Rumi korim

Rumi korim গল্প শুধু গল্পেই হইনা। গল্পেই একসময় সঠিক পথে চলার মনোবল হয়ে দারায়।ফ্যাক্ট, গল্প পড়ার একটা নেশা।

 #অপ্রিয়_তুমি_২  #পর্ব৩ #আফিয়া_আফরোজ_আহি গোধূলি বিকেল এক অনন্ত মায়ার পরশ। সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে, লালচ...
12/05/2025

#অপ্রিয়_তুমি_২
#পর্ব৩
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

গোধূলি বিকেল এক অনন্ত মায়ার পরশ। সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে, লালচে-কমলা আলোয় গোটা দিগন্ত যেন আগুনে রাঙানো। পাখিরা ফিরে চলেছে আপন নীড়ে, ডানার আওয়াজে বাতাসে এক স্নিগ্ধ ছন্দের জন্ম হয়। সেই আলো-ছায়ার খেলা যেন আকাশজোড়া এক কাব্য।

গাছের পাতায় পরেছে সূর্যের শেষ রশ্মি, এতেই যেন সোনার পালকের ছোয়ার ন্যায় না পাতায় সোনালী ঝিলিক দিচ্ছে। দৃষ্টি যেন থেমে যায় এক মুহূর্তের জন্য, এই মোহময় সময়টাকে হৃদয়ে ধরে রাখতে। বাতাসে হালকা শীতল পরশ, যেন প্রকৃতি ধীরে ধীরে শান্তির কোলঘরে ঢুকছে।

গোধূলির এই সন্ধিক্ষণ, দিনের আর রাতের মাঝের সময়টা ছাদে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছো উৎসা। একটু আগে তনয়া বেগম তাড়া দিয়ে ছাদে পাঠিয়েছেন কাপড় তোলার জন্য। এতো সুন্দর পরিবেশ দেখে উৎসা কাপড় তোলার কথা বেমালুম ভুলেই গিয়েছে। মত্ত হয়েছে প্রকৃতি বিলাসে।

উৎসা যখন প্রকৃতি বিলাসে মগ্ন তখন পাশের ছাদ থেকে ডেকে উঠলো সিঁথি। প্রথম ডাকে উৎসার ধ্যান ভাঙলো না। দ্বিতীয় বার একটু জোরেই গলা বাড়িয়ে ডাকলো সিঁথি। উৎসা থতমত খেয়ে জবাব দিলো,
"কি! ডাকছো আমায়?"

"তোকে না এক বয়রা পে*ত্নী কে ডাকছি। যে এত কাছ থেকে ডাকার পর ও শুনছে না"

উৎসা কোমরে হাত গুজে বলল,
"আমায় পে*ত্নী বললে? পে*ত্নী হবে তোমার ভাইয়ের বউ। জ*ল্লা*দের বউ পে*ত্নী ভালো মানাবে না বলো?"

সিঁথি একবার উৎসাকে ভালো করে দেখে নিয়ে টিটকিরি মেরে বলল,
"এত সুন্দর পে*ত্নী কে ভাবি হিসেবে পেলে মন্দ হবে না। আমি কিন্তু খুশিই হবো"

"ছিঃ! ছিঃ! কি বলছো? জবান সামলাও মহিলা"

"এমন ভাবে বলছিস কেন? আমার ভাইয়া খারাপ নাকি? মানছি একটু রাগী, ঘাড় ত্যাড়া, তোকে একটু বেশিই ধমক দেয়, শাসন করে তাই বলে এভাবে বলবি?"

"তো কিভাবে বলবো? তোমার ভাই একটু শাসন করে? ঐদিনের থা*প্পড় এর কথা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আমার বাবা-মা, ভাই ও এই পর্যন্ত এত জোরে আমায় মা*রেনি। সেখানে তোমার ভাই থা*প্প*ড় দিয়ে আমার সুন্দর গালটাকে লাল বানিয়ে দিয়েছে। আস্ত জ*ল্লা*দ একটা"

"আরে তুই বউ হয়ে গেলে আর মা*রবে না। তখন তুই ভাইয়া কে নাকে দড়ি দিয়ে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা ঘুরাতে পারবি। জানিস না ছেলে মানুষ বউয়ের কাছে ভিজা বেড়াল?"

"আমার অতো কিছু জানার দরকার নেই। আমার তোমার ভাইকে পছন্দ না"

"তাহলে কেমন ছেলে পছন্দ শুনি?"

উৎসা একটু ভাবুক হলো। ভাবুক ভঙ্গিতে গালে হাত রেখে বলল,
"ছেলেটাকে লম্বা হতে হবে, সুন্দর হতে হবে যেন আমি ক্রাশ নামক বাঁশ খেতে পারি ঘন্টায় ঘন্টায়, রাগী হবে না, মারামারি করবে না, একদম ভদ্র হতে হবে, আমায় বকা দিবে না, আদর করবে। সব চেয়ে বড় কথা আমায় অনেক অনেক ভালোবাসবে"

সিঁথি গালে হাত দিয়ে এই মেয়ের ফ্যান্টাসি শুনছে। অতঃপর উৎসাকে ইশারায় কাছে ডাকলো। উৎসা কাছে আসলে ফিসফিস করে বলল,
"আমার ভাইকে বিয়ে কর দেখবি বিয়ের পর ভাইয়া বকা কম আদর বেশি করবে। আর অন্নেক অন্নেক ভালোবাসবে যা তুই কল্পনা ও করতে পারবি না"

"আ*স্তা*গ*ফি*রু*ল্লা*হ, মুখের ভাষা সংযত করো মহিলা"

"ভালো কথা বললাম তো কানেই নিলি না"

"তোমার ভালো কথার গুষ্টি কিলাই"

সিঁথি ভেংচি কেটে বলল,
"এই জন্যই বলে, কারো ভালো করতে নেই"

একটু থেমে ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,
"বউ তো তুই আমার ভাইয়েরই হবি সেটা হোক ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়"

উৎসা স্পষ্ট শুনতে পেল না কথাটা। জিজ্ঞেস করলো,
"কিছু বললে?"

সিঁথি নিজেকে স্বাভাবিক করলো। অতঃপর বলল,
"বললাম আমাদের বাড়ি আয়। কতদিন হলো আমাদের বাড়িতে পা ও রাখিস না। আম্মু তোকে আসতে বলেছে। তোর জন্য নাকি স্পেশাল কি বানিয়েছে"

উৎসা মনে পড়ে গেল সেই দিনের কাহিনী। মেহরাবের শরবতের গ্লাসে এক গাদা মরিচ এর লবন মিশিয়েস ছিল। মেহরাব ওকে হাতের কাছে পেলে কি করবে আল্লাহ মালুম। উৎসা মনে মনে বলল,
"সাধে কি যাই না আমি? তোমার ওই জ*ল্লা*দ ভাই হাতের কাছে পেলে আমায় ভর্তা বানাবে সেই ভয়েই তো যাচ্ছি না"

মুখে বলল,
"যাবোনি অন্য সময়"

সিঁথি সন্দীহান নজরে উৎসার দিকে তাকিয়ে বলল,
"বাই এনি চান্স তুই কি ছোটো ভাইয়ার ভয়ে আসতে চাইছিস না?"

উৎসা ধরা পড়ে যাওয়া চোরের ন্যায় দৃষ্টি নামিয়ে বলল,
"এমন কিছুই না"

"কেমন কিছু সেটা দেখতেই পাচ্ছি। ভাইয়া বাসায় নেই"

উৎসা ঝট পট বলল,
"তুমি সময় দেখো আমি গুনে গুনে ২ মিনিটের মাঝে আসছি"

বলে এক দৌড় লাগালো উৎসা। সিঁথিও হেসে পা বাড়ালো নিচে যাওয়ার জন্য। পা*গ*ল মেয়েটা নিশ্চই এখনই চলে আসবে।

উৎসা নিচে নামতেই তনয়া বেগমের মুখোমুখি হলো। তনয়া বেগম ওকে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
"কাপড় কোথায়? আর এমন ছুটন্ত ট্রেনের গতিতে কোথায় যাচ্ছিস?"

"মামনিদের বাসায় যাচ্ছি, তোমার কাপড় তুমি তুলে আনো। আমি পারবো না"

বলেই ছুট লাগলো। উৎসা আর মেহরাবদের বাড়ি পাশাপাশি। উজ্জ্বল সাহেব অনেক আগেই এই জায়গাটা কিনে রেখেছিলেন। ওনার পোস্টিং শহরে হওয়ায় ফুল ফ্যামিলি সহ শহরে চলে আসেন। প্রথম কয়েকমাস ভাড়া বাড়িতে থেকে বাড়ি কমপ্লিট করে এখানে শিফট হয়। সেই থেকে উৎসরা এখানে আছে।মেহরাব এর দাদার করা বাড়ি এটা। ওদের পরিবার অনেক আগে থেকেই এখানে থাকতো। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় দুই পরিবারের মাঝে অনেক ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্ক গাঢ় হওয়ার আরো বড় করণ হলো তিয়াস আর মেহরাব। ছেলে দুটোর বন্ধুত্ব পরিবার দুটোকে আরো কাছে এনেছে।

আগে প্রায় বিকেল উৎসা সিঁথির সাথে একসাথে কাটাতো। দুজনের কারোই বোন নেই। তাই সিঁথি, উৎসা দুই বোনের মিলে মিশে থাকে। মেহরাব দেশে ফিরার পর থেকে আর এ বাড়ির ধারে কাছে আসেনি উৎসা। ঐদিন যে কান্ড ঘটিয়েছে মেহরাব জানতে পারলে নিশ্চই ওকে আচ্ছা করে ধোলাই দিবে। সেই ভয়েই যাও আসবে তাও আসেনি। এখন যেহেতু জ*ল্লা*দ টা নেই সেহেতু উৎসা নির্ভয়ে যেতে পারবে। তার চেয়ে বড় কথা ওর মামনি ওর জন্য কষ্ট করে কিছু বানাবে আর ও যাবে না তা কখনো হতে পারে? কখনো না?

উৎসা সদর দরজা পাড়িয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। ডাইনিং রুমে টেবিলে কি যেন সাজিয়ে রাখছে সালেহা বেগম। উৎসা পা টিপে ওনার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। পিছন থেকে জাপ্টে ধরে গদ গদ জিজ্ঞেস করলো,
"কেমন আছো মামনি?"

সালেহা বেগম একটুও চমকালেন না। উল্টো অভিমানি কণ্ঠে বললেন,
"এতো দিনের মামনির কথা মনে পড়লো? ইদানিং তো এ বাড়ির পথ ভুলেই বসেছিস"

"আরে এমন কিছু না। পড়াশোনা নিয়ে একটু ব্যাস্ত ছিলাম তাই"

সালেহা বেগম ঘাড় ঘুরিয়ে এক নজর তাকালো উৎসার দিকে। সন্দীহান কণ্ঠে সুধালো,
"তুই আর পড়াশোনা?"

"এমন ভাবে বলছো যেন আমি পড়তেই বসি না"

"না, তা কেন হবে তুই তো আমার লক্ষী মেয়ে যে কিনা বই বাদে কিছু চোখেই দেখে না"

"মামনি!"

"হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। সিঁথিকে দেখে নিয়ে আয় দেখি। তোকে ডাকতে গিয়ে ও নিজেই হাওয়া হয়ে গেছে দেখছি"

উৎসা দাঁত কেলিয়ে বলল,
"২ মিনিটে যাচ্ছি, ১০ মিনিট পর আপুকে নিয়ে আসছি"

উৎসার কথায় হেসে উঠলেন সালেহা বেগম। উৎসা সিঁড়ি বেয়ে উঠলো। সিঁড়ি পাশের প্রথম রুমটা মেহরাবের। তার পরেরটা সিঁথির। মেহরাবের রুম পার হয়ে যেতে নিয়ে কি মনে করে যেন উঁকি দিলো উৎসা। আর এতেই সর্বনাশ টা হলো যেন। এক জোড়া শক্ত পোক্ত পুরুষালি হাত হ্যাচকা টান দিলো। উৎসা নিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে না পেরে হুরমিড়িয়ে গিয়ে পড়লো সামনের মানুষটার প্রশস্ত বুঁকের ওপর। সেকেন্ডের ব্যাবধানে ছিটকে সরে আসলো মানুষটার বাহু বন্ধন থেকে। ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো মানুষটার দিকে। উৎসার সামনে দাড়িয়ে আছে ওর তথা কথিত জ*ল্লা*দ সাহেব। সদ্য গোসল করে এসেছে বোধ হয়। পরনে টাউজার, খালি গাঁয়ে গলায় টাওয়াল ঝুলানো। বুকে বিন্দু বিন্দু পানির অস্তিত্ব। উৎসা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নীল। এই বেলাজ, জ*ল্লা*দ মার্কা লোকটার কি এই রূপে ওর সামনেই পড়তে হয়? সেইদিনের ঘটনা মনে পড়তেই উৎসা শুকনো ঢোক গিললো। মেহরাব আজ ওর কি অবস্থা করবে কে জানে! ভয়ে পিছিয়ে যেতে নিলো। পিছনে দেওয়াল, যাওয়ার জায়গায় নেই। পাশ থেকে কেটে পরবে সেই ফন্দি আটতেই মেহরাব দুপাশে হাত রেখে আটকে দিলো। ঝুঁকে এলো খানিকটা। অতঃপর গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
"কি সমস্যা?"

উৎসা তোতলানো স্বরে বলল,
"কই? কোনো সমস্যা নাই তো?"

"তাহলে আমার থেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছ কেন? তোমাকে কিছু বলেছি আমি?"

উৎসা দুদিকে মাথা নাড়লো। মেহরাব পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
"বকেছি?"

উৎসা ফের মাথা নাড়ালো। মেহরাব কিছুটা ধমকের সুরে বলল,
"বোবা নাকি? মুখে বলো"

"না"

"মেরেছি?"

"না"

"তাহলে কি সমস্যা?"

"কোনো সমস্যাই না"

"সমস্যা না হলে আমার থেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছ কেন?"

উৎসা মনে মনে বলল,
"লুকিয়ে বেড়াবো না তো কি করবো? বলছে বকেনি আর এদিকে ধমক দিচ্ছে। জ*ল্লা*দ লোক একটা"

মুখে বলল,
"লুকিয়ে বেড়াচ্ছি না তো"

মেহরাব কথা বাড়ালো না। মেয়েটার সাথে কথা বললেই কেন যেন ঝগড়া লেগে যায়। এই মুহূর্তে ঝগড়া করার মুড নেই ওর। তাই বলল,
"নিচে যেয়ে আম্মুকে বলবে আমার জন্য খাবার রেডি করতে"

উৎসা মাথা নাড়িয়ে সোজা নিচে চলে এলো। সোফায় বসে জোরে জোরে শ্বাস নিলো। জ*ল্লা*দ লোকটা এতো কাছে থাকায় শান্তি মতো শ্বাসও নিতে পারে নি। এক প্রকার দম খিচে ছিল। পাশে থেকে কেউ বলে উঠলো,
"কিরে আমার সামনে তো আমার ভাইকে জ*ল্লা*দ, রা*ক্ষ*স আর কতো কিছু বলিস। ভাইয়ার সামনে তোর বলতি বান্ধ হয়ে যায় কেন?"

তারমানে? তারমানে সিঁথি ওদের দুজনকে দেখে নিয়েছে? এমনিতেই দিনে ৩২ বার ওকে মেহরাবের গলায় ঝুলানোর প্ল্যান করে। এখন নিশ্চই ওকে অনেক খোঁচাবে? উৎসা তড়িঘড়ি ওর পাস থেকে উঠে গলা বাড়িয়ে বলল,
"মামনি তোমার ছেলে তার জন্য খাবার রেডি করতে বলেছে"

বলতে বলতে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। এখন এখানে থাকলে সিঁথির ওর লেগ পুল করায় একটুও ছাড় দিবে না।
—————

তপ্ত দুপুরে গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা উৎসার। গাঁ বেয়ে দর দর করে ঘাম বেয়ে পড়ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এই কাঠ ফাটা গরমে গলা শুকিয়ে এসেছে। ঠান্ডা কিছু হলে মন্দ হয় না। উৎসা আর তানজিলা কলেজ থেকে বেরিয়ে দুটো ক্যান কিনে খেতে খেতে সামনের দিকে আগাতে নিলে পিছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠলো। পিছনে ঘুরে দেখলো হাসি মুখে রিয়াদ ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। রিয়াদ ওদের সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,
"বাড়ি চলে যাচ্ছ?"

পাশ থেকে তানজিলা ভেংচি কেটে বলল,
"আশেপাশে আপনার শশুর বাড়ি আছে নাকি যে সেখানে যাবো?"

রিয়াদ মাথা চুলকে বলল,
"আমি সেটা বলিনি তো"

"তাহলে কলেজ ছুটি হওয়ার পর নিশ্চই বাড়িই যাবো"

রিয়াদ আমতা আমতা করে বলল,
"আসলে আমি তোমাদের ট্রিট দিতে চাচ্ছিলাম"

উৎসা কিছু বলার কাছে তানজিলা বলে উঠলো,
"কেন? আপনার বিয়ে নাকি?"

"আরে না। গতকাল আমার জন্মদিন ছিল, কলেজ অফ থাকায় কাউকেই ট্রিট দিতে পারিনি। তাই ভাবলেন আজকে ট্রিট দেই। কি খাবে তোমরা?"

উৎসা লাফ দিয়ে বলে উঠলো,
"আইসক্রিম"

রিয়াদ হেসে বলল,
"তাহলে চলো আইসক্রিম পার্লারে যাই"

উৎসা ওর সাথে পা বাড়ালো। তানজিলা এক রাশ বিরক্তি নিয়ে চলল। ওর কেন যেন রিয়াদ ছেলেটাকে ভালো লাগে না। দেখলেই ইচ্ছে করে এর মাথায় ইট ছুড়ে মারতে। আইসক্রিম খেতে খেতে রাস্তা দিয়ে হাটছে উৎসা, রিয়াদ এর তানজিলা। উৎসা মাঝে দুপাশে দুজন। উৎসা হেসে হেসে কথা বলছে রিয়াদের সাথে।

দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে রাগে জ্বলে উঠলো কেউ। মানবের পুরো শরীরে যেন কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ইচ্ছে করছে কাছে যেয়ে মেয়েটার গেলে ঠাস ঠাস দুটো বসাতে। রাগে শরীর জ্বলে উঠেছে। শরীরের চেয়েও মনের জ্বালা অনেক গুন বেশি। হাত মুষ্ঠী বদ্ধ করে নিজেকে সামলে নিলো। অতঃপর প্রস্থান করার আগে বিড়বিড় করে বলল,
"যত বার বাড়ার বেড়ে নাও পাখি, খুব শীঘ্রই তোমাকে খাঁচায় বন্দি করার ব্যাবস্থা করছি। অতঃপর তুমি আমার, শুধুই আমার"

#চলবে?

 #হামিংবার্ড #পর্ব_৩৭ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়াসন্ধ্যা নেমেছে খান বাড়িতে, আর আজকের পরিবেশ যেন একটু ভিন্ন। উৎসবের আমেজ চারদি...
11/05/2025

#হামিংবার্ড
#পর্ব_৩৭
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

সন্ধ্যা নেমেছে খান বাড়িতে, আর আজকের পরিবেশ যেন একটু ভিন্ন। উৎসবের আমেজ চারদিকে, যদিও বাইরের অতিথি প্রায় নেই বললেই চলে। এসেছে কেবল মেহরাব আর অরার বাবার বাড়ির লোকজন আসার কথা ছিলো। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবেন তারা। নিজেদের মধ্যে এক ঘরোয়া পার্টির আয়োজন করেছে আরিশ।

হলরুমের এক কোণে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে সাবিহা। পরনে তার ছড়িয়ে পড়া সাদা গাউন, যেন রাতের নিঃশব্দতা ছুঁয়ে আসা কোনো শুভ্র মেঘ। খোলা চুলগুলো নরম ঢেউ খেলে পড়েছে কাঁধের ওপর, চোখে একধরনের নির্লিপ্ত ভাব, তবু যেন অনেক না বলা কথা লুকিয়ে আছে দৃষ্টিতে।

রাত পোহালেই চেনা শহর, দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি দিতে জমাতে তাকে। সাবিহার কানাডা যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে আরিশ। এতে অবশ্য তাসলিমা খাতুন খুশিই হয়েছেন। কারণ লাভ-ক্ষতির হিসাবটা তিনি বেশ ভালো বোঝেন। আরিশকে যে কখনোই সাবিহার সাথে জড়ানো যাবে না এটা তিনি বুঝে গেছেন। আরিশ আর পাঁচটা ছেলের মতো নয় যে, অরা চলে গেলেও সাবিহাকে বিয়ে করে নেবে। সে যখন একবার বলেছে সাবিহা কেবল তার কাজিন সুতরাং এটাই শেষ কথা। তাই তাসলিমাও সবকিছু মেনে নিয়েছেন। কানাডা গিয়ে লেখাপড়া করলে সাবিহারই ভালো। ভালো চাকরি করতে পারবে, ভালো পরিবারে বিয়ে হবে। এরচেয়ে বেশি আর কী চাই?

“হেই বিউটি কুইন! কেমন আছো?”

আচমকা মেহরাবের কণ্ঠে চমকে উঠল সাবিহা। বিরক্তি লুকিয়ে কিছুটা অনিচ্ছায় উত্তর দিল,

“ভালো। আপনি?”

“সুন্দরী নারী আশপাশে থাকলে পুরুষ মানুষের মন-মেজাজ সবই ভালো থাকে।”

ভ্রু কুঁচকে তাকাল সাবিহা। সৌন্দর্যের প্রশংসায় সব নারীই যে পুরোপুরি পটে যায় – তা নয়। তবে, সে একেবারে খুশিও হয়নি তেমনটা না। আধাখানা হাসি যেন ঠোঁট ছুঁয়ে গেল সাবিহার ঠোঁটের কোণে।

“ওও, তাই বুঝি ইঞ্জিনিয়ার সাহেব?”

“জি হ্যাঁ, বিউটি কুইন।”

“বয়স তো কম হলো না মশাই, এখন ফ্লার্টিং বাদ দিয়ে বিয়েটা করে ফেলুন।”

“বিয়ে করছে না তো কেউ!”

“কেন?”

“কারণ... আমার এখনও বিয়ের বয়সই হয়নি।”

সাবিহা হেসে ফেলল মৃদুস্বরে। মেহরাবকে সত্যিই একদম একঘেয়ে বলা যায় না, লোকটা জটিল হলেও মজার।

“বেশ ভালো মজা করেন আপনি।”

“তুমিও কিন্তু খুব ভালো কুবুদ্ধি আঁটতে পারো।”

মেহরাবের আকস্মিক মন্তব্যে থমকে গেল সাবিহা। চোখে জ্বলজ্বলে রাগ, গলায় অপমানের তীব্রতা।

“হাউ ডেয়ার ইউ? আপনি কীভাবে বুঝলেন আমি কোনো কুবুদ্ধি করছি?”

“আরে কুল ডাউন, বিউটি কুইন। তুমি জানো, আমিও জানি– আজ তুমি একটা শেষ চেষ্টা করছো, একটা মরণকামড়। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার হলেও, মানুষের মনের দিকটাও বোঝার চেষ্টা করি আমি। আর একটা কথা বলি– তুমি যাই করো না কেন, আরিশ তোমার হবে না। অরা চলে গেলেও না।”

একটু থেমে মেহরাব আবার বলল,

“আমি আরিশকে চিনি, খুব ভালো চিনি। ও নিজেও জানে না, সে অরাকে কতটা গভীরভাবে ভালোবাসে। সুতরাং সাবধান, নিজের ক্ষতি করে বসো না। আজ তুমি যা করতে চাও, তা যদি করো... কাল হয়তো কানাডা নয়, গ্রামের বাড়িতেও ঠাঁই পাবে না।”

মেহরাবের কথায় সত্যিই একটু ঘাবড়ে গেল সাবিহা। ওর কণ্ঠে যেমন ছিল হালকা ঠাট্টা, তেমনি ছিল অদ্ভুত এক সতর্কবার্তা। কথা শেষ করে মেহরাব মুচকি হেসে ধীরে ধীরে ভিড়ের ভেতরে হারিয়ে গেল।

সাবিহা স্থির দাঁড়িয়ে রইল। মনে মনে প্রশ্ন করল নিজেকেই – যদি সত্যিই অরাকে আঘাত করতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ করে ফেলে? যদি সব পথ বন্ধ হয়ে যায় তার জন্য?

আজ যেন মেহরাব তাকে তার অবস্থানটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। সে কি পারবে অজপাড়াগাঁয়ে পড়ে থাকতে? একঘেয়ে, শ্বাসরুদ্ধ করা জীবন? না, তা কখনোই নয়। তার চেয়ে বরং বিদেশের আরামদায়ক, আধুনিক জীবন হাজার গুণে ভালো।

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল সে। তারপর চারপাশে চোখ বুলিয়ে আরিশকে খুঁজতে লাগল। কয়েক কদম সামনে এগোতেই ওর চোখে পড়ল – আরিশ। আলো-আঁধারির মাঝে একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে। সাবিহার চোখ ছলছল করে উঠল। পার্টি শেষ হলে সে আরিশের সঙ্গে কথা বলবে, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের মনটাকে শক্ত করল সে।

দরজার দিকে তাকিয়ে আছে অরা। পরনে তার লাল টুকটুকে গাউন। আরিশ তার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে মেহরাবের সাথে কথা বলছে। অরার মনটা তার বাবার বাড়ির লোকজনের জন্য ছটফট করছে। তামান্না খাবারদাবার রেডি করে ট্রে-তে করে করে নিয়ে আসছে এদিকে। তামান্না একা খাবারদাবার, জুসের ব্যাপার সামলাতে পারবে না বলে জলিলকেও ডাকা হয়েছে আজ। তবে অরা ভুলেও কারো দিকে একবারের পর দ্বিতীয়বার তাকায়নি আজ। লোকটা যথেষ্ট ভালো হয়ে গেছে – পড়াশোনা করতে দেবে বলেছে, বাবার বাড়ির লোকজনকে দেখার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে এতেই খুশি অরা। হ্যাঁ আরিশ একটু পাগলাটে স্বভাবের তবে অতটাও মন্দ না। আরিশের দিকে এসব ভাবছিল অরা। কখন যে আরিশ ওর সামনে এসে দাঁড়াল সেসব টেরই পায়নি সে। হাতে তুড়ি বাজিয়ে বলল আরিশ,

“ কার কথা ভাবছ, হামিংবার্ড? কে আছে তোমার ভাবনায়?”

অরা জানে আরিশ যেকোনো মুহুর্তে রেগে যেতে পারে। এই লোককে শান্ত করতে হবে, মুচকি হাসল অরা।

“ আপনি, আপনার কথা ভাবছি। “

আরিশের বুকটা ধক করে উঠলো। কলিজায় কেমন শান্তি শান্তি অনুভব হতে লাগলো। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল তার। অরার গালে হাত রেখে হাসল সে।

“ কী ভাবছো আমাকে নিয়ে? “

“ সুন্দর লাগছে আপনাকে। “

আরিশ নিজের দিকে তাকাল একবার, তারপর অরার দিকে।

“ থ্যাংক ইউ, জানেমন। তুমি জানো, তোমাকে আজ, আস্ত একটা লাল গোলাপের মতো লাগছে, রেড রোজ! “

“ আর আপনাকে, ব্লাক রোজ! “

অরার ঠোঁটের কোণে হাসি। আরিশ নিজের দিকে তাকাল, তার ফর্সা শরীরের সাথে কালো রঙের পোশাকগুলো সবসময় দারুণ লাগে। আজও তার ব্যতিক্রম লাগছে না৷ আসলেই ব্লাক রোজ!

“ থ্যাংক ইউ, এগেইন। এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? “

দরজার দিকে তাকিয়ে বলল অরা,

“ নয়নারা এখনও এলোনা! “

“ এসে পড়বে। চলো বসবে ততক্ষণ। “

আরিশ অরার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ওর এক কাঁধে হালকা হাত রাখল। তারপর শান্ত ভঙ্গিতে ওকে নিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে গেল একপাশে।

দূর থেকে সব দেখছে সাবিহা। তবে আজ তার চোখে রাগ নেই, ঘৃণাও না। শুধু একটা গভীর যন্ত্রণা জমে আছে দৃষ্টির গভীরে - হারানোর, না-পাওয়া এক অপূর্ণতা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই রোকসানা মল্লিক, সোলাইমান মল্লিক ও নয়না খান বাড়িতে এসে পৌঁছালেন। অরা তাদেরকে দেখে, বসা থেকে উঠে এগিয়ে যেতে শুরু করল। আরিশও ধীরে ধীরে অরার পিছুপিছু যাচ্ছিল। মেয়েটিকে দেখে কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইলেন রোকসানা। লাল গাউনে সজ্জিত অরা যেন এক পরী, হাসিমুখে ছুটে আসছে।

“কেমন আছো, মা? বাবা কেমন আছেন?”

বাবা-মাকে দেখে আনন্দে অরা জড়িয়ে ধরল। রোকসানা মল্লিকের চোখে জল ছিল।

“ভালো আছি মা, তুই কেমন আছিস?”

“ভালো আছি মা।”

সোলাইমান মল্লিক অরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মুচকি হেসে বললেন,

“তুই ভালো থাকলেই আমরা ভালো থাকি।”

অরা হালকা হাসল। আরিশ এগিয়ে গেলো নয়নার দিকে।

“কী খবর নয়না রাণী?”

“এইতো ভালো ভাইয়া, আপনি কেমন আছেন?”

“তোমার আপু সাথে থাকতে খারাপ থাকতে পারি আমি?”

নয়না হেসে উঠল। সোলাইমান মুচকি হেসে বললেন,

“গুড ইভেনিং স্যার।”

আরিশ একটু অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,

“মেয়ের শ্বশুর বাড়ি এসেছেন আজ, নিজের বসের বাড়ি নয়। চলুন বসেন।”

সোলাইমান আরিশের আচরণে একটু বিস্মিত হলেন। ছেলেটা কিছুটা বদলাচ্ছে, ভাবলেন তিনি, এবং মুচকি হাসলেন।

রোকসানা মল্লিক চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে ছিলেন আরিশের দিকে। ছেলেটা সবার সাথে কথা বললেও তার সাথে কিছু বলছিল না। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন তিনি, সব কিছু সময়ের ওপর ছেড়ে দিলেন।

“ঠিক আছে, বাবা।”

সোলাইমান মল্লিক বললেন।

আরিশ অরার দিকে তাকিয়ে বলল,

“উনাদের নিয়ে বসাও। আর তামান্নাকে বলো, সবকিছু দেখতে যেন থাকে।”

“আচ্ছা।”

আরিশ অন্য দিকে চলে গেল। অরা মুচকি হেসে বাবা-মা ও বোনকে নিয়ে অন্য দিকে এগোল।

বাড়িতে ফিরেই তালহা তামান্নাকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। রান্নাঘর, ডাইনিং রুম কোথাও নেই মেয়েটা। গেলো কোথায় ভাবতে ভাবতে সিড়ি হয়ে দোতলার দিকে এগোচ্ছিল সে। এরমধ্যেই সামনে কারো সাথে ধাক্কা লাগাতে থতমত খেয়ে গেল বেচারা।

“ তালহা ভাইয়া, আপনার নজর থাকে কোথায়? “

ভ্রু কুঁচকে ফেলল তামান্না। ধমকে উঠলো তালহা।

“ আবার ভাইয়া? “

“ তো কী কাদের চাচা বলে ডাকবো?”

“ উফ! “

“ কী? “

“ কিছু না। সরো তো, রুমে যাবো। “

“ যাচ্ছেন না কেন? আমি কি আপনার পথ আঁটকে দাঁড়িয়েছি না-কি? “

অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তালহা। মেয়েটা ইচ্ছে করে এমন করছে কেন? তালহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হলরুমের দিকে এগোল তামান্না।

“ আরিশ!”

সাবিহার গলা শুনে পেছনে ফিরে তাকাল আরিশ৷

“ কী?”

“ তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো। “

“ যা কথা বলার বলে দিয়েছি আমি। আগামীকাল সকালের ফ্লাইটে কানাডা যাচ্ছো তুমি। “

আরিশের স্পষ্ট কথা। সাবিহা অনুনয় করে বলল,

“ প্লিজ আরিশ!”

“ ওকে, বলো। শুনছি। “

“ এখন না, রাতে। “

“ ঠিক আছে। পার্টি শেষ হোক, আমি যাবো তোমার কাছে। “

স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল সাবিহা। আরিশের চোখেমুখে গম্ভীরতা।

“ ঠিক আছে। “

আরিশ আর একমুহূর্ত অপেক্ষা না করে সেখান থেকে চলে গেলো। পুরো বিষয়টাই দূর থেকে খেয়াল করেছে অরা। সাবিহার সাথে আরিশের কী কথা হয়েছে সেসব না শুনলেও কথা হয়েছে এটুকু তো নিশ্চিত সে।

দুই পরিবারের সবাই একসাথে দারুণ একটা সন্ধ্যা কাটাল আজ। নয়না থেকে গেছে। রোকসানা মল্লিক ও সোলাইমান মল্লিক যথারীতি নিজেদের বাড়ি চলে গিয়েছেন। রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে যে যার ঘরে গিয়েছে। নয়না এখনও অরার সাথে কথা বলছে। আরিশ এখনও রুমে আসেনি। অরার কেমন জানি অশান্তি লাগছে। সাবিহাকে এক চুল পরিমাণ বিশ্বাস করে না সে। আগামীকাল সকালের আগে যদি কোনো ভুলভাল কাজ করে ফেলে সে!

“ আপু? তোমার কী হয়েছে? কেমন অন্যমনস্ক হয়ে আছো!”

নয়না জিজ্ঞেস করলো। অরার ভাবনার ছেদ ঘটলো তাতে।

“ কই! কিছু হয়নি তো।”

“ তুমি না বললে, ঠিক আছে। কিন্তু কিছু একটা তো হয়েছে। “

ম্লান হাসল অরা। নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আহ্লাদী স্বরে বলল,

“ পাকা বুড়ি একটা! যা ঘুমাতে যা। অনেক রাত হলো। “

“ হ্যাঁ প্রায় বারোটা ছুঁইছুঁই। কিন্তু আরিশ ভাইয়া কোথায়? এখনও রুমে আসেনি! এমনিতে তো সব সময় তোমার সাথে সাথে থাকে। “

ফের অন্যমনস্ক হয়ে গেলো অরা। নয়না বলল,

“ আপু?”

“ পেকে যাচ্ছিস রে। যা ঘুমাতে৷ শুভ রাত্রি। “

হেসে বলল অরা। নয়না বসা থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,

“ শুভ রাত্রি আপু। “

অরা কিছু বলল না। এরমধ্যে তামান্না এলো ঘরে । এত রাতে তামান্নাকে দেখে ভাবুক হয়ে গেলো অরা।

“ আরিশ আমি জানি, তুমি আমার ওপর বিরক্ত। রেগে আছো। আর আমি যা যা করেছি তাতে এটা স্বাভাবিক। “

সাবিহা অনুতপ্ত হয়ে বলল। আরিশ বিরক্ত হচ্ছে।

“ এসব বলার জন্য, কথা বলবে বলেছিলে?”

“ আম সরি আরিশ। আমি সবকিছু জেলাসি থেকে করে ফেলেছি। “

“ জেলাসি? কীসের?”

মাথা নিচু করে ফেলল সাবিহা।

“ আমি তোমাকে ভালোবাসি আরিশ। এজন্য অরাকে তোমার সাথে সহ্য করতে পারি না। “

আরিশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। সাবিহা আরিশের দিকে আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

“ কাউকে ভালোবাসলেই সে-ও যে ভালোবাসবে এই প্রত্যাশা রাখা ভালোবাসা নয়। ভালোবাসো মানে নিজের মতো করে বাসো। প্রেম করতে দুই পক্ষ লাগে কিন্তু ভালোবাসার ক্ষেত্রে নয়। মানুষ আজীবন একা একা ভালোবেসে যেতে পারে। তুমি জানো আমি ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না। যা বললাম সবটা অরাকে দেখে, ওর সাথে থেকে উপলব্ধি করেছি। আমি জানি না ভালোবাসা বিষয়টা আসলে কেমন। কিন্তু তার প্রতি যে ফিল করি সেটাকেই ভালোবাসা ভাবি। তোমার ভালোবাসাকে সম্মান করি আমি। কিন্তু এটা কখনো সম্ভব না সাবিহা। জীবনে ভালোবাসার থেকে ভালো থাকা বেশি জরুরি আমার কাছে। অরা আমাকে ভালোবাসে কি-না জানি না কিন্তু আমি ওর সাথে ভালো আছি। তুমিও ভালো থাকার পথ বেছে নাও। লেখাপড়া করো, নিজের ক্যারিয়ার গুছিয়ে নাও। “

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল সাবিহা।

“ ঠিক আছে। আমি যাবো কানাডা। “

“ গুড গার্ল। অনেক রাত হয়েছে। সবকিছু গুছিয়ে নাও। সকালে দেখা হবে। “

আরিশ এতটুকু বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। পেছনে পড়ে রইলো কেবল সাবিহার ভগ্ন হৃদয় আর সাবিহা নিজে।

“ ঘুমিয়ে গেছো, হামিংবার্ড?”

ঘরে ঢুকে বাতি বন্ধ দেখে অন্ধকারে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো আরিশ। ধীরপায়ে এগিয়ে বাতি জ্বালাতে লাগলল সে।

“ না। “

বিছানায় শুয়ে আছে অরা। চোখে জল টলমল করছে। কীসের জন্য এমন হচ্ছে তা-ও জানে না সে। তখন তামান্না এসে বলল, সাবিহার ঘরে ঢুকেছে আরিশ। অরার অবাক লাগলো কথাটা। কৌতূহলবশত সাবিহার ঘরের দিকে এগোল মেয়েটা। ঘরের বাইরে যখন পৌঁছল তখন, সাবিহা আরিশকে তার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করছিল। ওসব শুনে আর একমুহূর্ত অপেক্ষা করতে পারেনি অরা। চোখে জল নিয়ে সোজা ঘরে এসে বিছানায় বসে পড়েছিল।

“ তাহলে এভাবে শুয়ে আছো কেন?”

আরিশ অরাকে শোয়া থেকে উঠিয়ে বাচ্চাদের মতো কোলে তুলে নিলো। না চাইতেও আরিশের গলা জড়িয়ে ধরল অরা। আরিশ বরাবরের মতো বিনা অনুমতিতে তার ঠোঁটে রাজত্ব করতে লাগলো। অরা চুপ করে রইলো পুরোটা সময়।

“ কী হয়েছে তোমার? “

শুধালো আরিশ। সবসময় অরা রেসপন্স না করলেও একটা ছটফটানি থাকে ওর মধ্যে। কিন্তু আজ একেবারে শান্ত হয়ে গেছে সে। বিষয়টা অদ্ভুত লেগেছে আরিশের।

“ কিছু না। “

“ কী হয়েছে সেটা বলতে বলেছি। বলো। “

কিছুটা ধমকে উঠলো আরিশ। আর পাঁচটা স্বামীর মতো রয়েসয়ে জিজ্ঞেস করা তার স্বভাবের বাইরে। কিন্তু আরিশের ধমকের পরই ঘটলো এক ঘটনা! ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল অরা। চমকাল আরিশ। বিছানায় বসিয়ে দিলো তাকে। দুই গালে হাত রেখে শান্ত স্বরে শুধালো,

“ কান্না করছো কেনো? শরীর খারাপ? কিন্তু আমি তো কিছু করিনি। তাহলে? “

“ আপনি খারাপ! খুব খারাপ মানুষ। আমি আপনার সাথে থাকবো না।”

আরিশের বুকে লাগলো কথাগুলো। চোখে জল চলে এলো। অরা তার সাথে থাকবে না ভাবতেই সবকিছু যেনো অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো। মুহুর্তেই চোখমুখ বদলে গেলো তার। অরারকে পেছন ফিরিয়ে শুইয়ে দুই হাত পিঠে শক্ত করে চেপে ধরল সে। ব্যথা, কষ্টে কান্নার বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকলো অরার।

“ কী বললে তুমি, হামিংবার্ড? আমার সাথে থাকবে না?”

কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো আরিশ। অরার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। যতটা কষ্ট হাতে পাচ্ছে তারচে বেশি কষ্ট হচ্ছে মনে। কেন হচ্ছে তা জানে না সে। সাবিহার সাথে আরিশকে একঘরে, সাবিহার ভালোবাসার কথা শুনে কেন এমন এলোমেলো লাগছে তা বুঝতে পারছে না অরা।

“ আপনি সাবিহা আপুর রুমে কেন গিয়েছিলেন? উনার ভালোবাসার কথা শুনতে? যদি তাই হয় তবে আমাকে জোর করে আঁটকে রেখেছেন কেন? “

রাগ-ক্ষোভ সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে অরার কণ্ঠে। আরিশ ভ্রু উঁচিয়ে মুচকি হাসল। ধীরে ধীরে অরার হাত আলগা করে দিল। অরার এমন আচরণের কারণ এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে আরিশ। সে অরাকে ধীরে ধীরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বুকের ওপর শোয়াল। মাথার তালুতে কিছুটা অবধি চুমু খেল। অরা তার দিকে তাকিয়ে ফোঁপাচ্ছে।

“ সাবিহা কথা বলবে বলেছিল, কী বলবে সেটুকু শুনতে গিয়েছিলাম শুধু। তুমি তো জানোই, সকালে চলে যাবে ও। “

“ তাই বলে আপনাকে ভালোবাসি বলবে?”

“ তুমি নিজেও বলবে না আর কেউ বললেও সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু কেনো বলো তো? “

চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো আরিশ। অরা ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে কেবল। সত্যি তো, এরকম কথাবার্তা কেন বলছে সে? সাবিহা আরিশকে ভালোবাসার কথা বলতেই পারে, কেউ কাউকে ভালোবাসতেই পারে। তাতে অরার কী? সে তো আরিশকে ভালোবাসে না। তবে?

চলবে,

 #বহ্নিশিখা #পার্ট_২৬" আফা, এই নেন আপ্নের লেইগা খাওন পাঠাইছে স্যার। " হাত বাড়িয়ে শিমুর কাছ থেকে খাবারের ব্যাগ নিল মিমো। ...
11/05/2025

#বহ্নিশিখা
#পার্ট_২৬

" আফা, এই নেন আপ্নের লেইগা খাওন পাঠাইছে স্যার। "

হাত বাড়িয়ে শিমুর কাছ থেকে খাবারের ব্যাগ নিল মিমো। ছেলে ঘুমাচ্ছে, এই সুযোগে খেয়ে নেবে।
খাবারের প্যাকেট খুলেই অবাক হয়ে গেল মিমো। সাদা ভাত আর কয়েক রকমের তরকারি! মিমো গুনে দেখল ছোট মাছের আইটেমই আছে পাঁচটা। ওবায়েদ রুশদী মানুষটার ওপর মিমোর ভালোবাসা জন্মেছে। ভদ্রলোক ওদের কত খেয়াল রাখে। আজ শিমুকেও ওদের সাথে খেতে বলল মিমো। অবশ্য প্রতিদিনই খাওয়ার কথা বলে, কিন্তু শিমুই খায়না। মাঝেমধ্যে দুই-একদিন খায়। আজও মিমো ওকে খেতে বাধ্য করল।

***

" চাচা, শুনলাম স্টক এক্সচেঞ্জে আপনার কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়ে গেছে? "

মিমোর গলা শুনে তার দিকে তাকায় ওবায়েদ রুশদী। ম্লান হেসে হাতের ফাইল সেন্টার টেবিলের রেখে উঠে দাঁড়াল সোফা থেকে। আজই প্রথম মিমো তার রুমে এসেছে। মিমোর কাছে এসে ওয়াফিকে কোলে নিল সে। চুমু দিল নাতির কপালে।

" বিষয়টা নিয়ে এতক্ষণ মন খারাপ ছিল। কিন্তু তোমার মুখে ' চাচা ' ডাক শুনে আমার মন ভালো হয়ে গেছে। "

" আমি অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে, চারদিক থেকে এত দুঃসংবাদ শুনেও আপনি সুস্থ আছেন কিভাবে! এই যে আপনার সাথে এতকিছু হচ্ছে, আপনার কি উচিত নয় সাবধান হওয়া? গোপন শত্রুকে খুঁজে বের করা জরুরী। "

" কার জন্য করব এসব? ছেলেটা যদি ভালো হত, তবে আমি ওর জন্য হলেও সবরকম চেষ্টা করতাম। এই যে কঠিন বিপদের সময়ও সে নিজের দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত আছে। তার ব্যবসার যে চুড়ান্ত ক্ষতি হয়েছে, সেটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে শত্রুকে খুঁজতে সময় ব্যয় করছে। আমি ওকে বোঝাতেই পারিনা, আগে ব্যবসা গুছিয়ে, চারদিকে আটঘাট বেঁধে নেমেই তবে শত্রুর পেছনে লাগতে হবে। সে নাকি তার ঐ বুদ্ধি দিয়ে আমাদের দুজনের শত্রুকেই খুঁজে বের করবে! "

" এভাবে বসে থাকবেননা। আপনার ঐ অকর্মা ছেলের কথা না শুনে, নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করেন। আপনার রক্ত ঘামানো টাকা, পরিশ্রম করে দাঁড় করানো ব্যবসা এভাবে শেষ হতে দিয়েননা। আপনাকে বুঝতে হবে, সরষের ভেতরেই ভূত আছে। শুধু বুদ্ধি করে খুঁজে বের করতে হবে তাকে। "

" ওকে খুব বেশি ঘৃণা করো তাইনা? "

" জীবনে যদি কোন একজন ব্যক্তিকে ঘৃণা করি, সেটা হল ফারহান রুশদী। "

" ওকে কি কোনভাবেই ক্ষমা করা যায়না, মিমো? বিশ্বাস কর ও ছোটবেলা থেকেই খারাপ ছিলনা। খুব বাধ্য ছেলে ছিল ও। ছিল মেধাবী। স্কুলে প্রতিটা পরীক্ষায় ফার্স্ট হত। পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক দেখে ওকে পাঁচ বছরে স্কুলে ভর্তি করিয়েছিল ফারজানা। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে ওকে ক্লাস টু তে ভর্তি করায় ফারজানা। কারন কি জানো? ওর ভাইভা নিতে গিয়ে টিচাররা আবিষ্কার করে, ক্লাস টু এর সবগুলো ইংলিশ প্রশ্নের আনসার ও জানে। ওকে লিখতে বলা হলে অনায়াসেই লিখে দেয়। অংকের বেলায়ও তাই। ওকে স্কুলে ভর্তি করানো হল। স্টুডেন্ট হিসেবে প্রতিটা পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাচ্ছে। সেই সাথে নম্রভদ্র স্টুডেন্ট হিসেবে পরিচিতি পেল। কিন্তু পনের বছর বয়স পেরোতে না পেরোতেই ও বদলাতে শুরু করল। ও লেভেলে রেজাল্ট করল মোটামুটি। ততদিনে শিক্ষকরা ওর ওপরে চরম হতাশ হয়েছে। শিক্ষকরা তো আফসোস করে বলত, খাঁটি সোনাকে তারা ধরে রাখতে পারেনি। ধীরে ধীরে নেশা ধরল। একসময় আয়ত্তের বাহিরে চলে গেল। এ লেভেল দেয়া হলোনা। অনেক বুঝিয়েও ওকে ফেরাতে পারিনি নেশার জগৎ থেকে । শুধু একজন মানুষের অভাবে আমার ছেলেটা আজ নষ্ট হয়ে গেছে। "

" ফারজানা কে? কার অভাবে আপনার ছেলে নষ্ট হয়েছে? "

" ফারজানা হুমায়রা। ফারহানের মা। যে ওর জীবন থেকে সকল হাসি, সুখ নিয়ে পালিয়ে গেছে। যার জন্য আমার ছেলে আজকে একজন নিকৃষ্ট মানুষে পরিণত হয়েছে। যার অনুপস্থিতি বদলে দিয়েছে ফারহানকে। "

" কোথায় সে? কেনই বা আপনাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল? "

" ব্যবসার কারনে দেশের বাহিরে থাকতে হত আমাকে বেশিরভাগ সময়ই। ফারহানকে নিয়েই ছিল তার দুনিয়া। কিন্তু একটা সময় সে নাকি আবিষ্কার করে, আমি তাকে সময় দিচ্ছিনা। কোন অভিযোগ করলনা। রাতের আঁধারে ঘুমন্ত ছেলেকে রেখে বাড়ি ছাড়ল৷ অথচ কি জানো, তাকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম? সে আমাকে পেতে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছিল। যখন তার পরিবার বুঝতে পারল, আমাকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করবেনা, তখন আমার সাথে বিয়েতে তারা রাজি হল। সে ছিল মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমাদের মত ধনী পরিবারে মেয়েকে বিয়ে দিতে তারা ভয় পাচ্ছিল। বিয়ের পরের কয়েকটা বছর কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারিনি। ভালোবাসার কমতি ছিলনা আমাদের। ফারহানের জন্মের পর ছেলেই তার পুরো দুনিয়া হয়ে উঠল ৷ অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেল। সময়ের সাথে সাথে হয়তো তার ভালোবাসা ফিঁকে হয়ে এসেছিল। তাই সে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তার মনে যে আমার জন্য ভালোবাসা নেই, সেটা আমি একবারের জন্যও বুঝতে পারিনি। আমাকে জানিয়েও যায়নি কোথায় গেছে। শুধু বিছানার ওপর ডিভোর্স পেপার রেখে গিয়েছিল। আর ছোট্ট একটা চিরকুটে লিখে গিয়েছিল, চলে যাচ্ছি। ভালো থেকো। তারপর থেকে তার কোন খোঁজ পাইনি। সে তার বাবার বাড়িতেও যায়নি। "

ওবায়েদ রুশদীর দিকে তাকিয়ে মিমো বুঝল সে কাঁছে৷ মিমো এগিয়ে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখল। মুছিয়ে দিল তার চোখের পানি।

" তার বাবার বাড়ি কোথায়, চাচা? "

" রাজশাহীর জেলার একটা গ্রামে। "

" আপনার বাবা মানে, জহির উদ্দিন আহমেদ কি ব্যবসার কাজে কখনো কোন গ্রামে গিয়েছিলেন ? মানে সেখানেই কি আন্টির বাবার বাড়ি? "

" তুমি কিভাবে জানলে, আব্বা ব্যবসার কাজে গ্রামে গিয়েছিল! এটা তো কারো জানার কথা নয়! "

" আপনার আম্মাকে গল্প করতে শুনেছি। আর তাতেই মনে হল, হয়তো আপনি আন্টিকে সেখানেই দেখেছিলেন। "

" আব্বার ইচ্ছে ছিল দেশের বিভিন্ন জায়গায় গ্রামের আশেপাশে কিছু হাসপাতাল করবে। আরও কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করবে। সেজন্য নাকি একটা গ্রামে ছিল অনেক দিন৷ সেখানেও একটা হসপিটালও করেছিল। কিন্তু সেটা রাজশাহীতে নয়। পাবনার প্রত্যন্ত এলাকায়। তবে সেটা আমার জন্মেরও আগে। মোট চারটা হসপিটাল করেছিল আব্বা। আর তোমার আন্টিকে আমি ঢাকাতেই দেখেছিলাম। সে ইডেনের ছাত্রী ছিল। "

" সেই হসপিটালগুলো আছে এখনো? "

" আছে। আম্মাই সেখানের সকল দ্বায়িত্ব পালন করে। আব্বাকে ভিষণ ভালোবাসে আম্মা। তাই আব্বার সকল প্রিয় জিনিস নিজের করে নিয়েছে। আব্বার প্রতিষ্ঠিত হসপিটালগুলোর সাথে জড়িত আম্মা। আব্বার কয়েকটা ফার্মহাউস আছে। সেগুলোও আম্মাই দেখে। এছাড়াও আব্বার কিছু ব্যবসার সরাসরি আম্মাই তদারকি করে। আমাদের বাগানে একটা বকুল গাছ আছে। গাছটা আব্বা নিজ হাতে লাগিয়েছিল। প্রতিদিন সকালে গাছের নিচে বসে আব্বা চা খেত। আব্বার মৃত্যুর পর আম্মা বকুল গাছটার যত্ন নেয় নিয়মিত। গাছের একটা ডালও কাটতে দেয়না। "

মিমো নিরবে শুনছে ওবায়েদ রুশদীর কথা। মানুষটার দুঃখ ওকে ছুঁয়ে গেছে। স্ত্রীর কথা বলার সময় তার চোখের কোনে পানি জমেছিল, যেটা মিমোর নজরে পরেছে। তাকে শান্তনা জানানোর ভাষা নেই মিমোর।

হঠাৎই কেঁদে উঠল ওয়াফি। মিমো ওবায়েদ রুশদীর কাছ থেকে ছেলেকে নিয়ে বলল,

" আপনি রেস্ট করুন, চাচা। আপনার নাতির ঘুমানোর সময় হয়েছে। "

" যাও। "

মিমো রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

***

" হেই চ্যাম্প, কেমন আছো? কাঁদছ কেন তুমি? "

পিয়াসকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল মিমো।

" অফিস থেকে আসলেন? "

" হুম। দাও দেখি চ্যাম্পকে। দেখি ওর কান্না থামে কিনা। "

মিমোর সাথে পিয়াসের সম্পর্ক খুব খারাপ বলা চলেনা। পিয়াস নিয়মিত ওয়াফির খোঁজ খবর নেয়। সময় পেলেই ওকে নিয়ে বাগানে হাঁটাহাঁটি করে। মিমোর সাথে টুকটাক গল্প করে।

পিয়াস কিছুক্ষণ ওয়াফিকে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করল। কিন্তু ওর কান্না কমলনা। বাধ্য হয়ে ওকে মিমোর কাছে দিল।

" এত কাঁদছে কেন? ফারহানের মতই দেখছি জিদ্দি হয়েছে! " মুখ ফসকে কথাটা বলেই অপরাধীর মত মিমোর দিকে তাকাল পিয়াস।

পিয়াসের কথা শুনে মিমোর একটু খারাপ লাগলেও পরক্ষণেই মিমো বুঝতে পারল, সন্তান বাবার মত হতেই পারে। এটা অস্বীকার করার কিছুই নেই।

" আপনার চ্যাম্প ঘুমাবে। ওকে ঘুমিয়ে দেই। আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। "

***

রাতের নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে শিষ বাজানোর শব্দ গেলো মিমোর কানে। শব্দের উৎসের দিকে তাকাতেই দেখল দরজায় ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। সে-ই শিষ বাজাচ্ছে। ফারহানকে দেখে রেগে গেল মিমো। তবে ও কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই, কথা বলল ফারহান।

" সুন্দরী, রাত জাগছ কেন? তোমার চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরলে তোমাকে কেমন দেখাবে সেটা পরীক্ষা করার জন্যই কি রাত জাগছ? এত পরীক্ষানিরীক্ষার দরকার নেই। আমিই সার্টিফিকেট দিচ্ছি। তুমি দেখতে শুনতে খুব একটা ভালো নও। তাই চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরলে তোমাকে ইভিল নানের মত লাগবে। অবশ্য ডার্ক সার্কেল ছাড়াই তোমাকে ইভিল নানের মত লাগে। "

ফারহানের স্পর্ধা দেখে অবাক হল মিমো। আজ-অব্দি ওকে কেউ অসুন্দরী বলেনি। এতগুলো বছর ও জেনে এসেছে ও সুন্দরী। কিন্তু এই অসভ্যটা বলছে কি?

" ইভিল নান তোর গ্রাণ্ডমা। আর তুই তার চ্যালা। যা তাকে গিয়ে ইভিল নান বলে ডাক। এখানে এসে আমাকে বিরক্ত করছিস কেন? শয়তানের উচিত তারই প্রজাতির আশেপাশে থাকা। "

" জন্মের সময় তোমার মুখে বোধহয় মধু দেয়নি, সুন্দরী। তাই এমন ঝাল ঝাল কথা ডেলিভারি দাও। আমার আবার ঝাল ভিষণ অপছন্দের। আমি মিষ্টি প্রেমি। খেতে এবং খাওয়াতে ভালোবাসি। খাবে নাকি? আমার মিষ্টি তোমার মুখের মধুর কাজও করে দেবে। "

" তুই গেলি? দূর হ। রাতে তোর মুখ দেখলে সেদিন খারাপ স্বপ্ন দেখি আমি। "

" খারাপ স্বপ্ন? আমাকে নিয়ে? কি করি স্বপ্নের মধ্যে? তোমাকে জড়িয়ে ধরি? চুমু দেই? নাকি আরও গভীরে যাই? সুন্দরী, আজ থেকে প্রতিরাতে আমাকে দেখেই তবে ঘুমাতে যাবে তুমি। তাহলে স্বপ্নে আমার ছোঁয়া পাবে। বাস্তবে কাছে যেতে না পারলেও স্বপ্নে তোমার কাছে যাব, এটা ভাবতেই আমার শরীরে কেমন কেমন হচ্ছে। "

" শয়তানের লিডার, তুই থামবি? আমি পুলিশে ফোন দেব বলে দিলাম? বলব, তুই আমাকে হ্যারাস করছিস। "

" শান্তি শান্তি শান্তি। সব সময় এত যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে থাক কেন বলতো? দুজনের মধ্যে কি সন্ধি হতে পারেনা? "

" সন্ধি তোর সাথে? আমি রাস্তার কুকুরকেও বুকে জড়িয়ে নিতে রাজি আছি, কিন্তু তোকে প্রশ্রয় দেয়ার কথা ভাবতেও ঘৃণা হয়। তোর মত জঘন্য মানুষের সাথে কথা বলতেও ঘৃণা হয় আমার। "

" সব সময় এমন দূরছাই কর কেন? কেউ কি খারাপ হয়ে জন্ম নেয়? নাকি ইচ্ছে করে কেউ খারাপ হয়? আমার জায়গায় থাকলে তুমি বুঝতে কোন যন্ত্রণায় দিন কাটিয়েছি আমি। বাবা-মা দুজনকেই কাছে পেয়েছো তো, তাই কখনো তোমাকে শুনতে হয়নি, তোর মা বেশ্যা। তোর বাবা অক্ষম বলে তাকে ছেড়ে গেছে তোর মা। তোর মা পুরুষ খেকো নারী।
এসব কথা শুনলে একটা ছেলের কেমন হতে পারে বলতে পার? আমি পারলে ' খারাপ ' শব্দটা অভিধান থেকে মুছে দিতাম। বাদ দাও এসব কথা। আমার বাপটা কি ঘুমিয়ে গেছে? দেখি ওর মুখটা। তোমার রাজ্যে তো আবার আমার প্রবেশ নিষেধ। বাহিরে থেকেই ছেলেকে দেখে চোখ জুড়াই। "

এই মুহূর্তে ফারহানকে কিছু বলার সাধ্য নেই মিমোর। ফারহানের কথাগুলো ওর বুকের গহীনে গিয়ে আছড়ে পরেছে। ও নিজের অজান্তেই ঘুমন্ত ছেলের মুখখানা ফারহানের দিকে তুলে ধরল। ফারহান কিছুক্ষণ তৃপ্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকল ছেলের দিকে।

" বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছে আমার ছেলে। ভাগ্যিস ও দেখতে আমার মত হয়েছে। নয়তো বন্ধুরা ওকে মায়ের মত অসুন্দর বলে ক্ষেপাত। "

ফারহানের ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি দেখে রাগে শরীর চিড়বিড় করে উঠল মিমোর। হাতের কাছে থাকা ছেলের বডি লোশনের কৌটা ছুঁড়ে মারল ফারহানের দিকে। ফারহান সেটা এক হাতে লুফে নিল। এরপর আলতোভাবে ছুঁড়ে দিল মিমোর দিকে।

" তোমার হাতের নিশালা বড্ড খারাপ, সুন্দরী। আগে বেশি বেশি প্র্যাকটিস কর, এরপর আমাকে মারতে এস। " ইশারায় মিমোকে চুমু দিয়ে চলে গেল ফারহান।

এতক্ষণ জায়নামাজে বসে ছিলেন মিলি আবেদিন। নামাজ শেষ করে দোয়াদরুদ পাঠ করছিলেন। তিনি ফারহানের বলা প্রতিটা কথাই শুনতে পেলেন। আজ প্রথমবার ফারহানের জন্য দুঃখ হলো তার।

Address

Panchagarh
Rājshāhi

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Rumi korim posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Rumi korim:

Share