30/05/2025
মেয়ে নিয়ে একাই বাসায় থাকি,হাজবেন্ড প্রবাসে থাকে। শাশুড়ী মাস দুয়েক হলো গত হয়েছেন।প্রত্যেকদিনের মতো সেদিন ও মা মেয়ে একসাথে ফ্লোরে বসেছিলাম। মেয়ে খেলছিল হঠাৎ করে দরজায় নক,ভাবলাম আমাদের কেউ আসছে।দরজা খুলে দেখি এক সুন্দরী মেয়ে।যেহেতু আমাদের বাসা একেবারে নিচতলায় তাই দারোয়ান একটু হেটলেই যে সে ঢুকে পরে। মহিলাটি আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো, আপনাদের বাসায় কি নয় বছরের নিচে কোন বাচ্চা আছে?
আমি বললাম, আছে।
মেয়েটা তারপর বললো, বাচ্চার মায়ের সাথে একটু কথা বলা যাবে?
আমি বললাম, হ্যা বলেন আমিই বাচ্চার মা।
মহিলা এইবার জিজ্ঞেস করতেছে, বাচ্চারে কি ডায়াপার পড়ান?
কয়টা ডায়াপারের নাম জানেন?
বাচ্চার বাবা কি করে?
বাসায় কে কে থাকি?
আমি এত প্রশ্ন শুনে এইবার বিরক্ত হয়ে বলি, কি দরকার সেটা বলেন?
উনি একটা মিষ্টি করে হাসি দিয়ে বলে, রাগ করছেন কেন ম্যাডাম আমি তো ভালে কথাই বলছি। একটু উত্তর দিন।
এদিকে ওনার হাসি দেখার পর থেকেই আমার মনে হচ্ছে আমি মাথা ঘুরে পরে যাবো। বারবার চোখে ওনার হাসিমুখ ভেসে উঠছে। মনেহচ্ছে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না। মেয়ে তখন ফ্লোরে খেলছে ।
মহিলাটি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলতেছে, আপনার বাচ্চাটা কিউট। দিবেন আম.......
কথাটা শেষ করার আগেই ওই সময় ওই মহিলার একটা ফোন আসে। মহিলা মুখ কালো করে ফোন রিসিভ করতেই আমার হুস আসে। কি মনেকরে টুপ করে দরজাটা লাগিয়ে দিই ঘরের।
ঘরের দরজা লাগাতেই আমি ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ি। মাথায় তিব্র ব্যাথা হতে শুরু করে আর মনে হতে থাকে কেউ বারবার বলছে দরজা খোল, দরজা খোল। এইসবের মধ্যেই তখনি আমার বোনের কল।
ওর কল টা কোন রকম রিসিভ করে কি বলছি জানি না শুধু শুনতে পেয়েছি আপু বলতেছে, আমি আসতেছি।
" বেশ কিছুক্ষণ পর "
মেয়ের কান্নার শব্দে চোখ খুলে আমার। উঠে দেখি মেয়ে কান্না করছে। ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখি ৩.০০ টা বাজে। মহিলাটা এসেছিল ১১:০০ টায়। এতক্ষণ আমি জ্ঞানহারা ছিলাম।
যাকগে এতকিছু ভাবনা বন্ধ করে বাচ্চাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম৷ তারপর ফোন হাতে নিতেই দেখি বিশটা কল। আপু কল দিয়েছে, হাজবেন্ড কল দিয়েছে। কল লিস্ট দেখতে দেখতেই হাজবেন্ডের নাম্বার থেকে ফোন আসে। ফোন ধরতেই উদগ্রীব হয়ে বলে, কি হয়েছে ঋতু? কোথায় গিয়েছিলে? এতবার করে ফোন দিচ্ছি ধরো না কেন?
আমি আমার স্বামী সাদাত কে সবটা বলি। সাদাত ও প্রচন্ড চিন্তিত হয়ে যায় তারপর বলে, আচ্ছা চিন্তা করো না তুমি আমি আপুকে বলছি কিছুদিন যেন তোমার সাথে থেকে যায়।
আমি বলি, বলার দরকার নাই আপু আসতে চাইছে। চলে আসবে যেকোনো সময়।
কথা শেষ করার আগেই আবার দরজায় নক। তবে এইবার আগেরবারের মতো ভুল না করে দরজার সামনে কে চেক করে দরজা খুললাম। দরজার সামনে আপুকে দেখে যেন আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আপুকে সবকিছু খুলে বলতেই আপু ও ভয় পেয়ে গেলো আর বললো, তোর দুলাভাই গেছে কাজে চট্টগ্রাম। আমার একা একা ভালো লাগছিলো না তাই ভাবছিলাম কটাদিন আমার পিও সোনার কাছে এসে থেকে যাই। তাই তোাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তুুু ফোনে তুই কি বলছিলি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না তাই তড়িঘড়ি চলে আসলাম। যাকগে তোরা ভালো আছিস এটাই যথেষ্ট।
আমিও আপুর সাথে সহমত জানালাম। তারপর দাড়োয়ান কে সব জানিয়ে সতর্ক করলাম।
এরপর কেটে গেছে বেশ কটা দিন। আর কোনো সমস্যা হয় নি। দুলাভাই কালকে বাড়ি আসবে তাই আপা আজকে চলে যাবে। আপা রেডি হচ্ছিল তো আমি আপাকে রেখে ছাদে গেছিলাম কাপড় তুলতে। মেয়ে ঘরে ঘুমাচ্ছে। ছাদে গিয়ে এক ভাবির সাথে দেখা হয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে ফিরে আসলাম।
দরজার সামনে এসে দেখি দরজা খোলা। আপার উপর ভীষণ রাগ হলো কতবার করে বলে গেলাম দরজা বন্ধ করতে তাও শুনলো না। কিন্তুু আমার চিন্তা শক্তি সমস্ত লোপ পেলো যখন দেখলাম আপা র*ক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পরে আছে। আমি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে মেয়ের ঘরে গিয়ে দেখি মেয়ে নেই আমি ওইখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
চলবে.......
গল্পঃ হাসির_রহস্য
লেখিকাঃ মিশু
পর্বঃ (১)
[ বিঃদ্রঃ পরের পর্বে শেষ করে দেওয়া হবে ]