29/08/2025
১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর, ডালাসের রাস্তায় একটি গুলির শব্দ বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি, যিনি জেএফকে নামে সবার কাছে পরিচিত, সেদিন নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন। এই ঘটনা শুধু আমেরিকার ইতিহাস নয়, বরং বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি রহস্যময় অধ্যায়। কী ঘটেছিল সেদিন? কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল? এত বছর পরেও কেন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ধোঁয়াশায় ঢাকা? আজকের এই পোস্টে আমরা জেএফকে হত্যাকাণ্ডের এই ঐতিহাসিক রহস্য নিয়ে একটু গভীরে যাব।
সেদিন ডালাসের ডিলি প্লাজায় প্রেসিডেন্ট কেনেডি তার স্ত্রী জ্যাকলিন কেনেডির সঙ্গে একটি মোটরকেডে ছিলেন। দুপুর ১২:৩০ মিনিটের দিকে, যখন তাদের গাড়ি টেক্সাস স্কুল বুক ডিপোজিটরির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল, তখনই গুলি চলে। তিনটি গুলির মধ্যে দুটি কেনেডির গায়ে আঘাত করে। একটি গুলি তার ঘাড়ে, আরেকটি মাথায়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি পার্কল্যান্ড হাসপাতালে মৃত ঘোষিত হন। বিশ্ব নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল প্রতীক, যিনি শান্তি, সমতা, আর স্বাধীনতার কথা বলতেন, তিনি হঠাৎ নিভে গেলেন।
ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই লি হার্ভে অসওয়াল্ড নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অসওয়াল্ড ছিলেন টেক্সাস স্কুল বুক ডিপোজিটরির একজন কর্মচারী, আর পুলিশের দাবি, তিনিই একা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কিন্তু গল্পটা এখানেই শেষ নয়। অসওয়াল্ড নিজে দাবি করেছিলেন, তিনি নির্দোষ। এমনকি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাঝেই, মাত্র দুদিন পর, জ্যাক রুবি নামে এক ব্যক্তি তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন। এই ঘটনা রহস্যকে আরও জটিল করে তোলে। অসওয়াল্ডের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অনেক প্রশ্নের উত্তর চিরতরে হারিয়ে যায়।
ওয়ারেন কমিশন, যিনি এই হত্যাকাণ্ড তদন্তের দায়িত্ব পান, তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, অসওয়াল্ড একাই এই হত্যা করেছেন। কিন্তু এই তত্ত্ব অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কেনেডির বিরুদ্ধে কারা ছিল? কেন তাকে হত্যা করা হলো? এই প্রশ্নগুলো আজও মানুষের মনে ঘুরপাক খায়। অনেকে বিশ্বাস করেন, এটি একটি বড় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল। কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক, ভিয়েতনাম যুদ্ধে কেনেডির অবস্থান, এমনকি সিআইএ এবং এফবিআই-এর সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে নানা তত্ত্ব উঠে এসেছে। কেউ কেউ বলেন, মাফিয়া এই হত্যার পেছনে জড়িত ছিল। আবার কেউ মনে করেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন বা কিউবার হাত ছিল এর পেছনে।
জেএফকে ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি আমেরিকার সিভিল রাইটস আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন, মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলেছিলেন, এবং শীতল যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শান্তির পথ খুঁজছিলেন। তার এই সিদ্ধান্তগুলো অনেক শক্তিশালী গোষ্ঠীকে বিরক্ত করেছিল। কিউবান মিসাইল সংকটে তার দৃঢ় অবস্থান, অথচ শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টা, তাকে বিশ্ব নেতা হিসেবে সম্মান এনে দেয়। কিন্তু এই সব কি তার শত্রুদের সংখ্যা বাড়িয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর আজও অধরা।
আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো জ্যাপ্রুডার ফিল্ম। এই ফিল্মে হত্যাকাণ্ডের মুহূর্ত ধরা পড়েছে। এই ভিডিও ফুটেজ অনেক তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে। কেউ বলেন, গুলি এসেছিল একাধিক দিক থেকে। কেউ বলেন, এটি একজনের কাজ হতে পারে না। এই ফিল্ম বিশ্লেষণ করে অনেকে বিশ্বাস করেন, সরকার কিছু তথ্য লুকিয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যায়। লিন্ডন বি. জনসন প্রেসিডেন্ট হন, ভিয়েতনাম যুদ্ধ আরও তীব্র হয়, আর আমেরিকার জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা কমতে থাকে। জেএফকে হত্যাকাণ্ড শুধু একজন নেতার মৃত্যু নয়, এটি একটি যুগের অবসান।
আজ, ৬০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা থামেনি। বই, সিনেমা, তথ্যচিত্র—সবই এই রহস্যকে নতুন করে জাগিয়ে তুলছে। আমরা হয়তো কখনো পুরো সত্য জানতে পারব না। তবে এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ক্ষমতার খেলায় কতটা অন্ধকার থাকতে পারে।
#জেএফকে_হত্যাকাণ্ড #রাজনৈতিক_ষড়যন্ত্র #ইতিহাসের_রহস্য েনেডি #ডালাস_১৯৬৩ #ঐতিহাসিক_ঘটনা