15/12/2025
বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) হলো বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়ের দিন, যা ৭১-এর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল, যা বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশে সাহায্য করে, তাই এই দিনটি জাতি শ্রদ্ধা, আনন্দ ও আত্মত্যাগের মহিমায় উদযাপন করে।
ভূমিকা
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৬ ডিসেম্বর এক অবিস্মরণীয় ও গৌরবময় দিন। এই দিনে বাঙালি জাতি দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে এবং বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বিজয় দিবস তাই শুধু একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের আত্মত্যাগ, শৌর্যবীর্য ও বিজয়ের প্রতীক।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও পটভূমি
ভাষার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা: ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) পশ্চিম পাকিস্তানের অংশ হয়। শুরু থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের ওপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে তীব্র করে তোলে।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনা: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী 'অপারেশন সার্চলাইট' নামে গণহত্যা শুরু করলে, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
চূড়ান্ত বিজয়: দীর্ঘ নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, অগণিত মানুষের আত্মত্যাগ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতা ও ভারতের সর্বাত্মক সহযোগিতার ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান < সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
তাৎপর্য
পরাধীনতার অবসান: বিজয় দিবস আমাদের সেই পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি এবং শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চূড়ান্ত বিজয়ের স্মরণ করিয়ে দেয়।
জাতীয়তাবাদ ও সার্বভৌমত্ব: এই দিনটি বাঙালি জাতিকে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে পরিচিতি দেয় এবং আমাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের ভিত্তি মজবুত করে।
শহীদদের স্মরণ: এটি সেইসব বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
শপথের দিন: বিজয় দিবস শুধু আনন্দের নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের দিন।
উদযাপন
প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে নানা আয়োজন করা হয়। ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের সূচনা হয়, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়, এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও কুচকাওয়াজের মাধ্যমে এই দিনটি পালিত হয়।
উপসংহার
বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক মহাকাব্যিক অর্জন। এটি আমাদের যেমন গৌরব ও আত্মবিশ্বাসে উদ্ভাসিত করে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার এবং স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার এক অমোঘ প্রেরণা যোগায়। এই দিনে আমরা সেইসব বীরদের স্মরণ করি, যাদের অসীম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই লাল-সবুজ পতাকা।