20/04/2025
🙏🙏🙏
স্বস্তিকা ≠ হুকড ক্রশ
"স্বস্তিকা"
সনাতনধর্মে কিংবা প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসে বিভিন্ন মঙ্গলময় প্রতীকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। পরমাত্মার সর্বশ্রেষ্ঠ নাম এর প্রতীক ও৩ম্, স্বস্তিকা, শ্রীযন্ত্রসহ অন্যান্য প্রতীক সমূহ রয়েছে। তবে স্বস্তিকা সনাতনধর্ম কিংবা ভারতীয় ইতিহাসে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বৌদ্ধ, জৈন কিংবা বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা সমূহে স্বস্তিকার উপস্থিতি লক্ষনীয়। প্রাচীন গ্রীক, এংলো-স্যাক্সন, জাপান, রাশিয়া সহ বিশ্বের বহু স্থানে স্বস্তিকা প্রতীকের ব্যবহার এর সন্ধান পাওয়া যায়।
আমেরিকান গ্রাফিক ডিজাইন লেখক স্টিভেন হেল তার বই Sw****ka: Symbol Beyond Redemption এ উল্লেখ করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে আমেরিকায় সকল মানুষ এই প্রতীককে মঙ্গলসূচক হিসেবে ব্যবহার করতো। ১৯২৫ সালে বিশ্বের এক নাম্বার সফট ড্রিংক কোকা-কোলা, বিখ্যাত বিয়ার কোম্পানি ‘‘কার্লসবার্গ’’ স্বস্তিকা চিহ্ন ব্যবহার করতো। এমনকি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান মিলিটারি ও ১৯৩৯ সালের শেষের দিকে RAF বিমানে স্বস্তিকা চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছিলো। যার মধ্যে দিয়ে, আমরা উপলব্ধি করতে পারি, তৎকালীন সময়ে স্বস্তিকা চিহ্নের প্রভাব কত ছিলো?
কিন্তু, এত প্রভাবশালী প্রতীক আজকে নৃশংসতা প্রতীকের অভিযোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ কিছু দিন পূর্বে নিষিদ্ধ করেছে স্বস্তিক চিহ্নের ব্যবহার। এছাড়াও, বর্তমান ইউরোপীয় দেশ সমূহে স্বস্তিকার প্রতি রয়েছে এক নেতিবাচক ধারণা।
কিন্তু কেন এই ঘৃণার সৃষ্টি হলো এই মঙ্গলসূচক চিহ্নের প্রতি?
এর উত্তর জানতে হলে, আমাদের ফিরে যেতে হবে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সংঘটিত প্রলয়ঙ্কারী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে।
হিটলার তখন জার্মানির একনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং ঘৃণাসূচক মনোহারী বক্তব্য দিয়ে জার্মানদের প্রস্তুত করছে যুদ্ধের জন্য। তৎকালীন সময়ে বহু ভারতীয় গ্রন্থ সমূহ ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ হতে থাকে। এবং বহু শব্দ, চিহ্ন ইউরোপীয়দের সাথে সাদৃশ্য চোখে পড়ে। হিটলারের রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডামূলক দাবি ছিলো যে, আর্য জাতি শ্রেষ্ঠ জাতি এবং জার্মানরা হলো সেই আর্য জাতির বিশুদ্ধ উত্তরসূরী। সেজন্য, সে আশ্রয় নেয় ধূর্ততার। প্রাচীন ভারতীয় স্বস্তিক চিহ্নের সাথে জার্মান হুকড ক্রসের সাদৃশ্য থাকায়। স্বস্তিকা হয়ে উঠে কুখ্যাত নাৎসি বাহিনীর পতাকার প্রতীক। ফলস্বরূপ, মঙ্গলসূচক স্বস্তিকা চিহ্ন রাতারাতি নৃশংসতার প্রতিবিম্ব হয়ে উঠে। ইউরোপীয় জনগণের নিকট ত্রাসের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরবর্তী সময়ে, ইউরোপীয় দেশসমূহে নিষিদ্ধ হতে থাকে স্বস্তিকা।
তবে আমাদের অনেক এর অজানা যে নাৎসীদের প্রতীক হুকড ক্রসের সাথে ভারতীয় স্বস্তিকার রয়েছে সুক্ষ কিছু পার্থক্য।
বর্তমান সময়ে এসে স্বস্তিকার পুনঃপ্রচলনের প্রচেষ্টা করছে সচেতন সমাজ। ইউরোপ এর দেশসমূহে এই চিহ্ন সম্পর্কে যে কুপ্রভাব সৃষ্টি হয়েছিল তা দূরে সরিয়ে পুনরায় মঙ্গলের প্রতীক স্বস্তিকা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তবে, সনাতনীগণ এখনো শ্রদ্ধাভরে সংরক্ষণ করে আসছে এই পবিত্র চিহ্ন। ভারতীয় উপমহাদেশসহ ইন্দোনেশিয়া, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশে এখনো সচরাচর স্বস্তিকার ব্যবহার দেখা যায়।
তাই হে অমৃতের সন্তানগণ! মঙ্গলের প্রতীক স্বস্তিকা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আমরাও করি আত্মনিয়োগ।
✨Run with