07/07/2025
আমার মাথায় প্রশ্ন আসতো কেন ভাষার ভিন্নতা?পৃথিবীতে প্রথম যে মানুষ এসেছে সে যে ভাষায় কথা বলছে সেই ভাষায় ই তো সবার কথা বলার কথা।
পৃথিবীর সকল দেশের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন হলো কেন—এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাদের ভাষার উৎপত্তি ও বিবর্তনের ইতিহাস বুঝতে হবে। নিচে সহজভাবে ব্যাখ্যা করছি:
---
🌍 ভাষার বৈচিত্র্যের কারণসমূহ:
1. ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা (Geographical Separation):
প্রাচীনকালে মানুষ ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া খুব কঠিন ছিল। ফলে একেক অঞ্চলের মানুষ নিজেদের মতো করে শব্দ, ধ্বনি, ও ভাব প্রকাশের পদ্ধতি তৈরি করে নেয়। এতে একেক অঞ্চলের ভাষা একেক রকম হয়ে যায়।
2. সময়ের সাথে বিবর্তন (Linguistic Evolution):
একই ভাষা দীর্ঘ সময়ে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে থাকে। যেমন, আজকের ইংরেজি ভাষা এসেছে প্রাচীন জার্মানিক ভাষা থেকে। আবার বাংলা ভাষা এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে। সময়ের সাথে সাথে উচ্চারণ, ব্যাকরণ, ও শব্দভাণ্ডার পরিবর্তিত হয়।
3. সংস্কৃতি ও জীবনের পার্থক্য:
প্রতিটি জাতির জীবনযাত্রা, বিশ্বাস, খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ—এসব কিছু আলাদা। তাই তাদের ভাব প্রকাশের জন্য যেসব শব্দ দরকার, তা আলাদা আলাদা হয়েছে। ফলে ভাষাতেও পার্থক্য এসেছে।
4. আদিম ভাষার ভাঙন (Tower of Babel - ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ):
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী (বিশেষত বাইবেল অনুসারে), একসময় সব মানুষের ভাষা এক ছিল। কিন্তু মানুষ যখন 'বাবেল টাওয়ার' বানাতে চেয়েছিল, তখন ঈশ্বর তাদের ভাষা বিভক্ত করে দেন, যাতে তারা একে অপরকে বুঝতে না পারে। এটি ভাষার বৈচিত্র্যকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে।
5. রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব:
একটা জাতি অন্য জাতিকে শাসন করলে বা বিজয় করলে তাদের ভাষার প্রভাব পড়ে। যেমন, ভারত উপমহাদেশে মোগল ও ব্রিটিশদের শাসনের ফলে উর্দু, ফার্সি, ইংরেজি প্রভৃতি ভাষার প্রভাব পড়েছে।
---
উদাহরণ:
বাংলা, হিন্দি, উর্দু—সবই এসেছে একই উৎস ভাষা থেকে (সংস্কৃত বা প্রাকৃত), কিন্তু আজ এদের আলাদা আলাদা রূপ ও শব্দভাণ্ডার আছে।
ইংরেজি, জার্মান, ফ্রেঞ্চ—সবই ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষার শাখা, তবুও এখন একে অপরের থেকে অনেক আলাদা।
#ভাষা