10/05/2025
**বাংলাদেশের ওয়ানডে অলরাউন্ডার বিতর্ক: একটি বিশ্লেষণ**
বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে মোসাদ্দেক হোসেনের নাম উঠে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে। কিন্তু এই দাবিটির পেছনের যুক্তিগুলো কি সত্যিই যুক্তিসংগত? আসুন, বিষয়টাকে একটু গভীরে দেখার চেষ্টা করি।
প্রথমেই মোসাদ্দেকের সাম্প্রতিক *"দায়িত্বহীন"* শট সিলেকশন এবং ওয়ানডেতে তার ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কথা বলতে হয়। এগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘদিনের একটি প্যাটার্ন। ২০১৯ সালের ট্রাইনেশন সিরিজের ফাইনালের পর ওয়ানডে ফরম্যাটে মোসাদ্দেকের এমন কোন ইনিংস খুঁজে পাওয়া যাবে কি, যা ম্যাচের গতি পাল্টে দিয়েছে? উল্টোদিকে, মিথুন আলীর মতো খেলোয়াড়, যাকে অনেকেই বড় ক্রিকেটার ভাবেন না, তিনি ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০+ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন—যেটা দলের জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক টার্গেট নির্মাণে সাহায্য করেছিল। সংখ্যাগুলো মিছ্যা বলে না, আর অতীতের স্মৃতি বর্তমানের জবাবদিহিতাকে ঢেকে দেবার অজুহাত হতে পারে না।
ঘরোয়া বা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের দিকে তাকালে বিতর্ক আরও জটিল হয়। গত দুই বছরে বিসিএল বা অন্যান্য টি-২০ টুর্নামেন্টে মোসাদ্দেকের পারফরম্যান্সে কি সত্যিই কোন ম্যাচ-জয়ী অবদান দেখা গেছে? "সেরা অলরাউন্ডার" ট্যাগ দেওয়ার মতো কোন ধারাবাহিকতা বা প্রভাবশালী মুহূর্ত কি আছে তার খেলায়? যদি শুধু মাঝে মধ্যে দেখা দেওয়া ট্যালেন্টের ঝলকানিতেই এই ট্যাগ দেওয়া হয়, তাহলে সাইফ হাসানের কথাও তো ভাবা যেতে পারে! বিসিএল বা গ্লোবাল লীগে তার পারফরম্যান্স অনেকসময় সমবয়সীদের ছাপিয়ে গেছে। একইভাবে, নুরুল হাসান সোহানও এখন বহুমুখী ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন—বিশেষ ভূমিকায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী বলা চলে হেনরিক ক্লাসেনকেও।
এখানেই মূল সমস্যা: অপরিপক্বভাবে লেবেল সাঁটা। ঘরোয়া ক্রিকেটে সীমিত সাফল্যের ভিত্তিতে কাউকে "সেরা" বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা ভবিষ্যতে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। নিউজিল্যান্ড সফরের কথা মনে আছে? সেখানে ঘরোয়া ক্রিকেটের হিরোদের অনেকেই আন্তর্জাতিক স্তরে মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন। অতিরিক্ত হাইপ শুধু ভুল প্রত্যাশাই তৈরি করে না, খেলোয়াড়ের উপর চাপও বাড়ায়। সাইফ বা সোহান আজ ভালো করলেও আগামীকালের চ্যালেঞ্জ অন্য রকম হতে পারে।
মূল কথায় আসি: ক্রিকেটে প্রকৃত অলরাউন্ডার হওয়ার মানে শুধু দু-একটা মুহূর্তে জ্বলে উঠা নয়, বরং ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালন করা। যতদিন না কোনো খেলোয়াড় এই স্ট্যান্ডার্ড পূরণ করছেন, ততদিন ট্যাগ বা লেবেলের জোরাজুরি বাদ দেওয়াই শ্রেয়। খেলোয়াড়দের বিকাশের জন্য চাই স্বস্তির পরিবেশ—যেখানে অতিরিক্ত প্রত্যাশা বা সমালোচনার চাপ না থাকবে।
শেষ কথা: ক্রিকেটে শিরোনাম নয়, পারফরম্যান্সই কথা বলে। সংখ্যা, ম্যাচের প্রেক্ষাপট এবং চাপের মুহূর্তে সিদ্ধান্তই সত্যিকারের মাপকাঠি। এর বাইরে গেলে খেলোয়াড় এবং খেলাটা—দুটোরই ক্ষতি!
#ক্রিকেট_বাস্তবতা #অলরাউন্ডার_বিতর্ক
#ঘরোয়া_হিরো
#বাংলাদেশ_ক্রিকেট