
04/06/2025
the unsolved paradox of love
একটি নতুন শুরুর গল্প
অর্ণবের জীবনটা ছিল একটা খোলা বইয়ের মতো—প্রতিটি পাতায় ছিল ভালোবাসার গল্প, কিন্তু শেষ পাতাগুলো কষ্ট আর হতাশায় ভরা। সে ছিল একজন তরুণ, যার হৃদয়ে ছিল স্বপ্ন আর ভালোবাসার অফুরন্ত ঝর্ণা। তার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছিল মাত্র কয়েক মাস আগে, কিন্তু তার মনের ভেতরটা যেন একটা ঝড়ের মধ্যে আটকে ছিল।অর্ণবের প্রথম ভালোবাসা ছিল তিথি। তাকে সে "বউ" বলে ডাকত। তিথির হাসি, তার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো অর্ণবের কাছে ছিল একটা স্বপ্নের মতো।
কিন্তু তিথি একদিন হঠাৎ চলে গেল। কোনো কারণ ছাড়াই, কোনো বিদায় ছাড়াই। অর্ণব ভেবেছিল, হয়তো এটা তার ভাগ্য। সে নিজেকে সামলে নিয়ে মনের মধ্যে একটা নতুন আশা জাগালো—যে কেউ একজন আসবে, যে তার ভালোবাসার মূল্য বুঝবে।তারপর এল মাহি। অর্ণব তাকে "মহারানী" বলে ডাকত। তার মনে হতো, মাহির মধ্যে সে তার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন ফিরে পাবে। সে তার সবটুকু দিয়ে ভালোবাসল, তাকে খুশি করার জন্য নিজের সবকিছু উৎসর্গ করল। কিন্তু মাহি একদিন বলল, “অর্ণব, তুমি ভালো মানুষ, কিন্তু তোমাকে দেখে আমার মনে কোনো অনুভূতি জাগে না। তুমি যদি পৃথিবীর শেষ পুরুষ হও, তবুও আমি তোমাকে বেছে নিতাম না
” এই কথাগুলো অর্ণবের হৃদয়ে ছুরির মতো আঘাত করল। সে নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগল, “আমার মধ্যে কী নেই? আমি কি কখনো কারো ভালোবাসার যোগ্য হব না?”দিনগুলো কাটতে লাগল। অর্ণবের মনের ভেতর ভালোবাসার ঝর্ণা যেন শুকিয়ে গেল। সে আর কাউকে ভালোবাসতে পারছিল না। তার মনে হতো, হয়তো সে আর কখনো কাউকে খুঁজে পাবে না, যে তার হৃদয়ের গভীরতা বুঝবে। সে ভাগ্যকে দোষ দিতে লাগল, কিন্তু তার মধ্যে একটা জেদও জন্ম নিল। সে ঠিক করল, সে আর পেছনে ফিরে তাকাবে না।এইচএসসি শেষ হওয়ার পর অর্ণবের সামনে এল একটা সুযোগ—আমেরিকায় চলে যাওয়ার। তার বাবা-মা চাইতেন সে দেশে থেকে তাদের কাছে থাকুক, কিন্তু অর্ণবের মন বলল, “আমি এই কষ্টের স্মৃতি নিয়ে আর থাকতে পারব না।
আমি একটা নতুন শুরু চাই।” সে ঠিক করল, সে আমেরিকায় গিয়ে নিজের জীবন নতুনভাবে গড়বে। বাবা-মাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করবে, কিন্তু ফিরে আসবে না। সে চায় না তার অতীতের মানুষেরা তার নতুন জীবনের ছায়া হয়ে দাঁড়াক।আমেরিকায় পৌঁছে অর্ণব একটা ছোট অ্যাপার্টমেন্টে উঠল। তার হাতে ছিল তার ল্যাপটপ আর ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দক্ষতা। সে তার AHR Infotainment পেজটাকে নতুন করে গড়ে তুলতে শুরু করল। সে ভিডিও বানাত, ব্লগ লিখত, আর স্থানীয় ব্যবসার জন্য ফ্রিল্যান্সিং করত। প্রথম প্রথম তার মন খারাপ হতো। রাতে একা বসে থাকত, আর তিথি আর মাহির কথা মনে পড়ত। কিন্তু সে নিজেকে বোঝাত, “আমি এখানে নতুন শুরুর জন্য এসেছি। আমার ভালোবাসা আমার কাজে, আমার স্বপ্নে।”
একদিন, একটা স্থানীয় কমিউনিটি ইভেন্টে অর্ণবের সাথে পরিচয় হলো সারার। সারা ছিল একজন ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার। তার হাসি আর উৎসাহ অর্ণবের মনে একটা ছোট্ট আলো জ্বালিয়ে দিল। তারা একসাথে একটা প্রজেক্টে কাজ শুরু করল। সারা অর্ণবের কাজের প্রতি প্যাশন দেখে মুগ্ধ হলো। একদিন কফি খেতে খেতে সারা বলল, “অর্ণব, তুমি যেভাবে তোমার কাজে নিজেকে ঢেলে দাও,
সেটা দেখে আমার মনে হয় তুমি অনেক কিছু দিতে পারো। তুমি কি কখনো নিজেকে সত্যিই বুঝতে চেষ্টা করেছ?”এই কথাগুলো অর্ণবের মনে দাগ কাটল। সে বুঝল, তার ভালোবাসা, তার প্রচেষ্টা—এসব কখনো বৃথা যায়নি। হয়তো তিথি বা মাহি তার মূল্য বোঝেনি, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সে যোগ্য নয়। সে ধীরে ধীরে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে লাগল। সারার সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠল, কিন্তু অর্ণব আর তাড়াহুড়ো করল না। সে জানত, তার হৃদয় আবার ভালোবাসতে শিখবে, কিন্তু এবার সে প্রথমে নিজেকে ভালোবাসবে।অর্ণব তার বাবা-মাকে প্রতি মাসে টাকা পাঠাত।
তার মা ফোনে বলত, “তুই কবে আসবি, বাবা?” অর্ণব হাসত, বলত, “আমি এখানে ভালো আছি, মা। তবে আমি তোমাদের সবসময় কাছে রাখব।” তার মনের কোণে তিথি আর মাহির স্মৃতি ছিল, কিন্তু সেগুলো আর তাকে বাঁধতে পারত না। সে বুঝেছিল, জীবন একটা যাত্রা, আর সে এখন নিজের পথে হাঁটছে।একদিন সে তার ব্লগে লিখল:
“আমি ভেবেছিলাম, আমার ভালোবাসা বৃথা গেছে। কিন্তু আজ আমি জানি, আমি যে ভালোবাসা দিয়েছি, সেটা আমার শক্তি। আমি নতুন দেশে, নতুন স্বপ্নে নিজেকে গড়ছি। হয়তো কেউ একদিন আমার হৃদয়ের মূল্য বুঝবে, কিন্তু তার আগে আমি নিজেকে বুঝব। আমি আমার নিজের মহারাজা।”