04/08/2025
মাওলানাকে চিনেন নিশ্চয়ই।
দীর্ঘদিন এই শহরে টিকে থাকার লড়াই করে অবশেষে জীবনযু**দ্ধে পরাজিত হয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তিনি। ফিরে যাচ্ছেন তার কাঠমিস্ত্রী বাবার আশ্রয়ে। অথচ জুলাই বিপ্লবে রাজবন্দী হয়ে হারুনের ভাতের হোটেল কাঁপানো ছয় সমন্বয়কের সম্মিলিত অবদানের চেয়ে বেশি অবদান এই মাওলানার।
নিজের একজন স্ত্রী ছিল। একটা মাদ্রাসা ছিল। বিপ্লবের আগে ছিল সুখের জীবন। বিপ্লবের পর তার মাদ্রাসা গেছে। দারিদ্র্যের পীড়নে স্ত্রীও গেছে। থাকার আশ্রয় গেছে।
এতদিন একটি মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওখান থেকেও চলে যেতে হচ্ছে তাকে। এই শহরে একজন বিপ্লবীর, হা*সিনাকে খেদানো একজন বীরের থাকার কোন জায়গা নাই। আমরা বিপদে পড়লে সাহসীদের ডাকি। বি*পদমুক্ত হলে লাথি মেরে তাড়িয়ে দেই।
আমাদের জুলাইয়ের শিক্ষক পীর আসিফ নজরুল মাওলানাকে বলেছিলেন, একটা আবেদন করতে। উনি সাহায্য করবেন। সেই আবেদন নিয়ে ঘুরিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সাহায্য করা সম্ভব না।
আমাদের ফয়েজ তৈয়ব তাকে একটা চাকরির আশ্বাস দিয়েও ঘুরিয়েছেন। কিন্তু চাকরি দেননি। আমাদের এনসিপির নেতারা তাকে আশ্বাস দিয়েছেন অনেক। কিন্তু কিছুই করতে পারেনি।
শি*বির বলেছে, ওনার প্রতিষ্ঠান তারা চালু করে দিয়ে নিজেরা চালাবে। উনি বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠান আমাকে চালাতে দেন। আপনারা কিছু টাকা দিয়ে হেল্প করেন। আপ বাংলাদেশও চেয়েছে প্রতিষ্ঠান চালু করে দিয়ে নিজেরা চালাবে। শর্তে মিলেনি তাই সাহায্যও পাননি।
বিএনপির একজন নেতাও সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন বলছেন, নির্বাচন হোক।
জুলাই অনেককে নেতা বানিয়েছে, অনেককে মিলিয়নিয়ার বানিয়েছে। কিন্তু মাওলানা শফিককে করেছে সর্বশান্ত। তিনি জুলাইয়ের প্রলেতারিয়েত। বিপ্লবের অস্পৃশ্য শক্তি। এদের র*ক্তে বিপ্লব হয়। কিন্তু এদেরকে ক্রেডিট দিলে বিপ্লবের জাত যায়। মাওলানা শফিকদের উত্থান ঘটলে সবার পিলে চমকে যায়। কারণ মাওলানা শফিক ডানপন্থী।
মাওলানা শফিক চাইলে যে কোন দলে পদ বাগিয়ে নিতে পারতেন। চাঁ*দাবাজি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে পারতেন। বিশেষ কারো পক্ষ নিয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে টাকা কামাতে পারতেন। তিনি এসবের কিছুই করেননি। তিনি চেয়েছিলেন বিপ্লবের আগের সহজ সরল স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে।
নৈমুদ্দি গল্পটা পড়েছিলেন? শাপলার এক শ*হীদকে নিয়ে ছিল গল্পটা। মাওলানা শফিক যেন গল্পের নৈমুদ্দি কিংবা গল্পের নৈমুদ্দিই যেন মাওলানা শফিক। এদের অতি সামান্য চাহিদা। সেই চাহিদাই আমরা পূরণ করতে পারি না। মাওলানা শফিক হয়ত এখন গল্পের নৈমুদ্দি না হতে পারার আক্ষেপে বিপর্যস্ত। তিনি হয়ত ভাবছেন, নৈমুদ্দির মতই তিনিও যদি শ*হী"দ হয়ে যেতেন তাহলে এই জিল্লতি তার জীবনে আসত না। কাউকে কিছু বলার নাই।
ইতিহাসে এই ঘটনাটি থাকল। আমাদের ক্ষমতা মাতাল রাষ্ট্রকল্প একজন জুলাই যো**দ্ধার সাথে কি আচরণ করেছে, আমাদের জুলাইয়ের ক্রেডিট শিকারীরা একজন জুলাই যো**দ্ধাকে কিভাবে হেল্প করেছে, একজন ডানপন্থী বিপ্লবীর সাথে অন্য বিপ্লবীরা কি আচরণ করেছে- ভবিষ্যতের ইতিহাস গবেষকরা নিশ্চয়ই তা খেয়াল করবেন।
—দীপ্র হাসান
সোর্স : নিউজ বাংলা বক্স