12/04/2025
১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্পষ্টত ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারকে সমর্থন করেন। তিনি ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা (PLO)-কে ফিলিস্তিনিদের বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেন। এই পদক্ষেপ ছিল সে সময়ে সাহসিকতাপূর্ণ, কারণ মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনীতিতে পিএলও-র অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতভেদ ছিল।
বাংলাদেশে পিএলও-র দূতাবাস স্থাপন করার অনুমতি দেওয়া এবং তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রদূতের মর্যাদা দেওয়া ছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ফিলিস্তিনপ্রীতির একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত। বিশ্বের অনেক দেশ তখনও পিএলও-কে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে বিবেচনা করত, কিন্তু শহীদ জিয়া এর বিপরীতে গিয়ে তাঁদের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেছেন এবং তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন। ১৯৮০ সালে ওআইসি-র (Organization of Islamic Cooperation) সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে তিনি দৃঢ়ভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি তুলে ধরেন। তিনি মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান।
তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওআইসি-র একটি সক্রিয় সদস্যে পরিণত হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। শহীদ জিয়ার আমলে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ইসলামী দেশগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগে উন্নয়ন প্রকল্প ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় অংশ নিতে সক্ষম হয়।
এছাড়াও, তিনি ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেন। তৎকালীন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণ পাঠানো হয় ফিলিস্তিনে। এটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিপীড়িত জনগণের প্রতি এক বিরল মানবিক বার্তা ছিল।
শহীদ জিয়ার শাসনামলে ফিলিস্তিন ইস্যুটি বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে একটি গণআন্দোলনের চেহারা নেয়। রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন, রেডিও ও সংবাদপত্রে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের চিত্র নিয়মিতভাবে প্রচারিত হতে থাকে। স্কুল-কলেজে ছাত্র সংগঠনগুলো ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল-মিটিং করে। এই সমর্থনের পিছনে সরকারের নীতিগত অবস্থান এবং শহীদ জিয়ার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির একটি বড় ভূমিকা ছিল।
তাঁর নির্দেশে বাংলাদেশে ফিলিস্তিন সংহতি দিবস পালন করা হয়, যার মধ্য দিয়ে জনমনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি তৈরি হয়। বাংলাদেশি জনগণও এই ইস্যুতে গভীরভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য দোয়া ও সমর্থনের হাত বাড়ায়।
শহীদ জিয়ার ফিলিস্তিনপ্রীতির কৌশল শুধু নৈতিক ও আদর্শিক ছিল না, এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ফিলিস্তিনপ্রীতি ছিল তার বহুমাত্রিক রাষ্ট্রনায়কত্বের একটি উজ্জ্বল দিক। তিনি শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, মানবিক, সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তার এই অবদান আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে করেছে মজবুত ও ফলপ্রসূ।।।