29/09/2025
ইসলামে নারীর কর্মসংস্থান : একটি পর্যালোচনা
> সেপ্টেম্বর ২০২৫ > মহিলা অঙ্গন
> মাসিক আত-তাহরীক
🎙ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
▪সহকারী সম্পাদক, মাসিক আত তাহরীক।
মানুষকে মহান আল্লাহ সৃষ্টি করে তাদেরকে পুরুষ-নারী দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। এই দুই শ্রেণীর কর্মকান্ড ও কর্মপন্থায় বেশ ব্যবধান ও বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। এ বৈচিত্র্য বিশ্ব ব্যবস্থার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এই কর্মপন্থাগত ব্যবধান-বৈচিত্র্যের সীমানা প্রাচীরকে মিটিয়ে দেয়া হ’লে বিশ্বব্যবস্থায় নানা জটিলতা ও সমস্যা সৃষ্টি হবে। আল্লাহ তা‘আলা নারী-পুরুষকে যেভাবে স্বভাবগত এবং গঠনগত স্বাতন্ত্র্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তেমনিভাবে জাগতিক ও ধর্মীয় জীবনে তাদের কর্মপন্থা ও দায়-দায়িত্বও ভিন্নতর করে দিয়েছেন। এটা সৃষ্টির প্রতি মহামহিম স্রষ্টার অতিশয় দয়ার বহিঃপ্রকাশ।
নারীর প্রধানতম কর্তব্য হ’ল, সংসার পরিচালনা করা, পরিবারের সার্বিক দিক লক্ষ্য রাখা এবং তার সন্তানদের প্রতিপালন-পরিচর্যা করা। শিক্ষা-দীক্ষাসহ সার্বিকভাবে যোগ্য করে গড়ে তোলা। সেই সাথে তার স্বামীর সেবা-যত্ন করা।[1] এমনকি নারীরা বাড়িতে স্বামীর খেদমতের সাথে গৃহস্থালীর কাজগুলো করলে সে জিহাদের সমপরিমাণ ছওয়াব পাবে।[2]
অন্যদিকে নারীর খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানসহ ব্যক্তিগত প্রয়োজন, সংসার পরিচালনা ও সন্তান-সন্ততি লালন-পালনসহ পারিবারিক ও সামাজিক সকল ব্যয়ভার থেকে নারী সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। এসব যাবতীয় দায়ভার স্বামী বা পিতার উপর আরোপিত হয়েছে। ইসলামে নারীর যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা পিতা অথবা স্বামীর উপর আবশ্যক করেছে।
সংসারের যাবতীয় দায়ভার পুরুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কারণ হ’ল শক্তি-ক্ষমতা, জ্ঞান-বুদ্ধি সহ কতিপয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়ে পুরুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। নেতৃত্বের প্রধান উৎস-উপাদান হ’ল সেবাব্রত। সেবার যাবতীয় দায়িত্ব দিয়ে পুরুষকে নারীর অভিভাবক করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ، ‘পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক। এজন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যকে প্রাধান্য দান করেছেন এবং এজন্য যে, তারা (নারীদের ভরণ-পোষণের জন্য) তাদের মাল-সম্পদ হ’তে ব্যয় করে থাকে। অতএব সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা হয় অনুগত এবং আল্লাহ যার হেফাযত করেছেন, আড়ালেও (সেই গুপ্তাঙ্গের) হেফাযত করে’ (নিসা ৪/৩৪)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا، ‘আর জন্মদাতা পিতার দায়িত্ব হ’ল ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রসূতি মায়েদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা। সাধ্যের অতিরিক্ত কাউকে বাধ্য করা যাবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৩৩)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে স্ত্রীর প্রতি পুরুষের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হ’লে তিনি বলেন,أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، أَوِ اكْتَسَبْتَ، ‘যখন তুমি আহার করবে তখন তাকেও (স্ত্রী) আহার করাবে, যখন তুমি বস্ত্র পরিধান করবে তখন তাকেও বস্ত্র পরিধান করাবে’।[3] অন্যত্র তিনি বলেন, وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوْا إِلَيْهِنَّ فِىْ كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ- ‘আর তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তোমরা (যথাসম্ভব) তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ ও আহারের সুব্যবস্থা করবে’।[4]
স্বামীর এ অভিভাবকত্বব অতিরিক্ত ক্ষমতা কিংবা দাপটের বিষয় নয়; বরং এটা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রিয় জীবনসঙ্গিনীকে আগলে রাখার নিখাদ প্রচেষ্টা। আর শীতল ছায়ায় থেকে ঘর গোছানো ও সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার তুলনামূলক সহজসাধ্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নারীকে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِىَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، ‘নারী তার স্বামীর পরিবার ও সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।[5]
নারীর কর্মসংস্থান :
কর্মসংস্থান বলতে এমন কর্মব্যবস্থাপনা বুঝায় যাতে অংশ গ্রহণ করে একজন মানুষ তার আর্থিক প্রবৃদ্ধি ঘটাতে সক্ষম হয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনের একান্ত প্রয়োজনীয় খাতের ব্যয় নির্বাহ করার জন্যই মানুষ কর্মসংস্থানের মুখাপেক্ষী হয়। কিন্তু ইসলামী আইনে বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে নারীর উপর ব্যয় নির্বাহের কোন দায় চাপিয়ে দেয়া হয়নি। নারীর যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করবে পুরুষ। সুতরাং নারীর কর্মসংস্থানের কোন প্রয়োজন নেই এবং থাকার কথাও নয়। স্বভাবজাত ও প্রাকৃতিকভাবেই নারীরা সংসারী। ঘরোয়া কাজের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা ও আগ্রহবোধ একান্তই সৃষ্টিগত। সে হিসাবে তারা নিজ আগ্রহেই সংসার পরিচালনা করে থাকে। এক্ষেত্রে যদি তাদেরকে সাংসারিক এবং প্রাসঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে কর্মসংস্থানে যেতে বাধ্য করা হয় তবে এটা হবে তাদের উপর নিতান্তই বৈষম্যমূলক আচরণ। তাই শরী‘আতে নারীদেরকে কর্মসংস্থানমুখী করতে বাধ্য করার কোন সুযোগ নেই।
তবে নারী সমাজের কর্মতৎপরতা কেবলমাত্র বিদ্যা শিক্ষা, জ্ঞান অর্জন ও চিন্তা-গবেষণার ক্ষেত্র পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে ইসলাম এমন কথা বলেনি; বরং বাস্তব কাজে যথার্থ ভূমিকা পালনের জন্যে ইসলাম এক বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র তাদের জন্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী যেমন জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিক্ষা লাভে অগ্রসর হ’তে পারে, তেমনি কৃষি ও ব্যবসায়ের কাজে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।
জীবিকার জন্যে বিভিন্ন কাজ কারবার, শিল্প-কারখানা স্থাপন, পরিচালনা বা তাতে কাজ করারও অধিকার রয়েছে নারীদের। সেই সঙ্গে সমাজ ও জাতির কল্যাণমূলক বহুবিধ সামষ্টিক কাজ আঞ্জাম দেয়াও তাদের জন্যে বৈধ। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, নারীদের এসব কাজে নেমে যেতে হবে এবং এসব করা তাদের জন্য একান্ত যরূরী হয়ে পড়েছে। নারীরা এসব কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ুক ইসলামে তা কাম্য নয়। তবে পরিবার বা সমাজে এমন কিছু পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যার কারণে নারীদেরও কর্মসংস্থানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তখন যথাসাধ্য শারঈ বিধান পালন সাপেক্ষে নারীদের জন্যও কর্মসংস্থানের অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। তবে তাদের আলাদা কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। নারী-পুরুষের স্বাধীন ও অবাধ মেলামেশার ফলে সামাজিক জীবনে নৈতিক অধঃপতনের যে মারাত্মক ব্যধি দেখা দিয়েছে তা থেকে সমাজকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যেই ইসলামে পর্দার বিধান আরোপ করা হয়েছে। আজকের নারীরা পর্দাকে অবরোধ ভাবছে। অথচ ইসলাম নারীকে শৃঙ্খলিত করেনি। পর্দার মাধ্যমে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তাকে সংযত হ’তে এবং নিজেকে খোলা-খুলিভাবে প্রকাশ না করতে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে।
ইসলাম নারীদেরকে কর্মসংস্থান গ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। তার জন্য ক্রয়-বিক্রয় বা ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিনিধি নিয়োগসহ যাবতীয় লেনদেনে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে তাকে এ জাতীয় কারবারে অংশগ্রহণ করে শারঈ বিধান ও আচরণ বিধির ব্যাপারে যত্নবান হ’তে হবে।[6] নারীরা ৩টি শর্তে নিজ গৃহের বাইরে চাকুরি বা কাজ করতে যেতে পারবে,(১) ألا يكون العمل معصية (2) ألا يكون عملها مما يكون فيه خلوة بأجنبي (3) ألا تخرج لعملها متبرجة متزينة بما يثير الفتنة অর্থ : (১) কাজটি গোনাহের না হওয়া (২) নারীর কাজটি এমন না হওয়া যাতে পরপুরুষের সাথে নির্জনে কাজ করতে হয় (৩) কাজের জন্য এমন সাজসজ্জা সহকারে বেপর্দায় বের না হওয়া, যা ফিতনা-ফ্যাসাদের দিকে প্ররোচিত করে।[7]
নারীদের বাড়ীর বাইরের কাজ দু’ভাবে বিভক্ত। যথা-
১. এমন কাজ যেখানে নারীদের প্রয়োজন : ধাত্রী বা সন্তান জন্মদানে সহযোগিতা, মহিলাদের চিকিৎসা, বালিকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের শিক্ষাদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে কেবল মহিলাদের প্রয়োজন।
২. এমন কাজ যা পুরুষরা পালন করে, নারীদের যা করার প্রয়োজন হয় না : কৃষিকাজ, খামার পরিচালনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা পরিচালনা বা কারখানায় কাজ করা প্রভৃতি। কেবল বাধ্যগত প্রয়োজন ও সক্ষমতা থাকলে পূর্বোক্ত শর্তসাপেক্ষে মহিলাদের জন্য এসব কাজ করা জায়েয।
চাকুরী : বাড়ীতে অবস্থান করাই মহিলাদের কর্তব্য (আহযাব ৩৩/৩৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নারী হ’ল গোপন বস্ত্ত। যখন সে বের হয়, শয়তান তার পিছু নেয়’।[8] তবে শর্তসাপেক্ষে স্ত্রীদেরকে চাকুরীর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। যেমন (১) জীবিকার জন্য কাজ করতে বাধ্য হ’লে (২) কাজটি পুরুষদের সাথে মিলিতভাবে না হ’লে (৩) বাড়ির মধ্যেই করা যায় এরূপ কোন কাজ না পাওয়া গেলে (৪) সার্বক্ষণিক পর্দার মধ্যে থাকা সম্ভব হ’লে (৫) কাজটা ইসলাম বিরোধী না হ’লে (৬) কাজটি মহিলাদের কাজের উপযোগী হ’লে (৭) স্বামী, সন্তান এবং গৃহের ব্যাপারে অবহেলা সৃষ্টি না হলে (৮) কর্মক্ষেত্র যদি সফরের পর্যায়ে পড়ে, তাহ’লে মাহরাম সাথে থাকলে। উপরোক্ত শর্তাবলী পূরণ করা সাপেক্ষে মহিলাদেরকে চাকুরীর অনুমতি দেওয়া যাবে এবং প্রয়োজনে তার অর্জিত অর্থ গ্রহণ করা যাবে।[9]
পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে চাকুরী : এসব কর্মক্ষেত্র মহিলাদের জন্য উপযোগী নয়। বাধ্যগত অবস্থায় মহিলাদের চাকুরীর ক্ষেত্রে যেসব শর্ত প্রযোজ্য, দেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলিতে চাকুরীর ক্ষেত্রে তা পূরণ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। সেকারণ নারীদের জন্য এসব চাকুরী জায়েয নয়। আর অন্যায় কাজের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদও অবৈধ।[10]
গার্মেন্টসে চাকুরী : গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলোতে নারী-পুরুষ একত্রে মিলে-মিশে কাজ করে থাকে। যা নিতান্তই গর্হিত কাজ। কারণ এতে পাপের দিকে ধাবিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়। অবাধ এই কর্মক্ষেত্র থেকে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নারী ঘটিত বহু অপরাধের খবর মাঝে মধ্যেই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা চোখের যেনা, হাত দিয়ে স্পর্শ করা হাতের যেনা, কথা শ্রবণ করা কানের যেনা এবং পা দিয়ে হেঁটে যাওয়া পায়ের যেনা বলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উল্লেখ করেছেন।[11] বর্তমানে অধিকাংশ গার্মেন্টসেই একই পরিবেশ বিরাজমান। অতএব মহিলাদের গার্মেন্টসে চাকুরী করা হ’তে বিরত থাকা আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, নারীর দায়িত্ব সন্তান পালন ও পুরুষের দায়িত্ব পরিবারের ভরণ-পোষণ। অথচ গার্মেন্টসে স্বল্প বেতনে নারীদের চাকুরী দিয়ে ও পুরুষদের বেকার রেখে প্রবল সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেই সাথে সন্তান ও পরিবার ধ্বংস হচ্ছে এবং শেষ হচ্ছে নারীদের ঈমান ও স্বাস্থ্য।[12]
ব্যবসা : যেকোন হালাল ব্যবসা নারী ও পুরুষ সবার জন্য জায়েয। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি ব্যবসাকে হালাল করেছেন ও সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, কোন উপার্জন সবচেয়ে পবিত্র? তিনি বললেন, মানুষের নিজ হাতের উপার্জন এবং প্রত্যেক বৈধ ব্যবসা।[13] ইসলামের প্রথম যুগে মহিলাগণ ব্যবসা করতেন। কিন্তু পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পর এবং পর পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা নিষিদ্ধ হওয়ার পর মহিলাদের জন্য ব্যবসা নিরুৎসাহিত করা হয়। কেননা এতে হালালের পথ ধরে হারামের অনুপ্রবেশ ঘটার আশংকা দেখা দেয়। বর্তমান যুগে যে ফিৎনা মহামারী আকার ধারণ করেছে। অতএব মুসলিম মহিলাদের অবশ্যই এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।[14]
কৃষিকাজ : নিরুপায় অবস্থায় পর্দার মধ্যে থেকে পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়াই যদি এরূপ কাজ করা সম্ভব হয়, তাহলে করতে বাধা নেই।[15] নিতান্ত বাধ্য হ’লে শারঈ পর্দা বজায় রেখে রাখাল-কিষাণের সহযোগিতা করা যাবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে বাড়ীতে থাকার জন্য আদেশ করেছেন (আহযাব ৩৩/৩৩) এবং বাড়ীর বাইরে পর্দা করে চলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন (নূর ২৪/৩১)।[16]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে জনৈকা নারী ছাহাবী তালাকপ্রাপ্তা হয়ে ঘরের বাইরে গিয়ে নিজের বাগানের খেজুর সংগ্রহ করার অনুমতি চাইলে রাসূলে কারীম (ছাঃ) তাকে অনুমতি দেন। জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন,طُلِّقَتْ خَالَتِي، فَأَرَادَتْ أَنْ تَجُدَّ نَخْلَهَا، فَزَجَرَهَا رَجُلٌ أَنْ تَخْرُجَ، فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: بَلَى فَجُدِّي نَخْلَكِ، فَإِنَّكِ عَسَى أَنْ تَصَدَّقِي، أَوْ تَفْعَلِي مَعْرُوفًا، ‘আমার খালা তালাক প্রাপ্তা হ’লে নিজেদের খেজুর বাগানে গিয়ে খেজুর সংগ্রহ করার ইচ্ছা করেন। তখন এক ব্যক্তি তাকে বের হ’তে নিষেধ করে। ফলে তিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে এসে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ তুমি তোমার খেজুর সংগ্রহ করতে পার। আশা করি তুমি ছাদাক্বাহ করবে অথবা সৎ কাজ করবে।[17]
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আবুবকর (রাঃ)-এর কন্যা আসমা (রাঃ) বলেন, যখন যুবায়ের (রাঃ) আমাকে বিবাহ করেন, তখন তার না ছিল সম্পত্তি, না ছিল চাকর-বাকর। একটা উট ও একটা ঘোড়াই ছিল তার সম্বল। ঘোড়াটাকে আমি ঘাস-পানি খাওয়াতাম। সাথে সেলাই ও গম ভাঙ্গার কাজও করতাম। আমি রুটি তৈরি করতে জানতাম না। আমার কয়েকজন ভাল আনছার মহিলা প্রতিবেশী আমাকে রুটি বানিয়ে দিতেন। কিছুদিন পরে রাসূল (ছাঃ) যুবায়ের (রাঃ)-কে একখন্ড জমি দান করেন। সে জমি থেকে আমি শুকনো খেজুরের বীচি সংগ্রহ করে মাথায় বহন করে আনতাম’।[18]
মহিলাদের কর্মে নিযুক্তির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন :
১. বৃদ্ধা, অক্ষম ও অপ্রাপ্ত বয়স্কা বালিকাদের কর্মে নিযুক্ত না করা। কারণ তাদেরকে কাজে নিযুক্ত করা হ’লে তাদের সাধ্যের বাইরে কাজ চাপিয়ে দেওয়া হ’তে পারে। অনুরূপভাবে ছাত্রীদের কর্মে নিযুক্ত করে তাদের শিক্ষা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা।
২. মহিলারা সর্বদা সমান কাজ করতে পারে না। যেমন ঋতুবতী, গর্ভবতী অবস্থায়, প্রসবোত্তরকালে ও দুগ্ধদানকালে মহিলারা কাজ করতে গিয়ে নানা জটিলতা ও সমস্যায় পড়ে। তাই এসময় তাদের প্রতি সদয় হওয়া ও নম্র আচরণ করা কর্তব্য।
৩. মহিলাদের এমন কর্মে নিযুক্ত করা কিংবা তাদের কর্মঘণ্টা এমনভাবে বিন্যস্ত করা উচিত, যাতে তাদের পরিবারের দায়িত্ব পালনে ঘাটতি না হয়। যেমন তাদেরকে রাতে কোন ডিউটি না দেওয়া এবং সম্ভবপর তাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া ইত্যাদি।
৪. মহিলাদের জন্য এমন স্থান নির্ধারণ করা ও এমন পরিবেশ করে দেওয়া যরূরী, যেখানে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা, ইয্যত-আব্রু রক্ষা ও শারঈ পর্দা রক্ষা করার মত সুন্দর পরিবেশ করে দেওয়া কর্তব্য।ৃ
মহিলাদের কাজের জন্য যেসব ক্ষেত্র উত্তম :
মহিলাদের কাজ করার জন্য উত্তম ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-
১. আল্লাহর দিকে দাওয়াত :
শরী‘আতের সীমারেখার মধ্যে থেকে মহিলারা নিজ এলাকায় মহিলাদের মধ্যে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করতে পারে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী, শিক্ষিকা ও মহিলা কর্মজীবিদের মাঝে দাওয়াতী কাজ অঞ্জাম দিতে পারে। এতে নিজে উপকৃত হবে এবং অন্যান্য মহিলারা আক্বীদা-আমল সংশোধন করে ইহকাল ও পরকালে উপকৃত হবে এবং সমাজ সংস্কার হবে।
২. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান :
বালিকা বিদ্যালয়, বালিকা মাদ্রাসা ও মহিলা কলেজ এবং মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কাজ করতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানে তারা দ্বীনী ও আধুনিক শিক্ষায় মেয়েদের পারদর্শী ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারে, যাতে তারা সংসার জীবনে দ্বীন মেনে চলতে পারে এবং ইবাদত-বন্দেগীও সাধ্যমত আদায় করতে পারে। আর তাদের উচ্চশিক্ষা কাজে লাগিয়ে সন্তানদের যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারে। রাসূল (ছাঃ) নারীশিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীছে এসেছে, আশ-শিফা বিনতু আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি হাফছাহ (রাঃ)-এর নিকটে ছিলাম, তখন নবী করীম (ছাঃ) আমার নিকটে এসে বললেন,أَلاَّ تُعَلِّمِينَ هَذِهِ رُقْيَةَ النَّمْلَةِ كَمَا عَلَّمْتِيهَا الْكِتَابَةَ ‘তুমি ওকে (হাফছাহকে) যেভাবে লেখা শিখিয়েছ, সেভাবে ফুসকুড়ি বা ব্রণের ঝাড়ফুঁক শিক্ষা দাও না কেন’।[19]
৩. স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে :
মহিলাদের রোগ-ব্যাধির চিকিৎসায় যেমন মহিলা ডাক্তার প্রয়োজন, তেমনি মহিলা সেবিকা ও টেকনিশিয়ান প্রয়োজন। যারা মহিলাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সাহায্য করতে পারে। অনুরূপভাবে সন্তান প্রসবকালে ধাত্রীর একান্ত প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে মহিলারা কর্মে নিযুক্ত হ’লে রোগীনীদের পর্দা রক্ষা করে যথাযথ সেবা দিতে পারে।
৪. গৃহের অভ্যন্তরের কাজ :
বাড়ীর অভ্যন্তরে থেকে নানা কাজ মহিলারা করতে পারে। যেমন মহিলাদের কাপড় সেলাই করা, দর্জির কাজ করা, বাড়ীতে নানা সুস্বাদু খাবার, মিষ্টি, কেক, পিঠা-পুলি, ফিরনী-পায়েশ ইত্যাদি তৈরী করে আশ-পাশে বিক্রি করা। মেয়েদেরকে রান্না, দর্জি ও সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি কাজ নিজ বাড়ীতে বসে সম্পন্ন করা যায়।
৫. হস্ত ও কুটির শিল্প :
মহিলারা নিজ বাড়ীতে বসে সংসার পরিচালনার পাশাপাশি নানা হস্তশিল্প ও কুটির শিল্প নিজেরা তৈরী করতে পারে এবং এসব মেয়েদের শিক্ষা দিয়েও নিজেরা অর্থ উপার্জন করতে পারে। যেমন বাড়ীতে মোমবাতি, আগরবাতি, সাবান, টুপি সেলাই, নক্সীকাঁথা প্রভৃতি তৈরী করে বাজারজাত করা এবং এসব শিক্ষা দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারে। রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে মহিলারা এরূপ কাজ করতেন। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী নিজে ঘরে বসে শিল্পকর্ম করতেন এবং তা বিক্রি করে ঘর-সংসারের খরচ চালাতেন। একদিন তিনি নবী কারীম (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, আমি একজন কারিগর মহিলা। আমি হাতে তৈরি করা দ্রব্যাদি বিক্রি করি। এছাড়া আমার ও আমার স্বামীর এবং সন্তানদের জীবিকার অন্য কোন উপায় নেই। রাসূলে কারীম (ছাঃ) বললেন, এভাবে উপার্জন করে তুমি তোমার সংসারের প্রয়োজন পূরণ করছো। এতে তুমি বিরাট ছওয়াবের অধিকারী হবে।[20]
মহিলারা কর্মে নিযুক্ত হ’লে যেসব ক্ষতি হয় :
মহিলারা পরিবার-পরিজনের সেবা, সন্তান প্রতিপালন প্রভৃতি বাদ দিয়ে অর্থোপার্জনে নিযুক্ত হ’লে নানা সমস্যা তৈরী হয়। নিম্নে কতিপয় সমস্যা উল্লেখ করা হ’ল।-
১. পরিবারের দায়িত্ব পালনে ঘাটতি :
ইসলাম প্রত্যেক ব্যক্তির দায়িত্ব-কর্তব্য পৃথকভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে। এসব দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং সে দায়িত্ব যথাযথ পালন করা কর্তব্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالإِمَامُ الَّذِى عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِىَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার ও সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল, সে এদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।[21] সুতরাং তার দায়িত্ব স্বামীর বাড়ীর অভ্যন্তরের কাজ, সন্তান প্রতিপালন ও স্বামী সেবা করা। যখন সে বাড়ীর বাইরের কাজে লিপ্ত হবে তখন তার সন্তানদের ক্ষতি হবে, তাদের প্রতিপালনে ও স্বামীর সেবায় ঘাটতি হবে। যা এক সময় পরিবারে অশান্তি বয়ে আনবে।
শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, মহিলাদের কাজ পুরুষদের থেকে ভিন্ন। তারা বাড়ীর বাইরে কাজ করায় সন্তানদের ক্ষতি ও স্বামীর হক পূরণে ঘাটতি হয়। বিধায় তা নিষিদ্ধ। কেননা এর কারণে নারীদের স্বাভাবিক দায়িত্ব ব্যাহত হয় এবং তার উপরে ন্যাস্ত কর্তব্য শূণ্য হয়। যার ফলে মন্দ প্রজন্ম তৈরী হয় এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ভিত্তির উপরে গড়ে ওঠা পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস হয়।[22]
২. শরী‘আত বিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়া :
মহিলারা বাড়ীর বাইরে কোন কাজে নিযুক্ত হ’লে শরী‘আত বিরোধী নানা কর্মে জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। যেমন শারঈ পর্দার লংঘন, পরপুরুষের সাথে একত্রে কাজ করতে বাধ্য হওয়া, পরপুরুষের সাথে অপ্রয়োজনীয় আলাপচারিতায় লিপ্ত হওয়া, মাহরাম ব্যতীত দূরে সফর করতে বাধ্য হওয়া এবং কখনও পরপুরুষের সাথে নির্জনে একাকী হওয়া ইত্যাদি। এসব কাজ শরী‘আত সম্মত নয়। অথচ মহিলারা চাকুরীতে নিযুক্ত হ’লে এসব কাজে অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে জড়িয়ে পড়তে হয়।
৩. পুরুষের কাজের উপরে প্রভাব পড়া :
অনেক সময় মহিলারা পুরুষের তুলনায় একই কাজ অনেক নিম্ন বেতনে বা পারিশ্রমিকে গ্রহণ করে এবং পুরুষের সাথে একত্রে কাজ করে। এভাবে পুরুষের অধীনে কাজ করে তার মধ্যে সাহসিকতা বেড়ে যায়। যা পুরুষের জন্য অত্যধিক বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর হয়ে পড়ে। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত করা ইসলামে নিষিদ্ধ।[23] ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, এর অর্থ নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং একে অন্যের ক্ষতি করবে না।[24] আল-খুশানী বলেন, ‘যারার’ এমন কাজ যাতে তোমার নিজের উপকারিতা রয়েছে কিন্তু তোমার প্রতিবেশীর অনিষ্ট রয়েছে। আর ‘যিরার’ হচ্ছে যাতে তোমার নিজের কল্যাণ নেই এবং তাতে তোমার প্রতিবেশীর ক্ষতি রয়েছে।[25] সুতরাং কর্মক্ষেত্রে শরী‘আতের নির্দেশনা মোতাবেক মহিলারা কাজ না করলে সে নিজে উপকৃত হ’লেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেখানকার কর্মরত পুরুষরা।
৪. নারীসুলভ কাজে ভাটা পড়া :
নারীর শরীর পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন গঠনে আল্লাহ তৈরী করেছেন এবং তার দেহকে মাতৃত্বের দায়িত্ব পালনের উপযোগী করেছেন। শৈশব থেকেই তার স্বভাব-প্রকৃতি গৃহকর্ত্রী বা পরিবারের কর্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে প্রস্ত্তত হয়। কিন্তু যখন সে সংসার ও গৃহ ছেড়ে বাইরের কাজে বা চাকুরীতে নিযুক্ত হয়, তখন সবক্ষেত্রে নানা বিপদ-মুছীবত এসে পড়ে। প্রত্যেক শিশু অন্ততঃ তিন বছর মায়ের নিরবচ্ছিন্ন প্রতিপালন ও সেবা-যত্নের মুখাপেক্ষী হয়। কিন্তু মায়ের চাকুরীর কারণে শিশু সেই সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। শিশুর শিক্ষা-দীক্ষা, নৈতিকতার বিকাশ ও চরিত্র গঠনে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। কর্মজীবি মায়ের পক্ষে শিশুর নিবিড় তত্ত্বাবধান সম্ভব নয়। ফলে মায়ের অনুপস্থিতিতে এসব শিশু নানা কুশিক্ষা লাভ করে, সমাজের নানা কু-প্রভাব তার মধ্যে সঞ্চারিত হয়, অশ্লীল ভাষা ও অনৈতিক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং নারীর যে মৌলিক কাজ সংসার শামলানো ও সন্তানদের লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষা এবং স্বামীর সেবা- এসব পালন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, মহিলাদের বাধ্যগত অবস্থা না হ’লে জীবিকার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগদান না করাই শ্রেয়। স্বামী-সংসার শামাল দিয়ে সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষায় ও চরিত্র মাধুর্যে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। নারীজীবন সার্থক হবে এবং ইহকাল ও পরকালীন অশেষ কল্যাণ লাভ করবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ লাভে শরী‘আতের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করার তাওফীক দান করুন-আমীন!
[1]. আল-মাউসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ৭/৮২।
[2]. ইবনু আবীদ-দুনিয়া, আন-নাফাকাতু আলাল ইয়াল হা/৫২৮; মেদারাতুন নাস হা/১৭৩; আমালী ইবনু বুশরান হা/১১, সনদ হাসান, ড. নাজম আব্দুর রহমান খালফ।
[3]. আবু দাঊদ হা/২১৪২-৪৩; মিশকাত হা/৩২৫৯; ছহীহাহ হা/৬৮৭।
[4]. তিরমিযী হা/১১৬৩, ৩০৮৭; ইবনু মাজাহ হা/১৮৫১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৮০।
[5]. বুখারী হা/৭১৩৮; মুসলিম হা/১৮২৯; মিশকাত হা/৩৬৮৫।
[6]. আল-মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আল-কুয়াইতিয়্যাহ ৭/৮২।
[7]. আল-মাউসূআতুল ফিক্বহিয়্যাহ আল-কুওয়াইতিয়্যাহ ৭/৮৩-৮৪।
[8]. তিরমিযী হা/১১৭৩; মিশকাত হা/৩১০৯।
[9]. ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ, ২/৯৮১; মাসিক আত-তাহরীক, আগস্ট’১১, প্রশ্ন ১১/৪১১, এপ্রিল’১৩ প্রশ্ন ৪/২৪৪।
[10]. শারহুস সুন্নাহ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫৩০০; ছহীহুল জামে‘ হা/২০৮৫; মাসিক আত-তাহরীক, অক্টোবর’১৩, প্রশ্ন ৪/৪।
[11]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৬ ‘ঈমান’ অধ্যায়।
[12]. মাসিক আত-তাহরীক, সেপ্টেম্বর’১৪, প্রশ্ন ৩১/৪৩১।
[13]. আহমাদ, মিশকাত হা/২৭৮৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬০৭।
[14]. মাসিক আত-তাহরীক, মার্চ’১১, প্রশ্ন ৩৭/২৩৭।
[15]. বুখারী হা/৫২২৪, মুসলিম হা/২১৮২।
[16]. মাসিক আত-তাহরীক, মে’১৩, প্রশ্ন ১৩/২৯৩।
[17]. মুসলিম হা/১৪৮৩।
[18]. বুখারী হা/৫২২৪।
[19]. আহমাদ হা/২৭১৪০; আবু দাউদ হা/৩৮৮৭; ছহীহাহ হা/১৯৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬৫০।
[20]. মুসনাদে আহমদ হা/১৬১৩০, ১৬০৮৬।
[21]. বুখারী হা/৭১৩৮; মুসলিম হা/১৪২৯; মিশকাত হা/৩৬৮৫।
[22]. শায়খ ইবনে বায, আত-তাবাররুজ ওয়া খুতূরাতুহু, পৃঃ ৩০-৩১।
[23]. আহমাদ হা/২৮৬৭; ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ইরওয়া হা/৮৯৬।
[24]. ইবনু আব্দিল বার্র, আত-তামহীদ (মরক্কো : ওয়াযারাতুল আওক্বাফ ওয়াশ শুঊনিল ইসলামিয়্যাহ, ১৪৮৭ হিঃ), ২০/১৫৮ পৃঃ।
[25]. ঐ, ২০/১৫৮ পৃঃ।
#মাসিকআততাহরীক
াহরীক
#আসাদুল্লাহ_আল_গালিব