
18/09/2025
সুন্দরগঞ্জে দুই জামায়াত নেতার দ্বন্দ্বে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট আউটলেটে তালা
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পার্টনারশিপ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ইসলামী ব্যাংকের একটি এজেন্ট আউটলেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় উপজেলার শোভাগঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটটি যৌথভাবে পরিচালনা করছিলেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আতাউর রহমান ও শান্তিরাম ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর। আউটলেটের অংশীদারিত্ব ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এরই জেরে মঙ্গলবার হঠাৎ করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত তালা মেরে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জে উপজেলা শান্তিরাম ইউনিয়নের আমীর সুজা মিয়া ২০১৯ সাথে ব্যাংক আউটলেটটি নিয়ে আসার চেষ্টা করলে সুজা মিয়ার তৎকালীন জামায়াত শিবিরের ট্যাগ থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে প্রোফাইটার দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে বর্তমান জামায়াতের উপজেলা সেক্রেটারি আতাউর রহমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রোপাইটার সুজা মিয়াকে দেওয়ার আশ্বস্ত করে আতাউর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেনকে প্রোপাইটর করা হয়। আলতাফ হোসেনকে প্রোপাইটর করার পর লিখিত চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও চুক্তি করেনি আতাউর রহমান ও আলতাফ হোসেন। এদিকে ৫ আগষ্টের পরে সুজা মিয়া আউটলেটর প্রোপাইটর ফেরত চাইলে আলতাফ হোসেন মালিক দাবি করেন। আউটলেটের মালিক দাবি করা প্রোপাইটর আলতাফ হোসেনের কোনো ইনভেস্ট এবং সরাসরি আউটলেটের ইনভলভ ছিলো না বলে দাবি করেছেন অন্যান্য শেয়ার হোল্ডাররা।
আউটলেটের বর্তমান ইনচার্জ মোঃ সুজা মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমি নিজে ব্যাংক নিয়ে আসছি। ব্যাংক নিয়ে আসার পর তৎকালীন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পূর্ব থানা আমীর এবং বর্তমান উপজেলা সেক্রেটারি আতাউর রহমান অনেক সুকৌশলে প্রতারণা করে ব্যাংকটি মাকিকানা করে নেয়। আমি উপজেলা আমীর শহিদুল ইসলাম মঞ্জু ভাইকে বার বার অবহিত করার পরেও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শেয়ার হোল্ডার অভিযোগ করে বলেন, বিষয়টি বারবার থানা সংগঠনকে অবহিত করার পরেও থানা আমীর সমাধানের কোনো ভূমিকা রাখছেন না বরং থানা আমীরের সেক্রেটারির পক্ষ নেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
হঠাৎ ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শতাধিক গ্রাহক। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন এখানে টাকা লেনদেন করি। হঠাৎ তালা দেওয়ায় ব্যবসার টাকা জমা দিতে পারিনি। এতে ব্যবসার কাজে সমস্যা হচ্ছে।”
এছাড়া, গ্রামের কৃষকরা অভিযোগ করেন—ধান বিক্রির টাকা তুলতে এসে তালাবদ্ধ ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। অনেক পরিবার মোবাইল ব্যাংকিং, বেতন ও বিভিন্ন লেনদেনের জন্য এ আউটলেটের ওপর নির্ভরশীল ছিল।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বিষয়টি তদন্ত করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার মতো ঘটনা এজেন্ট আউটলেটে কাম্য নয়।
স্থানীয়রা বলেন, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বা ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে যেন সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার না হন। তারা দ্রুত আউটলেট পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে ব্যাংকের বর্তমান প্রোপাইটর আলতাফ হোসেনকে মুঠোফোনে বারবার কল করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।