07/09/2025
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শ্রমজীবীদের অবদান ও মূল্যায়নের আহ্বান
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা, তাদের আত্মত্যাগ এবং প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সঠিক মূল্যায়ন করা অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও শ্রমিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই ঘটনার মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষের অবদান, ত্যাগ ও অর্জনের সঠিক হিসাব রাখতে হবে। ইতিহাসে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যা শুধু সময়কে নয়, পুরো জাতির চেতনাকে প্রভাবিত করে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘জুলাই অভ্যুত্থান ও শ্রমজীবীদের হিস্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শ্রমিক অধিকার আন্দোলন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মাহা মির্জা আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান এই অঞ্চলের এক যুগান্তকারী ঘটনা। দীর্ঘ ১৫ বছরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল এই অভ্যুত্থানে। তিনি মনে করেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয় না, যদিও ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে সবসময় আশানুরূপ হয় না।
সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হক ও সাংবাদিক রঞ্জন দে।
আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শ্রমিকদের আত্মত্যাগ উপেক্ষা করছে এবং পুরনো শোষণমূলক ব্যবস্থা বজায় রেখে শোষণের ক্ষেত্র বাড়াচ্ছে। যদিও শ্রমিকরা রাজনৈতিক অর্জনের অংশীদার হয়েছেন, কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দাবি অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
সভাপতি অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, অভ্যুত্থানের পর শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারের কাছে ন্যায়বিচার, ক্ষতিপূরণ, মামলা প্রত্যাহার, বকেয়া বেতন পরিশোধ, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, বন্ধ কলকারখানা চালু ও গ্রামীণ রেশনিংসহ বিভিন্ন দাবি তোলে। কিন্তু সরকার দাবিগুলো বাস্তবায়নের বদলে পুরনো রীতি অনুযায়ী দমননীতি অব্যাহত রাখছে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত তাহির জামান প্রিয়’র বাবা মোস্তফা জামান, শহীদ মোসলেম উদ্দিন মিলনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার, শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের মা ময়না বেগম, শহীদ মেরাজুল ইসলামের মা আম্বিয়া খাতুন, সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী ডলার, শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সদস্য সবুজ রায়, রেদোয়ান ফেরদৌস, কৃষক সংগঠক আব্দুস সাত্তার এবং শিক্ষার্থী যুগেশ ত্রিপুরা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বীথি দাস নন্দিনী এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আহসান আহমেদ।
আলোচকরা জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য দাবি পূরণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি, শ্রমিক ও কর্মচারীদের শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
#জুলাইগণঅভ্যুত্থান #শ্রমিকআন্দোলন #রংপুরশিল্পকলা #শ্রমিকঅধিকার #সাংস্কৃতিকঐক্য