07/06/2025
আজ সকাল থেকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর নোট বেশ কতক গ্রুপে ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ব্যাপারটা খুব সাংঘাতিক একটা ব্যাপার, সবকিছুর সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়া ভালো কিছুর জন্ম দেয় না।ঘুরেফিরে আত্মহত্যায় প্রমোট পাচ্ছে এই আমাদের করা পোস্টগুলোতে। এটা পরবর্তী অনেকের আত্মহত্যার প্ররোচক কারণ হতে পারে।যিনি বা যে যেই অবস্থাতে পড়েই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকুন না কেন,তা সবসময়ই ভুল।
জীবন মানেই সংগ্রামের,এখানে যারা বেঁচে থাকে তারাই যোদ্ধা।আর যুদ্ধের ময়দানে যে কারণেই হোক নিজে নিজের আত্মাহুতি দেয়াটা বোধহয় বীরোচিত কিছু না। আমার একটা সহজ সমীকরণ আছে এর জন্য, সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার আগে অন্তত একবারের জন্য হলেও পরিবারের আপন লোকগুলোর চেহারা মনে করার চেষ্টা করা।বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বা আপেক্ষিক কোনো বিষয়ই সফলতার মানদণ্ড হতে পারে না।
আমার জীবনের কিছু সংগ্রামের ঘটনা শেয়ার করি।আমার পরিবার ছোট্ট থেকে মধ্যবিত্ত হলেও চেষ্টা করেছে আমাকে বড় করার।ভালো কোথাও পড়ানোর,ভালো কাপড় পড়ানোর, ভালো খাওয়ানোর, আমি মনে করি উনারা উনাদের জায়গায় সফল।আমিও চেষ্টা করেছি নিজেকে মেলে ধরার,যতটুকু পেরেছি মেলে ধরেছি।স্কুল,কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নিজের স্বাক্ষর রেখেছি টুকটাক হলেও।কলেজ পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা আনন্দে কাটলেও এখানে সংগ্রাম ছিল নিজের সাথে।সবকিছুর সাথে নিজের অংশগ্রহণ রেখেছি।রাজশাহীর মত জায়গায় এমন কোনো কাজ নাই যা ছাত্র হয়ে করি নি।বাংলাকোষ কোচিং-এর খাতা কেটেছি ৫০ মার্কস এর খাতা ৫ টাকা,১০০ মার্কস এর খাতা ১০ টাকা,এটা রাজশাহীতে আমার প্রথম কাজ।তারপর পেলাম ১৮ সালের দিকে দুইটা টিউশনি,তারপরে কাজ পেলাম শাওন ভাইয়ের প্রুফ রিডিংয়ের।ভাইয়ের সাপোর্ট একটা বড় প্রাপ্তি ছিল,আবার তারপর প্রফেশনাল বুক রিভিউদাতাও হয়েছি। Plabon Kumar এর সহায়তায় একটা পাবলিকেশন্স কিছু বই পাঠিয়ে দিত, আমি রিভিউ লিখে বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দিতাম এবং আমি কিছু টাকা সম্মানী পেতাম তার বিনিময়ে। শেষ কাজের অভিজ্ঞতা একটা কোচিং-এ অফিস সহকারী হিসেবে, ওখানেও চেষ্টা করেছি প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভালো কিছুর।এত ছুটে বেড়ানোর মাঝেও চেষ্টা করেছি বন্ধুত্ব,বড়ভাই আপুদের আদর,স্যার ম্যামদের স্নেহ- ভালোবাসা,ছোটদের ভালোবাসা সবকিছুতেই ভাগ বসানো সাথে একাডেমিক ক্যারিয়ার ও যে খুব বেশি খারাপ তা কিন্তু না।ডিপার্টমেন্টের ফলাফলেও নিজেকে বলার মত কিছু ছিল।ক্যাম্পাসের লিডিং কিছু সংগঠনে খুব ভালো কিছু করতে পারার সুযোগ পেয়েছি।তারপরেও কিন্তু সমাজের বিচারে আমি সফল না,কারণ আমি এখন আত্মস্বীকৃত বেকার।হয়তোবা আমার এত বড় লেখাও কেউ পড়বেন না কারণ এত সময় কারোর নেই, আর আমি সফলদের কেউ একজন আপাতত নই।এখনো দুইটা টিউশনি আর বিসিএস এর একটা ডাইজেস্ট বইয়ের প্রুফ এর কাজ চলমান অথচ সদ্য প্রকাশিত বিসিএস প্রিলিমিনারি রেজাল্টে আমি অকৃতকার্য!
যে আমি সবসময়ই মানুষ দ্বারা আবৃত ছিলাম,সেই আমিই জীবিকার তাগিদেই নিজেকে আবদ্ধ করেছি।সফল হই,আরও অনেক গল্প বলার আছে!
তাই প্রত্যাশা নিজের কাছেও রাখি যে আমি কখনো হতাশ হবো না বা হার মানব না।সেই জন্ম থেকেই ছুটছি,আপেক্ষিক কিছু আমাকে দমাতে পারে না? ছোটবেলা থেকে যে প্রতিকূল স্মৃতিগুলো আছে তা অন্যদিন বলা যাবে কোনো এক গল্পে 💜
সবশেষে বলা একটাই,হাল ছাড়া যাবে না কিছুতেই,জীবন মানেই আশ্চর্যরকম অনিশ্চয়তা। মুদ্রার অপর পিঠের সাথে দেখা হবেই একদিন 🌿🖤 আমি পরিপূর্ণ ছিলাম যখন তখনও আমি অমলিন এক যোদ্ধা, এখন একদম মাঝমাঠে সৈনিক যোদ্ধা।তবুও আশা সফল হবোই।আমার প্রজন্মের কাছেও দাবি এত অল্পতে হারালে চলবে না নিজেরে!
-©সবুজ কুমার মহন্ত
০৮.০৬.২৩
রাজারবাগ, ঢাকা