AyoNs Creation

AyoNs Creation জীবনটাকে কেদে ভাসিয়ে দেবার চেয়ে হেসে উড়িয়ে দেওয়া ভালো...!!

অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিশাল আকৃতির এসব জাহাজ বিচিং করতে হয়। বিদেশ থেকে এসব জাহাজ বিদেশি ক্যাপ্টেনরা চালিয়ে আনলেও জাহা...
14/07/2025

অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিশাল আকৃতির এসব জাহাজ বিচিং করতে হয়। বিদেশ থেকে এসব জাহাজ বিদেশি ক্যাপ্টেনরা চালিয়ে আনলেও জাহাজ বিচিং আমাদের দেশের অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেনরাই করে থাকেন।

জাহাজ গুলো বিদেশ থেকে বিভিন্ন মালামাল বহন করে নিয়ে আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। এরপর মালিক জাহাজটিকে স্ক্র্যাপ ঘোষণা করে। স্ক্র্যাপ জাহাজটি কিনে নেয় বাংলাদেশের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিকগন।
সফলভাবে স্ক্র্যাপ জাহাজ বিচিং করতে হয় পূর্ণমাত্রার জোয়ারের সময়। জাহাজ বিচিং এর স্থানে হলুদ ও সাদা ছয়টি পতাকা উড়িয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়।

প্রায় ছয় নটিক্যাল মাইল (এক নটিক্যাল মাইল সমান ১.৮৫ কিলোমিটার) দূর থেকে জাহাজটি চালিয়ে এনে বিচিং করা হয়। বিচিং এর সময় জাহাজটি তার জীবনের শেষ ফুল স্পীড তুলে তীরে ভিড়ে।

*** লেখাটা একটু বড় হলেও মন দিয়ে পড়বেন প্লীজ***আমি তখন চাকরি করি, খুব উচ্চ বেতন না হলেও বেশ ভাল বেতন পাই মাস শেষে। খরু...
03/04/2025

*** লেখাটা একটু বড় হলেও মন দিয়ে পড়বেন প্লীজ***

আমি তখন চাকরি করি, খুব উচ্চ বেতন না হলেও বেশ ভাল বেতন পাই মাস শেষে। খরুচে হাত, তার উপর পরিবার, সমাজ আর মানুষের উপর কিছু দায়িত্ব পালনের ভার।

বেশিরভাগ সময়েই মাস শেষে আবার কিছু টাকা ধার করে চলতে হত। একবার কোন এক ঘটনা দুর্ঘটনায় মাসের দশ বারো দিন যেতেই হাত খালি। খালি মানে একেবারেই খালি, ৫০০ টাকা শেষ সম্বল। আমি তখন একাই থাকি।

এই অবস্থায় আমি ঠিক করলাম, এডজাস্ট করতে হবে। ধার করা চলবেনা এবার। দুপুরের লাঞ্চটা অফিসেই করতাম। মাস শেষে টাকা দিতে হত, তাই সেটা নিয়ে চিন্তা ছিলনা। আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেল... ১৭ দিনের সকাল আর রাতের খাবারের হিসেবটা এই পাঁচশ টাকায় করা!

সকালে কখনো দুটো বিস্কিট আর পানি, কখনো কলা আর বন দিয়ে চলল নাস্তা। আর রাতে ডিম ভাত।
এই চলল আমার রুটিন।

রাতের বেলা এলাকার হোটেলে গিয়ে প্রথম যখন এক প্লেট ভাত আর একটা ডিম দিয়ে খেতে শুরু করি, তখন হোটেলের বয়টা তাকিয়ে থাকত। আমি আস্তে করে ভাতের মধ্যে এক গ্লাস পানি ঢেলে দিতাম, সাথে দুটো কাঁচা মরিচ ডলে টুকটুক করে ডিম দিয়ে প্রোগ্রাসে ভাত খেতাম আর আলহামদুলিল্লাহ পড়তাম।

পরে দেখা গেল, আমি সেই ছোট্ট ভাতের হোটেলটাতে ঢুকলে কিছু বলার আগেই ছেলেটা আমার সামনে এক প্লেট ভাত, একটা ডিম আর দুটো কাঁচা মরিচ নিয়ে হাজির হয়ে যেত। আমি সানন্দে ৩০ টাকার ডিনার শেষ করে চলে আসতাম আলহামদুলিল্লাহ পড়তে পড়তে।

৫০০ টাকায় ১৭ দিনের দুইবেলার খাবার খাওয়া মুশকিল হয়ে গেল। শেষের ১০ দিন এক দিন পর একদিন রাতে উপোষ দিলাম। কি কঠিন একটা অবস্থা আমার! অথচ কাউকেই কিছু জানালাম না।

ভাগ্যিস মাসের শুরুতেই টাংকি ভর্তি করে বাইকে তেল নিয়ে রেখেছিলাম! নইলে অফিসে যাতায়াতের খরচটাও এই পাঁচশ টাকার মধ্যে চলে আসতো!

শেষের দিকে এসে একরাতে ওই ডিম দিয়ে ভাত খাওয়ার সময়ে আমার কোন কারণ ছাড়াই বুক ভেঙে কান্না নামল, আমার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল মিশে গেল ভাতের পানিভর্তি থালায়। কেন কান্না এল আমি বুঝলাম না, শুধু ভাবলাম আল্লাহ কোন দিকে আমার প্রতি আবার নারাজ হয়ে যান! এই ভয়ে আমি তখনো বলতে থাকি আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ...

জীবনে হুট করেই এমন কিছু কঠিন সময় চলে আসে, যখন চারপাশে অসহায়ত্ব ছাড়া আপনার আর কিছু থাকেনা। সে সময়টায় আমি শুধু বারবার উপরে তাকাই, খোদার করুণা ভিক্ষা করি আর ঐ আলহামদুলিল্লাহ পড়ি...

এই যে রমজান! সেহরিতে আমি প্রায় দিন ই ভাতে গ্লাসভর্তি পানি ঢেলে তাতে দুটো আলুর টুকরা আর কাঁচা মরিচ ডলে সেহরি করি। আমার বউ বলতে থাকে মাছ নেন, মাংস নেন...
আমি সেদিকে ফিরেও তাকাইনা প্রায় সময় ই..
আমার কাছে এ খাবারটা অমৃত লাগে। আর খাবার শেষ করে প্রচন্ড কৃতজ্ঞতায় বলি আলহামদুলিল্লাহ।

এ গল্প বলার কারণ?
কারণ, চারপাশে আমি কোন মানুষের মধ্যে শুকরিয়া দেখিনা, কি ধনী কি গরীব কারোর মধ্যেই না। সবার মধ্যে কেবল নাই নাই, খাই খাই, আহা উহু আর হাপিত্যেশ! কেউ কারো জায়গায় সুখী না, সন্তুষ্ট না। এদের প্রতি আমার মায়া হয় খুব।

কেবলি মনে হয়.. ভরপেটে কিংবা উপোষে, সুস্থতায় কিংবা অসুস্থতায়, সামর্থ্যে কিংবা অসামর্থ্যে, সুখে কিংবা দু:খে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে যে কোন অবস্থায় এ মানুষগুলো যদি তার সে অবস্থানের জন্য একটু শুকরিয়া আদায় করতে পারত!
তবে সে আরো বেশী ভাল থাকত আমি নিশ্চিত।

একদিন রাস্তার পাশে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম। কোমর থেকে নিচের দিকে কিছু নেই এমন একটা মানুষ হাতে ভর দিয়ে ছেঁচাতে ছেঁচাতে পায়ের কাছে এসে বললেন... ভাই একটা কলা কিনে দিবেন?
আমি তাকে কলা আর পাউরুটি কিনে দিলাম। তিনি খুব ধীরে সুস্থে খেলেন..তারপর খুব জোরেশোরে বললেন.... আলহামদুলিল্লাহ!

সৃষ্টিকর্তা তার কোমর কেটে নিয়েছেন, তাতে তার প্রতি তার কোন ক্ষোভ নেই, রাগ নেই, অভিযোগ নেই। সেসব ছাপিয়ে একটু রিযিকের ব্যাবস্থা করেছেন এ জন্য তিনি কি প্রচন্ড কৃতজ্ঞতায় তার প্রতি শুকরিয়া জানালেন! দেখে চোখে পানি চলে এলো। আমিও মনে মনে বলতে থাকলাম.. আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ...

ফিলিস্তিনের এটুকু এটুকু বাচ্চা ঘাস খাচ্ছে কিছু খেতে না পেয়ে, কেউ বোমায় হাত পা হারিয়ে আহত হয়ে চিকিৎসাহীন হয়ে পড়ে আছে রাস্তায়, কেউ আবার আশ্রয় হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রোদে পুড়তে পুড়তে কাটিয়ে দিচ্ছে একেকটা দিন...
আর আমরা?

নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে, তিন বেলা নানান পদের খাবার খেয়ে, শত রঙ বেরঙ্গের জামা কাপড় পরে, নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করেও অনেকে ভাল নেই...
আমরা বরাবর বলে যাচ্ছি.... ভাল্লাগেনা কিছু, যদি ওই থাকত? এই হত! ওই পেতাম!

কত অকৃতজ্ঞ আমরা!

আসুন সৃষ্টিকর্তার প্রতি তার সমস্ত নেয়ামতের জন্য শুকরিয়া আদায় করতে শিখি। নিজের অবস্থা আর অবস্থানকে অনেকের চেয়এ হাজার গুণে শ্রেয়তর মেনে নিয়ে পরম করুণাময়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলি... আলহামদুলিল্লাহ

একজন তরুণ অধ্যাপক ট্রেনে বসে আছেন। তাঁর পাশে বসেছেন এক বৃদ্ধ কৃষক। বড্ড একঘেয়ে লাগছে অধ্যাপকের, তাই তিনি সময় কাটানোর জ...
02/04/2025

একজন তরুণ অধ্যাপক ট্রেনে বসে আছেন। তাঁর পাশে বসেছেন এক বৃদ্ধ কৃষক। বড্ড একঘেয়ে লাগছে অধ্যাপকের, তাই তিনি সময় কাটানোর জন্য একখানা খেলা প্রস্তাব করলেন।

“চলুন, একটা খেলা খেলি,” অধ্যাপক বললেন। “আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করব। যদি আপনি উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে আমাকে ৫০ টাকা দেবেন। এরপর আপনি আমাকে একটা প্রশ্ন করবেন। যদি আমি উত্তর দিতে না পারি, তাহলে আমি আপনাকে ৫০০ টাকা দেব। কেমন হবে?”

বৃদ্ধ কৃষক মৃদু হেসে সম্মতি জানালেন।

অধ্যাপক প্রথম প্রশ্ন করলেন, “পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কত?”

কৃষক চুপচাপ পকেট থেকে ৫০ টাকা বের করে অধ্যাপককে দিয়ে দিলেন।

এবার কৃষকের পালা। তিনি বললেন, “কোন প্রাণী পাহাড়ে তিন পায়ে ওঠে, আর নামে চার পায়ে?”

অধ্যাপক হতবাক! মাথার ভেতর হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন, নোটবুক খুলে দেখলেন, এমনকি মোবাইলের নোটেও খুঁজলেন—কিন্তু কোনো উত্তর পেলেন না। অবশেষে, হতাশ হয়ে ৫০০ টাকা বের করে কৃষককে দিয়ে দিলেন।

কৃষক টাকা নিয়ে হাসিমুখে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লেন।

কিন্তু অধ্যাপকের মনে শান্তি নেই! কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তিনি কৃষককে ধাক্কা দিয়ে জাগালেন।

“এই যে, একটু বলুন তো, আসলে সেই প্রাণীটা কী?”

কৃষক কিছু না বলে পকেট থেকে ৫০ টাকা বের করলেন, অধ্যাপকের হাতে দিলেন, তারপর আবার আরাম করে ঘুমিয়ে পড়লেন!

নীতিবাক্য:
জ্ঞান থাকলেই বুদ্ধিমান হওয়া যায় না, কখনো কখনো সাধারণ বুদ্ধিই বড় সম্পদ!

জানুন আর একজন মহাকাশচারীর অজানা কাহিনীপৃথিবীকে ৫ হাজার বার প্রদক্ষিণ করা এই মানুষ টার সাথে ৩১১ দিন ধরে কেউ যোগাযোগ করেনি...
27/03/2025

জানুন আর একজন মহাকাশচারীর অজানা কাহিনী

পৃথিবীকে ৫ হাজার বার প্রদক্ষিণ করা এই মানুষ টার সাথে ৩১১ দিন ধরে কেউ যোগাযোগ করেনি। কারন এই মানুষটা যে দেশের নাগরিক ছিল সেই দেশ টাই পৃথিবীর মানচিত্র থেকে উধাও হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়েই ৩১১ দিন ধরে ৫ হাজার বার পৃথিবীকে চক্কর কাটতে হয়েছিল। হতভাগা এই মহাকাশ চারির নাম সর্গেই কনস্ট্যানটিনোভিচ ক্রিকালেভ । প্রথম জীবনে যিনি ছিলেন একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। পরবর্তীকালে তিনি রকেট সায়েন্টিস্ট হিসাবে যোগদান করেন,তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রে । ধিরে ধিরে তিনি প্রশিক্ষন নিয়ে হয়ে উঠেন একজন মহাকাশচারি।মোটামুটি ভাবে আমরা সবাই জানি মহাকাশে প্রতিটি দেশেরই কিছু স্যাটেলাইট এবং কিছু দেশের স্পেসেস্টেশন থাকে, সেখানে কিছু যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিলে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পৃথিবী থেকে ইঞ্জিনিয়ার দের মহাশূন্যে পাঠানো হয়।
সেই কারণে ১৯৯১ সালের মে মাসে ক্রিকালেভ কে পৃথিবী থেকে মহাশূন্যে পাঠানো হয় MIR স্পেস স্টেশনটির রুটিন চেক আপের জন্য। ক্রিকালেভ মহাশূন্যে পারি দেয়ার সময় থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন জুরে শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতর। ফলে ক্রিকালেভ যে মাত্র পাঁচ মাসের জন্য মহাশূন্যে থাকতে গেছিল।কিন্তু দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ঝামেলা এবং বৈদেশিক চাপে ভেঙ্গে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন, তৈরি হয় রাশিয়ান ফেডারেশন নামে এক নতুন দেশ, যার ফলে আগের সমস্ত কাজকর্ম স্থগিত হয়ে যায়।ক্রিকালেভের কাছে শুধু একটাই রেডিও বার্তা পৌছায়, এখন আর কেউ তোমার মিশনের দায়িত্বে নেই। এবার যতদিন না নতুন করে কেউ তোমার সাথে যোগাযোগ করে তুমি অপেক্ষা করো। এর পর পৃথিবীর সাধে সম্পুর্ন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।এবার ভাবুন পৃথিবী থেকে ৪০০-৪৫০০ কিলোমিটার উপরে আপনি শুধু একা, কথা বলার কেউ নেই, আর কোনো দিন পৃথিবীতে ফিরতে পারবেন কিনা তারও নিশ্চয়তা নেই।

এদিকে খাবার ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে, অক্সিজেন লেবেলও কমে আসছে, পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এবার ভাবুন রোজ ৪০০ কিলোমিটার উপর থেকে আপনি দিন ও রাত্রি হতে দেখছেন, প্রত্যেক দিন প্রায় ১৬ বার গোটা পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছেন,অথচ পৃথিবীর থেকে কেউ আপনার সাথে যোগাযোগ টুকু করছে না।এমন নির্জন এবং ভয়ঙ্কর জেলখানায় ৩১১ দিন কাটিয়েছেন ক্রিকালেভ।

এবার আসি এর কারণ কি ছিল? পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার সময় ক্রিকালেভ ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের নাগরিক কিন্তু মহাশূন্যে থাকা কালীন সময়ে ক্রিকালেভর দেশটাই উধাও হয়ে গেছিল । পৃথিবী থেকে একটা গোটা দেশ উধাও হয়ে যায়, তাই টেকনিক্যালি ক্রিকালেভর কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব ছিল না, তাই তাকে ফিরিয়ে আনতে কেউই উদ্যোগ নেয়নি।সে প্রতিদিন পৃথিবীতে রেডিও সিগন্যাল পাঠাতো যাতে অপর প্রান্ত থেকে কেউ সারা দেয়। এই ভাবেই কেটে যাক প্রায় দশটা মাস।

অবশেষে আচমকা পৃথিবী থেকে সারা আসে এবং ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে ৩১১ দিন মহাশূন্যে জেল কাটানোর পর পৃথিবীতে ফিরে আসেন। কিন্তু টানা প্রায় দশ মাস মহাশূন্যে থাকার ফলে ক্রিকালেভের চেহারা, ওজন, দৈহিক ক্ষমতা এবং মানসিক অবস্থা অনেকটাই পাল্টে যায়, প্রায় আট মাস সময় লেগেছে তাকে পুরোপুরি সুস্থ্য হতে।এর পরেও তিনি বহু বার মহাকাশে গেছেন। বর্তমানে তিনি রাশিয়ায় অবসর জীবন যাপন করছেন।




20/03/2025

ভাইজান জুতা বাহিরে রেখে আসেন ঘরটা ময়লা হয়ে গেছে। ছোটো চাচার কথা শুনে বাবা বসা থেকে উঠে ময়লা জুতা বাহিরে রেখে আসতে যায়, সাথে আমার জুতাজোড়াও নিয়ে যায়।

জুতা রেখে আসবার পরে বাবা হাত দিয়ে গায়ের পাঞ্জাবি মুছে তারপর সোফার উপরে বসে, এই বাসায় সবকিছু স্বচ্ছ কাঁচের মতো। শুধু আমার বাবা গায়ের পোশাকটাই ময়লা। যদিও অন্য সময় তেমন ময়লা মনে হয়নি, এখন এই বাসায় আসবার পরে বেশি ময়লা মনে হচ্ছে।

বাবা তার পাঞ্জাবি মুছে তারপর সোফায় বসেন, আমি তাকিয়ে দেখে বাবার পাঞ্জাবিতে একটা হলুদ দাগ লেগে আছে। মা পাঞ্জাবি ধুয়ে দিছেন ঠিকই তবে তবে দাগ তুলতে পারেনি।

বাবা গুটিয়ে বসেন আমিও বাবার মতো গুটিয়ে বসি। যেনো পায়ের ধূলো ফ্লোরে না লেগে যায়, এটাও খেয়াল করি বাবার দেখাদেখি।

বাবা হেসে হেসে কথাই বলছেন, ছোটো চাচা গম্ভীর হয়ে আছেন। এমন গম্ভীর হয়ে থাকে আমার স্কুলের অংকের শিক্ষক, স্যারকে কখনো হাসতে দেখিনি। ছোটো চাচাও কি হাসেন না? না ছোটো চাচা হাসেন, ছোটো চাচাকে তার ছেলেমেয়েদের সাথে হাসতে দেখেছি, চাচির সাথে হেসে হেসেই কথা বলেন। তবে বাবা আসায় এখন গম্ভীর মুখ করে বসে আছেন।

বাবা বলেন, শওকতের মায়ের অবস্থা বেশি ভালো না৷ তোর কাছে যদি টাকা থাকে হাজার বিশেক টাকা দে। আমি দুই মাস পরেই ফেরত দিয়ে দিবো।

ছোটো চাচা বলেন, ভাইজান এখন আমার কাছে টাকা নেই। আর দেখো প্রতিদিন আমার কাছে ধার নিতে আসবে আমি টাকা দিয়ে দিবো এমনটা ভেবে বসে থাকো কেন?

চাচার এই কথা শুনেও দেখলাম বাবার মুখে একই হাসি লেপ্টে আছে, বাবার কি মন খারাপ হয় না? নাকি মানুষ অভাবের দিনে সবকিছু সহ্য করে নিতে পারে। বাবার মুখে একইরকম মৃদু হাসি, এই হাসির নাম কি তবে অভাবের হাসি। যত অপমান করা হোক মুখে হাসি রেখে সবকিছু সহ্য করতে হবে৷

ছোটো চাচা ঘরের ভিতরে চলে যায়। তখনই ছোটো চাচার বড় ছেলে রোকন আসে। রোকন আমার বয়সী, এবার ক্লাস সিক্সে পড়ে। রোকন আর আমি এক বয়সী হলেও দুজনের জীবন আলাদা। রোকনের ঘর ভর্তি খেলনা, আর আমার ঘরে শুধু একটা ভাঙা হেলিকপ্টার আছে, যা তিন বছর আগে বাবা কিনে দিয়েছেন।

রোকন এসেই আমার পাশে বসে, আমার কাছে বসে জিজ্ঞেস করে, তুমি কখনো বরফের ভিতরে হাঁটছো? আমি বলি না। রোকন বলে, আমরা বরফের দেশে যাচ্ছি ঘুরতে।ঘরের ভিতর থেকে চাচা রোকনকে ডাক দিলে ভিতরে চলে যায়।

বাবা বের হয়ে আসে ছোটো চাচার বাসা থেকে। আমরা দুজনেই রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছি। ছোটো চাচার ঘরের ভিতরে ঠান্ডা বাতাস ছিলো, এখানে ভীষণ গরম, বাহিরে অনেক রোদ।

বাবার সাথে আমি হাঁটছি। বাবার মুখে এখন হাসি নেই গম্ভীর হয়েই হাঁটছেন। বাবা মুখে হাসি রাখে যখনই কারো কাছে টাকা ধার করতে যায়। এই যেমন দোকানে বাকিতে বাজার নিতে হলে তখন মুখে একটা হাসি রাখে, ছোটো চাচার কাছে টাকা ধার চাইতে গেলে মুখে হাসি রাখে। বাবা বিশ্বাস করেন তার হাসিতে অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, তবে কিছুই সমাধান হয় না। টাকা দিতে না পারায় দোকানদার বাজার রেখে দেয়, ছোটো চাচা গম্ভীর মুখে না বলে দেয়।

বাবার সাথে হাঁটতে হাঁটতে বলি, বাবা বরফের দেশ কোথায়? বাবা কোনো উত্তর দেয় না। আমি আবার জিজ্ঞেস করি, বাবা সেখানে কি বরফ দিয়ে ঘর বানানো? বাবা এবারও কোনো উত্তর দেয় না।

আমি মনে মনে বরফের দেশের একটা ছবি আঁকতে থাকি। বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, শরবত খাবি? আমি বলি খাবো।

রাস্তার পাশেই একটা লোক লেবুর শরবত বিক্রি করছে। প্রতি গ্লাস দশ টাকা। বাবা দুই গ্লাস লেবুর শরবত নেয়। লোকটার কাছে ছোটো ছোটো খালি বোতল আছে, বাবা সেই বোতলে মায়ের জন্যেও এক গ্লাস শরবত নেয়।

শরবতের বোতল নিয়ে আমরা বাসার দিকে হাঁটতে থাকি।

মা অসুস্থ হবার পর থেকে রান্নাঘরে তেমন যেতে পারে না। চুলার পাশে বেশি সময় থাকলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়, কাশি কিছুতেই থামে না। এমনভাবে কাশি দেয় মনে হয় মায়ের বুকের ভিতর থেকে সব বের হয়ে আসবে।

মায়ের আবার কাশি উঠেছে, বাবা রান্নাঘরে ছুটে যায় তরকারি দেখতে। মা ইশারা দিয়ে বলেন জানালা খুলে দিতে, আমি জানালা খুলে দেই। জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসলে মায়ের কাশি কিছুটা কমে।

বাবা রান্নাঘর থেকে এসেই মায়ের হাতে লেবুর শরবত দিয়ে বলেন, এটা খেয়ে নাও। ঠান্ডা আছে, শরীর শীতল হয়ে যাবে। মা শরবত খায় না, আঁচলটা মুখের উপর রেখে বিছানায় শুয়ে থাকে।

মায়ের চিকিৎসার জন্যে পয়ত্রিশ হাজার টাকা দরকার এখন। পনেরো হাজার টাকা বাবা জোগাড় করতে পারলেও বাকি টাকা কিছুতেই জোগাড় করতে পারেনি।

বিকালবেলা বাবার বন্ধু শহীদুল কাকা মাকে দেখতে আসেন। বাবা কথায় কথায় আবার সেই লজ্জা মার্কা হাসি দেয়। শহীদুল কাকার কাছে কিছু টাকা ধার চায় মায়ের চিকিৎসার জন্যে, বাবার একটা কাপড়ের দোকান আছে। শহীদুল কাকার কাছে বলেন চাইলে দোকানটা বন্ধক হিসেবে টাকা দিতে পারে।

শহীদুল কাকা বলেন, কি বলছে তুমি এসব। তুমি আমারে অল্প করে দিয়ে দিবে তাতেই হবে। সন্ধ্যায় বাসায় এসো, বাসায়ই কিছু টাকা আছে আগামীকাল ব্যাংকে রাখবার কথা ছিলো। বাবার চোখ এবার ছলছল করে উঠে।

মায়ের চিকিৎসা শহীদুল কাকার দেওয়া টাকাতেই হয়। মা পুরোপুরি সুস্থ হতে দুই মাস চলে যায়।

আমাদের স্বাভাবিক জীবন চলতে থাকে। বাবা মাসে মাসে কিছু টাকা শহীদুল কাকাকে দিয়ে দেন।

আমি কেবল ক্লাস সেভেনে উঠেছি, স্কুলে টিফিন টাইমে সিঁড়ি থেকে নামতে যেয়ে পায়ে হোঁচট খাই। ডান পায়ের একটা নখ ভেঙে রক্ত বের হয়।

তখনই দেখি স্কুলে শহীদুল কাকা এসেছেন। শহীদুল কাকা আমার মাথায় হাত রাখে। তারপরই চলে যায় লাইব্রেরির দিকে। লাইব্রেরি থেকে বের আমারে বলে স্কুল ব্যাগ সাথে নিয়ে নিতে। আমি বলি, কাকা আমার স্কুল এখনো ছুটি হয়নি। কাকা বলেন, তোর স্যারের সাথে কথা বলেছি জরুরী কাজ আছে তাই যেতে হবে।

শহীদুল কাকার সাথে রিক্সায় উঠি আমি। কাকা পুরো রাস্তায় কোনো কথা বলেন না, চুপচাপ হয়ে আছে৷

বাড়ির সামনে রিক্সা থামতেই দেখি অনেক মানুষের ভীড়। ভীড় ঠেলে বাড়ির ভিতরে আসি। উঠানের পাশে বড় একটা আমগাছের পাশেই একটা খাট, সেই খাটের উপর বাবাকে রাখা। বাবা কোনো কথা বলছেন না। মা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

বাবার দোকানের বিপরীতের এক দোকানদার বাবার মৃ ত্যু র বর্ণনা দেন। ‘প্রথমে আমি দেখলাম বোতল থেকে পানি খাচ্ছে, হঠাৎই চেয়ারে বসতে যেয়ে নিচে পড়ে গেলো। আমরা ছুটে যেয়ে ধরলাম, বেশি সময় দিলো না। হাসাপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলে সব শেষ।’ কথাগুলো বলে তিনিও কাঁদতে শুরু করেন।

বাবাকে দেখতে আমাদের বেশকিছু আত্মীয় স্বজনরা এসেছেন, যার ভিতরে ছোটো চাচাও আছেন। তবে সন্ধ্যা হতেই যে যার মতো চলে যায়। রাতে মা আর আমিই বাসায় থাকি। মধ্যরাতে মায়ের শ্বাসকষ্ট উঠে, সেই শ্বাসকষ্ট কিছুতেই থামে না। মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

ভোরবেলা মা সুস্থ হলে আবার বাসায় নিয়ে আসি। অবশ্য এর ভিতরে শহীদুল কাকা খবর পেয়ে হাসাপাতালে এসেছে।

ঝামেলা হয় বাবার দোকান নিয়ে। দোকানের দেখাশোনা করবার মতো কেউ নেই। মা ঠিক করেন দোকান বিক্রি করে দিবে। শহীদুল কাকার সাথে দোকানের বিষয়ে আলাপ করে। শহীদুল কাকা বলেন, দোকানটা রেখে দিন ভাবি, একজন কর্মচারী ঠিক করে দিবো আমি।

শহীদুল কাকা একজন লোক রেখে দেয়। লোকটার নাম হাশেম। হাশেম চাচাই দোকানের দেখাশোনা করেন, এই লোকটার ভিতরে কোনো লোভ নেই। আমি মাঝেমধ্যে বিকালে যেয়ে দোকানে বসি।

দোকান থেকে যে কয়টাকা আসে সেই টাকায় আমাদের শহরে চলতে কষ্ট হয়ে যায়। আমরা বাসা ছেড়ে দেই। শহীদুল কাকা তার বাড়ির চিলেকোঠা আমার আর মায়ের থাকবার জন্যে জায়গা করে দেয়। আমরা সেখানেই থাকি।

দোকানের লোককে বাড়তি টাকা দিতে হয় তাই মা নিজেই দোকানে বসা শুরু করেন। সবকিছু বুঝে নিতে একটু কষ্ট হয় তবে মা মানিয়ে নেন, আগে পুরুষের পোশাক ছিলো। মা দোকানে বসবার পরে ধীরে ধীরে মহিলাদের কাপড় তুলেন, শাড়ি, সেলোয়ার-কামিজ এসব।

ইন্টারমিডিয়েট পাশ করবার পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। মাকে ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে যেতে হয়।

যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি তখনই মা আবার অসুস্থ হয়ে যায়। মায়ের দুটে শাড়ির দোকান ছিলো মার্কেটে। মা অসুস্থ হবার পর থেকে আর বেশি সময় মার্কেটে থাকতে পারে না। শহীদুল কাকা সবকিছু দেখাশোনা করেন।

শহীদুল কাকার বড় মেয়ে নওমি মাকে প্রতিবেলায় ভাত দিয়ে যায়। আমার ইচ্ছে করে পড়াশোনা ছেড়ে মায়ের কাছে থাকতে তবে সে সুযোগ হয়ে উঠে না। মা নিজেই বলেন তিনি সুস্থ আছেন, আমি যেনো পড়াশোনা না ছাড়ি।

কয়েকদিন মায়ের কাছে থেকে আবার ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে আসতে হয়। তবে মন থাকে মায়ের কাছে।

শহীদুল কাকার বড় মেয়ে নওমি আমার থেকে দুবছরের ছোটো, মেয়েটা মাকে বেশ যত্ন করে। মাকে নওমি খালামনি ডাকে। কখনো মা খাবার খেতে না চাইলে আমার কাছে কল দিয়ে মায়ের নামে বিচার দেয়। আমি হাসি। নওমি আর আমাদের সাথে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই তবু মাকে মেয়েটা খুব যত্নে রাখে। সারাদিন খালামনি খালামনি করে ডাকবে, দিনে কমপক্ষে বিশ বার আমাদের ঘরে আসবে। মায়ের সাথে ওর অনেক কথা, যদিও সেসব কিছুই দরকারি কথা না।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করবার পরেই আমি আবার ঢাকা চলে আসি। চাকরির জন্যে পড়ছি, সাথে শহীদুল কাকার থেকে দোকানের খোঁজ খবর নেই। তবে মা চাইছেন আমি যেনো চাকরির দিকেই মনযোগ দেই। চাকরি না হলে তখন দোকান দেখবো। আপাতত চাকরি নিয়েই ভাবতেই বলছেন মা।

এক বছর পরের এক বিকাল। মা ছাদে বসে আছেন, নওমি মায়ের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। আমি ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছি, মায়ের কাছাকাছি যাওয়ার সাহস হচ্ছে না।

নওমি আমাকে দেখে ফেলে। মায়ের কাছে বলে, খালামনি তোমার ছেলে এসেছে। মা বলেন, কিছু বলবি?

আমার কিছু বলবার সাহস হয় না। গলা ভারী হয়ে আসছে। কথা বললেই মনে হয় কেঁদে ফেলবো। নওমি আবার ঘুরে তাকিয়ে দেখে আমার চোখে পানি টলমল করছে। নওমি বলে, খালামনি তুমি উঠো। মা উঠে দাঁড়িয়ে আমার চোখে পানি দেখে কাছে ছুটে আসে। মা বলেন, কি হয়েছে?

আমি চোখে মুছে নিয়ে বলি, মা আমার চাকরি হয়েছে। তোমার ছেলে এখন বিসিএস ক্যাডার। মা নিজেও কাঁদছেন আমার কথা শুনে। কিছুতেই সেই কান্না থামছে না।

আমার প্রথম পোস্টিং হয় খুলনাতে। ঠিক করি মাকে নিয়েই খুলনা যাবো। মাকে নিয়ে যাবো শুনে সেই থেকে নওমি মন খারাপ করে থাকে। গতরাতে মায়ের পাশে এসে কিছুসময় কাঁদলো।

নওমি চলে যাবার পরে মা বলেন, তোর নওমিকে কেমন লাগে? আমি বলি, ভালোইতো আছে। মা আবার বলেন, নওমির সাথে তোর বিয়ে দিলে কেমন হয়? মেয়েটা তোরে পছন্দ করে এমনিতেও আমি বুঝি।

আমি কিছু না বলেই ছাদে এসে দাঁড়াই। মা আমার পিছু পিছু এসে বলে, কি নওমিকে তোর পছন্দ না?

‘মা নওমি পছন্দ হওয়ার মতোই মেয়ে।'

মা হেসে বলেন, তা অবশ্য ঠিক বলেছিস।

তিনদিন পরেই নওমির সাথে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পরে নওমি আর মাকে নিয়ে আমি খুলনা চলে আসি।

নওমি মেয়েটা স্নিগ্ধ জলের মতো, আর মায়ের সাথে নওমির সম্পর্কে দেখে ভালো লাগে। নওমির সাথে আমার বিয়ের পরে নওমি মাকে মা বলে ডাকে, মা বলে দিয়েছে আমাকে আগের মতোই খালামনি বলে ডাকবি এটা সুন্দর লাগে, খালামনি হলো আরেক মা। তারপর থেকে মাকে নওমি খালামনি বলেই ডাকে।

দুইমাস পরে গতরাতে নওমির বাবা শহীদুল কাকা খুলনা আমাদের বাসায় আসেন। এবারই প্রথমবার এখানে আসেন। শ্রাবন মাস চলছে, বাহিরে গত তিনদিন ধরে বৃষ্টি। শহীদুল কাকা বাসার ভিতরে এসে সোফায় বসে৷ তখনই নওমি এসে বলে, বাবা জুতায় অনেক পানিকাঁদা লেগে আছে জুতা বাহিরে রেখে আসি আমার কাছে দাও। নওমিকে থামতে বলি।

বুকের ভিতরে পুরোনো কোনো একটা স্মৃতি নড়েচড়ে উঠে। শহীদুল কাকার দিকে তাকিয়ে বলি, আপনি এই জুতা নিয়েই এখানে বসে থাকুন কিছুসময়। শহীদুল কাকা আরাম করে বসে আমি তাকিয়ে দেখি, মনে হচ্ছে বহুদিন পরে বাবাকে দেখছি। আজকে যদি বাবা থাকতেন, এত বড় বাসা, স্বচ্ছ কাঁচের মতো সব, চাচাদের বাসার মতোই আমার বাসাটা; বাবা যদি এখানে বসতেন। শহীদুল কাকার ময়লা জুতার দিকে তাকিয়ে আমার দুইচোখ ভিজে উঠে।

একজোড়া ময়লা জুতা
লিখেছেন Mosthakim Billa

গত জুনে মাত্র ৮ দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন ভারতীয়-স্লোভেনিয়ান বংশোদ্ভুত নভোচারি সুনীতা উইলিয়ামস। সাথে ছিল তার সহকর্মী ...
19/03/2025

গত জুনে মাত্র ৮ দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন ভারতীয়-স্লোভেনিয়ান বংশোদ্ভুত নভোচারি সুনীতা উইলিয়ামস। সাথে ছিল তার সহকর্মী বুচ উইলমোর, স্লোভেনিয়ান পতাকা, সিঙ্গারা আর সস্। সেই ৮ দিনের সফর আড়াই’শ দিনে গিয়ে ঠেকল। ফেরার যানে ত্রুটি দেখা দিলে মহাকাশে আটকা পড়েন তারা।

এরপর বেশ কয়েক বার সুনীতাদের ফেরানোর চেষ্টা করা হলেও সফল হয়নি নাসা। শেষমেষ ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স’র পাঠানো ড্রাগন আজ ভোরে আটলান্টিক মহাসাগরের ফ্লোরিডা উপকূলে এসে নামলো। নোঙ্গর করে রাখা এক ফেরির সাথে গিয়ে জোড়া লাগলো। বিজ্ঞানের কি অবিশ্বাস্য জয়যাত্রা!

পৃথিবীর এক প্রান্তে মানুষ যখন মানুষকে টেনে হিঁচড়ে ঘরে বন্দী করার খেলায় মেতেছে, তখন আরেক প্রান্তের এক নারী মহাকাশে কাটিয়ে এলেন টানা ৯ মাস! তা-ও কোনো প্রস্তুতি ছাড়া!

এই ৯ মাস সুনীতারা কি করলেন ওখানে?

তারা গবেষণা করে দেখেছেন, মাইক্রো গ্রাভিটিতে কী কী ফসল উৎপাদন করা যায়! কোন্ ফুল ফুটতে পারে? কোন জীবাণু এই ধরনের প্রতিকূল পরিবেশে কাবু হয়? তার উদ্ভিদবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণার নাম ভেজি। ওহ্ সেখানে কিন্তু সুনীতা তার প্রিয় জিনিয়া ফুল ফুটিয়েছেন। জানিয়েছেন, ওখানে লেটুস, গাজর উৎপাদন করাও সম্ভব। একজন মহাকাশচারীকে শারীরবৃত্তীয় নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। হার্ট, কিডনি কিভাবে কতটা সক্রিয় থাকে তার পরীক্ষা খুব জরুরী। সেরে নিয়েছেন সেসব গবেষণাও। সুনীতা স্বপ্ন দেখেন, একদিন মানুষ মঙ্গলে যাবে। লোটা-কম্বল নিয়ে চাঁদে যাবে ঘর বাঁধতে।

এর আগেও সুনীতা মহাকাশে গিয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট তিনবার। তিনটি অভিযান ধরলে এখন পর্যন্ত ৫১৭ দিন মহাকাশে ছিলেন তিনি। এটাই বিশ্ব রেকর্ড। স্টেশন থেকে বেরিয়ে মহাকাশে হাঁটাহাঁটি করেছেন মোট ৫১ ঘণ্টা! ঠিকই পড়েছেন! তাও বিশ্ব রেকর্ড!

আমরা যখন ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীদের ঘরে আটকে রাখার যাবতীয় কূটকৌশল চালিয়ে যাচ্ছি, তখন এই উপমহাদেশেরই এক নারী মহাকাশে থেকে এলেন পাক্কা ৯ মাস! তাও মানুষের উদ্ভাবিত যানে চড়ে, মানুষেরই বানানো জামা কাপড়, অক্সিজেন আর খাবার খেয়ে। সুনীতা সেসব মানুষদেরই মিথ্যা প্রমাণ করে দিলেন যারা যাবতীয় কূটবুদ্ধি দিয়ে নারীদেরকে বস্তায় বন্দি করে রাখে, আবার সেসব সঙ্কীর্ণ মানুষ যারা স্বেচ্ছায় বন্দী হয়। কিছু মানুষ, যারা এই বলে ফতোয়া দেয় যে, বাড়ির বাইরে যেতে হলে সাথে এক পুরুষকে বাধ্যতামূলক ভাবে নিতে হয়।

জ্ঞান বিজ্ঞানে মানুষ কোথায় এগিয়ে গেলো, আর আমরা কোন্ পথে হাঁটছি।

ওয়েলকাম ব্যাক, সুনীতা উইলিয়ামস। আপনাকে দেখে মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে। শেখার আছে যে, শুধুমাত্র জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ দ্বারাই এই পৃথিবীর মানুষ এটা প্রমাণ করতে পারে যে, ”মানুষেরই মাঝে ম্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর...”

কয়েক মিনিটের জন্য লিফটে আটকা পড়লে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। আর সুনীতা আটকে ছিলেন মহাকাশে, বহুদিন। মহাকাশে বসে এক সাক্ষাৎকারে সুনীতা জানিয়েছিলেন, ”যদি পৃথিবীতে ফিরে যাই, তবে এই মহাকাশের সবকিছু মিস করবো।”

রহস্যে ভরপুর বিস্তীর্ণ মহাকাশও কি সুনীতাকে মিস করবে না?

© রাজু নরুল

অঙ্কে খারাপ করলে আম্মু রাগ হতো খুব। ধর্ম, সমাজ বা বাংলাতে খারাপ করলে আম্মুকে আমি কখনও রাগ করতে দেখিনি। অথচ ম্যাথমেটিক্সে...
18/03/2025

অঙ্কে খারাপ করলে আম্মু রাগ হতো খুব।

ধর্ম, সমাজ বা বাংলাতে খারাপ করলে আম্মুকে আমি কখনও রাগ করতে দেখিনি।

অথচ ম্যাথমেটিক্সে ১ মার্ক কম পাইলেও আম্মুর রাগটা হতো দেখার মতো।

প্রথমেই রেজাল্ট কার্ডটা ছুড়ে ফেলতেন। তারপর আমার কলার ধরে আমাকে তুলে বসাতেন ডাইনিং টেবিলের উপর। তারপর আমাকে দিতেন তার কষ্টের ইয়া বড় ফিরিস্তি।

তোর জন্য আমি কী না করেছি? চাকরি ছেড়েছি, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তোরে আমি পানির জগটা পর্যন্ত ধরতে দিই না। ভোরে উঠে টিফিন বানাইয়া রেডি করে দিই। আবার দুপুরে নিয়ে আসি। এইসব দেখার জন্য?

ক্লাস ফাইভের পরীক্ষায় একশো তুলতে পারিস না, তুই ইঞ্জিনিয়ার হবি কী করে?

আমি চুপচাপ আম্মুর কথা শুনি। আমার অসহ্য লাগে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে, আমি ইঞ্জিনিয়ার হবো না। আমার চিৎকার গলাতেই আটকাতে যায়। আম্মু এখন রেগে আগুন। সেই আগুনে ঘি ঢালার সাহস আমার নাই।

আম্মুর দ্বিতীয় দফার শাসন শুরু হতো নাহিদ ভাইয়া পড়াতে আসার পর।

নাহিদ ভাইয়া চোখ নিচু করে বসে থাকতো। আমার এতো লজ্জা লাগতো যে বলার না। আম্মুর লজ্জা লাগতো না। তিনি এক নাগাড়ে বলেই যেতেন, এতোগুলো টাকা তো বাবা মুখ দেখতে দিই না আমরা। আমাদেরও কষ্টের টাকা। ন্যাশনালের টিচার রেখে রাফি এতো মার্কস পাইলে পাবলিক ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট রেখে আমার লাভ কী বলো?

নাহিদ ভাই উত্তর দেন না।

আমি বুঝি, উনি নিরুপায়। আমার মতোই।

সেদিন আর পড়ানোটা জমে না। আমরা রোবটের মতো ক্যালকুলেশন করতে থাকি।

লেখাপড়া আমি করি না, এমন না। বাট পরীক্ষার হলে আমার কী যেন হয়ে যায়, আমার অঙ্ক কোনভাবেই মেলে না। এখানে আমার দোষটা কী?

২.
বাবার সাথে আমার দেখা হয় কম।

প্রথম কারণ, উনি ব্যাংকের কাজে ভয়ঙ্কর ব্যস্ত থাকেন। দ্বিতীয় কারণ, আমি উনাকে ভয় পাই।

একবার বাবা আমাকে গল্পের ছলেই প্রশ্ন করেছিলো, আজ স্কুলে কী শিখলে, বাবা? আমি আমার নতুন শেখা কবিতাটা বাবাকে বলি,

আম্মু বলেন, পড়রে সোনা
আব্বু বলেন, মন দে।
পাঠে আমার মন বসে না
কাঁঠালচাঁপার গন্ধে।

আমার কেবল ইচ্ছে জাগে
নদীর কাছে থাকতে,
বকুল ডালে লুকিয়ে থেকে
পাখির মতো ডাকতে।

সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
কর্ণফুলীর কূলটায়,
দুধভরা ওই চাঁদের বাটি
ফেরেশতারা উল্টায়।

তখন কেবল ভাবতে থাকি
কেমন করে উড়ব......

বাবা আমাকে থামিয়ে দেন। বলেন, চাঁদ কোন বাটি না। চাঁদ একটা উপগ্রহ। আর চাঁদ কোন ফেরেশতারা উল্টায় না। তোমাদের স্কুলের বিজ্ঞান কে শেখায়? বলো, ১৪৪ এর বর্গমূল করলে কত হবে?

আমি বলতে পারি না। থেমে যাই।

বাবা আম্মুর সাথে রাগে গজগজ করে। এখন তো চাকরির বাজার খুব খারাপ। এর ম্যাথ এর যদি এই অবস্থা হয়, ভবিষ্যতে কী করবে? তুমি দ্যাখো না কেন কিছু......

সেদিন থেকে বাবাকে আমি খুব ভয় পাই।

কারণ আপনাদের আগেই বলেছি, ম্যাথ জিনিসটা আমার একদমই পছন্দ না।

৩.
টুটুল ছিলো আমার বেস্টফ্রেন্ড।

হ্যা, স্কুলের বেস্টফ্রেন্ড যেমন হয়, অমনই। টুটুল ক্লাসে না আসলে আমিও ক্লাস করি না। আমরা এক বেঞ্চে বসতাম। টিফিন ভাগাভাগি করে খেতাম। একবার স্যার টুটুলকে বের করে দিলো। সাথে সাথে আমিও বের হয়ে গেলাম।

ফাইভের বৃত্তির রেজাল্ট হওয়ার পর আমার খুব মন খারাপ হলো। বৃত্তিটা আমি পাইনি, তাই।

তবে যখন জানলাম বৃত্তিটা পেয়েছে টুটুল, তখন আমার আর কোন খারাপ লাগা ছিলো না। আমি আনন্দে দুইটা ডিগবাজি দিলাম। আম্মুকে এসে খবরটা দিলাম হাসতে হাসতে।

এবং সেই প্রথমবার আম্মু আমার গায়ে হাত তুললো।

রাতে আব্বু এসে বোঝালো, টুটুল কীভাবে আমি বোকা বানিয়েছে। আমাকে পড়তে না দিয়ে নিজে চুপিচুপি পড়েছে। এরপর আব্বু মাথায় শক্ত করে হাত দিয়ে বলেছিলো, বি ক্যালকুলেটিভ। মেইক শিওর, তোমারে যেন কেউ ইউজ করতে না পারে। ক্লিয়ার?

আমি মাথা নাড়াই। পরদিন টুটুলকে বাটপার, বেঈমান যত কিছু আছে বলে গালি দিয়েছিলাম। মিষ্টির প্যাকেট ফেলে দিয়ে টুটুল সেই যে কানতে কানতে চলে গেল, আর কখনও আমার সামনে এলো না।

সেই থেকে আমার আর কোন বেস্টফ্রেন্ড হয় নাই কখনও। ভেবেছিলাম আর হবেও না।

ক্যালকুলেশন দিয়ে ফ্রেন্ড বানানো সম্ভব। বেস্টফ্রেন্ড না।

কিন্তু না, ক্লাস নাইনে উঠে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হলো। আরেকটা।

৪.
বাহাদুরের সাথে আমার পরিচয়টা রাস্তায়।

প্রথম প্রথম যখন পিছে পিছে আসতো, ভয় পেয়েছিলাম খুব। ছোটবেলা থেকেই আমি কুত্তা ডরাই কি না!

কিন্তু স্কুল শেষে বের হয়েও যখন দেখলাম মাঠের কোণে বসে আমার জন্য ওয়েট করছে, অদ্ভুত এক ভালো লাগায় ভরে গিয়েছিলো আমার মন। কতদিন পর কেউ আমার জন্য ওয়েট করলো!!

রাস্তার বন্ধুত্বটা দিন দিন গাঢ় হতে লাগলো। কোনদিন পাউরিটি কিনে দিতাম, কোনদিন দিতাম আমার টিফিন বক্সের পুরোটাই। বাহাদুর খেতে খেতে কুই কুই শব্দ করতো। আমি ওর মাথায় হাত রাখতাম।

আমার সাথে স্কুল পর্যন্ত যাওয়া আবার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসা হয়ে দাঁড়াল ওর রোজকার একটা রুটিন।

পোলাপাইন আমাকে খেপাত কুকুর বডিগার্ড নিয়ে আসার জন্য। আমার গায়ে লাগতো না একটুও। ভালোবাসা আর মায়া অদ্ভুত একটা জিনিস। একবার জমে গেলে কিছুই আর গায়ে লাগে না।

৫.
বাবার বদলির নোটিশ আসলো বছর খানেক পর।

দুইদিনের মধ্যে আমাদের বাসার সবকিছু ট্রাকে উঠে গেল। জায়গা হলো না শুধু বাহাদুরের। আমি বাবার পা ধরলাম, মায়ের আচল ধরলাম, মাটিতে গড়াগড়ি খাইলাম। লাভ হলো না।

বাহদুরের ছলছল চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল আমাদের ট্রাক। বাবা তখন আমাকে বোঝাচ্ছেন, বি ক্যালকুলেটিভ। একটা কুত্তাকে এতোদূর নিয়ে গিয়ে লাভটা কী বলো? ছেলে মানুষ, এতো ইমোশনাল হলে চলে?

৬.
তিথির সাথে আমার সম্পর্কটা যে বাসায় মানবে না, আমি ভালো করেই জানতাম।

বাট আম্মু যে লোক পাঠাইয়া তিথির বাসায় হুমকি দিয়া আসবে, এতোদূর আমি ভাবিনি কখনও।

তিথি অবশ্য শক্ত মেয়ে ছিলো। আমার চোখে চোখ রেখে বলেছিল, আমাকে নিয়ে পালাতে পারবা?

আমি চোখ নামিয়ে নিয়েছিলাম। তিথি আর কখনওই আমার সামনে আসে নাই। ভেবেছিলাম, সহজেই ভুলে যাবো।

বাট পারলাম না। ঘুম উধাও হয়ে গেল। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলাম। লেখাপড়াও। এখানে সেখানে ঘুরি। একদিন চেক করার জন্য ইট দিয়ে হাতে বাড়ি দিলাম। একটুও ব্যথা লাগলো না আমার। বুঝলাম, আমার অনুভূতি মরে গেছে।

পরের সপ্তাহে আমাকে ধরে বেঁধে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। বাবা বলে দিলো, ওরে সুস্থ করতে হবে ডাক্তার। আমার একটিমাত্র ছেলে, খুব আদরে মানুষ করেছি।

ডাক্তার আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।

৭.
বিয়ের তিন বছর পর আমি বাবা হলাম।

বাবা হতে পেরে আমি খুশি। আব্বু আম্মু আরো বেশি খুশি। ততদিনে আমি এমবিএ শেষ করে সিক্স ডিজিট স্যালারিতে তিন বছর পার করে ফেলেছি। কিছুদিনের মধ্যেই সাত ডিজিট হবে বলে অফিসে জোর গুঞ্জন।

এর মধ্যে তরু বললো, দেশের এজুকেশন সিস্টেমের কী অবস্থা, দেখেছ?

আমি মাথা নাড়াই।

ও বলতে থাকে, মাথা নাড়ালে তো হবে না। বাবা হয়েছো, ছেলের ভবিষ্যত নিয়েও তো কিছু ভাবতে হবে। কানাডা না হোক,ইউরোপে মাইগ্রেটের চেষ্টা তো আমরা করতেই পারি? এই দেশে বাচ্চা মানুষ করতে ইচ্ছা করে না আমার।

আমি নিজেও যে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবি নি, তা না।

তরুর কথা শোনার পর আরো জোরেশোরে ভাবা শুরু করি।

সবকিছুর ক্যালকুলেশন করি। বাড়ি, গাড়ি, ক্যারিয়ার সুইচ, ডেবিট, ক্রেডিট, পিআর পাইতে কতদিন লাগবে, স্কুলিং সিস্টেম বা ডে কেয়ার সিস্টেম। সেভিংস বা ইনস্যুরেন্স। সবকিছু গুছাইয়া উঠতে বেশ কষ্ট হলেও শেষপর্যন্ত এদিক ওদিক করে ম্যানেজ করে ফেলি।

বাবা বলে, কবে যাচ্ছি তাহলে? মা বলে, কানাডায় নাকি খুব ঠান্ডা?

আমি তারচেয়েও ঠান্ডা কন্ঠে বলি, আমরা যাচ্ছি। তোমরা যাচ্ছো না।

৮.
এরপর মা বাবা অনেক চিৎকার চেচামেচি করেছে।

আমার কানে আসেনি আর।

তিথিরে ছাড়ার পর থেকে আমি আর মানুষ ছাড়তে ভয় পাই না। আমারে ভয় দেখাইয়া লাভ আছে?

আম্মু বলে, এইদিন দেখার জন্য তোরে পেটে ধরসিলাম? একলা থাকবো কিভাবে এখানে?

আমি বলি, বাহাদুরও তো একলাই ছিলো, আম্মু!!

বাবা বলে, এই তোরে শিক্ষা দিয়েছি? বাবার প্রতি এতোটুকু ভালোবাসা নাই?

আমি বলি, ক্যালকুলেশন বাবা। তোমারে আর মারে নিয়ে গিয়ে আমার লাভটা কী? বুড়ো মানুষ, কোন কাজ করতে পারবা না, বাইরে চিকিৎসার আর ওষুধের খরচ জানো? এসব করতে গেলে আমি আমার বাচ্চা মানুষ করবো কীভাবে?

আর তুমি আমাকে ক্যালকুলেশন শিখিয়েছো। ভালোবাসা শেখাওনি তো!!

বাবা শেষপর্যন্ত চুপ হয়েছিলো। চুপ হয়নি আম্মু।

আমাদের ফ্লাইটের দিন যত আগাইয়া আসতে থাকে, আম্মু তত পাগলের মতো করতে থাকে। কোনদিন সমাজের দোহাই দেয়, কোনদিন ধর্ম কোনদিন আবার দোহাই দেয় বাঙ্গালী কালচারের।

বোকা মেয়ে!!

বাংলা, ধর্ম আর সমাজ আমি সেই কবেই ছেড়ে এসেছি।

এখন আমি শুধু ম্যাথমেটিক্স বুঝি। সারাজীবন ক্যালকুলেশন শিখিয়ে এখন আমার কাছে সমাজবিজ্ঞান বা ধর্ম আশা করলে কীভাবে হবে!!

যত্তসব ডিজগাস্টিং ব্যাকডেটেড বুড়ো মানুষের দল!!

জহির রিক্সায় বসে আছে হাতে কলা আর একটা দুধের বোতল। যে রিক্সায় বসে আছে সেই রিক্সাওয়ালা একবার পিছনে মাথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে...
10/03/2025

জহির রিক্সায় বসে আছে হাতে কলা আর একটা দুধের বোতল। যে রিক্সায় বসে আছে সেই রিক্সাওয়ালা একবার পিছনে মাথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে নেয়, স্যার কলা কতো করে নিয়েছে?

‘হালি পঞ্চাশ টাকা।’

আর দুধের লিটার?

‘বোতলে দুই লিটার আছে দুইশো পঞ্চাশ টাকা নিয়েছে।’

স্যার আমিও কালকে কলা আর দুধ নিয়েছি। জহির বলে আচ্ছা।

কিছুক্ষণ পরেই মাগরিবের আজান দিবে। অফিস থেকে জহির বাসায় ফিরছে, সারাদিন অফিস করে এখন শরীরটা ক্লান্ত তাছাড়া রোজা রেখেছে। রিক্সাওয়ালার এসব ফালতু কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না। এদের স্বভাবই দরকার ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কথা বলা। কেন রে বেটা আমি কি তোর কাছে জিজ্ঞেস করেছি তুই দুধ কিনছিস কিনা?

জহির দুধ কলা নিয়েছে ছেলের জন্যে। অফিস থেকে বের হয়েছে তখনই সুমি কল দিয়ে বলেছে, বাবুর জন্যে যেনো দুধ কলা নিয়ে আসে।

জহিরের বিরক্ত লাগলেও মুখে কিছু বলেনি। রিক্সাওয়ালা আবার বলে, আমি দুধ নিয়েছিলাম আমার আব্বার জন্যে। বুঝলেন স্যার আব্বাও একসময় রিক্সা চালাতেন, এখন কোনো কাজ করতে পারে না। বিছানায় শুয়ে বসে দিন কাটিয়ে দেয়। ঝাল জাতীয় তরকারি খেতে পারে না। রোজা রাখে দুধ, কলা দিয়ে ভাত খেয়ে। আমার বউ আবার আব্বারে অনেক পছন্দ করে, দুধ কলা বাচ্চাদের থেকে লুকিয়ে রেখে শুধু আব্বারে দেয়। আব্বা এদিকে নাতিদের ছাড়া কিছু খেতে পারেননা। আসলে বুঝলেন স্যার পরিবারের মানুষেন ভিতরে সবার প্রতি সবার যে মায়া এসবই আসলে সুন্দর।

লোকটার উপর জহিরের যে বিরক্ত ছিলো সেসব কিছুটা যেনো কমে আসে। আব্বার কথা বলাতেই কি কমে গেছে?

জহির গত কয়েকদিন ধরেই চাইছে বাবার সাথে একবার দেখা করবে। তবে অফিসের কাজের চাপে সুযোগই হয়ে উঠে না।

জহিরের বাবার পছন্দ ছিলো দুধ কলা দিয়ে ভাত খাওয়া। প্রতিদিন রাতে বাসায় দুধ কলা থাকতোই। মনসুর নামের একজন লোক বাসায় দুধ দিয়ে যেতো। জহিরের দুধ খাওয়া পছন্দ ছিলো না, তবে বড় দুই ভাই বোন বাবার দেখাদেখি দুধ কলা খেতো।

বাবা কতোবার বলেছে জহিরকে দুধ কলা দিয়ে ভাত খেতে একসময় বাবার কথাটা বিরক্ত লাগা শুরু করে। এখন বাবার থেকে অনেক দূরত্ব কেউ বলেই না, জহির দুধ দিয়ে কয়টা ভাত খেয়ে দেখ অনেক ভালো লাগবে।

বাসার সামনে এসে রিক্সা থেকে নেমে জহির মানিব্যাগ বের করে। ভাড়া ত্রিশ টাকা। জহির একটা পাঁচশো টাকার নোট দিয়েছে। রিক্সাওয়ালা বলে স্যার ভাংতি হবে না।

জহির বলে, শুনেন ভাই পুরোটাই আপনি রেখে দেন। পাঁচশো টাকা দিয়ে দুধ আর কলা নিবেন। আজকে আপনার বউকে বলবেন যেনো বাচ্চাদের থেকে দুধ কলা লুকিয়ে না রাখে, সবাই না হয় একদিন মিলে দুধ কলা দিয়ে ভাত খেলেন।

জহির আর পিছনে ঘুরে তাকায় না। লোকটা গামছা দিয়ে চোখ মুছে নিচ্ছে, এইসব দৃশ্য জহির সহ্য করতে পারে না।

কলিং বেল চাপলেই সুমি দরজা খুলে দেয়। জহির সুমির হাতে কাঁধের ব্যাগ আর পলিথিনে থাকা দুধের বোতল এবং কলা দেয়।

সুমি পলিথিন থেকে বের করে দেখে কলাগুলো ঠিক আছে কিনা।

জহির ওয়াশরুম থেকে এসে টেবিলে বসে। ইফতারের আর বেশি সময় বাকি নেই। সুমি বাবুকে নিয়ে বসে আছে, দুধ কলা দিয়ে সামনেই প্লেটে ভাত মেখে রাখা। অয়ন এখন খাবে না, বাবা মায়ের সাথেই ইফতারিতে ভাত খাবে তাই আজানের অপেক্ষা করছে।

আজান দেয়। সুমি হাল্কা কিছু খাবার খেয়েই অয়নকে ভাত খাইয়ে দেয়। অয়ন দুই লোকমা নেওয়ার পরেই বলে আর খাবো না। সুমি অয়নকে গল্প বলে, ছড়া বলে খাবার খাইয়ে দেয়। অয়নের প্লেটের খাবার শেষ হলেই কয়েক টুকরা ফল খেয়ে জহিরের পাশে অয়নকে বসিয়ে রেখে সুমি নামাজ পড়তে চলে যায়।

সুমি নামাজ পড়ে আসলে জহিরও নামাজ পড়তে যায়।

নামাজ শেষে জহির জায়নামাজেই কিছু সময় বসে থাকে। দীর্ঘ সময় জায়নামাজে বসে কাটিয়ে দেয়।এর ভিতরে সুমি এসে বলে, তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? জহির বলে, না। সুমি বলে, তবে এখানে যে চুপচাপ বসে আছো কেন? অফিসে কিছু হয়েছে?

‘না।’

জহির জায়নামাজ থেকে উঠে বসে। পরনের লুঙ্গিটা পাল্টে প্যান্ট পরে। গায়ে একটা শার্ট জড়িয়ে নেয়।

সুমিকে পাশের ঘর থেকে ডেকে বলে, একটা শাড়ি পরে নেও বাহিরে যাবো। সুমি বলে কই যাবে? জহির বলে, বাবার সাথে দেখা করতে যাবো। গত কয়েকদিন ধরেই ভাবছি যাবো তবে সুযোগ হয়ে উঠছে না।

জহির অয়ন আর সুমিকে নিয়ে রিক্সা থেকে নামে। বাড়িটার সামনে বড় একট সাইনবোর্ডে লেখা ‘ঠিকানা’ গেটের পরেই বড় একটা উঠান, বামপাশে একটা পুকুর আছে। উঠান ভর্তি গাছ, পুকুরের পাশে সবজির ক্ষেত।

জহির ভিতরে এসে একটা ঘরে বসে আছে। বাবাকে ডেকে নিয়ে আসতে একজন লোক গেছে। মিনিট দশেক পরেই বাবা আসেন। এসেই অয়নের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। অয়ন দাদুকে তেমন চিনে না তাই সুমির কোলের সাথে মিশে থাকে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে।

‘বাবা কেমন আছেন?’

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোরা কেমন আছিস? বউমাকে যে অসুস্থ লাগছে।’
‘বাবা আমরাও ভালো আছি। সুমির গত সপ্তাহে জ্বর গেছে তাই হয়তো অসুখের ছাপটা এখনো আছে।’

জহির সুমির দিকে ইশারা দিয়ে বলতে বলে। রিক্সায় বসেই জহির সুমিকে বলেছে, বাবার সাথে কথাটা বলতে। সুমি বলেছে, আমি বলতে পারবো না তুমিই বলবে। আমি তো আর বলি নাই বাবাকে ঠিকানায় থাকতে। তুমি আর তোমার ভাইরা নিজেদের ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলা করবার কারণে এখানে তিনি থাকেন। এখন আমাকে টানছো কেন? জহির অনুরোধ করে বলে, আমার আসলে সংকোচ লাগছে আর বাবাকে চিনি, হয়তো না করে দিবেন তুমি বললে বাবা শুনবে। তোমাকে বাবা পছন্দ করে।

সুমি বাবার দিকে তাকিয়ে বলে, বাবা চলেন উঠানের দিকে যাই একটু। জহির অয়নের হাত ধরে হাঁটছে, সুমি আর বাবা ঘরের বাহিরে এসে উঠানে এসে দাঁড়িয়েছে।

সুমি বলে, বাবা আমরা চাইছি আপনাকে বাসায় নিয়ে যেতে। আপনার ছেলেরা যা করেছে আসলে ঠিক করে নায়। এখন জহির চাইছে আপনি আমাদের সাথেই থাকবেন যতদিন আছেন, আর কোথাও যেতে হবে না।

জহিরের বাবা বলে, মা আসলে আমার এখানে কষ্ট হচ্ছে না। নিজের বয়সী অনেক মানুষজন আছে। বেশ ভালোই দিন কেটে যায়।

সুমি বলে, বাবা আপনার কি ইচ্ছে করে না নাতির সাথে একটু সময় খেলতে? নিজের ছেলেকে কাছ থেকে দেখতে।

জহিরের বাবা চুপ করে থাকে। সুমি বলে, বাবা আপনি আমাকে মা ডাকলেন অথচ মায়ের কথা শুনছেন না। এ কেমন ছেলে বলেন? আপনি লক্ষ্মী ছেলের মতো চলুন আমাদের সাথে।

সুমি কথাটা বলতেই দেখে গলা ধরে আসে। জহির আর তার ভাইরা বাবার সম্পত্তি সব ভাগ করে নিয়েছে। জহিরের বড় ভাই সম্পত্তি বেশি নিয়েছে। এসব নিয়ে বড় ভাইজানের সাথে ঝগড়াও হয়েছে। বাবা দুই ভাইয়ের বাসায় থাকতো ভাগ করে। একসময় সম্পত্তির এই ঝামেলার কারণে অভিমান করে ছেলেদের থেকে দূরে ঠিকানায় চলে আসেন। তার অভিমান ভাঙাতেও ছেলেরা কেউ কখনো আসেনি।

সুমি শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে। জহিরও বাবার পাশে এসে দাঁড়ায়। জহিরের বাবা সুমির মাথায় হাত রেখে বলে, মা আমি যাবো কাঁদতে হবে না।

রাত দশটা বিশ জহির বাবাকে নিয়ে বাসায় এসেছে। সুমি বাবার বিছানা ঠিক করে দিয়েছে। চা করে দিয়েছে, বাবার কিছু বই নিয়ে এসেছে, সেই বইগুলো বিছানার পাশে গুছিয়ে রেখেছে।

সেহরিতে বাবার সাথে জহির খেতে বসেছে। দীর্ঘদিন পরে বাবার সাথে এক টেবিলে খাবার খেতে বসেছে। মুরগী আর লাউয়ের তরকারি দিয়ে খাবার শেষে দুধ আর কলা নিয়ে এসে সুমি টেবিলে রাখে।

জহির বাবার দিকে তাকিয়ে বলে, বাবা দুধ আর কলা আছে। বাবার প্লেট ধুয়ে জহির আবার ভাত দেয়, সুমি দুধ ঢেলে দেয়, কলার ছোলা ছাড়িয়ে প্লেটে দেয়। বাবা দুধ আর কলা দিয়ে ভাত খায় জহির তাকিয়ে দেখে। জহির ভীষণ শক্ত মানুষ, তবু বুকের ভিতরটা শীতল হয়ে উঠে, চোখজোড়া ভিজে উঠছে। বাবাকে পাশে বসে খেতে দেখবার ভিতরেও যে এতো আনন্দ হয় কখনো ভাবতেও পারেনি।

Address

Omda Mia Hill, Tabalchari
Rangamati
4500

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when AyoNs Creation posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share