04/02/2024
ধনী হওয়ার ধুম
আমি সবার থেকে আলাদা রাস্তায় হাঁটতে চাচ্ছি মা।আব্বাকে তুমি বুঝিয়ে বলবে।
আমি তোমাকে যেভাবে বুঝিয়ে বলতে পারি, আব্বার সামনে গেলে সেভাবে বোঝার ভাষা পাই না। আব্বার সামনে গেলে...;
কি? সামনে গেলে কি, কথা বলতে ভয় পাইস ?
ভয় পাই না মা। লজ্জা পাই। আমাকে তো অনেক টাকা খরচ করে পড়ালেখা করালো। সরকারি চাকরি তো জোগাড় করতে পারলাম না তাই বেসরকারী চাকরি করছি।
ব্যাংকের চাকরি যেটা পেয়েছিলাম ,সুদের টাকার চাকরি আমি করতে পারবো না মা।ওই চাকরি করে মনে শান্তি পাইনা, তাই কোম্পানিতে চাকরি করছি।
আব্বার সামনে যেতে খুবই লজ্জা লাগে। আব্বাকে ছোট বেলায় বলছিলাম বড় হয়ে যখন চাকরি করবো তখন আপনাকে কোন কাজ করতে দিবো না। কিন্তু সেই কথা রাখতে পারছি কোথায় ?
আমার পড়ালেখার জন্য যে জমি বন্ধক রাখছে, এই বেতনে সেই জমি বের করতেই তো দুই বছরের সব জমা টাকা দিতে হচ্ছে।
আমার থেকে ছোট ছোট ছেলেরা নিজের টাকায় বড় বড় দালান তুলতেছে, নিজের টাকায় গাড়ি কিনে সেই গাড়িতে চড়ে বেড়াচ্ছে এগুলো দেখে আব্বা আফসোস করে তোমাকে কিছু বলে না মা?
হুম বলে,
সেদিন রাতে বললো ,
ইন্তিহাদের জন্য আমার খুব কষ্ট হয় । ছেলেটাকে এতো কষ্ট করে পড়ালেখা করালাম যাতে সে সুখে থাকে। ভালো একটা চাকরি পায়।থাকার জন্য একটা সুন্দর করে পাকা ঘর করে আর একটা মোটর সাইকেল কিনে সেটাতে চড়ে বেড়ায়।
কিন্তু ছেলেটা আমার ভালো চাকরি টা ছেড়ে দিয়ে এখন কোন কষ্টের কাজ করতেছে।
এতো কষ্টের কাজেই যদি করা লাগে তাহলে জমি বন্ধক রেখে পড়ালেখা করালাম কেন?
পাড়ার কমবয়সী ছেলেরা বাড়িতে থেকেই মোবাইলের মাধ্যমে ওর থেকে কম পড়াশোনা করে ও অনেক টাকা বেতন পাচ্ছে, পাকা বাড়ি করতেছে,বড় বড় মটর সাইকেলে চড়ে বেড়াচ্ছে আর আমার ছেলেটা বাইরে থেকে কতো কষ্ট করে তবুও কিছু করতে পারছে না।।
চিন্তা করো না মা ,এই বলে ইন্তিহাদ তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো আব্বাকে তুমি বুঝিয়ে বললে আব্বা আর আমার কথা ভেবে কষ্ট পাবে না মা।
আল্লাহর রহমতে আমি খুবই ভালো আছি । তোমাকে তো বললাম আমি সবার থেকে আলাদা রাস্তায় হাঁটতে চাই।
মনে করো ,এই পৃথিবীতে শুধু মাত্র দুটো পথ রয়েছে একটি হচ্ছে সরল পথ আর অন্যটি হচ্ছে বক্র পথ।বক্র পথের কেন্দ্রে কেন্দ্রে রয়েছে সাময়িক শক্তি, সম্পদ, ঐশ্বর্য, মেধা আর আভিজাত্য ।বক্র পথে এসে সাময়িক শক্তি, সম্পদ, ঐশ্বর্য, মেধা আর আভিজাত্যের ভিড়ে আমরা ভুলে যাই আল্লাহর বিধান । পরকালকে ভুলে গিয়ে আমরা দুনিয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দুনিয়ার মােহ আমাদের আন্টেপষ্টে জড়িয়ে ধরে। আমরা আমাদের কামনা কে বানিয়ে ফেলি আমাদের নিয়ন্ত্রক। আর ধর্ম? সেটা হয়ে পড়ে নিতান্তই আনুষ্ঠানিকতার বিষয়।
আর পৃথিবীর দ্বিতীয় পথটি হচ্ছে সরল পথ।
সিরাতুল মুসতাকিম অর্থ হলাে সরল পথ। । মহান রাবুবল আলামিন আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এই পথের পথিক হওয়ার জন্যই। ইসলামে, এটিকে সঠিক পথ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, বিভিন্ন মাধ্যমে এটিকে "মধ্য পথ" হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে এবং এটি তা যা আল্লাহকে খুশি করে।
আমি এই সরল পথ ধরেই পৃথিবীর শেষ গন্তব্য পর্যন্ত পাড়ি দিয়ে পরকালে মুমিনদের কাতারে দাঁড়াতে চাই মা। তুমি আব্বাকে বলিও আমি গাড়ি বাড়ির আশা করি না। আমি আশা করি আল্লাহ যেন আমাকে ভালবাসেন। তুমি কি জানো মা এই পৃথিবীর বাড়ি গাড়ির চেয়ে আল্লাহর ভালোবাসা কতটা বিস্তৃত আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন তিনি জিব্রাঈল (আঃ)-কে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক বান্দাহকে ভালবাসেন, কাজেই তুমিও তাকে ভালবাস। তখন জিব্রাঈল (আঃ)-ও তাকে ভালবাসেন এবং জিব্রাঈল (আঃ) আকাশের অধিবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাহকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরা তাকে ভালবাস। তখন আকাশের অধিবাসী তাকে ভালবাসতে থাকে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে সম্মানিত করার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
আব্বা আর তোমার দোয়া চাই। আমি সৎ পথে উপার্জন করে মনে শান্তি নিয়ে হালাল উপার্জন করে এই জীবনটা কাটাতে চাই। এই পৃথিবীর জীবন তো ক্ষনস্থায়ী জীবন।
পৃথিবীতে উপার্জনের রাস্তা মূলত দুটি একটি হচ্ছে সৎ পথে উপার্জন অন্যটি হচ্ছে অসৎ পথে উপার্জন।
ইবাদতের সঙ্গে আয়-উপার্জনের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। সঠিক পথে অর্থ উপার্জনের তাগিদ ও নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কারণ বৈধ উপায়ের আয়-উপার্জন ছাড়া মানুষের কোনো ভালো কাজও মহান আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
হে মানবমণ্ডলী! পৃথিবীতে যা আছে তা থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী গ্রহণ কর এবং শয়তানের অনুসরণ কর না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৬৮)
মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী গ্রহণ করা। কোনো বস্তু সামগ্রী হালাল ও পবিত্র হওয়ার জন্য আয়-উপার্জন বৈধ হতে হবে। হারাম বা অবৈধ উপায়ে আয়-উপর্জন করে তা দিয়ে হালাল ও পবিত্র সামগ্রী কেনা হলেও তা ওই ব্যক্তির জন্য হালাল বা পবিত্র নয়।
কোনো বস্তু-সামগ্রী বৈধ, হালাল বা পবিত্র হওয়ার জন্য পূর্ব শর্তই হচ্ছে তা সঠিক উপায়ে আয়-উপার্জন করা। প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে হালাল ও বৈধ পন্থায় আয়-উপার্জন করা।
মানুষ শয়তানের ধোকা ও প্ররোচনার শিকার হয়ে আয়-উপার্জন বাড়াতে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করছে যা আমাদের গ্রামের প্রায় সব ছেলেদের মধ্যে লক্ষ্য করছি।তারা সুদ, মোবাইলে জুয়া,কেসিনো থাই ও জালভিসা তৈরীর কারিগর হয়ে গেছে। অসৎ পথে ধনী হওয়ার ধুম পড়েছে।
মনে রাখতে হবে জীবনভর নামাজ রোজা হজ যাকাত তথা যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থেকে হালাল আয়-উপার্জন না করলে তার কোনো ইবাদতই কবুল হবে না। কুরআনের বিধান অনুযায়ী ইসলামি অনুশাসন মেনে চলে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় হালাল জীবিকা উপার্জনে আত্মনিয়োগ করাও অনেক বড় ইবাদত। কেননা এ কাজেই বান্দার সব ইবাদত-বন্দেগি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়।
সঠিক উপায়ে উপার্জিত অর্থ দ্বারা জীবন ধারণের ফলে বৈধ জীবনাচারের মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও সুখ-শান্তি সুনিশ্চিত হয়।
যারা হালালের উপর স্থির থাকতে পারে না, হারাম বর্জন করতে পারে না তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। হাদিসে পাকে হারাম সম্পদ উপার্জন ও এর ব্যবহারে বরকত উঠিয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাদের জন্যই জাহান্নাম প্রস্তুত। হাদিসে এসেছে-‘কোনো ব্যক্তি যদি উপার্জিত হারাম সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে তবু তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং ওই সম্পদ থেকে বরকত উঠিয়ে নেয়া হয়। যদি সে ওই সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখে তবে (সে সম্পদ) তার জন্য জাহান্নামের রাস্তাকে সহজ করে দেয়। (মিশকাত)
এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, যারা অন্যায় পথে উপার্জন করে তার কিছু অংশ এ অন্যায় কাজ থেকে বাঁচার আশায় আল্লাহর পথে ব্যয় করে। তাদের এ ব্যয় অনর্থক। যা কোনো কাজে আসবে না।
কারণ হারাম তা যে কোনো বিবেচনায় হারাম এবং তা শয়তানের অনুসরণের শামিল। আল্লাহ তাআলা এসব থেকে দুনিয়ার সকল মুমিনকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ পাক আমাকে বৈধ পথে উপার্জন করার তাওফিক দান করুন। হালাল উপার্জিত অর্থ তাঁর পথে ব্যয় করার তাওফিক দান করুন। জীবিকার উৎস হোক হালাল উপার্জন।
মায়ের সাথে সাথে পাশের ঘর থেকে বাবাও জোরে বলে উঠলেন আমিন।
আমিন বলেই ইন্তিহাদের বাবা পাশের ঘর থেকে বের হয়ে ইন্তিহাদের কাছে এসে অশ্রু সিক্ত চোখ মুছতে মুছতে ইন্তিহাদকে জড়িয়ে ধরে বললেন আল্লাহ পাক তোকে তার রাস্তায় কবুল করুক। আল্লাহ পাক যেন তোকে আমার নেককার সন্তান হিসেবে কবুল করে নেয়।এই ক্ষনস্থায়ী পৃথিবীতে আমি বাড়ি গাড়ি চাই না সরল পথ সিরাতুল মোস্তাকিম এর শেষ গন্তব্য পৌঁছে পুরুষ্কার হিসেবে আল্লাহ পাক পরকালে যেন তোকে জান্নাত দান করেন।
ছুম্মা আমিন।
লেখা -ইন্তেজামুল হক রানা
তারিখ -০৪/০২/২০২৪ ইং