Dr.Sajjad Rumon

Dr.Sajjad Rumon Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Dr.Sajjad Rumon, Video Creator, Puran Bogra, Rajshahi.

26/05/2025

গর্ভবতী নারীর প্রথম ৩ মাস কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

ইনি অনেক বড় সেলিব্রেটি।তাই ইনার সাথে ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না।ঢাকায় রিক্সা চালান,পরিবারও ঢাকায় চাকরি করেন।সবাই মি...
28/04/2025

ইনি অনেক বড় সেলিব্রেটি।
তাই ইনার সাথে ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না।

ঢাকায় রিক্সা চালান,পরিবারও ঢাকায় চাকরি করেন।সবাই মিলে থাকেনও ঢাকায়।
বাড়িতে মা অসুস্থ,শয্যাশায়ী বয়স ৯০ এর উপরে।
তাকে দেখাশোনা করার কেউ নাই।
এখন তাই মাসে কয়েকদিন ঢাকায় রিক্সা চালান আর বেশিরভাগ দিনগুলো গ্রামে এসে মায়ের সেবাযত্ন করেন।মায়ের প্রস্রাব, পায়খানা পরিস্কার থেকে শুরু করে সকল সেবা নিজ হাতে করেন ইনি।

সেদিন এসে মায়ের জন্য কেঁদেও ফেলেছেন,সেই কান্নায় নেই কোন অভিনয়।

আজকে জানালেন এখন তার মা মোটামুটি ভাল,চিকিৎসায় উন্নতি হওয়ায় ধন্যবাদ জানাতেও ভুল করেন নি।

এই যুগে এমন ছেলে পাওয়া আসলেও অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার।

তাই ইনি আমার কাছে অনেক বড় সেলিব্রেটি,অনেক স্মার্ট একজন মানুষ।

আল্লাহ ইনাকে আর ইনার মা কে ভাল রাখুন,ইহকাল এবং পরকালে পুরস্কৃত করুন,আমিন।

ডায়াবেটিসের লেভেল ২৫!ঔষধ খাননা কেন?- খাইতোখেলে এত বেশি ডায়াবেটিস কেন?- মাঝে মাঝে খাই,তেমন সমস্যা তো হয়না।এখন তার এক হাত ...
27/04/2025

ডায়াবেটিসের লেভেল ২৫!

ঔষধ খাননা কেন?
- খাইতো
খেলে এত বেশি ডায়াবেটিস কেন?
- মাঝে মাঝে খাই,তেমন সমস্যা তো হয়না।

এখন তার এক হাত প্রায় অবশ,কোন বোধ শক্তি নাই।
চিমটি দিলেও ব্যাথা পায়না।

এটাকে আমরা ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথী বলি।রোগীকে বুঝানোর জন্য বলি ডায়াবেটিস রগে( নার্ভে) চলে গেছে।
এখান থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা কঠিন।
পরবর্তীতে স্ট্রোক বা হার্ট এটাক জাতীয় সমস্যাও হতে পারে।

এসব জটিলতা থেকে নিরাপদ থাকতে ডায়াবেটিস অল্প মাত্রায় থাকলেও সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।

আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে 4D সূত্র মেনে চলুন।

D=Diet
D=Discipline
D=Drugs
D=Doctors

এই 4D এর যে কোন একটা ছেড়ে দিলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত কঠিন।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে আরমান ভাবলো ৫ মিনিট মোবাইলটা দেখি।ঘড়ির কাঁটায় তখন ৬ টা ৩০মিনিট।বেশ কিছুক্ষণ পর আরমান সম...
26/04/2025

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে আরমান ভাবলো ৫ মিনিট মোবাইলটা দেখি।

ঘড়ির কাঁটায় তখন ৬ টা ৩০মিনিট।

বেশ কিছুক্ষণ পর আরমান সময় দেখলো ৮ টা ৩০ মিনিট।

কোন দিক দিয়ে যে ২ ঘন্টা চলে গেছে আরমান টেরই পায়নি।

দীর্ঘসময় ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকায় মাথাটা কেমন জানি ভোঁ ভোঁ করছে,অথচ ঘুম থেকে জাগার পর ফ্রেশ লাগছিল।

তরিঘরি করে রেডি হয়ে কোন মতে নাস্তা গোগ্রাসে গিলে কলেজে গেল আরমান।

স্যার ডায়াসে বসে কি বলছে কোন কিছুই আরমানের মাথায় ঢুকছে না,

তারে জামিন পার মুভির ঐ বাচ্চাটার কথা মনে হচ্ছে যার কাছে পড়ালেখা গুলো হিজিবিজি ছাড়া আর কিছু না।

এভাবে একটার পর একটা ক্লাস শেষ করে বাসায় এসে রেস্ট নেয়ার উদ্দেশ্যে শুয়ে আবারও ফোন স্ক্রল শুরু করলো।

দিনের পর এভাবে চলতে চলতে আরমানের মনে হত লাগলো তার ব্রেইন আর স্বাভাবিক নেই,কোন কিছু ঠিকমতো মনেও থাকেনা,নতুন কোন কিছু ব্রেইনে ঢুকাতেও পারেনা।

এভাবে শুধুমাত্র ঘুম থেকে উঠে ফোন স্ক্রল করতে করতে শত শত মেধাবী আরমান কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে।

তাজা তাজা ব্রেইন গুলো পঁচে যাচ্ছে, শুধু স্ক্রল করতে করতেই।
যারা বিশ্ব জয় করতে পারতো তারা এখানে মোবাইল নামক জেলখানায় বন্দী।

আজ থেকে ২৫ বছর আগে ইনার গাড়িতে চরে আমরা স্কুলে যেতাম।উনার সাথে প্রায় ১৫ বছর পর দেখা।অবাক করা বিষয় হল এতদিন পরেও উনার তেম...
25/04/2025

আজ থেকে ২৫ বছর আগে ইনার গাড়িতে চরে আমরা স্কুলে যেতাম।

উনার সাথে প্রায় ১৫ বছর পর দেখা।

অবাক করা বিষয় হল এতদিন পরেও উনার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি!

আসলে যারা কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের মত বসে থেকে জীবন যাপন করাদের চেয়ে অনেক উন্নত হয়।

আল্লাহ উনাকে আরও অনেক দিন সুস্থ্য থাকার তৌফিক দান করুন!

একদিন এক ভদ্রলোক একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে একটি ব্যাঙ রেখে পানি গরম করা শুরু করল । পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে স...
20/04/2025

একদিন এক ভদ্রলোক একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে একটি ব্যাঙ রেখে পানি গরম করা শুরু করল । পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ব্যাঙটিও তার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে সহনীয় পর্যায়ে নিতে শুরু করল যদিও সে চাইলেই লাফ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারত কিন্তু সে লাফ না দিয়ে সহ্য করতে থাকে ।

আস্তে আস্তে পাত্রের তাপমাত্রা যখন আরও বাড়িয়ে ফুটন্ত গরম করা হয় তখন ব্যাঙটি আর সহ্য করতে না পেরে সে সিদ্ধান্ত নেয় লাফ দেওয়ার কিন্তু ততক্ষনে তার আর লাফ দেওয়ার মত শক্তি নেই । পানি আরও গরম হতে থাকে যার ফলে সে অতিরিক্ত গরম পানিতে থাকতে থাকতে একটা সময় মারা যায় ।

এখন যদি প্রশ্ন করা হয় ব্যাঙটি মারা যাওয়ার কারন কি ??

তাহলে আমরা অধিকাংশরাই বলব যে গরম পানির কারনে মারা গেছে ।

কিন্তু না সে আসলেই গরম পানির কারনে মারা যায়নি, সে মারা গেছে সঠিক সময়ে লাফ দেওয়ার সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারনে ।

ঠিক তেমনি প্রতিটি মানুষের স্থান কাল পাত্র ভেদে একেকটা বিষয়ে সহ্য করার ক্ষমতা থাকে । আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে ক্ষমতা থাকা অবস্থা সঠিক সিদ্ধান্তটি সঠিক সময়ে নিতে হবে । আবেগ ভালবাসা দেখিয়ে দেরিতে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সঠিক সময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ।

অনেকদিন আগের ঘটনা। ইংল্যান্ডের এক বুড়ি মহিলা তার জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির এক বুড়োকে দেখলো বুদবুদ বানাচ্ছে। একদিন-দুইদিন-ত...
19/04/2025

অনেকদিন আগের ঘটনা।

ইংল্যান্ডের এক বুড়ি মহিলা তার জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির এক বুড়োকে দেখলো বুদবুদ বানাচ্ছে।

একদিন-দুইদিন-তিনদিন এভাবে বেশ কয়েকদিন লক্ষ্য করার পরে তার মনে হল এই বুড়ো হয়তো পাগল।

সে পুলিশে ফোন করলো।
পুলিশ এসে খোঁজ নিয়ে দেখলো ইনি বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটন।

তিনি তখন বুদবুদের গায়ে যে রংধনু রঙের সৃষ্টি হয় তার কারণ নিয়ে গবেষণা করছিলেন

সিটি-মারা দুর্নীতিবাজ।  বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নতুন অধ্যাপক তাঁর ক্লাস নিতে শুরু করলেন। যে মুহুর্তে তিনি পড়ানোর জন্যে ব্ল্য...
19/04/2025

সিটি-মারা দুর্নীতিবাজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নতুন অধ্যাপক তাঁর ক্লাস নিতে শুরু করলেন।

যে মুহুর্তে তিনি পড়ানোর জন্যে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে ঝুঁকলেন, সেই সময় ছাত্রদের মধ্যে কেউ একজন সিনেমা হলের মতো জোরে শীস বাজালো।

অধ্যাপক ঘুরে ক্লাসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, --কে, কে শীস দিয়েছে? কে সিটি মারলো?

কেউ উত্তর দিলোনা। সবাই চুপ।

অধ্যাপক শান্তভাবে চকটি টেবিলে রেখে বললেন, আজকে আর লেকচার দেবোনা। তবে তোমাদের
একটি গল্প বলব বাকি সময়টুকুর জন্য।

সবাই আগ্রহী হয়ে নড়ে চড়ে বসলো। অধ্যাপক গল্প শুরু করলেন।

---গতকাল রাতে আমি ঘুমানোর জন্য খুব চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ঘুম আমার চোখ থেকে কয়েক মাইল দূরে আছে মনে হলো। ভাবলাম, ঘুম যখন আসছেনা আমার গাড়িতে রাতে পেট্রল ভরে রাখি, যা কাল সকালের ভিড়ে আমার সময় বাঁচাবে এবং তারপর নির্ভীগ্নে আমি ঘুমাতেও পারবো।

গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে ট্যাঙ্কটি ফুল করে নেয়ার পরে দেখি রাস্তা খালি। বাতাসটিও ঠান্ডা, আকাশে হালকা মেঘের আড়ালে আধো চাঁদ, তাই ভাবলাম একটু আশেপাশে ঘুরেই আসি।

একটু সামনে এগুতেই হঠাৎ রাস্তার পাশের কোণে আমি একজন ভদ্রবেশী তরুণী মেয়েকে দেখলাম আলো আঁধারীতে দাঁড়িয়ে আছেন অসহায় ভঙ্গী নিয়ে। বিউটিফুল ফিগার, যেই রকম সুন্দরী সেই রকম সুন্দর পোশাক তাঁর। পোশাকটি দেখে মনে হচ্ছিলো তাঁর রূপের সঙ্গে ম্যাচ করে কোন নিপুণ শিল্পী এরকমটি বানিয়েছেন। নিশ্চয়ই কোনও পার্টি থেকে ফিরে আসছেন এই ফুল-পরীটি। আমি চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। মনে হলো প্রথম নজরেই প্রেমে পড়ে গেছি।

সৌজন্যতা বোধ হারিয়ে আমি আমার গাড়িটি ঘুরিয়ে তার পাশে থামিয়ে কাঁচ নামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম--- আমি কি কোনো সহায়তা করতে পারি আপনাকে? যদি কোন সাহায্য করতে পারি তবে বলুন।

তরুণীটি হেসে উঠলো সলজ্জ ভাবে, তাঁর শুভ্র দন্ত রাজীর ঝিলিক দেখে মনে হলো যেন সন্ধ্যাতারা রাস্তার কোনে নেমে এসেছে।

তিনি মৃদু ভাবে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি তাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারি? তাঁর গাড়িটি আসবেনা কারণ স্টার্ট নিচ্ছেনা বলে জানিয়েছে তার ড্রাইভার, আর সে কোন ট্যাক্সিও পাচ্ছেনা অনেক্ষন ধরে।

আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো, আমি গাড়ী থেকে নেমে সামনের দরজা খুলে দিলে তিনি আমার সাথে সামনের সিটেই বসলেন সানন্দে।

আমি তাকে নিজের পরিচয় জানিয়ে বললাম, আমি আপনাদের বাসার এলাকারই পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

উনি উনার পরিচয় জানালে আমরা কথা বলতে শুরু করলাম এবং অবাক হয়ে দেখলাম সে খুবই বুদ্ধিমতী এবং যেকোন টপিক নিয়ে আলোচনা করি,সবগুলিতেই তার প্রভুত জ্ঞান আছে যা আজকালকার অনেক যুবকেরই নেই।

অনেক দূরে তার ঠিকানায় যখন পৌঁছলাম, তিনি আমার বিনীত প্রকৃতি ও সুন্দর আচরনের প্রশংসা করে বললেন, আমরা দুজনেই মুক্ত মনের মানুষ, আমাদের আবার দেখা হতে পারে, এবং লজ্জাবতী পাতার মতো গুটিয়ে না গিয়ে বলেই ফেললেন, আমার মতো একজন যুবক ছিল তার কল্পনায়। রাখঢাক না করেই জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বিবাহিত? আমি বুঝে ফেললাম, তিনিও প্রথম দর্শনেই আমার প্রেমে পড়েছেন।

আমি বললাম,--আপনার অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে প্রথমেই আমি গাড়ি ঘুড়িয়েছিলাম, এই রকম একজন রাজকন্যার স্বপ্ন আমি দেখতাম, যে দেখতে ঠিক আপনার মতো হবে এবং আমি ভাবতাম তাকেই আমি বিয়ে করবো। তারপর আপনার নলেজ, বুদ্ধি ও কথার গভীরতা শুনে আমি খোলাখুলি বলছি, ইতিমধ্যে আমিও আপনার গভীর প্রেমে পড়ে গেছি।

মেয়েটি বললো, আসুন আমাদের এপার্টমেন্টে, চা খাবেন ও আরো কিছুক্ষন গল্প করা যাবে।

প্রেম যখন প্রকাশিত হয়েই গেছে দুই তরফে আর দ্বিধা কেন, ওর বাসায় চলে গেলাম।

আরো কিছুক্ষন গল্প করে বিদায় নেয়ার সময় সে আমাকে বললো, শোনো, আমার ভাই তোমারই ছাত্র হবে, ও এখন বাসায় নেই। তুমি ওর দিকে একটু খেয়াল রেখো, দেখো যাতে ঠিকমত পড়াশুনা করে। এখন থেকে যেহেতু আমরা দীর্ঘ সম্পর্কের মধ্যে থাকব, এটি তোমার দায়িত্ব হয়ে গেল।

আমি বললাম, তোমার ভাই ছাত্রটির নাম কি?

আমার নব্য প্রেমিকা বললো, তুমি আর আমি পরস্পরকে আমাদের প্রখর বুদ্ধির কারণে স্বল্প সময়ে ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি তোমার বুদ্ধি দিয়ে খুঁজে পাবে তাকে, তাই নাম বললাম না। আমার ভাইয়ের একটা বৈশিষ্ট আছে যা দিয়ে তাকে চিনতে পারবে। পারবে তো?

বললাম, --আচ্ছা, কি সেই বৈশিষ্ট?

প্রেমিকা বললো,--সে প্রায়ই হটাৎ জোরে শিস দেয়!

পুরো ক্লাসের সমস্ত চোখ তৎক্ষণাৎ যে ছেলেটি শিস দিয়েছিল তার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে রইলো।

অধ্যাপক ধীরে চকটি আবার হাতে উঠিয়ে নিয়ে গম্ভীর ভাবে বললেন: "আমি মনোবিজ্ঞানে আমার পিএইচডি ডিগ্রিটি কিনিনি, আমি এটি অর্জন করেছি।"

উপসংহার: আমাদের দেশ দুর্নীতিমুক্ত করতে এখন এই অধ্যাপকের মতো খাঁটি ডিগ্রি ও জ্ঞান অর্জন করা বুদ্ধিমান ও সৎ মানুষদের সামনে আনতে হবে যাতে কোনো বদমাশ পুরো জাতির পেছন থেকে শীস মেরে পালিয়ে যেতে না পারে।

(মূল থিম: বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে,ছবি Chat Gpt)

ছুটি (chhuti)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বালকদিগের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় চট করিয়া একটা নূতন ভাবোদয় হইল, নদীর ধারে একটা প্রক...
17/04/2025

ছুটি (chhuti)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বালকদিগের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় চট করিয়া একটা নূতন ভাবোদয় হইল, নদীর ধারে একটা প্রকাণ্ড শালকাষ্ঠ মাস্তুলে রূপান্তরিত হইবার প্রতীক্ষায় পড়িয়া ছিল; স্থির হইল, সেটা সকলে মিলিয়া গড়াইয়া লইয়া যাইবে।

যে-ব্যক্তির কাঠ, আবশ্যককালে তাহার যে কতখানি বিস্ময় বিরক্তি এবং অসুবিধা বোধ হইবে, তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমোদন করিল।

কোমর বাঁধিয়া সকলেই যখন মনোযোগের সহিত কার্যে প্রবৃত্ত হইবার উপক্রম করিতেছে, এমন সময়ে ফটিকের কনিষ্ঠ মাখনলাল গম্ভীরভাবে সেই গুঁড়ির উপরে গিয়া বসিল; ছেলেরা তাহার এইরূপ উদার ঔদাসীন্য দেখিয়া কিছু বিমর্ষ হইয়া গেল।

একজন আসিয়া ভয়ে ভয়ে তাহাকে একটু-আধটু ঠেলিল কিন্ত সে তাহাতে কিছুমাত্র বিচলিত হইল না; এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী মানব সকলপ্রকার ক্রীড়ার অসারতা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল।

ফটিক আসিয়া আস্ফালন করিয়া কহিল, 'দেখ্‌, মার খাবি! এইবেলা ওঠ্‌।'

সে তাহাতে আরো একটু নড়িয়াচড়িয়া আসনটি বেশ স্থায়ীরূপে দখল করিয়া লইল।

এরূপ স্থলে সাধারণের নিকট রাজসম্মান রক্ষা করিতে হইলে অবাধ্য ভ্রাতার গণ্ডদেশে অনতিবিলম্বে এক চড় কষাইয়া দেওয়া ফটিকের কর্তব্য ছিল-- সাহস হইল না। কিন্তু এমন একটা ভাব ধারণ করিল, যেন ইচ্ছা করিলেই এখনই উহাকে রীতিমত শাসন করিয়া দিতে পারে কিন্তু করিল না, কারণ পূর্বাপেক্ষা আর-একটা ভালো খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে, তাহাতে আর-একটু বেশি মজা আছে। প্রস্তাব করিল, মাখনকে সুদ্ধ ঐ কাঠ গড়াইতে আরম্ভ করা যাক।

মাখন মনে করিল, ইহাতে তাহার গৌরব আছে; কিন্তু অন্যান্য পার্থিব গৌরবের ন্যায় ইহার আনুষঙ্গিক যে বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাহা তাহার কিংবা আর-কাহারো মনে উদয় হয় নাই।

ছেলেরা কোমর বাঁধিয়া ঠেলিতে আরম্ভ করিল-- 'মারো ঠেলা হেঁইয়ো, সাবাস জোয়ান হেঁইয়ো।' গুঁড়ি একপাক ঘুরিতে না ঘুরিতেই মাখন তাহার গাম্ভীর্য গৌরব এবং তত্ত্বজ্ঞান-সমেত ভূমিসাৎ হইয়া গেল।

খেলার আরম্ভেই এইরূপ আশাতীত ফললাভ করিয়া অন্যান্য বালকেরা বিশেষ হৃষ্ট হইয়া উঠিল, কিন্তু ফটিক কিছু শশব্যস্ত হইল। মাখন তৎক্ষণাৎ ভূমিশয্যা ছাড়িয়া ফটিকের উপরে গিয়া পড়িল, একেবারে অন্ধভাবে মারিতে লাগিল। তাহার নাকে মুখে আঁচড় কাটিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে গৃহাভিমুখে গমন করিল। খেলা ভাঙিয়া গেল।

ফটিক গোটাকতক কাশ উৎপাটন করিয়া লইয়া একটা অর্ধনিমগ্ন নৌকার গলুইয়ের উপরে চড়িয়া বসিয়া চুপচাপ করিয়া কাশের গোড়া চিবাইতে লাগিল।

এমনসময় একটা বিদেশী নৌকা ঘাটে আসিয়া লাগিল। একটি অর্ধবয়সী ভদ্রলোক কাঁচা গোঁফ এবং পাকা চুল লইয়া বাহির হইয়া আসিলেন। বালককে জিজ্ঞাসা করিলেন, 'চক্রবর্তীদের বাড়ি কোথায়।'

বালক ডাঁটা চিবাইতে চিবাইতে কহিল, 'ঐ হোথা।' কিন্তু কোন্‌দিকে যে নির্দেশ করিল কাহারো বুঝিবার সাধ্য রহিল না।

ভদ্রলোকটি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, 'কোথা।'

সে বলিল, 'জানি নে।' বলিয়া পূর্ববৎ তৃণমূল হইতে রসগ্রহণে প্রবৃত্ত হইল। বাবুটি তখন অন্য লোকের সাহায্য অবলম্বন করিয়া চক্রবর্তীদের গৃহের সন্ধানে চলিলেন।

অবিলম্বে বাঘা বাগদি আসিয়া কহিল, 'ফটিকদাদা, মা ডাকছে।'

ফটিক কহিল, 'যাব না।'

বাঘা তাহাকে বলপূর্বক আড়কোলা করিয়া তুলিয়া লইয়া গেল, ফটিক নিষ্ফল আক্রোশে হাত পা ছুঁড়িতে লাগিল।

ফটিককে দেখিবামাত্র তাহার মা অগ্নিমূর্তি হইয়া কহিলেন, 'আবার তুই মাখনকে মেরেছিস!'

ফটিক কহিল, 'না, মারি নি।'

'ফের মিথ্যে কথা বলছিস!'

'কখ্‌খনো মারি নি। মাখনকে জিজ্ঞাসা করো।'

মাখনকে প্রশ্ন করাতে মাখন আপনার পূর্ব নালিশের সমর্থন করিয়া বলিল, 'হাঁ, মেরেছে।'

তখন আর ফটিকের সহ্য হইল না। দ্রুত গিয়া মাখনকে এক সশব্দ চড় কষাইয়া দিয়া কহিল, 'ফের মিথ্যে কথা!'

মা মাখনের পক্ষ লইয়া ফটিককে সবেগে নাড়া দিয়া তাহার পৃষ্ঠে দুটা-তিনটা প্রবল চপেটাঘাত করিলেন। ফটিক মাকে ঠেলিয়া দিল।

মা চীৎকার করিয়া কহিলেন, 'অ্যাঁ, তুই আমার গায়ে হাত তুলিস!'

এমন সময়ে সেই কাঁচাপাকা বাবুটি ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, 'কী হচ্ছে তোমাদের।'

ফটিকের মা বিস্ময়ে আনন্দে অভিভূত হইয়া কহিলেন, 'ওমা, এ যে দাদা, তুমি কবে এলে।' বলিয়া গড় করিয়া প্রণাম করিলেন।

বহুদিন হইল দাদা পশ্চিমে কাজ করিতে গিয়াছিলেন, ইতিমধ্যে ফটিকের মার দুই সন্তান হইয়াছে, তাহারা অনেকটা বাড়িয়া উঠিয়াছে, তাহার স্বামীর মৃত্যু হইয়াছে, কিন্তু একবারও দাদার সাক্ষাৎ পায় নাই। আজ বহুকাল পরে দেশে ফিরিয়া আসিয়া বিশ্বম্ভরবাবু তাঁহার ভগিনীকে দেখিতে আসিয়াছেন।

কিছুদিন খুব সমারোহে গেল। অবশেষে বিদায় লইবার দুই-একদিন পূর্বে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁহার ভগিনীকে ছেলেদের পড়াশুনা এবং মানসিক উন্নতি সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন। উত্তরে ফটিকের অবাধ্য উচ্ছৃঙ্খলতা, পাঠে অমনোযোগ, এবং মাখনের সুশান্ত সুশীলতা ও বিদ্যানুরাগের বিবরণ শুনিলেন।

তাঁহার ভগিনী কহিলেন, 'ফটিক আমার হাড় জ্বালাতন করিয়াছে।'

শুনিয়া বিশ্বম্ভর প্রস্তাব করিলেন, তিনি ফটিককে কলিকাতায় লইয়া গিয়া নিজের কাছে রাখিয়া শিক্ষা দিবেন। বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন।

ফটিককে জিজ্ঞাসা করিলেন, 'কেমন রে ফটিক, মামার সঙ্গে কলকাতায় যাবি?'

ফটিক লাফাইয়া উঠিল বলিল, 'যাব।'

যদিও ফটিককে বিদায় করিতে তাহার মায়ের আপত্তি ছিল না, কারণ তাঁহার মনে সর্বদাই আশঙ্কা ছিল-- কোন্‌দিন সে মাখনকে জলেই ফেলিয়া দেয় কি মাথাই ফাটায় কি কী একটা দুর্ঘটনা ঘটায়, তথাপি ফটিকের বিদায়গ্রহণের জন্য এতাদৃশ আগ্রহ দেখিয়া তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ন হইলেন।

'কবে যাবে', 'কখন্‌ যাবে' করিয়া ফটিক তাহার মামাকে অস্থির করিয়া তুলিল; উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না।

অবশেষে যাত্রাকালে আনন্দের ঔদার্যবশত তাহার ছিপ ঘুড়ি লাটাই সমস্ত মাখনকে পুত্রপৌত্রাদিক্রমে ভোগদখল করিবার পুরা অধিকার দিয়া গেল।

কলিকাতায় মামার বাড়ি পৌঁছিয়া প্রথমত মামির সঙ্গে আলাপ হইল। মামি এই অনাবশ্যক পরিবারবৃদ্ধিতে মনে মনে যে বিশেষ সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, তাহা বলিতে পারি না। তাঁহার নিজের তিনটি ছেলে লইয়া তিনি নিজের নিয়মে ঘরকন্না পাতিয়া বসিয়া আছেন, ইহার মধ্যে সহসা একটি তেরো বৎসরের অপরিচিত অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ছেলে ছাড়িয়া দিলে কিরূপ একটা বিপ্লবের সম্ভাবনা উপস্থিত হয়। বিশ্বম্ভরের এত বয়স হইল, তবু কিছুমাত্র যদি জ্ঞানকাণ্ড আছে।

বিশেষত, তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। শোভাও নাই, কোনো কাজেও লাগে না। স্নেহও উদ্রেক করে না, তাহার সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নহে। তাহার মুখে আধে-আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগল্‌ভতা। হঠাৎ কাপড়চোপড়ের পরিমাণ রক্ষা না করিয়া বেমানানরূপে বাড়িয়া উঠে; লোকে সেটা তাহার একটা কুশ্রী স্পর্ধাস্বরূপ জ্ঞান করে। তাহার শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা সহসা চলিয়া যায়, লোকে সেজন্য তাহাকে মনে মনে অপরাধ না দিয়া থাকিতে পারে না। শৈশব এবং যৌবনের অনেক দোষ মাপ করা যায়, কিন্তু এই সময়ের কোনো স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটিও যেন অসহ্য বোধ হয়।

সেও সর্বদা মনে মনে বুঝিতে পারে, পৃথিবীর কোথাও সে ঠিক খাপ খাইতেছে না; এইজন্য আপনার অস্তিত্ব সম্বন্ধে সর্বদা লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী হইয়া থাকে। অথচ এই বয়সেই স্নেহের জন্য কিঞ্চিৎ অতিরিক্ত কাতরতা মনে জন্মায়। এই সময়ে যদি সে কোনো সহৃদয় ব্যক্তির নিকট হইতে স্নেহ কিংবা সখ্য লাভ করিতে পারে, তবে তাহার নিকট আত্মবিক্রীত হইয়া থাকে। কিন্তু তাহাকে স্নেহ করিতে কেহ সাহস করে না, কারণ সেটা সাধারণে প্রশ্রয় বলিয়া মনে করে। সুতরাং তাহার চেহারা এবং ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হইয়া যায়।

অতএব, এমন অবস্থায় মাতৃভবন ছাড়া আর-কোনা অপরিচিত স্থান বালকের পক্ষে নরক। চারি দিকের স্নেহশূন্য বিরাগ তাহাকে পদে পদে কাঁটার মতো বিঁধে। এই বয়সে সাধারণত নারীজাতিকে কোনো-এক শ্রেষ্ঠ স্বর্গলোকের দুর্লভ জীব বলিয়া মনে ধারণা হইতে আরম্ভ হয়, অতএব তাঁহাদের নিকট হইতে উপেক্ষা অত্যন্ত দুঃসহ বোধ হয়।

মামির স্নেহহীন চক্ষে সে যে একটা দুর্গ্রহের মতো প্রতিভাত হইতেছে, এইটে ফটিকের সবচেয়ে বাজিত। মামি যদি দৈবাৎ তাহাকে কোনো-একটা কাজ করিতে বলিতেন, তাহা হইলে সে মনের আনন্দে যতটা আবশ্যক তার চেয়ে বেশি কাজ করিয়া ফেলিত-- অবশেষে মামি যখন তাহার উৎসাহ দমন করিয়া বলিতেন, 'ঢের হয়েছে, ঢের হয়েছে। ওতে আর তোমায় হাত দিতে হবে না। এখন তুমি নিজের কাজে মন দাওগে। একটু পড়োগে যাও।' -- তখন তাহার মানসিক উন্নতির প্রতি মামির এতটা যত্নবাহুল্য তাহার অত্যন্ত নিষ্ঠুর অবিচার বলিয়া মনে হইত।

ঘরের মধ্যে এইরূপ অনাদর, ইহার পর আবার হাঁফ ছাড়িবার জায়গা ছিল না। দেয়ালের মধ্যে আটকা পড়িয়া কেবলই তাহার সেই গ্রামের কথা মনে পড়িত।

প্রকাণ্ড একটা ধাউস ঘুড়ি লইয়া বোঁ বোঁ শব্দে উড়াইয়া বেড়াইবার সেই মাঠ, 'তাইরে নাইরে নাইরে না' করিয়া উচ্চৈঃস্বরে স্বরচিত রাগিণী আলাপ করিয়া অকর্মণ্যভাবে ঘুরিয়া বেড়াইবার সেই নদীতীর, দিনের মধ্যে যখন-তখন ঝাঁপ দিয়া পড়িয়া সাঁতার কাটিবার সেই সংকীর্ণ স্রোতস্বিনী, সেই-সব দলবল, উপদ্রব, স্বাধীনতা এবং সর্বোপরি সেই অত্যাচারিণী অবিচারিণী মা অহর্নিশি তাহার নিরুপায় চিত্তকে আকর্ষণ করিত।

জন্তুর মতো একপ্রকার অবুঝ ভালোবাসা-- কেবল একটা কাছে যাইবার অন্ধ ইচ্ছা, কেবল একটা না দেখিয়া অব্যক্ত ব্যাকুলতা, গোধূলিসময়ের মাতৃহীন বৎসের মতো কেবল একটা আন্তরিক 'মা মা' ক্রন্দন-- সেই লজ্জিত শঙ্কিত শীর্ণ দীর্ঘ অসুন্দর বালকের অন্তরে কেবলই আলোড়িত হইত।

স্কুলে এতবড়ো নির্বোধ এবং অমনোযোগী বালক আর ছিল না। একটা কথা জিজ্ঞাসা করিলে সে হাঁ করিয়া চাহিয়া থাকিত। মাস্টার যখন মার আরম্ভ করিত তখন ভারক্লান্ত গর্দভের মতো নীরবে সহ্য করিত। ছেলেদের যখন খেলিবার ছুটি হইত, তখন জানালার কাছে দাঁড়াইয়া দূরের বাড়িগুলার ছাদ নিরীক্ষণ করিত; যখন সেই দ্বিপ্রহর-রৌদ্রে কোনো-একটা ছাদে দুটি-একটি ছেলেমেয়ে কিছু-একটা খেলার ছলে ক্ষণেকের জন্য দেখা দিয়া যাইত, তখন তাহার চিত্ত অধীর হইয়া উঠিত।

একদিন অনেক প্রতিজ্ঞা করিয়া অনেক সাহসে মামাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, 'মামা, মার কাছে কবে যাব।' মামা বলিয়াছিলেন, 'স্কুলের ছুটি হোক।' কার্তিক মাসে পূজার ছুটি, সে এখনো ঢের দেরি।

একদিন ফটিক তাহার স্কুলের বই হারাইয়া ফেলিল। একে তো সহজেই পড়া তৈরি হয় না, তাহার পর বই হারাইয়া একেবারে নাচার হইয়া পড়িল। মাস্টার প্রতিদিন তাহাকে অত্যন্ত মারধোর অপমান করিতে আরম্ভ করিলেন। স্কুলে তাহার এমন অবস্থা হইল যে, তাহার মামাতো ভাইরা তাহার সহিত সম্বন্ধ স্বীকার করিতে লজ্জা বোধ করিত। ইহার কোনো অপমানে তাহারা অন্যান্য বালকের চেয়েও যেন বলপূর্বক বেশি করিয়া আমোদ প্রকাশ করিত।

অসহ্য বোধ হওয়াতে একদিন ফটিক তাহার মামির কাছে নিতান্ত অপরাধীর মতো গিয়া কহিল, 'বই হারিয়ে ফেলেছি।'

মামি অধরের দুই প্রান্তে বিরক্তির রেখা অঙ্কিত করিয়া বলিলেন, 'বেশ করেছ, আমি তোমাকে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারি নে।'

ফটিক আর-কিছু না বলিয়া চলিয়া আসিল-- সে যে পরের পয়সা নষ্ট করিতেছে, এই মনে করিয়া তাহার মায়ের উপর অত্যন্ত অভিমান উপস্থিত হইল; নিজের হীনতা এবং দৈন্য তাহাকে মাটির সহিত মিশাইয়া ফেলিল।

স্কুল হইতে ফিরিয়া সেই রাত্রে তাহার মাথাব্যথা করিতে লাগিল এবং গা সির্‌সির্‌ করিয়া আসিল। বুঝিতে পারিল তাহার জ্বর আসিতেছে। বুঝিতে পারিল ব্যামো বাধাইলে তাহার মামির প্রতি অত্যন্ত অনর্থক উপদ্রব করা হইবে। মামি এই ব্যামোটাকে যে কিরূপ একটা অকারণ অনাবশ্যক জ্বালাতনের স্বরূপ দেখিবে, তাহা সে স্পষ্ট উপলব্ধি করিতে পারিল। রোগের সময় এই অকর্মণ্য অদ্ভুত নির্বোধ বালক পৃথিবীতে নিজের মা ছাড়া আর-কাহারো কাছে সেবা পাইতে পারে, এরূপ প্রত্যাশা করিতে তাহার লজ্জা বোধ হইতে লাগিল।

পরদিন প্রাতঃকালে ফটিককে আর দেখা গেল না। চতুর্দিকে প্রতিবেশীদের ঘরে খোঁজ করিয়া তাহার কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না।

সেদিনে আবার রাত্রি হইতে মুষলধারে শ্রাবণের বৃষ্টি পড়িতেছে। সুতরাং তাহার খোঁজ করিতে লোকজনকে অনর্থক অনেক ভিজিতে হইল। অবশেষে কোথাও না পাইয়া বিশ্বম্ভরবাবু পুলিসে খবর দিলেন।

সমস্ত দিনের পর সন্ধ্যার সময় একটা গাড়ি আসিয়া বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়ির সম্মুখে দাঁড়াইল। তখনো ঝুপ্‌ ঝুপ্‌ করিয়া অবিশ্রাম বৃষ্টি পড়িতেছে, রাস্তায় একহাঁটু জল দাঁড়াইয়া গিয়াছে।

দুইজন পুলিসের লোক গাড়ি হইতে ফটিককে ধরাধরি করিয়া নামাইয়া বিশ্বম্ভর-বাবুর নিকট উপস্থিত করিল। তাহার আপাদমস্তক ভিজা, সর্বাঙ্গে কাদা, মুখ চক্ষু লোহিতবর্ণ, থরথর করিয়া কাঁপিতেছে। বিশ্বম্ভরবাবু প্রায় কোলে করিয়া তাহাকে অন্তঃপুরে লইয়া গেলেন।

মামি তাহাকে দেখিয়াই বলিয়া উঠিলেন, 'কেন বাপু, পরের ছেলেকে নিয়ে কেন এ কর্মভোগ। দাও ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দাও।'

বাস্তবিক, সমস্তদিন দুশ্চিন্তায় তাঁহার ভালোরূপ আহারাদি হয় নাই এবং নিজের ছেলেদের সহিতও নাহক অনেক খিট্‌মিট্‌ করিয়াছেন।

ফটিক কাঁদিয়া উঠিয়া কহিল, 'আমি মার কাছে যাচ্ছিলুম, আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।'

বালকের জ্বর অত্যন্ত বাড়িয়া উঠিল। সমস্ত রাত্রি প্রলাপ বকিতে লাগিল। বিশ্বম্ভরবাবু চিকিৎসক লইয়া আসিলেন।

ফটিক তাহার রক্তবর্ণ চক্ষু একবার উন্মীলিত করিয়া কড়িকাঠের দিকে হতবুদ্ধিভাবে তাকাইয়া কহিল, 'মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি।'

বিশ্বম্ভরবাবু রুমালে চোখ মুছিয়া সস্নেহে ফটিকের শীর্ণ তপ্ত হাতখানি হাতের উপর তুলিয়া লইয়া তাহার কাছে আসিয়া বসিলেন।

ফটিক আবার বিড় বিড় করিয়া বকিতে লাগিল, বলিল, 'মা, আমাকে মারিস্‌ নে, মা। সত্যি বলছি, আমি কোনো দোষ করি নি।'

পরদিন দিনের বেলা কিছুক্ষণের জন্য সচেতন হইয়া ফটিক কাহার প্রত্যাশায় ফ্যাল্‌ফ্যাল্‌ করিয়া ঘরের চারি দিকে চাহিল। নিরাশ হইয়া আবার নীরবে দেয়ালের দিকে মুখ করিয়া পাশ ফিরিয়া শুইল।

বিশ্বম্ভরবাবু তাহার মনের ভাব বুঝিয়া তাহার কানের কাছে মুখ নত করিয়া মৃদুস্বরে কহিলেন, 'ফটিক, তোর মাকে আনতে পাঠিয়েছি।'

তাহার পরদিনও কাটিয়া গেল। ডাক্তার চিন্তিত বিমর্ষ মুখে জানাইলেন, অবস্থা বড়োই খারাপ।

বিশ্বম্ভরবাবু স্তিমিতপ্রদীপে রোগশয্যায় বসিয়া প্রতিমুহূর্তেই ফটিকের মাতার জন্য প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন।

ফটিক খালাসিদের মতো সুর করিয়া করিয়া বলিতে লাগিল, 'এক বাঁও মেলে না। দো বাঁও মেলে--এ--এ না।' কলিকাতায় আসিবার সময় কতকটা রাস্তা স্টীমারে আসিতে হইয়াছিল, খালাসিরা কাছি ফেলিয়া সুর করিয়া জল মাপিত; ফটিক প্রলাপে তাহাদেরই অনুকরণে করুণস্বরে জল মাপিতেছে এবং যে অকূল সমুদ্রে যাত্রা করিতেছে, বালক রশি ফেলিয়া কোথাও তাহার তল পাইতেছে না।

এমন সময়ে ফটিকের মাতা ঝড়ের মতো ঘরে প্রবেশ করিয়াই উচ্চকলরবে শোক করিতে লাগিলেন। বিশ্বম্ভর বহুকষ্টে তাঁহার শোকোচ্ছ্বাস নিবৃত্ত করিল, তিনি শয্যার উপর আছাড় খাইয়া পড়িয়া উচ্চৈঃস্বরে ডাকিলেন, 'ফটিক, সোনা, মানিক আমার।'

ফটিক যেন অতি সহজেই তাহার উত্তর দিয়া কহিল, 'অ্যাঁ।'

মা আবার ডাকিলেন, 'ওরে ফটিক, বাপধন রে।'

ফটিক আস্তে আস্তে পাশ ফিরিয়া কাহাকেও লক্ষ্য না করিয়া মৃদুস্বরে কহিল, 'মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।'

10/04/2025

৭ অবস্থায় ব্লাড প্রেশার মাপলে ভুল হতে পারে

Address

Puran Bogra
Rājshāhi

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dr.Sajjad Rumon posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Dr.Sajjad Rumon:

Share

Category