11/07/2025
এসএসসি রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পেছনের আসল কারণ কী?
সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। অনেক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। রেজাল্ট খারাপ হতেই সমাজে শুরু হয়েছে নানা দোষারোপের প্রতিযোগিতা। কেউ সরকারকে দোষারোপ করছে, কেউ শিক্ষাব্যবস্থাকে, আবার কেউ বলছে— ‘দেশটাই নষ্ট হয়ে গেছে।’ কিন্তু আমরা কি একবারও নিজেদের দিকে তাকিয়েছি? নিজেদের ভূমিকা কি একবারও খতিয়ে দেখেছি?
আজকের শিক্ষার্থীদের হাতে বইয়ের বদলে মোবাইল ফোন। অল্প বয়সেই তারা আসক্ত হয়ে পড়ছে টিকটক, পাবজি, ফ্রি ফায়ার ও অন্যান্য গেমে। দিনে তিন ঘণ্টা পড়ালেখা আর আট ঘণ্টা স্ক্রিনে— এতে কীভাবে ভালো ফলাফল আশা করা যায়? অভিভাবকরা সন্তানের হাতে মোবাইল তুলে দিয়ে মনে করছেন দায়িত্ব শেষ, কিন্তু বাস্তবে এর ফল হচ্ছে ভয়াবহ।
তার চেয়েও ভয়ঙ্কর বাস্তবতা হলো, স্কুলের গণ্ডি না পেরোতেই অনেক কিশোর জড়িয়ে পড়ছে গ্যাং কালচারে। নিজেদের বীর ভাবতে গিয়ে তারা জড়িয়ে পড়ছে মারামারি, চাঁদাবাজি, এমনকি হত্যাকাণ্ডে পর্যন্ত। নেশার ভয়াবহ ছোবলও তাদের গ্রাস করছে। গুটখা, সিগারেট তো নিত্যদিনের বিষয়, এখন ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে স্কুলের আশপাশেই। এসব পরিবেশে একটি শিশু কখনোই সুষ্ঠুভাবে বড় হতে পারে না।
এছাড়াও, অনেক স্কুলেই এখনো ছাত্ররাজনীতি একটি বড় ব্যাধি। শিক্ষার পরিবেশ তৈরির চেয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তারই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্লাসরুমে শিক্ষকের চেয়ে নেতার ভয় বেশি। রাজনীতি যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে সেখানে গড়ে ওঠে ভয়, চাপ আর দুর্নীতি— শিক্ষা নয়।
অভিভাবকরাও অনেক ক্ষেত্রেই দায়িত্ব এড়িয়ে চলছেন। সন্তান কী পড়ছে, কার সঙ্গে চলাফেরা করছে, কোন পরিবেশে বড় হচ্ছে— এসব বিষয়ে তারা উদাসীন। বছরের শেষেই শুধু জানতে চায়, “ফলাফল কেমন হলো?” অথচ তার আগেই যদি একটু সময় দিতেন, তাহলে হয়তো ফলাফলের চিত্র ভিন্ন হতো।
এসব সমস্যার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সরকার বা সময়কে দায়ী করাটা খুবই সহজ কাজ। কিন্তু এটি দায়িত্বহীন মানসিকতার পরিচয়। বিগত ‘হাসিনার আমল’-এর উপর দায় চাপিয়ে দিয়ে আমরা নিজের দায় এড়াতে পারি না। প্রকৃত সত্য হলো— আমাদের সমাজ, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি আমরাও সমানভাবে দায়ী।
আমাদের প্রয়োজন একসাথে জেগে ওঠা, দায়িত্ব নেওয়া। সন্তানের হাতে মোবাইল দেওয়ার আগে তাকে মানবিকতা শেখানো, স্কুলে পাঠানোর আগে তাকে মূল্যবোধে গড়ে তোলা, এবং পরিবারে সময় দিয়ে সন্তানকে বুঝে ওঠা— এগুলোই পারে শিক্ষার মান ফেরাতে।
এই ফলাফল আমাদের জন্য সতর্কবার্তা। এখনই সময় ঘুম ভাঙার। না হলে আগামীতে শুধু ফলাফল নয়, গোটা প্রজন্মকেই হারাতে হবে।