Abdul Momin

Abdul Momin Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Abdul Momin, Digital creator, Saidpur, Rajshahi.

11/06/2024

তাকবীরে তাশরীক পড়া কি.???

আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন,

وَ اذْكُرُوا اللّٰهَ فِیْۤ اَیَّامٍ مَّعْدُوْدٰتٍ অর্থাৎ আর তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর (আইয়ামে তাশরীকের) নির্দিষ্ট দিনগুলোতে।’ Ñসূরা বাকারা (১) : ২০৩

একাধিক সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত আছে যে, তারা নয় তারিখ আরাফার দিন ফজর থেকে তের তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবীর পড়তেন। তন্মধ্যে হলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব, আলী ইবনে আবি তালিব,আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. যুহরী, মাকহুল, সুফিয়ান সাওরীসহ প্রমুখ সাহাবা-তাবেয়ীগণ।

তাকবীরে তাশরীকের জন্য বিভিন্ন শব্দ হাদীসে উল্লেখ হয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বজনবিদিত পাঠ হল,

الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلاالله والله أكبر، الله أكبر ولله الحمد.

মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৫৬৯৬-৯৯; আল আওসাত, ইবনে মুনযির ৪/৩৪৯; এলাউস সুনান ৮/১৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫৮

মাসআলা :

নয় যিলহজ্ব হতে তের যিলহজ্ব আছর পর্যন্ত মোট তেইশ ওয়াক্তের নামাযের পর একবার করে তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। জামাতে নামায পড়া হোক বা একাকি, পুরুষ বা নারী, মুকীম বা মুসাফির সকলের উপর ওয়াজিব।

মাসআলা :

প্রত্যেক ফরয নামাযের সালামের পর পরই কোনো কথাবার্তা বা নামায পরিপন্থী কোনো কাজ করার আগেই তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। মাসআলা : তাকবীরে তাশরীক পুরুষের জন্য জোরে পড়া ওয়াজিব। আস্তে পড়লে তাকবীরে তাশরীক পড়ার হক আদায় হবে না। আর মহিলাগণ নিম্ন আওয়াজে অর্থাৎ নিজে শুনতে পায় এমন আওয়াজে পড়বে। Ñরদ্দুল মুহতার ২/১৭৮; এলাউস সুনান ৮/১৫২

মাসআলা :

শুধু পাঁচ ওয়াক্ত ফরযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। বিতরের পর এবং অন্য কোনো সুন্নাত বা নফলের পরে পড়ার নিয়ম নেই।

মাসআলা :

ইমাম তাকবীর বলতে ভুলে গেলে মুক্তাদীগণ ইমামের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরা তাকবীর বলবেন।

মাসআলা :

নয় তারিখ থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত কোনো নামায কাযা হয়ে গেলে এবং ঐ কাযা এই দিনগুলোর ভিতরেই আদায় করলে সে কাযা নামাযের পরও তাকবীরে তাশরীক পড়বে।

মাসআলা :

হাজ্বীদের উপর ইহরাম অবস্থায় পূর্বোক্ত নিয়ম অনুযায়ী তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব।

তাকবীরে তাশরীক সংক্রান্ত মাসায়েলের জন্য দেখুন : রদ্দুল মুহতার ২/১৭৭-১৮০; ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আল বাহরুর রায়েক ২/১৬৪-১৬৫, তাহতাবী আলাল মারাকী ২৯৪;

والله اعلم بالصواب

25/05/2024

🍁🍁🍁 চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার শরয়ী হুকুম।

💞💞💞মুফতী আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহ

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله، وسلام على عباده الذين اصطفى، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لاشريك له، وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، أما بعد:

ইসলামে সবচে বড় ইবাদত এবং ঈমানের পর সবচে বড় ফরয হচ্ছে নামায। কুরআন-সুন্নাহ্য় নামায আদায়ের নির্দেশ বারবার أَقِيمُوا الصّلَاةَ ও يُقِيمُونَ الصّلَاةَ এসব বাণীর মাধ্যমে এসেছে। আর সালাত কায়েম করার অর্থ হল নামাযের ফারায়েয ও আরকান, ওয়াজিবাত ও সুনান, আদাব ও মুস্তাহাব্বাত ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান হয়ে নামায আদায় করা।

নামাযের মূল ভিত্তি হল, তার আরকান ও ওয়াজিবগুলো। এর মাঝে সবচে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কিয়াম, কিরাত, রুকু, সিজদা এবং কা‘দা তথা বৈঠক। আর নামাযের রূহ হচ্ছে, আদব ও তাওয়াজু এবং নম্রতা ও বিনয়ের সাথে খুশু-খুযু অবস্থায় আল্লাহ তাআলার সামনে ছোট হয়ে হাজির হওয়া। এই হাকীকত ও রূহানিয়তের প্রতি খেয়াল করলে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার কথা কল্পনাও করা যায় না। কেননা এতে না কিয়ামের ফরয আদায় হয়, না রুকু-সিজদার ফরয; আর না এর মাধ্যমে তাশাহহুদের জন্য যমিনে বসার হুকুম আদায় হয়। আর নামাযের যে রূহ অর্থাৎ সবিনয়ে আল্লাহ তাআলার সামনে হাজির হওয়া তাও এখানে অনুপস্থিত। কারণ চেয়ার সাধারণত আরাম ও মর্যাদার আলামত; তাওয়াজু ও বিনয়ের আলামত নয়।

এজন্য নামায আদায়ের পদ্ধতি হল, নামাযের সকল আরকান, ওয়াজিবাত, সুনান এবং আদাব ও মুস্তাহাব্বাতের প্রতি যথাযথ খেয়াল রেখে নামায আদায় করা। দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা এবং রুকু-সিজদা যথা নিয়মে আদায় করা।

নামাযে বৈঠকের যে বিধান রয়েছে তার অর্থই হল, যমিন বা সমতলে বসা। আর সিজদা, যা মূলত নামাযের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রুকন। এর হাকীকতই হচ্ছে, শরীরের উপরের অংশ নিচু হওয়া আর পেছনের অংশ উঁচু হওয়া। সিজদার পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন

أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ، عَلَى الجَبْهَةِ وَأَشَارَ بِيَدِهِ عَلَى أَنْفِهِ وَاليَدَيْنِ وَالرّكْبَتَيْنِ، وَأَطْرَافِ القَدَمَيْنِ.

আমাকে সাতটি অঙ্গ দ্বারা সিজদা করতে (আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে) আদেশ করা হয়েছে : (১) কপাল ও নাক। (২, ৩) দুই হাত। (৪, ৫) দুই হাঁটু। (৬, ৭) দুই পায়ের আঙ্গুলসমূহ। সহীহ বুখারী, হাদীস ৮১২

এ হাদীস থেকে এটি স্পষ্ট যে, এই সাত অঙ্গ ব্যবহার করে সিজদা করলেই তা পরিপূর্ণ সিজদা হবে এবং আল্লাহ তাআলা এভাবে সিজদা করারই হুকুম প্রদান করেছেন। আর নিচে বসে সমতলে সিজদা করার দ্বারাই এ হুকুম আদায় হয়। চেয়ারে বসে এভাবে সিজদা আদায় করা সম্ভবই নয়।

মোটকথা, কুরআন-সুন্নাহ্য় নামাযের যে পদ্ধতি ফরয করা হয়েছে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ক্ষেত্রে সেই ফরয আদায় করা সম্ভবই নয়।

এখন প্রশ্ন হল, মাযূর ও অসুস্থ ব্যক্তি কী করবে? এর উত্তর হল মাযূর মুসল্লী তো আজকে প্রথম নয়। আগেও তো মাযূর ও অসুস্থ মানুষ ছিল। ওযর ও অসুস্থ অবস্থায় কীভাবে নামায আদায় করতে হবে এর তালীমও কুরআন-সুন্নাহ এবং ইসলামী শরীয়তে রয়েছে। প্রয়োজন হল, ওজরের সময় নামায আদায় করার পদ্ধতি-সংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধি-বিধানের ইলম যথাযথ হাছিল করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। সহজতা, আরামপ্রিয়তা এবং নিছক আন্দাজ ও ধারণার ভিত্তিতে এমনি এমনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া যে, আমার জন্য চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয আছে এমনটি করা কখনই ঠিক নয়। এতে যেভাবে শরীয়তের ব্যাপারে একধরনের বেপরোয়া ভাব প্রকাশ পায় তেমনি নামাযের মত আযীমুশ শান ইবাদতের ক্ষেত্রে চরম পর্যায়ের উদাসীনতাও সাব্যস্ত হয়। ওযরের ক্ষেত্রে শরীয়তের উসূল ও মূলনীতি হল, যে কোনো ওযরের কারণেই কেউ মাযূর সাব্যস্ত হয় না। তাই মামুলী ওযরের কারণে নিজেকে মাযূর মনে করা বৈধ নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উসূল হল, যতটুকু ওজর ততটুকু রুখসত বা ছাড়। এমন নয় যে, এক ওজরের কারণে সকল ফরয থেকে ছুট্টি। যেমন, নামাযে দাঁড়ানোর সক্ষমতা নেই বলে এখন রুকু-সিজদাও মাফ। রুকু-সিজদা করতে পারে না বিধায় এখন কা‘দা (তাশাহহুদের জন্য যমিনে বসা)-ও মাফ বিষয়টি এমন নয়।

হাদীস শরীফে এসেছে, ইমরান ইবনে হুসাইন রা. বলেনÑ

كَانَتْ بِي بَوَاسِيرُ، فَسَأَلْتُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَنِ الصّلاَةِ، فَقَالَ: صَلِّ قَائِمًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ.

আমার অর্শরোগ ছিল। তাই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি কীভাবে নামায পড়ব সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। দাঁড়িয়ে পড়তে সক্ষম না হলে বসে বসে পড়বে। বসেও সক্ষম না হলে কাত হয়ে শুয়ে আদায় করবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১১১৭)

দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মে রুকু-সিজদা করে নামায পড়তে পারেন না এমন ব্যক্তির নামাযের পদ্ধতির ব্যাপারে এ হাদীসে মৌলিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আবদুল বার রাহ. বলেনÑ

هَذَا يُبَيِّنُ لَكَ أَنّ الْقِيَامَ لَا يَسْقُطُ فَرْضُهُ إِلّا بِعَدَمِ الِاسْتِطَاعَةِ ثُمّ كَذَلِكَ الْقُعُودُ إِذَا لَمْ يَسْتَطِعْ ثُمّ كَذَلِكَ شَيْءٌ شَيْءٌ يَسْقُطُ عِنْدَ عَدَمِ الْقُدْرَةِ عَلَيْهِ.

এ হাদীস স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছে যে, কিয়াম করতে অক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত নামাযে কিয়াম করা ফরয; তা বাদ দেওয়া যাবে না। তেমনি কা‘দা (বৈঠক)। তা আদায়ে অক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত তা আদায় করার ফরয বিধান বহাল থাকবে। নামাযের অন্যান্য ফরয-ওয়াজিব আমলগুলোও এমনি। যখন যেটি আদায়ে অক্ষম হবে কেবল সেটিই তখন ছাড়া যাবে। (আততামহীদ ১/১৩৫)

উপরোক্ত হাদীস ও শরীয়তের অন্যান্য দলীলের ভিত্তিতে মুজতাহিদ ইমামগণ মাযূর ও অসুস্থ ব্যক্তির নামাযের যেসব বিধি-বিধান উল্লেখ করেছেন তার আলোকে চেয়ারে বসে নামাযের হুকুম সামনে তুলে ধরা হল।



অসুস্থ হলেই চেয়ারে নামায জায়েয হয়ে যায় না

এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, বর্তমানে সামান্য অসুস্থতা, সামান্য দুর্বলতা, হালকা ব্যথা-বেদনার অজুহাতে চেয়ারে বসে নামায আদায়ের প্রবণতা অনেকের মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে। দিন দিন এ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। ফলে মসজিদে মসজিদে চেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ চেয়ারে বসে নামায আদায়কারীদের মধ্যে এমন লোকও থাকেন, যারা হাঁটা-চলা, উঠা-বসা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবেই করে যাচ্ছেন। কিন্তু নামাযের সময় তারা মাযূর হয়ে চেয়ার নিয়ে বসে পড়েন।

ভালোভাবে মনে রাখা দরকার, যে কোনো অসুস্থতার কারণেই চেয়ারে বসে নামায জায়েয হয়ে যায় না। বরং ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীসটিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে

فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ.

‘দাঁড়িয়ে পড়তে সক্ষম না হলে বসে বসে পড়বে। বসে সক্ষম না হলে কাত হয়ে শুয়ে আদায় করবে।’

এর থেকে স্পষ্ট যে, বসে নামায পড়ার জন্য শর্ত হল দাঁড়ানোর সক্ষমতা না থাকা। তেমনি যমিনে/সমতলে না বসে পড়ার জন্যও শর্ত, যমিনে/সমতলে বসার সক্ষমতা না থাকা।

আর কোন্ প্রকারের অসুস্থতা অক্ষমতা গণ্য হবে কোনটি গণ্য হবে না এবং এর মানদন্ড কী ফকীহগণ তা নির্ণয় করে দিয়ে গেছেন।

মুসান্নাফে আবদুর রায্যাকে বর্ণিত হয়েছে, আমর ইবনে মায়মূন রাহ. বলেন, তার পিতা মায়মূন ইবনে মেহরান রাহ.-কে প্রশ্ন করা হল

مَا عَلَامَةُ مَا يُصَلِّي الْمَرِيضُ قَاعِدًا؟

অসুস্থ ব্যক্তি কখন বসে নামায পড়তে পারবেÑ এর মানদন্ড কী?

উত্তরে তিনি বলেন

إِذَا كَانَ لَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يَقُومَ لِدُنْيَاهُ فَلْيُصَلِّ قَاعِدًا.

যখন সে তার দুনিয়াবী কাজের জন্য দাঁড়াতে পারে না এ অবস্থায় পৌঁছলে সে বসে নামায পড়তে পারবে। (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৪১২৬)

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব আলমুহীতুল বুরহানীতে আছে

وقال عليه السلام لعمران بن حصين رضي الله عنه حين عاده وهو مريض: صل قائماً فإن لم تستطع فقاعداً، فإن لم تستطع فعلى الجنب تومىء إيماءً والمعنى في ذلك أن الطاعة بحسب الطاقة. وقوله: فإن عجز عن القيام وقدر على القعود يصلي المكتوبة قاعداً، لم يرد بهذا العجز العجز أصلاً لا محالة بحيث لا يمكنه القيام بأن يصير مقعداً، بل إذا عجز عنه أصلاً، أو قدر عليه إلا أنه يضعفه ذلك ضعفاً شديداً حتى تزيد علته لذلك، أو يجد وجعاً بذلك، أو يخاف إبطاء البرء، فهذا وما لو عجز عنه أصلاً سواء.

(আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৬)

অর্থাৎ অক্ষমতার প্রথম অর্থ হল, কাজটির সামর্থ্যই না থাকা। আর যদি সামর্থ্য থাকে, কিন্তু এটি করলে সে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে বা এর কারণে তার রোগ বেড়ে যায় কিংবা এর কারণে তীব্র ব্যথা অনুভব করে অথবা এমনটি করলে তার রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হবে এ অবস্থাগুলোই কেবল অক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত।

ইমাম ইবনুল হুমাম রাহ. বলেনÑ

(قوله إذا عجز المريض) المراد أعم من العجز الحقيقي حتى لو قدر على القيام، لكن يخاف بسببه إبطاء برء أو كان يجد ألما شديدا إذا قام جاز له تركه، فإن لحقه نوع مشقة لم يجز ترك القيام بسببها.

(ফাতহুল কাদীর ২/৩)

এখানে তিনি আরো স্পষ্টভাবে বলেছেন, দাঁড়ালে অনেক বেশি ব্যথা হলেই কেবল না দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সুযোগ আছে। শুধু কিছু ব্যথা বা কষ্ট লাগার কারণেই কিয়ামের ফরয ছেড়ে দেওয়া জায়েয হবে না।

আর রোগ বেড়ে যাওয়া এবং রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি কীভাবে ফয়সালা করা হবে এর মূলনীতিও ফকীহগণ নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন। ইমাম ইবনুল হুমাম রাহ. বলেন

وتحقق الحرج منوط بزيادة المرض أو إبطاء البرء أو فساد عضو، ثم معرفة ذلك باجتهاد المريض، والاجتهاد غير مجرد الوهم، بل هو غلبة الظن عن أمارة أو تجربة أو بإخبار طبيب مسلم غير ظاهر الفسق.

(ফাতহুল কাদীর ২/৩৫১)

অর্থাৎ রোগ বেড়ে যাওয়া এবং রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হওয়ার ফয়সালা শুধু ধারণা বা অনুমানের উপর নির্ভর করে করা যাবে না। বরং স্পষ্ট কোনো আলামত বা রোগীর পূর্ব অভিজ্ঞতা কিংবা মুসলিম অভিজ্ঞ ভালো কোনো ডাক্তারের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে তা নির্ণয় করতে হবে।

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহ.-ও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন

(قوله خاف) أي غلب على ظنه بتجربة سابقة أو إخبار طبيب مسلم حاذق.

(রদ্দুল মুহতার ২/৯৬)

এখানে লক্ষণীয় যে, এক্ষেত্রে ডাক্তার মুসলিম হওয়ার শর্ত এজন্য করা হয়েছে যে, ডাক্তার যদি অমুসলিম হয় তাহলে একে তো তার কাছে নামাযের গুরুত্ব থাকবে না। দ্বিতীয়ত নামাযের পদ্ধতি সম্পর্কেও তার কোনো ধারণা থাকার কথা নয়। সেজন্য নামাযের আরকান যথাযথ আদায় করলে রোগীর শারীরিক ক্ষতি হবে কি না এ সম্পর্কেও তার বাস্তব ধারণা থকবে না। সবচেয়ে বড় কথা হল, দ্বীনী বিষয়ে কোনো অমুসলিমের উপর আস্থা রাখা যায় না। এজন্যই মুসলিম ডাক্তার শর্ত করা হয়েছে। তবে কখনো কখনো মুসলিম ডাক্তারের মাঝেও দ্বীনী বিষয়ে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। তাই চেয়ারে বসে নামায শুরু করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শের পাশাপাশি নিজের অবস্থার পুরোপুরি বিবরণ দিয়ে কোনো মুফতী বা ফতোয়া বিভাগ থেকে মাসআলা জেনে নিতে হবে। নতুবা ক্ষেত্রবিশেষে নামায সহীহ নাও হতে পারে।

মোটকথা, অসুস্থ হলেই চেয়ারে বসে নামায জায়েয হয়ে যায় না। বরং অসুস্থতার ধরন হিসেবে এর হুকুমও ভিন্ন হয়ে থাকে। ১. এমন অসুস্থতা, যা সত্তে¡ও চেয়ারে বসে পড়লে নামায শুদ্ধই হবে না। ২. এমন অসুস্থতা, যার কারণে নামাযের আংশিক চেয়ারে বসে আদায় করলে নামায ফাসেদ হবে না। ৩. এমন অসুস্থতা, যার কারণে পুরো নামায চেয়ারে বসে পড়া জায়েয।



যাদের জন্য চেয়ারে বসে নামায পড়া নাজায়েয

১. যে ব্যক্তি শরীয়তের দৃষ্টিতে মাযূর নয়, অর্থাৎ কিয়াম, রুকু-সিজদা করতে সক্ষম, তার জন্য যমিনে বা চেয়ারে বসে নামায আদায় করাই জায়েয নয়। অথচ কখনো কখনো দেখা যায়, এ ধরনের সুস্থ ব্যক্তিও সামনে চেয়ার পেয়ে চেয়ারে বসে নামায আদায় করে নেয়। ফলে তার নামাযই হয় না।

২. শুধু আরামের জন্য অথবা মামুলি কষ্টের বাহানায় চেয়ারে বসে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না। এমনকি যমিনে বসে পড়লেও আদায় হবে না।

৩. যার পায়ে বা কোমরে ব্যথা। দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মে রুকু-সিজদা করে নামায পড়লে শরীরে ব্যথা লাগে। কিন্তু তার ব্যথা এ পরিমাণের নয় যে, তা অনেক বেশি। যা সহ্যের বাইরে; বরং এ ব্যথা নিয়ে সে কিয়াম ও রুকু-সিজদা করে নামায পড়তে পারে তবে তার জন্যও যমিনে বা চেয়ারে বসে নামায পড়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন করলে নামায আদায় হবে না।

৪. যে কিছুটা অসুস্থ। কিন্তু তার অসুস্থতা এ পর্যায়ের নয় যে, সে কিয়াম ও রুকু-সিজদা করে নামায পড়তে সক্ষমই নয়, বা এভাবে নামায পড়লে তার রোগ বেড়ে যাবে কিংবা রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হবে এমনও নয়। এমন অল্প অসুস্থতার অজুহাতে যমিনে বা চেয়ারে বসে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না।

৫. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়াতে সক্ষম। যমিনে সিজদাও করতে পারে। কিন্তু পা ভাঁজ করে তাশাহহুদের সুরতে বসতে পারে না। তবে পা ছড়িয়ে বা চারজানু হয়ে বা এক পা বিছিয়ে আরেক পা উঠিয়ে কিংবা এক পায়ের পাতা বিছিয়ে আরেক পা বের করে অথবা উভয় পা বের করে বা অন্য যে কোনো পদ্ধতিতে যমিনে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে তার জন্যও চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয নয়। সে যেভাবে সম্ভব বসেই যমিনে সিজদা করে নামায আদায় করবে এবং কিয়াম ও রুকুও যথানিয়মে আদায় করবে। পুরোপুরি সুন্নত তরিকায় তাশাহহুদের সুরতে বসতে না পারার অজুহাতে তার জন্য চেয়ারে বসে নামায পড়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন ব্যক্তি যমিনে সিজদা না করে চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা করলে তার নামায সহীহ হবে না।

৬. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে সক্ষম নয়, কিন্তু যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনো পদ্ধতিতে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে, তবে চেয়ারে বসে নামায শুরু করলে সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক)-এর জন্য যমিনে নামতে সক্ষম নয় তার জন্যও চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয নয়। এমন ব্যক্তি যেহেতু সমতলে বসে সিজদার ফরয আদায় করতে সক্ষম তাই শুরু থেকেই সে যমিনে বা সমতলে বসে যথানিয়মে সিজদা করে নামায আদায় করবে; নতুবা তার নামায আদায় হবে না।

৭. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম, আবার যমিনে বা সমতলে বসতেও পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে, কিন্তু নামাযে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসতে পারে না, তেমনি বসলে আবার দাঁড়াতে পারে না তার জন্যও চেয়ারে বসে পড়া জায়েয নয়। বরং সে পুরো নামায নিচে বসে আদায় করবে, যাতে যথানিয়মে যমিনে সিজদা করতে পারে; নতুবা তার নামায সহীহ হবে না।



নামাযের আংশিক চেয়ারে আদায় করার হুকুম

১. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম নয়, কিন্তু যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনোভাবে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে। তার জন্য সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক) যমিনে বসে যথানিয়মে আদায় করা জরুরি। এমন ব্যক্তি যদি সিজদার সময় চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা আদায় করে তবে তার নামায সহীহ হবে না; বরং এক্ষেত্রে সে পুরো নামাযই যমিনে বসে আদায় করবে। আর সে যদি এক্ষেত্রে সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক) যমিনে বসে যথানিয়মে আদায় করে কিন্তু কিয়াম ও রুকুর সময় চেয়ারে বসে তবে তার নামায ফাসেদ না হলেও যমিনে বসে আদায় করতে সক্ষম হওয়া সত্তে¡ও চেয়ারে বসার কারণে তার নামায মাকরূহ হবে।

আর এমন ব্যক্তি চেয়ারে বসে নামায শুরু করলে সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক)-এর জন্য যমিনে নামতে না পারলে তার জন্য কিয়ামের সময় চেয়ারে বসাই নাজায়েয। বরং শুরু থেকেই তার যমিনে বসে নামায পড়া জরুরি; যা একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।

২. যে ব্যক্তি কিয়াম করতে সক্ষম এবং দাঁড়ানো থেকে চেয়ারে বসতেও পারে, কিন্তু যমিনে কোনো পদ্ধতিতেই বসতে পারে না এমন ব্যক্তির জন্য বিধান হল, সে যথা নিয়মে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করবে। এরপর স্বাভাবিকভাবে রুকু করতে পারলে রুকুও করবে। তারপর অবশিষ্ট নামায চেয়ারে বসে পড়বে। কিন্তু এক্ষেত্রে কিয়াম করতে সক্ষম হওয়া সত্বে ও তার জন্য শুরু থেকেই চেয়ারে বসে নামায পড়া সহীহ নয়।

এখানে উল্লেখ্য যে, যে ব্যক্তি যমিনে সিজদা করতে সক্ষম নয় তার ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত হল, এমন ব্যক্তির উপর দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা জরুরি নয়; বরং সে বসে ইশারায় নামায আদায় করতে পারে।

এ বক্তব্যটি যদিও একেবারে দলীলবিহীন নয়, কিন্তু অনেক মুহাক্কিক ফকীহের দৃষ্টিতে এই মাসআলায় দলীলের বিচারে ফিকহে হানাফীর ঐ বক্তব্য বেশি শক্তিশালী, যা ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর শাগরিদ ইমাম যুফার ইবনে হুযাইল রাহ.-এর মাযহাব। আর এটাই বাকি তিন ইমামের (ইমাম মালেক রাহ., ইমাম শাফেয়ী রাহ. এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ.) মাযহাব। আর তা হল, এমন ব্যক্তি (যে ব্যক্তি যমিনের উপর সিজদা করতে অক্ষম) যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে দাঁড়িয়েই নামায আদায় করতে হবে। আর যেহেতু সে সিজদা করতে অক্ষম তাই সে ইশারায় সিজদা করবে (যদি রুকু করতেও অক্ষম হয় তাহলে রুকুও ইশারায় আদায় করবে)। যমিনে সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে দাঁড়ানোর ফরয ছাড়া যাবে না।

হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তাঁর একটি ফতোয়াতে এই মাসআলার উপর বিশদ আলোচনা করেছেন এবং ‘ফাতহুল কাদীর’ খ. ১ পৃ. ৪৬০, ‘আননাহরুল ফায়েক খ. ১ পৃ. ৩৩৭ এবং ‘ইলাউস সুনান খ. ৭ পৃ. ২০৩ ইত্যাদির বরাতে দালায়েলের আলোকে এই ‘কওল’ (বক্তব্য)-কেই শক্তিশালী বলেছেন যে, কিয়ামের ফরয আদায় থেকে শুধু ঐ ব্যক্তি ছাড় পাবে, যে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম। সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে কিয়াম না করার ছাড় পাবে না। তিনি সেখানে বিশদভাবে ঐ কথারও খন্ডন করেছেন যে, ‘শুধু সিজদার জন্য কিয়াম ফরয করা হয়েছে। তাই সিজদা করতে অক্ষম হলেই কিয়াম জরুরি থাকে না।’ তিনি একাধিক দলীল দ্বারা একথা প্রমাণ করেছেন যে, কিয়াম নামাযের একটি স্বতন্ত্র ফরয; তা শুধু সিজদার জন্য নয়।

এমনকি হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম ঐ ফতোয়ায় একথাও লিখেছেন যে, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায শুরু করতে পারে, কিন্তু সিজদার জন্য যমিনে বসার পর আবার দাঁড়াতে তার অনেক কষ্ট হয়, এমন ব্যক্তিও কিয়াম (দাঁড়িয়ে নামায পড়া) একেবারে ছাড়বে না। বরং প্রথম রাকাত দাঁড়িয়ে আদায় করবে। এরপর উঠে দাঁড়াতে কষ্ট হওয়ার কারণে বাকি নামায বসে আদায় করবে।

এর সাথে সাথে হযরত দামাত বারাকাতুহুম এ-ও বলেছেন যে, যমিনের উপর সিজদা করতে অক্ষম কোনো মুসল্লী যদি ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী আমল করে এবং পুরা নামায বসে আদায় করে এবং ইশারায় রুকু-সিজদা করে তাহলে তার নামায ফাসেদ হয়েছে বলব না।

(لأن المسألة من الاجتهاديات، و القول المشهور و إن كان مرجوحا من حيث الدليل و لكنه ليس من الزلات المحضة، فله بعض الأدلة أيضا، مذكور في "مختصر اختلاف العلماء" ج ১ ص ৩২৫.)

৩. যে ব্যক্তি কিয়াম ও রুকু করতে সক্ষম এবং সরাসরি যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনোভাবে বসতেও পারে, কিন্তু যমিনে সিজদা করতে পারে না, সে তো কিয়াম ও রুকু যথানিয়মেই আদায় করবে। এরপর যমিনে বসে যাবে। ইশারায় সিজদা আদায় করবে এবং তাশাহহুদ যমিনে বসেই আদায় করবে। এমন ব্যক্তি যেহেতু মাটিতে বা সমতলে বসতে পারে তাই তার জন্য যমিনে কা‘দা-এর পরীবর্তে চেয়ারে বসা মাকরূহ তাহরীমী। যা পরিহার করা কর্তব্য।

৪. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়াতে সক্ষম নয়, কিন্তু যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনোভাবে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে। সে যদি চেয়ারে বসে নামায আদায় করে এবং সিজদার জন্য চেয়ার থেকে নেমে মাটিতে সিজদা আদায় করে তবে এক্ষেত্রে তার সিজদা যথানিয়মে আদায় হলেও কা‘দা অর্থাৎ বৈঠক চেয়ারে আদায় করার কারণে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে; যা পরিহার করা কর্তব্য।



পুরো নামায যার জন্য চেয়ারে বসে পড়া জায়েয

যে ব্যক্তি নামাযের কিয়াম, রুকু-সিজদা ও কা‘দা (তাশাহহুদের জন্য বসা) কোনোটিই স্বাভাবিকভাবে আদায় করতে সক্ষম নয়; বরং শুধু চেয়ারেই বসতে পারে কেবল এমন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য পুরো নামায চেয়ারে বসে আদায় করা জায়েয।

কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, এই ব্যক্তি যে কিয়াম, রুকু-সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক) সবগুলোই যথানিয়মে স্বাভাবিকভাবে আদায় করতে সক্ষম নয় তা বাস্তবসম্মত ও সুপ্রমাণিত হতে হবে। এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শের পাশাপাশি কোনো মুফতী সাহেবকে নিজের অবস্থা পুরোপুরি জানিয়ে তার থেকে মাসআলা নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করবে। নতুবা নিজে নিজে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে কখনো নামায নাও হতে পারে।

মোদ্দাকথা এই যে, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পদ্ধতি হল, যমিনে বসে তা আদায় করা। আর যে রুকু-সিজদা করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পন্থা হল, ইশারায় রুকু-সিজদা আদায় করা। আর যে ব্যক্তি যমিনে বসতে অক্ষম তার জন্য যমিনে বসে কা‘দা আদায়ের বিকল্প হল চেয়ারে বসা। কেবল প্রথম ও দ্বিতীয় ওযরের কারণে চেয়ারে বসা জায়েয নয়।



চেয়ারে বসে নামাযের ক্ষেত্রে সিজদা আদায়ের পদ্ধতি

যে ব্যক্তি যমিনে সিজদা করতে অক্ষম তার ব্যপারে হুকুম হল, সে ইশারায় সিজদা আদায় করবে। এমন মাযূর ব্যক্তি যদি বাস্তব ওযরেই চেয়ারে বসে নামায আদায় করে তাহলে সেও ইশারায়ই সিজদা করবে। সামনে তখতা বা টেবিল রেখে তাতে সিজদা করবে না। কেননা সিজদার জন্য সামনে টেবিল বা উঁচু বস্তু রাখা এবং তাতে সিজদা করার কোনো বিধান হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। অবশ্য এর দ্বারা যেহেতু ইশারার কাজ হয়ে যায় ফলে নামায আদায় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, ইশারায় সিজদা আদায় করার নিয়ম হল, রুকুর জন্য মাথা যতটুকু ঝোঁকাবে সিজদার জন্য তার চেয়ে একটু বেশি ঝোঁকানো।

আর সিজদার জন্য ইশারা করার সময় হাত হাঁটুতেই রাখবে। কেউ কেউ তখন যমিনে সিজদা করার মত হাত চেহারা বরাবর রাখে। এটি ভুল নিয়ম।



শেষ কথা

সম্মানিত পাঠক! যদি উল্লিখিত মাসআলাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে থাকবে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা একেবারেই নাজায়েয। এসব ক্ষেত্রে নামাযই শুদ্ধ হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামাযের আংশিক চেয়ারে বসে আদায় করলে যদিও নামায ফাসেদ হয় না, কিন্তু তা মাকরূহ। কেবল একটি ক্ষেত্র এমন, যেখানে চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে নামায আদায়ও হয়ে যায় এবং মাকরূহও হয় না।

এই বাস্তবতাটি যদি আমরা যথাযথ উপলব্ধি করতে পারি তাহলে এ বিষয়টি বুঝতে আমাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় যে, বর্তমানে মসজিদগুলোতে চেয়ারের যে ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে (এবং দিন দিন যা বেড়েই চলেছে) এটা কেবল এজন্যই যে, মাসআলা জানা না থাকার কারণে এমন অনেক মুসল্লীও নামাযে চেয়ার ব্যবহার করে থাকেন, যাদের জন্য নামাযে চেয়ার ব্যবহার জায়েযই নয়। সম্মানিত মুসল্লীবৃন্দ যদি হিম্মত করে শরয়ী ওযর ব্যতীত নামাযে চেয়ার ব্যবহার পরিত্যাগ করেন এবং নামাযে চেয়ার ব্যবহারকে শরয়ী রুখসত (শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত ছাড়) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখেন তাহলে মসজিদগুলোতে চেয়ারের এই ভিড় হ্রাস পাবে ইনশাআল্লাহ। অধিকাংশ মসজিদে চেয়ারের কোনো প্রয়োজনও পড়বে না। আর এমনটিই হওয়া চাই, কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায়ও চেয়ারের অস্তিত্ব ছিল; বরং এরও বহু পূর্ব থেকে ছিল। আর প্রথম থেকেই মাযূর ও অসুস্থ মুসল্লী ছিলেন। কিন্তু ইতিহাসে এমন কোনো নজির পাওয়া যায় না যে, মসজিদগুলোতে চেয়ার পাতা থাকত। অথবা মাযূর মুসল্লীগণ চেয়ার নিয়ে এসে তাতে নামায আদায় করতেন। মসজিদে চেয়ার পেতে রাখা এবং চেয়ারে নামায আদায় করার যে প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে তা সম্পূর্ণ নতুন রেওয়াজ। এটাকে নিরুৎসাহিত করাই কাম্য। আর অনুসৃত পন্থার প্রতি মনোনিবেশ করার মাঝেই রয়েছে কল্যাণ।

যেই কঠিন প্রয়োজনে নামাযে চেয়ার ব্যবহারের সুযোগ বের হয়ে আসে সেক্ষেত্রে এ বিষয়টির প্রতিও খেয়াল রাখা চাই যেÑ যদি উঁচু মোড়া, টুল ব্যবহারে কাজ হয়ে যায় তাহলে চেয়ার ব্যবহার করবে না। তেমনিভাবে হাতলবিহীন চেয়ারে যদি কাজ সেরে যায় তাহলে হাতলযুক্ত চেয়ার ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুস্থ জীবন দান করুন। সর্বক্ষেত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশেদীন এবং সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত অবলম্বন করার তাওফীক দান করুন। বিদআত থেকে দূরে রাখুন। অন্য ধর্মাবলম্বীদের আচার-সভ্যতা ও রীতি-নীতি থেকে হেফাযত করুন । আমীন।

22/05/2024

কুরবানীর জরুরি ৬৬ টি মাসয়ালা! হাফেজ মাওলানা মুফতি আবদুল মুমিন নিলফামারী
________________________________________________

১.কার উপর কুরবানী ওয়াজিব?
উঃ জিলহজ্জ মাসের ১০তারিখ সুবহে সাদিক থেকে১২ তারিখ
সূর্যাস্ত পর্যন্ত কারো কাছে যদি নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকে ৭.৫ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা থাকে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।

২.নিছাবের মেয়াদ কত দিন?
উঃ ৩ দিন, জিলহজ্জ মাসের ১০,১১ এবং ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

৩. তিন দিনের মধ্যে কোন দিন কুরবানী করা উত্তম?
উঃ ১০ তারিখে প্রথম দিন।

৪.যদি নাবালক এর নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি ?
উঃ না।

৫.বালেক সুস্থ মস্তিষ্ক না নিছাব পরিমাণ সম্পদ আছে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি ?
উঃ- না

৬.যদি নাবালেক এর নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকে এর পক্ষে থেকে কুরবানী দেওয়া কি?
উঃ মুস্তাহাব, ওয়াজিব না।

৭.দরিদ্র লোকের উপর কুরবানী কি ওয়াজিব?
উঃ- না, তবে যদি কুরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করে
তখন সে পশু কুরবানী করা ওয়াজিব।

৮.কেউ যদি কুরবানির দিন গুলোতে কুরবানির দিতে না পারে তাহলে কি করবে, যদি সে নিছাব পরিমাণ সম্পদ আছে, কোন সমস্যায় দিতে পারে নি তাহলে কি করবে?

উঃ-একটা ছাগল যে কুরবানী উপযুক্ত সে ছাগলের সমপরিমাণ টাকা সদকা করে দিবে ন এটা হলো যারা পশু ক্রয় করতে পারেনি তাদের জন্য।
কিন্তু যারা পশু কিনেছেন কিন্তু তিন দিনের মাঝে কুরবানী দিতে পারেন নি তাহলে তার জন্য করণীয় হলো সে পশু সদকা করে দেওয়া।

আবার যদি কেউ তিন দিন পর জবাই করে ফেলে তাহলে সে ঐ পশুর গোশত ওজন করবে তারপর যদি ঐ পশুর ক্রয়ের টাকা থেকে কম হয় তাহলে গোশত সহ
যতো টাকার গোশত কম হয়েছে পুরো টাই সদকা করতে হবে। ধরনে আপনি ২০ হাজার দিয়ে কিনেছেন ওজন দিয়ে দেখলেন ১৮ হাজার টাকার গোশত হয়েছে
গোশতের আরও ২ হাজার টাকা সদকা করতে হবে।

৯.প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে?
উঃ যে এলাকায় জুমার নামাজ,এবং ঈদের নামাজ ওয়াজিব সে এলাকায় ঈদের নামাজের আগে কুরবানী করা জায়েজ নেই। তবে কোন প্রকার দুর্ঘটনা ঘটে গেলে
যদি ঈদের নামাজ না পড়া যায় তাহলে করনীয় হলো সূর্য মধ্যে আকাশ অতিক্রম করার পর কুরবানী করা জায়েজ হবে।

১০.রাতে কুরবানী দিলে কি হবে?
উঃ ১০,১১ তারিখে রাতে দিলে হবে ১২ তারিখ রাতে দিলে হবে না।

১১.কোন কোন পশু দিয়ে কুরবানী দেওয়া জায়েজ?
উঃ- গরু,উট,মহিষ,দুম্বা, ছাগল এবং ভেড়া।

১২.পশু দের লিঙ্গ ভেদ করতে হবে কি?
উঃ- না, পুরুষও মহিলা উভয় দিয়ে হবে।

১৩.পশুর বয়স সীমা কত?
উঃ উট কম পক্ষে ৫ বছর,গরু মহিষ ২ বছর
ভেড়া, দুম্বা ছাগল ১ বছর।
ভেড়া এবং দুম্বা ১ বছর হয়নি তবে বলিষ্ঠ মনে হয়
যে এক বছর হয়েছে তাহলে এটা দিয়ে কুরবানী হবে।
তবে ছাগল ১ বছরের নিচে কোন ভাবে হবে না।

১৪.শরীক সর্বোচ্চ কত জন হওয়া যাবে?
উঃ উট,গরু,মহিষে সর্বোচ্চ ৭ জন কমে হলে সমস্যা নেই তবে একা দেওয়া উত্তম । ছাগল, দুম্বা, ভেড়া তে একজন।

১৫.গোশত ভাগে কম বেশি হলে?
উঃ- কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

১৬. শরীকের মাঝে কেউ যদি গোশত খাওয়ার নিয়তে দেয় তাহলে?

উঃ- কারো কুরবানী হবে না।

১৭.কুরবানীর পশুতে আকিকা দেওয়া যাবে?
উঃ- হ্যাঁ, তবে উট, গরু,এবং মহিষে।

১৮. শরীক দার দের মাঝে যদি কারো অধিকাংশ বা পুরা টাকা হারাম হয় তাহলে কি কুরবানী হবে?

উঃ- না না না! কারো কুরবানী হবে না।

১৯. গরু, মহিষ উট একা কুরবানী নিয়তে কিনার অন্য কাউকে কি শরীক করা যাবে?

উঃ- ধনী হলে পারবে অর্থাৎ যার উপর ওয়াজিব , তবে গরিব ওয়াজিব না কুরবানী তার উপর। পশু কিনে ফেলছে কুরবানীর নিয়তে তাহলে শরীক করা যাবে না একাই দিতে হবে।

২০.কোন ধরনের পশু নির্বাচন করা উত্তম?
উঃ- রিষ্ট পুষ্ট, তাজা পশু নির্বাচন করা সুন্নত।

২১.যে পশু তিন পায়ে ভর করে চলে এমন পশু ধারা কি কুরবানী হবে?

উঃ- না

২২.রোগ্ন পশু দিয়ে কি কুরবানী হবে?
উঃ- না

২৩.দাঁত ছাড়া পশু দিয়ে কি কুরবানী হবে?
উঃ একটা দাত নেই এটা কোন ভাবেই হবে না ,অথবা কিছু আছে তবে ঘাস খেতে পারে না এমন পশু ধারা কুরবানী হবে না।

২৪. শিং ছাড়া পশু দিয়ে কুরবানী হবে কি ?
উঃ জন্মগত যে পশুর শিং নেই সেটা ধারা হবে।
তবে পরবর্তীতে যেটা ভেঙ্গে যায় আর তার ফলে মস্তিষ্কে ক্ষতি হয় এমন পশু ধারা হবে না। তবে অর্ধে হলেও হবে।

২৫.লেজ কাটা, কান কাটা পশু দিয়ে কুরবানি হবে কি?
উঃ যদি পশুর লেজ বা কান অর্ধেক বা তার বেশি কাটা হয় তাহলে সে পশু ধারা কুরবানী হবে না।
তবে অর্ধেকের কম হলে হবে।

২৬.অন্ধ পশু ধারা কুরবানী করা যাবে কি?
উঃ- না তবে যে পশুর এক চোখ ও অন্ধ সেটা দিয়েও হবে না।



২৭.কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করার পর হারিয়ে গেলে দাতা কি করবে?

উঃ- ধনী হলে আরেক টা ক্রয় করবেন।
এবং গরিব ওয়াজিব নয় এমন ব্যক্তি ক্রয় করতে হবে না
তবে কিনার পরে যদি আবার প্রথম পশু ফিরে পাওয়া যায় তাহলে ধনী ব্যক্তি যেকোন একটা কুরবানী করলে হবে, তবে দুটা করা উত্তম একটা করলেও হবে।

** আর গরিব ব্যক্তি যদি হয় তাহলে দুটাই দিতে হবে।
দুটাই দেওয়া তখন ওয়াজিব।

২৮.গর্ভবতী পশু কুরবানী করা কি জায়েজ আছে?
উঃ- হ্যা জায়েজ।

২৯.পশু জবাইয়ের পরে যদি বাচ্চা কে জীবিত পাওয়া যায় তাহলে কি করবে?
উঃ- বাচ্চা ও জবাই দিতে হবে।

৩০.জবাইয়ের আগ মুহূর্তে যদি পশু প্রসব অবস্থায় উপনীত হয় তখন করনীয় কি?

উঃ- সে পশু জবাই করা জায়েজ আছে, তবে মাকরূহ!

৩১.পশু ক্রয় করার পর যদি এমন কোন দোষ দেখা যায় যে দোষ গুলো থাকিলে কুরবানী হয় না তখন করনীয় কি?
উঃ- এই পশু ধারা কুরবানী হবে না।
তবে এখানে গরিব ব্যক্তির জন্য জায়েজ আছে
ধনী ব্যক্তির জন্য জায়েজ নয়।

৩২.আপনি কোন পশু ক্রয় করার সময় জিজ্ঞেস করলেন বয়স কত সে বললো ২ বছর যদি সেটার আসলে বয়স ২ বছর না হয় তখন কি করনীয় বা কুরবানী কি হবে?

উঃ- হ্যা হবে তবে যে বিক্রেতা মিথ্যা বলেছে তার গুনা হবে।

৩৩.পশু কোথায় জবাই করা উত্তম?
উঃ- যেখানে পরিবেশ দূষিত হওয়ার আশংকা কম থাকে।

৩৪. পশু কে জবাই করা উত্তম?
উত্তমঃ- নিজের পশু নিজে কুরবানী করা উত্তম।

৩৫.বন্ধা পশু ধারা কুরবানী হবে কি?
উঃ- হ্যা হবে ।

৩৬.অনেক সময় হুজুর জবাই করার পর দেখা যায় সম্পূর্ণ হয় নি আবার অন্য জন তরবারি হাতে নিয়ে
রগ বা শিরা কাটতে যায় এটা কি জায়েজ হবে?

উত্তরঃ- হ্যা জায়েজ আছে তবে উভয় ব্যক্তি বিসমিল্লাহি আল্লাহ আকবার না বললে কুরবানী হবে না।
একজন যদি না বলে সেক্ষেত্রে ও কুরবানী বাতিল হয়ে যাবে।

৩৭. কুরবানীর পশু ধারা উপকৃত হওয়া যাবে কি?
উঃ না এটা কোন ভাবে জায়েজ নেই।

৩৮.কুরবানীর পশু ধারা যদি আপনি হাল চাষ করে ফেলেন সেক্ষেত্রে করনীয় কি?
উঃ অন্য পশু ধারা করলে যে পারিশ্রমিক আসত সে পরিমান টাকা সদকা করে দেওয়া।

৩৯.কুরবানির পশুর,দুধ পান করা যাবে কি?
উঃ- না

৪০. যদি পশুর জবাইর আগে মন হয় দুধ দহন না করলে পশুর কষ্ট হবে তাহলে করনীয় কি?

উঃ- সে দুধ দহন করে সদকা করে দিতে হবে.
ভুলে খেয়ে ফেললেন তখন যে পরিমাণ পান করেছেন সে পরিমাণ অর্থ সদকা করতে হবে।

৪১.পশু ক্রয় করার পর শরীক মারা গেল তখন কি করবে?

উঃ- তার ওয়ারিশ রা যদি বলে কুরবানী করেন তাহলে
করতে পারবেন, আর যদি বলে না করতে পারবেন না তাহলে টাকা দিয়ে দিতে হবে।
তবে চাইলে পরবর্তী আরেক জন শরীক করতে পারবেন।

৪২.জবাইয়ের আগে পশু বাচ্চা দিলে কি করবেন?

উঃ- ঐ বাচ্চা জীবিত সদকা করে দিতে হবে।
সদকা না করলে পশুর সাথে জবাই করতে হবে।
এখানে জবাই করা বাচ্চার গোশত সদকা করে দিতে হবে, আপনে খেতে পারবেন না।

৪৩.মৃত্যু ব্যক্তির পক্ষ থেকে কি কুরবানী করা যাবে?

উঃ- হ্যা করা যাবে, তবে উসিয়ত করে গেলে গোশত সদকা করে দিতে হবে। উছিয়ত না করলে আপনে খেতে পারবেন।

৪৪.তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশত রাখা যাবে?
উঃ- হ্যা রাখা যাবে যতো দিন ইচ্ছে!

৪৫.অনুমান করে বন্টন করা কি জায়েজ আছে?
উঃ- না, পূর্ণ ওজন করে ভাগ করতে হবে।

৪৬. তিনের এক অংশ গরীব কে দেওয়া, যদি সেটা না দেই তাহলে কি কুরবানী হবে? (আমরা যেটা কে সমাজের গোশত বলি)
উঃ- হ্যা হবে তবে সেটা বড় কৃপ্রনতার পরিচয়।

৪৭.গোশত চর্বি বিক্রি করা যাবে কি?
উঃ- না।

৪৮.জবাইকারী বা কসাই কে গোশত দিয়ে পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে কি?

উঃ না টাকা দিতে হবে, তবে পরে হাদিয়া হিসেবে গোশত দিতে পারবেন আগে পারিশ্রমিক দিতে হবে।

৪৯. জবাই করার অস্র কেমন হতে হবে?
উঃ দাড়ালো উত্তম।

৫০. জবাইয়ের কত সময় পর চামড়া আলাদা করা যাবে?
উঃ- নিসতেজ হওয়ার পর পশু।

৫১.এক পশু কে অন্য পশুর সামনে জবাই করা যাবে কি?

উঃ- যাবে তবে ঠিক না নবী কারীম সাঃ নিষেধ করেছেন?

৫২.কুরবানীর গোশত অন্য র্ধমের ব্যক্তি কে দেওয়া যাবে কি ?
উঃ- হ্যা তাতে কোন সমস্যা নেই।

৫৩.পশু মারা গেলে অথবা ছিনতাই হয়ে গেলে কি করনীয়?
উঃ- ধনী হলে আরেক টা ক্রয় করবেন।
গরিব হলে লাগবে না।

৫৪.মুসাফির এর উপর কুরবানী করা কি ওয়াজিব?
উঃ না।

৫৫.কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করলে কি করনীয়?

উঃ- ঐ ব্যক্তি থেকে অনুমতি নিতে হবে।

৫৬.কুরবানী গোশত খাওয়া কি?
উঃ- মুস্তাহব, না খেলেও গুনা হবে না। তবে খাওয়া উত্তম।

৫৭.কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তি যদি ঋণ নিয়ে কুরবানী করে কুরবানী হবে কি?
উঃ হবে তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে করলে হবে না।

৫৮.হাজীরা যদি মুসাফির থাকে তখন তাদের উপর কুরবানী কি ওয়াজিব?
উঃ- না।

৫৯.পাগল পশু ধারা কুরবানী কি হবে?
উঃ- না।

৬০.নবী কারীম সাঃ এর পক্ষ থেকে কুরবানী করা কি?
উঃ- উত্তম সামার্থ্যবান দের জন্য।
এটার গোশত সবায় খেতে পারবে।

৬১.খাসি কৃত পশু ধারা কুরবানী করা যাবে কি?
উঃ- হ্যা

৬২.বিদেশে অবস্থানে ব্যক্তির করনীয় কি?
উঃ- উনার পক্ষ থেকে দেশে কুরবানী দিলেও হবে

৬৩.পশুর চামড়া কি নিজে ব্যবহার করা যাবে?
উঃ- হ্যা,তবে বিক্রি করলে টাকা সদকা করতে হবে।

৬৪.জবাই কারী কে পারিশ্রমিক দিতে হবে কি?
উঃ উত্তম হাদিয়া দেওয়া।

৬৫.কুরবানীর দিনে মুরগী হাঁস জবাই করা যাবে কি?
উঃ- যাবে, তবে কুরবানী নিয়তে করা যাবে না।

৬৬. জীবিত ব্যক্তির পক্ষ হতে কুরবানী করা যাবে কি?
উঃ- হ্যা যাবে।

আলহামদুলিল্লাহ এই হলো ৬৬ টি মাসায়ালা,
আল্লাহ্ তায়ালা সকলকে সঠিক নিয়ম মেনে কুরবানী করার তাওফীক দান করুন, আমিন। 🤲

12/05/2024

রেজাল্ট খারাপ হয়েছে তো কি হয়েছে
ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না কারণ সার্টিফিকেট মাত্র একটি কাগজের টুকরা আর তুমি তোমার বাবা মায়ের কলিজার টুকরা,

24/04/2024

ইনশাআল্লাহ আগামীকাল ঢেলাপির কাদিখোল হাফিজিয়া মাদ্রাসা মসজিদের সামনে সলাতুল ইস্তেসকার নামাজ নয়টার দিকে আদায় করা হবে আপনারা আমন্ত্রিত।

30/03/2024

ইতিকাফকারীর জন্য যে বিষয়গুলো জানা জরুরী হাফেজ মাওলানা মুফতি আবদুল মুমিন নিলফামারী
-------------------------------------------------------------
👉 ইতিকাফের প্রকার:
ইতিকাফ_তিন_প্রকার
১৷ওয়াজিব ইতিকাফ৷ তথা-মান্নতের ইতিকাফ৷
২৷ সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ৷ তথা-রমযান মাসের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ৷
৩৷ নফল ইতিকাফ৷ তথা-যে কোন দিন বা যে কোন সময়ের ইতিকাফ৷
(সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৭২,১৭৬৯ হাদীস, আহকামুস সিয়াম ৩৫ পৃষ্ঠা৷)
[আলোচ্য নিবন্ধে আমরা সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো]

👉 সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান:
ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান -মসজিদে হারাম বা বাইতুল্লাহ৷ তারপর মসজিদে নববী৷ তারপর মসজিদুল আকসা৷ তারপর জুমআর মসজিদ৷ এরপর পাঞ্জেগানা মসজিদ৷ আর মহিলাদের জন্য ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান হলো- ঘরের অন্দর মহল৷ (আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা,আহকামুল হাদীস ৬৫২ পৃষ্ঠা)
👉 সুন্নতে মুয়াক্কাদা_ইতিকাফ:
রমযান মাসের শেষ দশদিন মহল্লার মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া৷ অর্থাৎ মহল্লার কমপক্ষে একজন লোক ইতিকাফ করলেই মহল্লার সকলের পক্ষ থেকে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে৷ আর যদি মহল্লার একজন লোকও ইতিকাফ না করে,তবে মহল্লার সকলেই সুন্নত তরকের গুনাহগার হবে৷

কিন্তু যদি মহল্লার সকলেই ইতিকাফ করে তাহলে সকলেই নির্ধারিত স‌ওয়াব প্রাপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ।(সহীহুল বুখারী ২০২৬ হাদীস, শামী ৩/৪৩০ পৃষ্ঠা, বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৪ পৃষ্ঠা, আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷)

# #অনেক এলাকায় এরূপ প্রচলন রয়েছে যে,শুধু রমযানের শেষের তিনদিন ইতিকাফ করে৷ এতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ আদায় হবেনা৷ বরং তা নফল ইতিকাফ হিসেবে গণ্য হবে৷ আর উক্ত অবস্থায় সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক করার কারনে মহল্লার সকলেই গুনাহগার হবে৷ (মুসনাদে আহমাদ ৭৭২৬ হাদীস,ইমদাদুল ফাত্ওয়া ১/১৫৪ পৃষ্ঠা, আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷)

👉 সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ইতেকাফের সময়:
রমযানের বিশ রোযার দিন সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ইতিকাফের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করা এবং ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফে বহাল থাকা জরুরী৷ তবে সূর্যাস্তের পূর্বেই যদি ঈদের চাঁদ দেখা যায়, তাহলেও সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফে অবস্থান করা জরুরী৷ ( ইসলামী ফিকাহ ২/২১৪ পৃষ্ঠা,ফাত্ওয়া ও মাসায়িল ৪/৬৬ পৃষ্ঠা,আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷)

মাসয়ালা: বিনিময় দিয়ে বা বিনিময় নিয়ে ইতিকাফ করা বা করানো জায়েয হবে না৷ (ফাত্ওয়া তাতার খানিয়া ২/৩২৫ পৃষ্ঠা, আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷)

👉 ইতিকাফ সহি হ‌ওয়ার শর্তসমূহ:
১৷ ইতিকাফকারী মুসলিম হওয়া ২৷ প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া৷
৩৷ সুস্থ-মস্তিস্কের অধিকারী হওয়া ৪৷ ইতিকাফের নিয়ত করা ৫৷ পুরুষের জন্য মসজিদে ইতিকাফ করা ৬। রোযা অবস্থায় ইতিকাফ করা৷
(আলমগীরী ১/৫১০ পৃষ্ঠা, কানযুদ দাকায়িক ১/২৮৭ পৃষ্ঠা,আহকামুস সিয়াম ৩৫ পৃষ্ঠা)

👉 ইতিকাফকারীর_করণীয়:
ইতিকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্য সব কিছু থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায়।সুতরাং সময় নষ্ট না করে নিম্নোক্ত আমলগুলো বেশি বেশি করা উচিত।
১৷ অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা৷
২৷ অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করা৷
৩৷ অধিক পরিমাণে তাসবীহ, তাহলীল পাঠ করা৷
৪৷ অধিক পরিমাণে তাওবা ইস্তিগফার করা৷
৫৷ অধিক পরিমানে নফল নামায পড়া৷
৬৷ সর্বদা আল্লাহ তায়ালার ধ্যানে মগ্ন থাকা৷
৭৷ ইলমে দ্বীন চর্চা করা৷
৮৷ দ্বীনি কিতাবাদী পাঠ করা।
৯৷ কুরআনের তাফসির পড়া।
১০৷ ফাত‌ওয়া ও মাসায়েলের কিতাব পড়া।
( ফাত্ওয়া আলমগীরী ১/৫১২ পৃষ্ঠা,ফাত্ওয়া ও মাসায়িল ৪/৬৭ পৃষ্ঠা,আহকামুস সিয়াম ৩৭ পৃষ্ঠা৷)

👉যে সব কারণে ইতেকাফ মাকরূহ হয়:
সম্পূর্ণ নীরব থাকা এবং কারোর সঙ্গে আদৌ কথা না বলা, মসজিদে পণ্য সামগ্রীর ক্রয়-বিক্রয়, প্রাণীর ছবিযুক্ত পেপার দেখা, আর্থিক বিনিময়ের মাধ্যমে তালিম দেয়া, কলহ-দ্বন্ধ ও বাজে কথা চর্চা করা,অপ্রয়োজনীয় কাজ করা,অনর্থক গল্প করা, মোবাইলে গেম খেলা, ফেসবুকে চ্যাট করা ইত্যাদি। (রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪৮-৪৪৯, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১৩)

Address

Saidpur
Rājshāhi

Telephone

+8801722155658

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Abdul Momin posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Abdul Momin:

Share