29/02/2024
হাজার বছরের বাঙালি সমাজে ইসলাম ধর্ম এসেছে ত্রয়োদশ শতকে। সপ্তম শতকে ইসলামের নবীর আবির্ভাব কালে বাঙালিরা তাদের নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতিতে প্রবল ছিল। বাঙালিরা বহুবার তাদের পিতামাতার ধর্ম ছেড়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছে। ব্যাধ-কিরাত-হাড়ি-ডোম-চণ্ডা-মুন্ডা গোষ্ঠীর বাঙালিরা গোষ্ঠী ধর্ম বিসর্জন দিয়ে অনেক সময় বৌদ্ধ বা মহাবীরের ধর্ম গ্রহণ করেছে। কিন্তু তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যকে কোনকালেই সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করেনি।
পৃথিবীতে মুসলমানদের যখন নামগন্ধও ছিল না, তখনও বাঙালিরা বাঙালিই ছিল। তখনও বাঙালির মুখে বিন্নি ধানের ভাত আর মৌরল্লা মাছের ঝোল অমৃততুল্য ছিল। এখনও মাছ আর ভাত ভিন্ন বাঙালির দেহে অন্য কোন খাদ্যবস্তু রসনাতেও রোচে না, পুষ্টিতেও কুলায় না।
ত্রয়োদশ শতকে তুর্ক-আফগানদের মাধ্যমে বাংলায় ইসলামের আমদানী ঘটলে নানা কারণে বাঙালিগণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু ধর্ম পরিবর্তন করলেও বাঙালিরা নৃতত্ত্ব তথা বাঙালি পরিচয় বদল করেনি। কারণ, নৃতত্ত্ব মানুষের শরীরের উপরিভাগের চামড়ার মতোই মনোজগতের সাংস্কৃতিক ঐহিত্যের অভ্যন্তরে এতটাই প্রথিত যে তারা চামড়ার মতোই নৃতত্ত্বকে পরিবর্তন করতে পারে না। নূতন উপাদানের অন্তর্ভুক্তি, ভৌগোলিক অবস্থার পরিবর্তন ও আধুনিকতার প্রাবাল্যে হয়তো একটি জাতি থেকে পৃথক কোন জাতির উদ্ভব হতে পারে। কিন্তু একই জাতি রাতারাতি কোন কালেই অন্য জাতিতে পরিণত হতে পারেনি।
ইতোপূর্বে আমরা বলেছি, ধর্ম জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের একটি বড় উপাদান হলেও তা কোনভাবেই প্রধান বা একক উপাদান নয়। আজকের বাঙালি জাতি রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বে একাধিক নাগরিকতা ও একাধিক ধর্মে বিভক্ত হলেও তাদের নৃতত্ত্ব ও ভাষিক পরিচয় অভিন্ন। তাই তারা মনে প্রাণে যত বেশি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিসটান তার চেয়ে ঢের বেশি বাঙালি।
বিদেশ বিভূইয়ে আমরা হাজারও মানুষের সাথে মেলামেশা করি। নামাজের আজান দিলে ইরান, তুরান, আরব, মিশর, পাকিস্তানি, পাঞ্জাবি, বাঙালি সবাই মিলে মসজিদে ছুটে যাই। কিনতু বাসায় ফিরে আরব মুসলমানের সাথে গোস্ত-রুটি ভাগাভাগি করার পরিবর্তে আমরা বাঙালি হিন্দু ভাইদের সাথে মাছ-ভাতের অতি সাধারণ খাদ্যই ভাগাভাগি করে খেতে বেশি পছন্দ করি। তাই ধর্মীয় বিশ্বাসে আমাদের বাইরের আচারে যাই দৃশ্যমান হোক, সামগ্রিক বাঙালিত্বের কাছে সব কিছুই ম্রিয়মান হয়ে পড়ে। মনের অজান্তেই আচারে-বিচারে, অভ্যাসে-মুদ্রা দোষে দ্রুতই প্রমাণ দেই, আমরা প্রথমেই বাঙালি, তার পর মুসলিম কিংবা অন্য কিছু।"
সৌজন্যে
Md Abdur Razzak