27/01/2025
পাঁচটি বিপদের হুমকি
=====================================
অঙ্গুত্তর নিকায়ের পঞ্চম নিপাতে বুদ্ধ বলেছেন যে, পাঁচটি বিপদের হুমকি রয়েছে:
“ভিক্ষুগণ, কোনো ভিক্ষু যদি এই পাঁচটি বিপদের হুমকিকে দেখে, তাহলে সেটাই তার অলব্ধকে লাভের, অপ্রাপ্তকে পাওয়ার, অনুপলব্ধকে উপলব্ধির লক্ষ্যে মনোযোগী হয়ে, উদ্যমী হয়ে জীবন যাপনের জন্য যথেষ্ট। এই পাঁচটি বিপদের হুমকি কী কী?
(১) ভিক্ষুগণ, এখানে একজন ভিক্ষু এভাবে পর্যালোচনা করে : ‘আমি এখন তরুণ যুবক, বয়সে তরুণ, চুল এখনো কালো, ভরা যৌবন, জীবনের প্রথম ধাপে আছি। কিন্তু একটা সময় আসবে যখন এই দেহ বার্ধক্যের করাল গ্রাসে পতিত হবে। বার্ধক্যে ম্রিয়মান হলে সে সহজে বুদ্ধের শিক্ষাগুলোকে উপলব্ধি করতে পারে না। সে সহজে বনে, জঙ্গলে, অরণ্যে অথবা বিচ্ছিন্ন আবাসে বাস করতে পারে না। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আগেই, এমন অপছন্দের এবং অসহনীয় পরিস্থিতির আমার কাছে আসার আগেই সেই অপ্রাপ্তকে পাওয়ার জন্য, অলব্ধকে লাভের জন্য, অনুপলব্ধকে উপলব্ধির জন্য আমার শক্তিকে সুসংহত করতে হবে, যাতে সেই অবস্থা লাভ করে আমি এমনকি বুড়ো বয়সেও সুখে বাস করতে পারি।’
(২) ভিক্ষুগণ, এ ছাড়াও একজন ভিক্ষু এভাবে পর্যালোচনা করে : ‘আমি এখন অসুস্থতা থেকে মুক্ত আছি, রোগ থেকে মুক্ত আছি, আমার হজমশক্তিও ভালো, আমার দেহ বেশি গরম নয় আবার বেশি ঠাণ্ডাও নয়, এটা এখন প্রচেষ্টা চালানোর উপযুক্ত। কিন্তু একটা সময় আসবে যখন এই দেহ রোগের করাল গ্রাসে পতিত হবে। রোগী হলে সে তখন বুদ্ধের শিক্ষা উপলব্ধি করতে পারে না। সে সহজে বনে, জঙ্গলে, অরণ্যে অথবা বিচ্ছিন্ন আবাসে বাস করতে পারে না। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আগেই, এমন অপছন্দের এবং অসহনীয় পরিস্থিতি আমার কাছে আসার আগেই সেই অপ্রাপ্তকে পাওয়ার জন্য, অলব্ধকে লাভের জন্য, অনুপলব্ধকে উপলব্ধির জন্য আমার শক্তিকে সুসংহত করতে হবে, যাতে সেই অবস্থা লাভ করে আমি এমনকি অসুখের মাঝেও সুখে বাস করতে পারি।’
(৩) ভিক্ষুগণ, এ ছাড়াও একজন ভিক্ষু এভাবে পর্যালোচনা করে : ‘এখন তো খাদ্যের যথেষ্ট প্রাচুর্যতা রয়েছে, শস্যের ফলন ভালো হয়, সহজে ভিক্ষান্ন পাওয়া যায়, তাই এখন পিণ্ড ও দানের উপর নির্ভর করে জীবন যাপন করা সহজ। কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন দুর্ভিক্ষ হবে, শস্য ফলবে না, ভিক্ষান্ন পাওয়া কঠিন হবে। তখন পিণ্ড ও দানের উপর নির্ভর করে জীবন যাপন করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। দুর্ভিক্ষের সময়ে লোকজন সাধারণত খাদ্যের খোঁজে যেখানে খাবারের প্রাচুর্য আছে সেখানে যায়, তাদের আবাসস্থলে তখন গাদাগাদি ও ভিড় লেগে যায়। এমন গাদাগাদি ও ভিড়ের স্থানে থেকে বুদ্ধের শিক্ষাকে উপলব্ধি করা সহজ নয়। সে সহজে বনে, জঙ্গলে, অরণ্যে অথবা বিচ্ছিন্ন আবাসে বাস করতে পারে না। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আগেই, এমন অপছন্দের এবং অসহনীয় পরিস্থিতি আমার কাছে আসার আগেই সেই অপ্রাপ্তকে পাওয়ার জন্য, অলব্ধকে লাভের জন্য, অনুপলব্ধকে উপলব্ধির জন্য আমার শক্তিকে সুসংহত করতে হবে, যাতে সেই অবস্থা লাভ করে আমি এমনকি দুর্ভিক্ষের মাঝেও সুখে বাস করতে পারি।’
৪) ভিক্ষুগণ, এ ছাড়াও একজন ভিক্ষু এভাবে পর্যালোচনা করে : ‘এখন লোকজন মিলেমিশে মৈত্রীপূর্ণ হয়ে বাস করে, এমনভাবে বন্ধুত্ব নিয়ে বাস করে যেন পানি ও দুধের মতো, এবং তারা পরস্পরকে বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখে। কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন বিপদ ঘনিয়ে আসবে, বর্বর উপজাতিরা অশান্ত হয়ে উঠবে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন মালপত্র নিয়ে গাড়িতে তুলে চলে যাবে, ভীত-সন্ত্রস্ত লোকজন নিরাপদ স্থানের খোঁজে বেরিয়ে পড়বে, তাদের আবাসস্থলে তখন গাদাগাদি ও ভিড় লেগে যাবে। এমন গাদাগাদি ও ভিড়ের স্থানে থেকে বুদ্ধের শিক্ষাকে উপলব্ধি করা সহজ নয়। সে সহজে বনে, জঙ্গলে, অরণ্যে অথবা বিচ্ছিন্ন আবাসে বাস করতে পারে না। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আগেই, এমন অপছন্দের এবং অসহনীয় পরিস্থিতি আমার কাছে আসার আগেই সেই অপ্রাপ্তকে পাওয়ার জন্য, অলব্ধকে লাভের জন্য, অনুপলব্ধকে উপলব্ধির জন্য আমার শক্তিকে সুসংহত করতে হবে, যাতে সেই অবস্থা লাভ করে আমি এমনকি বিপদের মাঝেও সুখে বাস করতে পারি।’
(৫) ভিক্ষুগণ, এ ছাড়াও একজন ভিক্ষু এভাবে পর্যালোচনা করে : ‘এখন ভিক্ষুসংঘ মিলেমিশে মৈত্রীপূর্ণ হয়ে বাস করে, কোনো বাদানুবাদ ছাড়াই এক শিক্ষার অধীনে সুখে বাস করে। কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন সংঘ বিভক্ত হয়ে পড়বে। সংঘ বিভক্ত হলে সেই অবস্থায় বুদ্ধের শিক্ষাকে উপলব্ধি করা সহজ নয়। সে সহজে বনে, জঙ্গলে, অরণ্যে অথবা বিচ্ছিন্ন আবাসে বাস করতে পারে না। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আগেই, এমন অপছন্দের এবং অসহনীয় পরিস্থিতি আমার কাছে আসার আগেই সেই অপ্রাপ্তকে পাওয়ার জন্য, অলব্ধকে লাভের জন্য, অনুপলব্ধকে উপলব্ধির জন্য আমার শক্তিকে সুসংহত করতে হবে, যাতে সেই অবস্থা লাভ করে আমি এমনকি বিপদের মাঝেও সুখে বাস করতে পারি।’
ইতিবুত্তকের চর সূত্রের মধ্যে বুদ্ধ অলস ভিক্ষু ও উদ্যমী ভিক্ষুকে নির্দেশ করে দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন :
ভিক্ষুগণ, কোনো ভিক্ষু হাঁটার সময়ে তার মধ্যে যদি কামচিন্তা, অথবা হিংসা চিন্তা, অথবা নিষ্ঠুরতার চিন্তা জাগে, আর সে যদি তা মেনে নেয়, সেটাকে প্রত্যাখ্যান না করে, সেটাকে তাড়িয়ে না দেয়, তা থেকে মুক্ত না হয়, সেটিকে শেষ করে না দেয়, সেভাবে হলে সেই ভিক্ষু হয় উদ্যমহীন এবং অকুশল কাজ করতে ভয় পায় না। তাকে বলা হয় সর্বদা অলস এবং নিরুদ্যমী। দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে... বসে থাকার সময়ে... শুয়ে থাকার সময়ে যদি কামচিন্তা, অথবা হিংসা চিন্তা, অথবা নিষ্ঠুরতার চিন্তা জাগে, আর সে যদি তা মেনে নেয়, সেটাকে প্রত্যাখ্যান না করে, সেটাকে তাড়িয়ে না দেয়, তা থেকে মুক্ত না হয়, সেটিকে শেষ করে না দেয়, সেভাবে হলে সেই ভিক্ষু হয় উদ্যমহীন এবং অকুশল কাজ করতে ভয় পায় না। তাকে বলা হয় সর্বদা অলস এবং নিরুদ্যমী।’
কিন্তু হাঁটার সময়ে... দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে... বসে থাকার সময়ে... শুয়ে থাকার সময়ে যদি ভিক্ষুর মধ্যে কামচিন্তা, অথবা হিংসা চিন্তা, অথবা নিষ্ঠুরতার চিন্তা জাগে, আর সে যদি তা মেনে না নেয়, সেটাকে প্রত্যাখ্যান করে, সেটাকে তাড়িয়ে দেয়, তা থেকে মুক্ত হয়, সেটিকে শেষ করে দেয়, সেভাবে হলে সেই ভিক্ষু হয় উদ্যমী এবং অকুশল কাজ করতে ভয় পায়। তাকে বলা হয় সর্বদা উদ্যমী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
হেঁটে অথবা দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে,
বসে অথবা শুয়ে থাকার সময়ে
যে এমন পাপী ও জাগতিক চিন্তা করে,
সে তখন ভুল পথে যাচ্ছে,
অলীক জিনিস নিয়ে তখন সে মোহমুগ্ধ।
হেঁটে অথবা দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে,
বসে অথবা শুয়ে থাকার সময়ে
যে এমন চিন্তাগুলোকে দমন করে,
সেই চিন্তাগুলোকে প্রশমিত করে আনন্দ পায়,
তেমন ভিক্ষুই লাভ করতে সক্ষম হয়
পরম সম্বোধিকে।
ভিক্ষু অথবা ভিক্ষুণী হিসেবে আপনাদের ভরণপোষণ গৃহীদের দ্বারাই হয়ে থাকে। শ্রদ্ধাবানদের দেয়া খাদ্য গ্রহণ করে অলসতায় নিশ্চেষ্ট হয়ে জীবন কাটানো আপনার জন্য লজ্জাকর। অতএব আপনার অবশ্যই বুদ্ধ যেভাবে বলেছেন সেভাবে উদ্যমী হতে হবে।