17/10/2024
আল্লাহতায়ালা মানুষকে নির্ধারিত কিছুদিনের জন্য সময় দিয়ে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা দুনিয়ার এ নির্ধারিত সময়ের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করবে।
অথচ মানুষের কাছে দুনিয়ার সময়ের দাম অনেক বেশি।
মানুষের জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। সবার আয়ু নির্ধারিত। দুনিয়ার ছোট্ট জীবন শেষে রয়েছে পরকালের সীমাহীন জীবন। এ দুনিয়ায় কেউ চিরকাল থাকবে না।
সংক্ষিপ্ত এই সময়কে কীভাবে সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন? আপনি হয়তো সঠিক ব্যবহারের জন্য মনে মনে চিন্তা করেছেন।
কিংবা রোজই নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন। কিন্তু তা কোনো কাজে আসে না। তাহলে সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্টের উপায় কী? কারণ আপনার সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্টের ওপরে এ কালের যেমন সফলতা নির্ভর করছে তেমনি পরকালের সফলতাও নির্ভর করছে।
তাই দুই কালের সমন্বয় অত্যান্ত জরুরি। আসল কথা হলো মনে মনে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করলে বা মনে মনে চিন্তা করলে তা অধিকাংশ সময় সঠিকভাবে পালন করা যায় না। সে ক্ষেত্রে কাগজে লিখে পরিকল্পনা তৈরি করুন। আজই মুখে মুখে পরিকল্পনা তৈরি করা বন্ধ করুন। এখন তো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি আরো সহজ।
কারণ আপনার কম্পিউটারে কিংবা মোবাইল ডিভাইসেও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বা টাইম ক্যালেন্ডার তৈরি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনি সহজেই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয় দেখতে ও ধরতে পারবেন। যত সফল সময়নিষ্ঠ ব্যক্তি আছে তারা সকলেই ভালো পরিকল্পনাবিদ।
আর তারা কাগজে লিখেই পরিকল্পনা করে তারা নানান ধরনের তালিকা করে এটাকে নানান ভাগ-উপভাগে সাজায়। মুখ্য কারণগুলো বের করে এবং গৌণ ব্যাপারগুলোর দিকেও পর্যাপ্ত নজর দেয়।
কথায় আছে পরিকল্পনার এক-একটি মিনিট কর্মক্ষেত্রের দশ মিনিট করে সময় বাঁচায়। আপনি যখন কাজ শুরু করার পূর্বে কাগজে লিখে পরিকল্পনা তৈরি করবেন তখন আপনি শতগুণ বেশি বল পাবেন। আপনার পরিকল্পনা তৈরিতে এক-একটি মিনিট আপনার কর্মক্ষেত্রে দশগুণ বেশি সময় বাঁচাবে। চিন্তা না করে ভুল কাজ করার চেয়ে চিন্তা করে ঠিক কাজটি করাই উত্তম।
সবাই মৃত্যুবরণ করবে। মানুষ এক-একটি দিন অতিবাহিত করা মানেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। তাই জীবনের মূল্যবান সময়কে শ্রেষ্ঠ সম্পদ মনে করতে হবে। তা হিসাব করে ব্যয় করতে হবে। ২৪ ঘণ্টা সময়ের রুটিন করে নিতে হবে।
ইসলামিক টাইম ম্যানেজমেন্টের অন্যতম শর্ত হলো আপনাকে সুবেহ সাদিকের সময় ঘুম থেকে উঠতে হবে। যদি নবী মুহম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে চান তবে দিনের শুরুটা সুবেহ সাদিকেই হতে হবে। আর আমরা প্রত্যেকে জানি সুবেহ সাদিকে ফজরের আজান হয়। খুব ভালো হয় যদি মুয়াজ্জিনের ডাক আপনি নিয়মিত সাড়া দেন। অভ্যেস করে নিন। বিষয়টা একেবারেই সহজ।
সারাদিনের আপনার জরুরি সকল কাজ সকাল থেকেই শুরু করতে পারেন। এতে প্রস্তুতি নেয়ার বিষয়টা সহজ হবে। তবে মনে রাখবেন কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। আজেবাজে কাজ করে মুক্তাতুল্য মূল্যবান মুহূর্তগুলো নষ্ট করা যাবে না। এমনকি দেশের জরুরি খবরাখবরের পেছনে কত সময় ব্যয় করবেন, তাও নির্ধারণ করে নেয়া উচিত। সারাদিনের কর্মের মধ্যে অবশ্যই সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে হবে। কোনো কথা শুনে সত্য-মিত্যা যাচাই না করে প্রচার করা যাবে না।
"হে মুমিনরা! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বসো। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের
অনুতপ্ত হতে হয়।"
(সুরা হুজুরাত, আয়াত : ৬)
নবীজী (সা.) বলেছেন-
'কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা শুনে তা-ই বলে বেড়ায়।'
(মুসলিম, হাদিস : ৫)
কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা সময়ের অপচয়ে ক্ষেত্রে এ কাজগুলোই বেশি করে যাচ্ছি। অযথা নেট দুনিয়ায় পড়ে আছি। নিউজ পোর্টালের খবর ভাইরাল করে দিচ্ছি। সত্য-মিথ্যা কোনো কিছুরই কোনো খবর নেই। টাইম ম্যানেজমেন্টের এখন প্রধান বাধাই নেট দুনিয়ার উড়ো চটকদার খবর।
আপনার কর্মঘণ্টার অধিকাংশ সময় এখন নষ্ট হচ্ছে এসব বাজে কাজে। আর এসব বাজে কাজের কারণে আপনি নিজেই দিশেহারা। কোনো কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। জীবনে নেমে এসেছে পেরেশানি। আর কখনো জেনেবুঝে কিংবা না জেনে কোন কবিরাহ গুনাহের মধ্যে ডুবে গিয়েছেন, তা নিজেও জানেন না।