03/07/2025
আমি এইচএসসি-তে জোর করেই সায়েন্স নেই। আম্মু বলছিলো সায়েন্স অনেক কঠিন, নেয়ার দরকার নাই। আমি ভাবছিলাম এসএসসি-তে ভালো করতে পারি নি, এইচএসসি-তে শুরু থেকেই ভালোভাবে পড়াশোনা করবো। কলেজ শুরুর আগেই প্রাইভেট ঠিক করে ফেলি। আমার ডেডিকেশনও ছিলো, একটা জায়গায় যেখানে পড়বো ভালোভাবে পড়বো এবং এক্সাম এর আগ পর্যন্ত ওইখানেই পড়বো। আমিও ঠিক তাইই করছিলাম। ভেবেছিলাম, নিজে ঠিক থাকলে বারবার টিচার বদলানোর কোনো দরকার লাগবে না। সবাই ভালো করে পড়ায়, যারা পারে না তারা পৃথিবীর সেরা স্যার এর কাছেও পড়লে পারবে না।
একাধারে আমি আমার ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ ওই স্যারদের কাছেই পড়তে থাকি। আমি যদি তাদেরকে অন্য জায়গা থেকে কোনো প্রশ্ন করতাম, তারা আমায় এমনভাবে এড়িয়ে যেতো যা আমি নিজেই ধরতে পারতাম না। এমন না যে আমি তাদের যোগ্যতার বাইরে প্রশ্ন করতাম। একদিন কেমিস্ট্রি স্যারকে বললাম "স্যার, এই ম্যাথটা বুয়েটে এসেছিলো, আমায় একটু বুঝিয়ে দেন।" স্যারের সোজা জবাব ছিলো, "এইসব সলভ করে কি করবা? তুমি তো আর বুয়েটে চান্স পাবে না।" আমি ওইদিন অনেক কষ্ট পাই। কিন্তু তবুও আমি প্রশ্ন করা ছাড়ি নি।
এর পরে একদিন ফিজিক্স টিচার আমাদের একটা কনসেপ্ট দেখাচ্ছিলো এবং একটা ম্যাথ করতে দেয় যেটা অন্য কনসেপ্ট থেকে। আমি স্যারকে জোর করে বলি, "স্যার, আপনি তো এটা শেখাননি, আমরা এটা কিভাবে করবো?" স্যার আমায় ধমক দেয় অনেক জোরে। ওই মাস পরে আমি আর পড়তে যাই না। আমার তখন টেস্ট এক্সাম শুরু হবে। আমার সিচুয়েশন এতটাই খারাপ তারা বানিয়ে দিচ্ছিলো যে আমি টেবিলে বসে কান্না করতাম। আমি আমার আম্মুকেও জানাতাম না, কারণ সায়েন্স নেয়াটা আমার ইচ্ছা ছিলো।
পরে আমি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যাই—Shikho-তে পড়াশোনা শুরু করি। ফোনে ক্লাস করতে হতো, দেখে আমার অনলাইনেও আর ক্লাস করতে ইচ্ছা হতো না। তাদের পড়ানো ভালো, অনেক কিছুই আমি বুঝতে পারতাম। তা ছাড়াও ইউটিউবে "one-shot class" করে অনেকটা ইমপ্রুভ করি নিজের অবস্থাটা। এখনো সেই স্যারদের কথা মনে পড়লে মনে হয় তারা না জানি কতজনের স্বপ্ন নষ্ট করছে। তারা শুধু পাস মার্ক তোলার ব্যবস্থাই করতো, আর আমরা যদি A+ না পাই, তাহলে সেটা আমাদের দোষ—আমরা ভালোভাবে পড়াশোনা করি নাই। আবার তাদের কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেই তারা না পারলেও সেটা বলতো না।
যাই হোক, টেস্ট এক্সাম দেবার পরে আমি উদ্ভাসে ভর্তি হই—মডেল টেস্ট প্রোগ্রামে। Shikho থেকে যা পড়ছিলাম সেগুলাই এক্সামে লিখতাম, সব এক্সামেই ভালো নাম্বার উঠতো—ফিজিক্স বাদে। দুই মাসে তো ওতো ইমপ্রুভ সম্ভব না। আমারও দোষ আছে, আমি কেন আগে থেকেই তাদের এসব ব্যাপার নোটিস করতে পারলাম না?
এখন আমার একটাই আফসোস—আমি যদি আমার অন্য বান্ধবী হামিদার মতো তখনই টিচার বদলে ফেলতাম।
ওই দুইজন টিচার বাদে আমি যতজনের কাছে পড়েছি, সবাই আমায় অনেক ভালো করে পড়িয়েছেন। ICT টিচার অনেক সময় নিয়ে পড়ালেও, তিনি যেগুলো পড়িয়েছেন সেগুলো এখনো আমার মনে আছে—আরও ৫–১০ বছর পরেও মনে থাকবে। আমার ইংরেজি টিচার আমাদের অল্প সময় পড়িয়েছেন, কিন্তু কোনো কমতি রাখেননি কোনো শিক্ষার্থীর ভেতর। আমি পরে ম্যাথ আর কেমিস্ট্রি অন্য জায়গায় পড়া শুরু করি—তারাও ভালোভাবেই পড়িয়েছেন। তখনই আমি বুঝতে পারি, আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছিলাম ওই দুইজন টিচারকে বিশ্বাস করে।
আমার মতে, সব স্টুডেন্টদের উচিত বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখা—ওইখানে পড়ানোর ধরন কেমন, যাতে পরবর্তীতে আমার মতো আফসোস না করতে হয়।