08/09/2025
শুকনো গড়নের এই ব্যক্তিকে চিনতে পারছেন তো? ২০১৫/১৬ সালের ফটো এটা। ( পাশে শাইখের ছোট ছেলে আইমান বসা। যে কিনা বাবাকে এক নজর দেখতে এসেছিলো।) কারাগারে আমরা একসাথে একই রুমে থাকতাম। ঐ সময়টাতে প্রতি সপ্তাহে শাইখের ৩-৪ দিন কোর্টে আসতে হতো। কোর্টের প্রস্তুতি হিসেবে সবকিছু গোছগাছ করে দিতাম। সেই সকালে কোর্টে গেলে আসতে আসতে রাত হয়ে যেতো।
কয়েকটা মামলার বিচার একসাথে চলার কারণে তারীখ এমনভাবে পড়তো, বাধ্য হয়েই প্রতি সপ্তাহে বারবার কোর্টে আসতে হতো। আর একেকটা কোর্ট মানে একেকটা কষ্টের দাস্তান। মাসে এক দু'বার কোর্ট হলে তেমন কষ্ট অনুভব হয়না। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে ৩-৪ বার কোর্টে যাওয়া কতটা কষ্টের ব্যাপার, তা কল্পনা করাও কঠিন! একটানা চার পাঁচ মাস এভাবে চলেছিলো।
কোর্টে আসতে হলে পায়ে ৩-৪ কেজি ওজনের ডান্ডা বেড়ি, হাতে হাত কড়া পরে আসতে হতো। কোর্টে অবস্থানের পুরোটা সময় এবং কারাগারে ফেরৎ যাওয়া পর্যন্ত সেগুলো পরে থাকতে হতো। আর বেড়ি পরে স্বাভাবিক ভাবে না হাটা যায়, আর না যায় স্বাভাবিক ভাবে বসা। কী যে কষ্ট, সেটা পায়ে বেড়ি না পরলে কখনো বোঝা সম্ভব নয়।
এতো গেলো শারীরিক কষ্টের কথা। কিন্তু আর্থিক? লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিলো তখন মামলাগুলোর পিছনে।( অংকটা শুনলে চোখ কপালে উঠবে।) যারা মামলা খেয়েছে বা কোর্ট কাচারিতে যাওয়া আসা করে, তারা এটা হাড়ে হাড়ে টের পায়, কী পরিমান টাকা ঢালতে হয় মামলা পরিচালনার পেছনে এবং কী পরিমান হয়রানি হতে হয় কোর্ট কাচারিতে গিয়ে!
শাইখ হারুন ইজহার হাফিজাহুল্লাহর কারাবন্দীদের প্রতি, মাজলুমদের প্রতি এতো দরদ আর এতো দায়িত্ববোধ, এটা এমনি এমনি হয়নি। তিনি সেই ২০১০ থেকে কারাগারে যাওয়া শুরু করেছেন। তখন থেকেই তিনি মাজলুমদের দুঃখ দুর্দশা গুলো স্বচক্ষে অবলোকন করেছেন। তাদের পরিবারের আর্তনাদ গুলো খুব কাছ থেকে দেখেছেন।
শুধু তাই নয়, তিনি নিজেই বারংবার ভুক্তভোগী হয়েছেন তা*গু*তদের দ্বারা। সুতরাং মাজলুমদের চাপা কান্না গুলো বোঝার ক্ষমতা তাঁর খুব ভালো করেই হয়েছে। তাই তিনি পণ করলেন, কারা মুক্ত হয়ে নির্জনে ও নিশ্চুপ হয়ে জীবন-যাপন করবেন না। রিল্যাক্স লাইফ ক্যারি করবেন না। সেইফ জোনে না গিয়ে বরং মাজলুমদের জন্য কিছু করবেন। যেই কাজে উল্লেখযোগ্য কেউ নামেনি, সেই কাজে তিনি সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
ব্যস, ২০১৬ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে নেমে গেলেন তাদের জন্য এক নাতি দীর্ঘ সংগ্রামে। খেয়ে না খেয়ে দিনরাত পরিশ্রম করা শুরু করলেন তাদের জন্য।মাজলুমদের মুখে হাসি ফোটাতে নিজের হাসি বিক্রি করে দিলেন অবলীলায়। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় এই পর্যন্ত শাইখের চেষ্টা প্রচেষ্টায় ১০০০ এরও বেশী মাজলুম কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আর বিভিন্ন শহিদ ও মাজলুমদের পরিবারের দেখভাল করার কথা নাই বলি। সেটা আরেক লম্বা ইতিহাস।
আল্লাহ তায়ালা শাইখকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখুক। তাকে দ্বীনের উপর ইস্তিকামাত রাখুক। আমাদের কেও তার সাথে কবুল করে নিক। আমীন। ছবিতে ক্লিক করুন।
✍️মুয়াজ বিন মুরাদ