Movie Fanz

Movie Fanz Movie Lover

 #রং(wrong) #পর্বঃ৮ #লেখনিতেঃতন্নী_তনুকনফারেন্স রুমে টেবিল ঘিরে বসেছেন পুলিশ সদশ‍্য।  প্রভাতরঞ্জন সরকার আহত গলায় বলছেন,-...
13/04/2025

#রং(wrong)
#পর্বঃ৮
#লেখনিতেঃতন্নী_তনু

কনফারেন্স রুমে টেবিল ঘিরে বসেছেন পুলিশ সদশ‍্য। প্রভাতরঞ্জন সরকার আহত গলায় বলছেন,

-- প্রথমে এতো গুলো ছেলে গুম! এরপর মেয়েদের পরপর লাশ পাওয়া যাচ্ছে! এভাবে চলতে থাকলে তো সাধারণ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। এর আগের কেসটা ওভাবেই পড়ে আছে! না পাওয়া যাচ্ছে খোঁজ না পাওয়া যাচ্ছে ক্লু। এভাবে তো চললে হবে না। কি মনে হচ্ছে তোমাদের! এসব কোনো সিরিয়াল কিলারের কাজ!

সকলেই নিরব হয়ে বসে আছেন। তারমধ‍্যে থেকে জাবির শান্ত গলায় উত্তর দিলো,

-- স‍্যার! পারসোনালি আমার যা মনে হচ্ছে! এইবারের কেসটার উদ্দেশ‍্য খু!ন!

রিজভী শিকদারের পাল্টা প্রশ্ন,

-- তাহলে মু/ক্তি/পণ কেনো চেয়েছে?

জাবিরের প্রতিউত্তর,

-- উদ্দেশ্য যদি খু!ন ই না হয়.. তাহলে মুক্তিপণ নেওয়ার পরও কেনো! কাউকেই জীবিত ফেরত দেয়া হলো না?

সবাই ভেবে দেখলেন, যুক্তি আছে কথার। প্রভাতরঞ্জন সরকার জাবিরকে বললেন,
-- হ‍্যাঁ!

জাবিরের আত্ননির্ভরশীল শান্ত গলা,

-- স‍্যার!আমার মনে হচ্ছে প্রেমঘটিত ব‍্যাপার।

--"একজনের পাঁচজন গার্লফ্রেন্ড থাকবে নাকি! একে একে সবাইকে উপরে পাঠাচ্ছে! পাঁচজনের মধ‍্যে একজনও মনের মতো ছিলো না?" রিজভির হাস‍্যকর গলা। জাবির দাঁত শক্ত করে বলে,

-- হাসার মতো কি বললাম! হতেই তো পারে সবগুলো খু/ন একজন ই করেছে। মানে কিলার একজন ই! তবে খু/ন করাচ্ছে অন‍্যান‍্য মানুষ।কি/লারের পেমেন্ট হিসেবেও তো মুক্তিপণ নিতে পারে।

--"কি বলতে চাচ্ছেন! যে সকল ছেলেরা মেয়েদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে। তারা রেগে গিয়ে কোনো সিরিয়াল কিলারকে দিয়ে খুন করাচ্ছে?" রিজভীর চাপা হাসির গলা শুনে দাঁত চেপে জাবির বলে,
--হুম।
-- "আপনিও কি এমন প্রতারণার স্বীকার হয়েছিলেন নাকি! কাউকে মে!রে টে!রে দিয়েছেন না!কি! না হলে এমন প্ল‍্যান মাথায় আসে কি করে?" দাঁত কেলিয়ে হাসে রিজভী শিকদার। জাবির রেগে উঠে,

-- হতে পারে না? এই জেনারেশনে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়-প্রকাশ‍্যে মেরে দিয়ে যায়! কু-প্রস্তাবে রাজি না হলে প্রকাশ‍্যে এ!সিড মারে!তাহলে এমন ঘটনায় হাসার কি আছে?

রিজভি শিকদার আবারো ঠোঁট টিপে হাসে। এমন ঘটনায় রেগে যায় জাবির। চোখ গরম করে বলে,

-- এভাবে হাসার কি হলো!আর ইউ ম‍্যাড?
-- মাইন্ড ইউর ল‍্যাংগুয়েজ! আপনি যে রকম বর্ণনা করছেন তাতে সবাই আপনাকেই....

--"সাইল‍্যান্ট!" প্রভাতরঞ্জন সরকারের গমগমে গলা। কনফারেন্স রুম পানির ন‍্যায় ঠান্ডা। তিনি আবার বললেন,
-- "এখানে সবার মতামত নেয়া হচ্ছে। যে যেই এঙ্গেল থেকে কেস'টি দেখছেন। তার মত প্রকাশের পূর্ণ অধিকার আছে। আপনারা প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের মতো আচরণ করবেন না! ভুলে যাবেন না আপনাদের পরিচয়।" তিনি ইরফাদের দিকে দৃষ্টি ফেলেন। ইরফাদ হাতের ফোনটা মন দিয়ে দেখছেন। প্রভাতরঞ্জন সরকার বলেন,

-- ইরফাদ! তুমি কিছু বলছোনা না যে!

হাতের ফোনটা সাইডে রাখলো ইরফাদ। কিছুক্ষণ সময় নিলো। তারপর বললো,

-- আমার মনে হচ্ছে!কিলার আমাদের ডায়ভার্ট করার চেষ্টা করছে।
--যেমন!
-- আমাদের উদ্দেশ‍‍্য কিলার'কে ধরা। আর কিলারে'র উদ্দেশ‍্য আমাদের চোখ ফাঁকি দেয়া। এই সকল চিত্র,শব্দ, ক্লু কিলার নিজেই রেখে গেছে। যাতে অন‍্য একটি গল্প তৈরী হয়। আর আমরা কেস ঐ দিকে ডায়ভার্ট করি।
-- তোমার কি মনে হচ্ছে? খু!ন! নাকি মুক্তিপণের উদ্দ‍্যেশ‍্যে কি!ড!ন‍্যাপিং!

-- উদ্দ‍্যেশ‍্য যাই হোক গন্তব‍্য হলো কিলারকে ধরা। আমাদের "কেনো!"র দিকে না গিয়ে "কে" করলো! তার দিকে ফোকাস করা উচিত। কারণ কিলার আটক হলে গল্প এমনিই বেরিয়ে আসবে।

-- উদ্দ‍্যেশ‍্য না জানলে গন্তব‍্যে পৌছাবে কি করে?

--উদ্দেশ‍্যে জানার চেয়ে গন্তব‍্যে পৌঁছনোর রাস্তা বেশী সহজ। এই সব ক্লু'র দিকে ফোকাস না করে আমাদের কিলার'কে খুঁজে বের করতে হবে।

ইরফাদ সাইডে থাকা ফোনটি তুলে নেয়। তারপর উল্টো করে ধরে। লাশের গায়ের চিত্র গুলো দেখায়।
--চিত্রগুলো ভালোভাবে দেখুন। চিত্রগুলোই রহস‍্যে। চিত্রগুলো এতো ছোট আর নিখুঁত করে আঁকা যে কেউ এই ধরনের চিত্র আঁকতে পারবে না। অবশ‍্যেই কিলার প্রফেশনাল আর্টিস্ট। জাবির!
--ইয়েস স‍্যার!

--ঐ সকল এলাকার আশেপাশের প্রফেশনাল আর্টিস্ট দের একটা লিস্ট করবেন। আর পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট চেক করে জানাবেন মৃত্যু ঠিক কি কারণে হয়েছে!

-- জ্বি স‍্যার
______

গোধূলি বেলায় ধূসর রঙের প্রাইভেট কার'টি আপন গতিতে রাস্তার গরম ধূলো উড়িয়ে ছুটে চলেছে। কখনো ধীর গতীতে কখনো দ্রুত গতিতে ছুটছে। পাশাপাশি বসেছে ইরফাদ ও সিনথিয়া। ইরফাদ চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে। আর বাইরের লুকিং গ্লাসে চোখ রাখছে। সিনথিয়া নিস্তব্ধ, নিশ্চুপ ভাবে বসে আছে। ইরফাদ ধীর গলায় বলে,
--" সেদিন যে লোকগুলো তোমার উপর এ‍ট‍্যাক করেছিলো! ঐ লোকেশন মনে আছে?" সিনথিয়া মাথা নাড়ে।তারপর নীরব গলায় বলে,
--আমার ফ্রেন্ডের বাসার আশেপাশেই রাস্তাটা...
--চিনবে?
--আশা করি চিনবো।কিন্তু মেইন রোডের পরে ওই গলি গুলোতে গাড়ি ঢুকবেনা।
--নো প্রবলেম!হেঁটে যাব। যেখানে তোমার উপর অ্যাটাক হয়েছিল!ওই স্পট চিনলেই হবে।

ইরফাদ সিন্থিয়ার দেখানো লোকেশনের দিকে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সিনথিয়া গাড়ির স্বচ্ছ গ্লাস ভেদ করে একদৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে।সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যাতে জায়গাটি চিনতে ভুল না হয়। খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ইরফাদ গাড়িটি ধীর গতিতে চালায়। ধীরগতিতে রাস্তার মোড় নিতেই সিনথিয়া তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,
-- রাখুন!রাখুন!

ইরফাদ সাথে সাথে ব্রেক করে।তারপর বলে,
-- "এখানে?" সিনথিয়া মাথা নাড়ে।ঐতো সামনের গলি।ইরফাদ পুনরায় জিজ্ঞেস করে,
--সিউর?
--"হুম। এই রাস্তার শেষের গলি দিয়ে অনেক দূর চলে গিয়েছিলাম। "

ইরফাদ গাড়িটি গলির সামনে দ্বার করায়। পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়াল করে,

--জাবির! একটা এড়িয়ার ফুটেজ চেক করতে হবে। রোহানকে ইনফর্ম করুন। আমি লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওই পুরো এলাকার সমস্ত ফুটেজ দ্রুত চেক করে আমাকে জানাবেন।
--ওকে স্যার!

ফোন কেটেই চওড়া রাস্তায় এক পাশে গাড়ি পার্ক করে ইরফাদ।গাড়ি থেকে নেমে গলির দিকে এগিয়ে যায় ইরফাদ। একবার ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে নেয় পুরো জায়গাটা। তারপর পুনরায় গাড়িতে বসে। সিনথিয়া তখন এক মনে এক দৃষ্টিতে সাইড গ্লাসে তাকিয়ে আছে। ইরফাদ সিনথিয়ার দৃষ্টির দিকে লক্ষ্য করে। একটা মিডিয়াম সাইজের দোকান। দোকানে মালপত্র। একপাশে চা'এর জন‍্যে ছোট্ট ব‍্যবস্থা। দোকানের সামনে বেঞ্চ পাতা। কেউ দাঁড়িয়ে কেউ বসে আসে। তাদের চোখ দেয়ালে টানানো বিশাল আকৃতি টিভিতে আটকে আছে। টিভির দেখার ফাঁকে কেউ চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন কেউ বা উচ্চ স্বরে কথা বলছেন।তাদের কথোপকথনের মূল বিষয় টিভিতে দেখানো খেলা।সিনথিয়া লোকজনের ফাঁকফোকর দিয়ে দেয়ালে টানানো টিভিতে চোখ ডুবিয়ে দিয়ে আছে। চোখ সরালেই যেন বিশেষ কিছু মিস হয়ে যাবে। সিনথিয়া বার বার গাড়ির সাইড গ্লাস হাত দিয়ে নিচের দিকে টানছে। গ্লাসটি যেনো বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার চোখের। ইরফাদ সাইড ক্লাস নামিয়ে দেয়।সিনথিয়ার অন‍্যদিকে কোনো মনোযোগ নেই তার দৃষ্টি সেই বিশাল আকৃতি টিভির দিকেই নিবন্ধ। মহা আগ্রহ নিয়ে সে ক্রিকেট খেলা দেখছে। সিনথিয়ার সমস্ত মনোযোগ টিভির স্ক্রিনে। শক্ত হাতে ব্যাট ধরে আছে ক্রিকেট ক্যাপ্টেন তীর্থ (ছদ্মনাম)।বোলার বল নিয়ে এগিয়ে আসছে। সিনথিয়া যেন সমগ্র কিছু ভুলে বসেছে। ফুল টাচ বল'এ তীর্থ ব্যাট দিয়ে সজোরে আঘাত করে। তাতেই বল বাউন্ডারি পার। সিনথিয়া চরম উচ্ছ্বাসে গাড়ির সিট থেকে একবার লাফিয়ে ওঠে। সমগ্র ভালোলাগা,উচ্ছ্বাস,আনন্দ যেন তারা হাতের মুষ্টিতে ধরা দেয়। সবকিছু ভুলে আনন্দটুকু প্রকাশ করতে মুষ্টিমেয় হাতটি উপরে উঠিয়ে ঝাঁকিয়ে বলে
---ইয়েস! ইয়েস!

কয়েকটা দিনের পরিচয়ে মেয়েটিকে এতো উচ্ছাসিত হতে দেখা যায়নি একবারের জন‍্যেও। সব সময় গম্ভীর, নিস্তব্ধতা-ই বিরাজ করে তার মাঝে। যাক বাইরে নিয়ে আসাটা এই দিক দিয়ে স্বার্থক। সিনথিয়া পাশ ফিরতেই চোখে চোখ পড়ে ইরফাদের।সে তো দিন দুনিয়া ভুলে গেছিল কিছুক্ষণের জন্য। ইরফাদের চাহনি দেখে সিন্থিয়ার নিজেকে পাগলা গারদের পাগল মনে হয় । "আচ্ছা! কোন আক্কেলে সে এরকম লাফালাফি করলো?" নিজের কাজে লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নেয় সিনথিয়া।ইরফাদ স্টিয়ারিং ঘুরায়। একদিকে লজ্জা অন্যদিকে খেলা দেখতে না পাওয়ার জন্য মনটা খারাপ হয় সিনথিয়ার। বদ্ধ কুঠির থেকে বের হয়ে এই আলো-বাতাস আর স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পেরে সে তো ভুলেই বসে ছিল তার ঠিকানা কোথায়! মুখটা মেঘের মতো কালো হয়ে আসে তার। পাঁচ আঙ্গুলে ভর দিয়ে কপাল ঠেকিয়ে চুপচাপ বসে থাকে সিনথিয়া। এদিকে নিজের পার্সোনাল ফোনটা সিনথিয়ার দিকে এক হাতে এগিয়ে দেয় ইরফাদ। শান্ত গলায় বলে,

--ধরো!

সিন্থিয়া চোখ তুলে তাকায়। ইরফাদের হাতে থাকা ফোনটির স্ক্রিন জুড়ে ক্রিকেট খেলা চলছে। আর ফোনটি তার দিকেই বাড়িয়ে দিচ্ছে ইরফাদ। অবাকের উচ্চসীমায় পৌঁছে চোখ দুটো পেঁচার মতো গোল গোল আকৃতি হয় তার। আপনা-আপনি খুলে যায় ওষ্ঠ যুগল। একজন "এসপি" তার দিকে নিজের পারসোনাল ফোন এগিয়ে দিচ্ছে?

---------

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে ইরফাদের বাবা সাথে তার বন্ধুর ছেলে সাজিদ । কথার ফাঁকে তার বাবা উঠে গিয়ে ইভার ঘরে যায়,

-- ইভা!
-- হ‍্যাঁ বাবা,বলো!
-- কফি করে দিতে পারবে?সাজিদ এসেছে তো।

নামটা শুনেই ইভা'র মুখটা কালো হয়ে যায়। এই লোকটা'কে তার অসহ‍্য লাগে। তবুও ইভা বাবার সামনে মিষ্টি মুখে মাথা নাড়ায়,
-- হ‍্যাঁ বাবা! আমি আসছি...

বাবার সামনে সাজিদের সাথে খারাপ ব‍্যবহার করার সাধ‍্য নেই তার। অন‍্যদিকে অতিথি'কে খাবার দিতে কার্পণ্য করতে পারে না সে।শুধু কফি দিতে বললেই কি শুধু কফি দেয়া যায়!
কিচেনে ঢুকেই বেশী করে চিজ দিয়ে পাস্তা রেডি ফয়েল পেপারে ঢেকে একহাতে ওভেনে বেকড করতে দেয় ইভা। আরেক দিকে ফ্রোজেন করা মোমোগুলো রেডি করে পিরিচে গোল করে সাজিয়ে নেয়। মাঝখানের ছোট্ট ফাঁকা জায়গায় বসিয়ে দেয় স্পেশাল সসে্র গোল ছোট্ট পেয়ালা। ওভেন থেকে পাস্তা বের ট্রে তে তুলে নেয় সাথে দু'টো স্পুন। দু'টো মগে কফি ঢেলে নিয়ে সোজা চলে যায় ড্রয়িং রুমে।গিয়ে দেখে তার বাবা ড্রয়িংরুমে নেই।টুম্পা বসে আছে সাজিদে'র কোলে। চোখাচোখি হয় দু'জনের। ইভা চোখের ইশারায় টুম্পাকে বলে,-"নামো।" টুম্পা দেখেও যেনো দেখেনা। সাজিদ'কে টুম্পা খুব বেশীই পছন্দ করে। এটাই তার সবচেয়ে অপছন্দ। কিন্তু মেয়ে তো এই বিষয়ে পুরোই একরোখা। সাজিদ আসলেই তার কোলে চড়ে বসে। ইভা না পারে মেয়েকে দমিয়ে রাখতে। আর না পারে সাজিদের আসা বন্ধ করতে। ওপাশ থেকে সাজিদের শান্ত ক্ষীণ গলা ভেসে আসে,
-- কেমন আছো?

ইভার কথা বলার প্রবল অনিচ্ছা থাকা সত্বেও সে মাথা নাড়ে।

সাজিদ আবার বলে,
--আমাকে জিঙ্গেস করলেনা?

ইভা মুখে তালা মেরে থাকে। যাই বলুক! "সে আর কথা বলবে না।" সাজিদ বাঁকা হেসে বলে,
-- উত্তর'টা পেলাম না কিন্তু?
--কিসের উত্তর?
-- ঐ যে তিন বছর আগে থেকে যা জানতে চাচ্ছি!

ইভা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-- এক কথা কত বার বলবো?আপনি কবে বুঝবেন বলেন তো সাজিদ ভাই? আর কতবার আপনাকে বারণ করার পরও আপনি আসবেন। এসব বলবেন!

-- যতোদিন না তুমি সম্মতি দিবে!
-- এতো নির্লজ্জ মানুষ হয়?

-- ভালোবাসলে মানুষ উম্মাদ হয়ে যায় ইভা!

-- একটা বিবাহিত মেয়ে'কে কিভাবে ভালোবাসা যায়?
-- তুমি কি বিবাহিত?

-- আমি কি অবিবাহিত?
-- আমার কাছে তুমি শুধুই "ইভা"। বিবাহিত, অবিবাহিত, ডিভোর্সী এগুলো ডাজেন্ট ম‍্যাটার।

--মুখে অনেক কিছুই বলা যায়।
-- মুখের কথা বাস্তবে রূপ দিতে হলে তোমার সম্মতি দরকার। একবার হাত'টা ধরেই দেখোনা।

-- চুপ করুন! সাজিদ ভাই! আমার মেয়েটা বড় হচ্ছে ও বুঝতে পাররে। ওর সামনে এসব বলবেন না প্লিজ!

সাজিদ টুম্পা'কে বুকের মধ‍্যে চেপে ধরে। ক্ষীণ শ্বাস ভিতরে টেনে নেয়। তারপর বলে,

-- সম্মতি দিলে- মেয়েটা খুশিই হবে ইভা! তুমি একবার সুযোগ তো দাও..

ইভা টুম্পাকে জোর করে টেনেটুনে কোলে নেয়। তারপর বিরক্ত গলায় বলে,
-- পাগল নাকি!( এই গল্পটির লেখিকা তন্নী তনু। সবচেয়ে আগে পরের পার্ট পাবেন শুধুমাত্র তন্নী তনুর পেইজে। সকল পাঠক পাঠিকাদের কাছে অনুরোধ থাকবে আপনারা লেখিকার পেইজ থেকে গল্প পড়বেন। এক্ষেত্রে ইংরেজিতে Tonni-Tonu লিখে সার্চ দিবেন।)
----
ছাই রঙা মেঘ ক্রমেই রূপান্তরিত হচ্ছে ঘন কালো মেঘে। পরিষ্কার আকাশ তলিয়ে যাচ্ছে ঘন কালো মেঘের আড়ালে । কিছুক্ষণ আগেও আকাশের বুকে এক ফালি চাঁদ মাথা চারা দিয়ে উঠেছিলো তাও এখন মেঘের আড়ালে হারিয়ে গেছে। বৃষ্টির ফোঁটা গুলো বিন্দু আকার থেকে ভারী বর্ষণে রূপ নিয়েছে। রাস্তার মানুষগুলো দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। রাস্তা জুড়ে এখন শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। বাঘের গর্জনের মতো বজ্র ধ্বনি আর বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে ধরণী।
এর মধ‍্যে দিয়ে চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে ইরফাদ। সিনথিয়াও বসে আছে আগের মতো চুপচাপ ভাবেই। গাড়ি কোন দিকে চলছে তা তার জানা নেই! ইরফাদ ঠিক কি কারণে তাকে বাইরে নিয়ে এসেছে- তার জানা নেই! এখন তারা কোথায় যাচ্ছে তাও সে জানে না। জিঙ্গাসা করার প্রয়োজনও মনে হচ্ছে না। তার শুধু অনুভব হচ্ছে- স্বস্তিই পাচ্ছে, মন ভরে শ্বাস নিতে পারছে। এই কয়দিনে দমবন্ধকর পরিবেশে থাকতে থাকতে সে যে পাগলপ্রায় হয়ে গেছে। তাই আজ গন্তব্য জানার প্রয়োজন নেই তার। সময় জানার ইচ্ছে নেই। কখন ফিরবে তাও জানার ইচ্ছে নেই। কিছুই জানতে চায়না সে। আবহাওয়ার পরিবর্তন ও গাড়িতে চলা এসির জন‍্য হঠাৎই একরাশ ঠান্ডা ঝেঁকে ধরে সিনথিয়াকে। শীত লাগা শুরু হয় সিনথিয়ার। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে সে। ইরফাদের পুর্ণ দৃষ্টি সামনের দিকে। ফাঁকা রাস্তা! বৃষ্টির ভারী ফোটা গুলো গাড়ির কাচের উপর খেলা করছে। একফোটা পানি টুপ করে পড়ে আবার উপরে ছিটকে উঠছে। এভাবেই বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা গাড়ির কাচে পড়ে আবছা হয়ে আসছে গ্লাস। গাড়ির ওয়াইপার ভারী বর্ষণের ছাপ মুছতে বৃত্তাকার গতিতে উঠানামা করছে। সিনথিয়ার আরও জড়োসড়ো হয়ে বসে। গাড়ির ভেতর কোনো আলো জ্বালানো নেই। আকাশ ফেঁড়ে বের হওয়া আলোর ঝলকানিতে কিছুক্ষণের জন‍্যে আলোকিত হয় গাড়ি ভেতরে। সিনথিয়া অনেকটাই কাচুমাচু হয়ে বসে আছে- আড় চোখে দেখে ইরফাদ। তারপর শীতল গলায় বলে,
-- আর ইউ ওকে!
সিনথিয়া তৎক্ষণাৎ ইরফাদের দিকে তাকায়। ক্ষীণ স্বরে বলে,
--হুম...
--আনইজি লাগছে?

সিনথিয়া মাথাটা মৃদু ঝাঁকিয়ে বলে "না।"
-- ভয় পাচ্ছো?
শব্দটি শুনে প্রথমবারের মতো সিনথিয়ার মাথায় আসে! এই এই শুনশান নিরব রাস্তা! কয়টা বাজে তাও জানা নেই!তার উপর ঝুম বৃষ্টি! রাস্তা ঘাট প্রায় ফাঁকা! কি কারণে! আর কোথায় যাচ্ছে তাও জানা নেই। গাড়িতেও আলো নেই। এই আবছা আলোয় পাশে বসে আছে স্বল্প দিনের পরিচিত একজন বলিষ্ঠ পুরুষ! ভাগ‍্যের নির্মম পরিহাসে অন‍্য পুরুষের প্রতারণার জালে বিশ্বাস,ভরসা, ভালোবাসা,মানসম্মান সব হারিয়ে বসে আছে সে। এক নম্র ভদ্র মুখোশধারী পুরুষের মায়াজালে ফেঁসে যাওয়া মানবীর এই আধারে অন‍্য পুরুষের পাশে বসে ভয় পাওয়াটাই তো স্বাভাবিক! কিন্তু তার ভয় তো দূর!ভয়ের কথাটাও একবার মনে হলো না। তার কি ভয় পাওয়া উচিত ছিল না!" এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার পরও কেন এই কথাটি তার মাথায় আসলো না?"

-- "কি! ভয় লাগছে!" সিনথিয়া মাথা দু'দিকে নাড়িয়ে বলে,--না..

আবছা আলোয় আবারো ভেসে আসে হীমশীতল পুরুষালী গলা,
-- লাইট অন করবো?

সিনথিয়া এইবার দোটানায় পড়ে। তার এই মূহুর্তে কি বলা উচিত? হ‍্যাঁ বললে ইরফাদ কি ভাববে? আর না বললেই বা কি ভাববে। কিছুক্ষণ মনের সাথে বোঝে সিনথিয়া। তার আলো না থাকাতেই ভালো লাগছে। সবকিছু ভালোভাবে অনুভব করতে পারছে। আলো জ্বালালেই বরং তার সংকোচ হতো। সে প্রথমবার নিজের ভালোলাগার দিকটাকে গুরত্ব দিলো। তারপর মাথা ঝাকিয়ে মুখে বললো,

-- এরকম ই ভালো লাগছে!
বলেই আবার নিস্তব্ধতায় ডুবে যায় সিনথিয়া।ইরফাদ এসি অফ করে। তার আবার হিম শীতল গলা,
-- তোমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি! কি কারণে নিয়ে যাচ্ছি একবারও ত জিজ্ঞেস করলে না!

সিনথিয়া উত্তর দিতে পারে না। এর কোনো উত্তর তার কাছে নেই। সে শুধু জানে তার সস্তি লাগছে! বুক ভোরে নিশ্বাস নিতে পারছে! এর বাইরে তার কিছু জানার নেই আজ। আজ তার কোনো ভয় কাজ করছে না! সংকোচ ও হচ্ছে না! কিন্তু কেনো? সে উত্তর তার কাছে নেই। রাফির সাথে কখনো রাতে কোথাও যাওয়া হয়নি। খুব বেশী সময় কাটানোও হয়নি। প্রেমিক হওয়া সত্বেও বুকের মধ‍্যে একটা ভয় কাজ করতো। যদি কোনো অঘটন ঘটে! কিন্তু সেই ভয়টাও অল্প দিনের পরিচিত পুরুষের পাশে বসে হচ্ছে না। কেনো! সে উত্তর তার কাছে নেই। সে ধীর গলায় উত্তর দেয়,

-- প্রয়োজন ছাড়া! একজন "এসপি" জেলখানার আসামী কে নিয়ে কোথাও যায়?

--বাহ!ভালোই তো লজিক দিলে। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি কথা বলতে জানো না! পিচ্চি মেয়ে...

সিনথিয়া আবছা আলোতে নিজের দিকে তাকায়। কোন এঙ্গেলে তাকে পিচ্চি মনে হয়?বাইশ চলে তার বয়স। পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি মেয়েকে কি-করে পিচ্চি লাগে!

_________

অনেকটা পথ যাওয়ার পর গাড়ি থামায় ইরফাদ। পকেট থেকে ফোন বের করে। তারপর একটি নম্বরে ডায়েল করে ধীর গলায় বলে,
-- চেক ইনবক্স!

তারপর আবার গাড়ি স্টার্ট দেয় ইরফাদ। ত্রিশ মিনিট পর গাড়ি রাস্তার সাইডে পার্ক করে। আগের নম্বরে কল দিয়ে বলে,

-- রেডি!
- জ্বি স‍্যার!দুই মিনিটের মধ্যে আসছি..

দু মিনিটের মাথায় একজন ওয়েটার আসেন।ইরফাদের গাড়িটি একদম রেস্টুরেন্টের কাছাকাছি দাঁড় করানো। গাড়ির সাইড ডোর'টি খুলে দেয় ইরফাদ। একজন ওয়েটার ইরফাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। পূর্ব পরিচিত তা বোঝাই যাচ্ছে। ওয়েটারের হাতে একটি ট্রে। হাতে থাকা ট্রে ইরফাদের দিকে এগিয়ে দেয়। ইরফাদ ট্রে কোলের উপরে তুলে নেয়। তারপর একহাতে গাড়ির দরজা টেনে বন্ধ করে দেয়।ওয়েটার বলেন, --স্যার! ম্যাডামকে নিয়ে ভিতরে বসতেন!
-- নো!থ্যাংকস!
ওয়েটার চলে যায়। ট্রেতে থাকা স্যুপ এর পেয়ালার চারপাশে রুমালে পেচিয়ে নেয় ইরফাদ। তারপর সিনথিয়ার দুহাতের মাঝখানে দেয়।
--ধরো,,,সাবধানে!
সিনথিয়া দশ আঙ্গুলের আলিঙ্গনে ধরে উষ্ণ রুমালে পেঁচানো পেয়ালা। গরম হয়ে ওঠা শুভ্র রুমালের উষ্ণ স্পর্শে সিনথিয়ার হীমশীতল হাত দু'টো যেনো প্রাণ ফিরে পায়। গরম ধোঁয়া ওঠা থাই স্যুপের লোভনীয় দৃশ‍্য-সাথে মাশরুম স্পাইসি চিকেন আর অনথন। তবে খাওয়ার চেয়ে এই ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূতির মধ্যে সুপের উষ্ণ পেয়ালা ধরে সিনথিয়ার বেশ আরাম লাগছে। এই ভেজা ভেজা আবহাওয়া একটু উষ্ণ আচের যে ভীষণ প্রয়োজন ছিল তার-ইরফাদ বুঝলো কি করে! সে কি সব বুঝতে পারে!

--------

এই বৃষ্টি ভেজা দিনে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছে রিমা।ফিসফিশিয়ে প্রিয় মানুষের সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছে।

--শুভ্র! কাল একটি রিকোয়েস্ট রাখবে আমার!
--বলো..
-- অনেকদিন হলো তোমার সাথে মিট করি না! কাল একবার আসবে?
--ভেবে দেখবো!
--তোমার কি আমার জন্য মায়া লাগে না?
--কি মনে হয় তোমার?
--তুমি অনেক নিষ্ঠুর!পাষাণ! না হলে কি আর, দেখা না করে থাকতে পারো?
-- তাই!
--হুম
-- দেখা করলে মায়া বাড়ে! তখন দূরে থাকতে কষ্ট হয়।
-- দূরে থাকতে বলে কে?

-- আর একটা মাস! তারপরেই অপেক্ষার দিন শেষ। আর একটু ধৈর্য্য ধরো।

------

ঝুম বৃষ্টি, ঘন অন্ধকার রাস্তা। রাস্তার দু'ধারে লম্বা লম্বা গাছ। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় দেখা যাচ্ছে, দমকা হাওয়ায় গাছের ডগা এপাশ-ওপাশে হেলে পড়ছে। আর মধ্য দিয়ে গাড়িটি যেন আপন গতিতে ছুটে চলেছে। তারা কোথায় যাচ্ছে কেন যাচ্ছে সিনথিয়া জানে না।সে শুধু নিষ্কপলক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। রাস্তাটি মনে হচ্ছে কোন গ্রামের।শহর থেকে গ্রামের রাস্তায় চলে এসেছে গাড়ি অথচ সিনথিয়ার কোন হেলদোল নেই।সে যেন নিশ্চিন্ত! শতভাগ নিরাপদ!কোথায় থেকে আসছে এত বিশ্বাস এত ভরসা!তা তার জানা নেই। তার শুধু মনে হচ্ছে গাড়ি না থামুক। গাড়ি চলুক অনন্তকাল। সাথে সাথেই ইরফাদ গাড়ি থামায়। সিনথিয়া ইচ্ছেতে ভাটা পড়ে।ইরফাদ একটা ছাতা হাতে গাড়ির দরজা ঠেলে বাইরে বের হয়। সিনথিয়া সে-দিকেই তাকায়। ইরফাদ সিনথিয়াকে বলে,

-- খুব ইমপর্ট‍্যান্ট কাজ- পাঁচ মিনিট বসো হ‍্যাঁ!
সিনথিয়া মাথা নাড়ায়।ছাতা হাতে দূরে দাঁড়ায় ইরফাদ। তারপর প্রভাতরঞ্জন সরকারের নাম্বারে ডায়েল করে,

--আসসালামু আলাইকুম।
--ওয়ালাইকুম আসসালাম। ইরফাদ! সব ঠিক আছে?
-- জ্বি স‍্যার!
-- কিন্তু তোমার প্ল্যান "A" তে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। প্ল‍্যান "বি" ট্রাই করো।
--জ্বি স‍্যার!
-- আর কোনো তথ‍্য পেয়েছো?
-- স‍্যার! যা গেস করেছিলাম তাই হয়েছে।থানার বাইরে থেকেই একটা গাড়ি পিছু নিয়েছিলো! পুরো জার্নিতে গাড়িটি আশে পাশেই ছিলো!সিনথিয়ার সাইড গ্লাস ওপেন থাকায় তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সিনথিয়ার উপর ছিলো। বিষয়টি পুরোপুরি নজরে আসায় আমি গাড়ি স্লো মশানে রাখি।এতে পেছনের গাড়ি সামনে চলে যায়,তারপর আমি তাদের পিছু নেই। খানিকক্ষণ যাওয়ার পর বৃষ্টি শুরু হয়। তারা গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়। গাড়ির নম্বর রেখেছি। তবে প্রশ্ন হলো!আজ যে সিনথিয়া লকাপের বাইরে তা-তারা জানলো কি করে? এমন তো নয় যে, সারাদিন মেয়েটির খোঁজেই তারা বসে থাকে! তার মানে দাড়াচ্ছে! লকাপের দায়িত্বরত কেউ সিনথিয়ার সব নিউজ বাইরে পাঠায়।আমাদের তাকে খুঁজে বের করতে হবে।
-- ওকে! এদিকটা আমি দেখছি! তুমি প্ল‍্যান "বি" ট্রাই করো। অল দ‍্যা বেষ্ট!
--ওকে স‍্যার!

ইরফাদ পুনরায় গাড়িতে বসে। একটানে পার হয়ে যায় অনেকটা পথ। তারপর আবার গাড়ি দাঁড় করায়। বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই। যেনো এই বৃষ্টির পথ শেষ হবার নয়। ইরফাদ একটা ব‍্যাগ থেকে ছোট ফ্লাস্ক বের করে। পাশাপাশি সিনথিয়াকে বলে,

-- কফি খাবে!

সিনথিয়া পাশ ফিরে তাকায়। তার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ইরফাদ গাড়ি থেকে নামে। ইরফাদ সিনথিয়ার পাশের দরজা খুলে দেয়। মাথার ইশারায় বাইরে বেরিয়ে আসতে বলে ইরফাদ।
-- কাম!
সিনথিয়া কিছুক্ষণ প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এই ঝুম বৃষ্টিতে বাইরে কেন যেতে হবে? তারপর বেশি কিছু কিছু না ভেবেই বাইরে বের হয়। আরেকটি ছাতা সিনথিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয় ইরফাদ। সিনথিয়া ছাতা হাতে সাবধানে পা ফেলে ইরফাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে। পিচঢালা ভেজা রাস্তার কোণা ঘেসে দাঁড়ায় সে। রাস্তার ধার ঘেঁষে অসংখ‍্য সারি সারি গাছ। বাতাসে দুলছে ডালপালা। রাস্তার পাশেই খাল। বৃষ্টির ফোটা গুলো খালের পানিতে লাফালাফি করছে। আকাশ থেকে ক্ষণে ক্ষণে আসা আলোতে এইটুকুই দেখতে পেয়েছে সিনথিয়া। ইরফাদের চোখের ইশারায় আরেকটু কোণা ঘেঁষে দাড়ায় সিনথিয়া। ইরফাদ শান্ত গলায় বলে,

-- ছাতাটা ক্লোজ করে আমাকে দাও।

সিনথিয়া ইরফাদের কথা মতো কাজ করে। ইরফাদ ছাতাটা রাস্তার উপর রাখে। তারপর আবার শীতল গলায় বলে,
-- জুতো খুলে সাইডে রাখো। আর কফি মাগ'টা নাও।
সিনথিয়া জুতা খুলে সাইডে রাখে। কফির শূন‍্য মগটা হাতে নেয়। মাথার উপর ছাতা ধরে আছে ইরফাদ।বৃষ্টির ছাট তীর্যক ভাবে পড়ায় ভিজছে দু-পায়ের পাতা। বরফ সিক্ত পানির স্পর্শে কেঁপে ওঠে সিনথিয়া। ইরফাদ ফ্ল‍াস্ক থেকে গরম কফি ঢালে সিনথিয়ার হাতে থাকা কফি মগে। ধীর গলায় বলে ওঠে,
--চোখ বন্ধ কর!

সিনথিয়া কোনো কিছু না ভেবেই চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। কারণ জানা নেই। সে শুধু জানে - ভালো লাগছে ভিষণ! পেছন থেকে ইরফাদের বরফ শীতল গলা,

--মনে কর! নিস্তব্ধ নির্জন ঝুম বৃষ্টির রাতে তুমি একা এখানে দাঁড়িয়ে আছো।

সিনথিয়া অনুভব করে! মাথার উপর কান্নারত খোলা আকাশ, নির্জন-নিস্তব্ধ রাস্তায় কোণ,ছাতার ওপরে অনবরত পড়তে থাকা ঝুম বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ। পায়ের উপরে পড়তে থাকা বৃষ্টির শীতল স্পর্শ। হাতের মধ‍্যে ক্রমেই বেড়ে যাওয়া উষ্ণ অনুভূতি। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া স্নিগ্ধ বাতাস। সিনথিয়ার শ্বাস ঘন হয়ে আসে। এতো সুন্দর অনুভূতির সাথে এই প্রথম সাক্ষাৎ তার। পেছন থেকে ভেসে আসা ইরফাদের গলা আবারো হিম শীতল,,
-- লম্বা শ্বাস নাও তো।

ইরফাদের কথা মত সিনথিয়া লম্বা করে শ্বাস টেনে নেয়। সিনথিয়ার ভিতরের আনাচে কানাচে একটা শীতল অনুভূতিতে ভরে ওঠে। শরীর হয়ে ওঠে হিম শীতল। পা থেকে মাথা অবধি শিরশিরিয়ে ওঠে। এতো সুন্দর স্নিগ্ধ পরিবেশে এমন অনুভূতি তার জীবণে এই প্রথম। অজানা কারণে শরীর হীম হয়ে আসে।সিনথিয়া ওধরের স্পর্শে শুষে নেয় ধোঁয়া ওঠা উষ্ণ তেতো স্বাদের কফি। ভেতর থেকে একটা চাঙা অনুভূতি ধরা দেয়। এতো ভালো কোনোদিন তার লাগে নি।তারপর মনোমুগ্ধকর শান্ত নিরব পরিবেশে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির শব্দ শোনে!

ফ্ল‍্যাশব‍্যাক
--------------
সেদিন রাতে হঠাৎ ইরফাদের ফোনে ফোন আসে। ফোন করেন গারদের দায়িত্বরত বিশ্বস্ত একজন মহিলা পুলিশ,

--স‍্যার!
-- বলুন..
-- মিস সিনথিয়ার হাতে একটি চিঠি দেখা গেছে। তিনি খুব চুপিচুপি সেই চিঠি পড়তে চেয়ে আমার চোখাচোখি হয়েছেন। আমার চোখের আড়ালে এই চিঠি মিস সিনথিয়ার হাতে পৌঁছে দিয়েছে কেউ। কে বা কারা সাহায‍্য করছে জানিনা। তবে চিঠিটা পড়ার পর মেয়েটি দীর্ঘসময় চুপচাপ বসে ছিলো। আমার মনে হলো বিষয়টি আপনা'কে জানানো উচিৎ।
-- চিঠি'টা কোনো ভাবে নিতে পার

 #রং(wrong) #পর্বঃ৭ #তন্নী_তনুএরকম একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে কিছুক্ষণ অন‍্যমনস্ক থাকতে বেশীরভাগ পাঠক ইনবক্সে গল্প চে...
13/04/2025

#রং(wrong)
#পর্বঃ৭
#তন্নী_তনু

এরকম একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে কিছুক্ষণ অন‍্যমনস্ক থাকতে বেশীরভাগ পাঠক ইনবক্সে গল্প চেয়েছেন। অনেক রিকুয়েস্ট করেছেন। নিজের মাইন্ড ডায়ভার্ট এবং পাঠকদের মন রক্ষার্তে গল্পের পরের পার্ট দিলাম। গল্পে যেহেতু লুতুপুতু কিছু লিখিনাই। সো আমাকে কেউ খারাপ কথা বলবেন না। গল্পটি অনুপ্রেরণা মূলক হবে। সো খারাপ কিছু নেই। বাকিটা নিচে 👇

#পর্বঃ৭
#লেখনিতেঃতন্নী_তনু

অন্ধকারের ডুবে আছে গারদে'র চার দেয়াল। পাহাড় ধসের মতো নেমে আসা ক্লান্তিতে ঘুমের অতলে ডুবে গেছে সিনথিয়া।বহুদিন তার চোখে ঘুম নেই। তবে আজ শরীর তাকে ছুটি দিয়েছে। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেছে তার থেকে অনুমতি না নিয়েই।নিস্তব্ধ, নিশব্দ, নিঝুম রাত পোঁছে গেছে শেষের ঠিকানায়। সিনথিয়া ঘুমে আছন্ন। গারদের লোহার দরজাটা হঠাৎ টুং করে উঠে।ঘুম হালকা হয়ে আসে। ভেসে আসে বহু সাবধানে ফেলা পায়ে'র মৃদু আওয়াজ।গভীর ঘুম বন‍্য হরীণের ন‍্যায় ছুটে পালিয়ে যায়।তার অনুভূতি নাড়া দিয়ে বলে- কেউ যেনো তার দিকে'ই গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছে। তুষারপাতের ন‍্যায় হীমশীতল হয়ে আসে তার শ্বাস। ঘন হয়ে আসে বুকের মধ‍্যে। চোখ দু'টো ভয়ে কোটরে লুকাতে চায়।চোখ টেনে তাকানোর সাহস হয়ে ওঠে না। চোখ খুলে কাকে দেখবে সে? জীবনের টানাপোড়েনে আর কতো কি দেখবে সে? এই বদ্ধ চার দেয়ালের ঘরে অচেনা মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পড়ে!সে ডাঙায়‍ উঠে আসা মাছের মতো ভেতরে ছটফট করে! মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারে না!শ্বাস চেপে রাখে শব্দ হওয়ার ভয়ে। ঠিক তখনই তার খুব কাছে ঘন হওয়া বরফের ন‍্যায় শীতল শ্বাস তার চোখে মুখের উপর ঠিকড়ে পড়ে। অন্ধকার ঠেলে ভয় ভীতি ছুড়ে ফেলে লাফিয়ে ওঠে সিনথিয়া। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

-- কে!!

-- কে!!"কে"শব্দটা চার দেয়ালে বারি খায়। কালো মেঘের ন‍্যায় অন্ধকার কক্ষ, চোখ দু'টো যেনো ছেপে আসে সিনথিয়ার। অন্ধকার হাতড়ে উঠে দাঁড়ায়।পায়ের শব্দটা গাঢ় থেকে নিমিষেই শূন‍্যের মতো যেনো মিলিয়ে যাচ্ছে। আলো জ্বেলে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায় সিনথিয়া। "কই কেউ নেই তো! সিনথিয়া গারদে'র দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। কোথাও কেউ নেই! তাহলে এতোক্ষণ যা হলো!তা কি করে সম্ভব?

*
*
*
ঝলমলে আলো আর তপ্ত রোদে ফেটে যাচ্ছে সকালবেলা। ভ‍্যাপসা গরমে আগুনের ন‍্যায় পুড়ছে সিনথিয়ার শরীর। তবে তার হেলদোল নেই।গুটিশুটি মেরে বসে আছে সেই রাত থেকেই। দু'টো চোখ চাতক পাখির ন‍‍্যায় অপেক্ষা করছে একজন মানুষের। যার দেখা পেলেই গড়গড় করে বেরিয়ে আসবে সকল তালাবদ্ধ কথা। "জীবনের এই অভিশপ্ত সময়ে ঐ একজন মানুষ আলোর দিশা হয়ে ধরা দিয়েছে। যার ভরসায় এখনো আশা করে আছে সে"একদিন হয়তো মুক্তি মিলবে।" কিন্তু মানুষটা কি এই তুচ্ছ সিনথিয়ার সন্ধানে আসবে?" অনিশ্চিত জেনেও সিনথিয়া অপেক্ষায় থাকে! কালকে তার উপর ক্ষিপ্ত,রুষ্ট মানুষটি কোনো প্রয়োজনে যদি তার খোঁজে আসে।

---

সকাল সকাল তীব্র রোদে ফেটে যাচ্ছে দক্ষিণমুখী বেলকুনি।রোদে'র তীর্যক রশ্মি চাপা দিতে থাই গ্লাস টেনে,পর্দা ফেলে পুনরায় বিছানায় বসে ইরফাদ। এক'পা বিছানায় ভাজ করে ফেলে তার উপর বালিস টেনে নেয়। ল‍্যাপটপ তুলে নেয় কোলের উপর।অফিস যাওয়ার আগে আরেক'টু তথ‍্য দরকার। তাই খাবার সময় টুকু'তে বাকি কাজটাও সেরে নিবে সে।সাইড টেবিলের মিনি ট্রে তে নাস্তা দিয়ে গেছে ইভা। মেয়েটা মায়ের মতো করে যত্ন নেয় তার। বয়সে ইরফাদে'র ছোট। তবে দায়িত্বের বেলায় যেনো বড় বোন। পাঁচ মিনিট আগে ওটস, ইয়োগার্ট,মধু মেখে উপরে ফ্রুটস সাজিয়ে দিয়ে গেছে মিনি ট্রে তে।মেয়েটা খুব শৌখিন। প্রতিদিন এই কমন নাস্তাটা খুব যত্ন করে সুন্দর করে পরিবেশন করে।ট্রে'তে থাকা চামুচে সারভিং ডিস এর ওটস আর ফ্রুটস মেখে নিচ্ছে ইরফাদ। এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠে,

-- ইরফাদ! তোমাকে (শিমলাপুর- ছদ্মনাম ) যেতে হবে।ওখানে দূর্ঘটনা ঘটেছে। দশটা'র মধ‍্যে পোঁছাতে হবে। " প্রভাতরঞ্জন সরকার ফোন দিয়েছেন। উত্তরে ইরফাদ বলে,-"ও.কে স‍্যার।"

ফোন রাখতেই দরজার ওপাশে থেকে একটি মিষ্টি গলা ভেসে আসে,
-- "আসবো মামাই?"
টিয়া পাখির মতো স্বর শুনে দরজার পানে তাকায় ইরফাদ। দরজা হালকা ফাঁক হয়েছে। তবে এপাশের অনুমতি না পেলে টুম্পা ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। ইরফাদ ডাকে,

-- আসো আম্মু!

টুম্পা নরম তুলতুলে পা ফেলে ভেতরে আসে। মুখ গম্ভীর,থমথমে।চাঁদের মতো মুখটা পানিহীন অর্ধমৃত গাছের ন‍্যায় নেতিয়ে পড়েছে। ইরফাদ ট্রে'তে ডিস রাখে। ল‍্যাপটপ'টি এক হাতে ফোল্ড করে রেখে,বিছানা থেকে নেমে পাঁচ বছর বয়সী টুম্পাকে দু'হাতে শূন‍্যে তুলে কোলে নেয়। মুখ পানে চেয়ে বলে,

-- " কি হয়েছে মা!" টুম্পা কথা বলে না। শুধু চুপচাপ থাকে। ইরফাদ জানে মেয়েটা কখন এতো স্তব্ধ হয়ে যায়। তাই আর জিজ্ঞেস করার কিছু নেই। ছোট্ট টুম্পার কপালে ছোট্ট হামি দেয় ইরফাদ। তারপর বলে,
-- "মামুনি'কে বোকবো! ওকে!" টুম্পা চুপ করে থাকে। যার অর্থ "তার মা'কে বকা যাবে না।" ইরফাদ মৃদু হাসে। তারপর বলে,

-- "ওকে,,,তুমি যা চাও তাই হবে, হ‍্যাপি! নাউ স্মাইল!"
ছোট্ট টুম্পা ঠোঁট ছড়িয়ে দেয়।
*
*

রাতের সেই বিস্ময়কর ঘটনা বলার জন‍্য সিনথিয়া পথ পানে চেয়ে আছে।কিন্তু ইরফাদ সারাদিনে একবারো এলো না। "সে যদি এই ঘটনা অন‍্য কাউকে বলে -কেউ গুরুত্ব দিবে না।হয়তো বিশ্বাস ও করবে না।" আবার যদি কাউকে না জানায়!এই গারদে ভয়ে ভয়ে আজ রাতে সে পরপারে চলে যাবে! কাছাকাছি দায়িত্বরত মহীলা পুলিশকে ডাকে সিনথিয়া,

-- এসপি সাহেব আসবেন না?

মহিলা পিটপিট করে তাকালো সিনথিয়ার দিকে। যেনো হীরা- পান্না চেয়ে বসেছে। সিনথিয়া নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে কৌশলে জিজ্ঞেস করলো ,

-- না মানে! আমার কেস তো তিনিই দেখছেন। আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়- কিছু ইমপরট‍্যান্ট টপিক ভুলে গিয়েছিলাম । ঐটা মনে পড়লে বলতে বলেছিলো। তিনি কি আসবেন না?

-- নাহ! খুব প্রয়োজন ছাড়া তিনি থানায় আসেন না। তিনি হেডকোয়ার্টারে থাকেন।

সিনথিয়ার এতো সময়ের অপেক্ষার উপর এক বালতি পানি ঢেলে পড়লো। তাহলে কিভাবে গত'রাতের ঘটনা বলবে! আবার রাত আসতে চললো। আজ এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কি হবে? যে করে ই হোক এই কথা তার জানাতেই হবে। সে একটি সুক্ষ প্রচেষ্টা চালালো।

-- স‍্যার তো বলেছিলো বিষয়টি মনে পড়লেই যেনো জানাই। খুব ইমারজেন্সি। তাহলে কিভাবে জানাবো?

-- ডিপার্টমেন্টে জানানো হবে। প্রয়োজন হলে আপনাকে ডাকা হবে।

সিনথিয়া একটু হাফ ছাড়লো। একটা তো উপায় বের হয়েছে। এতেও সে একটু সস্তি পাচ্ছে। যে করেই হোক তাকে ঘটনা'টা জানাতেই হবে।

--------
শিমলাপুর নয়াঘাটের পারে দাঁড়িয়ে আছে ইরফাদ। সাথে তার সহকারী কয়েকজন। ঘাটের সিঁড়িতে মিলেছে আরেকটি লাশ। কিন্তু এবারের চিত্রটি ভিন্ন। বিধ্বস্ত অবস্থা পড়ে আছে এক তরুণী।যার হৃদপিণ্ড বুক থেকে চিরে বের করা হয়েছে। র/ক্তে ভেজা শরীর। ডান গালে কালো কালিতে একটি সুক্ষ চিত্রকর্ম।তার মধ‍্যে কালো কালিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লেখা আছে কিছু একটা। ইরফাদ তার অ‍্যাসিস্ট‍্যান্ট এর উদ্দেশ্য বলে, "জাবির দেখোতো কি লেখা আছে ?"

জাবির লাসটির গালের পর্যবেক্ষণ করে। না কিছু বোঝা যাচ্ছে না। হাতে থাকা ম‍্যাগনিফাইং গ্লাস ধরে জাবির। তারপর বলে," প্রেমিক!"

*
*
*
"স‍্যার! মনে হচ্ছে প্রেম ঘটিত বিষয়।" জাবিরের কথা শুনতে শুনতে স্ট্রিয়ারিং ঘুরায় ইরফাদ। লাশ পোস্ট মর্টেমে পাঠানো হয়েছে। ইরফাদ বলে,
-- বলো, তারপর!

-- আমি বুঝাতে চাচ্ছি স‍্যার! যেহেতু মেয়েটির হৃদপিণ্ড বের করে নেয়া হয়েছে। আবার এমন একটি ওয়ার্ড লিখে দিয়েছে । মনে তো হচ্ছে প্রেম ভালোবাসার কেস ই হবে।

--তাই!
-- এখনকার জেনারেশনে যেমন প্রেম আর কি! একসাথে অসংখ্য অ‍্যফায়ার কন্টিনিউ করে। ওরকম কিছু টের পেয়ে হয়তো মা/র্ডার টা করা হয়েছে।

--কিন্তু জাবির! আমি তো অন‍্য কিছু দেখছি!
-------
রাত নয়'টা উত্তরমুখি বেলকুনিতে দু'জন কপোত-কপোতি মুখোমুখি আরাম করে বসে আছে । সদ‍্য ফোটা ফুলের ন‍্যায় তাদের নতুন জীবন। শোভা আর সুরভীতে ভরপুর তাদের সময়। আর এটাই স্বাভাবিক। দুজনে গল্পে মশগুল।তাদের গল্পের বিষয় জানা নেই তবে কথার ফাঁকে ফাঁকে অল্প বয়সী তরুণ,তরুণীর কোমল হাতের উল্টোপাশে- অধরের শীতল স্পর্শ দিচ্ছে বারংবার। কখনো বা এলোকেশী চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তাদের খুনশুটি'ই জানালায় দাঁড়িয়ে দেখছে ইভা।নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে, পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষে যখন ফলাফল মিলছে না তখন দু'চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় ঝড়ছে অশ্রুবিন্দু।পাঁচ বছর বয়সী টুম্পা চুপচাপ বসে আছে বিছানায়। শিশু টুম্পা হওতো মা'য়ের কান্নার কারণ জানেনা। তবে কান্না যে ব‍্যাথা পেলে আসে তা তো সে জানে। আর মা'য়ের কান্না তার স্তব্ধ হওয়ার কারণ। ইভা জানালার পানে চেয়ে চোখের জল ফেলছে। ইরফাদ দাঁড়িয়ে আছে ঠিক পেছনে। সামনের বেলকুনিতে ছোট্ট ভালোবাসার যে ঘর গড়ে উঠেছে। তাদের খুনসুটি দেখেই ইভা'র পুরোনো স্মৃতি জেগে ওঠে, কষ্ট পায়। ছোট্ট টুম্পা বুঝতে না পারলেও ইরফাদ তো বোঝে।এদিকে ভুল কে শক্ত হাতে দমন করা ইরফাদের প‍্যাশন।তাই পেছন থেকে শক্ত গলায় বলে,

-- "ইভা!এক কথা কতবার বলবো তোকে? রুম চেঞ্জ করতে বলেছিলাম না?" পেছন থেকে ইরফাদে'র বজ্রকন্ঠ শুনে ভেতর থেকে কেঁপে ওঠে ইভা। পেছন ঘোরার আর সাহস পায় না। দু'হাতে তড়িঘড়ি করে চোখের জল মোছে। ইরফাদ টুম্পাকে বিছানা থেকে কোলে তুলে নেয়। ছোট্ট হামি দিয়ে নামিয়ে দেয় কোল থেকে। তারপর বলে,

-- "বাবা! দেখোতো নানু ভাই কি করে?"
টুম্পাকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়াতে ইভা আরও ভয়ে জমে যায়। ইরফাদ এবার আরও শক্ত গলায় বলে,

-- "এদিকে ঘোর! তোকে রুম চেঞ্জ করতে বলছি না?" ইভা জানে! কথা অমান‍্য করা ইরফাদে'র পছন্দ না। তাই সে কথামত ঘুড়ে দাঁড়ায়।মাথা নিচু করে রাখে। কথার উত্তরে মাথাও নাড়ায়। তারপর ভয়ে ভয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,

-- টুম্পা অন‍্য রুমে শিফট হতে চায় না ভাইয়া। অন‍্য রুমে গেলে রাতে ঘুমায় না। ঐ জ..জ.ন‍্য আরকি...

ইরফাদ চোখ রাঙিয়ে বলে,

-- ফার্দার যেনো এই জানালায় দাঁড়াতে না দেখি। গট ইট!

ইভা আবার মাথা নাড়ে। ইরফাদ বেরিয়ে যেতে নিয়ে থামে। তারপর বোনের দিকে ঘুরে নরম গলায় বলে,

-- ভুল জিনিস স্মৃতিচারণ করে কষ্ট পাওয়া আরেকটা বড় ভুল। তাই যত তাড়াতাড়ি মুভ-অন করবে, ততো ভালো। তোমার কান্নার ইফেক্ট ছোট্ট বাচ্চার উপর পড়ে। সো! ফরগেট ইউর পাস্ট!

-------

সিনথিয়ার অপেক্ষার ফলাফল শূন‍্য। ইরফাদ আসেনি। তার ভিতরের জমে থাকা ভয়ভীতি'র রাতের কথা বলা হবে না। আজকের রাত্রি নির্ঘুমে কাটবে নিশ্চিত! ভয়ে ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয় আরও। রাতের কথা ভাবতেই বুক চিরে হাহাকারে চোখ থেকে অনবরত জল পড়তে থাকে। হাঁটুর ভাজে মুখ লুকিয়ে রাখে। এমতাবস্থায় একজন মহীলা পুলিশ এগিয়ে আসেন। নিজের ফোনটি সিনথিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন,

-- " ইরফাদ স‍্যার কথা বলবেন।" বাক‍্যটি যেনো সস্তির পরশ হয়ে বকুল ফুলের মতো তার উপর ঝড়ে পড়লো। এই অসহনীয় মূহুর্তে এই একজন মানুষ তাকে আলোর সন্ধান দেয়,সাহস দেয়।সে ছুটে এসে বাঘিনীর মতো থাবা দিয়ে ফোনটি নেয়। তারপর ক্ষীণ কন্ঠে বলে,

--আসসালামু আলাইকুম।

সালামের উত্তর নিয়ে অপর পাশে'র মানুষটা শীতল গলায় বললো,

--"আর ইউ ওকে?"

"প্রচন্ড বিষণ্নতায় প্রতি মূহুর্তে ডুবতে থাকা সিনথিয়ার জীবনে এই বাক‍্যটুকু বলার জন‍্যে অবশিষ্ট কেউ ছিলো?ভাবতেই সিনথিয়া শূন‍্যে তাকিয়ে থাকে। প্রতিনিয়ত চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে সে। তার পাশে আজ কেউ নেই,কেউ না। "সে বেঁচে আছে কি না" এইটুকু দিয়েও হয়তো কারো কিচ্ছু যায় আসে না এখন। "সে ঠিক আছে কি না? ভালো আছে কি না?" এসবে'র দাম এখন শূন‍্যের কোঠায়। এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে এতো বড় মাপের একজন মানুষের মুখে তার ঠিক থাকার প্রশ্ন শুনে চোখের জল নিরবে গড়িয়ে পড়ে। ভাগ‍্যের বেড়াজালে! এক অকল্পনীয় মরণ ফাঁদে আটকে পড়া, প্রতি নিয়ত নতুন নতুন যন্ত্রণার স্বাদ পাওয়া! ঝাঝরা হওয়া বুকে ব‍্যাথাগুলো আগুনের ফুলকি আকারে ঝিলিক দিয়ে ওঠে। বুক ভারী হয়ে আসে। অসহনীয় যন্ত্রণায় গলা ভারী হয়ে আসে। ক্ষীণ হয়ে আসে স্বর।সে ক্ষীণ স্বরে বলে,

--"হুম।" মিলি সেকেন্ডের মধ‍্যেই ওপাশ থেকে ইরফাদের শীতল কন্ঠে ভেসে আসে,-- "কাঁদছো কেনো?"

কথাটি যেন হৃদয়ের অন্তরস্থলে গিয়ে ঠেকে সিনথিয়ার। সেকেন্ডের জন‍্যে শ্বাস বন্ধ হয়।ঘন হয়ে আসা শ্বাস বেরিয়ে আসে ধুকপুকুনি হয়ে। এই যে তার আত্মার বান্ধবী চোখের পানি দেখেও তো বললো না-কাঁদছিস কেনো? চোখের জলের উপর মুখের কথায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কতজন।আরও কতোশত কাছের মানুষ মুখ ঘুড়িয়ে নিয়েছে তার থেকে।"

যে পৃথিবীতে একই বিছানায় মুখ ঘুড়িয়ে শুয়ে থাকা এমন কিছু স্বামী আছেন যারা স্ত্রী'র পাশে শুয়েও কান্নার শব্দ শুনতে পায়না। পেলেও কনফিউশনে বলে কাঁদছো নাকি?" সে একই পৃথিবীতে ফোনের অপরপৃষ্ঠের মানুষটা তার কেউ না হয়েও, তাকে স্বচক্ষে না দেখে এতোটা দূরত্বে থেকেও একদম শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কি করে বললো "কাঁদছো কেনো?"তিনি কোনো কনফিউশান রাখেননি। তিনি বলেননি কাঁদছো নাকি? সে সরাসরি কান্নার কারণ জানতে চেয়েছে। কিভাবে বুঝলেন তিনি? সে তো কেঁদেছে নিরবে, নিঃশব্দে।তাহলে ফোনের অপর পৃষ্ঠের মানুষটি কি করে বুঝলো? সিনথিয়া চুপ করে থাকে। চোখের জল টুপটুপ করে পড়ে। ওপাশে থাকা ইরফাদ শীতল গলায় বলে,

--"ভালো-খারাপের সংমিশ্রণেই জীবণ!খারাপ সময়ের মোকাবেলা যতো শক্ত হাতে করবে,ততই কষ্ট কম পাবে। ভেঙ্গে পরা যাবেনা।জানো তো! রাত যত গভীর হয়,ভোর ততো নিকটে আসে।সো,ডোন্ট ক্রাই!"

সিনথিয়া'র দুঃখের সাগরে এক চিমটি ভালোর মূহুর্ত্তের ছোঁয়া পেয়ে যেনো আরও দূর্বল হয়ে পড়ে। চোখের জল বাঁধ ভেঙ্গে গড়িয়ে পড়ে।নিজেকে সংযত করতে নিজের হাতের আঙুল কামড়ে ধরে। ক্ষাণিকটা সময় পর ইরফাদ বলে,

-- কিছু বলবে বলেছিলে!!

সিনথিয়া কান্না মুছে নেয়। স্বাভাবিক ভাবে বলার চেষ্টা করে,
--আমার মনে হলো কাল রাতে এইখানে কেউ এসেছিলো!
-- মনে হয় কথার কোনো ভিত্তি নেই!

-- কিন্তু আমার তো মনে হলো! মনে হলো মানে!কেউ এসেছিলো সিউর!

-- "নাইটমেয়ার" হতে পারে!

--কিন্তু...আমার তো সত‍্যি মনে হলো।

-- তুমি সেইফ জোনে আছো সিনথি।রাখছি...

ওপাশের মানুষটার রাখছি বলা উপেক্ষা করে নির্ললজ্জের মতো সিনথিয়া আবার বললো,--"কিন্তু আজও যদি আসে। আমার খুব ভয় করছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে।"

ক্ষাণিকটা দম নিয়ে আবার বলে,

-- এর আগে রাফির মতো আমাকেও কিডন‍্যাপিং এর চেষ্টা করা হয়েছে। দু'টো মুখোশধারী মানুষ আমাকে ধরার জন‍্যে.....

-- হোয়াট?

--হুম।
-- আমাকে ইনফর্ম করেছো?
-- বুঝলেন তো ! অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়। আমি তো সেদিন আপনা'কে তিনটা কল দিলাম। না হলো রিসিভ আর না করলেন কল ব‍্যাক। আমি তো তখন নিজেকে বাঁচাতে রাস্তা দৌঁড়ে বেড়াচ্ছি। একটা মেসেজ ও করলাম। বাবা থানায় হেল্প চেয়ে অপমানিত হয়ে গেলেন। সেদিন কোনো রকম বেঁচে ফিরলাম। তবে মরে গেলেই ভালো হতো। পরেরদিন মানসম্মান অন্তত যেতো না।

--আমি বি'জি ছিলাম। কিন্তু অন‍্যসময়েও তো বলা যেতো!
-- এই যে আজ বললাম।
--ও.কে, ডিটেলস বলো।

____________

মাঝ রাত রীমা ফিসফিসিয়ে কথা বলছে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে,

-- আজ'কে নিউজ দেখেছো? কি যে অদ্ভুত!
-- কি?
-- একটি মেয়েকে মার্ডার করে ফেলে রাখা হয়েছিলো। তার হৃদপিণ্ড বের করে নেয়া হয়েছে।
-- দেখেছি তো!
-- আমি খুব ভয় পেয়েছি! এমন অদ্ভুত ঘটনা কখনো দেখিনি। হৃদপিণ্ড কেনো বের করে নিলো বলোতো?

-- আমি কি ডাক্তার নাকি পুলিশ বলোতো? আমি এতো রহস‍্য বুঝিনা।

-- আচ্ছা বাদ দাও! আচ্ছা, শুভ্র! এভাবে আর কতো দিন থাকবো? আমার তো একা আর ভালো লাগে না। এই লুকিয়ে চুরিয়ে দেখা করা।

-- এই একটা মাস সময় দাও! এর মধ‍্যেই সব ব‍্যবস্থা করবো।
-- প্লিজ! আর সময় নিও না। সত‍্য কখনো গোপন থাকে না।

বিকেল পেরিয়ে যাচ্ছে। আর একটু পরেই সন্ধ‍্যা,তারপরেই রাত।সিনথিয়া বিষণ্ন মনে চুপটি করে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। এক বদ্ধ কুঠুরিতে তার দম বন্ধ হয়ে আসে। মনে হয় এই বন্দি খাঁচা থেকে কবে পাখির মতো উড়াল দিতে পারবে? কবে মুক্ত আকাশ দেখতে পারবে। তার জীবণে কি এমন দিন কখনো আসবে? নাকি আধারের অতল গহীনে ডুবে যাবে তার জীবনের প্রদীপ-শিখা।চোখের জল উথলে পড়ে সিনথিয়ার। আর কতো চোখের জল ফেলবে সে? হাঁটুর ভাঁজ'এ মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদে সে। গারদের ওপাশ থেকে মহীলার কন্ঠ ভেসে আসে। তারপর একটা প‍্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

-- "মিস সিনথিয়া "আপনার পার্সেল!"

------ #লেখনিতেঃতন্নী_তনু......

সিনথিয়া সাদা রঙের প‍্যাকেটটি খুললো। কটনের মধ‍্যে পিউর নীল রঙের লং কুর্তি। সাথে একটি ল‍্যাডিস প‍্যান্ট। পায়ের কাছটায় দু'টো জিপার। চোখ মুখ কুচকে এলো সিনথিয়ার। মনের সাথে কথা চলছে তার " কে দিলো?" অপর পক্ষ যেনো উত্তর দিলো," আমরাও তাই ভাবছি, কে দিলো?" অবাক হওয়া চোখ দু'টো উচ্চ সীমায় পৌছে গেলো যখন আরেকটি প‍্যাকেট থেকে বের হলো সাদা রঙের স্লিপার। "কে দিলো এসব?"

-----
শিমলাপুরের মতো আরও কিছু জায়গায় আরও চারটি লাশ উদ্ধার! গল্প প্রায় একই! সবগুলো লাশের হৃদপিণ্ড বের করে নেওয়া হয়েছে! এবং লাশের গালে আলাদা আলাদা চিত্র আঁকা। এবারে চিত্রগুলি ভিন্ন কথা বলে! কিছু চিত্র গুলোতে অক্ষর লেখা আছে। যেগুলো সাজালে শব্দ গঠন হচ্ছে। শব্দ গুলো যেনো একই জিনিস ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ঐ দিকে প্রত‍্যেক পরিবারের ভাষ‍্যমতে," কিলার প্রথমে সতেরো-আঠারো বয়সী মেয়েদের কিডন‍্যাপ করেন। এরপর মুক্তিপণ দাবি করেন, এবং ব্ল‍্যাকমেইল করেন"যদি মুক্তিপণ যথাস্থানে না পোঁছায় তাহলে মেয়েদের সাথে রে/প করা হবে এবং সেই ভিডিও অনলাইনে ছাড়া হবে।" ভুল করেও পুলিশকে জানানো হলে! তাদের মেয়েকে চিরতরে হারাবেন। ঠিক এই কারণে অনেকেই দিয়েছেন মুক্তিপণ। এতপরও তারা তাদের সন্তান জীবত অবস্থায় ফেরত পাননি। তাদের প্রত‍্যেকের কাছে ফোন কলগুলো করা হয়েছে স্প‍্যাম নম্বর থেকে। দেশ জুরে উত্তাল এই খবরে। ভয়ে বাচ্চাদের ঘরের বাইরে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবক। আতঙ্কে আতঙ্কে কাঁপছে শহর থেকে গ্রাম। স্কুল কলেজে টিচার আসলেও আসছেনা শিক্ষার্থীরা। সব মিলিয়ে প্রেশার এসে পড়ছে পুলিশদের উপর।

*
*
*

গোধূলি বেলায় সিনথিয়া'র চোখ পুড়ছে। রাতে ঘুমিয়েও পরিপূর্ণ ঘুম হলো না। পরপর কয়েক রাত ঘুম না হওয়ায় চোখ ফুলে গেছে। সিনথিয়া বসে বসে ঝিমাচ্ছে। এর মধ‍্যে গারদের ওপাশ থেকে কারো গমগমে গলা ভেসে এলো। সিনথিয়া চোখ তুলে তাকায়, গারদের ওপারে মহীলা পুলিশ দাঁড়িয়ে বলছেন,

-- মিস সিনথিয়া! স‍্যার দশ মিনিটের মধ‍্যে আপনাকে নিতে আসবেন। বাইরে যাওয়ার জন‍্যে আপনি রেডি তো?

পাঠক আপনারা রেডি তো?

# পরের পর্ব থেকে ধীরে ধীরে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। চেষ্টা করেছিলাম এই পর্বে কিছুটা ক্লিয়ার করার কিন্তু হবে না। এই পর্ব পড়ে একটু ধৈর্য্য ধরে থাকবেন। অতি শিঘ্রই পরের পর্ব আসবে ইনশাআল্লাহ।

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Movie Fanz posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share