বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

  • Home
  • Bangladesh
  • Rajshahi
  • বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় Bangladesh Ahle-Hadeeth Youth Association is an extra-ordinary Islamic Movement of Bangladesh directed to Salafi Path,Based on pure Tawheed & Saheeh Sunnah

বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, রাবি এই প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছে ও সকলকে উপস্থিত থাকার অনুর...
20/07/2025

বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, রাবি এই প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছে ও সকলকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করছে।

20/07/2025

গতকাল ১৮ জুলাই ২০২৫ তথাকথিত মানবাধিকারের সুরক্ষা ও বিকাশে সহায়তা করার লক্ষ্যে একটি মিশন খোলার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস এবং বাংলাদেশ সরকার তিন বছর মেয়াদি একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বলে জানা গেছে। ঢাকায় এই কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে এদেশের নাগরিকদের সুরক্ষা বৃদ্ধি করা। প্রধান উপদেষ্টার কথা অনুযায়ী, জাতিসংঘ নাকি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় বাস্তবতার প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে এদেশে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সরকার যেভাবে উপস্থাপন করছে তাতে এ সংবাদ শুনে সন্তুষ্টি প্রকাশের কথা ছিল। কিন্তু পরিহাসের বিষয় যে, জাতিসংঘ এ পর্যন্ত সারাবিশ্বে মানবাধিকার রক্ষার জন্য যথার্থ কোন উদ্যোগ নিতে পেরেছে বলে প্রমাণ নেই। ফিলিস্তীনসহ মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ক্রোয়েশিয়া প্রভৃতি স্থানে বর্তমানে প্রতিটি মুহূর্তে যে শত-সহস্র নিরপরাধ মানুষের রক্তপাত ঘটে চলেছে, সে বিষয়ে জাতিসংঘের ভূমিকা কী তা কি কেউ জানে! অথচ তারাই নাকি এদেশের নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করবে!

মূলত ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় এলজিবিটি, ট্রান্সজেন্ডার, আদিবাসী, নারীবাদ প্রভৃতি পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সরাসরি তদারকি করতেই এই কমিশনের আগমন। আমরা সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। জনগণের অগোচরে মানবাধিকার রক্ষার নামে শয়তানী সংস্কৃতি বিস্তারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের এই উদ্যোগ দেশকে নতুন এক অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে। এজন্য এ বিষয়ে সচেতন মহল থেকে সম্মিলিত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ অতীব যরূরী।

আমরা আশাবাদি সরকার এ বিষয়ে সচেতন হবে এবং অতি দ্রুত জাতিসংঘের তথাকথিত এই মানবাধিকার কমিশনের সাথে চুক্তি প্রত্যাহার করবে। আল্লাহ এদেশকে সকল আধিপত্যবাদি শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করুন। আমীন!

ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক
আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ

চেয়ারম্যান, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

চলে গেলেন বর্তমান যুগের একজন শ্রেষ্ঠ বিদ্বান শায়খ রবী‘ আল-মাদখালী (৯২)। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেঊন। আল্লাহ ত...
10/07/2025

চলে গেলেন বর্তমান যুগের একজন শ্রেষ্ঠ বিদ্বান শায়খ রবী‘ আল-মাদখালী (৯২)। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেঊন। আল্লাহ তাঁর গুনাহখাতা মাফ করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস নছীব করুন।

বাতিল ফিরকা ও ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে তিনি একজন প্রবাদতুল্য ব্যক্তিত্ব। ১৯৮৪ সালে তিনি ‘মানহাজুল আম্বিয়া ফী দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ (আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে নবীদের পদ্ধতি) নামক গ্রন্থটি প্রণয়নের পর সউদী আরবসহ মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। মিসরীয় বিদ্বান সাইয়েদ কুতুবের ভ্রান্ত মতবাদকে খন্ডন করার জন্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। সাইয়েদ কুতুবের বিপক্ষে তিনি ৪টি গ্রন্থ রচনা করেন।

বিদ‘আতী ও প্রবৃত্তি পূজারীদের বিরুদ্ধে কঠোরতা অবলম্বনকারী ছিলেন। তবে তার অনুসারী দাবীদার কিছু মানুষের কট্টরতার কারণে তাঁকেই উল্টো অভিযোগের শিকার হতে হয়েছে। এমনকি তাঁর অনুসারী নামধারীদেরকে ‘মাদখালী‘ ট্যাগ দেয়া হয়ে থাকে, যা তাঁর উপর যুলুম।

কেননা তিনি নিজেই তাঁর ছাত্রদের দাওয়াতী ময়দানে এরূপ কট্টর আচরণ করা থেকে এবং দাঈদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, ‘তোমরা তোমাদের পারস্পরিক আচরণে হিকমাহ বা প্রজ্ঞা অবলম্বন করো। আর এমন প্রশ্ন করা বর্জন করো যেগুলো বিদ্বেষ তৈরি করে এবং পরচর্চা বা পরনিন্দার পথে নিয়ে যায়। আল্লাহর শপথ এ বিষয়টি ক্ষতি করেছে‘।

তিনি আরো বলেন, ‘ভাইয়েরা! বর্তমান সময়কার এই ঘোলাটে পরিবেশে পরচর্চা বা অমুক-তমুককে নিয়ে সমালোচনা বর্জন করো। তুমি কারও প্রশংসা করবে এবং তার পক্ষপাতিত্ব করে গোঁড়ামী করবে, আবার আরেকজন আসবে যে তুমি যার গোঁড়া পক্ষপাতিত্ব করছ, তার প্রতিপক্ষ কিংবা তার বিরোধী একজনের পক্ষপাতিত্বে গোঁড়ামী করবে। এভাবে একের পর এক ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে!‘

‘অথচ বর্তমানে কি দেখা যাচ্ছে! ফিৎনাবাজ কোন কোন নগণ্য ছাত্র, সে আহলুস সুন্নাহর অনুসারীদের পরস্পরের মধ্যে ফিৎনা উস্কে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। আর এতে করে সকাল-সন্ধ্যার মধ্যেই সে ইমাম হয়ে যাচ্ছে। দুইদিন পাঠদান করতে বসেই খালাছ, সে উসতায হয়ে যাচ্ছে। তার ঘনিষ্ঠ অনুসারী একদল লোক থাকে, যারা তার পক্ষে দল পাঁকায়। তারা তার সম্পর্কে কোন সমালোচনা তা যতই দলীল-প্রমাণ সহকারে করা হোক না কেন, তা সহ্য করতে পারে না। যখনই কোন ব্যক্তি দালীল-প্রমাণসহ তার সমালোচনা করে, তখন যেন দুনিয়া তোলপাড় হয়ে যায়। আর ঐসব লোক তার পক্ষে দলাদলি করে এবং কট্টরভাবে তার পক্ষাবলম্বন করে।‘

https://www.tawheederdak.com/article_details/1156

ওমর (রাঃ) একদিন প্রচন্ড খরতাপে ছাদাক্বার উট সমূহের পরিচর্যা করছিলেন। এমন সময় ইরাক থেকে বনু তামীমের নেতা আহনাফ বিন ক্বায়ে...
21/06/2025

ওমর (রাঃ) একদিন প্রচন্ড খরতাপে ছাদাক্বার উট সমূহের পরিচর্যা করছিলেন। এমন সময় ইরাক থেকে বনু তামীমের নেতা আহনাফ বিন ক্বায়েস একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে আসেন। তখন খলীফা তাকে বললেন, হে আহনাফ! শীঘ্র কাপড়-চোপড় ছেড়ে চলে এস! উট পরিচর্যার কাজে আমীরুল মু'মিনীনকে সাহায্য কর। কেননা এগুলি ছাদাক্কার উট। এর মধ্যে ইয়াতীম-মিসকীন ও বিধবাদের হক্ব রয়েছে।

তখন একজন বলল, হে আমীরুল মু'মিনীন! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন! আপনি ছাদাক্বা খাতের কোন একজন গোলামকে এ কাজের নির্দেশ দিলেই তো যথেষ্ট ছিল।

জবাবে ওমর (রাঃ) বললেন, আমার ও আহনাফের চাইতে বড় গোলাম আর কে আছে? কেননা যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোন দায়িত্ব থাকে, তার উপরে এভাবে দায়িত্ব পালন করা ওয়াজিব, যেভাবে একজন মনিবের প্রতি গোলামের দায়িত্ব পালন করা ওয়াজিব'।

এখন প্রশ্ন আপনার পছন্দের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কি এমন আমানতদারিতা রয়েছে??

এরকম আল্লাহভীতি ওয়ালা নেতা রয়েছে কি??

উত্তর যদি না হয়, তবে ভুল পথ থেকে ফিরে আসুন।

আমানতদারিতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে,এবং আমাদের পূর্ববতী নেতাদের আমানতদারিতার ইতিহাস জানতে এই বইটি পাঠকের অন্তরে অনুভূতির দুয়ার খুলে দিবে ইনশা আল্লাহ।

20/06/2025

কেন পড়বেন রাসূলুল্লাহ (ছা.) এর জীবনী?

ঈদ ও কুরবানী নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৭৭ টি প্রশ্নোওর (এক সাথে)মাসিক আত-তাহরীকে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত ফৎওয়া,প্রশ্ন : চাঁদ দেখার ...
02/06/2025

ঈদ ও কুরবানী নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ
৭৭ টি প্রশ্নোওর (এক সাথে)
মাসিক আত-তাহরীকে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত ফৎওয়া,
প্রশ্ন : চাঁদ দেখার দো‘আটি কি কেবল ঈদের চাঁদের সাথে নির্দিষ্ট
না ১২ মাস নতুন চাঁদ দেখলে উক্ত দো‘আটি পাঠ করা যাবে?
প্রশ্ন : ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে কুরবানীর পশু মোটাতাজা করা
জায়েয হবে কি?
প্রশ্ন : ঈদের দিনে ছালাতের পূর্বে মাইকে উচ্চস্বরে তাকবীর ধ্বনি
দেওয়া কিংবা অন্যকে দিতে বলা যাবে কি?
প্রশ্ন : কুরবানী মোট কয়দিন করা যাবে?
প্রশ্ন : ছহীহ হাদীছের আলোকে ঈদের ছালাতের সময়
জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্ন : জুম‘আ ও ঈদের ছালাত একই দিনে হ’লে জুম‘আর
ছালাত আদায় না করলে গোনাহ হবে কি?
প্রশ্ন : ঈদের মাঠে মিম্বার কখন থেকে চালু হয়েছে? জনৈক
আলেম কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করে বলেন, রাসূল (ছাঃ)
মিম্বারের উপরে দাঁড়িয়ে ঈদের খুৎবা দিতেন। এক্ষণে এ
ব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাই।
প্রশ্ন : পরিবারসহ বিদেশে অবস্থানকারী কোন প্রবাসী অধিক
মূল্যের কারণে সেখানে কুরবানী না করে দেশে ভাই-বোনের
পরিবারে কুরবানী করতে পারবে কি?
প্রশ্ন : ঈদায়নের ছালাতের তাকবীর কয়টি? ছয় তাকবীরের পক্ষে
কোন ছহীহ হাদীছ আছে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত
করবেন।
প্রশ্ন : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কুরবানী করার বিধান কি? ঋণ পরিশোধ
না করে কুরবানী করা জায়েয হবে কি?
এমনই অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উওর। যা আমাদের জানা জরুরী।
নিচের লিংকে ক্লিক করে জেনে নিন....
Article link: https://at-tahreek.com/page/Important_guidelines_regarding_qurbani?fbclid=IwY2xjawKqFbJleHRuA2FlbQIxMABicmlkETFhVnhmUmhRbHF2R0M2d1BZAR7sHnjiaF-40BnfbQcsV2G9iuS0HS-8lYH3BLD_GGRjXPLw4SxovpltRg49hA_aem_-D8-wo5W_n2ShIiSviDr3w

‘জামা’তে ইসলামী’তে আমার যোগদান অসম্ভব কেন?একটি পত্রের জওয়াবমুহাম্মাদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কোরায়শী (রহ.)রংপুর গাইবান্ধা ম...
02/06/2025

‘জামা’তে ইসলামী’তে আমার যোগদান অসম্ভব কেন?
একটি পত্রের জওয়াব
মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কোরায়শী (রহ.)

রংপুর গাইবান্ধা মহকুমার জনৈক মওলবী ছাহেব আমাকে মওলানা মওদুদীর ‘‘জামা’তে ইছলামী’’তে দীক্ষাগ্রহণ করার অনুরোধ জানাইয়া একখানা সুদীর্ঘ পত্র প্রেরণ করিয়াছেন। পত্রের ভাষা অত্যধিক ভ্রান্তিপূর্ণ না হইলে আর ইহার দৈর্ঘ সীমা লঙ্ঘন করিয়া না গেলে তর্জুমানের পৃষ্ঠায় আমরা ইহা হু-বহু উধৃত করিয়া দিতাম। এই পত্রের মর্মের সহিত আহলেহাদীছ আন্দোলনের পটভূমিকা, নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রহিয়াছে বলিয়া জনসাধারণের অবগতির জন্য ইহার জওয়াব প্রকাশ্যভাবে প্রদান করাই আমি সংগত মনে করিতেছি। লেখক যখন আমাকে মওদুদী ছাহেবের জামাতে দাখেল হইবার উপদেশ দিয়াছেন এবং তজ্জন্য তাঁহার ও তদীয় জামাতের গুণগান করিতে গিয়া আহলেহাদীছ আন্দোলনের ত্রুটি বিচ্যুতির প্রতিও কটাক্ষ করিয়াছেন, তখন প্রাসংগিক ভাবে আমাকেও তাঁহাদের জামাত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রবৃত্ত হইতে হইতেছে। ইহা ‘তর্জুমানে’র পরিগৃহীত নীতির অনুকূল না হইলেও ইহার জন্য দায়ী কে, শরীআত অভিজ্ঞ আলিমগণ তাহার বিচার করিবেন। তথাপি পত্র-লেখক সম্পর্কে আমি আমার এই জওয়াবে ব্যক্তিগত আলোচনায় হস্তক্ষেপ করিব না। আল্লাহ যেন আমাকে আর সমুদয় ব্যক্তিকে সত্য কথা বলার আর অজানা বিষয়ে প্রগলভতা না করার তওফীক দান করেন।

وما توفيقى إلا بالله، عليه توكلت و إليه أنيب-

পত্রলেখকের দাবী ও প্রশ্নগুলি আমি যথাক্রমে উল্লেখ করিব এবং সংগে সংগে জওয়াব প্রদান করিয়া যাইব।

১। তিনি লিখিয়াছেন- আপনার প্রচেষ্টায় (রংপুর) হারাগাছে অনুষ্ঠিত আহলেহাদীছ কনফারেন্সে জম্ঈয়তে আহলেহাদীছ নামে ‘‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’’র গোড়া পত্তন হয়।

আমি বলিব, এই দাবীর একটি বর্ণও সত্য নয়। ‘‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’’ যে নূতন ও অর্বাচীন, ইহা প্রতিপন্ন করার জন্যই এরূপ কথা রচনা করা হইয়াছে। প্রকৃতপ্রস্তাবে রছূলুল্লাহর (দঃ) অভ্যুদয়ের সময়েই ‘‘আহলেহাদীছ’’ আন্দোলনের গোড়া পত্তন হয় এবং হযরতের (দঃ) ওফাতের অনতিকাল পরেই

যে সকল হাদীছ বিরোধী আন্দোলন খারেজী, রাফেযী, জহ্মিয়া ও মু’তাযিলা প্রভৃতি নামে গজাইয়া উঠিয়াছিল, তাহাদেরই প্রতিপক্ষ স্বরূপ হাদীছী আন্দোলনের ধারকগণ ‘‘আহলেহাদীছ’’ নামে সুপরিচিত হইয়া উঠেন। কোন আন্দোলন বিশেষকে পরিচালিত ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই জামাআত বা জম্ঈয়তের প্রয়োজন হয়। ‘রাম না হইতে রামায়ণে’র কিংবদন্তি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। হারাগাছে আহলেহাদীছ আন্দোলনের গোড়া পত্তন হয় নাই। পাক ভারতেও এই আন্দোলন সর্বাপেক্ষা প্রাচীন, কখনও ইহা প্রবলাকারে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে, কখনওবা ইহার গতি মন্দিভূত হইয়াছে। আধুনিকভাবেও হারাগাছ কনফারেন্সের অন্ততঃ ষাট বৎসর পূর্ব হইতে হযরত আল্লামা ছানাউল্লাহর (রহঃ) নেতৃত্বে এই আন্দোলন নিখিল পাক ভারত আকারে ‘‘অল ইন্ডিয়া আহলেহাদীছ কন্ফারেন্স’’র ভিতর দিয়া চালিত হইত। অবিভক্ত বাঙলায় ইহার প্রাদেশিক শাখা কলিকাতার মিছ্রীগঞ্জে ছিল। পাঞ্জাব ও বাংলায় যথাক্রমে উর্দু ও বাংলা সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ পরিচালিত হইত। পশ্চিম ভারত ও পাঞ্জাবে আহলেহাদীছ মতবাদ[2] ও রীতি সম্পর্কে সহস্র সহস্র পুস্তক বিরচিত হইয়াছে। হাদীছ, শর্হে আহাদীছ, তফ্ছীর, ফিক্হ, অছূলে দ্বীন, সাহিত্য, ইতিহাস ও মুনাযরায় আরাবী, ফার্ছী ও উর্দুতে যে গ্রন্থসম্ভার এই আন্দোলন সৃষ্টি করিতে পারিয়াছে, কোন আহলেহাদীছ মওলবী ছাহেবের পক্ষে তাহা অজ্ঞাত থাকা আমি লজ্জার কারণই মনে করি। বাঙলাদেশে কুফর, শির্ক ও বিদ্আতের বিরুদ্ধে একমাত্র আহলেহাদীছরাই এযাবৎ সংগ্রাম চালাইয়া আসিতেছেন। রাজনীতি ক্ষেত্রে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অবদান স্বরূপ পাকিস্তান জন্মগ্রহণ করিয়াছে। কিন্তু যাহারা ধারণা করে, হারাগাছ রংপুরে মাত্র বার বৎসর পূর্বে আহলেহাদীছ আন্দোলন ভূমিষ্ট হইয়াছিল, তাহাদিগকে এ সকল কথা শুনাইয়া কোন লাভ হইবে কি? রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সংগে আহলেহাদীছ আন্দোলনকে বাঙলায় কি উপায়ে রক্ষা ও শক্তিশালী করা যায়, তাহারই পরামর্শের উদ্দেশ্যে হারাগাছ আহলেহাদীছ কন্ফারেন্সের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইয়াছিল এবং এই আন্দোলনকে চালাইয়া যাওয়ার জন্যই সর্বসম্মতিক্রমে ‘‘নিখিল বংগ ও আসাম জম্ঈয়তে আহলেহাদীছ’’ গঠিত হইয়াছিল।পশ্চিম বাংলা ও আসাম পাকিস্তানে প্রবেশ করিতে না পারায় উক্ত প্রতিষ্ঠান এখন ‘‘পূর্ব পাকিস্তান জম্ঈয়তে আহলেহাদীছ’’ (বর্তমানে বাংলাদেশ) নামে পরিচালিত হইয়া আসিতেছে।

২। পত্রলেখক একবার বলিয়াছেন যে, তাঁহাকে পথ দেখাইবেন কে? আর তাঁহার নিকট হইতে কাজ বুঝিয়া লইবেন কে? এরূপ কোন ব্যক্তি দেখিতে না পাইয়া তিনি হতাশ হইয়া পড়িয়াছিলেন। আবার পরক্ষণেই লিখিয়াছেন, অর্থাভাব, সাহায্যকারীর অভাব আর শারীরিক অসুস্থতার জন্য ‘‘আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব হইতেও একরূপ বঞ্চিত হইয়াছি।’’

আমি বলিতেছি যে, এই দুই উক্তি পরস্পরের বিরোধী। সকলেই জানেন যে, আমি কোন দলের আমীর বা পথ প্রদর্শক নই। আহলেহাদীছ আন্দোলনের যে অংশটুকু আমার প্রতিষ্ঠান আমাকে চালাইয়া যাইবার নির্দেশ দিয়াছেন, আমি জম্ঈয়তের সভাপতি রূপে আমার অযোগ্যতা ও অক্ষমতা সত্ত্বেও সাধ্যপক্ষে শুধু ততটুকু চালাইয়া যাইতে চেষ্টা করিতেছি। আহলেহাদীছ জামাআত এরূপ কোন সাময়িক নিছক রাজনৈতিক বা সামাজিক পার্টি বিশেষ নয় যে, সকল সময় পার্টির কৌশল ও টেক্নিক বাতলাইবার জন্য আন্দোলনের পরিচালকের সহিত সর্বক্ষণ যোগাযোগ রক্ষা করা ফর্য বা ওয়াজিব হইবে। বিশেষতঃ যাহারা কোরআন ও ছুন্নাহর বিদ্যায় ডিগ্রি লাভ করার দাবী রাখে, তাহাদিগকে সকল সময়ে পথ দেখাইবার ও তাহাদের নিকট হইতে কাজ বুঝিয়া লইবার প্রয়োজন রহিয়াছে এরূপ কথার অর্থ আমি বুঝিতে সক্ষম নই। অবশ্য গুরুতর ও সাময়িক প্রয়োজনে পরামর্শ একান্ত আবশ্যক কিন্তু শরীর বা মনের পীড়ার জন্য যদি কেহ জম্ঈয়তে আহলেহাদীছের পরিচালক বা কর্মীদের সাথে এক যুগের মধ্যেও কিছু বলার বা শ্রবণ করার সুযোগ করিয়া উঠিতে না পারে, তার জন্য ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ দায়ী হইবে কেন?

৩। পত্রলেখক বলিতে চাহিয়াছেন, এই-রূপ অন্ধকার পরিবেশে তিনি আকস্মাৎ আলোকের সন্ধান পাইলেন। পাক পাঞ্জাবের সামরিক আদালত মওলানা মওদুদীকে ফাঁসির হুকুম দেওয়ায় দেশব্যাপী যে আন্দোলন সৃষ্টি হইয়াছিল এবং পূর্ব পাকিস্তান জম্ঈয়তে আহলেহাদীছের মুখপত্র ‘‘তর্জুমানের পৃষ্ঠায় সম্পাদকের জোরাল মুক্তি দাবী’’ দর্শন করিয়া এবং ‘‘তর্জুমান সম্পাদকের কাঁদ কাঁদ সুরে ‘মওদুদীকে বর্ত্তমান যুগের মুজাদ্দিদ বলা চলে’ শ্রবণ করিয়া ‘‘এবং পাঞ্জাবের কারাগারে অন্যান্য বর্ষীয়ান উলামার লাঞ্ছনার বিবরণ অবগত হইয়া তিনি মওদুদী ছাহেবের আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া পড়িলেন।’’

আমার বক্তব্য এই যে, কোন ব্যক্তি ফাঁসির আসামী হইলে এবং তজ্জন্য দেশে তোলপাড় ঘটিলেই তাঁহার প্রবর্তিত দলে প্রবেশ করিতে হইবে এবং নিজের জামাআতকে পরিত্যাগ করিতে হইবে এরূপ কথা আলেম দূরে থাক, সাধারণ বুদ্ধিবিবেচনা-সম্পন্ন লোকও উচ্চারণ করিতে পারেনা। কোন মানুষের সৎসাহস বা বিদ্যাবত্তা প্রশংসার উপযুক্ত হইলে তাহার প্রশংসা করা উচিত, কোন ব্যক্তি কোন ভাল কথা বা কাজ করিলে তাহার সেই উত্তম কথা ও কার্যের সমর্থন করা কর্তব্য। ইহাই কোরআনের নির্দেশ। সুতরাং আহলেহাদীছের নীতি-

تَعَاوَنُواْ عَلَى الْبرِّ وَالتَّقْوَى وَلاَ تَعَاوَنُواْ عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ- (المائدة ২)

‘‘তোমরা সৎ ও সাধু কর্মের সহায়তা কর এবং পাপ ও অত্যাচারে সহায়তা করিওনা।’’

এই আয়তটি পত্রলেখক বোধ হয় কোরআনে পাঠ করিয়া থাকিবেন। কিন্তু তিনি ইহা লক্ষ্য করিয়াছেন কি যে, এই আয়তে কর্মে র সহায়তা করিতে বলা হইয়াছে, কর্মীর দলে ভিড়িয়া যাইবার আদেশ করা হয় নাই? কারণ কর্মীর দৃষ্টিভংগী ও সমুদয় কার্যকলাপ সাহায্য ও সহানুভূতির উপযুক্ত নাও হইতে পারে। লক্ষ্য করিলে বুঝা যায়, এই আয়তে ‘দলপরস্তী’র নিষিদ্ধতা প্রতিপন্ন হইতেছে।

‘‘মওলানা মওদুদীকে আমি ‘মুজাদ্দিদ’ বলিয়াছি’’ এরূপ কথা আমি স্মরণ করিতে অসমর্থ। আর কেহ মুজাদ্দিদ হইতে পারে, এরূপ সম্ভাবনা এমনকি নিশ্চয়তা প্রকাশ করিলেই যে তাঁহাকে ইমামতের একচ্ছত্র সিংহাসন প্রদান করিতে হইবে, ইহাও মূর্খতাব্যঞ্জক উক্তি! ইমাম শাফেয়ী কি মুজাদ্দিদ ছিলেন না? শায়খ আহ্মদ ছরহন্দী কি দ্বিতীয় হাজার সনের মুজাদ্দিদরূপে আখ্যাত নন? শাহ্ ওলীউল্লাহ দেহলভী কি স্বয়ং মুজাদ্দিদ বলিয়া দাবী করেন নাই? নবুওতের দাবীর পূর্বে মীর্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে কি অনেক বিশ্বস্ত ব্যক্তি মুজাদ্দিদ বলেন নাই? সুতরাং সকল বিষয়েই কি ইমাম শাফেয়ী, মুজাদ্দিদে আলফুছ্ছানী অথবা ওলীউল্লাহ দেহলভীর অনুসরণ করিয়া চলিতে হইবে? আর নবুওতের দাবীর পরও মীর্যা গোলাম আহমদকে কি মুজাদ্দিদ মানিতে হইবে? কাহাকেও মুজাদ্দিদ স্বীকার করা বা না করা কি নবুওতের মত ঈমানীয়াতের অংগ?

বেরাদরম, আমরা আহলেহাদীছ! আমরা ইমামে আ’যম আবু হানীফা কুফীর (রহঃ) মত পৃথিবীর অপ্রতিদ্বন্দ্বী ফকীহ আর ইমাম আহমদের (রহঃ) মত দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিছেরও তকলীদ করা পছন্দ করিনাই, আমরা শুধু একজনের হাতেই আমাদের দ্বীন ও আবরু সমর্পণ করিয়াছি। তাঁহার নাম হযরত মোহাম্মদ মুছ্তফা (দঃ)! একচ্ছত্র ইমামতের আসন আমরা শুধু তাঁহার জন্যই সুরক্ষিত রাখিয়াছি। এই জন্যই আমরা মোহাম্মদী। এই নামের নেশা আর তাঁহার দলের গৌরবের বিকার আমাদের পক্ষে কোনক্রমেই পরিত্যাগ করা সম্ভবপর হইবে না।

كسيكه محرم باد صباست مى داند

كه باوجود خزاں بوئے ياسمن باقى ست

(প্রভাত সমীরের গন্ধ যাহার পরিচিত, সে জানে- হেমন্ত সমাগমেও বাগানে জেস্মিন পুষ্পের গন্ধ বাকী রহিয়াছে।)

সত্য কথা বলার অপরাধে শুধু ফাঁসির হুকুম নয়, বহু ব্যক্তি ফাঁসি কাষ্ঠে প্রাণ দান করিয়াছেন। এই সেদিনও মিছরের বহু খ্যাতনামা ইংরাজী ও আরাবী শিক্ষিত বিদ্বান সত্য কথা বলিতে গিয়া মৃত্যুবরণ করিলেন। আহলেহাদীছ আন্দোলনের জন্যও বহু প্রথিতযশা মনীষী ফাঁসী, কারাদন্ড ও সম্পত্তি বাজেয়াফ্তের ক্লেশ ভোগ করিয়াছিলেন, তবে কেন মওদুদী ছাহেব তাঁহাদের দলে ভিড়িয়া গেলেন না? একথা পত্রলেখক ভাবিয়া দেখিয়াছেন কি?

৫[3]। মওলানা মওদুদীর পরিচয় দিতে গিয়া পত্রলেখক আমাকে জানাইয়াছেন, তাঁহার পুস্তকাদি পাঠ করিয়া তিনি জানিতে পারিয়াছেন যে, একজন মুছলমানের বিশেষতঃ একজন আহলেহাদীছের যাহা করা উচিত, মওলানা মওদুদী তাহাই করিতেছেন ও অন্যকে করিবার জন্য আহবান করিতেছেন। তিনি এই পথে সমস্ত দুনিয়াকে সাধারণভাবে আর মুছলমানদিগকে বিশেষভাবে ডাকিতেছেন।

পত্রলেখকের উক্তিতে প্রমাণিত হয় যে, মুছলমানদের বা আহলেহাদীছের বর্তমান সংকটপূর্ণ অবস্থায় কর্তব্য কি, তিনি তাহার দিশা হারাইয়াছিলেন, মওদুদী ছাহেবের পুস্তকগুলি তাহাকে চক্ষু দান করিয়াছে। উত্তম কথা! কিন্তু কোরআন হাদীছ যখন তাঁহাকে পথের সন্ধান দিতে পারে নাই, তখন মওদুদী ছাহেবের পুস্তক তাঁহাকে যে সঠিক পথেরই সন্ধান দিয়াছে, এ বিষয়ে তিনি কৃতনিশ্চয় হইলেন কেমন করিয়া? বিশেষতঃ আহলেহাদীছদের কর্তব্য কি, তাহাই বা মওদুদী ছাহেব জানিলেন কিরূপে? তিনি আহলেহাদীছ আন্দোলনকে যদি সঠিক ও সত্য জানিতেন তাহা হইলে তিনি স্বয়ং আহলেহাদীছ দলের অন্তর্ভুক্ত হইয়া তাহাদের আন্দোলনকে যোরদার করিতে চেষ্টিত হইতেন না কি? এই আন্দোলনে তাঁহার আস্থা নাই বলিয়াই কি তিনি একটি স্বতন্ত্র আন্দোলন শুরু করেন নাই? যে ব্যক্তি আহলেহাদীছ মতবাদকে বিশ্বাস করেননা, তাঁহার নেতৃত্ব কোন ঈমানদার ও হায়া সম্পন্ন আহলেহাদীছের পক্ষে স্বীকার করা ও তাঁহার আন্দোলনে যোগ দেওয়া কি সম্ভবপর? ইসলামের পথে কি শুধু মওদুদী ছাহেব একাই জনগণকে ডাকিতেছেন? দ্বীনের অন্যান্য আহলেহাদীছ ও হানাফী সেবকগণ কি কিছুই করিতেছেন না? না তাঁহারা সকলেই ইছলাম বিরোধী পথেই মানব সমাজকে ডাকিয়া চলিয়াছেন? আমি মনে করি, পত্রলেখক এবং মওদুদী জামাআতের এই আপত্তিকর উদ্ধত মনোভাবের জন্যই আমাদের পক্ষে তাঁহাদের সহিত সহযোগ করার কোন পথ নাই।

৬। ‘দ্বীনের প্রতিষ্ঠা’ ও ‘বিভেদের পরিহার’ সম্পর্কে পত্রলেখক তাহার দলের ‘মটো’ স্বরূপ ছূরত আশ্ শূরার যে আয়ত উধৃত করিয়াছেন, আমি মনে করি, হয় তিনি ইহার অর্থ অবগত নন, অথবা তাঁহার দলপরস্তীর নূতন দীক্ষা তাঁহার চক্ষু অন্ধ করিয়া দিয়াছে। حُبُّكَ الشَّيْئَ يُعْمِىْ وَ يُصِمُّ কোন বস্ত্তর অতিরিক্ত অনুরাগ যে মানুষকে অন্ধ ও বধির করিয়া ফেলে,[4] ইহাই তাহার জ্বলন্ত প্রমাণ। আমি মওলবী ছাহেবকে হুশিয়ার করিয়া দিতে চাই যে, দুনিয়ার পিঠে কেবল তিনি ও তাঁহার জামাত ইকামতে দ্বীনের ঠিকা গ্রহণ করিয়াছে, যতশীঘ্র সম্ভব, এই অলীক ধারণা তাঁহার স্বীয় মস্তক হইতে বিদূরিত করা উচিত আর তাঁহার চিন্তা করা উচিত তিনি এবং তাঁহার জামাতই মুছলিম সংহতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করিতেছে, না যাহারা স্ব স্ব সীমানার ভিতর থাকিয়া সাধ্যপক্ষে দ্বীনের সেবা করিয়া যাইতেছে, তাহারাই বিভেদ সৃষ্টিকারী?

ইয়াহুদ ও নাছারাদিগকে তওহীদের পথে আহবান করার জন্য আল্লাহ তদীয় রছূল (দঃ)-কে আদেশ দিয়াছিলেন, قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْاْ إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللّهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئاً- ‘আপনি বলুন- হে গ্রন্থধারী সমাজ, এস, আমরা সকলেই এমন একটি কথায় সমবেত হই, যাহা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সর্বস্বীকৃত। সেই কথাটি হইতেছে এই যে, আমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাহারও ইবাদত করিব না এবং তাঁহার সহিত কোন বস্ত্তকে অংশী করিব না’ (আলে ইমরান ৬৪)। পত্রলেখক এই আয়তের সাহায্যে আমাদিগকে এবং অন্যান্য মুছলমানদিগকে তাঁহাদের জামাতে ইছলামীতে ভিড়িয়া যাইবার সৎপরামর্শ দিয়াছেন। আমি বলিব, ইহাও তাঁহার এবং তাঁহার দলের ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁহার জানিয়া রাখা উচিত যে, শির্ক ও কুফরের বিরুদ্ধে পাক ভারত উপমহাদেশে আহলেহাদীছগণ যে জদ্দ ও জিহাদ চালাইয়া আসিয়াছেন আর আজও তাঁহাদের আপামর জনসাধারণ কুফর ও শির্ক হইতে যতটা দূরে সরিয়া আছেন, তাহার দৃষ্টান্ত বিরল। তওহীদের শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আহলেহাদীছগণ মওলানা মওদুদী ও তদীয় জামাতের আদৌ মুখাপেক্ষী নয়। প্রকাশ্য শির্ক ও কুফরের বিরুদ্ধে এই দলের আমীর আজ পর্যন্ত কি সংগ্রাম করিয়াছেন, পাক ভারতের আহলেহাদীছগণ তাহা অবগত নন। উল্লিখিত আয়ত উধৃত করার তাৎপর্য কি ইহাই নয় যে, আমরা এবং অন্যান্য সমুদয় মুছলমান ইয়াহুদ নাছারার পর্যায়ভুক্ত আর তাহাদিগকে তওহীদের পথে আহবানকারী হইতেছে জামাতে ইছলামী এবং উহার আমীর! আমি মনে করি, এই দুষ্ট মনোভাবের জন্যই ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্গত মধ্য প্রদেশের মওলানা আব্দুল মাজেদ দরইয়াবাদী প্রমুখ বিদ্বানগণ মওদুদী আন্দোলনকে ‘খারেজী আন্দোলন’ বলিয়া অভিহিত করিয়া থাকেন।

৭। পত্রলেখক বলিয়াছেন, যাহাদের মধ্যে মৌলিক ইত্তিহাদ রহিয়াছে, তাহাদিগকে জামাতে ইছলামী একটি দলে মিলিত হইবার সুযোগ দিয়াছে আর সেই জন্যই নাকি পত্রলেখক নিজের জন্য এই ‘‘সর্বমুখী আন্দোলন’’ বাছিয়া লইয়াছেন।

পত্রলেখক নিজের জন্য কি বাছিয়া লইয়াছেন, তার জওয়াবদিহী তিনিই তাঁহার সৃষ্টিকর্তার কাছে করিবেন। আমি শুধু এইটুকুই বলিব যে, কুরআন ও সুন্নাতে ছহীহাই একমাত্র মর্মকেন্দ্র, যে স্থানে সমুদয় মুছলমান মিলিত হইতে পারে। মওদুদী দৃষ্টিভংগী তাঁহার এবং তাঁহার দলের মিলনকেন্দ্র হইতে পারে কিন্তু মুছলিম জাতির জন্য নয়! ‘জামাতে ইছলামী’তে সকল দলের মিলিত হইবার সুযোগ রহিয়াছে, এ-কথা সম্পূর্ণ অলীক। মওদুদী ছাহেব ইছলামের যে ব্যাখ্যা দিয়া থাকেন, তাহাতে দীক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত এবং তাঁহাকে একচ্ছত্র নেতা স্বীকার না করা পর্যন্ত ‘জামাতে ইছলামীর’ দ্বার সকল মুছলমানের জন্য রুদ্ধ। আমি যাহা বলিতেছি তাহার অসত্যতার একটি নযীরও জামাতে ইছলামীর কোন ভক্ত প্রমাণিত করিতে পারিবে না।

আহলেহাদীছ আন্দোলন ইহার সম্পূর্ণ বিপরীত; এই জামাআতে থাকার জন্য ব্যক্তি বিশেষের মতবাদ ও দৃষ্টিভংগীকে স্বীকার করার প্রয়োজন হয় না। কোন ব্যক্তি বিশেষকে আমীর না মানিলে তাহাকে আহলেহাদীছ জামাআত হইতে খারিজ করার উপায় নাই। আহলেহাদীছগণ বুখারীর সমুদয় মর্ফূ ও মুছনদ হাদীছকে অকাট্য বলিয়া বিশ্বাস করেন, তাঁহারা প্রমাণিত ‘খবরে আহাদকে’ অবশ্যপ্রতিপালনীয় মনে করেন। ফকীহদের আসন মোহাদ্দেছীন অপেক্ষা উন্নত মনে করেন না। কোন হাদীছ প্রমাণিত বলিয়া সাব্যস্ত হইলে কোন নির্দিষ্ট ইমাম উহা অনুসরণ করার অনুমতি না দিলেও উক্ত হাদীছের অনুসরণ ওয়াজিব জানেন।

এই বিষয়গুলি মৌলিক না ফরূআত? জামাতে ইছলামীর নেতা উল্লিখিত বিষয়গুলির একটিও মানেন না। এমনকি জানিয়া শুনিয়া হাদীছ প্রত্যাখ্যানকারীকে অনেক ক্ষেত্রে তিনি নিরপরাধ বলিয়াছেন। অন্ধভক্তির পরিবর্তে মওদুদী ছাহেবের মাসিক তর্জমানুল কোরআন এবং ইমাম বুখারী সম্পর্কে লিখিত তাঁহার সাম্প্রতিক প্রবন্ধগুলি, যাহা তাঁহার নিজস্ব মাসিক ও দলীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক উর্দু কাগজগুলিতে প্রকাশিত হইয়াছে, পাঠ করিতে পারিলে আমার উক্তির সত্যতা সহজেই হৃদয়ংগম হইবে। প্রয়োজন হইলে আমিও আমার উক্তির যথার্থতা প্রতিপন্ন করিতে রাযী আছি।

তাঁহার প্রাথমিক লেখাগুলি পাঠ করিয়াই তীক্ষ্ণ ধ্বীশক্তি সম্পন্ন মরহুম আল্লামা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী স্বীয় প্রতিভা বলে যাহা ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছিলেন, আহলেহাদীছগণ তাহাও পাঠ করিয়া দেখিতে পারেন। পাঞ্জাব গোজরানওয়ালার মওলানা মোহাম্মাদ ইসমায়ীল ছলফী, যিনি হারাগাছ আহলেহাদীছ কনফারেন্সেও উপস্থিত ছিলেন, হাদীছ সম্পর্কে জামাতে ইছলামীর দৃষ্টিভংগী (جماعت اسلامى كا نظريه حديث) নামেও একটি মূল্যবান পুস্তিকা রচনা করিয়াছেন। ফলকথা মওলানা আবুল আলা মওদুদী আর যাহাই হউন, আহলেহাদীছ নন এবং আহলেহাদীছদের সাথে তাঁর যে মতভেদ, তাহা খুঁটিনাটি নয়, অছূলে দ্বীনের মতভেদ!

৮। সাত নম্বর জওয়াবে মওলানা মওদুদী আহলেহাদীছ মতবাদের বিরোধী কি না, পত্রলেখকের এ প্রশ্নেরও জওয়াব রহিয়াছে। আর তিনি হানাফী কিনা, এ প্রশ্নের উত্তর আমার পরিবর্তে হানাফী জামাআতের বিদ্বানগণই উত্তমরূপে প্রদান করিতে সক্ষম। আমার নিজের জ্ঞান ও বিশ্বাস মত আমি তাঁহাকে হানাফী জানি, অবশ্য দেওবন্দের মওলানা হুছাইন আহমদ মদনী প্রমুখ বিদ্বানগণ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মওলানা আহমদ আলী, পাঞ্জাবের হানাফী জামাআতের আমীরে শরীআত মওলানা আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (১৯২৭ সালে বৃটিশ সরকার যখন আমাকে রাজদ্রোহের অভিযোগে এক বৎসরের জন্য কারাগারে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, তখন ইনি আমার কারা সহচর ছিলেন) প্রভৃতি হানাফী বিদ্বানগণ মওদুদী ছাহেবকে হানাফীও স্বীকার করেন নাই। অন্য যে যাহাই বলুক, আমি মওলানা মওদুদী ছাহেবকে মুল্হিদ, বেদ্বীন ও ইছ্লামের শত্রু বিবেচনা করি না, তাঁহাকে দজ্জালও জানি না। কতকগুলি অছূল ও ফরূআতে তাঁহাকে ভ্রান্ত মনে করিলেও এবং তাঁহাকে আহলেহাদীছ বিরোধী বলিয়া জানিলেও তাঁহার ঈমান, ইছ্লাম ও বিদ্যাবত্তায় আমার সন্দেহ নাই।

হাদীছ শাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী না হইলেও যেহেতু তিনি স্বয়ং ইংরাজী শিক্ষিত, তাই নব্য দলের মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাষা (Mode of Expression) এবং জগতের বর্তমান গতি ও পরিবেশের সহিত তিনি সুপরিচিত এবং ইছলামের আদর্শ ও শিক্ষার সহিত সেগুলির সামঞ্জস্য বিধানে তাঁহার দক্ষতা রহিয়াছে। এ জন্য তাঁহার দলে ইংরাজী শিক্ষিতরাই আকৃষ্ট হইয়াছে বেশী। যতদিন পর্যন্ত তাঁহার মস্তকে দলীয় পার্লামেন্টারী কার্যক্রমের অভিসন্ধি প্রবেশ করে নাই, ততদিন পর্যন্ত তাঁহার সাহিত্য সাধারণভাবে মনোজ্ঞই ছিল, কিন্তু দলপরস্তি ও ফ্যাসিস্টিক স্বৈরভাব সৃষ্টি হওয়ার পর হইতে তাঁহার লেখনী তার পূর্বকার শক্তি হারাইয়া ফেলিয়াছে। অদূর ভবিষ্যতে তিনি নবুওতের দাবী করিবেন কিনা? এ প্রশ্নের জওয়াব আমার কাছে নাই, কারণ আমি ‘আলিমুল গয়েব’ অর্থাৎ ভবিষ্যদ্বক্তা নই। তবে দীর্ঘকাল ধরিয়া তাঁহার লেখা পড়িয়া এবং অল্প সময়ের জন্য তাঁহাকে দর্শন করিয়া আমার এই ধারণাই জন্মিয়াছে যে, পয়গম্বরীর দাবী তাঁহার পক্ষে সম্ভবপর হইবে না। কারণ কতক লোকের মস্তকে আঘাত হানিবার যোগ্যতা তাঁহার মধ্যে থাকিলেও মানুষের মনে দাগ কাটার ক্ষমতা তাঁহার নাই!

পত্রলেখক আমাকে জামাতে ইছলামীতে দীক্ষা গ্রহণ করার জন্য যে আমন্ত্রণ জানাইয়াছিলেন, তজ্জন্য অশেষ ধন্যবাদ! আমার পক্ষে এবং কোন আহলেহাদীছের পক্ষে এ আমন্ত্রণ স্বীকার করার উপায় নাই কেন, তাহার জওয়াব দিতে গিয়া তর্জুমানের কয়েক পৃষ্ঠাই নিঃশেষিত হইল। সুতরাং আহলেহাদীছ জামাআত ও আন্দোলনের দোষত্রুটি ধরিয়া পত্রলেখক আমাকে যে সকল প্রশ্ন করিয়াছেন, সেগুলি স্বতন্ত্রভাবেই ইনশাঅল্লাহ আলোচনা করিব।

এস্থলে সংক্ষেপে এইটুকু বলিব যে, আহলেহাদীছ পার্লামেন্টারী তৎপরতার আন্দোলন নয়, ইহা তাহার অনুসারীদিগকে ‘‘আহলেহাদীছ পার্টির’’ পক্ষ হইতে মনোনয়ন প্রদান করে না। ইহার প্রচার পদ্ধতি খৃষ্টান বা কাদিয়ানী মিশনের মত নয়। বাহিরে আড়ম্বর দেখাইয়া লোক টানা ইহার নীতি নয়। সুতরাং ইহার কলা-কৌশল সবসময় পরিবর্তনশীলও নয়। আহলেহাদীছ আন্দোলনের ভিতরে ও বাহিরে আর জম্ঈয়তে আহলেহাদীছের কর্মসূচিতে অথবা কর্মীদলে কোন দোষত্রুটি নাই, এরূপ কথা কেহই বলে না। মূলনীতিকে ঠিক রাখিয়া সমস্তই সংশোধিত ও পরিবর্তিত হইতে পারে। ইহার মধ্যে ডিক্টেটর-শিপ নাই। কাহারও মুজাদ্দেদীয়ত ও ইমামতের অভিমানও নাই। গণতান্ত্রিক[5] ‘শূরার’ অনুসরণ করিয়া নূতন পরিচালক, নূতন কমিটি সহজেই গঠন করা যাইতে পারে। অতএব কোন আহলেহাদীছের পক্ষে ইহার ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য আহলেহাদীছ জামাআত পরিত্যাগ করা এবং অন্য জামাতে ভর্তি হওয়া অবৈধ ও অন্যায়- ওয়াছ্ছালাম।

আহ্কর

মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল্-কোরায়শী

[1]. মাননীয় লেখক কর্তৃক সম্পাদিত অধুনালুপ্ত মাসিক তর্জুমানুল হাদীছ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৭, ৭ম বর্ষ ৩য় সংখ্যা (ফাল্গুন ১৩৬৩) পৃঃ ১৪৩-১৪৮ হইতে সংকলিত। -প্রকাশক।

[2]. আহলেহাদীছ কোন মতবাদ নয়, এটি একটি পথের নাম। যা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ দ্বারা পরিচালিত। -পরিচালক হা.ফা.বা।

[3]. এখানে ক্রমিক সংখ্যা ৪ হওয়া উচিত ছিল।

[4]. আলবানী বলেন, হাদীছটি মরফূ সূত্রে বর্ণিত হ’লেও মওকূফ হওয়াটাই অধিক সামঞ্জস্যশীল। ছাহাবী আবুদ্দারদা (রাঃ) হ’তে আবুদাঊদ বর্ণিত অত্র হাদীছটি যঈফ। -মিশকাত হা/৪৯০৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/১৮৬৮। -পরিচালক হা.ফা.বা।

[5]. গণতান্ত্রিক শূরা কথাটি ঠিক নয়। কেননা সেখানে যোগ্য-অযোগ্য নির্বিশেষে অধিকাংশের মতামতই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হয়। এতদ্ব্যতীত সেখানে দলাদলি, ঝগড়া ও দর কষাকষি অপরিহার্য। পক্ষান্তরে ইসলামী শূরায় অহি-র বিধানই চূড়ান্ত। যোগ্য সদস্যগণ সেখানে আল্লাহর বিধানের পক্ষে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। -পরিচালক হা.ফা.বা।

আমরা বলতে চাই যে, বাংলাদেশকে তার ভৌগলিক ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে আরও শক্ত...
29/05/2025

আমরা বলতে চাই যে,
বাংলাদেশকে তার ভৌগলিক ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। এর পাশাপাশি দ্বিতীয় ডিফেন্স লাইনে থাকবে সুপ্রশিক্ষিত বিডিআর, আনছার, কোস্টগার্ড ইত্যাদি বাহিনী। তৃতীয়তঃ সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্তদেরকে রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে তালিকাভুক্ত করে তাদের মাধ্যমে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সাধারণ যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এরপরেও থাকবে ক্যাডেট, এনসিসি, জুডো-কারাতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং সর্বোপরি ঈমানী চেতনা বৃদ্ধি ও জিহাদী জাযবা সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে সদা সচেতন ও সুদক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। যাতে হামলা এলেই ব্যাপক জনযুদ্ধের মুখে শত্রু লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়। যেভাবে পালিয়েছে ভিয়েতনাম থেকে আমেরিকা এবং আফগানিস্তান থেকে রাশিয়া। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে তাই নিজ দেশের সীমান্ত রক্ষার সাথে সাথে আর্থ-সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিজয়ের কৌশলও অবলম্বন করতে হবে।
পরিশেষে বলব, ভৌগলিক প্রতিরক্ষার জন্য যেমন শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রয়োজন, জাতির ঈমানী চেতনা উজ্জীবিত রাখার জন্য তেমনি প্রয়োজন উন্নত মাদরাসা শিক্ষার। সেই সাথে প্রয়োজন কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সমন্বিত সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা। আল্লাহ আমাদের ঈমানী চেতনা ও ভৌগলিক স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখুন- আমীন!

🔰✍প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
◼ আমীর, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ।
◼ প্রফেসর (অবঃ), আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ।

কাশ্মীরে ভারত যে দখলদার শক্তি, একথা একটা শিশুও বুঝে। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বিভক্ত ভারতবর্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এল...
29/05/2025

কাশ্মীরে ভারত যে দখলদার শক্তি, একথা একটা শিশুও বুঝে। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বিভক্ত ভারতবর্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এলাকাগুলি নিয়ে ‘পাকিস্তান’ গঠিত হয়। সে হিসাবে কাশ্মীর নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের অংশীভূত। কিন্তু কাশ্মীরী বংশোদ্ভূত জওয়াহের লাল নেহরু এটা মানতে না পেরে রাতারাতি সৈন্য পাঠিয়ে রাজ্যটির বৃহদাংশ দখল করে নেন। সেই থেকে শুরু হ’ল অধিকৃত কাশ্মীরে সংখ্যাগুরু মুসলমানদের মুক্তি সংগ্রাম। কাশ্মীরী মুজাহিদদের এই মুক্তিযুদ্ধকে এখন বলা হচ্ছে ‘সন্ত্রাস’ ও ‘জঙ্গী তৎপরতা’। যদি এরা সন্ত্রাসী হয়, তবে এদেরকে সন্ত্রাসী বানিয়েছে হানাদার ভারত। আর স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরকে দখলদার শক্তি চিরকাল ‘সন্ত্রাসী’ বলেই অভিহিত করেছে। যেমন করেছিল দখলদার বৃটিশরা ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, ক্ষুদিরাম, তীতুমীর, শরীয়তুল্লাহ, সৈয়দ আহমাদ ব্রেলভী, শাহ ইসমাঈল শহীদ, মাওলানা বেলায়েত আলী, এনায়েত আলী প্রমুখ নেতৃবৃন্দকে।

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আমীর, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ।

❑ যিলহজ্জ মাসের ফযীলত ও আমল-------------------------------------------------◯❑ যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের ফযীলত :--------...
28/05/2025

❑ যিলহজ্জ মাসের ফযীলত ও আমল
-------------------------------------------------◯
❑ যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের ফযীলত :
-------------------------------------------------◯
যিলহজ্জ মাস পুরোটাই ফযীলতপূর্ণ হ’লেও প্রথম দশ দিনের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। যেমন-

এক. আল্লাহ এই দিনগুলির কসম করেছেন : মহান আল্লাহ কুরআনে বিভিন্ন বিষয়ের কসম করেছেন। যিলহজ্জ মাসের দশ দিনের কসম করে আল্লাহ বলেন,وَالْفَجْرِ، وَلَيَالٍ عَشْرٍ، وَالشَّفْعِ وَالْوَتْرِ ‘শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির, শপথ জোড় ও বেজোড়ের’ (ফজর ৮৯/১-৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الْعَشْرَ عَشْرُ الأَضْحَى وَالْوِتْرَ يَوْمُ عَرَفَةَ وَالشَّفْعَ يَوْمُ النَّحْرِ، ‘দশম হ’ল ঈদুল আযহার দিন, বেজোড় হ’ল আরাফার দিন আর জোড় হ’ল কুরবানী দিন’।[6]

দুই. বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন : জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَفْضَلُ أَيَّامِ الدُّنْيَا أَيَّامُ الْعَشْرِ، ‘দুনিয়ার দিন সমূহের মধ্যে যিলহজ্জের প্রথম দশদিন সর্বোত্তম দিন’।[7]

তিন. এই দিনগুলির আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَا الْعَمَلُ فِى أَيَّامِ الْعَشْرِ أَفْضَلَ مِنَ الْعَمَلِ فِى هَذِهِ. قَالُوا وَلاَ الْجِهَادُ قَالَ وَلاَ الْجِهَادُ، إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَىْءٍ- ‘এমন কোন দিন নেই যে দিনসমূহের নেক আমল আল্লাহর নিকট যিলহজ্জ মাসের এই দশ দিনের নেক আমল অপেক্ষা বেশি প্রিয়। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি নয়? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, জিহাদও নয়। তবে জান-মাল নিয়ে যদি কোন লোক জিহাদে বের হয় এবং এ দু’টির কোনটি নিয়েই আর ফিরে না আসে তার কথা ভিন্ন।[8] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ عَمَلٍ أَزْكَى عِنْدَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلاَ أَعْظَمَ أَجْراً مِنْ خَيْرٍ يَّعْمَلُهُ فِى عَشْرِ الأَضْحَى- ‘যেসব আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সর্বোত্তম মর্যাদা লাভ করা যায় যিলহজ্জ মাসের দশদিনের আমল তার অনুরূপ’।[9]

চার. এই দশ দিনে সকল মৌলিক ইবাদত একত্রিত হয় : এই দশদিন আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত প্রায় সকল ইবাদত একত্রিত হয়, যা অন্য কোন সময়ে একত্রিত হওয়া সম্ভব নয়। যেমন হজ্জ, কুরবানী, ছালাত, ছিয়াম, দান-ছাদাক্বাসহ সকল ইবাদত এই দশ দিন একত্রিত করা যায়। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, وَالَّذِي يَظْهَرُ أَنَّ السَّبَبَ فِي امْتِيَازِ عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ لِمَكَانِ اجْتِمَاعِ أُمَّهَاتِ الْعِبَادَةِ فِيهِ وَهِيَ الصَّلَاةُ وَالصِّيَامُ وَالصَّدَقَةُ وَالْحَجُّ وَلَا يَتَأَتَّى ذَلِكَ فِي غَيْرِهِ، ‘এ কথা স্পষ্ট হয় যে, যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের বিশেষ গুরুত্বের কারণ; যেহেতু ঐ দিনগুলিতে মৌলিক ইবাদতসমূহ একত্রিত হয়েছে। যেমন ছালাত, ছিয়াম, ছাদাক্বাহ এবং হজ্জ, যা অন্যান্য দিনগুলিতে এভাবে একত্রিত হয় না’।[10]

পাঁচ. দ্বীনের নিদর্শনসমূহের সম্মানের সময় : এই দশ দিনে যেহেতু ইসলামের মৌলিক ইবাদত একত্রিত হয়, সেহেতু আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শন সমূহও সম্মান করা সহজ হয়। মহান আল্লাহ বলেন,ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ، ‘এটাই হ’ল আল্লাহর বিধান, যে আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাক্বওয়া থেকেই’ (হজ্জ ২২/৩২)।

আল্লাহর শি‘আর বা নিদর্শন বলতে বুঝায় এমন প্রতিটি বিষয় যাতে আল্লাহর কোন নির্দেশের চিহ্ন দেয়া আছে (কুরতুবী)। এগুলি আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চিহ্ন। বিশেষ করে হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি, যেমন হজ্জের যাবতীয় কর্মকান্ড (কুরতুবী; সা‘দী)। হাদীর জন্য হাজীদের সঙ্গে নেয়া উট ইত্যাদি (ইবনে কাছীর)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এখানে আল্লাহর নিদর্শন সম্মান করার দ্বারা হাদীর জন্তুটি মোটাতাযা ও সুন্দর হওয়া বোঝানো হয়েছে (ইবনে কাছীর)।[11]

আরাফার দিনের ফযীলত :

যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হ’ল আরাফার দিন। এ দিনেরও বিশেষ ফযীলত রয়েছে।-

১. আল্লাহর দ্বীন ও নে‘মত পরিপূর্ণ হওয়ার দিন : মহানবী (ছাঃ)-এর নবুঅতের শেষদিকে বিদায় হজ্জের সময় আরাফার দিন শুক্রবার আল্লাহ ইসলামকে পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে ঘোষণা করেন। আল্লাহ বলেন,الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا، ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)।

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক ইহূদী তাঁকে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন। তা যদি আমাদের ইহুদী জাতির উপর অবতীর্ণ হ’ত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে ঈদের দিন হিসাবে পালন করতাম। তিনি বললেন, কোন আয়াত? সে বলল, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নে‘মত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)। ওমর (রাঃ) বললেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নবী করীম (ছাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি। তিনি সেদিন আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন আর সেটা ছিল জুম‘আর দিন’।[12]

২. কুরআন ও হাদীছকে চূড়ান্ত সংবিধান ঘোষণার দিন : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃত্যুর অল্প কিছু দিন আগে বিদায় হজ্জের ভাষণে ক্বিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত আগত সকল মানুষের সকল সমস্যার সমাধান হিসাবে একমাত্র কুরআন ও হাদীছের কথা ঘোষণা করেন। ভাষণের এক পর্যায়ে তিনি বলেন,وَقَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ كِتَابَ اللهِ. ‘আমি তোমাদের মাঝে এমন একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা অাঁকড়ে ধরো, তবে তোমরা আমার মৃত্যুর পর

কখনো বিপথগামী হবে না, তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব’।[13]

মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ ‘আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত’।[14]

৩. আল্লাহ এই দিনের কসম করেছেন : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الْيَوْمُ الْمَوْعُودُ يَوْمُ الْقِيَامَةِ وَالْيَوْمُ الْمَشْهُودُ يَوْمُ عَرَفَةَ وَالشَّاهِدُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ، ‘আল-ইয়াউমুল মাও‘ঊদ’ (বুরূজ ৮৫/২) অর্থ-ক্বিয়ামতের দিন; ‘আল-ইয়াউমুল মাশ্হূদ’ (হূদ ১১/১০৩) অর্থ আরাফাতে (উপস্থিতির) দিন এবং ‘আশ্-শাহিদ’ (বুরূজ ৮৫/৩) অর্থ- জুম‘আর দিন’।[15] আল্লাহ বলেন, ‘শপথ জোড় ও বেজোড়ের’ (ফজর ৮৯/৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘বেজোড়-এর অর্থ আরাফা দিবস এবং জোড়-এর অর্থ ইয়াওমুন্নাহর (কুরবানী দিন)’।[16]

৪. আরাফাত ময়দানের সন্নিকটে আল্লাহ মানব জাতি থেকে ওয়াদা নিয়েছেন : ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা আরাফার ময়দানের সন্নিকটে না‘মান নামক স্থানে আদম (আঃ)-এর মেরুদন্ড হ’তে তাঁর সন্তানদের বের করে শপথ নিয়েছিলেন। তাদেরকে পিঁপড়ার মত আদম (আঃ)-এর সামনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের সম্মুখে কথা বলেছিলেন,أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِيْنَ، أَوْ تَقُولُوْا إِنَّمَا أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِنْ بَعْدِهِمْ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُوْنَ- ‘আমি কি তোমাদের প্রভু নই? আদম সন্তানরা উত্তর দিয়েছিল, হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের প্রতিপালক। এতে আমি সাক্ষী থাকলাম। যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন এ কথা বলতে না পার, আমরা জানতাম না কিংবা তোমরা এ কথাও বলতে না পার, আমাদের পিতৃ-পুরুষগণ আমাদের পূর্বে মুশরিক হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা তাদের পরবর্তী বংশধর। তুমি কি বাতিলধর্মী (পিতৃ-পুরুষ)-গণ যা করেছে সে আমলের কারণে আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে’ (আ‘রাফ ৭/১৭২-১৭৩)।[17]

৫. এই দিন সবচেয়ে বেশী মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় : আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِى بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ فَيَقُولُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ، ‘এমন কোন দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, এরা কি চায়? (অর্থাৎ তারা যা চায় আমি তাই দেব)।[18]

৬. এই দিন আল্লাহ ফেরেশতাদের কাছে তাঁর বান্দাদের নিয়ে গর্ব করেন : নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُبَاهِى مَلاَئِكَتَهُ عَشِيَّةَ عَرَفَةَ بِأَهْلِ عَرَفَةَ فَيَقُولُ انْظُرُوا إِلَى عِبَادِى أَتَوْنِى شُعْثاً غُبْراً. ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আরাফার দিন বিকেলে আরাফায় অবস্থানকারী ব্যক্তিদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। অতঃপর বলেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে লক্ষ্য কর, তারা আমার কাছে এসেছে মাথায় এলোমেলো চুল নিয়ে ধুলি মলিন অবস্থায়’।[19]

৭. এই দিন মুসলমান (হাজী)দের ঈদ : এই মর্যাদাপূর্ণ দিন প্রত্যেক বছর মুসলমানদের মাঝে ফিরে আসে। এই দিন হাজীগণ আরাফার ময়দানে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,يَوْمُ عَرَفَةَ وَيَوْمُ النَّحْرِ وَأَيَّامُ التَّشْرِيقِ عِيدُنَا أَهْلَ الإِسْلاَمِ وَهِىَ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ- ‘আমাদের মুসলিম জনগণের ঈদের দিন হচ্ছে আরাফার দিন, কুরবানীর দিন ও তাশ্রীকের দিন। এ দিনগুলি হচ্ছে পানাহারের দিন’।[20]

৮. আরাফার দো‘আ সবচেয়ে উত্তম দো‘আ : নবী করীম (ছাঃ) বলেন,خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِى لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ. ‘সকল দো‘আর শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল আরাফার দিনের দো‘আ। আর শ্রেষ্ঠ কালিমাহ (যিকর) যা আমি পাঠ করেছি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ পাঠ করেছেন তা হ’ল, ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’। অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শারীক নেই। তাঁরই রাজত্ব। তার জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি সব কিছুর উপরে ক্ষমতাবান’।[21]

৯. এই দিনের ছিয়াম দুই বছরের গুনাহের কাফফারা : কাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আরাফা দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন,صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهُ، ‘আরাফা দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আমি আশা করি যে, তা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গোনাহের কাফফারা হবে’।[22] সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ صَامَ عَرَفَةَ غُفِرَ لَهُ سَنَتَيْنِ مُتَتَابِعَتَيْنِ- ‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন ছিয়াম রাখে তার পরপর দুই বৎসরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়’।[23]

১০. হজ্জের মূল কাজ হ’ল আরাফায় অবস্থান করা : হজ্জের অন্যতম ফরয হ’ল আরাফায় ময়দানে অবস্থান করা। সুতরাং ‘যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বেই আরাফায় পৌঁছে গেল সে হজ্জ পেয়ে গেল।[24] পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে আরাফায় অবস্থান করল না, তার হজ্জ বিনষ্ট হয়ে গেল।[25] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,الْحَجُّ عَرَفَاتٌ الْحَجُّ عَرَفَاتٌ الْحَجُّ عَرَفَاتٌ أَيَّامُ مِنًى ثَلاَثٌ (فَمَنْ تَعَجَّلَ فِى يَوْمَيْنِ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ) وَمَنْ أَدْرَكَ عَرَفَةَ قَبْلَ أَنْ يَطْلُعَ الْفَجْرُ فَقَدْ أَدْرَكَ الْحَجَّ، ‘হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান, হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান, হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান। মিনার জন্য নির্ধারিত আছে তিন দিন। কোন ব্যক্তি যদি দুই দিন থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসে, তবে তার কোন গুনাহ হবে না। আর যদি কোন ব্যক্তি বিলম্ব করে, তারও কোন গুনাহ হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২০৩)। ফজর উদয়ের পূর্বেই যে ব্যক্তি আরাফায় পৌঁছে যায়, সে হজ্জ পেয়ে গেল’
পরিশেষে বলব, উপরে বর্ণিত আমলগুলি সম্পাদনের মাধ্যমে যিলহজ্জ মাসের ফযীলত লাভ করা যায় এবং অশেষ ছওয়াব হাছিল করা যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উক্ত আমলগুলি সঠিকভাবে পালন করে পরিপূর্ণ ছওয়াব লাভের তাওফীক দান করুন-আমীন!

📜 প্রবন্ধ ❑ যিলহজ্জ মাসের ফযীলত ও আমল
🖋️ মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
📚 মাসিক আত তাহরীক
🫵 বিস্তারিত জানতে কমেন্টে দেওয়ার লিংকে ক্লিক করুন ⬇️

Address

Rajshahi

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share