28/06/2025
এসএলই রোগ ও সাবধানতা🌅
আগেও আমি এই রোগ সম্পর্কে ভিডিও বানিয়েছিলাম আজকে আবার ও লিখছি। লেখাটা লম্বা হলেও মন দিয়ে পড়বেন বিশেষ করে ১৫-৪০ বছর বয়সী মেয়েরা। এই রোগটি ৯০% মহিলার হলে ১০% ছেলের হয়ে থাকে। আগে এই রোগটি সমতলে বেশীরভাগ দেখা গেলেও পাহাড়ে এই রোগ সম্পর্কে কেউ কোনদিন শোনেই নি,,কিন্তু ইদানিং আমাদের পাহাড়ে প্রায় ঘরে ঘরেই এ রোগী এখন বিরাজমান,,,এখন কথা হচ্ছে এগুলো কেন হচ্ছে কোত্তেকে হচ্ছে?.. এসএলই যার অর্থ (সিস্টেমিক লুপাস এরিটমেটোসাস) এটি একটি বাত রোগ। যা একজন রোগীর ইমুনিটি সিস্টেমকে ধ্বংস করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এ রোগের প্রাথমিক লক্ষ্মণ গুলো হচ্ছে, গিরায় গিরায় ব্যথা হওয়া,জ্বর জ্বর ভাব,মুখ ফুলে যাওয়া,মুখে বাটারফ্লাই র্যাশ হওয়া। এই লক্ষনগুলো দেখা দিলে দ্রুত রিউমেটলেজিস্ট এর শরনাপন্ন হবেন। একে সংক্ষিপ্ত আকারে লুপাস ও বলা হয়। সাধারণত আমরা জানি বাত রোগে মানুষ মরে না। তাই এই রোগটি হওয়ার পর ও অনেকেই অবহেলা করে। কিন্তু এটি এমন একটি মারাত্মক রোগ যা কখনো অবহেলা করার মত নয়,,,আপনি যদি এই রোগটিকে সময়মত সুচিকিৎসা না দেন তাহলে এই রোগটি নেকড়ের মত আপনার শরীরকে আক্রমণ করবে তা ও আপনার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে। যেমন কিডনি,লিভার,হার্ট,স্কিন, রক্ত কমে যাওয়া। তবে এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। এইরোগের তিনটি স্তর রয়েছে মৃদু,মাঝারি,তীব্র। যাদের মৃদু অবস্থায় সনাক্ত হয় তাদের কপাল খুব ভাল এরা ডাক্তারের নিয়মিত চেকাপে সুস্থ থাকে। মাঝারির ক্ষেত্রেও এরকম। আর তীব্র, যত সমস্যার কারিগর হচ্ছে তীব্র এর চিকিৎসা যেমন ব্যয়বহুল তেমনি রিস্ক ও অনেক বেশী। তাই বলে ভয় পেলে চলবে না,,নিজের মনের মধ্যে সবসময় এই বিশ্বাস রাখবেন হ্যা আমি বাঁচবো নিজের জন্যই বাঁচবো। উদাহরণস্বরূপ আমি নিজেই। আমার বাবা,মা, স্বামী, আমার আতিক স্যার,ফারহানা আপু, আমার আত্নীয় স্বজন আমার পাশে না থাকলে হয়তো আমিও এতদিন সুন্দর পৃথিবীতে থাকতাম না। তাই রোগটি সনাক্ত হওয়ার পর অবশ্যই সবসময় একটি নির্দিষ্ট ডাক্তারের পরামর্শে থাকবেন। তাহলেই আপনি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারবেন। এই রোগটি হলে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই নিয়মিত ঔষধ খেলে আর ডাক্তারের পরামর্শে থাকলে আপনি অবশ্যই অনেকদিন বাঁচবেন। কিন্তু ঔষধ হেলাফেলা করা যাবে না। আমি ২০১৮ সাল থেকে এই রোগের সাথে যুদ্ধ করছি। এখনো দেখেন আপনাদের আশীর্বাদে কি সুন্দর হেসেখেলে বেঁচে আছি। লুপাসে কখনো আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না নিজেকে সবসময় ফুরফুরে মেজাজে রাখবেন,,সবসময় আপনি কিসে ভালো থাকবেন সে চিন্তা নিয়ে মশগুল থাকবেন। দেখবেন আপনি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের থেকেও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারবেন। আরো এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যারা ২০০১,২০০২ থেকে এসএলই রোগ নিয়ে সুন্দর জীবনযাপন করছে। যাদের লুপাস বা এসএলই রয়েছে তারা সবসময় নিজেকে প্রানবন্ত রাখার চেষ্টা করবেন। প্রতিবছর মে মাসের ১০ তারিখ কে বিশ্ব লুপাস দিবস ধরা হয়। তাই Lupus foundation of Bangladesh গ্রীন লাইফ হাসপাতাল ও বিএসএমএমইউ তে এই রোগ নিয়ে অনুষ্ঠান করে থাকে। তাই আপনারা যারা এই রোগের ভুক্তভোগী আছেন তারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এখান থেকে অনেক কিছু শেখা যায়,অনেক অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।
এখন আসি লুপাসে করণীয় ও লুপাস সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারনা নিয়ে-
১/ লুপাসে করণীয়:
ক) লুপাস হলে সবসময় নির্দিষ্ট একজন ডাক্তারের পরামর্শে থাকবেন।
খ) নিয়মিত ঔষধ খাবেন কখনো অবহেলা করবেন না।
গ) ডাক্তার যখন চেকাপ করতে বলবে তখন চেকাপ করাবেন।
গ) আপনারা যারা লুপাস রোগে আক্রান্ত তারা ইউটিউব বা গুগলে সার্চ দিয়ে দেখবেন এ রোগ সম্পর্কে সুন্দর করে ধারণা দেওয়া রয়েছে। অনেক বড় বড় ডাক্তার নিয়ে এ সকল অনুষ্ঠান গুলো করা হয়ে থাকে।
ঘ) এই রোগ হলে কখনো লুকাবেন না। অন্যজনের থেকে সবসময় পরামর্শ নিবেন কি করলে কি হবে।
ঙ) শীতকালটা লুপাস রোগীদের জন্য একটু রিস্কি কারণ ঠান্ডায় লুপাস রোগের তীব্রতা বেড়ে যায়। তাই লুপাস রোগীকে শীতকালে একটু সাবধানে থাকতে হয়।
২/ লুপাস সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা:
ক) অনেকেই মনে করে লুপাস ছোঁয়াচে রোগ। এটি সম্পুর্ণ ভুল ধারণা। কারণ এটি কোন বাহ্যিক রোগ নয়।
খ) অনেকেই মনে করে এটি বংশগত কিন্তু পরীক্ষা করে এখনো তার সঠিক সমাধান পায় নি। তাই এটি বংশগত রোগ বলা যাবে না। তবে যেহেতু এটি মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশী হয়ে থাকে তাই মায়ের থাকলে হয়তোবা তার মেয়ের হতে পারে। তবে এটি কপাল খারাপ হলে ১০০ জনের মধ্যে ১ জনের হতে পারে।
গ) অনেকেই মনে করে লুপাস হলে বাচ্চা নেওয়া যায় না। এটি সম্পুর্ণ ভুল ধারণা। আপনার লুপাস কন্ট্রোলে থাকলে,,নিয়মিত ডাক্তারে পরামর্শে অবশ্যই বাচ্চা নিতে পারবেন। সমতলে আমার পরিচিত অনেক আপু আছে তারা লুপাস নিয়েও সুন্দর করে বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন। তাই হতাশ হবেন না। আর না হলেও সমস্যা কি এ রোগে আক্রান্ত না হয়েও কত সুস্থ মানুষ রয়েছে বাচ্চা হয় না,,,তাই এটা একান্তই নিজের।
ঘ) লুপাসে হোয়াইট ব্লাড সেল আর রেড ব্লাডসেল গুলো একজন সুস্থ মানুষের থেকে একটু কম থাকে তাই তাদের রক্ত উৎপাদন ক্ষমতা একটু কম হয়ে থাকে। তাই মাঝে মাঝে অসুস্থতা বেড়ে গেলে রক্তের প্রয়োজন হয়। সেজন্য অনেকেই ব্লাড ক্যান্সার মনে করে থাকে। এটি সম্পুর্ণ ভুল ধারণা।
ঙ) এই রোগে আক্রান্ত হলে অনেকেই ওঝা,বৈদ্যি,ভান্তের কাছে যান,,,ডাক্তারের ঔষধ বাদ দিয়ে। ভুলেও এ কাজ করবেন না,,,আপনার নিতান্তই ওঝা বৈদ্যির কাছে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে যাবেন অবশ্যই যাবেন কারণ মনের সন্তুষ্টি বড় সন্তুষ্টি কিন্তু ডাক্তারের ঔষধ কখনো বাদ দিবেন না। এতে ক্ষতি আপনারই হবে। তখন পরিবারকেই তার সাফাই গাইতে হবে।
চ) লুপাসে রোগী সুস্থ থাকার সবচেয়ে মাধ্যম হচ্ছে তার পরিবার। একটা পরিবার ই পারে একজন রোগীকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন দিতে। তাই এই রোগটি হলে রোগীকে কখনো খোঁটা দিবেন না এতে রোগীর রোগ আরো বেড়ে যাবে। কারণ লুপাসে দুশ্চিন্তা করা কখনো উচিত নয়।
ছ) সুস্থ ও সঠিক চিকিৎসা না হলে অনেকেই বাংলাদেশের ডাক্তার দের দোষ দিয়ে থাকেন এটি কখনো করবেন না। কারণ ডাক্তার রা আপনার রিপোর্ট অনুযায়ী ই আপনাকে পরামর্শ দিবেন,ঔষধ দিবেন। তাই আপনারা কয়েক টাকা বাঁচানোর জন্য ভুলেও কম টাকায় টেস্ট করা যায় এমন জায়গায় টেস্ট করাবেন না। সবসময় নামকরা হাসপাতালেই টেস্ট করাবেন। যাতে রিপোর্ট ভালে আসে। রিপোর্টের রেজাল্টের উপরই রোগীর চিকিৎসা নির্ভর করে।
তাই সবাইয়ের সচেতন হওয়া জরুরি। সঠিক চিকিৎসায় সুন্দরভাবে জীবনযাপন করা যায় বাকীটা ভগবানের ইচ্ছা। আমরা বিশ্বাস করি জন্ম,মৃত্যু,বিবাহ কার কখন আসে আমরা কেউই জানি না। কারন আমরা কেউই কর্মের উর্ধ্বে নই।
নোট : অনেকেই কোন রোগ হলে ইন্ডিয়া গিয়ে চিকিৎসা করান। তবে যারা মধ্যবিত্ত তাদের পক্ষে এটা আকাশ কুসুম কল্পনা। তাই বাংলাদেশেই এর সুন্দর চিকিৎসা হয়ে থাকে। তাই সহজে পাওয়া যায় এমন কয়েকজন ডাক্তারের কার্ড আমি ছবিতে দিলাম।