Safe Motivation

Safe Motivation motivation

আমরন_চেয়েছি_তোমায়লেখায়_সুরাইয়া_নওশিন 008ফযরের নামায পরে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে সারা। কিছু ভেবে তড়িৎ গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে ...
18/08/2025

আমরন_চেয়েছি_তোমায়
লেখায়_সুরাইয়া_নওশিন

008
ফযরের নামায পরে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে সারা। কিছু ভেবে তড়িৎ গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নামে সারা। শায়লা বেগম ট্রে তে করে বাদাম, ওটস, কিশমিশ আর হালকা গরম লেবুর পানি সাজিয়ে নিয়ে আসছেন রান্না ঘর থেকে। সারাকে এই সময় নিচে দেখে কৌতূহল নিয়ে বলে,,

" কি রে মা তুই এখানে।"

সারা একটু ভেবে বলে,,

" আজ সকাল সকাল কফি খেতে ইচ্ছে করছে আমার। তাই নিতে এলাম। কিন্তু আপনি এসব এতো কিছু নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন"

" আর বলিস না মা। ডাক্তার ছেলে আমার। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ সকাল সকাল এসব খান আর ভোর সকালের কি সব ইয়োগা টিয়োগা করে। বাদ দে এসব,তুই দাঁড়া আমি কফি করে দিচ্ছি তোর রান্না ঘরে কোন কাজ নেই।"

সারার এসব দেখে মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। এ সত্যি ভিন্ন এক গ্রহের মানুষ। যার সাথে তার কোনো স্বভাবই মিলে না। সে তো এই সব স্বাস্থ্য সচেতনতার "স্ব" শব্দ টুকু গুরুত্ব দেয় না। সারা নিজেকে শান্ত করে আর বেশি কিছুক্ষণ ভাবলে সত্যি সে পাগলের খাতায় নিজের নাম লিখাবে। সারা কিছু ভেবে বলে,,

" ঠিক আছে করে দেন। আর ট্রে টা আমাকে দিন। আমি দিয়ে দিবো সানি ভাইকে। আপনি কফি করে দিন, কফি খাওয়াও হবে আপনার ডাক্তার ছেলের ইয়োগা টিয়োগা পাগলামো দেখা যাবে।

শায়লা বেগম হাল্কা শব্দ করে হেঁসে বলে,,

" দাঁড়া দু মিনিট আমি নিয়ে আসছি।"

সারা মনে মনে আওড়ালো,,

" বাপরে এমন স্বাস্থ্য সচেতন ডাক্তার বর কপালে জুটলে পুরো জীবন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন রুটিনের তালিকায় পরে যাবে। আর তুই এই মানুষটার উপর উষ্ঠা খেয়ে ছোঁচার মতো ক্রাশ খেয়েই যাচ্ছিস খেয়েই যাচ্ছিস। "

সারা ভাবনায় মাঝে কফি নিয়ে চলে আসেন শায়লা বেগম। ট্রে তে কফির মগ রেখে বলে,,

" নিয়ে যা"

" ঠিক আছে যাচ্ছি।"

" সানি কিন্তু ছাঁদে"

সারা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে ছাঁদে চলে যায়। ছাঁদে উঁকি দিতেই সারার চোখ কপালে। রসালোর মতো গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে রয়েছে। সাদা রঙের টি শার্ট পরা আর নেভি ব্লু রঙের টাওজার পরে ধ্যান করার মতো বসে রয়েছে সানি। এই ইয়োগা ফেসবুকে, ইউটিউবে অনেক বার চোখে পরেছে তার। তবে এসবে কোনো আগ্রহ নেই তাই গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি কখনও। সারা ফিঁক করে হেঁসে দেয়। ফোন আনলে ছবি তুলতে পারতো। মিস করে ফেললো সে। সারা নিশব্দে হাঁসছে। সানির ভয়ে শব্দ করে হাঁসতেও পারছে না। এসব ইয়োগা তার কাছে পাগলামো লাগে। সারা পা টিপেটিপে হেঁটে গিয়ে সানির সামনে দাঁড়ায়। সানি চোখ বন্ধ করে বলে,,

" ফ্লোরে রেখে দিন । এতো সকাল সকাল এমন সারপ্রাইজ। আপনি আনলেন যে, মা আসলেন না।"

সারা বিস্মিত হয়ে সানির দিকে তাকিয়ে বলে,,

" আমি এসেছি আপনি জানলেন কিভাবে। "

সানি চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবে,

"তোমার আগমন আমার শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরা জানান দেয়।তোমার উপস্থিতি, আমার জীবনের আভাস।তোমার আগমন, হৃদয়ে সুর তোলে।

সানি তার মনের কথা মনে রেখে চোখ মেলে তাকালো। এরপর স্বাভাবিক ন্যায় বলে,,

" মানুষ যখন চোখ বন্ধ করে প্রকৃতির হাওয়া অনুভব করে তখন সেই মুহুর্তে তার শ্রবন শক্তি বৃদ্ধি পায়। আমি তোর পায়ের শব্দ শুনেছি। মা, মামীরা আসলে কিছু না কিছু বলতেন কিন্তু আপনার নিরবতায় বুঝতে পারলাম আপনি এসেছেন।"


" ওহ আচ্ছা।"

" জ্বি ম্যাম। এখানে আপনার আগমনের কারন।"

সারা মেঝেতে ট্রে রেখে সানির মুখোমুখি বসতে বসতে বলে,,

" আপনার কোনো সমস্যা হলো।"

" না না আমার কেন সমস্যা হতে যাবে।"

সানি ট্রে দিকে তাকিয়ে বলে,,

" কফি কার।"

সারা জিহবা কামড় দিয়ে বলে,,

" ঠান্ডা মনে হয় হয়ে গেলো কফিটা। আমার জন্য এনেছিলাম।"

" ভোর সকালে কফি না খেয়ে খালি পেটে হালকা গরম লেবুর পানি নয়তো মধুর শরবত খাবেন। এসব অভ্যাস ত্যাগ করুন। কাল থেকে এসব খাবেন ঠিক আছে।"

সারা বিরবির করে বলে,,

" শুরু হয়ে গেলো ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন লেখা। আমি সত্যি পাগল হয়ে যাবো।"

সারা নিজের মনের কথা মনে হজম করে জোরপূর্বক মুখে হাঁসি এনে বলে,,

" এতো স্বাস্থ্য সচেতন থেকে কি লাভ সানি ভাই। আজ না হয় কাল মানুষকে তো মরতে হবেই। এসব তো আর আয়ু বাড়াতে পারে না।"

" মানুষ মরণশীল এ কথা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকা আর অসুস্থ হয়ে বেঁচে থাকায় পার্থক্য রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য সচেতন থাকলে মানুষ যে অসুস্থ হবে না এমনটা নয়। ভাগ্যে থাকা আর নিজের বয়ে আনায় পার্থক্য রয়েছে ম্যাম।"

সারা বুঝতে পারলো এই মানুষটার সাথে যুক্তিতে পারবে না সে। কিন্তু সানির এমন সব সময় তাকে আপনি বলে সম্মোধন করায় একটু ভাবালো এখন সারাকে। সারা সানির দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,

" আপনি আমাকে আপনি বলে কেন সম্মোধন করছেন?"

সানির সেই স্মিত হাঁসি রেখে বলে,

" কেন ভালো লাগছে না। "

সারা একটু সংকোচ নিয়ে বলে,,

" তেমন কিছু নয়। আপনি তো আগে আমাকে তুই বলে সম্মোধন করতেন।"

" আর আপনি আমাকে কি বলে সম্মোধন করতেন। "

সারা এবার আরও বেশি সংকোচে পরে গেলো। মাথা নিচু করে বলে,,

" আসলে আপনি তো আমার বড় আর অনেক বছর পর কথা বলা তাই আর কি। এই জন্য কি আপনি আমাকে সবসময় আপনি বলে সম্মোধন করবেন।"

" নাহ এই জন্য আমি আপনাকে আপনি বলে সম্মোধন করছি না। সম্মানিত ব্যাক্তি তাই সম্মান করছি।"

সারা অবাক হয়ে সানির দিকে তাকায় বিস্মিত কন্ঠে বলে,,

" মানে।"

" এই বাড়িতে আপনি সবার উপর হুকুমচালান। স্বয়ং রায়খান পর্যন্ত আপনার জেদ সহ্য করেন। তাহলে আপনি কি সম্মানিত ব্যাক্তি নন।"

সারা মুচকি হেঁসে কফির কাপ হাত নেয়। সানি সারার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,,

" আমি তোমাকে সম্মানের সর্বোচ্চ চূড়ায় রাখতে চাই।
যেখানে অসম্মান, দুঃখ তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।"

সানি লেবুর পানি হাতে নিতে নিতে বলে,,

" কাল থেকে ভোর ৫-৩০ টায় ছাদে আসবেন। আর সঙ্গে এসব খাবার নিয়ে আসবেন আমাদের দুজনের জন্য ঠিক আছে। "

সারা বিস্মিত হয়ে বলে,,

" মানে।"

" মানে হলো আপনাকেও ইয়োগা করতে হবে। খুব বেশি নয় ১০ মিনিট ইয়োগাটা করতে হবে। এ ইয়োগা শক্তি বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর সব থেকে ভালো গুন হলো মানসিক চাপ কমায় এবং মনোযোগ বাড়ায় শরীরের পাশাপাশি মনকেও শান্ত করে।"

সারার এবার মাথা ঘুরছে। এসেছে পর্যন্ত জ্ঞ্যান শুনেই যাচ্ছে। এই লোকটার সাথে সময় কাটালে বিনা সার্টিফিকেট এ অর্ধেক ডাক্তার হয়ে যাবে সে। আর কি কি রুটিন ধরিয়ে দেয় কে জানে। এসব ইয়োগা তাকেও করতে হবে, ভাবতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠছে। সারা বির বির করে বলে,,

" আরও খাঁ ডাক্তার বেডার উপর ক্রাশ। প্রেম পত্র লিখবে প্রেসক্রিপশনে আর বলবে দু'জন মিলে ভোর সকালে ইয়োগা করার জন্য আমার তোমাকে চাই। অসহ্য,,,।"

সারার বেশ বিরক্ত লাগছে সানির উপর। মানুষ এতো সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভাব নিয়ে কিভাবে থাকতে পারে। এতো নিয়ম কানুন মেনে কিভাবে চলে। তার দ্বারা এই ভাবে চলা অসম্ভব। সারার খুব জানতে ইচ্ছে করছে এরপর কি করবে। তাই কৌতূহল নিয়ে বলে,,

" এরপর কি করবেন সানি ভাই।"

" জিম করবো। এরপর কলা আর ডিম খাবো। তবে আপনার এসব করতে হবে না। আপনি ইয়োগা আর এসব খাবার টুকু খেলেই চলবে।"

সারা নিজের মাথা ঝাঁকালো কয়েকবার। সানি ঠোঁট চেপে হেঁসে বলে,,

" আপনি কি করবেন এখন।"

" আমি এখন একটু পড়তে বসবো। এরপর একটু ঘুমাবো। তারপর ভার্সিটি আবার বাসায়। বোরিং লাইফ।"

মনমরা হয়ে কথা গুলো শেষ করলো সারা। সানি নিশব্দে হাঁসলো,,,

" বিকালে হাঁটতে পারেন তো। ভালো লাগবে। "

সানির এ কথা সারার খুব পছন্দ হলো। সকালে সে না হয় তার জন্য ইয়োগা করলো আর বিকেলে তার জন্য সে হাটলো। মন্দ হয় না বিষয় টা। ভাবতেই মনে আনন্দ লাগছে। সারা তো আর সরাসরি আবদার করতে পারে না। তাই একটু ঘুরিয়ে বলার চেষ্টা করলো,,

" একা একা হাটতে ভালো লাগে। সেই তো বোরিং এর মতো হয়ে গেলো। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত আমাকে নিয়ে যাওয়ার মতো কারও কি সময় আছে। "

" তা অবশ্য ঠিক। বাসায় সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। সকলেরই কর্ম রয়েছে। তবে মাঝে মাঝে সময় বের করা যায়। আর সময় বের করা উচিত নিজের লোকদের সময় দেওয়া জরুরি। আমি বলে দিবো সাফি ভাই আর আয়াদকে। এছাড়াও আপনি এক কাজ করতে পারেন আপনার বান্ধবী আরহি ওকে নিয়ে এই বাড়ির আশেপাশে হাঁটতে পারেন। দুজন দূরে যাওয়া অবশ্যই যাওয়া যাবে না। এই আশেপাশে হাঁটতে পারেন আপনার বান্ধবী তো ভালো আছে, ভালো সম্পর্ক আপনাদের দুজন হাটলে আর বোরিং লাগবে না। "

সানির মুখে নিজের বান্ধবীর প্রশংসা শুনে বেস্ট ফ্রেন্ডকে সতিন মনে হচ্ছে তার। বিষয়টি হজম করতে পারলো না সারা। মনে মনে বলে,,,

" আমার বান্ধবী ভালো আমি ভালো চোখে পরে না। পরে খুলিতে নজর। এদিকে তার জন্য ইয়োগা করবো আর সে আমার সাথে মাঝে মাঝে বিকেলে হাটতে পারবে না। মন চাচ্ছে বোমা মেরে উড়িয়ে দেই ডাক্তার বেডাকে।"

সারাকে চুপ থাকতে দেখে সানি আবারও বলে,,

" আমি সময় পেলে নিয়ে যাবো ঘুরতে তখন।"

সারা এবার মনের মতো জবাব পেয়েছে। খুশিতে আৎখানা হয়ে গেলো মেয়েটা। হাঁসি মুখে জবাব দেয়,,

" থ্যাংকস। "

সানি ঠোঁট প্রসারিত করে মুচকি হাঁসে। দুজন মিলে আর কিছু সময় গল্প করে চলে যায় যে যার কক্ষে।

~~~~~~~~

সকালে নামায পরে আবারও ঘুমিয়ে পরেছিলো আরহি। ইদানীং ঘুম খুব বেশি পায় (লেখিকার মতো🤭) আরহির। ঘুমেই যেন অজস্র শান্তি লুকিয়ে আছে তার। আড়মোড়া দিয়ে উঠে ফোনটা হাতে নিলো আরহি৷ অনলাইন আসতেই নোটিফিকেশন সাফি মেহতাব খান এক্সেপ্ট ইউর ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট। সকাল সকাল এতো বড় ধাক্কা নিতে কষ্ট হলো। দুম করে উঠে বসলো।এক হাতে চোখ কচলিয়ে নিলো কয়েকবার। কয়েকবার চোখের পলক ফেলে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো। এরপর মেসেঞ্জার এ পর পর ৭ টা মেসেজ। তাও আবারও সাফি মেহতাব খান এর। আরহি এবার বিশাল বড় রকমের ধাক্কা খেলো। ভয়ে ভয়ে মেসেজ সিন করলো সে। ৭ টাই ক্লাসের ভিডিও। আরহি মুখ বাঁকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,

" এনার থেকে এগুলোই আশা করা যায়। এই সারা শা*কচুন্নি কেন যে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে দিলো। ভয়ে তো শান্তিতে অনলাইন এ যেতে পারবো না। পোস্ট ও করতে পারবো না শান্তিতে। এই গুলো ক্লাসের ভিডিও পড়া তো আবার ধরবে না। উফ সকালটাই এতো জঘন্য গেলো বাকি পুরো দিন এখনও পরে আছে।"

আরহি বাধ্য হয়ে মেসেজ দিলো " থ্যাংকস স্যার।"
সৌজন্যতার খাতিরে মেসেজটা দেওয়া। ফোনটা পাশে রেখে বিছানা থেকে উঠে যাবে তখনই মেসেঞ্জারে আবারও শব্দ হলো। আরহি বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিলো আরেকবার। আবারও বড় রকমের ধাক্কা খেলো সাফি মেহতাব খান এর মেসেজ৷ লেখা " ওয়েলকাম।"
আরহি মেসেজ দেখে ভয়ে ভয়ে ফোনটা রেখে দিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে। উঠতে এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে ভার্সিটিতে যেতে হবে তার।

আজও সাফি দুজনকে ভার্সিটিতে নিয়ে এসেছে। কিন্তু গাড়িতে কেউ কথা বলে নি সালাম আদান প্রদান ছাড়া।
সারা আর আরহি আস্তেধীরে দু একটা কথা বললেও সাফি চুপচাপ গাড়িয়ে চালিয়েছে।
ক্যাম্পাসে বসে আছে সারা আর আরহি। আরহি বিরক্ত হয়ে বলে,,

" তোর ভাইকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে আমার এতো বড় সর্বনাশ কেন করলি।"

সারা মিটিমিটি হেঁসে বলে,,

" ফেসবুকে একটা ছেলে একটা মেয়ের সর্বনাশ করতে পারে জানা ছিলো না তো।"

আরহি সারার কথার ইংগিত বুঝতে পেরে চোখ পাকিয়ে সারার দিকে তাকায় আরহি। আরহি এমন মুখ দেখে নিজের হাঁসি আটকিয়ে রাখতে পারে না। হাঁসতে হাঁসতে বলে,,,

" এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তুই তো বাংলা পুরোনো সিনেমার মতো বললি আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না। দোহায় আপনার আমাকে ছেড়ে দিন।"

অভিনয় করে কথা গুলো শেষ করলো সারা। আরহি সজোরে গাট্টা মারে সারার মাথায়। এরপর রাগী স্বরে বলে,,

" তুই আমার বান্ধবী নাকি শত্রু বলতো।"

" আরে এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? ক্লাসের ভিডিও দিয়েছে তো, ওই সব আমাকেও দেয় সিন করে রেখে দেই। ভাইকি দেখতে আসছে কি না আমি পড়ছি। তুই ও রেখে দিবি। ভাই যেমন পড়াশোনায় এক্টিভ তার বোন তেমন ফাঁকিবাজ। মাঝে মাঝে আমাদের এতো অমিল দেখে মনে হয় আমার দুজন ভাই বোন নই। আবার ভাইয়ের ভালোবাসা দেখে মনে হয়, না এ আমার রক্তের ভাই।"

আরহি বিরক্ত স্বরে বলে,,

" আমারও সন্দেহ হয়।"

" সন্দেহ করে লাভ নেই। ইহাই চিরন্তন সত্য। "

হুট করে সারা মন মরা হয়ে বলে,,

" জানিস জানু আজ সকালে কি হয়েছে।"

" না বললে জানবো কিভাবে। ওহ হ্যাঁ তুই তো সানি ভাইয়ের সাথে কথা বলেছিস কি কথা হলো আমাকে বল না শুনি।"

অনেক আগ্রহ নিয়ে কথা গুলো বলে আরহি। সারা মন মরা হয়ে আজ ভোরে ঘটে যাওয়া ঘটনা আরহিকে বলে সারা। আরহি হাঁসতে হাঁসতে গড়িয়ে পরার মতো অবস্থা। আরহি হাঁসতে হাঁসতে পেটে হাত রেখে বলে,,

" নাহ আমার পেট ব্যাথা হয়ে যাবে এবার। এ সকল ইউনিক পিচ তোদের খান বাড়িতে সব হতে হলো।"

" এহ এ শিকদার বাড়ির পিচ।"

" বড় হয়েছে তো খান বাড়িতে। আর সব সময় তোর ভাইয়ের সাথে ঘুরে এমন তো হবেই। তোর ভাইকে গুরু মানে না সে। "

" সব সময় আমার ভাইকে দোষারোপ করবি না তো। আমার ভাই এমন নয়।"

আরহি কিছু ভেবে চটজলদি বলে উঠে,,

" তোর ফোন দে তো। আমার ফোনে এমবি নেই।"

সারা আরহির হাতে ফোন দিতেই আরহি অনেক আগ্রহ নিয়ে ফেসবুকে যায়। এরপর সানি মেহরাজ শিকদার নাম দিয়ে সার্স দেয় আরহি। মুহুর্তে প্রথম সারিতেই ভেসে উঠে সানির ফর্মাল ড্রেস পরা প্রোফাইল। সারা এবার কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে আসে। সানির আইডি দেখে অবাক হয়ে বলে,,

" আরে জানু এতো সানি ভাইয়ের আইডি।"

" হুম এইটার জন্য ফোন হাতে নিলাম।"

সারা মনে মনে খুশি হলো কিন্তু আরহিকে বললো না। এই বুদ্ধি একবারের জন্যও মাথায় আসে নি তার। মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলো আরহিকে। আরহি বিস্মিত হয়ে বলে,,

" দেখ জানু কত ফলোয়ার। অধিকাংশ মেয়ে দেখ।"

সারার এবার ভীষণ রাগ হলো। পরক্ষণেই শান্ত করলো নিজেকে এটা স্বাভাবিক বিষয়। মাথা গরম করলে চলবে না। সানি কভার ফোটো সাদা পাঞ্জাবী পরে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে বুঝা যাচ্ছে কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলো। প্রোফাইল ছবি হাল্কা আকাশী রঙের শার্ট আর পরনে তাদের ডাক্তারের সাদা কোর্ট সোফায় বসে রয়েছে। প্রায় দুই বছর হয়ে গিয়েছে প্রোফাইলের ছবি পরিবর্তন করে নি। এদিকে ছাড়া মাসে দুবার পরিবর্তন করে প্রোফাইলের ছবি। সারা মনে মনে আওড়ালো,,

" পানসে লোক।"

দুজন মিলে পোস্ট দেখছে কিন্তু সব পোস্ট শিক্ষামূলক। অযথা একটা কোনো পোস্ট নেই। আরহি ফোন রেখে দিলো। সারা আর আরহি এক সাথে মাথায় হাত রেখে বলে,,,


" জড়বস্তু"

আরহি কিছুক্ষন পর আবারও কৌতূহল নিয়ে বলে,,

"এদের মাঝে কোনো অনুভূতি নেই। কোন গ্রহ থেকে আগত হয়েছে এই পৃথিবীতে এ দুজন।"

সারা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,

" জানি না,,। তুই এতো টুকু দেখে অবাক হচ্ছিস। সানি ভাইয়ের কথা বলতে পারছি না। কিন্তু আমার ভাইয়ের কান্ড শুনবি। ছেলে মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে সেজে গুজে থাকা মেয়েদের দিকে কিভাবে নির্লজ্জ,বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকে। আর আমার ভাই এই জন্য বিয়ে বাড়িতেই যায় না। বলে বিয়ে বাড়িতে মেয়েদের এসব আনাগোনা, চেঁচামেচি নাকি তার অসহ্য লাগে। একবার বিয়ে বাড়িতে একটা মেয়ে ভাইয়াকে প্রোপজ করেছিলো পরিবারের ভয় দেখিয়ে দশ মিনিট কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রেখে ছিলো। এতো সুন্দর মেকাপ কেঁদে কেঠে নষ্ট করেছিলো মেয়েটা। আমি কত বুঝিয়ে মেয়েটাকে বাঁচিয়েছি। একদিন আমার ঘরে বসে নেইলপালিশ দিচ্ছিলাম ভাইয়া ঘরে ঢুকে বমি করার মতো উপক্রম। কারন সে নেইলপালিশ এর গন্ধ নাকি সহ্য করতে পারে না। পরে সব নেইলপালিশ নিয়ে ডাস্টবিন এ বিনে ফেলে দিয়েছে। আমার সাধের নেইলপালিশ ছিলো সব।"

শেষের লাইনটা কান্না জড়িত কন্ঠে বলে সারা। আরহি নিজের মাথায় হাত রেখে বলে,,

" থাম আমার মাথা ঘুরছে। এখনি পরে যাবো আমি।
আর কিছু বলিস না তুই। এই দুইটাকে মিউজিয়াম রাখা উচিত। "

এদিকে ফাহমিদুল কে আসতে দেখে দুজনে চুপ হয়ে গেলো।

~~~~~~~~~

বিকেলে সানির চেম্বারে এসেছে সাফি আর আয়াদ। আজ প্রথম দিন তাই সুযোগ বের করে এলো হসপিটালে। সানিই আসতে বলেছিলো তাদের। তিন ভাই মিলে কফি খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। আয়াদ সানির দিকে তাকিয়ে বলে,,

" গুরু কথা তো বলেছে। অবশেষে তোমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। এবার আমাদেরও অপেক্ষার প্রহর শেষ করো। খান বাড়িতে একটু বিয়ের সানাই বাজাও। আমরাও আনন্দ করি।"

সানি কফি খেতে খেতে নিশব্দে মুচকি হেঁসে বলে,,

" সব কিছু এতো সহজ নয়। চাইলেই সব কিছু মন মতো কড়া যায় না। যদি এমনটাই হতো তাহলে অপেক্ষা, ধৈর্য্য নামক কোনো শব্দ সৃষ্টি হতো না।"

" কীসের অপেক্ষা। তুমি এটা ভাবছো না তো সারা তোমাকে আদৌ ভালোবাসে কি না। কনফার্ম তোমাকে ভালোবাসে তোমার দিকে সব সময় নজর সারা। তুমি তো বুঝতেই চাও না চোখের ভাষা।"

" মোহ আর মায়া দুটোই অনেক তফাৎ আয়াদ। আর এ তফাৎ বুঝার ক্ষমতা এখনও হয়নি তোর। তুই সারার মতো উড়নচণ্ডী স্বভাবের। আর বড় কথা হলো এসব নিয়ে আমি মোটেই ভাবছি না। "

" তাহলে কি ভাবছো শুনি। তোমার তো ভাবার কোনো কারন দেখি না, মেয়ের বড় ভাই তোমার পাশে রয়েছে। বড় আব্বুর কথা একদম ভেবো না সাফি ভাই দেখে নিবে সবটা।"

সানি কফি খেতে খেতে বলে,,

" বড় ভাই পাশে আছে এ কথা তোকে কে বললো শুনি।"

আয়াদ বড়সড় বিষম খেলো। চোখ বড় বড় করে তাকায় সাফির দিকে,,

" মানে।"

সানি চুপচাপ কফি খাচ্ছে। সাফি অনুরুপ কফি খেতে খেতে বলে,,

" ভালোবাসা দিয়ে কাওকে সুখী করা যায় আমি মানি। তবে মাঝে মাঝে ভালোবাসা দিয়ে কাওকে সুখী করা যায় না। কিছু কিছু অপূর্ণতা কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় সে সুখের মাঝে। আর আমি চাই না আমার বোন সে অপূর্ণতা পাক, সে কাটার আঘাত পাক। আমার বোন এমনি খুব নরম, খুবই আদরে বড় হয়েছে। আমার বোনের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলুক। আমি আমার বোনের গাঁয়ে আজ অবব্ধি হাত তুলি নি। আশা করি আর কেউ তুলবে না। আমি সানি সারার দুজনের ভালো চাই, আমি দুজনেরই বড় ভাই। তাদের ভালো মন্দ অবশ্যই আমাকে দেখতে হবে। আর সে ভালো মন্দের জন্য তাদের মাঝে যদি দাঁড়াতে হয় আমি সাফি মেহতাব খান দাঁড়াবো। তোর বয়স কত আর। আমি দেখেছি মামুনিকে পুড়তে। আমি বড় ভাই হিসেবে কখনও চাইবো না আমার বোন পড়ুক। আমি চাই দুজনে সুখে থাকুক। সানি যদি সবটা ঠিক করতে পারে তবেই আমি আমার বোনকে সানির হাতে তুলে দিবো অন্যথায় আমি হবো বড় বাধা।"

আয়াদ বিস্মিত হয়ে একবার সানির দিকে তাকাচ্ছে আর একবার সাফির দিকে তাকাচ্ছে। দুজনেই খুব স্বাভাবিক ভাবে কফি খেয়ে যাচ্ছে। দুজনের চেহারায় কোনো ভাবান্তর নেই। সাফি কফি খাওয়া শেষ করে আয়াদ এর কাঁধে হাত রেখে বলে,,

" চল আয়াদ।"

আয়াদের কফি ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। অবাক দৃষ্টি এখনও দুজনের দিকে। সাফি আয়াদের থেকে কফির মগ হাতে নিতে ঘোর কাটে আয়াদের। সাফি আবারও বলে,,

" এমন অবাক হওয়ার কিছু নেই। চল এবার,,।"

সাফি উঠে দাঁড়িয়ে সানির কাঁধে হাত রেখে মুচকি হেঁসে বলে,,

" আসি তাহলে।"

" আচ্ছা যাও।"

সাফি সানির কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,,

" আমি জানি তুই পারবি।"

দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসে। আয়াদ অনুরূপ অবাক হয়ে দাঁড়ায়। সাফি পেছনে ঘুরে তাকিয়ে বলে,,

" চল এবার।"

আয়াদ অবাক সাফির পেছনে হাঁটছে। বিস্মিত কন্ঠে বলে,,

" সাফি ভাই তোমার কয়টা রুপ বলো তো।"

" এ রুপ ছাড়া ভিন্ন কোনো রুপ দেখেছিস।"

" তুমি গিরগিটির মতো রঙ পাল্টাও। এতো দিন কি সুন্দর সিনেমার কিউট বড় ভাইয়ের মতো বোনের ভালোবাসা মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে আজকে হুট করে পালটে গিয়ে বোনের ভালোবাসায় ভিলেন হয়ে গেলে কেন?"

সাফি নিশব্দে হেঁসে উঠে,,

" তুই এমনটা ভাবছিস কারন তুই আদৌ আমাকে চিনতে পারিস নি তাই। কিন্তু সানি আমাকে ঠিক চিনে।"

" তোমাকে চেনার উপায় আছে। হুট করে রঙ বদলাও তুমি। কিভাবে সানির ভাইয়ের সামনে ওই গুলো কথা বলে চিন্তায় ফেলে দিলে। এতো দিন পর বেচারা একটু মন থেকে খুশি হয়েছে আর তুমি মাঝখানে রেড সিগনাল কেন দিলে।"

" আমি তাদের সম্পর্কে রেড সিগনাল নাকি গ্রিন সিগনাল সেটা সানি খুব ভালো করে জানে। তোর জানতে হবে না। সানি জানে ওর কি করতে হবে। আর আমি জানি সানি পারবে। একটি মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসা থাকলে, সে পৃথিবীর যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে।"

আয়াদ সাফির দিকে তাকিয়ে বলে,,

" তাহলে তোমার ভালোবাসা কেন জয়ী হলো না।"

মুহূর্তে পা আটকে যায় সাফির। একটু থেমে আবারও হাঁটতে হাঁটতে বলে,,

" আমারই ত্রুটি ছিলো তাই জয়ী হয় নি।"

আয়াদ আর এ বিষয়ে কথা বাড়ালো না। পুরোনো কথা তুলতে চাই নি সে। তবে কথার ফ্লোরে বেড়েই গিয়েছে মুখ থেকে। আয়াদ অনুতপ্ত হয়ে বলে,,

" সরি ভাই।"

সাফি মুচকি হেঁসে আয়াদের কাঁধে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিলো,,

" সরি বলার কিছু নেই এখানে। যা সত্য সেটাই বলেছিস।"

" আমি আসলে ওই ভাবে বলতে চাই নি।"

" আরে পাগল তুই এতো গিলটি ফিল করছিস কেন?আমি বিন্দুমাত্র মন খারাপ করি নি। আমার এসবে বিন্দুমাত্র মন খারাপ হয় না। এসব তুই ভাবিস না তো। বাদ দে এসব কথা। আমি জানি তুই ভাবচ্ছিস সানি মন খারাপ করছে, দুশ্চিন্তা করছে তাই না। সানি আমার কথায় বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তা করছে না। আমি শুধু ওর দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিলাম। সানি যদি মন খারাপ করতো সবার আগে ছুটে আসতো আমার কাছে। বরাবরই সবার আগে সানি আমার কাছেই আসে। এমনকি আমার আদরের বোনকে আঘাত করে কাঁদতে কাঁদতে সবার আগে সানি আমার কাছেই এসেছিলো। যেখানে জানে আমি আমার বোনকে কোন আঘাত করতে দেই না। "

চলবে____

টাকার জন্য নিজের শরীরটাকে বিক্রি করে দিলেন আপনি অদ্রিজা?আপনাকে অন্তত তেমন ভাবিনি আমি ।কিন্তু সুন্দর লালসাগ্রস্থ শরীরের অ...
17/08/2025

টাকার জন্য নিজের শরীরটাকে বিক্রি করে দিলেন আপনি অদ্রিজা?আপনাকে অন্তত তেমন ভাবিনি আমি ।কিন্তু সুন্দর লালসাগ্রস্থ শরীরের অধিকারী রূপবতী নারীকে ভালো ভাবা বোধ হয় উচিত হয়নি আমার।রাইট অদ্রিজা? ওহ, স্যরি স্যরি, মিসেস রক্তিম মাহমুদ!'

অদ্রিজা টলমলে চোখে মুখ তুলে চাইল রক্তিমের দিকে। যে ছেলেটা রোজ একেকটা মেয়ের সাথে টাইম স্পেন্ড করে, যার হাজারটা মেয়ের সাথে ইন্টিমেন্ট রিলেশন, সে ছেলেটা তাকে ভালো ভেবেছিল ভাবতেই তাচ্ছিল্যমাখা হাসল সে।শরীরে জড়িয়ে থাকা চাদরটা আরো ভালোভাবে মুষ্ঠিবদ্ধ করে জড়িয়েই থম মেরে বসল সে।রক্তিমের দিকে ছোটছোট চোখে তাকিয়েই বলে উঠল,

' আপনার কাছে নারীর সংজ্ঞা মানে কি আমার ইতোমধ্যে জানা হয়ে গেছে রক্তিম।গতরাতের আপনার হিংস্রতাই তার জানান দিয়েছে।তাই আপনার চোখে নিজেকে সাধু ভেবে একেবারে খুশির জোয়ারে ভেসে যাব এমনটা ভাববেন নাহ।'

রক্তিম মৃদু হাসার চেষ্টা করল।কাল রাতে ড্রাংক থেকে অদ্রিজার সাথে কি করেছে তা ভেবেই শরীর শিরা উপশিরা কেঁপে উঠল তার।এক নজর অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করল তাকে। ভেজা চুল থেকে টপাটপ পানি গড়াচ্ছে। শরীরে জড়ানো চাদরও বেশখানিকটা ভিজে গিয়ে লেপ্টে পড়েছে শরীরে। শীতের সকালে এই কনকনে ঠান্ডায় ঠোঁটজোড়া ইষৎ কাঁপছে তার।গলার ডানপাশে এখনো লাল টকটকে হয়ে ভাসছে দু দুটো কাঁমড়ের চিহ্ন।রক্তিম ছোট্ট শ্বাস ফেলল।শেষ পর্যন্ত অদ্রিজা?কথাটা মস্তিস্ক কিছুতেই মানতে চাইল নাহ তার।এই পৃথিবীর প্রতিটা মেয়েকে অন্য নজরে দেখে আসলে ও অদ্রিজার প্রতি তার সেই চাহনি আসে না। অদ্রিজার প্রতি আর যায় হোক শ্রদ্ধা, সম্মান কাজ করে তার।আর সেই মেয়েটিকেই কিনা নিজের চাহিদা মেটানোর খোরাক বানাল? চোখজোড়া কয়েক সেকেন্ড বন্ধ রেখেই নিজের ভেতরের অনুশোচনাটাকে ধামাচাপা দিয়ে বাঁকা হাসল সে।বরাবরের মতো নিজেকে হাস্যোজ্জ্বল রেখেই দাঁত কেলিয়ে বলল,

' উহ!রেগে যাচ্ছেন আপনি?আমি কিন্তু আপনাকে কখনো রাগতে দেখিনি।'

অদ্রিজা শান্ত চাহনিতে তাকাল।বুকের ভেতর অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে।হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ায় বিজন্যাসের সব পাওনা, ব্যাংক লোন মেটাতে যখন তার পরিবারের বেহাল দশা তখনই রক্তিমের বাবা রক্তিমকে বিয়ে করার প্রস্তাবটা রেখেছিল।অর্ধেক দেনা পাওনা মিটিয়েই নিজেদের বাড়িঘর বিক্রি করে পথে নেমেছিল অদ্রিজা আর তার পরিবার।অবশেষে রক্তিমের বাবার কথায় টাকার বিনিময়ে এই বিয়েটা করে নেওয়ায় ভালো মনে হয়েছিল তার।যদিও তার চাচাও পরামর্শ দিয়েছিল বিয়েটা করার। তবে রক্তিমের চরিত্র সম্পর্কে তার বাবা কিছুটা লুকিয়ে গেলেও রক্তিম লুকায়নি।প্রথমদিন থেকে বলে এসেছে সে, তাকে বিয়ে করে জীবনটা নষ্ট না করতে।কিন্তু এইছাড়া যে কোন পথ নেই ওর।তিনটে টিউশনি করিয়ে বাবার অর্ধের ঋণ শোধ করা আর নিজের ছোট বোন আর মা কে হাসিখুশি রাখা কোনকালেই সম্ভব নয়।তাই তো রক্তিমের মতোই একটা খারাপ চরিত্রের মানুষকে বিয়ে করতে হলো যে কিনা নারী মাত্রই চেনে নারীর শরীর।আদৌ কি কোনকালে রক্তিম তাকে স্ত্রী হিসেবে সম্মান করবে?কখনো কি মনে জায়গা করতে পারবে?অদ্রিজা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।রক্তিমের নারীদের প্রতি ধারণা, দৃষ্টি, ঘৃণা সবটা জানার পরেও রক্তিমের সাথে এর আগে তার যতবার কথা হয়েছে খুব নম্র, আর শালীনভাবে কথা বলেছে সে ।কখনো এটুকুও অপমান,কিংবা এটুকুও ঘৃণা নিয়ে কথা বলেনি।তবে আজ ঘৃণা হচ্ছে। চরম ঘৃণা হচ্ছে।নিজের শরীরের আনাচে কানাচে রক্তিমের স্পর্শ গুলো মনে করেই চোখ টলমল করল তার।দাঁতে দাঁত চেপে এটাকেই নিয়তি ভেবে নিয়ে চোখ বন্ধ করল সে।ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

' ওটাকে রাগ বলে না মিঃ রক্তিম। ওটা তাচ্ছিল্য ছিল।রাগ সবার উপর হয় না। আপনার উপর তো নয়ই!'

কথাটা বলেই শরীরে জড়ানো চাদরটা নিয়ে উঠে দাঁড়াল সে।ইষৎ কাঁপতে থাকা শরীর নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হতে নিতেই রক্তিম বলে উঠল,

' তাচ্ছিল্য কিংবা রাগ, আই ডোন্ট কেয়ার অদ্রিজা।এন্ড ইউ নো দ্যাট অদ্রিজা, আমি নারীকে কিভাবে জানি, কিভাবে দেখি।বিয়ের একমুহুর্ত আগে পর্যন্ত আমি আপনাকে বুঝিয়েছি রক্তিম মানুষটা কেমন।সে নারী বলতে কেবল নারীর লোভনীয় শরীরটায় চেনে অদ্রিজা।রক্তিমের একেক রাতের সঙ্গী একেক নারী।রক্তিম নরীদের সম্মান করতে জানে না। তাই নারীর রাগ কিংবা তাচ্ছিল্যে আমার কিছুই যায় আসে না অদ্রিজা।আপনি টাকার বিনিময়ে বিয়ে করেছেন। আর প্রতিদিন যে নারীরা আমার সাথে সময় কাঁটায় তারাও টাকার বিনিময়েই সময় কাঁটায়।সো ওদের আমি যে চোখে দেখি আপনাকেও ঠিক সেইভাবেই দেখব।এর থেকে বেশিকিছু আশা রাখবেন না অদ্রিজা।'

অদ্রিজার চোখ বেয়ে টপাটপ পানি গড়িয়ে পড়ল।কত সহজেই ঐসব মেয়েদের সাথে তার তুলনা করল যেসব মেয়েদের টাকার বিনিময়ে কেনা যায়।অথচ জীবনে রক্তিম ছাড়া আর কোন পুরুষকে নিজের শরীরতো দূর হাতও ধরতে দেয় নি সে।হয়তো সৃষ্টিকর্তা তার ভাগ্যে এটাই রেখেছিল ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। হ্যাঁ।টাকার জন্যই তো বিয়েটা করেছে সে।এখন রক্তিমের চাহিদা মেটানোর খোরাকই তো সে।তাই তো গতকাল রাতে নিরবে সবটা সহ্য করেছে সে।কিছু বলেনি।চোখজোড়া বন্ধ করেই বার কয়েক নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠল,

' নারীর শরীর ছাড়া কিছু চেনেন না তাই তো?হ্যাঁ আমার শরীরটা আপনার জন্যই।আপনার সম্পত্তি।বিক্রি করে দিয়েছি আমি আমার শরীর।আমি তাতে কখনো অভিযোগ হানব না মিঃ রক্তিম।কারণ আমি টাকার বিনিময়ে নিজেকে আপনার করে দিয়েছি।এইছাড়া বেশিকিছু আমি এমনিতেও আশা করতাম না।'

রক্তিম ঠোঁট প্রসারিত করে হাসল। প্রখর আত্মসম্মান যার সেই মেয়েটি নিজের পরিবারের সুখের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিল।অদ্ভুত!মেয়েরা এমন ও হয় বুঝি?ঠোঁট বাকিয়েই বলে উঠল,

' টাকার জন্য আজ আমার হয়েছেন।কাল অন্য কারো হয়ে যাবেন নাহ?অবশ্য নারী মাত্রই টাকা! নারীরা টাকা ছাড়া কিছুই চেনে না। এবং আমি জানি, আপনিও একদিন আমার জীবন থেকে বিদায় নেবেন। সেই দিনটা খুব শীঘ্রই হলেই ভালো হয়।'

অদ্রিজা আগের মতোই তাকিয়ে রইল।নিজেকে আজ খুব ছোট মনে হচ্ছে।খুব!রক্তিম প্রতিটা কথায় তাকে এটা বুঝাতে চাইছে সে লোভী।সে টাকার বিনিময়ে বিয়েটা করেছে।সত্যিটা তো তাই।তবুও কেন কষ্ট হচ্ছে? চোখ ভরে পানিরা খেলা করছে কেন তার?মুহুর্তেই চোখজোড়া বন্ধ করে নিল অদ্রিজা। ততক্ষনে পানি গড়িয়ে পড়েছে গাল বেয়ে।রক্তিম সেই দৃশ্য দেখেই বাঁকা হাসল।অনেকটা তাচ্ছিল্য করেই বলল,

' উহ!কান্না করছেন?কেন?আপনি রক্তিম মাহমুদ এর ওয়াইফ হয়েছেন আর এত সহজে কষ্ট ফেলে চলবে অদ্রিজা?আপনি ভাবতেও পারছেন না সামনের দিনগুলো আরো কতোটা ভয়ঙ্কর কষ্ট দিবে আপনাকে।ঠিক কতোটা কষ্ট পাবেন তা ভাবতেও পারছেন না অদ্রিজা!'

অদ্রিজা চোখ মেলে চাইল। ভয়ার্ত চাহনিতে রক্তিমের দিকে তাকাতেই রক্তিম বাঁকা হাসল।তার মুখে ফুঁ দিয়ে কপালের ছোট চুলগুলো উড়িয়ে দিয়েই আবারও বলল,

' মেয়েদের চোখের পানি নাকি পুরুষদের সহ্য হয় না।কিন্তু ইউ নো হোয়াট?আমার আনন্দ হচ্ছে আপনার চোখের পানি দেখে।'

অদ্রিজা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

' তবে আমারও তো দায়িত্ব আপনার আনন্দের খোরাক হওয়া!আপনার স্ত্রী হিসেবে সেই দায়িত্বটা পালন করা তো আমার কর্তব্য।'

রক্তিম এবার হু হা করে হেসে উঠল।অদ্রিজার থেকে দুই পা পিঁছিয়ে বলল,

' স্বামী-স্ত্রী এসব সম্পর্কে আমি বিশ্বাসী নাহ।কখনোই বিশ্বাসী ছিলাম না।তাই প্লিজ কখনো আমার স্ত্রী হিসেবে নিজেকে সম্বোধন করবেন না অদ্রিজা।'

কথাটা বলে আর এক সেকেন্ডও দাঁড়াল না রক্তিম। জোর কদমে পা ফেলে দ্রুতই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আর অদ্রিজা তার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইল।নারীর প্রতি তার এই ঘৃণার কারণ খুঁজে না পেয়ে হতাশ হলো সে।সাথে নিজের প্রতি জম্মাল একরাশ ক্রোধ আর রাগ।


দিহান ক্লাসের সবগুলো নোটস নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে লাগল। পেছন থেকে নেহা শতবার ডাকলেও কোন জবাব দিল না সে। কোকড়ানো চুল, চোখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা।লম্বা চওড়া শরীরে চেইকের শার্ট।হন্তদন্ত হয়ে তিনরাস্তার মোড়ে এসে স্থির হয়ে দাঁড়াতেই পেঁছন থেকে দৌড়ে আসল নেহা।দিহান মিনমিনে চোখে তাকিয়েই বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে নিল।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

' কি সমস্যা তোর?আমার পিছু পিছু ছুটে চলেছিস কেন তুই?'

নেহা দু পা বাড়িয়েই জোরে জোরে শ্বাস ফেলল।এলেমেলো চুলগুলো কপাল ছুঁয়ে মুখে এলেমেলো হয়ে লেপ্টে আছে।চুলগুলো কানে গুঁজে নিয়েই বলে উঠল,

' তুই বলেছিলি তুই দ্রিজাকে ভালোবাসিস?পুরো ক্লাসে বিশ্রী এক গল্প চলছে।তোর আর দ্রিজার নাকি রিলেশন ছিল।রিলেশনের কথা দ্রিজার পরিবারে জানাজানি হতেই নাকি ওর বিয়ে হয়ে গেল।তাই তো বিয়েতে কাউকে বলেনি।আরো কতোকিছু।এগুলো কতটুকু সত্য দিহান?আমি জানি এসব মিথ্যে।সবটা মিথ্যে।'

দিহান বিরক্তিতে কপাল আরো কিছুটা কুঁচকে নিল।তারপর বলল,

' তো?'

নেহা আবারও বলল,

' তো?তো মানে?দ্রিজার শ্বশুড়বাড়ি বা ওর স্বামী কারোর কানে এই কথাটা গেলে ওরা কি ভাববে জানিস?বুঝতে পারছিস তুই?অথচ আমরা সবাই জানি দ্রিজা কেমন মেয়ে।ও তো তুইছাড়া কোন ছেলের সাথে কোনদিন কথাও বলেনি দিহান।'

দিহান ছোট্ট শ্বাস ফেলল।তারপরই ঠোঁট টেনে হাসল।নেহার দিকে একনজর তাকিয়েই বলল,

' কথাটা দ্রিজা নিজেই বলেছে সবাইকে।ওকেই জিজ্ঞেস করব এসবের মানে কি।আমি ওখানেই যাচ্ছি।বন্ধুমহলে সবার একই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতে বিরক্তি হয়ে গিয়েছি তাই তোর সাথে একটু বিরক্তি নিয়ে কথা বলেছি।এইছাড়া কিছু না।দ্রিজাই যেহেতু বলেছে সেহেতু ওর জন্য তোর এত চিন্তা করা লাগবে না নেহু।'

দিহানের কথাটা শেষ হতে না হতেই নেহা বলে উঠল,

' আমিও যাব দিহান।দ্রিজার থেকে শুনতে চাই আমিও সবটা।'

দিহান ক্লান্ত চাহনিতে তাকাল।মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সে।সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চারটে টিউশনি করে আবার কোচিং করাতে হয়। পুরোটা সময় তার ব্যস্ততার মাধ্যমেই কাঁটে।তবুও মুখে চোখে তার কখনো এটুকু ক্লান্তির চাপ দেখা যায় নি।কিন্তু আজ দেখাচ্ছে, বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে।হয়তো আকস্মিক ভাবে ভালোবাসার মানুষটার অন্য কারো হয়ে যাওয়াে খবর শুনেই।ছোট্ট শ্বাস ফেলেই নেহার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

' আমি একা যেতে চাইছি নেহু।তুই পরে দেখা করে নিস।তাছাড়া আমি সবটা জানলে তোকে অবশ্যই জানাব। '

প্রতিউত্তরে নেহার থেকে কোন উত্তরের প্রত্যাশা না রেখেই কয়েক পা বাড়িয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়াল দিহান।একটা রিক্সা ডেকে নিয়েই রওনা দিল নিজের গন্তব্যে।মনে তার হাজার প্রশ্ন।এভাবে একদিনে অদ্রিজার বিয়ে। এখনও মস্তিষ্ক বিশ্বাস করতে চাইছে না কথাটা।কিছুতেই না।মাথায় যখন একঝাঁক চিন্তা ঠিক তখনই নিজের মোবাইলটা বেঁজে উঠল।দিহান হাতের মোবাইলের দিকে তাকিয়েই দীর্ঘশ্বাস ফেলল।ওপাশের মানুষটা অদ্রিজা জেনেও কলটা রিসভ করতে মন চাইল না তার।কিছুতেই না।অন্যদিন হলে ঘটনাটা অন্যকিছু ঘটত।অদ্রিজার কল পাওয়া মাত্রই কথা বলার তীব্র আকাঙ্খা ফুরাতে কল রিসিভ করে প্রথমেই সেই বলত।কিন্তু আজ মন চাইল না কল ধরতে।অদ্রিজার প্রতি জম্মেছে তার রাশি রাশি অভিমান, ক্ষোভ!যা ক্ষণে ক্ষণে বেড়েই চলেছে।আর বিষিয়ে তুলছে তার মনটাকে।


তখন সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত নয়টা।নিজের মোবাইলে মায়ের পনেরো টা মিসড কল দেখেই মৃদু শ্বাস ফেলল অদ্রিজা।এই বাসায় সে ছাড়াও তিনজন মানুষ।অথচ কেউ কারোর সাথে তেমন কথা বলে না।রক্তিমের বাবাকে অফিসে যাওয়ার আগে রক্তিমের মায়ের সাথে হালকা কথা বলতে দেখেছিল সে।তারপর রক্তিমের বাবা বেরিয়ে যাওয়ার পর ভদ্রমহিলাকে আর কথা বলতে দেখেনি সে।প্রয়োজন ছাড়া বোধ হয় কথাই বলে না ভদ্রমহিলা।অন্যদিকে রক্তিম।তাকেও তার বাবা মায়ের কারোর সাথেই টু শব্দও করতে দেখেনি সে।বাবা মায়ের সামনে তাকে রোবট সমান কোন যন্ত্রই মনে হচ্ছিল অদ্রিজার।অদ্ভুত!এই বাসাটাই অদ্ভুত।বাসার মানুষজনগুলোও বেশ অদ্ভুত।প্রয়োজন ছাড়া এরা একে অপরের সাথে কথা বলে না।আর না অদ্রিজার সাথে কথা বলেছে কেউ।পুরোদিনটা কেমন জানি নিস্তব্ধতায় কেঁটেছে তার।দিনশেষে মায়ের কল দেখে কিছুটা খুশি লাগলেও পরমুহুর্তেই খুশিটা নিভে এল।কল রিসিভড করেই হালকা গলায় বলে উঠল,

' আম্মু স্যরি।খেয়াল করিনি তুমি যে এতগুলো কল দিয়েছো।'

ওপাশ থেকে তার মা বোধ হয় হাসল।তারপরই বলল,

' তুই আর তোর চাচা এমনভাবে হুট করে বিয়েটার সিদ্ধান্ত নিলি কাউকেই তো বলা হলো না।দিহান এসেছিল তোকে খুঁজতে।না পেয়ে চলে গেল।তোর বিয়েতে খুব একটা সন্তুষ্ট নয় বোধ হয় ও।না বলাতে বোধ হয় রাগ করেছে রে।'

অদ্রিজার চোখজোড়া আবারও টলমল করল।বুকের ভেতর উতলিয়ে উঠল অনেকগুলো দীর্ঘশ্বাস।যে মানুষটা তাকে এতটা যত্ন করে রেখে দিয়েছিল একটা সময় নিজের করবে বলে তার অনুভূতির মূল্য সে দিতে পারে নি।আর না রাখতে পেরেছে তার প্রতিজ্ঞা।চারটা বছর পরও দিহান কোনদিন তার হাতটা পর্যন্ত ধরেনি আর বিয়ের রাতে রক্তিম তার সাথে এটুকু কথা তো দূর, অনুমতি না নিয়েই শরীর স্পর্ষ করল।অদ্ভুত!সব পুরুষ বোধ হয় এক হয় না ভেবেই অদ্রিজা টপাটপ পানি ফেলল চোখ থেকে।মৃদু কন্ঠে " ওহ" কথাটা বলেই কল কাঁটল। সামনের আয়নায়টায় নিজেকে পরখ করতে করতেই চুলগুলো হাত দিয়ে শক্ত করে ধরল।গলার কাছে কাঁমড়ের দাগগুলো চুল দিয়েই ঘেরা ছিল।চুল সরাতেই তা স্পষ্ট চোখে পড়তেই হুমড়ে বসে পড়ল সে ফ্লোরে।কাঁদতে কাঁদতেই বলে উঠল,

' আমি তো চাইনি এমন কাউকে।আমি তো চাইনি এমন কাউকে যে কিনা মন বলতে কিছুই বুঝে না।শুধু শরীরই তার কাছে সব।প্রতিদিন কত মেয়ের সাথে সে সময় কাঁটায় আমি জানি না।তবে আমি তো এমন কাউকে চাইনি। তবে আমার সাথেই কেন এমন সৃষ্টিকর্তা?আমার ভাগ্যে এমনই কেউ কেন?কেন আব্বু মারা গেল।কেন? কেন তুমি ছেড়ে গেল এভাবে আমাকে আব্বু?আমি ঐ লোকটাকে কোনদিন ভালোবাসতে পারব না।কোনদিনও নাহ।তবুও তার সাথে আমাকে সংসার করতে হবে।তবুও তার সাথে আমার পুরোটা জীবন জড়িয়ে।'


ওয়াশরুমের দেওয়ালে রক্তিমের রক্তের ছাপ।দেওয়ালে একের পর এক ঘুষি দিতেই ব্যস্ত সে।হাতের রক্ত গড়িয়ে দেওয়াল রাঙ্গা হলো, নিচে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ল তবুও ক্ষান্ত হলো না রক্তিম।নিজের সবটুকু রাগ নিজের হাতের উপর দিয়েই মেটাচ্ছে।চোয়াল শক্ত করেই দাঁতে দাঁত চেপে অস্ফুট স্বরে কিছু একটা বলল সে।যা স্পষ্ট বোধ হলো না অদ্রিজার মস্তিষ্কে। রক্তিমের মায়ের কথা অনুযায়ীই খাবার দিতে এসেছিল সে এই রুমে।রুমে ডুকে রক্তিমের অদ্ভুত এই কাজ দেখেই হতবাক হলো সে। অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ রক্তিমের দিকে।লোকটা কি এমনই?অদ্ভুত?নিজের হাতকে নিজেই এভাবে ক্ষত বিক্ষত করছে, ব্যাথা কি লাগছে না?অদ্রিজা দু পা এগুতে নিতেই মুখের সামনেই ওয়াশরুমের দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে নিল রক্তিম।চিৎকার করে বলে উঠল,

' আপনি আমার রুমে?আমার রুমে কাউকে আমি এলাউ করি না। এটা বলে নি আপনাকে মিস্টার এন্ড মিসেস মাহমুদ?'

অদ্রিজা পা জোড়া স্থির করে দাঁড়িয়ে গেল।এই রুমটা রক্তিমের তার জানা ছিল না।স্বাভাবিক ভাবেই ভেবে বসেছিল গতকালে যে রুমে সে আর রক্তিম ছিল ওটাই রক্তিমের রুম।সে তো কেবল রাতের খাবারটা দিতেই এসেছিল রক্তিমের আম্মুর কথা অনুযায়ী।এই রুমে ডোকা যে নিষেধ আছে তা তো জানত না।ছোট ছোট শ্বাস ফেলেই বলল সে,

' না বলে নি।আমি জানতাম না আপনার এই নিষেধাজ্ঞার কথা।আর এটাও জানতাম না যে এটা আপনার রুম।আমি তো ভেব.......'

অদ্রিজা বাকিটা বলতে পারল না।ভেতর থেকে বেরিয়ে আসল রক্তিম। চুলগুলো ভেজা।টপাটপ পানি গড়াচ্ছে কপালে।ধবধবে সাদা, লম্বা চওড়া শরীরে কোমড়ে একটা তোয়ালে প্যাঁচানো কেবল।চোখজোড়া অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে তার।চোয়াল শক্ত রাখা সেই মুখটা অদ্ভুত ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল। অদ্রিজা সেই মুখচাহনিতে একনজর তাকিয়েই দ্রুত নজর সরাল।চোখ নামিয়ে রক্তিমের হাতের দিকে তাকিয়েই কেঁপে উঠল সে।রক্ত এখনো গড়াচ্ছে।টপাটপ করে পড়ছে ফ্লোরে।সঙ্গে সঙ্গেই অস্ফুট স্বরে বলে উঠল অদ্রিজা,

' আপ্ আপনার হাত।'

রক্তিম বাঁকা হাসল।হাত থেতলে গেছে।রক্তগুলো টলেমলে হাতে খেলা করছে। হাতটা একঝাড়া দিতেই রক্তের ছিটে পড়ল দেওয়ালে। দাঁত কেলিয়ে বলে উঠল,

' কেয়ার নিচ্ছেন নাকি?'

অদ্রিজা মুখ কালো করল।মৃদু স্বরে বলে উঠল,

' আপনার খাবারটা দিতে এসেছিলাম।'

' গুড।টেবিলের উপর রেখে চলে যান।আর শুনুন?আর কখনো এই রুমে ডুকবেন না।সুযোগ পেলেও ডুকবেন না। কখনোই নাহ।মনে থাকবে?'

অদ্রিজা মাথা নাড়াল যার অর্থ তার মনে থাকবে।দু পা পিঁছিয়েই খাবারটা টেবিলে রাখতে রাখতেই পুরো রুমে একনজর চোখ ঘোরাল সে।পুরো রুম এলোমেলো।ফ্লোরটাও জামাকাপড়ের অগোছাল স্তূপে পরিপূর্ণ।জানালার পর্দায় ময়লা জমেছে।জমেছে বিছানা ছাদরটাতেও ময়লা।গভীরভাবে পুরো রুমটা ভালোভাবে দেখতে দেখতেই কল বাঁজল রক্তিমের। রুমে অদ্রিজার উপস্থিতিটা পুরোপুরি ভুলে বসেই সে কল রিসিভড করে বলে উঠল,

' হ্যালো বেইবি।হাউ আর ইউ?'

পুরো বাক্যটা কান পর্যন্ত পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই ঘুরে তাকাল অদ্রিজা। রক্তিমের চাহনিতে তার বিশেষ একটা প্রভাব পড়ল না।সে নির্বিকার ভাবে কথা বলতেই থাকল ওপাশের তার কোন এক প্রেমিকার সাথে। পুরো রুমে যে অদ্রিজা নামের কোন একটি মেয়ে তার কথাগুলো পুরো মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করছে তার বিশেষ একটা পাত্তা দিল না সে।বরং রুমে যে আদৌ কেউ আছে তাই বেমালুম ভুলে বসে প্রেমালাপ শুরু করল।প্রায় বিশ মিনিট পর নিজের কথা শেষ করেই ফোনটা ছুড়ে মারল নোংরা বিছানা ছাদরের একপাশে।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বিরক্তি নিয়ে চিৎকার করে বলল,

' বলেছিলাম না চলে যেতে?কথা কানে যায়নি আপনার?'

অদ্রিজা কেঁপে উঠল।এতক্ষন অন্য একজনের সাথে শান্ত ভঙ্গিতে প্রেমালাপ করা লোকটাই হঠাৎ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল।লাল টকটকে চোখ জোড়ায় কঠোর নজর নিক্ষেপ করতেই ইষৎ কেঁপে উঠল অদ্রিজা।ঠোঁট চেপে কিছু বলার আগেই রক্তিম আবারও চেঁচিয়ে বলে উঠল,

' বলেছিলাম আমার রুমে কাউকে এলাউ করি না। আপনি জোরপূর্বক ডুকে পড়েছেন।আমি আপনাকে তাও কিছু বলিনি।আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তাকে কতটুকু সাফার করতে হতো তা আপনার জানা নেই। '

অদ্রিজা বোকার মতো তাকিয়ে রইল।রক্তিমের হঠাৎ চেঁচানোতেই কিছুটা ভয় পেয়েই ছোট ছোট নিঃশ্বাস ফেলল সে।দুই এক মিনিট নিরব থাকার পরই কথা বলার সাহস পেল সে।তারপর চারদিকে আরেক নজর তাকিয়েই মৃদু কন্ঠে বলে উঠল,

' আপনার হাতটা ব্যান্ডেজ করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন রক্তিম।আমি ফার্স্ট এইড বক্.....'

হৃদয়_নিবাসে_তুই
সূচনা_পর্ব
লেখনীতেঃভূমি

{ কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলত্রুটি মার্জনীয়🖤🥀

Address

Rajshahi
6440

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Safe Motivation posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Safe Motivation:

Share