07/06/2025
⭐️ কোরবানী সংক্রান্ত ধারাবাহিক আলোচনার আজ থাকছে ➡️ ৬ষ্ঠ পর্ব ⭐️
■পশুর জান থাকাকালীন চামডা ছোলার বিধান■
পশু জবাইয়ের পর জান বের হবার পূর্বে চামড়া ছোলা, রগ কাটা, ছুরি দিয়ে গলার হাড্ডিতে আঘাত করা বা অন্য কোন অঙ্গ কাটা ইত্যাদি মাকরূহে তাহরীমী। অতএব তা পরিহার করা উচিত৷ -----(সহীহু মুসলিম ৪৯৪৯ হাদীস৷ সুনানে নাসায়ী ৪৪০৫ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাজাহ ৩১৭০ হাদীস৷ সুনানে তিরমিযী ১৪০৯ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/৩৬০ পৃষ্ঠা৷)
■■ অন্য পশুর সামনে জবাই করার বিধান ■■
এক পশুর সামনে অন্য পশু জবাই করা মাকরুহ৷ কেননা এতে পশুর মনে ভয় ও আতংক সৃষ্টি হয়৷ অনুরূপভাবে পশুর সামনে ছুরি ধার দেয়াও মাকরুহ৷ তাতেও পশুর মনে ভয় ও আতংক সৃষ্টি হয়৷ আর পশুর মনে ভয় ও আতংক সৃষ্টি করতে ইসলাম নিষেধ করেছে৷ -----(সহীহু মুসলিম ৪৯৪৯ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাজাহ ৩১৭২ হাদীস৷ সুনানে আবু দাউদ ২৮১৪ হাদীস৷ সুনানে নাসায়ী ৪৪০৫ হাদীস৷ ইমদাদুল ফতোয়া ৩/৫৪৭ পৃষ্ঠা৷)
■■ পশু জবাই করা ছুরির বিধান ■■
ধারালো ছুরি দ্বারা পশু জবাই করা সুন্নাত৷ আর ভোতা ছুরি দ্বারা পশু জবাই করা মাকরুহ৷ কেননা এতে পশুর কষ্ট হয়৷ আর পশুকে কষ্ট দিতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে৷ -----(সহীহু মুসলিম ৪৯৪৯ হাদীস৷ সুনানে দাউদ ২৮১৪ হাদীস৷ সুনানে নাসায়ী ৪৪০৫ হাদীস৷ ইমদাদুল ফতোয়া ৩/৫৪৭ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩ পৃষ্ঠা৷)
■ পশু জবাইকারীর পারিশ্রমিক দেওয়ার বিধান ■
কুরবানী পশু জবাই করে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয হবে। বরং এটা জবেহকারীর হকও বটে৷ তবে এরজন্য কুরবানীর গোশত বা পশুর কোনো কিছু দ্বারা পারিশ্রমিক দেওয়া জায়েয হবে না৷ -----(সহীহুল বুখারী ১৭১৬ হাদীস৷ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪ হাদীস৷ আল বাহরুর রায়েক ৮/৩২৬ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে রহমানিয়া ১/৪৯৮ পৃষ্ঠা৷)
■■ জবাইকারীকে গোস্ত দেওয়ার বিধান ■■
জবাইকারীকে চামড়া, গোশত, পায়া বা কুরবানীর পশুর অন্য কোন অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না৷ -----(সহীহুল বুখারী ১৭১৬ হাদীস৷ আহকামুল কুরআন ৩/২৩৭ পৃষ্ঠা৷ আল বাহরুর রায়েক ৮/৩২৬ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাযীখান ৩/৩৫৪ পৃষ্ঠা৷)
■■ কুরবানীর মাংস বন্টনের বিধান ■■
কুরবানীর গোশত তিনভাগ করা সূন্নাত৷ আর তার বন্টন হবেঃ
👉 একভাগ নিজের/পরিবারের জন্য
👉 একভাগ আত্মীয়-সজনের জন্য এবং
👉 একভাগ গরীব-মিসকীনের জন্য৷
অবশ্য কেউ যদি পুরো গোশত নিজে রাখে বা পুরো গোশত বিলিয়ে দেয় তবে তাও জায়েয হবে।
-----(সূরা হজ্ব ২৮ আয়াত৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ৫/৩০০ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/২৯৯ পৃষ্ঠা৷)
■■ কুরবানীর দাতার খাদ্য গ্রহণের বিধান ■■
কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নাত । আর কুরবানীর প্রথম দিন সকাল থেকে কোন কিছু না খেয়ে নিজ কুরবানীর গোশত দ্বারা খানা শুরু করা সূন্নাত। হযরত রাসূলে কারীম (দঃ) কুরবানীর দিন নিজ কুরবানীর গোশত দ্বারা খানা শুরু করতেন। তবে যিলহজ্বের ১১- ১২ তারিখে নিজ কুরবানীর গোশত দ্বারা খানা শুরু করা সূন্নাত নয়। বরং এ সুন্নত কেবল ১০-তারিখের জন্য খাস। -----(সূরা হজ্ব ২৮ আয়াত৷ তিরমিযী শরীফ ১/১২০ পৃষ্ঠা৷ আদ দুররুল মুখতার ২/১৭৬ পৃষ্ঠা৷ আল বাহরুর রায়িক ২/১৬৩ পৃষ্ঠা৷)
■■ অনুমান নির্ভর ভাগ করার বিধান ■■
শরীক হয়ে কুরবানী করলে গোশত অনুমান করে ভাগ করা জায়েয হবে না। বরং নিক্তি দ্বারা মেপে সঠিক ও পরিপূর্ণ ভাবে ভাগ করতে হবে৷ তবে যে ভাগে মাথা,পা ইত্যাদি থাকবে সে ভাগে গোশত কম হলেও সমস্যা হবে না৷ -----(আদ দুররুল মুখতার ৬/৩১৭ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাযীখান ৩/৩৫১ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/২৯৭ পৃষ্ঠা৷)
■■ কুরবানীর মাংস সংরক্ষন করার বিধান ■■
কুরবানীর গোশত সংরক্ষন করা বা শুটকি দিয়ে জমিয়ে রাখা জায়েয হবে। এমনকি ফ্রিজে সংরক্ষন করে সারা বছর খাওয়াও জায়েয হবে৷
-----(সহীহু মুসলিম ৪৯৯৭ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাজাহ ৩১৫৯ হাদীস৷ সুনানে তিরমিযী ১৫১১ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/৩৫৭ পৃষ্ঠা৷)
■■ বিধর্মীকে গোশত দেওয়ার বিধান ■■
কুরবানীর গোশত বিধর্মী/অমুসলিমকে দেওয়া জায়েয হবে৷ বরং ক্ষেত্র বিশেষে দেওয়াটা উত্তমও বটে। তাই প্রতিবেশী হিন্দুদেরকেও কুরবানীর গোশত দেওয়া যাবে৷ -----(ইলাউস সুনান ১৭/২৫৮ পৃষ্ঠা৷ আল মুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ৫/৩০০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে তাতার খানিয়া ১৭/৪৩৭ পৃষ্ঠা৷)
■■ কোরবানির গোশত বিক্রি করার বিধান ■■
কুরবানীর গোশত বিক্রি করা জায়েয হবে না৷ কেউ বিক্রি করলে তার কুরবানী সহীহ হবে না৷
-----(ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাযীখান ৩/৩৫৪ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া ৪/৩০৯ পৃষ্ঠা৷)
■■ কুরবানীর গোশত কেনার বিধান ■■
কুরবানীর পশুর কোন অংশ কুরবানীদাতার জন্য বিক্রি করা জায়েয হবে না। কেউ কোন কিছু বিক্রি করলে তার মুল্য সাদকাহ করা ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে কুরবানীদাতার নিকট থেকে কুরবানীর পশুর কোন কিছু ক্রয় করাও জায়েয হবে না৷ অনেক সময় গরীব মিসকীনেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাড় চর্বি ইত্যাদি সংগ্রহ করে। অতঃপর তা বিক্রি করে। তা জায়েয হবে। মোটকথা কুরবানীদাতা কোন কিছু বিক্রি করতে পারবে না। -----(ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাযীখান ৩/৩৫৪ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ৫/৩০১ পৃষ্ঠা৷)
■ কোরবানির পশুর যেসব অঙ্গ খাওয়া হারাম ■
কুরবানীর পশুর মোট দশটি জিনিস খাওয়া হারাম। আর সেগুলো হলোঃ
১৷প্রবাহিত রক্ত ২৷প্রস্রাব ৩৷পায়খানা ৪৷পুলিঙ্গ ৫৷স্ত্রীলিঙ্গ ৬৷মুত্রথলি ৭৷অন্ডোকোষ ৮৷রগ ৯৷পিত্তি/পিন্ড এবং ১০৷মাংসগ্রন্থি/টিউমার-----(ইমদাদুল ফতোয়া ৪/১১৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ৫/২১৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে জামেয়া ৫/২৩৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/৩৫৯ পৃষ্ঠা৷ তাহতাবী ৪/৩৬০ পৃষ্ঠা৷)
■■ সামাজিক গোশতের বিধান ■■
অনেক সমাজে এরুপ প্রচলন রয়েছে যে, সমাজের প্রতিটি কুরবানীর পশুর গোশতের একতৃতীয়াংশ গোশত সমাজিক গোশত নামে একত্রিত করা হয়৷ অতপর সে গোশত বন্টন করে সমাজভুক্ত সকলকে দেয়া হয়৷ উদ্দেশ্য হলো-সমাজের বাতৃত্ববন্ধন ঠিক রাখা৷ এ পদ্ধতি জায়েয হওয়ার জন্য শর্ত হলোঃ
-------কুরবানীদাতাগণ যদি কোন প্রকার চাপ সৃষ্টি ব্যতীত স্বতঃস্ফুর্তভাবেই কুরবানীর এক তৃতীয়াংশ গোশত সামাজিক বন্টনে দিতে রাজি হয়৷ তবে উক্ত পদ্ধতি জায়েয হবে এবং উক্ত সামাজিক গোশত ধনী-গরীব সকলেই নিতে পারবেন এবং সকলেই খেতে পারবেন৷ তবে খেয়াল রাখতে হবে মান্নতের কুরবানী এবং মৃত ব্যক্তির ওসীয়তকৃত কুরবানীর গোশত যেন জমা করা না হয়৷ কেননা, তা কুরবানীদাতাদের জন্য খাওয়া জায়েয হবে না৷ আর সামাজিক গোশত বন্টনের পুর্বে কারো জন্য নেয়াও জায়েয হবে না এবং বন্টনের পরেও অন্যের ভাগ থেকে নেয়া জায়েয হবে না৷ কেননা, এটা সাদকাহ হিসেবে গণ্য হবে।
-----(সুনানে ইবনে মাজাহ ৩১৫৮ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ৫/৩০১ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/৩৫৬ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে মাদানিয়া ৫/৩৬৫ পৃষ্ঠা৷ খুলাসাতুল ফতোয়া ৪/৩২১ পৃষ্ঠা৷)
■■ কুরবানীর পশুর চামড়ার বিধান ■■
কুরবানীর পশুর চামড়া পরিশোধন করে নিজে ব্যবহার করা জয়েয হবে৷ তবে কেউ যদি বিক্রি করে তবে তার পুরো মুল্য সদকাহ করা ওয়াজিব হবে৷ -----(সহীহু মুসলিম ৪৯৯৭ হাদীস৷ ইমদাদুল ফতোয়া ৩/৪৮৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ৫/৩০১ পৃষ্ঠা৷)
■■ চামড়া সাদকাহ করার বিধান ■■
কুরবানীর পশুর চামড়ার মুল্য সদকাহ করার নিয়তে বিক্রি করা জায়েয হবে। তবে নিজে খরচ করার নিয়তে বিক্রি করা জায়েয হবে না। তবে যে নিয়তেই বিক্রি করুক না কেন সর্বাবস্থায়ই তার মূল্য সদকাহ করা ওয়াজিব হবে।
-----(সহীহুল বুখারী ১৭০৭ হাদীস৷ সুনানে মাজাহ ৩১৫৭ হাদীস৷ ইমদাদুল ফতোয়া ৩/৫৫২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাযীখান ৩/৩৫৪ পৃষ্ঠা৷)
■■ চামড়ার অর্থ নিজে খরচ করার বিধান ■■
কুরবানীর পশুর চামড়ার মুল্য হুবহু সদকাহ করা জরুরী। তাই চামড়ার মূল্য নিজ প্রয়োজনে খরচ করে পরে নিজে থেকে দিলে আদায় হবে বটে, কিন্তু এরজন্য গোনাহ হবে। -----(সহীহুল বুখারী ১৭০৭ হাদীস৷ সুনানে মাজাহ ৩১৫৭ হাদীস৷ ইমদাদুল ফতোয়া ৩/৫৫২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাযীখান ৩/৩৫৪ পৃষ্ঠা৷)
■■ চামড়া ছোলার আগেই বিক্রির বিধান ■■
কুরবানীর পশুর চামড়া দেহ থেকে আলাদা করার পুর্বে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয হবে না। সুতরাং এরূপ ক্রয়-বিক্রয় পরিহার করা উচিত৷
-----(সুনানে তিরমিযী ১২৩০ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে শামী ৭/১৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ৩/১৯ পৃষ্ঠা৷)
■গরীব আত্মীয়কে চামড়ার মূল্য দেওয়ার বিধান■
আত্মীয়-স্বজন যদি গরীব হয়, তবে তাদেরকে চামড়ার মূল্য দেয়া উত্তম। কেননা তাতে দ্বিগুন সাওয়াব রয়েছে৷
👉 দানের সাওয়াব এবং
👉 আত্নীয়তা সম্পর্ক রক্ষার সাওয়াব।
-----(সুনানে ইবনে মাজাহ ১৮৪৪ হাদীস৷ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৪২- ৫৪৬ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/২৯৩ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/১০০-১০১ পৃষ্ঠা৷)