
30/10/2024
আমাদের পরিকল্পনার সাথে যখন আল্লাহ্’পাকের পরিকল্পনা মিলে যায়, তখন আমরা না বুঝেই বলি- আমি তো ঐভাবেই প্ল্যান করে এগিয়েছি, তাই সফলতা পেয়েছি। বেমালুম ভুলে বসে থাকি যে আল্লাহ্’পাকের হয়তো একই পরিকল্পনা না থাকলে ঐ সফলটা জুটতো না। আবার যখন নিজের পরিকল্পনার ফলাফল ব্যর্থ হয় বা মেলে না তখন অন্যেরা বলে উনার ঐ প্ল্যানটা ভুল ছিল। নিজেও হয়তো নিজেকে আমরা ধিক্কার দেই। কিন্তু এটা ভাবি না আল্লাহ্’র ইচ্ছে ও পরিকল্পনা হয়তো ভিন্ন ছিল।
বাসায় বাবা-মা’র জন্য অ্যাটাচড্ বাথসহ একটি ডেডিকেটেড রুম থাকবে, যেখানে বাড়ি থেকে ঢাকায় আসলে তারা থাকবে। প্রয়োজনে তাদের মনের মতো করে ইন্টেরিয়র করে দেয়া হবে, চাইলে ফার্নিচার ও অন্যান্য জিনিসপত্রগুলোও তাদের চাহিদা মোতাবেক সাজানো হবে। এমনটাও হতে পারে যে- তারা চাইলে সেই রুম তালা দিয়েও বাড়িতে চলে যেতে পারবে। এই রকম চিন্তা করেই আলাদা একটা সবচেয়ে সুন্দর রুমের ব্যবস্থা রেখেছি।
কিন্তু যেকারণেই হোক, সেই রুম ঠিকই হলো। ঠিক তেমন রকমেরই, কিন্তু বাবা-মা’র আর সেখানে থাকা হচ্ছে না। তারা ঢাকায় আসেন ঠিকই, কিন্তু যেভাবে প্ল্যান করেছি, সেইভাবে আর হচ্ছে না। এই প্ল্যান আমরা স্বামী-স্ত্রী-সন্তান সবাই মিলেই নিয়েছিলাম; কিন্তু তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। হয়তো আর হবেও না। অথচ সেই রুমটি ঠিকই আছে। আমাদের অতো রুম লাগে না। বলা যায়, মন চাইলে ঐ রুমটা এখন আরাম-আয়েশের জন্য ব্যবহার করি মাঝে মধ্যে। রুমটা বেশিরভাগ সময় পড়েই থাকে।
এটা একটা উদাহরণ দিলাম। এইরকম বহু ঘটনা আছে যেখানে আমরা যেমনটা চাই, সবকিছু ঠিক থাকার পরও তেমনটা আর হয়ে ওঠে না। আমার মা সবসময় বলেন- বাবা, যখন যেটা মন চাইবে সাথে সাথেই তা করে ফেলবি। যেমন তোর একটা শার্ট কিনতে ইচ্ছে হলো। দেরি করবি না, কিনে ফেলবি। তোর আইসক্রিম খেতে মন চাইলো। দেরি করবি না, খেয়ে ফেলবি। কোথাও ঘুরতে মন চাইলো, দেরি করবি না, সময় বের করে ঘুরতে যাবি। বাবা, একদিন হয়তো সব হবে, বা হয়; কিন্তু তোর চাওয়ার সেই মনটাই আর পাবি না।
মায়ের কথাগুলো দারুণ। একদম ঠিক কথা। সময় এমন একটা বিষয়, তা আমাদেরকে নানাভাবে তার সঠিক অবস্থানটি বুঝিয়ে দেয়। শিক্ষাও দেয় অনেক। একসময় আমার সবচেয়ে উপভোগ্য ও আকর্ষণীয় খেলা ছিল- ঘুড়ি ওড়ানো। সেই ছোটবেলার কথা। নানা রঙের ঘুড়ি বানাতে ও ওড়াতে পছন্দ করতাম। পড়ালেখার পাশাপাশি ঐ ঘুড়ি নিয়েই দূরদূরান্তের পাটকাটা ক্ষেতজুড়ে দিগন্তের রেখা ধরে দৌড়াতাম। রোদ নেই, বৃষ্টি নেই, সারাদিনই যেন ঘুড়ির পেছনে দৌড়াতাম।
এখন গ্রামে গেলে, শহরতলীতেও কতবার দেখছি ছেলেপুলেরা ঘুড়ি ওড়াচ্ছে, আমাকেও ওড়ানোর জন্য দিচ্ছে; কিন্তু সেই ভাললাগা আর নেই। একসময় অঞ্জুঘোষ আর শাবনূরকে দেখলে মনে হতো, তাদের মতো সুন্দরী ও মায়াবী পৃথিবীতে আর নেই; এখন সেই ছবিগুলোই ইউটিউবে দেখলে মনে হয়- পর্দায় দেখা এদের রূপলাবণ্যে এতো মুগ্ধ ছিলাম? এর চেয়ে ঢের কত কত সুন্দরী আছে আনাচে-কানাচে। নিজের বউটাই-বা কম কিসে!
একসময় খুব প্রতিবাদী ছিলাম। যেকোন অসঙ্গতি দেখলেই প্রতিবাদ করে যুক্তি দিয় কথা বলতাম। রেলস্টেশনে টিকেট কাটতে যেয়ে- ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মেলান্দহের স্টেশন মাস্টারদের সাথে টিকিট কালোবাজারি নিয়ে কতো যে প্রতিবাদ আর তর্ক বিতর্ক করেছি, তার শেষ নেই। বাবা সাথে থাকলে বলতেন- বাবা, অতো প্রতিবাদ করে লাভ নেই। চেপে যাও। তোমার টিকেট তো পেয়েছো, এবার তর্ক থামাও। তুমি তো তোমার প্রতিবাদ জানিয়েছো, বাকিটা তাদের কাজ। আমি বাবার এ কথায় সায় দিতাম না। ভাবতাম- উনি প্রশ্রয় দিচ্ছেন বা এড়িয়ে যাচ্ছেন।
এখন বুঝি সব জায়গায় প্রতিবাদ করে লাভ নেই। কিছু বিষয় এমন প্যাঁচমোচড়ে জড়ানো থাকে যে- ঐগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে পুরো সিস্টেমটাকেই বদলাতে হবে। যেটা অনেক বড় বিপ্লবের ব্যাপার। একযুগেও যা সম্ভব না। রাষ্ট্রপতির অপসারণ, তিনটি নির্বাচনে অংশ নেয়া সাংসদদের বাতিল, মানে- নির্বাচন বাতিল -ইত্যাদি করতে গেলে বহু প্রশ্ন সামনে আসছে। কারণ সেই নির্বাচনগুলোতে আ’লীগ ছাড়াও লীগ বিরোধী অন্যেরাও টুকটাক অংশ নিয়েছে। ফলে প্যাঁচ লেগে গেছে সেই রিট আবেদনের। ফলে চেপে যাও। পারলে নতুন করে শুরু করো। আর অন্য বিকল্প নেই আপাতত।
জীবনটা অনেক সুন্দর। সাধ্য না থাকলেও, সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব সেইটুকু দিয়ে আনন্দ খুঁজে নেয়া উচিৎ। না হলে, চাওয়া-পাওয়ার এই সময় আর কখনো ফিরবে না। ফেরে না কোনদিনও।
----- এস জে রতন