
25/07/2025
#নীলরক্তা_নয়নিকা
#রিতু_আকতার
সকাল সাড়ে ৭টা বাজে তখন।
আকাশে হালকা সাদা মেঘ জমেছে, বাহিরে বইছে মৃদু বাতাস।
আজকের আবহাওয়াটা যেন একটু অন্য রকম। শীতল হাওয়া গায়ে লাগতেই কেমন যেন গা শিরশির করে ওঠে।
নয়নকিার রুমের জানালার পর্দাটা নয়নিকার আম্মু সরিয়ে দিতেই আলোর একটা ঝলক এসে পড়ে নয়নিকার চোখে মুখে। সেই আলোতে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে নয়নিকা বলল-
" আম্মু,জানালায় পর্দাটা টেনে দাও না, চোখে আলো আসে। "
" ক'টা বাজে তোর খেয়াল আছে নাকি নেই? আজ না তোর পিকনিকে যাওয়ার কথা? "
কথাটা কর্ণপাত হতেই এক লাফ দিয়ে উঠে পড়ে নয়নিকা। সবে ৭ম শ্রেণিতে পড়ে সে, বাবা মায়ের একমাত্র কন্যা। বাবা মারা গেছে ২ বছর আগেই।
মাত্র ১২ বছর বয়সেই অনেকটাই ম্যাচিউর একটা মেয়ে নীলরক্তা নয়নিকা।
জন্মের পর তার চোখ দেখে মুগ্ধ হয়েই নামটা দেন অধরা নামের ডাক্তারটি।
বিছানা ছেড়ে উঠেই নয়নিকা অনেক তারাহুরো করতে থাকে সবকিছু গোছগাছ করার জন্য। তখনই মা নীলাঞ্জনা বলেন -
" তারাহুরোর কিছু নেই নয়নিকা, রাতেই সব গুছিয়ে দিয়েছি আমি। তুমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে টেবিলে এসো খাবার দিচ্ছি আমি, তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে আবার।"
নয়নিকা মায়ের কথা মতো ফ্রেশ হয়ে, রেডি হয়ে নিচে নামে।
আজ নয়নিকাকে একটু বেশিই অন্য রকম লাগছিলো,চোখ দুটো যেনো আগের তুলনায় একটু বেশিই নীল দেখাচ্ছে।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পরে সে স্কুলের উদ্দেশ্যে - ৯টায় গিয়ে পৌঁছায়, তারপর সেখান থেকে সকল শিক্ষক ও সহপাঠীরা মিলে পিকনিক উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দেয়।
রাস্তায় তারা সবাই মিলে বাহিরের সৌন্দর্য ও প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে যায়।
***
সময়টা তখন ২০১৮। ক্লাস নাইনে পড়ুয়া এক মেয়ে, নাম সিমরান , ঘাড়ে ২টা বিনুনি ঝুলানো, হলুদ-ফর্সা চেহারা। চেহারাটা যেন মায়ায় ভরা।
স্কুল শেষ করে বাড়ি ফিরছিলো সে, বাড়ি ফেরার আগে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে একটু দেরি হয়ে যায়। উপস্থিত বান্ধবীদের সকলের বাড়ি বিপরীত দিকে হওয়ায় একাই ফেরার পথ ধরতে হয় তার।
জনমানবশূন্য রাস্তা ধরে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎই কয়েকটা ছেলে পথ আটকে দাঁড়ায় তার।
কি করবে বুঝতে না পেরে ছেলেগুলোর বিপরীত দিকে ছুটে যায়, ছুটতে ছুটতে পৌঁছে যায় এক জঙ্গলে। ছেলেগুলোও তার পিছু নিয়ে সেখানে পৌঁছায়।
সেদিন সিমরানের আর বাড়ি ফেরা হয় নি।
তার মা-বাবা তাকে অনেক খোঁজা-খুঁজি করে। পরদিন সকালে জানা যায় সেই জঙ্গলটায় একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে, লাশটা দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো যে কয়েকজন মিলে খুবলে খাওয়া হয়েছে মেয়েটিকে। সিমরানের মা-বাবা সেখানে পৌঁছালে লাশ দেখে চিনতে পারেন হ্যাঁ এটাই তাদের মেয়ে সিমরান।
সেদিন স্কুল ছুটির পর সিমরান আর বেঁচে ফেরে নি বাড়ি,কয়েকটি নরপিশাচ তাকে আর ফিরতে দেয় নি বাসায়।
***
" নয়নিকা.. নয়নিকা? নয়নিকা শুনছো! "
হঠাৎ কোনো প্রতিধ্বনিতে ধ্যান ভাঙ্গে নয়নিকার। সে নিজেকে আবিষ্কার করে সেই একই জঙ্গলটাতে, যেখানে সিমরান শেষ প্রাণ ত্যাগ করেছিলো। চারদিকে তখন মাগরিবের আজান পড়ছিলো।
কিন্তু এখন তো তার নাটোরের "গ্রীনভ্যালি " পার্কে তার সহপাঠীদের সঙ্গে থাকার কথা।
সে সেখান থেকে পালাতে যাবে, এমন সময় আবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো-
"নয়নিকা, নয়নিকা আমায় ছেড়ে যেও না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে নয়নিকা।"
নয়নিকার আম্মু স্কুলের ম্যামদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারে তারা নয়নিকাকে খুঁজে পাচ্ছে না। হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে সে।
অনেক খোঁজা খুঁজির পরও পাওয়া যায় না নয়নিকাকে। রাত ১০ টার দিকে নীলাঞ্জনা হঠাৎই নয়নিকাকে বাড়ির আঙ্গিনায় আবিষ্কার করে জ্ঞানশূন্য অবস্থায়।
তিনি তাকে তাড়াতাড়ি করে ঘরে নিয়ে যান এবং চোখে পানির ছিটা দেন।
নয়নিকা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে -
" আম্মু প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে, ডিস্টার্ব করো না প্লিজ।"
মেয়ে সুস্থ আছে বুঝতে পেরে নীলাঞ্জনাও আর বিরক্ত না করে শুইয়ে দেন নয়নিকাকে।
পরদিন সকালে ফজরের আজানে ঘুম ভাঙে নয়নিকার, সে অজু করে নামাজ পড়ে।নামাজ শেষে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে টিভি চালু করা।
কিন্তু তার স্পষ্ট মনে আছে,সে যখন ওয়াশরুমে যায় তখন তো টিভি চালু ছিলো না!
টিভিতে একটা নিউজ চ্যানেল চলতেছিলো, যেখানে দেখাচ্ছিলো, কাল রাতে সেই জঙ্গলে ৩ টা ছেলের লাশ পাওয়া গেছে। ছেলে গুলোকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
যেন কারো দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিলো ছেলে গুলোর উপর।
নয়নিকা প্রচন্ড অবাক নিউজটা দেখে। কারণ ছেলেগুলোর চেহারা দেখে তার প্রচন্ড চেনা চেনা লাগছে,তবে সে বুঝতে পারছে না কেন এমনটা মনে হচ্ছে।
এসবের মাঝে হঠাৎ নয়নিকার কানে এক কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, কণ্ঠস্বর বলছে -
"নয়নিকা,আমি চির কৃতজ্ঞ তোমার প্রতি,আমার প্রতিশোধ পূর্ণ করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ "
সমাপ্ত