মো. শওকত আলীর কথা ও কণ্ঠ

মো. শওকত আলীর কথা ও কণ্ঠ সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চার প্রতি মমত্ত্ববোধ ও আগ্রহ।

https://youtube.com/channel/UC-dkQrLuNq3F1IXJ7zsySgw

বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু জন্মেছিলেন ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানার মৌবনী (হাবিব...
11/08/2025

বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু জন্মেছিলেন ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানার মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে ৷ পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ও মাতা লক্ষ্মীপ্রিয় দেবীর চতুর্থ সন্তান ক্ষুদিরাম বসু ৷ তিন কন্যা সন্তানের পর তাঁর জন্ম হলেও, দুই পুত্রের অকাল মৃত্যুতে ক্ষুদিরামের মৃত্যুশঙ্কায় মা প্রচলিত সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী তাঁর বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো চালের খুদের বিনিময়ে বি*ক্রি করে দেন । খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে শিশুটির নাম পরবর্তীকালে রাখা হয় ক্ষুদিরাম ৷ ক্ষুদিরাম বসু মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারান, তার এক বছর পর হারান পিতাকে!

১৯০২ এবং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরে বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ এবং ভগিনী নিবেদিতা’র স্বাধীনতাকামী বক্তব্য ও গোপন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম অংশগ্রহণ করেন । স্পষ্টভাবেই তিনি ‘অনুশীলন সমিতি’-তে যোগদান করেন এবং কলকাতায় বারীন্দ্র কুমার ঘোষের কর্মতৎপরতার সংস্পর্শে আসেন । তিনি ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন এবং ভারতে ব্রি*টিশ শা*সন বি*রোধী পুস্তিকা বিতরণের অ*পরাধে গ্রে*প্তা*রও হন ৷

১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল । ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন বিপ্লবী হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন হেমচন্দ্রের সহকারী । অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলীর জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন । ক্ষুদিরাম সত্যেন্দ্রনাথের সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান । সেখানে পরিচয় হয় ব্রিটিশবিরোধী প্রথম আত্মত্যাগকারী বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী’র সাথে ৷

ইতোমধ্যে ব্রিটিশ বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট কিংফোর্ড প্রচণ্ড অ*ত্যাচারী হয়ে উঠে ৷ সেজন্য বিপ্লবীরা সিদ্ধান্ত নেয় তাকে হ*ত্যা করার ৷ ক্ষুদিরাম বসুর সাথে সেই পরিকল্পনায় অংশ নেয় প্রফুল্ল চাকী ৷ এক রাতে সপত্নীক ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড ও ব্রিটিশ ব্যারিস্টার পত্নী মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা একই রকম দুই গাড়িতে করে ফিরছিলেন ৷ যে গাড়িতে মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা ছিলো, সেই গাড়িতে কিংফোর্ড আছে ভেবে তাকে গু*প্তহ*ত্যা করার জন্যে বোমা ছোঁড়েন ক্ষুদিরাম বসু ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁর বো*মার আ*ঘাতে প্রাণ যায় মিসেস কেনেডি ও তার কন্যার ৷

এই ঘটনা ব্রিটিশ মহলকে তোলপাড় করে দেয় ৷ ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকীকে ধরার জন্য হন্য হয়ে উঠে ব্রিটিশবাহিনী ৷ অবশেষে ক্ষুদিরাম বসুকে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১লা মে, ওয়াইনি রেল স্টেশন (বর্তমান নাম ক্ষুদিরাম বোস পুসা স্টেশন) থেকে গ্রে*ফ*তার করে ৷ পরের দিন প্রফুল্ল চাকী ব্রিটিশ দা*লাল এক বাঙালি অফিসারের হাতে ধরে পড়ে গেলে নিজে নিজে আ*ত্মহনন করেন ৷ ক্ষুদিরাম বসু’র অপরাধ হিসেবে তাকে ফাঁ*সি*তে ঝু*লিয়ে মৃ**ত্যুদ*ণ্ডের আদেশ দেওয়া হয় ৷ ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ই আগস্ট তাকে ফাঁ*সি*তে ঝু*লি*য়ে হ*ত্যা করা হয় ৷ ফাঁ**সি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিন; যিনি ছিলেন ভারতবর্ষের সর্বকনিষ্ঠ বিপ্লবী ৷

আজ বাঙালির বীরবিপ্লবী এই সূর্যসন্তানের মহাপ্রয়াণ দিবস। তাঁকে জানাই অন্তর্লীন শ্রদ্ধাঞ্জলি ও স্যালুট ৷

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   নিউজউইকের প্রচ্ছদের সেই গেরিলাযোদ্ধা।১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত মার্কি...
11/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


নিউজউইকের প্রচ্ছদের সেই গেরিলাযোদ্ধা।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাপ্তাহিক সাময়িকী নিউজউইক- এর সেই প্রচ্ছদ।
প্রচ্ছদের শিরোনাম ‘বাংলা দেশ গেরিলাস’।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দলিল হয়ে ওঠা প্রচ্ছদটি দেখেননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে এই প্রচ্ছদটি। কিন্তু জানেন কি ছবিতে স্টেনগান হাতে দাড়িয়ে থাকা এই তরুন গেরিলাযোদ্ধা কে ?
তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব হেবজুল বারী।

১৯৬৯ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। পদায়ন হয়েছিল চট্টগ্রামে। মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ২৫ থেকে ২৮ মার্চ বেলুচ রেজিমেন্টের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। চার দিন যুদ্ধ চলতে চলতে খাবার, গোলাবারুদ একপর্যায়ে শেষের দিকে। কিছুতেই যখন মুক্তিযোদ্ধা আর কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না, ওদিকে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের ব্রাহ্মণহাটার বাড়িতে থানা থেকে খবর জানায়, হেবজুল বারী মারা গেছেন ! এরপর চলে অসংখ্য অপারেশন। মুক্তিযুদ্ধেও রয়েছে তার অসংখ্য স্মৃতি...





Giridhar Dey

10/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১০ আগস্ট একটি ঘটনাবহুল দিন!

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১০ আগস্ট একটি ঘটনাবহুল দিন। এদিন মুজিবনগর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের মুক্তির জন্য সারা বিশ্বের কাছে আবেদন জানান। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য তিনি সভ্যতা, গণতন্ত্র, মানবতা ও ন্যায়বিচারের রক্ষায় বিশ্বের সব রাষ্ট্রপ্রধান এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানান। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কোনো চেষ্টা করা হলে বিশ্বের এই অঞ্চল অগ্ন্যুৎপাতের মুখোমুখি হবে।’
দেশজুড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ:
১. ১০ আগস্ট ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমের আবদুল্লাহপুরে শান্তিকমিটির এক সমাবেশ চলছিল। এ সমাবেশে স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের নির্মূল করার জন্য উপস্থিত স্থানীয় রাজাকার ও শান্তিকমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সক্রিয় সহযোগী, শান্তি কমিটির নেতা ও নেজামে ইসলাম দলের সিনিয়র সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মোস্তফা আল মাদানী। এসময় মাদানীর ওপর আক্রমণ করে একদল গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। গেরিলাদের গুলিতে মাদানী নিহত হন।
২. সিলেটে ক্যাপ্টেন রবের নেতৃত্বে শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায় মুক্তিবাহিনীর পাঁচ কোম্পানি যোদ্ধার একটি বড় দল । প্রায় দুই ঘণ্টা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের একটি বড় অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং সেখানে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। এযুদ্ধে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও পাঁচজন আহত হন। এসময় শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রচুর গোলাবারুদ উদ্ধার করে মুক্তিযোদ্ধারা।
৩. সিলেটের কানাইঘাটের ৪ নম্বর সেক্টরে রাজাকারদের চতুলবাজার ঘাঁটি আক্রমণ করে ডাউকি সাব-সেক্টরের মুক্তিবাহিনীর একটি দল। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে তিন রাজাকার এবং দুই রাজাকার নিহত হয়।
৪. শালদা নদীর পশ্চিমে ক্যাপ্টেন সালেকের নেতৃত্বে কুমিল্লা সিএন্ডবি সড়কের কাছে শিদলাই গ্রামে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করে মুক্তিবাহিনীর এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়াও এদিন দিরাইয়ে এক রাজাকারের বাড়িতে হামলা চালায় মুক্তিযোদ্ধারা।
সূত্রঃ সমাজকাল

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ছিল ঝ*ঞ্ঝাবি*ক্ষু*ব্ধ। একদিকে স্বজন হারানোর বেদ...
09/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ছিল ঝ*ঞ্ঝাবি*ক্ষু*ব্ধ। একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে পা*কিস্তানি হা*নাদার বা*হিনী ও তাদের দো*সরদের পরাজিত করার আনন্দ। যু*দ্ধের ময়দানে অ*স্ত্রশ*স্ত্রে পিছিয়ে থাকলেও মনের জোরে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।

তাঁদের মনের জোর আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ‘চরমপত্র’ অনুষ্ঠানটি।

বি*দ্রূপ ও শ্লেষা*ত্মক অনুষ্ঠানটি রচনা ও উপস্থাপন করেছিলেন সাংবাদিক ও লেখক এম আর আখতার মুকুল।

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   জামাতে ইসলামীর আমির গোলাম আজম, 11 এপ্রিল, 1971 তারিখে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান...
08/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


জামাতে ইসলামীর আমির গোলাম আজম, 11 এপ্রিল, 1971 তারিখে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, মেজর জেনারেল রাও ফারমান আলী এবং অন্যান্য সিনিয়র পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত করেন পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা করেন এবং কিভাবে জামাত-ই-ইসলামি পাকিস্তানী বাহিনীকে তাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সহায়তা করতে পারে তা জানতে অপারেশন সার্চলাইটের পর পূর্ব পাকিস্তানের উপরে।

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন...
04/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের আহার গ্রহণ।

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   ছবিতে  মাঝের  ছেলেটির নাম মাগফার আহমেদ  চৌধুরী আজাদ। ঢাকার ইস্কাটনের ভীষণ ধনী পরিবারে...
04/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


ছবিতে মাঝের ছেলেটির নাম মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ। ঢাকার ইস্কাটনের ভীষণ ধনী পরিবারের ছেলে ছিলো আজাদ। তাঁদের ইস্কাটনের বাড়িটা ছিলো দেখার মতো। পৌনে দুই বিঘা জমির উপরে বাড়ি। আজাদ একাধারে ছিলেন ভীষণ ফ্যাশনেবল এবং পড়াশোনায় দুর্দান্ত মেধাবী।
সিনেমার পোকা ছিলেন আজাদ। ছিলেন এলভিস প্রিসলির ভীষণ ভক্ত। সিনেমা হলে কোন নতুন সিনেমা এলেই সেই সিনেমা দেখা চাই আজাদের। সঙ্গে সঙ্গী খালাতো ভাইয়েরা। আজাদের ছিলো উদার হাত। বন্ধু বান্ধবদের যেকোন বিপদ আপদে সবার আগেই এগিয়ে আজাদ।
১৯৬০ সালে আজাদ যখন ক্লাস সিক্সে সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়েন তখন তাঁর বাবা ইউনুস আহমেদ চৌধুরী দ্বিতীয় বিয়ে করলেন। আর এর ফলে তাঁর মা মোসাম্মাৎ সাফিয়া বেগম রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন।
উঠলেন পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের ৬১ বি.কে.দাস রোডের আজাদের খালা শোভনা বেগমের বাড়িতে। কিন্তু আজাদ থাকতেন তাঁদের ইস্কাটনের সুরম্য বাড়িতে। প্রায়ই আজাদ আসতেন মাকে দেখতে। ওখানে থাকার সময়েই সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করলেন আজাদ।
এর কিছুদিনের মধ্যে মারা গেল তাঁর খালা। যার ফলে তাঁর মা ফের গিয়ে উঠলো জুরাইন মাজারের পাশে এক বাসায়। তখনো আজাদ থাকতেন তাঁদের ইস্কাটনের বাড়িতে। সেখানে থাকা অবস্থাতেই আজাদ প্রাইভেটে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা পর ১৯৬৭ সালে চলে গিয়েছিলেন করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের উপর অনার্স করতে। এরই মধ্যে মাকে নিয়ে হাজারো পরিকল্পনা তাঁর।
আলাদাভাবে মা সহ থাকবেন আজাদ। তাঁর খালাতো ভাইবোনেরা মিলে একসঙ্গে বাসা নিবেন। ১৯৭০ সালে ইতিহাসের উপর অনার্স শেষ করে দেশে ফিরে এলেন আজাদ। সঙ্গে তাঁর বন্ধু আবুল বাশার।
আবুল বাশারের সঙ্গে আজাদের পরিচয় পাকিস্তানের করাচী থাকতেই। করাচীতে আজাদ পড়তেন ইতিহাসে আর বাশার পড়েছিলেন সাংবাদিকতায়। সে বছরই মাকে নিয়ে মগবাজারেই নতুন বাসা নিলেন আজাদ। সঙ্গে সঙ্গী খালাতো ভাইবোনেরা ও বন্ধু আবুল বাশার। ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। আর আবুল বাশার সাংবাদিকতা শুরু করলেন মর্নিং নিউজ পত্রিকায়। ১৯৭১ এর শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করলেন আজাদ।
.
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি দেখলেন তাঁর বন্ধুরা যোগ দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে, ফিরে এসেছে আগরতলা থেকে, ট্রেনিং নিয়ে। জুন মাসের শুরুতে অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল দিয়ে গে*রিলাদের অ*ভিযান শুরু। একে একে গে*রিলারা বেশ কয়েকটি অপা*রেশন করে ফেললো।

আজাদের বন্ধুরা আজাদকে বললো, 'চল আমাদের সাথে, অ*পারেশন করবি। তুই তো বন্দুক পি*স্তল চালাতে জানিস। তোর আব্বার তো ব*ন্দুক আছে, পি*স্তল আছে, তুই সেগুলো দিয়ে অনেকবার শি*কার করেছিস। তুই পারবি চল।'

আজাদ বললেন, ' এই জগতে মা ছাড়া আমার কেউ নেই, আর মায়েরও আমি ছাড়া আর কেউ নেই। মা যদি আমাকে অনুমতি দেয় তবেই আমি যু*দ্ধে যাবো।'
একদিন রাতে খেতে বসে মায়ের কাছে আজাদ অনুমতি চাইলে তাঁর মা সাফিয়া বেগম বললেন,'বাবা তুমি অবশ্যই যু*দ্ধে যাবে।' মায়ের অনুমতি পেয়ে আজাদ যু*দ্ধে গেলেন। একাধিক অ*পারেশনে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন অ*পারেশন তার মধ্যে অন্যতম।
২৯শে আগস্ট বাড়িতেই ছিলেন আজাদ। সেদিন আজাদের বাবার মামাতো ভাই সেকান্দার হায়াত খান ও এসেছে। আছে জুয়েল ও বন্ধু আবুল বাশার। সেদিন টিভি দেখে ঘরের বাকিরা ঘুমিয়ে গেলে তা*স নিয়ে বসলেন আজাদ, জুয়েল, কাজী কামাল এবং আবুল বাশার। ৩০শে আগস্ট দিবাগত রাত দুইটার দিকে পা*কিস্তানী হা*নাদার বা*হিনী অ*ভিযান চালায় আজাদদের মগবাজারের বাড়িতে।
সে রাতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন শহীদ আজাদের খালাতো ভাই গোলাম গাউসে আজম চঞ্চল। তিনি আমাকে বলেছিলেন, 'প্রতিদিনের মতো আমরা খেয়ে দেয়ে টিভি দেখে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। আজাদদা, কাজীদা, জুয়েল এবং বাশার ভাই তাস খেলছিলেন। রাত দুইটার দিকে পাকিস্তানী বা*হিনী রেইড করে আমাদের বাড়িতে। দরজা ভেঙে তারা আমাদেরও ঘুম থেকে তুললো।

এসময় তারা বহু খুঁজে উল্টাপাল্টা করে তল্লাশি চালিয়ে স্টোর রুমে ফসফরাস পেল, পেয়েছিলো একটি থ্রি টু পি*স্তল। পি*স্তল পেয়ে তারা আমাকে গা*লি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো 'এটি কি?' আমি বললাম 'আমি জানিনা।' তখন আমাকে ঘু*ষি মারলো। আমি তীব্র ব্যথায় বসে পড়লাম। তখন বাম পায়ের বু*টের আ*ঘাত করলে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। এরপর তারা আজাদদাকে খুঁজছিলো। মেজর সরফরাজ বলছিলো 'আজাদ কাহা হে? তুম আজাদ হে বলে আজাদদাকে ধরতেই আজাদদা বললেন, 'মাগফার উদ্দিন চৌধুরী। ওটাই তো তাঁর আসল নাম ছিলো। তখন মেজর সরফরাজ তুমি মিথ্যা বলছো। তুমিই আজাদ। আজাদ দাদাকে যখন পাকিস্তানী মেজর সরফরা ঘু*ষি মারলো তখন কাজী দাদা স্টে*নগান থাবা দিয়ে নিয়ে ধস্তাধ*স্তি শুরু করে ব্রা*শ ফা*য়ার করে পালিয়ে যায়। গু*লিবিদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন জায়েদদা টগরদা। এছাড়া এরপর আজাদদা, জুয়েলদা, বাশার ভাই, মনোয়ার ভাই ও সেকান্দর হায়াত খানকে আ*টক করে গাড়িতে তুলে ফেললো।'
এরপর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এমপি হোস্টেলের মি*লিটারি ট*র্চার সে*লে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আজাদের উপর চালানো হয়েছিলো চরম পৈ*শাচিক নি*র্যাতন।
৩১শে আগস্ট তাঁদের রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হলে আজাদের মা আর খালাতো ভাই চঞ্চল রমনা থা*নায় এসেছিলেন আজাদকে দেখতে। তাঁর সারা গায়ে নি*র্যাতনের চিত্র। মুখে ঘু*ষির চিহ্ন, কালশিটে দাগ গাল ফোলা চোখের কাছে কেটে গেছে, ঠোঁট ফেটে গেছে। মা চিনতে পারেননা তাঁর আদরের আজাদকে। মাকে পেয়ে আজাদ বলেন, 'কি করবো আম্মা, এরা তো খু*ব মা*রে। সবার নাম বলতে বলে।'
সাফিয়া বেগম বললেন, 'তুমি কি সবার নাম বলে দিয়েছো?'
আজাদ বললেন, 'না বলিনি। যদি আবার মারে! আর তো সহ্য করতে পারছিনা।'
সাফিয়া বেগম বললেন, 'ধৈর্যধারণ করো বাবা। মুখ বুজে স*হ্য করে থাকো।' তিনি একথা বলে বের হবেন এই মুহূর্তে আজাদ বললো, 'দুদিন ধরে তো ভাত খাই না। কালকে দিয়েছিলো খেতে পারি নাই।'
সাফিয়া বেগম বললেন, 'আগামীকাল তোমার জন্য ভাত নিয়ে আসবো বাবা।'
আজাদের মায়ের সঙ্গে পরদিন রমনা থানায় গিয়েছিলেন আজাদের খালাতো ভাই Golam Gausse Azam চঞ্চল ভাই। তিনি আমাকে বলেছিলেন, 'পরের দিন সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ। সেদিন সকাল বেলা আম্মা সহ মগবাজারের বাসা থেকে টিফিনকারীর পাঁচ বাটিতে করে মুরগির মাংস, মাছের চচ্চড়ি আর গরুর মাংস নিয়ে আমরা গেলাম রমনা থানায়। দুপুর দুইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও আজাদদার দেখা পেলাম না। এরপর গেলাম হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। আমার দুই ভাই জায়েদদা আর টগরদাকে দেখতে। আগের দিন যে আজাদদার সঙ্গে আম্মার আর আমার যে দেখা হলো সেটাই ছিলো শেষ দেখা। বাড়ি ফিরে আম্মা রাতে খেতে গিয়ে বললেন, 'আমার ছেলে ভাত খায়নি, আমিও ভাত খাবোনা। আমার ছেলে যেদিন ফিরে আসবে সেদিন আমি ভাত খাবো।'
ধারনা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ক্র্যা*কপ্লাটুনের অন্য গে*রিলাদের সঙ্গে আজাদকেও হ*ত্যা করেছিলো পা*কিস্তানী হা*নাদার বা*হিনী। আজাদ নিখোঁজ হওয়ার ১৪ বছর পর মারা যান সাফিয়া খাতুন।
.
স্বাধীন দেশে মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদের স্বপ্ন ছিলো রাষ্ট্রদূত হয়ে নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি ঠিক, কিন্তু গোটা বিশ্বকে তো জানান দিয়েছিলেন একটি দেশের জন্য স্বাধীন মাতৃভূমির জন্য কতোখানি আত্মত্যাগ করা যায়।
আজ শহীদ মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ বীর বিক্রমের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে আজ আজাদ ৮০ বছরে পা দিতেন। কিন্তু দেশের জন্য আত্মত্যাগে হারিয়ে গেলেন মাত্র ২৫ বছর বয়সেই। প্রিয় আজাদ আপনি থাকবেন অণুপ্রেরণায় আমাদের মাঝে অনন্তকাল ধরে। 🙏💕

© আহমাদ ইশতিয়াক

02/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস  #গণহত্যা'৭১  ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১। বধ্যভূমি থেকে বুদ্ধিজীবিদের মৃতদেহ সৎকারের জন্য নেয়া হচ...
02/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস
#গণহত্যা'৭১


২০ ডিসেম্বর ১৯৭১। বধ্যভূমি থেকে বুদ্ধিজীবিদের মৃতদেহ সৎকারের জন্য নেয়া হচ্ছে।

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস    #গণহত্যা'৭১ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী দরজা খুলে হাসিমুখে বললেন- কেমন আছ বাবা ?(তিনি ধরে...
01/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস

#গণহত্যা'৭১

ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী দরজা খুলে হাসিমুখে বললেন

- কেমন আছ বাবা ?
(তিনি ধরেই নিলেন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটি তার ছাত্র)

কলিমউল্লাহ বলল
- স্যার ভালো আছি । আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন স্যার ?

(তিনি তাকে চিনতে পারেন নি । চিনতে পারার কথাও না) তারপরও হাসিমুখে বললেন,

- চিনতে পারবনা কেন? চিনেছি ।

(মিথ্যা বলার কারণ হলো তিনি অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, যতবার কোনো ছাত্রকে দেখে তিনি না চেনার কথা বলেছেন, ততবারই তারা ভয়ঙ্কর মনে কষ্ট পেয়েছে । এক ছাত্র তো কেঁদেই ফেলেছিল)

ধীরেন্দ্রনাথ রায় বললেন
- বাবা, তোমার নামটা যেন কী ?

- কলিমউল্লাহ ।

- হ্যাঁ, তাই তো । কলিমউল্লাহ । এখন পরিস্কার মনে পড়েছে । তুমি কি খাওয়াদাওয়া করেছ ?

- জি না স্যার ।

- এসো আমার সঙ্গে চারটা ভাত খাও । আয়োজন খুব সামান্য । ভাত, ডিম ভর্তা । ঘরে আরো ডিম আছে । তোমাকে ডিম ভেজে দেব। ঘরে এক কৌটা ভালো গাওয়া ঘি ছিল, কৌটাটা খুঁজে পাচ্ছি না

কলিমউল্লাহ বলল

- এখন খেতে পারব না । আপনার কাছে আমি একটা অতি জরুরী কাজে এসেছি ।

- জরুরী কাজটা কী ?

- মিলিটারির এক কর্নেল আপনার সাথে কথা বলতে চান ।

ধীরেন্দ্রনাথ রায় বিস্মিত হয়ে বললেন

- আমার সাথে মিলিটারির কী কথা ?

- আমি জানি না । তবে স্যার আপনার ভয়ের কিছু নেই । আমি সঙ্গে আছি ।

ধীরেন্দ্রনাথ রায় বললেন

- তুমি আমার কোন ব্যাচের ছাত্র বলো তো ?

- কথা বলে সময় নষ্ট করতে পারব না । মিটিংটা শেষ করে আসি, তারপর গল্প করব ।

- দুইটা মিনিট অপেক্ষা করো, ভাতটা খেয়ে নিই । আমি খুব ক্ষুধার্ত । সকালে নাশতা করিনি।

- ভাত খাবার জন্যে অপেক্ষা করার সময় নাই স্যার।

- তাহলে দাঁড়াও, পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে আসি । আমার সঙ্গে কি কথা বুঝলাম না । সে আমার ছাত্র না তো? করাচি ইউনাভার্সিটিতে আমি দু'বছর মাষ্টারি করেছি । প্রফেসর সালাম সাহেব সেখানে আমার কলিগ ছিলেন।

কলিমউল্লাহ বলল

- আপনার ছাত্র হবার সম্ভাবনা আছে । কর্নেল সাহেব যেভাবে বললেন "স্যারকে একটু নিয়ে আসো"... তাতে মনে হচ্ছে উনি আপনার ছাত্র ।

ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী গাড়িতে উঠে দেখলেন.. গাড়ি ভর্তি মানুষ । তারা সবাই চিন্তায় অস্থির । ধীরেন্দ্রনাথ রায় তাদের দিকে তাকিয়ে আন্তরিক ভঙ্গিতে হাসলেন । ভুলে তিনি চশমা ফেলে এসেছেন বলে তাদের কাউকে চিনতে পারলেন না । চোখে চশমা থাকলে এদের অনেককেই তিনি চিনতেন । বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা সেই গাড়িতে বসেছিলেন । তাদের নিয়ে যাওয়া হবে বধ্যভূমিতে...

জোছনা ও জননীর গল্প
-হুমায়ূন আহমেদ।

Address

Dhaka

Telephone

+8801716813947

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মো. শওকত আলীর কথা ও কণ্ঠ posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to মো. শওকত আলীর কথা ও কণ্ঠ:

Share