গল্প-কবিতার শহর

  • Home
  • গল্প-কবিতার শহর

গল্প-কবিতার শহর ~মন ভাঙার হুইসেলে
বিষন্ন প্রেমের জোয়ারে
এই গল্প-কবিতার-শহরে।~
(12)

গল্প:  “স্বপ্নে ফিরে আসে সে” পর্ব-০৮রাতের শেষ প্রহর। জানালার ফাঁক গলে ফিকে চাঁদের আলো এসে পড়েছে বিছানায়। ঘরের নিস্তব্ধতা...
09/07/2025

গল্প: “স্বপ্নে ফিরে আসে সে”

পর্ব-০৮

রাতের শেষ প্রহর। জানালার ফাঁক গলে ফিকে চাঁদের আলো এসে পড়েছে বিছানায়। ঘরের নিস্তব্ধতা শুধু মাঝে মাঝে ভাঙছে ঘড়ির টিকটিক শব্দে। হঠাৎই এক ঘোর ভাঙা স্বপ্ন থেকে চমকে উঠে বসল নীরা। বুক ধকধক করছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।

স্বপ্নে আবার রেদোয়ান।

ঠিক যেন সেই কলেজ জীবনের ছাদ, চারপাশের ভিড়ে দাঁড়িয়ে আছে সে, চোখে অদ্ভুত এক শূন্যতা। বলছে—“নীরার হাতে হাত রেখে -এখনো ভালোবাসো তো আমায়?”

নীরা রেদোয়ানের হাত শক্ত করে ধরে আছে, সেই একই অনুভূতি, ঠিক যেমন প্রথম যেদিন রেদোয়ানের হাতের স্পর্শে অন্যরকম এক অনুভূতি হয়েছিল নীরার। কিন্তু কোথাও যেন একটা অজানা কষ্ট বুকের ভেতর খচ করে উঠে। ঘুম ভাঙতেই চোখে জল টলমল করছিল। সে বুঝে উঠতে পারে না, কেন এই মানুষটা এখনো ফিরে আসে তার ঘুমে—যখন বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। স্বপ্ন নাকি সারাদিনের চিন্তার প্রতিফলন হিসবে রাতে আসে, তাহলে বাস্তবে তো কখনও নীরা রেদোয়ান কে নিয়ে এক মুহুর্ত ও ভাবে না, বরং তার প্রতি আছে এক রাশ ঘৃণা…

পাশে তাকাতেই দেখে, তানভীর শান্তভাবে ঘুমাচ্ছে। আর দুই পাশে গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে তনু আর তূর্জ। ওদের নিঃশ্বাসে একরাশ প্রশান্তি মিশে আছে। ওদের মুখের দিকে তাকালে সব কিছু ভুলে যায় নীরা। এই দুই সন্তানই তো তার পৃথিবী।

তনু আর তূর্জ এখন স্কুলে যায়, বয়স পাঁচ। ইউনিফর্ম পরা মুখে যখন সকালবেলা স্কুলবাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, তখন নীরার মনে হয় তার সমস্ত ক্লান্তি মুছে যায়। তাদের হাতে ছোট ছোট ব্যাগ, চোখে নতুন কিছু শেখার উচ্ছ্বাস—এসবই তো তার স্বপ্নপূরণের প্রতীক।

তানভীর অফিসে ব্যস্ত থাকলেও বাচ্চাদের সময় দেয়, যদিও নীরার প্রতি তার আচরণে মাঝে মাঝে একরকম উদাসীনতা ধরা পড়ে। কথা বলে কম, ছুঁয়ে দেয় না তেমন, একসাথে চা খাওয়ার অভ্যাসও ফিকে হয়ে গেছে বহুদিন। তবুও এই মানুষটার সঙ্গেই সে কাটিয়ে দিয়েছে দশটি বছর। সুখ-দুঃখ মিলিয়ে একছাদের নিচে চলেছে জীবন।

তবু মাঝে মাঝে যখন রেদোয়ানের স্বপ্ন আসে, নীরার ভেতরে এক অদ্ভুত কষ্ট জন্ম নেয়। শুধু এই প্রশ্নটা যেন তাকে ঘুমাতে দেয় না—“আমি কি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলাম?”

অথচ ভালোবেসেছিল সে নিঃস্বার্থভাবে। নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে, রেদোয়ানকে বিশ্বাস করে ছিল অন্ধভাবে। আর রেদোয়ান তাকে ছেড়ে বেছে নিয়েছিল এক ধনী পরিবারের মেয়েকে, প্রতিষ্ঠা আর সম্মানের মোহে।

নীরা জানে, সে নিজেকে শক্ত করেছে। আজ তার জীবনে রেদোয়ানের কোনো স্থান নেই। সে সবকিছু পেছনে ফেলেছে। কিন্তু মনের গভীরে যে প্রেম ছিল, তা কি একদিনে শেষ হয়ে যায়? যে অভিমান তাকে গেঁথে রেখেছে এতগুলো বছর, সেই অনুভূতিটাই কি শেষ না হওয়া ভালোবাসা?

তূর্জ হঠাৎ পাশ ফিরে মায়ের বুকের দিকে মুখ গুঁজে দেয়। নীরা তার চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। তনুও আধঘুমে মুখ তুলে তাকায়, কেমন যেন নিশ্চিন্ত ভরসা মাখা দৃষ্টিতে।

এই দুই মুখেই সে নিজেকে খুঁজে পায়। এই ছোট ছোট দুটি প্রাণই তার পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তারা আছে বলেই সে আজও দাঁড়িয়ে আছে, ভাঙেনি।

সকালে উঠেই তাদের জন্য নাস্তা বানায় সে, ব্যাগ গুছিয়ে দেয়, চুল বেঁধে দেয়। স্কুলবাসে উঠতে উঠতে তারা দু’জন মায়ের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ে। তখন তার মনে হয়—

যদি এই দুই ভালোবাসা আমার জীবনে না আসতো, তবে আমি আজও হয়তো রেদোয়ানের ভুলে ডুবে থাকতাম।

তানভীরের গলা শুনে সে বাস্তবে ফিরে আসে। বারান্দা থেকে ডেকে ওঠে, “নীরা, চা হবে একটু?”

নীরা হেসে বলে, “হবে, দিচ্ছি এখনই।”

এই ছোট ছোট অভ্যাসই তো সংসারের ভাষা। ভালোবাসা না থাকলেও, কাছাকাছি থাকা—এটাই আজ সবচেয়ে সত্য।

সে একাই জানে, রেদোয়ান যেন মৃত কোনো অনুভূতির মতো শুধু ঘুমে এসে মনে করিয়ে দেয়, ভালোবেসে ধোঁকা খাওয়ার চেয়ে বড় সত্য—ভুল মানুষকে বিশ্বাস করাই জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যথা।

কিন্তু সে এখন জানে, কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সে। আর কার জন্য সে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।



চলবে…..

🪡গল্প-কবিতার শহর

নতুন গল্প পেতে Like & Follow দিয়ে সাথেই থাকুন।
#গল্প_কবিতার_শহর #স্বপ্নে_ফিরে_আসে_সে #সংসার_বনাম_মন #বাংলা_ইমোশনাল_গল্প

গল্প: “২য় বেঞ্চের বন্ধুত্ব”  পর্ব - ১০ঢাকায় ফিরে এসে নীলা খোলা জানালার পাশে বসে।রাতে বাতাসটা যেন আজ একটু বেশি নিরব।হাতে ...
08/07/2025

গল্প: “২য় বেঞ্চের বন্ধুত্ব”
পর্ব - ১০

ঢাকায় ফিরে এসে নীলা খোলা জানালার পাশে বসে।

রাতে বাতাসটা যেন আজ একটু বেশি নিরব।

হাতে মিমির দেওয়া পুরোনো চকোলেটটা এখনও রেখেছে।

সে খায়নি সেটা।

রাখতে চায় স্মৃতি হিসেবে—বন্ধুত্বটা আজও হারায়নি তার কাছে।

ডায়েরির পাতা খুলে, লেখে:

> “মিমি,

আজ তোকে নিয়ে আমার কোনো অভিমান নেই।

শুধু একটা শূন্যতা আছে।

আমরা যারা একসাথে ২য় বেঞ্চে বসতাম,

তারা সবাই কোথাও না কোথাও গিয়ে একা হয়ে গেছি।”

একটা দুপুরের স্মৃতি ভেসে ওঠে মনে—

সেই ক্লাস নাইনের মাঝামাঝি,

তন্ময় হঠাৎ বলেছিল,

— “তোমাদের বন্ধুত্ব দেখে ঈর্ষা হয়, জানো?”

মিমি হেসে বলেছিল,

— “আমরা তো টুইনস! কেউ না বোঝে তো বুঝুক না।”

নীলা তখন মিমির হাত ধরেছিল।

আজ সেই হাত নেই।

তবুও সেই বন্ধনের ছায়া আছে।

রাতের ১১টা ৪৫ মিনিটে হঠাৎ ফোনে আসে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ।

Sender: Mimi

Message:

> “তোর সঙ্গে ট্রেন যাত্রাটা আমার পুরোনো আমি ফিরিয়ে দিয়েছিল, নীলা।

তুই আজও একই আছিস।

আর আমি… হয়তো একটু পরিণত।

জানিস, আজ প্রথমবার ভাবলাম,

হয়তো আমি তোকে ছাড়িনি,

আমি নিজেকেই ফেলে এসেছিলাম পেছনে।

এবার নিজেকে খুঁজে পেয়েছি।

ভালো থাকিস।”

নীলার চোখ জলে ভরে যায়।

সে কোনো রিপ্লাই দেয় না।

শুধু ডায়েরিতে লিখে—

> “ও বলেছে ও নিজেকে ফিরে পেয়েছে।

তাহলে তো বন্ধুত্বটা আজও জীবিত।

শুধু আমাদের বেঞ্চটা ফাঁকা।”

পরদিন সকালে নীলা পুরনো ফটো অ্যালবাম খোলে।

একটা ক্লাস ফটো—সেই ২য় বেঞ্চের।

মিমি পাশে, হাতজোড়া করে হাসছে।

পেছনে তন্ময়, রুদ্র, আর আরিয়ান।

নীলা চোখ বুজে ভাবে:

– তন্ময় ছিল নীরব ভালোবাসা,

– রুদ্র ছিল চোখে না বলা অনুভব,

– আরিয়ান ছিল শেষ মুহূর্তের সত্য।

আর মিমি?

সে ছিল জীবনের সব আবেগের প্রতিচ্ছবি।

বন্ধু, প্রতিদ্বন্দ্বী, বোনের মতো, আবার শত্রুর মতোও।

নীলা এবার চিঠি লেখে—প্রথমবার।

কিন্তু পাঠায় না।

> “মিমি,

আমাদের গল্পটা কেউ বুঝবে না।

সবাই ভাববে, প্রেম বা প্রতিযোগিতা ছিল মূল।

কিন্তু আসল কথাটা জানি শুধু আমরা—

আমরা একে অপরকে হারাতে চাইনি,

শুধু চেয়েছিলাম একে অপরকে ‘পুরোটা’ পেতে।

আর সেই চাওয়ার মাঝে পড়ে গিয়েছিল অনেক কিছু।

আমি তোকে হারাইনি, মিমি।

তুই তো আছিস আমার ভেতরেই।”

চিঠিটা সে গুছিয়ে রাখে তার ডায়েরির শেষ পাতায়।

গল্পটা শেষ হয় না।

বন্ধুত্ব যেমন রোজ রোজ গড়ে ওঠে, আবার সময়ের সঙ্গে রঙ হারায়।

কিন্তু স্মৃতি?

সেটা থেকে যায়।

নীলা জানে, সে আর মিমি হয়তো আগের মতো হবে না।

তবে তারা দুজনেই জীবনের কিছু মুহূর্তে একে অপরের ছায়া হয়ে থাকবে।

দূর থেকে, নিরব ভালোবাসায়।

আর ২য় বেঞ্চ?

সেই বেঞ্চে আজও বসে আছে তাদের গল্প,

তাদের হাসি, দুঃখ, প্রথম প্রপোজাল, চকলেট ভাগ করে খাওয়া...

সব কিছু।

#চলবে.……

📝গল্প-কবিতার শহর

নতুন গল্প পেতে Like & Follow দিয়ে সাথেই থাকুন।
েঞ্চের_বন্ধুত্ব #স্মৃতির_গল্প #গল্প_কবিতার_শহরnTheUnspokenFriendship nFriendship # banglatellingstory

গল্প: “স্বপ্নে ফিরে আসে সে”পর্ব - ০৭বিকেলটা ছিল অদ্ভুত রকমের শান্ত।দআকাশে কোনো মেঘ নেই, আবার রোদও তেমন উজ্জ্বল নয়।ঠিক যে...
07/07/2025

গল্প: “স্বপ্নে ফিরে আসে সে”
পর্ব - ০৭

বিকেলটা ছিল অদ্ভুত রকমের শান্ত।

আকাশে কোনো মেঘ নেই, আবার রোদও তেমন উজ্জ্বল নয়।

ঠিক যেন ঝড়ের আগে ভরা নীরবতা।

নীরা আজ অনেক দিন পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল।

চোখজোড়া ক্লান্ত, তবু ভেতরে কোথাও একটা আলো ফুটে উঠছে—

সে জানে না কেন।

বাচ্চারা ঘুমাচ্ছে।

তানভীর আজ ঢাকায় অফিসিয়াল মিটিংয়ে গেছে— ফিরতে বেশ রাত হবে।

আজ নীরার কাছে সময় আছে,

নিজেকে ভাবার সময়।

---

দুপুর গড়িয়ে বিকেল।

ফ্ল্যাটের দরজায় হালকা একটা টোকা।

নীরা চমকে উঠল।

কেউ কি ডাকলো?

সে সন্তর্পণে দরজার ছিদ্র দিয়ে তাকাল—

একটা ছায়া, মাথায় সাদা টুপি, স্লিম, মাথা নিচু।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল।

নীরা দরজা খুলে বাইরে তাকায়।

কেউ নেই।

শুধু দরজার সামনে রাখা একটা খাম, আর তাতে লেখা—

“আজ হয়তো সামনে দাঁড়াবো না,

কিন্তু তোমার পাশে হাঁটব। এক নিঃশ্বাস দূরে।”

নীরার হাত কাঁপছে।

সে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলে পুরো চিঠিটা।

তার গলায় যেন কেউ বল্গা বেঁধে দিয়েছে— চিৎকার করতে পারে না, কান্না পায় না।

---

ঘরের ভিতরে এসে সোফায় বসে পড়ল সে।

চোখে জল, বুকের মধ্যে দম বন্ধ।

এই মানুষটা এত বছর কীভাবে অপেক্ষা করল?

না বলে, না চেয়ে—

কেবল উপস্থিতি দিয়ে?

সে ডায়েরি খোলে না আজ।

আজ শুধু নিজের হৃদয়টা খুলে বসে।

একটা কাগজ নেয়। প্রথমবার তার পক্ষ থেকে কিছু লেখা হবে—

> “তুমি কি জানো, আমি মাঝেমাঝে মনে করি যদি রিদোয়ান নয়, তুমি পাশে থাকতে, তাহলে হয়তো আমি মানুষটা ভেঙে যেতাম না এতটা।

তুমি ছিলে, অথচ আমি কখনো বুঝিনি।

আমি মাফ চাইছি—

কারণ আমি দেখিনি।

কিন্তু আজ আমি স্বীকার করছি—

আমি জানি, তুমি ছিলে, আছো, থাকবে।”

---
চিঠিটা সে ভাঁজ করে রাখে।

পাঠায় না।

সেই ছায়াকে কখনো চোখে দেখেনি, মুখোমুখি দাঁড়ায়নি—

তবুও তার জন্য লিখে ফেলা এই কথাগুলো যেন নিজের কাছে জবাব।

---

রাতের দিকে সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে।

আকাশে কিছু তারা দেখা যাচ্ছে।

হঠাৎ সে নিচে তাকায়—

একটা বাইক থামে।

ছেলেটির মুখ দেখা যায় না, হেলমেট পরা।

কিন্তু সে জানে, এটা সে— সাইফ।

সাইফ উঠে তাকায় একবার।

তারপর বাইক চালিয়ে চলে যায়।

সেই মুহূর্তে যেন নীরার বুকের ভেতর আটকে থাকা সব আবেগ বেরিয়ে আসে।

সে চোখ বন্ধ করে শুধু মনে মনে বলে—

“তুমি ছিলে…

আর আমি তোমাকে অন্ধের মতো হারিয়েছিলাম।”

---

রাত ১২ টার দিকে তানভীর ফিরলো।

ক্লান্ত, চোখে ঘুম।

নীরা দরজা খুলে দাঁড়িয়ে।

তানভীর তাকিয়ে বলল,

“তুমি কাঁদছো?”

নীরা মাথা নাড়ল।

“না… আমি আজ শুধু একটু বেশি জেগে আছি মনে হয়।”

তানভীর বলল,

“আমি জানি, আমি তোমায় অনেক অবহেলা করেছি।

আজ অফিস থেকে ফিরতে আসার সময় তোমার চিঠির মতই কিছু পড়ে পেলাম।

তোমার সেই বন্ধু, সাইফ… ও বলেছে, তুমি তার প্রেরণা ছিলে লেখার।

আজও।”

নীরার চোখ স্থির।

সে বুঝতে পারে, সাইফ চাইলেই সামনে আসতে পারত।

কিন্তু সে করেনি।

সে কেবল জানিয়ে গেছে,

"আমি এক নিঃশ্বাস দূরে…

তোমার পাশে হাঁটছি, কখনো ছুঁবো না, কিন্তু হারাবোও না।”

---

রাত গভীর।

নীরা ডায়েরির শেষ পাতায় লিখল:

> “আজ প্রথমবার ভাবছি,

হয়তো কোনো ভালোবাসা পাশে থাকাটাকেই বলে—

দাবী নয়, চাওয়া নয়, কেবল থেকে যাওয়া…

আমি তুমিই থাকো।

নীরার ভিতরেই থাকো— নিঃশব্দে।”

#চলবে……

📝গল্প-কবিতার শহর

নতুন গল্প পেতে Like & Follow দিয়ে সাথেই থাকুন।
#স্বপ্নে_ফিরে_আসে_সে #ভালোবাসার_ছায়া

গল্প: “স্বপ্নে ফিরে আসে সে”পর্ব -০৬রাত তিনটা। চারদিকে নিস্তব্ধতা।নীরার ঘুম নেই। চোখজোড়া জেগে আছে যেন অপেক্ষার ছায়া হয়ে।স...
06/07/2025

গল্প: “স্বপ্নে ফিরে আসে সে”

পর্ব -০৬

রাত তিনটা। চারদিকে নিস্তব্ধতা।

নীরার ঘুম নেই। চোখজোড়া জেগে আছে যেন অপেক্ষার ছায়া হয়ে।

সেলফোনের পর্দা একবার খুলে, একবার বন্ধ করে।

“তুমি” নামটা আসে না—

তবে একটা মেসেজ আসছে বারবার:

"আমি আসবো। আজ নয়। তবে চলে যাবো না, এই কথা দিতে পারি।"

সে জানে, এই 'তুমি' কে।

এতদিন যে চিঠি, কবিতা, নিঃশব্দ ভালোবাসা দিয়ে তাকে জড়িয়ে রেখেছিল…

সে আর কেউ নয়— সাইফ, তার কলেজ জীবনের চুপচাপ সেই বন্ধু।

---

নীরা খুঁজে খুঁজে আজ তার পুরনো অ্যালবাম খুলেছে।

কলেজ গ্রুপের এক ছবিতে সাইফ দাঁড়িয়ে আছে ডানে, সবার পেছনে।

হাত গুটিয়ে বুকের ওপর। মুখে সাদামাটা এক হাসি।

অন্যরা তাকিয়ে ক্যামেরার দিকে,

সাইফ তাকিয়ে… ঠিক তার দিকে!

সে এতদিন কেন চোখে পড়েনি?

সে তো ছিল সব সময়ই।

ছায়ার মতো, নিঃশব্দভাবে।

---

সেই মুহূর্তেই নীরার চোখে ভেসে ওঠে একটা বিকেল।

কলেজ লাইব্রেরির পেছনের করিডোরে সেদিন হঠাৎ সে হোঁচট খেয়েছিল।

তাকে ধরে ফেলেছিল কেউ—

সেই চোখজোড়া ভীষণ শান্ত ছিল।

সেদিন সেই চোখের ভাষা না বুঝলেও

আজ নীরার কাছে সব পরিস্কার।

সে চোখ আজ ছবিতে খুঁজে পায়— সাইফের!

---

দুপুরে বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়লে সে বারান্দায় আসে।

জানালার ফাঁক দিয়ে দেখতে থাকে আশপাশ

তার মনে হয় সে স্বপ্নে হেঁটে যাচ্ছে।

কোনো বাস্তবতা নেই, কেবল স্মৃতি, কিছু না বলা অনুভব।

সে নিজেকে প্রশ্ন করে,

“তানভীর যদি আমাকে ভালোবাসেও,

তবে কেন প্রতিদিন আমি এত ফাঁকা লাগে?”

“আর সেই যে চুপচাপ ভালোবাসত, সে কেন আজও আমার অপেক্ষায়?”

“এটা কি আমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল?”

---

সন্ধ্যায় তানভীর ফিরে এসে বলে,

“আজ অফিসে বসের কাছে শুনলাম একসময় তুমি খুব ভালো কবিতা লিখতে।”

নীরা চমকে যায়।

“তুমি জানলে কীভাবে?”

“তোমার এক পুরনো কলেজ ফ্রেন্ড এসেছিল অফিসে। নামটা ঠিক মনে নেই… সাইফ? হ্যাঁ, সম্ভবত।”

নীরার পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যায়।

সে বলল,

“সে কি কিছু বলল?”

তানভীর মাথা নাড়ে, “না, শুধু বলল তুমি একসময় শব্দ দিয়ে মায়া বানাতে জানাতে। এখন জানো?”

---

রাত হয়ে এলো।

নীরা ডায়েরি খোলে না, লিখে না।

সে শুধু অপেক্ষা করে।

হঠাৎ একটা টিং শব্দ— ফোনে নতুন মেসেজ:

“আমি জানি, তুমি আজও ভালোবাসতে ভয় পাও।”

---

নীরা এবার ফোন হাতে নিয়ে লিখল,

“তুমি কি শুধু ছায়া হয়েই থাকবে?”

কিছুক্ষণ পর উত্তর এল—

“যদি তুমি বলো, আমি আলো হতে পারি…

কিন্তু আলো মানে ঝলক নয়, কেবল কোমল উপস্থিতি।”

নীরার চোখ ভিজে যায়।

সে জানে— এই ভালোবাসা আর কোনো দাবী চায় না,

শুধু একটু জায়গা চায় তার স্মৃতির মধ্যে।

---

তানভীর আবারও তাকে ডেকেছে খাবার টেবিলে।

বাচ্চারা হাসছে, খাচ্ছে, চারদিকে আনন্দ।

তবে নীরার মন এক জায়গায় আটকে আছে।

সে জানে, সে কোনো ভুল করতে চায় না,

কিন্তু সত্যিটা আর অস্বীকারও করতে পারছে না।

সেই সত্যি—

যে কেউ একদিন চুপচাপ ভালোবেসেছিল,

এখনো ভালোবাসে…

এবং, সে বুঝতে শুরু করেছে, তার নিজের মাঝেও কিছু জমে আছে।

---

ডায়েরির শেষ পাতায় সে লেখে:

> “সে আসেনি।

কেবল তার ছায়া এসে গিয়েছিল।

এবং আমি—

জানালার পর্দার মতো,

হাওয়া পেলেই কাঁপি।”

#চলবে……

📝গল্প-কবিতার শহর

নতুন গল্প পেতে Like & Follow দিয়ে সাথেই থাকুন।

#স্বপ্নে_ফিরে_আসে_সে #মনছোঁয়া_বাংলা_গল্প #বাংলা_ফিকশন

গল্প: “স্বপ্নে ফিরে আসে সে”  পর্ব - ০৫বিকেলের রোদটা জানালার ফাঁক গলে ঢুকে পড়েছে ঘরের ভেতর।দুই যমজ সন্তানের ঝগড়া থেমেছে, ...
05/07/2025

গল্প: “স্বপ্নে ফিরে আসে সে”

পর্ব - ০৫

বিকেলের রোদটা জানালার ফাঁক গলে ঢুকে পড়েছে ঘরের ভেতর।

দুই যমজ সন্তানের ঝগড়া থেমেছে, এখন ঘরে নিস্তব্ধতা।

চুপচাপ বসে আছে নীরা। হাতে সেই পুরোনো ডায়েরি।

হঠাৎ পাতার ফাঁক থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বেরিয়ে এলো।

অনেক পুরোনো, তবে একটুও ক্ষয়ে যায়নি।

তার ভেতর লেখা— “তোমাকে বলা হয়নি…”

লিখেছিল কে?

রিদোয়ান নয়।

তার স্টাইল ছিল খোলাখুলি, নোট দেওয়া, নাম লেখা।

এই লেখায় নাম নেই, কিন্তু ভাষাটা কেমন যেন পরিচিত…

নীরার বুক ধক করে ওঠে।

সে পড়তে থাকে—

> “তুমি কফির কাপে চুমুক দিলে আমি বুঝতাম তুমি মন খারাপ করেছ।

তুমি হাসলে আমার দিনটাই ভালো হয়ে যেত।

আমি শুধু তাকিয়ে থাকতাম, চুপচাপ।

কারণ তোমাকে বলা হয়নি…”

নীরা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলে সবটা।

চোখে জল এসে যায়।

সে জানতো না, কেউ এভাবে তাকে ভালোবেসেছিল।

---

সেদিন রাতে ঘুম আসে না।

তানভীর পাশে ঘুমিয়ে, তার মুখে প্রশান্তির ছাপ।

কিন্তু নীরার ভেতর অশান্তি, অনুতাপ, প্রশ্ন।

ঘড়ির কাঁটা তিনটা ছুঁয়েছে।

তখনই মোবাইলে মেসেজ আসে—

R.S:

“তুমি কি পেয়েছো সেই চিঠিটা?”

“তুমি তো কোনোদিন খুঁজেই দেখনি…”

নীরা থমকে যায়।

“তুমি?”

একটি শব্দ লিখে আবার ডিলিট করে।

তারপর প্রশ্ন করে—

“তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?”

দিক পাল্টায় মেসেজ:

“তুমি যদি আমার দিকে একবারও তাকাতে, তাহলে বুঝতে, আমি কোনোদিন হারাইনি। আমি সবসময় তোমার আশেপাশেই ছিলাম।”

নীরার মনে পড়ে—

একটা ছেলে ছিল… নাম ছিল সাইফ।

চুপচাপ থাকতো।

ক্লাসে কিছু বলত না, চোখে চোখ পড়লে হেসে মাথা নিচু করে নিত।

সে কি তাহলে?

---

পরদিন সকালে নীরা বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে বাজার করতে গেল।

রাস্তায় হঠাৎ একটা চিঠি ঠাস করে তার বাইকের ডান সাইডে পড়ে গেলো।

একটা সাদা খামে মোটা হরফে লেখা—

“তোমাকে বলা হয়নি… এবার বলবো।”

নীরা চিঠিটা নিয়ে আশেপাশে তাকায়।

কেউ নেই।

একটা শীতল স্রোত বয়ে যায় তার মেরুদণ্ড বেয়ে।

চিঠির ভেতর লেখা:

> “তুমি এখন কারো স্ত্রী, কারো মা।

আমি জানি, এই ভালোবাসার কোনো জায়গা নেই তোমার জীবনে।

তবুও আমি বলবো…

আমি আজও ভালোবাসি।

কারণ, ভালোবাসা সময়ের বাইরে জন্মায়।”

---

বাসায় ফিরে এসে সে ছাদের উপর গিয়ে দাঁড়ায়।

নিচে তাকিয়ে কেউ নেই।

তবে তার মনে হচ্ছে, কেউ তাকে দেখছে।

হয়তো দূর থেকে, হয়তো কাছ থেকে, হয়তো প্রতিদিন…

হঠাৎ মনে পড়ে একদিন কলেজে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে যখন ডায়েরি লিখছিল, একটা ছায়া তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।

সে ভেবেছিল রিদোয়ান।

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, হয়তো সেদিনও সেই কেউ ছিল…

---

রাতে তানভীর খেতে বসে বলে—

“নীরা, তুমি ঠিক আছো তো? আজকাল কেমন যেন উদাস লাগছে তোমায়।”

নীরা এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে।

তারপর হাসে।

“আমি ঠিক আছি। শুধু… কিছু পুরনো কথা মনে পড়ছে মাঝে মাঝে।”

তানভীর মাথা নেড়ে বলে,

“আমিও জানি, তোমার মধ্যে অনেক কিছু জমে আছে… বলো আমাকে।”

নীরা তাকায় তানভীরের দিকে।

যে পুরুষ তাকে ভালোবাসে, দায়িত্ব নেয়, কিন্তু আবেগ প্রকাশ করে না।

আর একদিকে, কেউ আছে, যে কোনোদিন প্রকাশ করতে পারেনি, তবুও ভালোবাসা থামায়নি।

রাতের বেলাটা চুপচাপ।

নীরা ডায়েরির ভাঁজে সেই কবিতাটার পাশে ছোট করে লেখে—

> “তোমাকে বলা হয়নি, আমি অনেক আগে ক্ষমা করে দিয়েছি।

কিন্তু তোমার ভালোবাসা আজও আমায় ভাবায়।

আমি ফিরব না,

তবুও তুমি থাকো… আমার ছায়ার মতো।”

#চলবে……

📝গল্প-কবিতার শহর

নতুন গল্প পেতে Like & Follow দিয়ে সাথেই থাকুন।
#বাংলাগল্প

গল্প: “২য় বেঞ্চের বন্ধুত্ব” পর্ব - ০৯নীলা ট্রেনে উঠবে ঢাকার উদ্দেশে।সে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে।চোখে ক্লান্তি, মুখে...
05/07/2025

গল্প: “২য় বেঞ্চের বন্ধুত্ব”
পর্ব - ০৯

নীলা ট্রেনে উঠবে ঢাকার উদ্দেশে।

সে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে।

চোখে ক্লান্তি, মুখে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা।

সেই পুরনো প্রাণচঞ্চলতা নেই,

অভ্যস্ত হয়েছে একাকীত্বে।

ট্রেনের জানালার পাশে বসে সে বই খুলে,

“The Little Prince”

প্রিয় বই, যেটা একসময় মিমি তাকে উপহার দিয়েছিল।

হঠাৎ পাশের সিটে কেউ বসে।

গায়ের হালকা চাদরটা সামলে, ব্যাগটা নামিয়ে রেখে মেয়েটি শান্তভাবে বসে বলে—


— “তুই এখনো বই পড়ে ট্রেনে?”

নীলা চোখ তুলে তাকায়।

মিমি!

দু’জনেই প্রথমে কিছু বলে না।

মিমি চুলটা পেছনে গুজে নেয়, চোখে সানগ্লাস, মুখে একরকম প্রাপ্তবয়স্ক বিষণ্ণতা।

নীলা তাকায় একবার, তারপর জানালার দিকে ফিরে যায়।

নীরবতার পর মিমি বলে—

— “তোর সাথে দেখা হবে, এটা ভাবিনি।”

— “আমিও না।”

— “একাই যাচ্ছিস?”

— “হ্যাঁ।”

মিমি একটু হেসে বলে,

— “আমি রাজশাহীতে একটা স্কুলে পড়াই এখন। ট্যুরে যাচ্ছি।”

নীলা শুধু মাথা নাড়ে।

ট্রেনের ছন্দময় চলার মধ্যেও, বাতাস যেন থেমে আছে।

কেউ জোরে কিছু বলে না,

তবুও মনের ভিতরে চলতে থাকে হাজারটা প্রশ্ন, আফসোস আর “যদি…”।

হঠাৎ নীলা বলে,

— “তুই কি এখনো আমাকে ঘৃণা করিস?”

মিমি চমকে তাকায়।

— “ঘৃণা করলে তো এভাবে বসতাম না, নীলা।”

— “তাহলে?”

— “অভিমান ছিল। এখন হয়তো নেই। শুধু দূরত্ব আছে।”

একটু চুপ করে থেকে মিমি বলে,

— “তুই কাউকে হারাসনি ইচ্ছে করে। আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম নিজেকে তোকে ধরে রাখতে গিয়েই।”

— “আমি তো তোকে কখনো দূরে ঠেলিনি।”

— “তুই ঠেলিসনি, কিন্তু জায়গাও দিসনি।

সবাই তো শুধু তোকে দেখেছে। আমি ছিলাম ব্যাকগ্রাউন্ডে।

একদিন আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম।”

নীলার চোখ ভিজে ওঠে।

সে বলে,

— “আমরা দুজনেই নিজের মতো করে কষ্ট পেতাম।

কিন্তু কেউই একে অপরের কষ্ট বুঝিনি

মিমি নিজের ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট চকোলেট বের করে নীলার হাতে দেয়।

— “স্মরণে আছে? টিফিনে প্রথম দিন ভাগ করেছিলি এটা।”

নীলা হেসে ফেলে।

— “তখন তো তুই বলেছিলি, ‘তোকে দেখে মনে হয় গল্পের মেয়ে।’”

— “তুই ছিলি তো। নীলাভ একটা গল্প।”

দুজনেই চুপ করে আবার জানালার দিকে তাকায়।

পাহাড়, নদী, খেত—সবই চলে যাচ্ছে ট্রেনের জানালার বাইরে দিয়ে।

তাদের ভেতরে যে ভাঙন ছিল, তাও যেন এই যাত্রার ছন্দে একটু একটু করে গলে যাচ্ছে।

নীলা হঠাৎ বলে—

— “তুই কি কখনো মনে করিস, যদি আমরা তখন কথা বলতাম… তাহলে আজ সবকিছু অন্যরকম হতে পারত?”

মিমি মৃদু হেসে বলে,

— “না। আমরা তখন কেবল কিশোরী ছিলাম।

ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, প্রতিযোগিতা—সবকিছু একসাথে গুলিয়ে ফেলেছিলাম।”

নীলা চোখ বুজে বলে,

— “আমার আফসোস নেই।

কিন্তু তোকে হারানোটা আজও বুক চাপে।”

মিমির গন্তব্য আগে।

স্টেশনে ট্রেন থেমে গেলে সে উঠে দাঁড়ায়।

নীলার দিকে তাকিয়ে বলে—

— “তোর ওপর অভিমান ছিল। এখন নেই।

তবে আবার যদি কোনোদিন দেখা হয়...

সেই দেখা যেন শুরু হয় নতুনভাবে।”

নীলা বলে,

— “আমি অপেক্ষায় থাকব।”

মিমি ট্রেন থেকে নামে, ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্ম পেরিয়ে যায়।

নীলা জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে—

দুইটা স্কুল ইউনিফর্ম পরা মেয়ে দূরে হেঁটে যাচ্ছে।

একজন একটু এগিয়ে, আরেকজন একটু পেছনে।

ঠিক যেন তারাই..

#চলবে…..

📝গল্প-কবিতার শহর

নতুন গল্প পেতে Like & Follow দিয়ে সাথেই থাকুন।
েঞ্চের_বন্ধুত্ব #অভিমান_থেকে_মুক্তি #গল্প_কবিতার_শহরckbenchBond

গল্প: “স্বপ্নে ফিরে আসে সে”  পর্ব - ০৪রাতের অন্ধকারে নীরা একা বসে আছে বারান্দায়। তার চোখে আকাশের তারারা ভেসে উঠেছে।মনের ...
04/07/2025

গল্প: “স্বপ্নে ফিরে আসে সে”
পর্ব - ০৪

রাতের অন্ধকারে নীরা একা বসে আছে বারান্দায়। তার চোখে আকাশের তারারা ভেসে উঠেছে।

মনের গভীরে এক অজানা ভালোবাসার ছায়া ছড়াচ্ছে।

“তুমি কে? আমি জানি না…

তবুও মনে হয়, তুমি আমার কাছে খুব কাছের কেউ।”

সে ফিসফিস করে বলে নিজের কাছে।

আজ তার জীবনে অনেক কিছু বদলে গেছে।

সেই চুপচাপ ভালোবাসা যে রয়ে গেছে তার আশেপাশে, সে তা বুঝতে শুরু করেছে।

একদিন সকালে মোবাইলে আসল একটি ছবি।

একজন যুবক, যার চোখে মায়া আর ব্যথার মিশ্রণ। প্রোফাইলে লেখা ছিল— R.S।

মেসেজে লেখা—

“আজ তুমি হাঁটছিলে শহরের পার্কে, আমি দূর থেকে তোমাকে দেখছিলাম।

তুমি জানো না, তুমি আমার জীবনের কতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”

নীরা নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।

“কেন?”

“কেন এতদিন চুপ ছিলে?”

“কেন কখনো নিজেকে জানাতে পারো না?”

হৃদয় থেকে বেরোলো একটুও জানা কথা, যা অনেকদিন ধরে কাঁপছিল।

তার স্মৃতির পাতা উল্টে যায়—

এক কলেজ দিনের কথা, যখন এক বন্ধু তাকে চুপচাপ ভালোবাসতো।

তাকে কথা বলতে পারত না, শুধু দূর থেকে দেখত।

যে ছিল তার পাশে, তার কাছে কিন্তু সে কখনো পাত্তা দেয়নি।

এখন বুঝতে পারছে, সেই বন্ধু হয়তো আজো তার জন্য অপেক্ষা করছে।

তানভীরের সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ছে প্রতিদিন।

তবে সে জানে, সংসার ভাঙানো তার পক্ষে সম্ভব নয়।

তার দুই সন্তান তাকে বেঁধে রেখেছে।

রাতে যখন সন্তানরা ঘুমিয়ে যায়, নীরা মনের কথা ডায়েরিতে লিখতে শুরু করে—

“তুমি কে জানি না,

তবুও আমি তোমার অপেক্ষায় আছি।

আমার জীবন এখন সংসারের মাঝে বাঁধা,

তবুও তোমার ভালোবাসা আমার হৃদয়ের কোণে জ্বলছে।”

নীরার জীবনে এখন এক অজানা ভালোবাসার ছায়া নেমে এসেছে,

যা হয়তো একদিন তার জীবনের অন্ধকার ভেদ করে আলো এনে দেবে।



#চলবে…..

📝গল্প-কবিতার শহর

নতুন গল্প পেতে Like & Follow দিয়ে সাথেই থাকুন। #অজানা_ভালোবাসা #স্বপ্নে_ফিরে_আসে_সে #ভাঙা_সংসারের_গল্প

গল্প : "২য় বেঞ্চের বন্ধুত্ব"পর্ব- ০৮মিমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক অদ্ভুত শান্ত ভঙ্গিতে চুল আঁচড়াচ্ছে।ঘরের কোণায় তার পুরোনো...
04/07/2025

গল্প : "২য় বেঞ্চের বন্ধুত্ব"
পর্ব- ০৮

মিমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক অদ্ভুত শান্ত ভঙ্গিতে চুল আঁচড়াচ্ছে।
ঘরের কোণায় তার পুরোনো ডায়েরিগুলো একে একে ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে।

সে ফিসফিস করে বলছে নিজের প্রতিচ্ছবিকে,
— “বন্ধুত্ব যেটা আমাকে কোনোদিন নিজের মতো করে ভালোবাসতে দেয়নি, তার শেষটা আমি নিজেই লিখব।”

তার হাতে একটা চিঠি।
নীলার নামে লেখা।

> “নীলা,
আমরা অনেক বছর একসাথে হেঁটেছি—স্কুলের মাঠে, রিকশার পেছনে, টিফিনে ভাগ করে খাওয়া, বৃষ্টিতে ভিজে পিঠে পিঠ লাগানো বন্ধুত্বে।
আমি তোকে শুধু বন্ধু ভাবিনি, তোকে ‘নিজের একটা অংশ’ ভেবেছিলাম।
কিন্তু জানিস?
তোকে ভালোবাসা মানেই ছিল—নিজেকে হারানো।
তোকে পাশে রাখা মানেই ছিল—সবাইকে হারানো।
আজ তাই আমি তোকে ছেড়ে যাচ্ছি।
বন্ধুত্বের এই শব আমি আজ কাঁধে তুলে নিচ্ছি, কিন্তু এবার শেষকৃত্য আমি নিজেই করব।”

শেষ ক্লাসে সবার চোখে জল ছিল, ছবি তোলা চলছিল, অটোগ্রাফ খাতা ঘুরছিল সবার হাতে।

মিমি হঠাৎ বলেছিল,
— “নীলা, যদি ভবিষ্যতে কখনো আমরা একে অপরকে চিনতে না পারি, তাহলে?”
নীলা হেসে বলেছিল,
— “তাহলে নতুন করে চিনব, মিমি। তুই আমার হারানো মানুষ না, তোকে হারাবার কোনো সুযোগই নেই।”

সে কথাগুলো এতদিন পর যেন ফিরে আসছে ছায়ার মতো।
কিন্তু এখন আর নতুন করে চেনার জায়গা নেই।

নীলা দুপুরে ডাকবাক্সে খুঁজে পায় একটি চিঠি,
সাদা খামে, হাতে লেখা নাম—"নীলা"।

চিঠি খুলতেই তার চোখ ছলছল করে উঠে।
চোখের সামনে যেন ফিরে আসে তাদের সমস্ত গল্প—
২য় বেঞ্চের হাসি, ভাগ করে খাওয়া চকলেট, একে অপরের চুল বাঁধা, অভিমান হলে চুপচাপ বসে থাকা…

সব মুছে যেতে বসেছে একটিমাত্র চিঠিতে।

চিঠির এক জায়গায় লেখা:

> “তুই হয়তো কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি।
কিন্তু তোর চুপচাপ থেকে যাওয়া, তোকে না বলা সেইসব ভালোবাসা,
সবকিছুই এক ধরনের ছুরি ছিল… যা কেবল আমাকেই কেটেছে।
আমি এখন মুক্তি চাই।
তোর ছায়া হয়ে বেঁচে থাকতে পারবো না আর।”

চিঠিটা হাতে নিয়ে নীলা ছুটে যায় মিমির বাসায়,
কিন্তু দরজায় তালা ঝুলছে।

পাশের বাড়ির দারোয়ান বলে,
— “আপা তো দুপুরেই চলে গেছে, কোথায় গেছে কইবো না বলছে।”

নীলা এবার ছুটে যায় সেই পুরোনো স্কুলে—
যেখানে প্রথম তাদের দেখা হয়েছিল।

সেখানে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে, পেছনের ইউনিফর্ম পরা মেয়েদের দেখে চোখ ভিজে যায়।

সে জানে—মিমি আর তার সেই স্কুলজীবনের অংশ ছিল।
আর আজ সে নিজেই নিজের দিক থেকে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে চলে গেছে।

সেদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ একটি পোস্ট আসে ফেসবুকে—
“বন্ধুত্বের মৃত্যু যখন জীবনের স্বাধীনতা হয়ে দাঁড়ায়।”
পোস্টদাতা: মিমি।

রুদ্র সেই পোস্ট দেখে প্রথমে রাগান্বিত হয়।
— “এটা তো নীলার কথা বলছে!”

তন্ময় চুপচাপ চোখ বন্ধ করে।
সে বোঝে, মিমির কষ্ট আসলেই সত্যি।
কিন্তু সেই কষ্ট কাউকে ধ্বংস করে দিলে কি সেটা মুক্তি?

আরিয়ান মন্তব্য করে না, কিন্তু তার মনের গহীনে গুমরে ওঠে একটা প্রশ্ন—

“আমরা কি কেউই বন্ধুত্বের যোগ্য ছিলাম না?”

সেই রাতেই নীলা তার ফেসবুকে একটা ছোট্ট কবিতা পোস্ট করে:

> “যে যায়, তাকে আটকানো যায় না।
আর যে হারায়, তাকে ফিরিয়েও লাভ নেই।
তবে যারা থেকেছে…
তাদের তো অন্তত ভুলে যাওয়া যায় না।”

নিচে সে লেখে— #শেষ_বন্ধুত্ব
তন্ময়, রুদ্র, আরিয়ান—তিনজনেই লাইক দিয়ে চুপচাপ থাকল।

মিমি এখন নতুন এক শহরে, নতুন পরিচয়ে নিজের জীবন গুছিয়ে নিচ্ছে।

কিন্তু রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় তার।
একটাই স্বপ্ন—
নীলা আর সে স্কুল ড্রেসে ২য় বেঞ্চে বসে হাসছে।

ঘুম ভাঙলে চোখের কোণে জল।

কিন্তু সে নিজেই নিজেকে বলে,
— “বন্ধুত্বটা আমি শেষ করেছি।
এবার পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই।”

---
#চলবে.........
📝গল্প-কবিতার শহর

প্রতিশোধ_নাকি_মুক্তি
#গল্প_কবিতার_শহর

Address


Alerts

Be the first to know and let us send you an email when গল্প-কবিতার শহর posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share