28/07/2025
মানবজীবন মূলতঃ এক দীর্ঘ, নিঃশব্দ একাকীত্বের যাত্রা। মানুষ চতুর্দিকে কাহাকেও যেরূপ নিকট দেখিতে পায়, হৃদয়ে তাহা তদ্রূপ নয়। সংসার, পরিবার, বন্ধু, প্রেম—সবই ক্ষণিকের সঙ্গ, ক্ষণিকের ছায়া। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ আপন ব্যথা লইয়া একাই পথ চলে, একাই হাসে, একাই কাঁদে।
যাহারা ভাবে, “আমার পাশে বহুজন রহিয়াছে, আমি একা নই”—তাহারা আত্মপ্রবঞ্চনার স্বর্গে বাস করে। কারণ হৃদয়ের অন্তঃস্থ গোপনতম কোঠায় প্রবেশাধিকার কাহারও থাকে না। মানুষ বহুর মাঝে থাকিয়াও একাকী, প্রেমে মগ্ন থাকিয়াও নিঃসঙ্গ।
মানুষ আপন দ্বিধায় দ্বিধান্বিত, নিজেরই অন্তর্জ্বালায় নীরবে দগ্ধ হয়, অথচ তাহার সে দহন কাহারও নিকট ব্যক্ত করিবার ভাষা খুঁজিয়া পায় না। ফলে তাহার নৈঃশব্দ্যই তাহার একমাত্র সঙ্গী হয়।
আকাশে যেমন শত তারার জ্যোতি থাকে, তেমনি মানুষের মুখে মুখে ভালবাসার বুলি উচ্চারিত হয়; কিন্তু অন্তরে থাকে এক দীর্ঘ নিস্তব্ধতা, এক নিরুত্তর শূন্যতা। মানুষ জগতের সকল কিছু লাভ করিলেও, হৃদয়ের সঙ্গী কখনও সম্পূর্ণরূপে লাভ করে না।
কিছু কিছু কথা বলিলেই বোঝা যায়, সে শুনিল না। কিছু কিছু দৃষ্টিতে স্পষ্ট হয়—সে বুঝিল না। এই “না-বোঝা”, “না-শোনা”র মাঝেই জন্ম লয় এক প্রকট নিঃসঙ্গতা, যাহা দিনের আলোতেও নিকষ অন্ধকারের মতন গ্রাস করে হৃদয়কে।
সময় যত যায়, এই একাকীত্বের উপলব্ধি তত গভীরতর হইয়া উঠে। কেহ তাহার দুঃখ লাঘব করিবার জন্য আসে না; আর যাহারা আসে, তাহারা কেবলমাত্র উপস্থিত থাকে, সঙ্গী হয় না। হৃদয় খুঁজে চলে এক আশ্রয়—কিন্তু পায় না।
অতএব, ইহা স্বীকার করিতে দ্বিধা নাই—সকলেই একা।
এ এক বাস্তব সত্য, যাহা তত্ত্বে কঠিন, অনুভবে সহজ।
এ এমন এক দহন, যাহা প্রত্যেকেই বহন করে; কেহ প্রকাশ্যে, কেহ নিঃশব্দে।
~✍🏻✒️DikuShiku