03/10/2025
বাংলাদেশের সমাজের অন্যতম একটা ডার্ক-সাইড কী জানেন?
এদেশের ছেলে-মেয়েরা সচরাচর নিজেদের বাবা-মাকে অন্য কারো বাবা-মার সাথে তুলনা করে না; চিন্তাও করে না। নিজের অভিভাবকের উপার্জন যেমনই হোক না কেন, সেটা অন্যের অভিভাবকের উপার্জন স্কেলের সাথে তুলনা করে না; ওনাদের সামর্থ্যের বাইরে এমন কিছু স্বপ্ন দেখে হয়তো, কিন্তু সাধারণত আবদার করে না কখনো।
কিন্তু এদেশের বাবা-মারা সবসময় দেখা যায় তাদের সন্তানদের সাথে অন্যের তুলনা করে; ৪-৫ বছরের সন্তান হোক বা ৩৫-৪০ বছরের। অন্যের ছেলে পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছে, গোল্ডেন এ+ পেয়েছে, মেডিক্যালে-বুয়েটে-পাবলিকে চান্স পেয়েছে, ৯৫%-৯৮% মার্ক পেয়েছে; অমুকের ছেলে মাসে এতো টাকা ইনকাম করে ঘরের হাল ধরেছে, অমুকের ছেলে বিসিএস ক্যাডার, ব্লা ব্লা ব্লা। বিশ্বাস করেন, সামান্য সামান্য ভুলের কারণে অথবা মর্জি মতো না চলার কারণে সন্তানের মৃত্যু পর্যন্ত কামনা করে এমন অভিভাবকও আছেন।
মানুষ যদি নিজের সন্তানদের প্রতিই এই বিশ্বাস না রাখে যে সে কিছু না কিছু পারবে, আপনিই যদি বিশ্বাস না করেন যে তার দ্বারা সম্ভব, তাহলে তো দুনিয়ার কেউই বিশ্বাস করবে না। ইমাজিন করতে পারেন, ৫-১০ বছরের একটা ছেলেকে যখন বলা হয় যে "তোর দ্বারা কিছুই সম্ভব না," তার উপর কেমন প্রভাব পড়ে?
শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি এতো লোক-দেখনো যত্ন, মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে দেখেছেন? নিচে কিছু ঘটনার উদাহরণ দিচ্ছি, যেখানে আমাদের সমাজের এই “ডার্ক-সাইড” তুলে ধরা হয়েছে:
২০২৪ এ, Aachol Foundation এর একটি রিপোর্ট বলেছে যে ২০২৪ সালে আত্মহত্যা করার শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৪৯.৪% স্কুল-ছাত্রী/ছাত্রী ছিল, এবং পরিবারের উচ্চ শিক্ষা ও সাফল্য প্রত্যাশার চাপ একটি প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আরও একটি রিসার্চ "Understanding complex causes of suicidal behaviour among graduates in Bangladesh" (২০২৪) বলেছে, বাংলাদেশে পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক প্রত্যাশা (যেমন “ভালো চাকরি করো, পরিবারের মর্যাদা রক্ষা করো”) তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সিরাজগঞ্জ জেলার একটি স্টাডি "Proportion of mental health problems in adolescents in Bangladesh", অক্টোবর ২০১৯ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত, ১৩-১৯ বছর বয়সী ১২৯ জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে Depression-Anxiety -Stress (DASS-21) মডেল প্রয়োগে দেখা গেছে: ৪২.৬% কিশোরদের মধ্যে বিষণ্ণতা ছিল, ৫৫.৮% উদ্বেগ, ৪৪.২% স্ট্রেস। এই গবেষণায় পারিবারিক সম্পর্ক (parent-child relationship) মানসিক সমস্যার সঙ্গে significantly রিলেটেড। অর্থাৎ, সন্তান ও পিতামাতা সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য, যেমন অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ, তুলনা, শ্রদ্ধাহীন ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে।
২০২২ সালে প্রকাশিত একটি স্টাডি "Overparenting's Consequences in Bangladeshi Society Child's Intelligence, Growth, and Creativity" বলেছে, বাংলাদেশে “overparenting” (অর্থাৎ অভিভাবকদের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ, আবদার ও উচ্চ প্রত্যাশা) সন্তানের সৃজনশীলতা, বুদ্ধিমত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
The Business Standard এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, Raihan নামের একজন কিশোর ১৬ বছর বয়সে “নিজের ঘরে অদৃশ্য” বোধ করতেন। HSC পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় তার উদ্বেগ এবং বিভিন্ন মানসিক চাপ এত বেড়ে যায় যে তিনি একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেন, “ভয় আমাকে ঘিরে ধরে রাখে, যদি আমি ভালো রেজাল্ট দিতে না পারি, আমি পরিবারের ও সমাজের কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ব।” এই গল্পটি চোখ খোলে দেয় যে একটি কিশোরের মনোজগতে “পরীক্ষার ফল” ও “পরিবারের প্রত্যাশা” কতটা ভয়ঙ্করভাবে উত্তপ্ত হতে পারে।
“Understanding the Social Determinants of Mental Health of the Undergraduate Students in Bangladesh” নামক একটি রিসার্চ দুই ধাপে ৩৮ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে সেমি-স্ট্রাকচারড সাক্ষাৎকার নিয়েছিল।
একজন শিক্ষার্থী বলেছিলেন, “পারিবার থেকে একটা নিরব আকাঙ্ক্ষা থাকে, তুমি ভালো হও, সার্বিকভাবে শ্রেষ্ঠ হও, কিন্তু তারা কখনো বলেনি, ‘তুমি কেমন অনুভব করছ?’
এগুলো সিম্পলি কোনো কৈফিয়ত নয়, এগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে, পিতামাতার তুলনা, অতিরিক্ত প্রত্যাশা ও মানসিক চাপ অনেক সময় বাস্তব জীবনকে বদলে দিতে পারে। এসবের পরিবর্তন প্রয়োজন; সংস্কার প্রয়োজন। একটা কথা বলেই শেষ করি:
We often forget that children have their own strengths and passions. Instead of nurturing their uniqueness, we push them to fit a mold that may not suit them, treating success like a rigid formula. The greatest injustice on earth is not giving a child a life of peace.
© Ekram Ahmed Sizzle
BBA - Finance, Faculty of Business Administration, University of Chittagong.