anis tv

anis tv মানুষের কল্যানে

31/03/2025

পবিত্র ইদুল ফিতরের আলোচনা করেন হাফেজ মাওলানা ফখরুল ইসলাম।উত্তর নওয়াবশ মৌলভী পাড়া ঈদগাহে। পাঁচ গাছি ইউনিয়ন পরিষদ, কুড়িগ্রাম সদর কুড়িগ্রাম।

30/03/2025

ইদ মোবারক

27/03/2025

স্বপ্নভঙ্গ

রাতুলের চোখদুটো ক্লান্তিতে ভরে উঠেছে। সারাদিনের অফিসের কাজের পর বাসায় ফিরে একটু শান্তি চেয়েছিল সে, কিন্তু দরজায় পা রাখতেই রিমির তিরিক্ষি গলা কানে এল।

— "আর কতদিন এভাবে চলবে রাতুল? সংসার কি শুধু ভালোবাসায় টিকে থাকে?"

রাতুল বোঝে, রিমি যে ভুল বলছে তা নয়। সত্যিই তো, ভালোবাসা দিয়ে কি ভাত পাওয়া যায়?

রিমি আর রাতুলের প্রেমটা শুরু হয়েছিল পাঁচ বছর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। রিমির চোখে তখন স্বপ্ন, রাতুল ছিল তার কাছে এক আদর্শবান যুবক—ভালো ছাত্র, ভদ্র ব্যবহার, দায়িত্বশীল মনোভাব। দুজনেই স্বপ্ন দেখেছিল একসাথে থাকার, সুখের সংসার গড়ার।

কিন্তু জীবন তো গল্পের মতো মসৃণ নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে রাতুল একটা মাঝারি মানের কোম্পানিতে চাকরি পায়। বেতন সামান্য, কিন্তু স্বপ্ন ছিল ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে। রিমিও পড়াশোনা শেষ করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পায়, তার আয় রাতুলের দ্বিগুণ। প্রথমদিকে এসব ব্যাপার নিয়ে রিমি কিছু বলত না।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তার মধ্যে পরিবর্তন আসতে থাকে।

বাস্তবতার মুখোমুখি

একদিন অফিস থেকে ফিরে রিমি খুব গম্ভীর মুখে বলল,

— "রাতুল, আমরা কি কখনও বড় ফ্ল্যাটে উঠতে পারব? গাড়ি কিনতে পারব?"

রাতুল একটু অবাক হয়ে বলল,

— "এখন হয়তো পারব না, কিন্তু ধীরে ধীরে সব হবে। তুমি তো জানো, আমি আমার কাজে পরিশ্রম করছি। সময় লাগবে।"

রিমি তখনই কিছু বলেনি, কিন্তু তার চোখেমুখের অভিব্যক্তিতে বোঝা যাচ্ছিল যে সে হতাশ।

এরপর থেকে সে প্রায়ই বলত,

— "তুমি যদি একটু ভালো জায়গায় চাকরি করতে, তাহলে হয়তো আমাদের এত হিসেব করে চলতে হতো না।"

রাতুল চেষ্টা করেছিল বড় কোনো কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার জন্য, কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে সুযোগ পাওয়া সহজ নয়।

রিমির ভাষায়,

— "তুমি যথেষ্ট যোগ্য নও, নয়তো এতদিনেও একটা ভালো চাকরি পেতে।"

সেই দিনটা রাতুলের মনে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছিল। যে মেয়েটা একসময় তার সামান্য উপহার পেয়ে চোখে জল আনত, সে-ই আজ তার বেতন কম দেখে হতাশ!

পরিণতি

একদিন রাতে রিমি স্পষ্ট জানিয়ে দিল,

— "আমি আর এই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়তে পারছি না, রাতুল। আমি এভাবে সারাজীবন কাটাতে পারব না। আমার স্বপ্ন ছিল বড় একটা জীবন, বিলাসিতা হয়তো চাইনি, কিন্তু কমফোর্ট চাই। আমাদের মানসিকতা আর লাইফস্টাইল এখন আর মেলে না।"

রাতুল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

— "তাহলে তুমি কী চাও?"

রিমি চোখ নামিয়ে বলল,

— "আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত।"

রাতুলের বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। ভালোবাসা কি এতটাই ঠুনকো?

কিন্তু সে জানত, জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না।

সেদিনই রিমি বাসা ছেড়ে চলে গেল। কয়েক মাস পর রাতুল শুনল, রিমি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বিয়ে করেছে, যার গাড়ি, বাড়ি, সবই আছে।

রাতুল তার জীবনকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করল। কঠোর পরিশ্রম করে সে একসময় ভালো একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেল, স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছল।

কিন্তু হৃদয়ের এক কোণে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল—

ভালোবাসা কি সত্যিই কেবলমাত্র আর্থিক স্থিতির ওপর নির্ভরশীল?

25/03/2025

স্ত্রীর ভুল ও স্বামীর ইনকামের সম্পর্ক

গল্প: বরকতের চাবি

অধ্যায় ১: সুখের সংসার
হাসান একজন সৎ ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী আয়েশা খুবই যত্নশীল ও ধার্মিক নারী। তাদের সংসার সুখের ছিল। হাসান ব্যবসা করত এবং আয়েশা সংসার সামলাতো।

একদিন আয়েশা তার বান্ধবীর বাড়ি বেড়াতে গেল। সেখানে সে দেখল, তার বান্ধবী দামি গয়না, সুন্দর পোশাক ও বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। ফেরার পর সে হাসানকে বলল,

“তুমি যদি আরেকটু বেশি ইনকাম করতে তাহলে আমিও এমন জীবন পেতাম!”

এই কথা শুনে হাসান দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।

أَفَلَا يَنظُرُونَ إِلَى ٱلْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ (الغاشية ١٧)

"তারা কি উটের দিকে দৃষ্টিপাত করে না, কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে?"

আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। কিন্তু আয়েশা নিজের অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট হতে লাগল।

---

অধ্যায় ২: হঠাৎ ব্যবসার মন্দা
একদিন হাসান লক্ষ্য করল, তার ব্যবসায় আগের মতো বরকত নেই। সে যতই পরিশ্রম করুক, ততই ক্ষতি বাড়ে।

সে আল্লাহর দরবারে দোয়া করল,

رَبِّ إِنِّي مَغْلُوبٌ فَٱنتَصِرْ (القمر ١٠)
"হে আমার রব! আমি বিপদগ্রস্ত, তুমি আমাকে সাহায্য কর।"

একদিন এক বুযুর্গ ব্যক্তি হাসানের দোকানে এলেন। তিনি বললেন,

“তোমার জীবনে কি কোনো অশান্তি এসেছে?”

হাসান জানাল, আয়েশা এখন সব সময় বিলাসী জীবন চায়, আগের মতো সন্তুষ্ট থাকে না। বুযুর্গ বললেন,

“তাহলে তোমার ইনকামের বরকত কমে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলে?”

---

অধ্যায় ৩: আয়েশার অনুশোচনা
বুজুর্গের কথা শুনে হাসান বাসায় গিয়ে আয়েশার সাথে কথা বলল। আয়েশা অনুতপ্ত হলো। সে তওবা করল এবং বলল,

“আমি ভুল করেছি। আল্লাহ আমাদের যা দিয়েছেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকব।"

আল্লাহর রহমতে কয়েক মাসের মধ্যেই হাসানের ব্যবসায় আবার বরকত ফিরে এলো।

وَإِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ (إبراهيم ٧)

"যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বেশি দেব।"

উপদেশ:

স্ত্রীর অসন্তুষ্টি ও অপচয় স্বামীর ইনকামের বরকত কমিয়ে দিতে পারে।

আল্লাহর দেওয়া রিজিকে সন্তুষ্ট থাকা উচিত।

কৃতজ্ঞতা ও তওবা করলে বরকত ফিরে আসে।

সংক্ষেপে: সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতাই বরকতের চাবি!

23/03/2025

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত

ভূমিকা:
লাইলাতুল কদর (ليلة القدر) হলো এক মহিমান্বিত রজনী, যা পবিত্র কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই রাতকে আল্লাহ তাআলা বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই রাতে বান্দাদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেন। মুসলমানদের জন্য এই রাতের ইবাদত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পূণ্যময়।

লাইলাতুল কদরের পরিচয়

লাইলাতুল কদর শব্দটি দুটি আরবি শব্দ দিয়ে গঠিত— "লাইলাতুন" (ليلة) যার অর্থ রাত এবং "কদর" (قدر) যার অর্থ মহিমান্বিত, পরিমাণ নির্ধারণ বা তাকদির। এটি পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি, বিশেষত ২৭তম রাতকে অনেকেই লাইলাতুল কদর হিসেবে ধরে নেন।

আল-কুরআনে লাইলাতুল কদরের উল্লেখ:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা স্বয়ং এই রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন—

> إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ ۝ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ۝ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ ۝
"নিশ্চয়ই আমি এটি নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আর তুমি কী জানো লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।" (সূরা আল-কদর ৯৭:১-৩)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, লাইলাতুল কদরে ইবাদত করলে ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদত করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

হাদিসে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।

১. আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত:

> "যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০১৪)

২. আয়েশা (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন:

> "হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই, তাহলে কোন দোয়া পড়ব?"
তিনি বললেন:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
"হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমাকে ভালোবাসো, আমাকে ক্ষমা করে দাও।" (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫১৩)

লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও রহমত

১. হাজার মাসের চেয়ে উত্তম:

এই রাতে করা আমল, দোয়া ও ইবাদত হাজার মাসের চেয়ে বেশি সওয়াব অর্জন করতে সাহায্য করে।

২. ফেরেশতারা অবতরণ করেন:

আল্লাহ বলেন:

> تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ ۝
"এই রাতে ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাঈল আ.) আল্লাহর আদেশে প্রত্যেক বিষয়ে অবতরণ করেন।" (সূরা আল-কদর ৯৭:৪)

৩. গুনাহ মাফ ও রহমতের বর্ষণ:

এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের দোয়া কবুল করেন, পাপ মোচন করেন এবং রহমত বর্ষণ করেন।

লাইলাতুল কদরের সন্ধান ও করণীয় আমল

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

> "তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে খোঁজ করো।" (বুখারি, হাদিস: ২০১৭)

এই রাতে করণীয় ইবাদতসমূহ:

১. নামাজ:

কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুদ) বেশি বেশি পড়তে হবে।

২. কুরআন তিলাওয়াত:

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা উত্তম ইবাদত।

3. দোয়া ও ইস্তিগফার:

আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং বেশি বেশি দোয়া করতে হবে।

4. সালাতুত তাসবীহ:

এটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ নামাজ।

5. সদকা ও দান-খয়রাত:

গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা এই রাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প: লাইলাতুল কদরের বরকত

প্রচলিত গল্প:

মদিনায় এক দরিদ্র ব্যক্তি ছিলেন, যিনি দিনে কঠোর পরিশ্রম করতেন, কিন্তু রাতে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। একবার তিনি রমজানের শেষ দশকে মসজিদে অবস্থান নেন। এক রাতে স্বপ্নে তিনি দেখলেন, এক ফেরেশতা এসে বলছেন:

"হে আল্লাহর বান্দা! আজকের রাত লাইলাতুল কদর, যদি তুমি এই রাতে সত্যিকারের তওবা করো, তবে তোমার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।"

তিনি ঘুম থেকে উঠে কান্নায় ভেঙে পড়লেন এবং আল্লাহর কাছে নিজের সব গুনাহর জন্য ক্ষমা চাইলেন। এরপর তিনি সারারাত ইবাদত করলেন এবং সকালে দেখলেন, তার মন আল্লাহর ভালোবাসায় ভরে গেছে।

এরপর থেকে তিনি আরও বেশি ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হন এবং একসময় শহরের অন্যতম নেককার ব্যক্তি হয়ে ওঠেন।

উপসংহার:

লাইলাতুল কদর মুসলমানদের জন্য এক অমূল্য নিয়ামত। এই রাতে ইবাদত করলে জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ হতে পারে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। তাই আমাদের উচিত এই রাতের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াত করা।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের বরকত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ফেসবুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রফজরের আজানের সাথে ঘুম ভাঙলেও বিছানা ছাড়তে আরও আধঘণ্টা লেগে যায়। চোখ খুলেই প্রথমে হাত বাড়াই ম...
22/03/2025

ফেসবুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র

ফজরের আজানের সাথে ঘুম ভাঙলেও বিছানা ছাড়তে আরও আধঘণ্টা লেগে যায়। চোখ খুলেই প্রথমে হাত বাড়াই মোবাইলের দিকে। ফেসবুক খুলতেই দেখি নোটিফিকেশন আর মেসেজের বন্যা! রাতভর আমার পোস্টে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার চলেছে। কয়েকটা ট্রেন্ডিং গ্রুপেও আমার নাম দেখা যাচ্ছে। এই আনন্দেই দিনের শুরু!

আমি ফেসবুক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র। এখানে কোনো অ্যাডমিশন ফি নেই, ক্লাসরুম নেই, অথচ জ্ঞান আর বিনোদনের অফুরন্ত ভাণ্ডার রয়েছে। কে বলল, পড়াশোনা শুধু বইয়ের পাতায় হয়? ফেসবুকে ঢুকলেই সব আছে—রাজনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ধর্ম, বিনোদন, এমনকি খেলার বিশ্লেষণও। একটাই শর্ত—কী বিশ্বাস করবে আর কী করবে না, সেটা তোমার নিজের বুদ্ধিতে বুঝতে হবে।

প্রথম ক্লাস: রাজনীতি ১০১

সকালের প্রথম কাজ হলো ট্রেন্ডিং নিউজ দেখা। "দেশ ধ্বংসের পথে!"—একটা বড়সড় পোস্ট চোখে পড়ল। কমেন্ট সেকশনে ঢুকে দেখি, দুই দল তর্কযুদ্ধে মত্ত। আমি কোনো দলেই নেই, কিন্তু একটু হাওয়া দিতে তো দোষ নেই!

— "ভাই, সত্যি কথা বললে আবার সমস্যা? দেশ তো অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে!"

দুই মিনিটের মধ্যে রিপ্লাই আসল:

— "আপনার মাথা ঠিক আছে? কোন দলে?"

এটা সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রশ্ন! সরাসরি উত্তর না দিয়ে লেখলাম:

— "আমি সত্যের দলে!"

এই উত্তরে লাইকের ঝড়। আমার পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে কয়েকজন নতুন গ্রুপেও শেয়ার করল। ফেসবুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এটাও এক ধরনের সাফল্য।

দ্বিতীয় ক্লাস: বিজ্ঞান বনাম কুসংস্কার

একটা পোস্ট ভাইরাল হয়েছে—"চন্দ্রগ্রহণের রাতে বাইরে গেলে বিপদ হবে!" কমেন্টে ঢুকে দেখি, কেউ বলছে এটা প্রমাণিত সত্য, আবার কেউ বিজ্ঞান দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে কেন এটা অবৈজ্ঞানিক। আমি কোথাও কমেন্ট করলাম না, শুধু একটা হাসির রিয়্যাক্ট দিলাম। কারণ, এখানে যুক্তি দিলেই ঝগড়া শুরু হয়ে যায়।

তবে ফেসবুক বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে থেকে একটা ব্যাপার শিখেছি—সবাই সব জানে। যে লোক গতকাল ফিজিক্সের গুরু ছিল, আজ সে ইতিহাসবিদ হয়ে গেছে।

তৃতীয় ক্লাস: সাহিত্য ও প্রেম

বিকেলের দিকে আমার নিউজফিড প্রেমময় হয়ে ওঠে। কবিতার পোস্ট, ভালোবাসার কোটস, বিরহের গল্পে ভরে যায় ফেসবুক। আমিও এক-আধটা কবিতা লিখি মাঝেমাঝে, যদিও আসল লেখকের নাম অনেকেই দেয় না।

— "ভালোবাসা মানে শুধু পাওয়া নয়, ছাড়তেও জানতে হয়…"

এই ছোট্ট লাইন লিখে পোস্ট দিলাম। মিনিট দশেকের মধ্যে বিশ-পঁচিশটা লাইক আর কমেন্ট চলে এল:

— "অসাধারণ বলেছেন ভাই!"
— "মন ছুঁয়ে গেল…"
— "ভাই, এমন স্ট্যাটাস দিচ্ছেন কেন? কিছু হয়েছে?"

বুঝলাম, রাতের মধ্যে পোস্টটা শত শত শেয়ারে চলে যাবে।

চতুর্থ ক্লাস: ফেসবুক যুদ্ধ

রাত বাড়ার সাথে সাথে ফেসবুকের পরিবেশও বদলে যায়। এ সময় সবচেয়ে উত্তপ্ত আলোচনা চলে ক্রিকেট, সিনেমা আর রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে।

একটা কমেন্টে ঢুকে দেখলাম, দু’জন তর্ক করছে—

— "তোমার প্লেয়ার কিছু পারে না!"
— "তোমার প্লেয়ার তো আরও বাজে!"

এমন পোস্টের নিচে কমেন্ট করাই বিপজ্জনক। কিন্তু আমি নিরপেক্ষতার নাম করে লিখলাম:

— "ভাই, খেলাধুলায় এত রাগ কেন?"

ব্যস! এখন আমাকেই আক্রমণ করা শুরু হলো।

— "আপনি কিছুই বোঝেন না!"
— "ফেসবুকে আসার দরকার নেই!"

ফেসবুক বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা নতুন কিছু নয়।

সেমিস্টার ফাইনাল: ট্রল বনাম জ্ঞান

রাত গভীর হলে ট্রল পোস্টের সংখ্যা বাড়ে। কেউ কারও ছবি এডিট করে মজার ক্যাপশন দিচ্ছে, কেউবা মিম বানিয়ে ট্রেন্ডিং করতে চাইছে। আমি কেবল বসে বসে দেখি, হাসি, আর মাঝে মাঝে শেয়ার করি।

কিন্তু এখানেও একদল মানুষ আছে যারা সবকিছু সিরিয়াসভাবে নেয়। তারা বলবে,

— "ভাই, এসব ফাজলামি বাদ দিন!"
— "এতে দেশের উন্নতি হবে না!"

আসলে ফেসবুক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে ধৈর্য আর কৌশল দুইটাই দরকার। কে কখন সিরিয়াস, কে কখন মজার মুডে থাকে, সেটা বোঝার জন্য অভিজ্ঞতা লাগে।

ফেসবুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি

আমি এখন ফেসবুক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো ছাত্র। অনেক কিছু শিখেছি—কীভাবে ট্রেন্ডিং পোস্ট করতে হয়, কীভাবে বিতর্ক এড়িয়ে চলতে হয়, আর কাদের পোস্টে লাইক দিলে বেশি জনপ্রিয় হওয়া যায়।

ডিগ্রি পাওয়ার কোনো নিয়ম নেই এখানে, কিন্তু একটা লক্ষণ ঠিক আছে—যদি একদিন তোমার একটা পোস্ট ভাইরাল হয়, যদি হাজার হাজার লাইক-কমেন্ট আসে, আর তুমি বুঝতে পারো কীভাবে মানুষের মন জয় করতে হয়—তাহলে তুমি সফল ছাত্র!

আমি এখনো শিখছি, এখনো ফেসবুক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করছি। কারণ, এখানে শেখার কোনো শেষ নেই!

22/03/2025

ইতিকাফের ফজিলত: একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প

العزلة في المسجد: قصة ملهمة عن فضل الاعتكاف

বাংলা: ইতিকাফের মহৎ মর্যাদা

রমজান মাসের শেষ দশ দিন, মসজিদের নিস্তব্ধ পরিবেশ, আর রাতের গভীরতা—সব মিলিয়ে এক অনন্য মুহূর্ত। রহিম, এক যুবক, সিদ্ধান্ত নেয় যে এই বছর সে ইতিকাফ করবে। ছোটবেলা থেকেই সে ইতিকাফ সম্পর্কে শুনেছে, কিন্তু কখনো নিজের জীবনে তা পালন করেনি।

রহিম মসজিদে প্রবেশ করল। চারদিকে তাকিয়ে দেখল, আরও অনেক মুসল্লি ইতোমধ্যে ইতিকাফের নিয়তে এখানে এসেছে। সে ওজু করে দুই রাকাত সালাত আদায় করল এবং আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তার হৃদয়ে এক প্রশান্তি নেমে এল।

প্রথম দিন থেকেই সে কোরআন তিলাওয়াত শুরু করল। আল্লাহর বাণী শোনার মধ্যে এক অদ্ভুত স্বস্তি অনুভব করল সে। সময় কাটতে থাকল, আর রহিম অনুভব করল যে এই ইবাদত কেবল বাহ্যিক নয়, বরং এটি আত্মিক উন্নতির এক মাধ্যম।

الاعتكاف ليس فقط عبادة خارجية، ولكنه وسيلة للارتقاء الروحي.

দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ত, রহিম তখন তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করত। এক রাতে, কিয়ামুল লাইলের মাঝে সে আল্লাহর সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ল। তার হৃদয় আল্লাহর প্রেমে অভিভূত হয়ে গেল। সে অনুভব করল, এতদিন দুনিয়ার মোহে ভুলে গিয়েছিল আসল উদ্দেশ্যকে।

একজন বয়স্ক মুসল্লি রহিমকে বললেন,

"বেটা, ইতিকাফ হলো আত্মার প্রশিক্ষণ। তুমি যদি সত্যিকারভাবে ইতিকাফ করো, তাহলে তোমার হৃদয় বদলে যাবে।"

"يا بني، الاعتكاف هو تدريب للروح. إذا التزمت به بصدق، سيتغير قلبك."

রহিম তার কথাগুলো হৃদয়ে গেঁথে নিল। সে বুঝল, ইতিকাফ কেবল মসজিদে বসে থাকা নয়, বরং এটি দুনিয়াবি ব্যস্ততা থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার একটি সুযোগ।

ইতিকাফের শেষ দিন ছিল সবচেয়ে আবেগময়। রহিমের মনে হলো, যেন সে এক নতুন মানুষ হয়ে উঠেছে। সে সিদ্ধান্ত নিল, ইতিকাফ শেষে তার জীবনকে আরও ইসলামের পথে পরিচালিত করবে।

"يا الله، اجعل هذا الاعتكاف سببا في هدايتي."

"হে আল্লাহ, এই ইতিকাফকে আমার হিদায়তের কারণ বানিয়ে দাও।"

রহিম মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসার সময় তার চোখে পানি এসে গেল। সে জানত, এবার সে শুধু বাহ্যিকভাবে নয়, বরং আত্মিকভাবেও বদলে গেছে।

এই হলো ইতিকাফের শক্তি—এটি মানুষের আত্মাকে বিশুদ্ধ করে, আল্লাহর নৈকট্য এনে দেয়, এবং জীবনকে এক নতুন অর্থ দেয়।

"إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ" (البقرة: 153)

"নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।" (সূরা বাকারা: ১৫৩)

শেষ কথা:

যারা ইতিকাফে বসে, তারা আল্লাহর রহমত লাভ করে। এটি আত্মশুদ্ধির সর্বোত্তম মাধ্যম। রহিমের মতো আমাদেরও উচিত অন্তত একবার ইতিকাফে বসে আল্লাহর সান্নিধ্য অনুভব করা।

20/03/2025

ফকির

রাত গভীর হলে শফিকের চোখে ঘুম নামে না। বিছানায় শুয়ে ছাদ凝াবিবল করে, হাওয়ার সঙ্গে পর্দা দোলার শব্দ শোনে। পাশে ঘুমিয়ে থাকা স্ত্রীর নাক ডাকায় সে বিরক্ত হয় না। কারণ, তার মনের ভেতর আরও বড় এক অস্বস্তি খেলা করে।

শফিক ভালো করেই জানে, আগামীকাল সকালে তাকে শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে। উদ্দেশ্য, যৌতুকের টাকা চাওয়া।

দুই বছর আগের কথা

শফিকের বিয়ে হয়েছিল ধুমধাম করে। শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে একটি মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছিল, নগদ কিছু টাকাও। তার স্ত্রী মায়ার সঙ্গে সুখেই দিন কাটছিল। কিন্তু সমস্যার শুরু হয় যখন তার মা বাড়ির সংস্কারের কথা তোলে।

— "এই বাড়ির টিনগুলো দেখছো? সব জীর্ণ হয়ে গেছে, বৃষ্টির দিনে পানি পড়ে ঘরে। আমরা কি সারাজীবন এভাবেই থাকব?"

মায়ের কথায় শফিক চুপ করে থাকে। তার বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধে, কিন্তু সে ছোটখাটো চাকরি করে যা দিয়ে নিজের খরচ চালানোই কঠিন।

মা আরও বলে,
— "তোর শ্বশুর তো ধনী মানুষ। ওর কাছে চাইলেই তো টাকা পাওয়া যাবে! ওর একমাত্র মেয়ের জামাই তুই।"

শফিক জানত, এটা ঠিক নয়। কিন্তু মায়ের অনুনয়-বিনয়, আত্মীয়স্বজনের কথায় সে ধীরে ধীরে নরম হয়ে আসে।

বর্তমান

শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে শফিক কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করে। শ্বশুর হাসিমুখে তাকে আপ্যায়ন করেন। মায়ার চোখেমুখে অদ্ভুত এক দুশ্চিন্তার ছাপ।

শফিক এক সময় কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করে বলে,
— "আব্বা, একটা কথা বলার ছিল..."

শ্বশুর অবাক হয়ে বলে,
— "হ্যাঁ, বলো বাবা, কী হয়েছে?"

শফিক কিছুক্ষণ ইতস্তত করে। সে মনে মনে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে এটা অন্যায় নয়, এটা প্রয়োজন।

— "আব্বা, আমাদের বাড়িটা তো পুরোনো হয়ে গেছে। মা বলছিলেন, যদি কিছু টাকা সাহায্য করতেন..."

কথাটা শেষ হতেই ঘরে একটা অদ্ভুত নীরবতা নেমে আসে। মায়া মাথা নিচু করে ফেলে। শ্বশুরের মুখে হাসিটা মিলিয়ে যায়।

— "তুমি কি আমার কাছে যৌতুক চাইছো, শফিক?"

শ্বশুরের প্রশ্নটা শফিকের বুকে শেলের মতো বিঁধে যায়। সে মাথা নিচু করে ফেলে।

— "না, আব্বা, তেমন কিছু না... মানে, একটু সাহায্য..."

শ্বশুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
— "বাবা, আমি মেয়ের বিয়েতে যা দেওয়ার দিয়েছি। এখন যদি আমি আবার টাকা দিই, তাহলে কি সেটা ভিক্ষে হবে না? একজন পুরুষ হয়ে তুমি কীভাবে আমার কাছে এভাবে চাইতে পারলে?"

শফিক কোনো উত্তর দিতে পারে না। মায়ার চোখে পানি টলটল করছে।

শ্বশুর ধীরে ধীরে বলেন,
— "যৌতুক চাওয়া মানে ভিক্ষা চাওয়া, বাবা। পুরুষ হয়ে যদি কারও কাছে হাত পাততেই হয়, তাহলে সেটা নিজের পরিশ্রমের জন্য হওয়া উচিত, শ্বশুরের টাকার জন্য নয়।"

শফিকের গলা শুকিয়ে আসে। সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। মনে হয়, পুরো ঘরটা ঘুরছে।

বাইরে বেরিয়ে এসে শফিক নিজের মোটরসাইকেলে বসে। মায়া এসে পাশে দাঁড়ায়।

— "তুমি কি সত্যিই ভিক্ষুক হতে চাও, শফিক?"

শফিক কিছু বলে না। শুধু হাতের তালু দেখে। সে কি সত্যিই একটা ফকির হয়ে গেল?

সেদিন রাতে শফিক ঠিক করে, সে নিজের হাতে টাকা আয় করবে, অন্যের দয়া চাইবে না।

19/03/2025

রমজান ও জামাতে নামাজের গুরুত্ব

সাত বছরের ছোট্ট ছেলেটি আরমান, খুব কৌতূহলী। রমজান মাস শুরু হলে সে দেখে, তার বাবা, দাদা এবং বড় ভাই সবাই নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করেন। একদিন সাহরির পর সে বাবাকে প্রশ্ন করল,

— "বাবা, সবাই কেন মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে? বাড়িতে পড়লেই তো হয়!"

তার বাবা মৃদু হেসে বললেন, "তোমার প্রশ্নের উত্তর আমি দাদার কাছ থেকে শুনেছি, আজ তোমাকেও শোনাই।"

সেই দিন এশার পর বাবা আরমানকে নিয়ে মসজিদে গেলেন। মাগরিবের পর থেকেই মসজিদ আলোয় আলোকিত, মুসল্লিদের মুখে একধরনের প্রশান্তি। এশার নামাজের পর ইমাম সাহেব বলেন,

— "রমজান মাস হলো ইবাদতের মাস। এই মাসে ছোট্ট একটি ভালো কাজের প্রতিদান অন্য সময়ের চেয়ে বহুগুণ বেশি। আর জামাতে নামাজ পড়লে তার সওয়াব আরও ২৭ গুণ বেশি হয়!"

আরমান বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল। বাবা কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন, "দেখলে তো, জামাতে নামাজ পড়ার কী বিশাল ফজিলত!"

সেই রাতে তারা ঘরে ফিরে এলে আরমান দাদার কাছে গিয়ে বলল, "দাদু, জামাতে নামাজের এত সওয়াব! আমি তো আর কখনো একা নামাজ পড়ব না!"

দাদা মৃদু হেসে বললেন, "সুবহানাল্লাহ! খুব ভালো বলেছো, আরমান! তুমি জানো, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ জামাতে ফজরের নামাজ পড়ে, তবে সে সারা রাত ইবাদত করার সমান সওয়াব পায়।’"

এ কথা শুনে আরমানের চোখ বড় হয়ে গেল। সে সিদ্ধান্ত নিল, আগামীকাল থেকেই ফজরের জামাতেও যাবে।

পরদিন ফজরের আজান শুনেই সে উঠে পড়ল। বাবা ও দাদার সঙ্গে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করল। মসজিদ থেকে বেরিয়ে দেখে, আকাশে লালচে আলো ফুটে উঠেছে, বাতাসে এক ধরনের পবিত্রতা আছে। তার মনে শান্তি নেমে এল।

সে বুঝতে পারল, কেন জামাতে নামাজ পড়া এত গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু সওয়াবের ব্যাপার নয়, বরং এতে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে, সমাজের মানুষ একত্রিত হয় এবং আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।

সেই দিন থেকেই আরমান প্রতিদিন জামাতে নামাজ পড়তে শুরু করল। রমজান শেষ হয়ে গেলেও তার এই অভ্যাস আর বদলাল না। ছোটবেলা থেকেই সে শিখে গেল, নামাজ শুধু ব্যক্তিগত ইবাদত নয়, বরং জামাতে পড়লে এর মাহাত্ম্য আরও বেড়ে যায়।

উপদেশ

এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে, রমজান মাস হলো আত্মশুদ্ধির মাস, আর জামাতে নামাজ পড়ার মাধ্যমে আমরা আরও বেশি সওয়াব অর্জন করতে পারি। এটি শুধু একটি দায়িত্ব নয়, বরং আত্মার প্রশান্তিরও মাধ্যম।

18/03/2025

রমজানের গুরুত্ব

ছোট্ট এক গ্রামে থাকত ইমরান নামের এক কিশোর। দুষ্টুমি করায় তার জুড়ি ছিল না, কিন্তু নামাজ-রোজার ব্যাপারে সে খুব বেশি আগ্রহী ছিল না। তার মা-বাবা বহুবার তাকে বুঝিয়েছেন, কিন্তু ইমরান যেন কিছুতেই পরিবর্তন হতে চাইত না।

একদিন, রমজান মাস শুরু হলে গ্রামের মসজিদে এক বিশেষ ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ইমরানের বন্ধু রায়হান প্রতিদিন রোজা রাখত এবং নামাজ পড়ত। সে ইমরানকে বলল, "তুই একদিন রোজা রাখ, তারপর দেখবি কেমন অনুভূতি হয়!" প্রথমে ইমরান রাজি হয়নি, কিন্তু বন্ধুদের জোরাজুরিতে একদিন রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিল।

সেই দিন ইমরান ভোরে সেহরি খেল, ফজরের নামাজ আদায় করল এবং সারাদিন না খেয়ে থাকার চেষ্টা করল। সকালটা সহজ মনে হলেও দুপুরের দিকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কষ্ট হতে লাগল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, যত সময় পার হচ্ছিল, ইমরান অনুভব করল এক ধরনের প্রশান্তি। সন্ধ্যা হওয়ার আগ মুহূর্তে যখন আজান দিল, তখন সে বুঝতে পারল ক্ষুধার কষ্ট কেমন হতে পারে। তার মনে হলো, "যারা সারাদিন খাবার পায় না, তাদের কষ্ট তো আরও বেশি!"

সেদিনের পর ইমরানের ভেতর পরিবর্তন আসতে শুরু করল। সে বুঝতে পারল, রমজান শুধু না খেয়ে থাকার মাস নয়, এটি ধৈর্য, সংযম, আত্মশুদ্ধি ও অন্যের কষ্ট বোঝার মাস। ইমরান ধীরে ধীরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করল, মিথ্যা বলা ও দুষ্টুমি করা কমিয়ে দিল এবং গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা শুরু করল।

রমজান মাস শেষ হলে ইমরানের মা-বাবা খেয়াল করলেন, তাদের ছেলে অনেক বদলে গেছে। তার মা আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, "রমজান তোমাকে সত্যিকারের মানুষ করে তুলেছে, বাবা!" ইমরান মুচকি হেসে বলল, "আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা পেয়েছি এই রমজানে। আমি শুধু রমজানেই নয়, সারা বছর ভালো থাকতে চাই।"

শিক্ষা:

রমজান শুধু উপবাসের মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধির মাস। এটি আমাদের ধৈর্য, সহানুভূতি ও ভালো কাজ করার শিক্ষা দেয়। ইমরানের মতো আমরাও যদি রমজানের মূল শিক্ষা গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের জীবন হবে সুন্দর ও অর্থবহ।

তারাবির নামাজের পর একটি পিকচার।
12/03/2025

তারাবির নামাজের পর একটি পিকচার।

11/03/2025

মুসলিম জাহানের ইতিহাস

এক সময়ের মরুপ্রান্তর থেকে শুরু হয়ে আজকের আধুনিক বিশ্বে মুসলিম সভ্যতা এক বিশাল প্রভাব বিস্তার করেছে। ইসলাম ধর্মের জন্ম মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে ৬১০ খ্রিস্টাব্দে, যখন তিনি প্রথম ওহি লাভ করেন। এরপর মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে পুরো আরব উপদ্বীপে। এই ইতিহাসের মধ্যে রয়েছে বিস্ময়কর বিজয়, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য সমাহার।

ইসলামের সূচনা ও বিস্তার

মক্কার কুরাইশ বংশে জন্ম নেওয়া মুহাম্মদ (সা.) যখন নবুয়ত লাভ করেন, তখন মক্কাবাসী তাঁর প্রচারিত একত্ববাদের বার্তাকে প্রত্যাখ্যান করে। নানা অত্যাচারের মুখেও তিনি ইসলামের প্রচার চালিয়ে যান। ৬২২ সালে তিনি মদিনায় হিজরত করেন, যা ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। মদিনায় তিনি একটি শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে ন্যায়বিচার, সাম্য ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধের পর মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে ইসলাম আরব উপদ্বীপের প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর খলিফাদের শাসনামলে ইসলামের বিস্তার অব্যাহত থাকে। প্রথম চার খলিফার (আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী) নেতৃত্বে ইসলাম পারস্য, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য, মিসর ও উত্তর আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে।

উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফত: স্বর্ণযুগের সূচনা

৬৬১ সালে উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হলে দামেস্ক রাজধানী হয়। উমাইয়া শাসকরা স্পেন থেকে ভারত উপমহাদেশ পর্যন্ত ইসলামের প্রসার ঘটান। পরে ৭৫০ সালে আব্বাসীয়রা ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং রাজধানী স্থানান্তর করে বাগদাদে।

এই সময়কে ইসলামের স্বর্ণযুগ বলা হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, স্থাপত্য ও দর্শনের ক্ষেত্রে মুসলিমরা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। বায়তুল হিকমার মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, যেখানে গ্রিক, রোমান ও ভারতীয় জ্ঞান ইসলামী চিন্তাবিদরা সংকলন ও উন্নত করেন।

স্পেনের আন্দালুস: ইউরোপের আলোকিত যুগের সূচনা

মুসলিমরা ৭১১ সালে স্পেন জয় করে এবং কর্ডোবা, গ্রানাডা ও সেভিলে শহরগুলোকে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র বানায়। ১০ম শতাব্দীতে কর্ডোবা ছিল ইউরোপের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর, যেখানে লাইব্রেরি, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল গড়ে ওঠে। মুসলিম স্থাপত্য, বিজ্ঞান ও দর্শনের প্রভাব ইউরোপের রেনেসাঁর ভিত্তি তৈরি করে।

অটোমান সাম্রাজ্যের উত্থান ও আধুনিক যুগ

১৩শ শতাব্দীতে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৪৫৩ সালে সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ কনস্টান্টিনোপল বিজয় করে, যা ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। অটোমানরা ১৬শ ও ১৭শ শতকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।

১৮শ ও ১৯শ শতকে মুসলিম বিশ্ব ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির দ্বারা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। ২০শ শতকে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর মুসলিম বিশ্ব বিভিন্ন জাতীয় রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়।

উপসংহার

মুসলিম জাহানের ইতিহাস বীরত্ব, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার এক সমৃদ্ধ উপাখ্যান। যদিও বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, তবে ইসলামের সভ্যতা অতীতের মতো আজও বিশ্বকে প্রভাবিত করছে এবং ভবিষ্যতেও এর অবদান অব্যাহত থাকবে।

Address

Rangpur
5600

Telephone

+8801780995484

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when anis tv posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category