07/12/2025
দুনিয়ায় প্রতিটি হৃদয়কে ভাঙা হবে, প্রতিটি সম্পর্কের অবসান হবে। প্রত্যেক বন্ধুত্বের একদিন না একদিন ইতি ঘটবেই! দেখা হবে—তার ভাঙাচোরা হৃদয় কতটুকু রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের ভাষা জানে!
এখানে আপনি অবহেলিত হবেন, জুলুমের শিকার হবেন, আবার নিজেও ক্ষুদ্র পরিসরে 'জালিম' উপাধি পাবেন। এর সাথে চলমান থাকবে তৃষ্ণা-ক্ষুধা, দারিদ্র্য-বৈষম্য কিংবা জীবন-মৃত্যুর বিরামহীন 'প্লেলিস্ট'।
কোনো বিষয় বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপনাকে ভূয়সী প্রশংসায় মাতানো হবে, আবার একটা সময় পেরিয়ে—সবার সামনে হয়তো টেনে নামানো হবে সেই ক্ষণস্থায়ী সাম্রাজ্যের ক্ষুদ্রতম সিংহাসন থেকেও!
এখানকার মানুষেরা আপনাকে রাগাবে, তিরস্কার করবে, আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, হিংসার আগুনে পুড়বে, একে-অন্যের সাথে হুমাযাহ-লুমাযাহ (সামনে-পশ্চাতে নিন্দা) করবে, আপনি যা করেননি বা অনেক পূর্বে যা করে এসেছেন তার জন্যও কথা শোনাবে; এমনকি আপনি কিছু না করলেও কথা শোনাবে!
নিয়মের চক্র ঘুরে আপনি বা কাছের কেউ অসুস্থ হবে, পরিবার-অফিস-বন্ধুদের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে, পরীক্ষার অকৃতকার্য হবেন, আপনার জীবনের একটা বিস্তৃত সময়জুড়ে একাকিত্ব সঙ্গী হয়ে যাবে; আবার এসব কিছুর শেষে একটা নির্দিষ্ট সময় অবধি 'হ্যাপি মোমেন্ট'-ও বিরাজ করবে।
প্রচন্ড শীতের তান্ডব দেখবেন, গরমে প্রকোপে ঘেমে 'ঘা' হয়ে যাবেন, বর্ষায় ভিজতে ভিজতে হুট করে পিছলে যাবেন, ঝড়ের দিনে আম খেতে গিয়ে ছেলেবেলার কথা মনে করবেন, বৃষ্টি বেলায় খিচুড়ি খেতে চাইবেন, 'এক্কা-দোক্কা'র সব স্মৃতির বায়না ধরে অশ্রু-ও ফেলবেন।আবার ভবিষ্যতের কথা ভেবে সব গিলে হজমও করে ফেলবেন!
আসলে, দুনিয়াতে আপনার সাথে ঘটার মতো অনেক কিছুই আছে, ছিল এবং স্বভাবতই থাকবে।কিন্তু আপনি আসলে কী চান, যদি সেটা ঠিক করে নিতে পারেন, তবে হয়তো আশা করা যায়—আপনার পরিস্থিতি আপনার অনুকূলে চলতেও পারে।
আপনি যদি আপনার রবের সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেন, তবে সব জায়গায় আপনি জিতবেন, জিতবেন মানে জিতবেন-ই।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আপনার জীবনকে যে জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করেছেন! সেই ব্যবসার মালিকের উপর ভরসা রেখে কাজ করবেন, অথচ লোকসান করবেন— সেটা কিভাবে হতে পারে?
হয়তো, আজকে সবার সামনে হেরে গিয়েছেন, এবং আপাতদৃষ্টিতে সেটাকে আপনার পরাজয় মনে হচ্ছে, কিন্তু, দেখবেন—এটাই কোনো না কোনো সময়ে আপনার গলায় বিজয়ের মালা হয়ে ঝুলবে।
হয়তো, এমন হতে পারে—দুনিয়ার মানুষের কাছে আপনি ছোট হয়ে থাকবেন এবং অসম্মানিত হতেও পারেন কোনো কোনো ক্ষেত্রে। কিন্তু, না, যদি আপনি প্রকৃতপক্ষেই রবের সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেন, তাক্বওয়া অবলম্বন করেন—তবে যে-ই বা যারা আপনার বিপরীতে থাকে এবং আপনাকে ভুল প্রমাণ করে—এটা নিশ্চিত থাকুন যে আপনাকে নির্দিষ্ট সময় পরে বা ওই মূহুর্তে জিতিয়ে দেওয়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার-ই অঙ্গীকার!
শুধু সময়ের অপেক্ষা, কারণ আপনি নিজেও সময়ের সমষ্টি মাত্র। তাই, বিশ্বাস করুন, যদি জীবনে জিততেই হয়—রবের কথা মাথায় রেখে তবেই যেকোনো কাজ করুন, দেখবেন— আপনি নিশ্চিতে কঠিন সমস্ত বিপদ থেকেও উদ্ধার পেয়ে যাচ্ছেন। মনে রাখুন—
‘‘আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার উদ্ধারের পথ তৈরি করে দেবেন।এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রিযিক দান করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করবে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই।আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।’’
— সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত ২-৩
— Muhammad Amanullah