24/07/2025
জুয়েনা মিতুলের আহ্লাদের ব্যাগ এবার রফতানি হচ্ছে স্পেনে
রংপুর ব্যুরো
একেকটি ব্যাগ যেন একেকটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাহক। এমন দেশীয় ঐতিহ্য ও লোকজ সংস্কৃতি নিয়ে গড়ে উঠছে উদ্যোক্তা জুয়েনা ফেরদৌস মিতুলের শৈল্পিক আহ্লাদ। কারুশিল্প প্রতিষ্ঠান ‘আহ্লাদ’ এর লক্ষ ও উদ্দেশ্য পাটসহ বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব উপকরণ দিয়ে পণ্য তৈরী ও বাজারজাত করা। কারুশিল্প প্রতিষ্ঠান ‘আহ্লাদ’ এর পণ্য দেশের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আহ্লাদ এর ব্যাগ ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ড, জাপান, আমেরিকা ও লন্ডনে ব্যাগ রপ্তানি করেছেন। এ বছর স্পেনে বড় পরিসরে ১০ হাজার ব্যাগ রপ্তানির চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। এর আগে জার্মান এ্যাম্বাসি, ওয়াল্ড ব্যাংক, দৃক এর ব্যাগ সরবারহ করেন তিনি।
কারুশিল্প প্রতিষ্ঠান ‘আহ্লাদ’এর পরিচালক জুয়েনা ফেরদৌস এর কর্মজীবন শুরু হয় চলচ্চিত্রের কস্টিউম অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদের মুক্তির কথা, নারীর কথা, মাটির ময়না ও অন্তর্যাত্রায় কাজ করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন ‘গাও’নামের একটি প্রডাকশন হাউজে। ২০১৭ সালে রাজধানী ঢাকা থেকে সব ছেড়ে পারিবারিক কারনে চলে আসেন জন্মভিটা রংপুরে। দুই সন্তান নিয়ে খানিকটা হোচঁট খান তিনি। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় এরপর সফটওয়ার কোম্পানীতে চাকুরী শুরু করেন।
করোনাকালীন সময়ে সেই চাকুরীও চলে যায় তার। আবারও জীবনে ছন্দপতন । হঠাৎ একদিন সুইডেন প্রবাসী বন্ধুর ফোন। তার কিছু পরিবেশবান্ধব ব্যাগ প্রয়োজন। পরে প্রবাসী বন্ধুর ব্যবসায়িক প্রয়োজনে পরিবেশ বান্ধব ব্যাগের উপাদান খুজতে গিয়ে পাট পণ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। প্রশিক্ষণ নেন ও বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করে ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা বাড়ান ও পরবর্তী অধ্যায়ের প্রস্তুতি নেন তিনি। নিজস্ব ডিজাইনে প্রথমে অন্য কারখানায় ব্যাগ তৈরীর কাজ শুরু করেন তিনি। অন্য কারখানায় নিজের মনের মতো ও গুণগত মান নিয়ে সংশয় থাকায় একসময় প্রতিষ্ঠা করেন কারুশিল্প প্রতিষ্ঠান “আহ্লাদ”। একটি মেশিন ও একজন কর্মী নিয়ে প্রথম পথচলা শুরু তার।
রংপুর নগরীর কেরানীপাড়ায় অবস্থিত কারুশিল্প প্রতিষ্ঠান আহ্লাদ। প্রতিষ্ঠানটির পণ্য যেমন- বাহারি ব্যাগ, শোপিস, ওয়ালমেট, খেলনা, আল্পনা, পাপোশ, শিকা, দড়ি তৈরি হয়। পণ্যগুলো তৈরি করে তিনি দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরারা চেষ্টা করছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করা কর্মীদের প্রায় ৯০ শতাংশই নারীকর্মী। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত ১২ থেকে ১৫ জন নারী কাজ করেন। এছাড়াও রংপুর নগরীর ৪টি গ্রামে নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করনে আরও ৮০ নারী কর্মী।
কারুশিল্প প্রতিষ্ঠান ‘আহ্লাদ’ এর ব্যাগ সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, মিলিনিয়াম ষ্টার স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজে সরবরাহ করেন। পরিষদের সকল অনুষ্ঠান ও সকল প্রকল্পে তিনি ব্যাগ সরবরাহ করে থাকেন। চাহিদা অনুযায়ী এই ব্যাগ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ব্যাগ সরবরাহ করছেন তিনি। সৌভাগ্যবশত কারখানা শুরুর দিকেই জার্মান কারচারাল সেন্টারের একটি অনুষ্ঠানের জন্য ১৫০০ ব্যাগের অর্ডার পান তিনি।
জুয়েনা ফেরদৌস মিতুল বলেন, একটা সৃষ্টি একটা জার্নি, এটাই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি আরো জানান, এই ব্যগ তৈরীর লক্ষ উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা যখন একটা ব্যাগ বহন করি, সেই ব্যাগের সাথে যেন আমরা বহন করি আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। সেই চিন্তা থেকেই ব্যাগের ডিজাইন করা। ডিজাইনগুলো বেশ সাড়াও ফেলছে ইতিমধ্যে।
মিতুল জানান, সময়ের সাথে মানুষের চিন্তার প্রসার যেমন ঘটেছে, তেমনি আমাদের ব্যবহৃত পণ্য বহণকারী ব্যাগেও রুচিশীল চিন্তা এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। মানুষের হাতে হাতে পণ্য বহণকারী ব্যাগের মধ্যে দেশের ইতিহাস ঐহিত্য ফুটে উঠলে মন্দ লাগে না বরং ভালোই লাগে।
আহ্লাদ নিয়ে তিনি জানান, অল্প সময়ে আহ্লাদের ব্যাগ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। ধীরে ধীরে বানিজ্য ভিত্তিক পরিসর বাড়ছে। দেশের বাইরে ব্যাগ রফতানি হচ্ছে এটাই আশার কথা ও বড় স্বার্থকতা। এর পরিসর গুণ ও মানের সাথে বাড়ুক এমন লক্ষ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে কারুশিল্প প্রতিষ্ঠান ‘আহ্লাদ’ এর জুয়েনা ফেরদৌস মিতুল ইতিমধ্যে কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ পিকেএসএফ এর দুটি জাতীয় পুরুস্কার পেয়েছেন এবং রংপুর সদর উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে হয়েছেন জয়ীতা।