22/04/2025
বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে প্রচারিত ভুল ধারণা ও বাস্তবতা
বর্তমানে বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা চলছে। মূলধারার গণমাধ্যম এবং সরকার প্রায়শই এটিকে অর্থপাচার, প্রতারণা, এবং অবৈধ কার্যকলাপের উৎস হিসেবে তুলে ধরছে। কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই এমন? নাকি এটি একটি পরিকল্পিত প্রচারণা? আসুন, প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোকে বাস্তব যুক্তির মাধ্যমে খণ্ডন করা যাক।
১. "ক্রিপ্টো মানেই অর্থপাচার" - এটি সত্য নয়
প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থায়ও প্রচুর অর্থপাচার হয়, যা কেবলমাত্র ব্যাংক ও অফশোর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। উল্টো, ব্লকচেইন প্রযুক্তি **স্বচ্ছ ও ট্রেসযোগ্য**, যেখানে প্রতিটি লেনদেন পাবলিকভাবে দেখা যায়। অর্থাৎ, ক্রিপ্টো ব্যবহার করলে বরং অপরাধীদের শনাক্ত করা সহজ হয়।
ফ্যাক্ট:Chainalysis-এর গবেষণা অনুযায়ী, গ্লোবাল ক্রিপ্টো লেনদেনের মাত্র ০.২৪% অবৈধ কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত, যা প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেমের তুলনায় অনেক কম।
২. "ক্রিপ্টো স্ক্যাম এবং প্রতারণার হাতিয়ার" - এটি একপাক্ষিক প্রচারণা
হ্যাঁ, ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে কিছু স্ক্যাম হয়, তবে তা নতুন প্রযুক্তির জন্য অস্বাভাবিক নয়। ইন্টারনেটের প্রথম দিকেও প্রচুর স্ক্যাম ছিল, কিন্তু এখন এটি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ফ্যাক্ট:ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিনান্স সেবাগুলোতেও (যেমন: বিকাশ, নগদ) প্রতারণার ঘটনা অহরহ ঘটে, কিন্তু আমরা কি ব্যাংক বা বিকাশকে নিষিদ্ধ করেছি?
৩. "ক্রিপ্টো সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তাই এটি খারাপ" - এটি ভ্রান্ত ধারণা
বাংলাদেশ সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বলে এটি খারাপ বলে প্রচার করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, **ডিসেন্ট্রালাইজড ফাইন্যান্স (DeFi) সাধারণ জনগণের জন্য স্বনির্ভরতার সুযোগ তৈরি করে**।
ফ্যাক্ট:ভারত প্রথমে ক্রিপ্টো নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল, কিন্তু পরে ৩০% কর বসিয়ে এটি বৈধ করেছে। ফলে, ভারতীয় সরকার এখন এখান থেকে আয় করছে। বাংলাদেশও একইভাবে নীতিমালা তৈরি করে সুবিধা নিতে পারে।
৪."ক্রিপ্টো অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে" - বাস্তবে এটি উন্নতি ঘটাতে পারে
বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে বাংলাদেশ সংকটের মুখে। অথচ, ক্রিপ্টো অ্যাডপশন হলে তরুণরা আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং, এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে ডলার দেশে আনতে পারবে।
ফ্যাক্ট: ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, এবং ভিয়েতনাম ক্রিপ্টো গ্রহণ করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়েছে।
৫."IMF এবং বিশ্বব্যাংকের চাপে বাংলাদেশ ক্রিপ্টোকে নিষিদ্ধ রেখেছে"
যদিও সরকার সরাসরি এটি স্বীকার করে না, কিন্তু স্পষ্ট যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ডলারের ওপর নির্ভরশীল রাখতে চায়।
ফ্যাক্ট:সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, এবং মালয়েশিয়া ক্রিপ্টো-বান্ধব নীতিমালা তৈরি করে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। বাংলাদেশও চাইলে এটি করতে পারে।
#উপসংহার
যতদিন বাংলাদেশ সরকার ও গণমাধ্যম একপাক্ষিকভাবে ক্রিপ্টোকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করবে, ততদিন সাধারণ জনগণ প্রকৃত সত্য থেকে বঞ্চিত হবে। বরং সরকারের উচিত সুশৃঙ্খল নীতিমালা তৈরি করা, যাতে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা আন্তর্জাতিক ক্রিপ্টো ইকোসিস্টেমে অংশ নিতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে।
প্রশ্ন হলো, সরকার সত্যিই দেশীয় অর্থনীতির উন্নতি চায়, নাকি কেবলমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়?🤔