18/09/2025
একজন নাগরিক হিসেবে জানা প্রয়োজন পি আর নির্বাচন কি?
পি আর (PR) নির্বাচন বলতে বোঝানো হয় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation) নির্বাচন পদ্ধতিকে। এটি এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট পায়, সেই অনুপাতে তারা আইনসভায় আসন পায়।
এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো, জনগণের রাজনৈতিক মতামতের প্রতিফলন নিশ্চিত করা এবং প্রচলিত 'ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট' (First-Past-The-Post) পদ্ধতির ত্রুটিগুলো দূর করা। প্রচলিত পদ্ধতিতে যে প্রার্থী একটি নির্দিষ্ট আসনে সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়ী হন। এতে অনেক সময় দেখা যায়, কোনো দল মোট ভোটের কম অংশ পেলেও, বেশি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।
পি আর (PR) পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
আনুপাতিকতা: এই ব্যবস্থায় একটি দল যদি মোট ভোটের ৩০% পায়, তবে তারা আইনসভার মোট আসনের প্রায় ৩০% আসন লাভ করবে।
বহু-সদস্যের আসন: প্রায়শই এই পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনী এলাকা থেকে একাধিক সদস্য নির্বাচিত হন।
ছোট দলের প্রতিনিধিত্ব: এটি ছোট দল ও সংখ্যালঘু মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে, কারণ তাদের অল্প সংখ্যক ভোটও আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
পি আর পদ্ধতির বিভিন্ন রূপ রয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো একক হস্তান্তরযোগ্য ভোট (Single Transferable Vote - STV), যা টি আর (TR) নির্বাচন নামেও পরিচিত। অন্য পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আছে দলীয় তালিকা পদ্ধতি (Party-list Proportional Representation) যেখানে ভোটাররা সরাসরি কোনো প্রার্থীকে নয়, বরং একটি রাজনৈতিক দলকে ভোট দেন।
পি আর পদ্ধতিতে ভোট হলে লাভ -ক্ষতি
PR পদ্ধতির ভোটে লাভ এবং ক্ষতি দুটোই আছে। নিচে তা আলোচনা করা হলো:
লাভ (Pros)
সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব: এই পদ্ধতিতে ছোট দল বা সংখ্যালঘুদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার সুযোগ বাড়ে। কারণ, তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী তারা আসন পায়।
ভোট নষ্ট কম হয়: এই ব্যবস্থায় প্রায় প্রতিটি ভোটই কোনো না কোনো প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে সাহায্য করে। এতে কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রদত্ত ভোট নষ্ট হয় না, যা সংখ্যাগরিষ্ঠের জয়ের পদ্ধতিতে (FPTP) প্রায়ই ঘটে।
গণতান্ত্রিক ভারসাম্য: PR পদ্ধতি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে সাহায্য করে। একক কোনো দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায় জোট সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি হয়, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে পারে।
রাজনৈতিক বিভাজন কমে: এই পদ্ধতিতে ভোটাররা দলের নীতি এবং আদর্শের ভিত্তিতে ভোট দিতে উৎসাহিত হয়, কারণ তাদের পছন্দের দল ছোট হলেও আসন পাবে। এতে বিভাজনমূলক রাজনীতি কিছুটা কমে আসে।
বিকল্প প্রার্থীর সুযোগ: এই পদ্ধতিতে নতুন বা ছোট দলগুলো সহজে সংসদে জায়গা করে নিতে পারে, যা রাজনৈতিক ক্ষেত্রকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
ক্ষতি (Cons)
অস্থির সরকার: PR পদ্ধতিতে প্রায়শই কোনো দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। এর ফলে জোট সরকার গঠিত হয়, যা অনেক সময় ভঙ্গুর বা দুর্বল হতে পারে। এতে সরকারের নীতি নির্ধারণে স্থায়িত্বের অভাব দেখা যায়।
ভোটার-প্রতিনিধি সম্পর্ক দুর্বল: এই ব্যবস্থায় ভোটাররা সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীকে নির্বাচিত করেন না, বরং একটি দলের তালিকা থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। এতে একজন ভোটার তার এলাকার প্রতিনিধির কাছে সরাসরি জবাবদিহি চাইতে পারেন না।
নীতি নির্ধারণে জটিলতা: জোট সরকারে বিভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ থাকে। এতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ নীতি বা আইন পাস করাতে অনেক সময় লাগে এবং আপস করতে হয়, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।
চরমপন্থী দলের উত্থান: PR পদ্ধতিতে ছোট দলগুলোও আসন পেতে পারে। এর ফলে চরমপন্থী বা বিভাজন সৃষ্টিকারী ছোট দলগুলোও সংসদে প্রবেশ করতে পারে, যা সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে।
ভোটের ফল অস্পষ্ট: অনেক সময় PR পদ্ধতির গণনা প্রক্রিয়া বেশ জটিল হতে পারে, যা সাধারণ ভোটারের কাছে সহজে বোধগম্য হয় না। এতে ভোটের ফলাফল নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হতে পারে।