Dairy PU'S

Dairy PU'S Know thyself

05/10/2025

ফেসবুকের নতুন আপডেট: ৪ শর্ত মানলেই লাখো দর্শকের কাছে পৌঁছে যাবে প্রোফাইল ও পেজ...

Big thanks to Kuheli Chakmafor all your support! Congrats for being top fans on a streak 🔥!
05/10/2025

Big thanks to Kuheli Chakma

for all your support! Congrats for being top fans on a streak 🔥!

05/10/2025

GD evening
To all

With Kuheli Chakma – I'm on a streak! I've been a top fan for 6 months in a row. 🎉
09/09/2025

With Kuheli Chakma – I'm on a streak! I've been a top fan for 6 months in a row. 🎉

07/09/2025

GD night everyone

কৃষ্ণ হলেন বাস্তবে সম্রাট কনিষ্কড. বরসম্বোধি ভিক্ষুতথাগত বুদ্ধ ধম্মকে প্রচার-প্রসারকারী বৌদ্ধ সম্রাটদেরকে এবং অনেক ভিক্ষ...
19/08/2025

কৃষ্ণ হলেন বাস্তবে সম্রাট কনিষ্ক

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

তথাগত বুদ্ধ ধম্মকে প্রচার-প্রসারকারী বৌদ্ধ সম্রাটদেরকে এবং অনেক ভিক্ষুদেরকে পরবর্তী সময়ে বোধিসত্ব বলা হয়েছে। বুদ্ধগয়ায় প্রাপ্ত একটি অভিলেখনীতে এরূপ বলা হয়েছে যে,-‘তথাগত বুদ্ধই হলেন হরি।’ (Asiatic Society, Vol. II, P-299). কৃষ্ণকেও হরি বলা হয়েছে। তাতে স্পষ্ট হয়ে যে, তথাগত বুদ্ধকেই পরবর্তী সময়ে বোধিসত্ব কৃষ্ণ বলা হয়েছে।

বুদ্ধকে ‘ভগবত’ও বলা হত। যার অর্থ হল যিনি লোভ, দ্বেষ ও মোহকে ভগ্ন বা বিনাশ করেছেন। এজন‍্য কৃষ্ণের গীতকে ‘ভগবতগীতা’ বলা হয়েছে। ভগবান বুদ্ধকে ‘ধম্ম সারথী বা পুরিসদম্ম সারথী ’ বলে আখ্যায়িত হয়েছে। এজন‍্য কৃষ্ণকেও মহাভারত যুদ্ধে সারথীরূপে দেখানো হয়েছে। ভগবত গীতার মূল লেখক ছিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু মাথেরা, যিনি বৌদ্ধ সম্রাট কনিষ্কের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন বলে ইতিহাসবিদ সুবিরা জয়সওয়াল তাঁর স্বীয় পুস্তক ‘Origin and তাঁর development of Vaishnavism’ এ লিখেছেন।

দ্বারকায় তথাগত বুদ্ধের ভব‍্য মূর্তি ছিল, যার পূজা কুষাণ বংশী যদু (বর্তমান যাদব) নাগবংশী বৌদ্ধেরা বুদ্ধের ত্রিবিক্রম কৃষ্ণ নামে পূজা করা হত। দ্বারকার মত মথুরাকেও কৃষ্ণের মুখ‍্য কেন্দ্র বলা হত। মথুরায় খনন কার্যের সময় সর্বত্র বুদ্ধ মূর্তি এবং বৌদ্ধ শিল্পকলাই পাওয়া গিয়েছে। সেখানে সম্রাট অসোক নির্মিত স্তূপ এবং অভিলেখও পাওয়া গিয়েছে। বুদ্ধের জীবদ্দশায় তিনি মথুরা গিয়ে ধম্মোপদেশ দিয়েছেন বলে পালি সাহিত‍্যে উল্লেখ রয়েছে। বুদ্ধ শিষ‍্য কাত‍্যায়নের জন্ম স্থানও ছিল মথুরায়। পালি সাহিত‍্যের ‘কন্হ জাতক’ কথার ভিত্তিতে ব্রাহ্মণ‍্যবাদী কর্তৃক মহাভারতের কৃষ্ণের বর্ণনা করা হয়েছে।

মধ‍্য যুগীয় কালে জন্ম নেওয়া উড়িষ্যা তথা মহারাষ্ট্রের কৃষ্ণভক্ত বৈষ্ণব সন্তেরা তথাগত বুদ্ধকেই কৃষ্ণ মান‍্যতা দিয়েছেন এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বুদ্ধ নিজে কৃষ্ণ রূপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এরূপ প্রতিকূল পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পরে কৃষ্ণ আবার বুদ্ধ হয়ে যাবেন এবং বৌদ্ধ ধম্মকে সর্বত্র প্রসার করবেন এরকমই সন্তগণের মান‍্যতা ছিল। ইহাকে ভিত্তি দেওয়ার জন‍্য বৌদ্ধ বৈষ্ণব সন্ত রমাই পণ্ডিত কর্তৃক ‘শূন‍্য সংহিতা’ নামক গ্রন্থ সপ্তম শতাব্দীতে লিখা হয়েছে।

বৌদ্ধ ধম্মে অষ্টাঙ্গ মার্গকে অত‍্যন্ত মহত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে এবং কৃষ্ণ অষ্টমী হল বাস্তবে বুদ্ধের অষ্টাঙ্গিক মার্গকে স্মরণকারী ধম্ম শ্রবণ বা শ্রাবণ মাসের গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিনে বৌদ্ধেরা ধম্মচক্রকে উপর লটকিয়ে নীচ হতে মানব সিঁড়ি বানিয়ে ইহাকে স্পর্শ করতেন এবং ধম্মচক্রকে প্রাপ্ত করার আনন্দে খুশীতে উৎসব পালন করতেন এরকম প্রাচীন ভারহুত স্তূপের ভাস্কর্যে দেখানো হয়েছে। প্রমাণ স্বরূপ নীচে এর ছবিও প্রদত্ত হয়েছে। আজকাল ব্রাহ্মণ‍্যবাদী লোকেরা ধম্মচক্রের পরিবর্তে উপরে হাণ্ডী টাঙ্গিয়ে মানব সিঁড়ি বানিয়ে তাতে ছিদ্র করে দেয় এবং কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর আনন্দ উৎসব পালন করে থাকে।

তাতে স্পষ্ট হয় যে, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী হল বাস্তবে ধম্মচক্র অষ্টমী এবং কৃষ্ণ বাস্তবে বোধিসত্ব কৃষ্ণ অর্থাৎ সম্রাট কনিষ্কই। রাম-কৃষ্ণ ইত‍্যাদি হলেন কাল্পনিক পাত্র। এদের কোনো ঐতিহাসিক কিংবা পুরাতাত্বিক সাক্ষ‍্য নেই। তা পুরাতত্ববিদেরাও মান‍্যতা প্রদান করেছেন। তাঁদের অভিমতও পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে।

আরব এবং ভারতের সম্বন্ধড. বরসম্বোধি ভিক্ষুআরব এবং ভারতের সম্পর্ক বিষয়ে একটি বিখ‍্যাত পুস্তক রয়েছে। সে পুস্তক এবং লেখকের ছ...
12/08/2025

আরব এবং ভারতের সম্বন্ধ

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

আরব এবং ভারতের সম্পর্ক বিষয়ে একটি বিখ‍্যাত পুস্তক রয়েছে। সে পুস্তক এবং লেখকের ছবি নিম্নে প্রদত্ত হল। পুস্তকটির রচয়িতা হলেন মৌলানা সৈয়দ সুলায়মান নদভী (১৮৮৪-১৯৫৩) এবং ১৯২৯ সালে তিনি পুস্তকটি লিখেছেন। আরব এবং ভারতের সম্বন্ধ কেবল বর্তমানের নয়। বরং এ সম্পর্ক সুপ্রাচীন কাল হতে গড়ে উঠেছে।

মৌলানা নদভী সাহেব ভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভারত স্বাধীনের পূর্বে ১৯২৯ সালে এলাহাবাদস্থ হিন্দুস্তান একাডেমী নদভী সাহেবকে ভারত এবং আরবের সম্বন্ধ বিষয়ে একটি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়েছিল। তিনি পাঁচটি অংশে তাঁর ব‍্যাখ‍্যা প্রস্তুত করেছিলেন। সে পাঁচটি ব‍্যাখ‍্যার একত্রে সঙ্কলন গ্রন্থ হল ‘আরব এবং ভারতের সম্বন্ধ।’

এ পুস্তকটি গভীর মনোযোগ সহকারে পাঠ করলে স্পষ্ট জানা যায় যে, প্রাচীন কালে আরবে তথাগত বুদ্ধের স্থিতি কত গভীর ছিল। এ পুস্তকে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, আফগানিস্তানের বাল্ক শহরে স্থাপিত হয়েছিল বিশাল একটি বৌদ্ধ বিহার বা সঙ্ঘারাম। আরবী ভাষায় বৌদ্ধদেরকে ‘সমনী সম্প্রদায়’ বলা হতো। সমনী শব্দটি বৌদ্ধ পরম্পরার ‘শ্রমণ’ শব্দ হতে এসেছে। আরবী ভাষায় সমনীয়দের সম্পর্কে বিশদ বর্ণনাও রয়েছে। আমরা তো জানি যে, ফার্সী ভাষায় বুদ্ধকে ‘বুত’ বলা হয়। ইহা সর্ব বিদিত যে, বুদ্ধ হতেই ‘বুত’ শব্দ এসেছে। দেশ-বিদেশের সর্বত্র বুদ্ধের এত অধিক সংখ‍্যক মূর্তি তৈরী হয়েছিল যে, ফার্সিয়ানেরা মূর্তিকেই ‘বুত’ বলতে শুরু করেছে। তারা বিহার তথা মন্দিরকে বলত ‘বুতখানা’ এবং মূর্তি পূজকদের বলত ‘বুত পরস্ত।’ তবে বুত শব্দ যে বুদ্ধ শব্দ হতে এসেছে তার প্রমাণ কি? তজ্জন‍্য আমাদেরকে আরবী অভিধান খুলে দেখতে হবে। হিন্দিতে বুদ্ধকে ‘বুধ’ (Budh) বলা হয় এবং আরবী ভাষায় বুধ শব্দের ‘ধ’ অক্ষর ‘ত’ অক্ষর হয়ে বুদ্ধ সেখানে ‘বুত’ হয়ে গিয়েছে। এগুলি সহ উপরিউক্ত পুস্তকে আরও অনেক আকর্ষনীয় বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা থেকে এখানে বিরত থাকলাম।

ভারত এবং আরব সম্পর্কে সিন্ধ এলাকায় কিছু পুস্তকও লিখা হয়েছে। সেগুলি পরে ফার্সি ভাষায়ও অনুবাদ করা হয়েছে। বইগুলি আবার আরবী ভাষায়ও অনুবাদ পাওয়া যায়।

মৌলভী সৈয়দ সুলেমান নদভী সাহেব ছিলেন একজন প্রখ‍্যাত ইতিহাসবিদ, ইসলামী বিদ্বান এবং অনেক গবেষণামূলক গ্রন্থের প্রসিদ্ধ লেখক। ‘আরব এবং ভারতের সম্বন্ধ’ পুস্তকটিও অত‍্যন্ত গবেষণাপূর্ণ মূল‍্যবান গ্রন্থ বলে ঐতিহাসিকেরা মান‍্যতা প্রদান করেছেন। এ পুস্তকটির হিন্দি অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে। হিন্দি সাহিত‍্য ও ইতিহাসের স্বনামধন্য লেখক ও ভারত সরকার হতে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ অভিধা প্রাপ্ত শ্রী রামচন্দ্র বর্মা মহোদয়।

পুস্তকটি যখন প্রচ্ছদ খুলে ভিতরে দেখা হয় সেখানে প্রদত্ত মানচিত্রটি আমাদের নজর কাড়ে। মানচিত্রটি গুজরাত এবং সিন্ধের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করেছেন। তাতে লিখা হয়েছে যে, গুজরাত এবং সিন্ধের উপর প্রস্তুত কৃত এ মানচিত্রটি হল পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র। এ মানচিত্রটি প্রস্তুত করেছিলেন তুর্কী হতে ভারতে আসা পর্যটক ইবনে হক্কল (Ibn Hawqal), যিনি দশম শতাব্দীতে পর্যটকরূপে ভারতে এসেছিলেন। আফ্রিকান দেশ সমূহ সহ আরও অন‍্যান‍্য দেশেও তিনি ভ্রমণ করেছিলেন। ৯৪৩ খৃষ্টাব্দে তিনি ভারত ভ্রমণকালে মানচিত্রটি বানিয়েছিলেন। উত্তর প্রদেশের ‘শাহী অবধ লাইব্রেরী’ হতে ইংরেজ লেখক টি. এস. ইলিয়ট (১৮৮৮-১৯৪৫) কর্তৃক প্রাপ্ত হয়েছিল এ মানচিত্রটি। তাঁর পুস্তক হতে নিয়ে মৌলানা সৈয়দ সুলেমান নদভী সাহেব তাঁর পুস্তকে মানচিত্রটি ‘আরব এবং ভারতের সম্বন্ধ’ পুস্তকে সংযুক্ত করেছেন।

পুস্তকের প্রথমেই যে ম‍্যাপ দেওয়া হয়েছে তাতে সিন্ধের বিস্তীর্ণ এলাকাকে ‘বুদ্ধ দেশ’ বলে উল্লিখিত হয়েছে। আপনারা জেনে আশ্চর্যান্বিত হবেন যে, বিদেশী পর্যটক কর্তৃক এ ভারতকে ‘বুদ্ধদেশ’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু ভারতীয়রা ইহাকে রামের দেশ, কৃষ্ণের দেশ ইত‍্যাদি অনেক নামে পরিচিতি দিতে চাইলেও বিদেশীরা ইহাকে বুদ্ধদেশ রূপে জেনেছেন, যা হল ইতিহাসের জ্বলন্ত সাক্ষী। এখন আসা যাক, ভারতকে বুদ্ধদেশ বলার কারণ কি?

এর কারণ ইহাই যে, সিন্ধের যে বিশাল এলাকা ছিল এবং তাতে যে সিন্ধ সম্রাজ‍্য বিস্তৃত ছিল, পঞ্চম শতাব্দী হতে সপ্তম শতাব্দীর মধ‍্যে যে সকল শাসকেরা সিন্ধ সম্রাজ‍্যকে শাসন করেছেন, তাঁদেরকে ভারতীয় ইতিহাসে ‘রায় বংশ’ বলা হয়। এ রায় বংশের রাজাদের সম্রাজ‍্যের যে বিস্তার ছিল, তা কাশ্মীর হতে নিয়ে করাচী পর্যন্ত সাড়ে পনর লক্ষ বর্গ কিলোমিটার ব‍্যাপী রায় বংশের শাসন বিস্তৃত ছিল। রায় বংশের রাজাগণ ছিলেন বৌদ্ধ। আপনারা যখন আরবীতে লিখা ‘সচনামা’ গ্রন্থ পাঠ করবেন, (যা পরে হিন্দি এবং ইংরেজীতেও অনুবাদ হয়েছে) সে পুস্তকে লিখিত হয়েছে যে, রায় বংশের যাঁরা শাসকগণ ছিলেন তাঁরা মৌর্য বংশের সাথে যুক্ত ছিলেন। অর্থাৎ তাঁরা মৌর্য বংশোদ্ভূত ছিলেন। সুতরাং সিন্ধতে ছিল মৌর্যদের প্রাণ। তাঁরা দু’ শ বছর পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। মৌর্য শাসকেরা এ অঞ্চলে বড় বড় স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন। সিন্ধ ভাষায় স্তূপকে ‘থুল’ বলা হত এবং সেখানে পর্যটক ইবনে হক্কল যিনি ছিলেন, তিনি তো এসেছিলেন দশম শতাব্দীতে, সে সময় পর্যন্ত উক্ত এলাকায় তথাগত বুদ্ধের অনেক স্মৃতিচিহ্ন অবশিষ্ট ছিল। স্মারক, স্তূপ এবং বৌদ্ধ ধম্মের নানা প্রকারের রীতি-রেওয়াজ তথায় বিদ‍্যমান ছিল। এজন‍্য ইবনে হক্কল ভারতের নাম ‘বুদ্ধদেশ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

আমি বলেছি যে, স্তূপকে সিন্ধি ভাষায় থুল বলা হয়। রায় বংশের শাসক যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ছিলেন বৌদ্ধ। তাঁরা সাড়ে পনের লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দু’শ বছর পর্যন্ত শাসন করেছেন। তাঁরা অনেক স্তূপ বানিয়েছিলেন। সিন্ধ প্রান্তে বর্তমানেও একটি স্তূপ রয়েছে। যাকে তাঁরা থূল মীর রূকান বলে থাকেন। এখন আপনারা বুঝতে পারছেন যে, ভারতের এক ভূভাগের নাম এক সময় বুদ্ধদেশও ছিল।

আমেরিকান প্রথম বৌদ্ধ হেনরি অলকটড. বরসম্বোধি ভিক্ষুবৌদ্ধ ধম্মের মহান প্রচারক ও বিশ্ব বৌদ্ধ পতাকার অন‍্যতম রূপকার মহান মনী...
06/08/2025

আমেরিকান প্রথম বৌদ্ধ হেনরি অলকট

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

বৌদ্ধ ধম্মের মহান প্রচারক ও বিশ্ব বৌদ্ধ পতাকার অন‍্যতম রূপকার মহান মনীষী কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকটের স্মরণে আজ এ আলেখ‍্য উপস্থাপন করছি।

কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকটের জন্ম ২রা আগস্ট ১৮৩২ সালে আমেরিকার ন‍্যু জার্সি রাজ‍্যের অরেঞ্জ কাউন্টিতে। তিনি ছিলেন মূলত: একজন আমেরিকান সৈনিক, সাংবাদিক, উকিল এবং থিয়োসফিক‍্যাল সোসাইটির যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা।

বৌদ্ধ ধম্ম গ্রহণ
————————

১৮৮০ সালে তিনি শ্রীলঙ্কা গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি নিজেকে একজন বৌদ্ধরূপে ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রথম আমেরিকান, যিনি স্বীয় আধ‍্যাত্মিক সঙ্গী হেলেনা ব্লাবস্কীর (১৮৩১-১৮৯১) সঙ্গে ত্রিরত্নের শরণ (Three refuges) এবং পঞ্চশীল (Five precepts) গ্রহণ করে বৌদ্ধ ধম্মের দীক্ষা গ্রহণ করেছেন।

কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকট শ্রীলঙ্কার বরপুত্র অনাগারিক ধম্মপালের সাথে একত্রিত হয়ে বৌদ্ধ ধম্মের পুনরুদ্ধার এবং শিক্ষা প্রসারে প্রমুখ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৮৮৫ সালে তিনি বিশ্ব বৌদ্ধ পতাকা (World Buddhist flag) নির্মাণে ডিজাইন করতে সহযোগিতা করেছেন, যা বর্তমানে বৈশ্বিক বৌদ্ধ প্রতীকরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্ত পর্যন্ত বৌদ্ধদের ঐক‍্যতার কোনো প্রতীক বা পতাকা ছিলনা, যাতে বৌদ্ধরা নিজেদের পরিচয়কে দৃঢ়তার সাথে ব‍্যক্ত করতে পারে। বৌদ্ধদের ঐক‍্যতার প্রতীক দিতে, গৌরব দান করতে, পরিচয় তুলে ধরতে এবং সংগঠিত শক্তি প্রদান করতে একটি পতাকার অতীব প্রয়োজন ছিল। পতাকার আবশ‍্যকতা ও গুরুত্ব সকলকে বুঝানো হয়েছে এবং ১৮৮৫ সালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে বৌদ্ধ পতাকা নির্মাণ করা হয়েছিল।

Theosophical Society’ র নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যার প্রমুখ সদস‍্যগণ ছিলেন-

১) কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকট (১৮৩২-১৯০৭)
২) বোধিসত্ব অনাগারিক ধম্মপাল (১৮৬৪-১৯৩৩)
৩) হিক্কাদুবে শ্রী সুমঙ্গল নায়ক থেরো (১৮২৭-১৯১১) এবং
৪) মিগেত্তুবত্তে শ্রী গুণানন্দ নায়কথেরো (১৮২৩-১৮৯০) সহ অন‍্যরা।

ষড়রশ্মি যুক্ত পতাকার ডিজাইন বিশেষত্ব
————————-

১) নীলবর্ণ-ধ‍্যান এবং করুণা
২) পীতবর্ণ-মধ‍্যম মার্গ বুদ্ধত্বের জ‍্যোতি
৩) লোহিতবর্ণ-বুদ্ধের মহাশক্তি বা তেজ
৪) ওদাত বা শ্বেতবর্ণ-শুদ্ধতা বা শান্তিপূর্ণ বিচার
৫) মঞ্জিষ্ঠবর্ণ-জ্ঞান এবং সমর্পণের প্রতীক
৬) প্রভাস্বর বর্ণ-উপরিউক্ত পাঁচ প্রকার বর্ণের মিশ্রিত বর্ণ, যা বুদ্ধের অনন্ত প্রভাকে (Aura) দর্শিয়ে থাকে।

এ ষড়রশ্মি বুদ্ধের ‘জ্ঞান-জ‍্যোতি’ হতে প্রকাশিত, যা বুদ্ধগয়ার বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির পরে চতুর্থ সপ্তাহে রতনঘর চৈত‍্য স্থানে ধ‍্যানমগ্ন থাকার সময় তাঁর শরীর হতে নির্গত হয়েছিল।

কর্ণেল অলকট এবং অনাগারিক ধম্মপালের ধম্মকার্য
————————————-

অলকটের ভূমিকা: কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকট শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধদের মধ‍্যে শিক্ষা এবং সংগঠনে নতুন দিশা এবং প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। ধম্ম পতাকার ডিজাইনের মধ‍্যে তিনি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ এবং প্রতীকাত্মকতা যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার সাথে সাথে বিশ্ব বৌদ্ধদেরকেও একত্রিত করণের দৃষ্টিকোণ হতে পতাকার ডিজাইন করা হয়।

অনাগারিক ধম্মপালের ভূমিকা: ধম্ম পতাকাকে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে অনাগারিক ধম্মপালের অনন‍্য ভূমিকা রয়েছে। তৎকালীন সময়ে ব্রাহ্মণ‍্য দখল হতে বুদ্ধগয়া মুক্তি আন্দোলন, শিকাগোতে বিশ্ব ধম্ম সংসদ (১৮৯৩) সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অনাগারিক ধম্মপালের মাধ‍্যমে এ পতাকা মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান, ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থান লাভ করেছে।

অনাগারিক ধম্মপাল ইহাকে ‘ধম্মের বিশ্ব ভাষা’ রূপে আখ‍্যায়িত করে বলেছেন-‘ইহা হল এমন এক প্রতীক, যা দেশ, জাতি, ভাষার ঊর্ধে উঠে সকল বৌদ্ধদের যুক্ত করেছে।’

বৈশ্বিক মান‍্যতা: ১৯৫০ সালে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সঙ্ঘ WFB (World Fellowship of Buddhists) দ্বারা এ ধম্ম পতাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ধম্ম পতাকা রূপে মান‍্যতা লাভ করেছে। আজ এ পতাকা বিশ্বের সর্বত্র বৌদ্ধ বিহার সমূহে, সংস্থায় এবং বিভিন্ন উৎসবে শ্রদ্ধা এবং মর্যাদা সহকারে উত্তোলন করা হয়।

অনাগারিক ধম্মপাল এবং কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকটের মত বৌদ্ধ মনীষীগণ কেবল বৌদ্ধধম্মের পুনরুত্থানই করেননি, বরং তাঁরা সংবিধান এবং প্রতীকাত্মকতার মাধ‍্যমেও বৌদ্ধ জাগরণের এক ঢেউ খাঁড়া করেছিলেন। বৌদ্ধ পতাকা হল সে আন্দোলনেরই অমর ঐতিহ‍্যপূর্ণ পতাকা, যা কেবল এক ধম্মের প্রতীক নয়, বরং শান্তি, করুণা এবং জ্ঞানের বৈশ্বিক ভাষারূপেও বিদিত।

কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকট শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধদেরকে খৃষ্টান ক‍্যাথলিক মিশনের আগ্রাসন হতে রক্ষার উদ্দেশ‍্যে অনেক বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে জনগণকে মার্গ দর্শন দিয়েছেন। তাঁর দ্বারা স্থাপিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ‍্যে আনন্দ কলেজ, ধম্মরাজা কলেজ, নালন্দা কলেজ প্রভৃতির নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিহারে বিহারে রবিবাসরীয় ধম্ম স্কুলের প্রচলন করে তিনি সদ্ধম্মের পূনর্বাসন জাগরণ এনে দিয়েছেন।

শিক্ষা এবং লেখন
————————

১৮৮১ সালে তিনি Buddhist Catechism নামক পুস্তক লিখেছিলেন, যা এখনও অনেক বৌদ্ধ বিদ‍্যালয়ে পড়ানো হয়। Theosophical Society প্রতিষ্ঠা করে তিনি ধম্ম, দর্শন, বৌদ্ধ শিক্ষা এবং আধ‍্যাত্মিক সাধনকে নবরূপে পাশ্চাত‍্যে প্রসারের দরজা খুলে দিয়েছিলেন।

বৈশ্বিক প্রভাব
———————

বৌদ্ধ ধম্মকে পাশ্চাত‍্য বিশ্বে প্রচারে কর্ণেল অলকটের অবদান অনস্বীকার্য। বুদ্ধ শিক্ষার উদার আত্মবিশ্বাস, ভ্রাতৃত্ব এবং স্বাবলম্বীতা পাশ্চাত‍্য বিদ্বানদের বুঝাতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি অনাগারিক ধম্মপালের মত বৌদ্ধ মনীষীর নিবেদিত কর্মের সমর্থন ও সহায়তা প্রদান করেছিলেন এবং ধম্মপালকে বৈশ্বিক যাত্রা এবং বুদ্ধগয়া আন্দোলনের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা করেছিলেন।

নিধন এবং ঐতিহ্য
————————-

কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকট ১৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯০৭ সালে ৭৬ বছর বয়সে ভারতের মাদ্রাস (চেন্নাই) দেহ ত‍্যাগ করেছিলেন।

শ্রীলঙ্কায় এখনও কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকটকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। রাজধানী কলম্বোর অন‍্যতম প্রধান সড়কের নাম হল ‘Olcott Mawatha’, অর্থাৎ অলকট সড়ক। সেখানে তাঁর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে এবং সরকার কর্তৃক স্মারক ডাক টিকেটও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর ভাষণ, লেখনী, সংস্থা এবং ধাম্মিক প্রতিষ্ঠান সমূহ এখনও তাঁকে অমরত্ব দান করে রেখেছে। তিনি তাঁর আদর্শ, শিক্ষা এবং নি:স্বার্থ কাজের মাধ‍্যমে সকলের নিকট চিরঞ্জীব হয়ে আছেন।

তিনিই ছিলেন আমেরিকার কোনো বিদ্বান, যিনি সর্ব প্রথমে সার্বজনিকরূপে বৌদ্ধ ধম্মকে গ্রহণ করে প্রচার করেছিলেন। ১৮৮৫ সালে বিশ্ব বৌদ্ধ পতাকা নির্মাণে গঠিত কমিটির তিনি ছিলেন অন‍্যতম মুখ‍্য সদস্য, যা আজ বৈশ্বিক মর্যাদা অর্জন করেছে। তাঁর রচিত ‘Buddhist Catechism’ নামক পুস্তক শ্রীলঙ্কার অনেক বৌদ্ধ স্কুল-কলেজে পড়ানো হয়। বৌদ্ধ ধম্ম, দর্শন এবং আধুনিক যুগোপযোগী করে রচিত তাঁর পুস্তকের মাধ‍্যমে পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীগণ অনেক উপকৃত হয়েছে।

কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকট ছিলেন একজন পাশ্চাত্য বৌদ্ধ মনীষী, যিনি ছিলেন একাধারে পণ্ডিত, প্রচারক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, বৌদ্ধ পতাকার ডিজাইনার এবং বৈশ্বিক সংযোগ সংস্থাপক। তিনি বৌদ্ধ ধম্মকে আধুনিক, সুস্পষ্ট এবং সার্বভৌমিক রূপে স্থাপন করেছেন, বিশেষ করে শ্রীলঙ্কায়। তাঁর প্রচেষ্টার মাধ‍্যমে অনাগারিক ধম্মপালের মত প্রাচ‍্যের ধম্ম প্রচারকের যাত্রা আন্তর্জাতিক মান‍্যতা প্রাপ্ত হয়েছে এবং বৌদ্ধ ধম্মের পুনরুত্থানকে নতুন দিশা প্রদান করেছে।

শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধম্ম এবং পুনরুত্থান
———————————

শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধম্মেপ পুনরুত্থান এবং শিক্ষা প্রসারে কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকট মুখ‍্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর মহৎ জীবনের প্রতি রইল অকৃত্রিম শ্রদ্ধার্ঘ্য।

১২৭ বছর পর পবিত্র বুদ্ধাস্থি নিজভূমিতে প্রত‍্যাবর্তনড. বরসম্বোধি ভিক্ষুবৃটিশ শাসনামলে ভারতের উত্তর প্রদেশের বর্তমান সিদ্...
02/08/2025

১২৭ বছর পর পবিত্র বুদ্ধাস্থি নিজভূমিতে প্রত‍্যাবর্তন

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

বৃটিশ শাসনামলে ভারতের উত্তর প্রদেশের বর্তমান সিদ্ধার্থ নগর জিলায় কপিলবাস্তুর পিপ্পরহবা হতে ১৮৯৮ সালে খননকার্য চলাকালীন ভগবান তথাগত বুদ্ধের পবিত্র অস্থিধাতু পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলি তখন ইংল‍্যান্ডে নিয়ে গিয়েছিল। ভারত সরকারের প্রচেষ্টায় অস্থিধাতু সমূহ ১২৭ বছর পরে ভারতে পুণরায় ফেরত আনা হয়েছে।

পবিত্র অস্থিধাতু এবং অন‍্যান‍্য পুরাতাত্বিক রত্নভাণ্ডার নিলামে বিক্রি করার জন‍্য বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছিল। তা জেনে ভারত সরকার আইনি লড়াই করে জয় হাসিল করে নিলাম বন্ধ করে পুণরায় স্বদেশ ভূমিতে পবিত্র অস্থিধাতু নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।

ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাননীয় গজেন্দ্র শেখাওয়াত কর্তৃক সরকারের প্রতিনিধিরূপে ভগবান তথাগত বুদ্ধের পবিত্র অস্থিধাতু হস্তগত করা হয়েছে।

ভারতের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ‍্য বুদ্ধের পবিত্র পূতাস্থি হল সর্বসাধারণের অপার শ্রদ্ধা এবং অটল বিশ্বাসের প্রতীক।

১৮৯৮ সাল ছিল বুদ্ধ পূতাস্থি প্রাপ্তির এক ঐতিহাসিক ক্ষণ। যখন বৃটিশ কর্মকর্তা প্রকৌশলী উইলিয়ম সি. পেপ্পে (William Claxton Peppe) কর্তৃক পিপ্পরহবায় এক প্রাচীন স্তূপের খননকার্য করা হয়েছিল। খননকালে মাটির নীচে বিশাল পাথরের একটি পাত্র পাওয়া গিয়েছিল। সে পাত্রটি ভগবান তথাগত বুদ্ধের পবিত্র অস্থিধাতু, ক্রিস্টাল এবং মূল‍্যবান রত্নরাজির আভূষণে ভর্তি ছিল। তন্মধ‍্যে অধিকতর ছিল মহামূল‍্যবান রত্নরাজি- যেমন ১৮০০ এর অধিক মনি, মুক্তা, মোতি,টোপাজ, নীলম, স্বর্ণালঙ্কারের আভূষণ। সেগুলি কলকাতা যাদুঘরে রাখা হয়েছিল। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, যে স্তূপের নীচে এ মহামূল‍্যবান অস্থিধাতু ও রত্নরাজি পাওয়া গিয়েছিল তা শাক‍্যবংশের লোকেরা তথাগত বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পরে তাঁর অস্থিধাতু সংরক্ষণ করতে নির্মাণ করা হয়েছিল। ধাতু মঞ্জুষার গায়ে লিখা ছিল এগুলি রাজকুমার সুকিতি’র (সিদ্ধার্থ) অস্থি অবশেষ।

অস্থিধাতু কিভাবে বৃটেনে পৌঁছল?
——————————————-

বৃটিশ সরকার সে সময়ের ইণ্ডিয়ান ট্রেজার ট্রোব এক্ট (Indian Treasure Trove Act-1878) অনুসারে খননকার্যে প্রাপ্ত অধিকাংশ অমূল‍্য প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন ইন্ডিয়ান যাদুঘর কোলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু খননকার্য পরিচালক উইলিয়ম পেপ্পেকে কিছু অস্থিধাতু, রত্ন এবং পাত্র রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা পরে তাঁর পরিবারের নিকট সংরক্ষিত ছিল। কিছুদিন পূর্বে পেপ্পের পরিবারের বংশধরেরা বুদ্ধের পবিত্র অস্থি এবং প্রত্ন রত্নরাজি সমূহ হংকংয়ের সোথেবী (Sotheby) নামের সংস্থার মাধ‍্যমে নিলামে বিক্রি করার বিজ্ঞাপন জারী করেছিল।

ভারত সরকার নিলামের সংবাদ জ্ঞাত হওয়ার পর ৭ই মে ২০২৫ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ‍্যমে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিল। ভারত সরকারের দাবী ছিল যে, এ অস্থিধাতু এবং প্রত্নরত্নরাজি ভারত এবং বৈশ্বিক বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অমূল‍্য ধাম্মিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ‍্যমণ্ডিত দুর্লভ সম্পদ। এগুলির নিলাম হল ভারতীয় আইন এবং জাতিসংঘ চুক্তি ১৯৭০ এর সরাসরি লঙ্ঘন। এগুলি বাণিজ‍্য করা অবৈধ এবং অনৈতিক। এ সম্বন্ধে ভারতীয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষেও কড়া সমালোচনা করে বিবৃতি প্রদান করা হয়েছিল। এরপর নিলামকারী সংস্থাও নিলাম স্থগিত করেছিল এবং বলেছিল যে, আমরা এগুলির সংরক্ষণ করতে চেষ্টা করছি।

বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ‍্যমে নিলাম বন্ধ করা হয়েছিল এবং আইনি প্রক্রিয়ায় ভারত জয় লাভ করেছে। অবশেষে নিলামী সংস্থা নত হয়েছিল এবং পিপ্পরহবায় প্রাপ্ত রত্ন সমূহ ভারতকে ফেরত দানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নিলামে প্রত্নরত্নরাজি ১০০ কোটির রূপীর অধিক মূল‍্য ধার্য করা হয়েছিল। অতীব ধাম্মিক মর্যাদা সহকারে এখন এ অস্থিধাতু এবং প্রত্নরত্ন সমূহ নতুন দিল্লীর রাষ্ট্রীয় যাদুঘরে পূর্ব সংরক্ষিত অস্থি সমূহের সাথে এবং কপিলবাস্তুর পিপ্পরহবা বুদ্ধ বিহারে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে।

গৌরবের অন‍্য এক ক্ষণ
——————————-

বৌদ্ধ জগতে চলমান পবিত্র বর্ষাবাস লগ্নে ভারতের অন‍্য আরেকটি স্থানে তথাগত বুদ্ধের পূতাস্থি সর্বোচ্চ মর্যাদা সহকারে স্বস্থানে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

শরীর এবং মন উভয়ই ধম্ম তরঙ্গ দ্বারা তরঙ্গিত করা জগতের শাস্তা তথাগত বুদ্ধের পবিত্র অস্থিধাতু বর্ষাবাস কালের পবিত্র সময়ে স্ব স্থানে প্রত‍্যাবর্তন করার গৌরব অর্জন করেছে।

এ মহান স্থান হল বৈশালী, যেখানে ভগবান তথাগত জগৎ স্তব্দকারী তাঁর মহাপরিনির্বাণের লগ্ন ঘোষণা করেছিলেন, বৈশালী হল সে স্থান যেখান হতে মহান ভিক্ষুণী সংঘের উদয় হয়েছিল, এ সেই বৈশালী যেখানে পৃথিবীর প্রথম গণততন্ত্র প্রারম্ভ হয়েছিল, এ সেই বৈশালী যেখানে দ্বিতীয় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং শক্তিশালী গণরাজ‍্য লিচ্ছবি শাসকদের শাসন ছিল এ বৈশালীতে।

এ বৈশালীতেই সম্প্রতি বিহার সরকার দ্বারা নির্মিত হয়েছে ভব‍্য বিশাল ধাতুচৈত্য, যা এখন বিহার সরকারের মাননীয় মুখ‍্যমন্ত্রী শ্রী নিতিশ কুমারের করকমল দ্বারা উদ্ঘাটন করা হয়েছে। কেবল উদ্ঘাটন নয়, বরং ১৯৫৮ হতে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত খননকার্যে বৈশালী হতে প্রাপ্ত ভগবান তথাগতের পবিত্র অস্থিধাতু সমূহ নব নির্মিত এ চৈত‍্যের সংগ্রহালয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানেই ভগবান তথাগত বুদ্ধ ভিক্ষুণী সঙ্ঘ স্থাপনের মাধ‍্যমে তাঁর পূর্ব ঘোষিত চারি পরিষদের পূর্ণতা দান করেছিলেন।

Shout out to my newest followers! Excited to have you onboard! MD Robioul Islam, পেদা তিং তিং, Rofikul Islam, Jummobi Ch...
30/07/2025

Shout out to my newest followers! Excited to have you onboard! MD Robioul Islam, পেদা তিং তিং, Rofikul Islam, Jummobi Chakma

ভারতীয় সংস্কৃতিতে সিন্দুর ব‍্যবহারের উদ্ভবড. বরসম্বোধি ভিক্ষুসিন্দুরের ব্যবহার ভারতীয় সমাজেই কেবল দেখা যায়। ভারতীয় অলঙ্ক...
26/07/2025

ভারতীয় সংস্কৃতিতে সিন্দুর ব‍্যবহারের উদ্ভব

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

সিন্দুরের ব্যবহার ভারতীয় সমাজেই কেবল দেখা যায়। ভারতীয় অলঙ্কার প্রণালীর মধ্যে সিন্দুরও হল অলঙ্করণের একটি উপকরণ। ভারতীয় সমাজে স্ত্রীদের চাহিদায় সিন্দুর দ্বারা সজ্জিত করণের মাধ্যমে পতির প্রিয়তমা হওয়ার এবং সৌভাগ্যবতী হওয়ার জন‍্য সিন্দুরকে প্রতীক বলে মনে করা হয়।

সিন্দুরকে নাগ-সম্ভূত অর্থাৎ নাগ হতে উৎপন্ন, নাগজ, নাগরেণু, নাগচূর্ণ, নাগরঙ্গী ইত্যাদি শব্দে অভিহিত করা হয়।

সিন্দুরের ব্যবহারকে প্রাচীন প্রমাণ করার জন্য হরপ্পা সভ্যতার মূর্তি সমূহে সিন্দুর খোঁজ করা হয়। তবে এ পর্যন্ত সিন্দু ঘাটিতে যত বুদ্ধ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির মূর্তি এবং চিত্র পাওয়া গিয়েছে, কোথাও সেগুলির মধ্যে সিন্দুর দ্বারা অলঙ্কৃত মূর্তি বা চিত্র পাওয়া যায়নি। প্রাচীন হরপ্পা সভ‍্যতার ‘তণ্হঙ্কর’ বুদ্ধের যে মূর্তি পাওয়া গিয়েছে ইহাকে ব্রাহ্মণ‍্যবাদীরা শিবের মূর্তি বলে প্রচার করতে প্রয়াস করেছে এবং মূর্তির কপালে বুদ্ধগণের বত্রিশ মহাপুরুষ লক্ষণের‍ অন‍্যতম উষ্ণীষের যে চিহ্ন রয়েছে, ইহাকে তারা সিন্দুরের তিলক বলে প্রচার করেছে। বাস্তবে সেখানে শিবের মূর্তিও ছিলনা এবং কপালে সিন্দুরের চিহ্নও ছিলনা।

সিন্দুর কখনও বৌদ্ধ সভ্যতার অংশ ছিলনা এবং এখনও নাই। যদি সিন্দুর বৌদ্ধ সভ্যতা ও সংস্কৃতির অংশ হতো তাহলে যে সমস্ত দেশে বৌদ্ধ ধম্ম গিয়েছে কিংবা প্রচারিত হয়েছে, সে সমস্ত দেশে বৌদ্ধ সংস্কৃতির অংশরূপে সিন্দুরও প্রবেশ করতো। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া অন্যান্য বৌদ্ধ দেশে বৌদ্ধদের মধ‍্যে সিন্দুরের ব্যবহার দেখা যায়না। বিদেশী বৌদ্ধগণ কেবল নয়, এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী চাকমা, মারমা, শ্যাম, খামতি এবং হিমালয় এলাকায় বসবাসকারী মহাযানী বৌদ্ধরাও সিন্দুর ব্যবহার করেনা। হিন্দু সংস্কৃতির সাথে মিলিত হয়ে একমাত্র বড়ুয়া বৌদ্ধ রমণীদেরকেই সিন্দুর ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে বর্তমানে শিক্ষিত, ইতিহাস সচেতন এবং আত্ম সম্মানবোধ সম্পন্ন অনেক বৌদ্ধ নারীরা সিন্দুর ব‍্যবহার থেকে সরে আসছেন। যা অতীব সাধুবাদ যোগ‍্য।

ভারতীয় পরম্পরায় এরকম এক জনশ্রুতিও পাওয়া যায় যে, মুগল, তুর্কী প্রভৃতি মুসলিম আক্রমণকারীগণ যখন ভারতে এসেছিলেন, তখন তাঁরা নিজেদের সাথে নারী নিয়ে আসেননি। মুগল, তুর্কীরা ছিলেন যুদ্ধ বিজেতা। এরকম অবস্থায় তাঁরা ভারতীয় সুন্দরী যুবতী নারীদেরকে নিজেদের যৌন চাহিদার শিকার বানিয়েছিলেন। তৎকালীন উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ভারতীয় সমাজে কন্যাদেরকে রক্ষার্থে নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হত এবং বিয়ের প্রতীক স্বরূপ মাথার সিঁথিতে এবং কপালে সিন্দুর লাগানো হতো। মুসলিম অত্যাচারী ও নারীলিপ্সু শাসকদের হাত হতে বাঁচার জন্য কম বয়সে শিশু কন‍্যদের বিয়ে দিয়ে সিন্দুর লাগিয়ে তাদেরকে বিবাহিত বলে চিহ্নিত করা হতো।

অন্য আরেকটি মতানুসারে সিন্দুর হল বিবাহিত নারীদের পতির অধীনস্থ এবং সেবাদাসী হওয়ার প্রতীক। অতীতে ভারতীয় রাজাদের অনেকেই ছিলেন নারীলোভী। তাঁরা নিজেদের পছন্দমত সুন্দরী নারীদের হাতকড়া লাগিয়ে জোরপূর্বক এনে নিজের রক্তের চিহ্ন নারীর ললাটে লাগিয়ে দিয়ে স্বীয় অধীনস্থ করে নিতেন। সুতরাং সিন্দুর হল রক্ত এবং শাঁখা হল হাতকড়ার চিহ্ন। এভাবে গোলামী বা দাসত্বের প্রতীকরূপে সিন্দুর-শাঁখা ব‍্যবহারের পরম্পরা এখনও ভারতীয় রমণীদের মধ‍্যে চালমান রয়েছে। সিন্দুর কদাপি নারীদের সম্মান, স্বতন্ত্রতা এবং আত্ম-মর্যাদার প্রতীক নয়।

বর্তমান ভারতে বোধিসত্ব বাবা সাহেব ড. ভীমরাও আম্বেদকরের মতাদর্শের অনুসারী নব বৌদ্ধরা বুদ্ধের সত‍্যিকার শিক্ষা সংস্কৃতির অনুশীলনে খুবই উৎসাহী এবং বলা যায় তাঁরা এদিক দিয়ে অনেক বঙ্গীয় বৌদ্ধদের থেকে এগিয়ে রয়েছেন। বাবা সাহেব ড. আম্বেদকর তাঁর অনুসারীদেরকে বৌদ্ধ ধম্মে দীক্ষা দেওয়ার সময় কেনো রকম অবৌদ্ধ সংস্কৃতি বা পরম্পরা অনুসরণ না করতে প্রতিজ্ঞাপত্র পাঠ করিয়ে শপথ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। সুতরাং তাঁরা শাঁখা-সিন্দুর ব্যবহার যে নারীর গোলামীর প্রতীক এবং অবৌদ্ধ সংস্কৃতি তা ভালভাবে জেনে ললাটে এবং সিঁথিতে সিন্দুর লাগানো থেকে বিরত থাকেন। পারম্পরিক বৌদ্ধ দাবী করা বঙ্গীয় বড়ুয়া ললনাগণ সিন্দুর লাগালে তাঁরা তার কড়া নিন্দাও করে থাকেন। এতে শাঁখা-সিন্দুর যে সরাসরি হিন্দু সংস্কৃতিরই অংশ তা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়। যাঁরা সিন্দুরকে ধম্মের সাথে যুক্ত করে মঙ্গল এবং সৌভাগ্যের প্রতীক বলে দেখাতে চান, বাস্তবে তার কোনো ভিত্তি নাই। সিন্দুর যদি বৌদ্ধ সংস্কৃতির অংশ হতো তাহলে পৃথিবীর সকল বৌদ্ধদের মধ্যে ইহার ব্যাপক প্রচলন থাকতো।

‘সংস্কৃতি সঙ্গম’ পুস্তকে আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন লিখেছেন যে, সিন্দুরের কোনো বৈদিক নাম যেমন নাই, তেমনি ইহার মন্ত্রও নাই। তিনি সিন্দুরকে নাগবস্তু বলে অভিহিত করেছেন।

বর্তমানে আমাদের বঙ্গীয় সমাজে অবশ্য অনেকেই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সিন্দুর ব্যবহার না করে কেবল বঙ্গীয় সংস্কৃতির অংশরূপে সিন্দুরের ব্যবহার করে থাকেন। নারীদের অনেককে এখন নিজেদের অলঙ্করণের উপাদানরূপে সিন্দুরের পরিবর্তে রক্ত বর্ণের টিপ ব্যবহার করতেও দেখা যায়।

সিন্দুরকে হিন্দু সমাজে বিবাহিত নারীর প্রতীক মনে করা হয়। অর্থাৎ বিবাহিত জীবনে স্ত্রী হল স্বামীরূপ প্রভূর সেবিকা বা চরণদাসী ইহাই বুঝানো হয়। সিন্দুরকে এখন ধর্মের সাথে যুক্ত করা হয় ভারতীয় হিন্দু সমাজে।

সিন্দুর ব্যবহার প্রথমে যেভাবে কোনো জনজাতি বা বর্গের নারীরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে অলঙ্করণের বস্তু হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, যেখানে স্বাভিমানী ও আত্ম সচেতন সম্পন্না বৌদ্ধ নারীরা সেবা দাসীর প্রতীক সিন্দুর ব‍্যবহারকে ঘৃণায় প্রত‍্যাখ‍্যান করতে উৎসাহিত হচ্ছেন, সেখানে আমাদের কোনো কোনো ভিক্ষুরা ব্রাহ্মণ‍্য দাসত্বের প্রতীক স্বরূপ কপালে সিন্দুর লাগিয়ে তৃপ্তির হাসি প্রদর্শন এবং কেহ কেহ ব্রাহ্মণের পায়ে নতজানু হতে পেরে গৌরবানুভব করছেন দেখে বিস্ময়াভিভূত হচ্ছি। বুদ্ধের ধম্মকে আমরা এভাবে আর কত নীচে নামাব? লোক লজ্জা এবং লোক ভয় (হিরি-ওতপ্পা) লেশ মাত্রও যদি থাকে তাদের পক্ষে এরকম আচরণ করা অসম্ভব।

অনেক সময় হিন্দুদের অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ কালে দালাই লামাকেও ব্রাহ্মণেরা সিন্দুর লাগিয়ে দেয়। এখানে আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে, তিনি হলেন রাজনৈতিক নেতা, মহাযানের বজ্রযান শাখার অনুসারী এবং ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়ী শরণার্থী। সুতরাং তাঁকে রাজনীতির স্বার্থের পক্ষে আচরণ করতে গিয়ে বুদ্ধগয়ার এক সভায় বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতার বলে সম্বোধন করতেও শুনেছি। যা মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হয়েছিল। তাহলে আমাদের ভিক্ষুরা কি এখন থেরাবাদী চীবর পড়ে বজ্রযানী পন্থার রাজনীতি শুরু করছে?

Address

Rangamati
4500

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dairy PU'S posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share