02/04/2025
🧕👲
ভাই আর ছোট বোনের দুঃখের গল্প
নিলয় আর তার ছোট বোন তৃষা। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর, ওদের পৃথিবীটা যেন থমকে গিয়েছিল। আত্মীয়-স্বজন প্রথমদিকে একটু খোঁজখবর নিলেও, ধীরে ধীরে সবাই দূরে সরে গেল। দু’জনের পৃথিবী বলতে ছিল ছোট্ট একটা ভাঙাচোরা ঘর আর একে অপরের ভালোবাসা।
নিলয় ছিল খুব যত্নশীল ভাই। দিনমজুরির কাজ করত, যাতে তৃষার ক্ষুধা না লাগে, ওর পড়াশোনা বন্ধ না হয়। নিজে একবেলা খেয়ে থাকলেও, তৃষার জন্য কখনো কিছু কম হতে দিত না। তৃষাও বুঝত ভাইয়ের কষ্ট। তাই চেষ্টা করত কম খেতে, বেশি কিছু চাওয়ার সাহস করত না।
একদিন প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় নিলয় কাজে বেরিয়েছিল, কিন্তু সেদিন কাজ পেল না। সারাদিন না খেয়ে, খালি হাতে ফিরে এলো। তৃষা তার ছোট্ট হাত দুটো দিয়ে ভাইয়ের হাত ধরে বলল, "ভাইয়া, তোমার খুব ক্ষুধা লেগেছে, তাই না?"
নিলয় মাথা নাড়ল, হাসির আড়ালে কষ্ট ঢাকল। কিন্তু তৃষা বুঝে গেল। তার নিজের একমাত্র বিস্কুটটা নিয়ে বলল, "এটা তুমি খাও, আমি ঠিক আছি।"
নিলয় বিস্কুটটা হাতে নিল, কিন্তু খেতে পারল না। ওর চোখ ভিজে উঠল।
এভাবে চলতে চলতে একদিন তৃষা প্রচণ্ড জ্বরে পড়ল। ওষুধ কেনার টাকা ছিল না। নিলয় অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু সাহায্যের কেউ ছিল না। রাতে তৃষা কাঁপতে কাঁপতে বলল, "ভাইয়া, যদি মা-বাবা থাকত, তাহলে আমিও সুস্থ হয়ে যেতাম, তাই না?"
নিলয়ের বুক ফেটে কান্না আসছিল, কিন্তু শক্ত থাকতে হলো। সে তৃষাকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল, "তুমি ঠিক হয়ে যাবে, তৃষু। আমি আছি না?"
কিন্তু ভাগ্য এত নির্মম ছিল যে, ভোর হতেই তৃষার ছোট্ট হাতটা নিস্তেজ হয়ে গেল। নিলয় পাগলের মতো তৃষাকে ডাকতে লাগল, "তৃষা, উঠো! দেখো, সূর্য উঠেছে! আমাদের অনেক পথ চলতে হবে!"
কিন্তু তৃষা আর চোখ খুলল না।
নিলয় অনেকক্ষণ ধরে বোনের ছোট্ট হাতটা ধরে বসে থাকল। একসময় সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, "মা-বাবা, তৃষাকে তোমাদের কাছে নিও, ও যেন ভালো থাকে!"
তারপর ধীরে ধীরে তৃষার কপালে চুমু খেয়ে বলল, "শুধু একটা অনুরোধ, যদি সম্ভব হয়, পরের জন্মে যেন আবার তৃষার ভাই হয়ে জন্মাই!"
(শেষ)
এই গল্পটা অনেক দুঃখের, কিন্তু ভাই-বোনের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার চিরন্তন প্রতিচ্ছবি।