21/08/2025
বর্তমানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে “অতিরিক্ত টেস্ট” নিয়ে রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে, বিশেষত বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে। এর কারণ যেমন আছে, তেমনি সমাধানের উপায়ও আছে।
🔎 কেন বিভেদ হচ্ছে?
• অনেক রোগী মনে করেন ডাক্তার কমিশনের জন্য অতিরিক্ত টেস্ট দেন।
• রোগীর আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকে—অনেক টেস্ট একসাথে করতে কষ্ট হয়।
• রোগীরা সবসময় বোঝেন না যে রোগ নির্ণয়ে টেস্ট আসলেই কতটা দরকার।
• কিছু ক্ষেত্রে সত্যিই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টেস্ট দেয়া হয়, যার ফলে সন্দেহ বাড়ে।
✅ পরিত্রাণের উপায়: ডাক্তারের করনীয়
• রোগীকে পরিষ্কার করে বোঝানো
• টেস্ট কেন দরকার, কোন রোগ সন্দেহে দিচ্ছেন, কোন টেস্ট না করলে কী ঝুঁকি হতে পারে—এগুলো সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করতে হবে।
• রোগী যদি বুঝতে পারেন টেস্ট আসলেই চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য, তবে তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন।
• টেস্টের অগ্রাধিকার ঠিক করা
• সব টেস্ট একসাথে না দিয়ে ধাপে ধাপে করা যায় (Stepwise Investigation)।
• জরুরি টেস্ট আগে, বাকি পরে করা যায়।
• বিকল্প ব্যাখ্যা দেয়া রোগীকে , "এই টেস্ট করলে আমরা নিশ্চিত হব, তবে চাইলে প্রথমে এই বেসিক টেস্টগুলোও করতে পারি।"
• এতে রোগী মনে করবেন আমি তার অর্থনৈতিক দিকও ভাবছেন।
• নিজস্ব সততা বজায় রাখা
• কমিশনের কারণে টেস্ট না দেয়া।
• একেবারে প্রয়োজন ছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো যাবে না।
• রোগী শিক্ষিতকরণ (Patient Education)
• অপেক্ষমান কক্ষে ছোট পোস্টার/ভিডিওতে দেখানো যেতে পারে যে টেস্ট রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
• যেমন: ডায়াবেটিস নিশ্চিত করার জন্য রক্ত পরীক্ষা ছাড়া উপায় নেই।
• বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি করা
• রোগীর সাথে আন্তরিক আচরণ, ধৈর্য নিয়ে কথা শোনা, ও প্রয়োজনে সাশ্রয়ী টেস্ট সাজেস্ট করা—এসব করলে রোগী মনে করবেন ডাক্তার সত্যিই তার ভালোর জন্য কাজ করছেন।
👉 মূল কথা হলো:
অতিরিক্ত টেস্ট এড়ানো, রোগীকে বোঝানো, ধাপে ধাপে টেস্ট দেয়া এবং সততার সাথে চিকিৎসা করলে বিভেদ অনেকাংশে কমে যাবে।
বাংলাদেশ সরকার যদি এই সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেয়, তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো কার্যকর হতে পারে:
• Guideline তৈরি করা
• সাধারণ রোগ যেমন জ্বর, সর্দি, ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার ইত্যাদির জন্য স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট লিস্ট তৈরি করা।
• ডাক্তার কোন রোগে কোন টেস্ট প্রাথমিকভাবে দেবেন এবং কোন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টেস্ট দরকার হবে, তা স্পষ্টভাবে গাইডলাইনে উল্লেখ করা।
• সরকারি পর্যায়ে মনিটরিং
• প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর উপর নজরদারি বাড়ানো।কমিশন বাদ দিয়ে টেস্টের মূল্য যা হবে তা বাধ্যতামূলকভাবে ঠিক করে দেওয়া।
• অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে রোগীদের আর্থিক ক্ষতি করা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
• টেস্টের সরকার নির্ধারিত রেট (কমিশন বাদ দিয়ে, তাহলে আর কমিশনেও থাকবে না, কেউ দিবেও না কেউ নিবেও না )
• প্রতিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া এবং সেটি সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা।
• এতে ডাক্তারদের প্রতি রোগীর আস্থা বাড়বে এবং অতিরিক্ত খরচ কমবে।
• রোগীকে শিক্ষা দেওয়া (Patient Education)
• টেস্ট কেন দেয়া হচ্ছে, কিভাবে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করবে, তা সহজভাবে রোগীকে জানানো।
• স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রচার কার্যক্রম চালানো যেতে পারে।
• ডাক্তারের ট্রেনিং ও সাপোর্ট
• চিকিৎসকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা evidence-based medicine ব্যবহার করেন।
• সরকারি পর্যায়ে ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড (EMR) চালু করা, যাতে প্রতিটি টেস্টের যুক্তি সংরক্ষণ থাকে।
• স্বচ্ছতা (Transparency) নিশ্চিত করা
• ডাক্তার যে টেস্ট লিখছেন, তার পাশে “কারণ” উল্লেখ করার সিস্টেম চালু করা যেতে পারে।
• রোগী যেন বুঝতে পারে, কেন এই টেস্ট দরকার।
👉 এভাবে সরকার পদক্ষেপ নিলে রোগী ও ডাক্তারের মধ্যে বিশ্বাস, সম্মান ও স্বচ্ছ সম্পর্ক তৈরি হবে।