23/09/2024
#প্রথম_স্ত্রী।
ডিভোর্সের ঠিক চার দিনের মাথায় দ্বিতীয় বিয়ে করল প্রকাশ চক্রবর্তী। ডিভোর্স করতে অবশ্য তেমন বেগ পেতে হয়নি তার। কারণ রুমা কেস-খামারি করেনি, খোরপোষও চায়নি।
প্রকাশ যে দিন রুমাকে পেপারে সই করতে বলেছিল, সেদিনই সে মাথা নিচু করে সই করে দেয় এবং যেদিন ফাইনাল পেপার হাতে পায় সেদিন বিনা বাক্যব্যয়ে খালি হাতে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। রুমা কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি, কটু কথা বলে নি। চোখের জল ফেলে নি। শুধু রাস্তায় নেমে বাড়িটির দিকে তাকিয়েছিল অনেকক্ষণ।
প্রকাশের প্রথম বিয়ে ভাঙ্গে সন্তান সন্তান করে। তার মা এই নিয়ে জব্বর বিরক্ত ছিলেন। তিনি মাঝে মাঝেই বৌমাকে বংশ রক্ষার অজুহাতে অনেক কথা শোনাতেন।
ডাক্তার বদ্দি দেখিয়ে প্রকাশ চেষ্টা যে করেনি তা নয় কিন্তু হয়নি। শেষমেষ প্রকাশ একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। নতুন বিয়ে করলে হয়তো সন্তান হতে পারে এই ভাবনায়। একদিন রাতে সে তার সিদ্ধান্তের কথা রুমাকে জানিয়ে দেয়। দশ বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি মাত্র 10 সেকেন্ডে।
এরপরেও প্রকাশের সন্তান হয়নি। কেন হয়নি তা ডাক্তারও বলতে পারেনি। প্রকাশ অথবা তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কোন দোষ আছে বলে প্রমাণিতও হয়নি। প্রকাশ এখন এটা মেনে নিয়েছে। তার মাও আর কিছু বলার জায়গায় নেই। বয়সের ভারে তিনি এখন বাক্যহারা। শয্যাগত।
প্রকাশের দ্বিতীয় স্ত্রী অনিমা সন্তান না হওয়ার কারণ হিসেবে প্রকাশকেই দায়ী করে অভিযোগ তোলে মাঝে মধ্যে। প্রকাশের দ্বিতীয় বিয়ের শখ তার জীবনটা তছনছ করেছে বলে খোটা দেয় অনিমা।
প্রকাশ এখন বুঝতে পারে, সন্তান সবার হয় না, এবং এতে অসুখী হবারও কোন কারণ নেই। সে এটাও বুঝতে পেরেছে, ভালোবাসা চলে গেলে সুখ মরে। সে রুমাকে তাড়িয়ে ভালোবাসা হত্যা করেছে, সুখ তালা বন্দি করেছে।
আজ বারো বছর পর প্রকাশের হঠাৎ মনে হল, রুমা কেমন আছে, কোথায় আছে, কি খাচ্ছে! সে কি বাবার কাছে ফিরে গেছিল? অথবা তার ভাইয়ের কাছে? অথবা বেঁচে আছে তো! দুঃখ যন্ত্রণা অপমানে সুইসাইড করে নি তো!
এরপর প্রায় দু মাস অনেক চেষ্টা করে প্রকাশ জানতে পেরেছে রুমা উত্তর পাড়ায় থাকে। একাই থাকে। ফ্ল্যাট কিনেছে এবং এগারো বছরের একটি ছেলেও আছে।
তারমানে ওর হাজবেন্ড আছে। দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছে।
প্রকাশ মনে মনে ভাবল, বেশ করেছে। সে যদি দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে রুমা কেন করবে না! ঠিক করেছে।
এর কিছুদিন পর থেকেই প্রকাশের মনে হতে লাগলো রুমার সঙ্গে যদি একবার অন্তত দেখা করা যায়। ভয় বা লজ্জার তো কিছু নেই! সেও বিয়ে করেছে, রুমাও বিয়ে করেছে। সমান সমান। রুমা যদি বিয়ে না করতো তাহলে নয় কথা ছিল।
রুমা কি দেখা করবে! তার সন্তান, তার হাসব্যান্ড কী মনে করবে? রুমা কি চাইবে তার সন্তান জানুক তার মা ডিভোর্সি। দশ বছর অন্যজনের সঙ্গে ছিল। অথবা তার বর্তমান স্বামী পর্যন্ত হয়তো জানে না রুমা আগে একজনকে ভালোবেসে বাবা-মায়ের অমতে বিয়ে করেছিল। এমনকি দোর্দণ্ড প্রতাপ পুলিশ অফিসার ভাইয়ের নামে কেস পর্যন্ত!
প্রকাশ প্রায় দুমাস খুঁজে খুঁজে বের করেছে রুমার উত্তরপাড়ার ফ্ল্যাট। পর পর দু'রোববার না পেয়ে আজ তৃতীয় রবিবার আবার এসেছে কি এক অমোঘ টানে।
এদিন দরজা খুলল একটি দশ এগারো বছরের ফুটফুটে ছেলে। অচেনা এক ভদ্রলোককে দেখে সে প্রথমে হাতজোড় করে নমস্কার করলো। তারপর বলল, আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?
এটা কি রুমা নিয়োগী..
নিয়োগী নয় চক্রবর্তী। রুমা চক্রবর্তীর ফ্ল্যাট।
রুমা তোমার কি হয়?
মা।
আচ্ছা এটা তাহলে রুমার ছেলে! ভারী সুন্দর হয়েছে তো!
সে আবার জিজ্ঞেস করল, রুমা চক্রবর্তী তোমার মা?
হ্যা
ফ্ল্যাটে আছেন?
না।
কোথায় গেছেন?
স্কুলে।
তোমার মা স্কুলে চাকরি করেন?
হ্যা। আজ কি একটা পরীক্ষা আছে। আপনি কি মায়ের বন্ধু?
তা বলতে পারো।
তাহলে ভেতরে এসে বসুন। মা পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এসে যাবেন। বলেই ছেলেটি দরজা ছেড়ে দাঁড়ালো।
প্রকাশ ভেতরে ঢুকে ড্রয়িং রুমে এসে অবাক হয়ে গেল। তার কলেজ লাইফের একটি দুষ্প্রাপ্য ছবি সোফার ঠিক উল্টোদিকে টাঙ্গানো। এ ছবি এখানে এলো কি করে? আশ্চর্য!
প্রকাশ ছবিটি দেখিয়ে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করল একে চেনো? কে ইনি?
ছেলেটি হেসে উত্তর দিলো, ইয়েস, হি ইজ গড, হি ইজ মাই গড, আমি প্রতিদিন সকালে ছবিটির সামনে বসে প্রার্থনা করি।
এসময় কলিংবেলের আওয়াজ হতেই ছেলেটি দৌড়ে চলে গেল দরজার কাছে। গিয়েই তড়বড়িয়ে বলল, মা তোমার বন্ধু এসেছেন তোমার সঙ্গে দেখা করতে!
রুমা ডাইনিংয়ে এসে প্রকাশের পায়ে হাত দিয়ে নমস্কার করে ব্যাগ রেখে পাশেই বসলো। বলল, কেমন আছো? রুমা যেন জানতো প্রকাশ আজ আসবে।
রুমার স্বভাব একদম পাল্টায়নি। আগেও যখনই সুযোগ পেত তখনই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতো প্রকাশকে।
প্রকাশ খুব বিড়ম্বনায় পরল। প্রকাশ ভেবেছিল রুমা তার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করবে। এই আচরণ সে কল্পনাও করেনি।
প্রকাশ অস্বস্তি এড়ানোর জন্য হেসে বলল, তোমার হাজব্যান্ড কোথায়? আজ তো রবিবার! বাড়ি নেই কেন?
রুমা হেসে বলল, হাজব্যান্ডের সঙ্গেই তো কথা বলছি। বাড়িতে বসেই তো বলছি। মুখোমুখি কথা বলছি।
এ সময় ছেলেটি দু'গ্লাস জল এনে টি টেবিলে রেখে পাশেই দাঁড়ালো।
রুমা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলল, সাম্য, তোমার ছবির গড ইনি। তোমার বাবা। আমি তোমাকে বলেছিলাম না একদিন ঠিক আসবে। বাবাকে প্রণাম করো।
সাম্য বাবাকে প্রণাম করলো।
এরপর প্রকাশকে উদ্দেশ্য করে বলল, এই তোমার ছেলে। তোমার অনুমতি ছাড়া ওর নাম রেখেছি সাম্য। ছেলের মাথায় হাত রেখে একটু আশীর্বাদ করে যাও।
প্রকাশ বিষয়টি জোকস হিসেবে নিয়ে রুমাকে বলল, অপমান করার অধিকার তোমার আছে। কিন্তু ছেলের সামনে মিথ্যে বলছো কেন? এটা ঠিক নয়।
রুমা এ সময় ছেলেকে বলল, তুমি একটু ও ঘরে যাও তো বাবা।
সাম্য চলে গেলে রুমা পুনরায় বলল, তোমাকে একটা কথা বলার সুযোগ হয়নি, তোমাদের বাড়ি থেকে আসার চারদিন পরে আমি বুঝতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট। আর কিছু জানার আছে?
প্রকাশ এরপর কথা বলার আর কোন ভাষা খুঁজে পেল না। তার মনে পড়ছে ডিভোর্স ফাইল করার পরে সে একবার জোর করে মিলিত হয়েছিল রুমার অমতে।
প্রকাশ উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ালো। চিৎকার করে বলল, সাম্য আমার ছেলে? আমার!
রুমা শান্তভাবে প্রকাশের চোখে চোখ রেখে বলল, সাম্য তোমার ছেলে এটা ঠিক ,কিন্তু তুমি ওর বাবা নও। বাবা হওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই। এক্সিডেন্টলি তুমি বাবা হয়েছ।
খুশিতে উত্তেজিত হয়ে প্রকাশ বলল, তুমি যাই বলো আর না বলো আমি আমার ছেলেকে নিয়ে যাব। ও আমার ছেলে!
বায়োলজিক্যালি ও তোমার ছেলে এটা ঠিক। ছেলের কাছে তুমি ভগবান এটাও ঠিক, কিন্তু ভগবান হতে গেলে দয়া মায়া, করুণা, ভালোবাসা হৃদয়ে থাকতে হয়। সেটা তোমার নেই। ভগবান যেমন অদৃশ্যে থাকেন আমিও বলবো তোমাকে অদৃশ্যে থাকতে। আর একটা অনুরোধ, আর কোন দিন এ বাড়িতে এসো না। কোনদিন না। দরজা খোলা আছে, নিশ্চয়ই আর অনুরোধ করতে হবে না বেরিয়ে যাওয়া, বলেই আর একবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে দ্রুত পাশের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল রুমা।
~~~~~সংগৃহীত ~~~~~
তথ্যসূত্র~~~~~অজানা / নাম জানা গেলে মেনশন করে দেওয়া হবে। 🙏❤️
পোস্ট ভাল লাগলে লাইক কমেন্ট শেয়ার করতে ভুলবেন না। ফলো করে রাখুন গল্পের শহর প্রোফাইলটি নিত্য নতুন আপডেট সর্বপ্রথম পাওয়ার জন্য। পাশে থাকবেন❤️ অগ্রিম ধন্যবাদ 🙏❤️