর আদেশটি চ্যালেঞ্জ করে অসত্য তথ্য দিয়ে এবং তার নামীয় নগরবাড়ী-কাজীরহাট নরাদহ ঘাটের ইজারা তার ছোট ভাইয়ের নামে ২০১৬ সালে হস্তান্তর করা হয়েছে দেখিয়ে ভুয়া হলফনামা দাখিল করে হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন দায়ের করেন। ২৩ এপ্রিল বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে শুনানী শেষে প্রার্থীতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিতাদেশের রুল ও নির্দেশনা প্রাপ্ত হয়ে হেলিকপ্টার প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং ভোটারদের মাঝে প্রভাব বিস্তার ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে নির্বাচনে বিজয়ী হন।
মামলার আরজিতে সংযুক্ত নথি থেকে জানা যায়, রেজাউল হক নগরবাড়ী-কাজিরহাট-নরাদহ নৌবন্দরে ইজারাদার হিসেবে বাদী হয়ে চেয়ারম্যান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করে পাবনার বেড়া উপজেলা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা যার নং- ৮৫২/২০২১ দায়ের করে স্থগিতাদেশ নিয়ে এখনো নগরবাড়ী- কাজিরহাট-নরাদহ নৌবন্দরে লেবার হ্যান্ডেলিং ও রাজস্ব আদায় করে আসছেন।
এর পাশাপাশি, রেজাউল হক মেসার্স জালালাবাদ ইলেক্ট্রিক হাউজের প্রোপাইটর হিসেবে বাদী হয়ে নগরবাড়ী-কাজীরহাট-নরাদহ নদী বন্দরে শুল্ক আদায় কেন্দ্রের ইজারা বিষয়ে চেয়ারম্যান, অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করে বেড়া উপজেলা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে আরেকটি মামলা যার নম্বর ৬৫/২০২৩ দায়ের করেন। যা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রত্যাহার করে নেন। পরে, যুগ্ম জেলা জজ, ১ম আদালতে আবারো একটি মামলা দায়ের করেন যার নম্বর ৫৫/২০২৩ দায়ের করেন যাতে বাদী মেসার্স জালালাবাদ ইলেকট্রিক হাউজের প্রোপ্রাইটর রেজাউল হক এবং বিবাদী চেয়ারম্যান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ যা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া এসকল নৌবন্দরে শুদ্ধ ও নগরবাড়ী পার্কিং চার্জ আদায়ের রশিদে ইজারাদার হিসেবে এখন পর্যন্ত রেজাউল হক বাবুর নাম বহাল রয়েছে।
এ বিষয়ে বাদী আলহাজ্ব আব্দুল বাতেন বলেন, দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উচ্চ আদালতে ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে রেজাউল হক জাতির সাথে প্রতারণা করেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তার ছেলের সহায়তায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা ও প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন। তার প্রতারণার বিষয়টি তার নিজের দায়ের করা একাধিক মামলা, বিআইডব্লিউটিএর চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর ও রশিদে দালিলিক ভাবে প্রমাণিত। আমি নির্বাচন কমিশনকে প্রমাণাদি দিয়ে গেজেট ও শপথ বাতিলের জন্য চিঠি দিয়েও প্রতিকার পাইনি। আশা করছি আদালতে ন্যায় বিচার পাবো।
পাবনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আব্দুল বাতেনের অভিযোগ ও মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন জানিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলা নির্বাচনে আপিল বোর্ডের প্রধান ও পাবনা জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান বলেন, রেজাউল হকের প্রার্থীতা বাতিলের আদেশের উপর উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। মামলার বিষয়টি শুনেছি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে, আব্দুল বাতেনের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু। তিনি বলেন, ইজারার জন্য নয়, অনলাইন হলফ নামায় ভুলবশত সাক্ষর না করায় প্রার্থীতা বাতিল হয়েছিলো। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিষয়টি আইনের মাধ্যমেই মোকাবেলা করবো।